এ তুমি কেমন তুমি পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0
266

#এ_তুমি_কেমন_তুমি
#পর্বঃ৪(প্রথামাংশ)
#জোহা_ইসলাম(ছদ্মনাম)

বউভাতের জন্য পার্লার থেকে বিউটিশিয়ান আনা হয়েছে হিয়াকে সাজানোর জন্য। তারা তাদের কাজে ব্যস্ত। কিন্তু হিয়ার ধৈর্য হচ্ছে না বসে বসে মুখে মেকআপ নামক রঙচঙ মেখে সং সাজতে। জিহাদকে বারংবার বলেছে, এসব যেন না হয়। সে সাধারণ ভাবে সেজে নেবে। কিন্তু জিহাদের মায়ের আদেশ। বাড়ির নতুন বউ! সবার মাঝে সাধারণ ভাবে হিয়া যেন না আসে। অগত্যা মেকআপ করতে বসতেই হলো তাকে। হিয়ার না হয় হচ্ছে ২য় বিয়ে। কিন্তু জিহাদের তো প্রথম বিয়ে। আর বাড়ির একমাত্র বড় সন্তান। সবার তো একটা আশা আছেই। সেই বুঝে হিয়া চুপ করে আছে। এমনি সে চুপচাপ শান্ত গোছের মেয়ে। এরমাঝে বিয়ের আসরে সিনক্রিয়েট করে নিজের ওজন টা যেন নিজেই কমিয়ে ফেলেছে। এতে যে অসস্তি! তাতে সে আরও গাঁট হয়ে আছে এ বাড়িতে এসে। সবকিছু যে এ বাড়িতে চর্চায় আছে! তা গতকাল বাড়িতে প্রবেশ করার পরপরই টের পেয়েছিল। শাশুড়ীর গম্ভীর মুখ জানান দিচ্ছিল হিয়ার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট নন। সবকিছু শুধু ছেলের জেদের কাছে হার মেনে সহ্য করে যাচ্ছেন৷ আর কোনো কারণ নেই যে, হিয়াকে মেনে নেওয়া যাবে। না আছে ক্লাস বলে শব্দ-টা আছে! তার মিল। না আছে হিয়ার সাথে জিহাদের মিল। আহির আর জিহাদ! ২বন্ধু তাকে নিয়ে কি নোংরা খেলা-টা খেলেছিল। আর সেই ফাঁদে হিয়াও আঁটকে গেছিল। এত বোকা সে কী করে হলো! ভাবতেই হিয়ার নিজের উপর জেদ চেপে গেল। আহির আর জিহাদ তাকে নিয়ে খেলা খেললো। আর সে! বোকার মতো না বুঝে আহিরকে ভালোবেসে বাবাকে অব্দি কষ্ট দিলো। আর জিহাদ এমন ভাব করে আছে! যেন সে আহিরের সাথে যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তার জীবন-টা এলেমেলো করে দিয়েছে! বেমালুম সব ভুলে বসেছে! খোলাখুলি সবকিছু নিয়ে কথা বলতে হবে জিহাদের সাথে। এত লুকোচুরি করে তো সম্পর্ক গড়া যায় না। মনের বন্ধনও হবেনা। নামহীন সম্পর্কের মানে হয়! কিন্তু আহির! আহির কেন এভাবে তার মন নিয়ে খেললো? হিয়ার স্পষ্ট মনে আছে। সে যখন ইন্টার ১ম বর্ষে উঠলো! কলেজ শেষে বাসায় ফিরছিল সে৷ বাবা অসুস্থ ছিল। বাবার চিন্তায় হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা পার হওয়ার সময় দুইদিকে মন দিয়ে খেয়াল করেনি। একবার দেখলো গাড়ি নেই তেমন। সেই সুযোগে পার হতে ধরে। আর একটু! তাহলে রাস্তায় উঠে যাবে। হুট করেই তার সামনে একটা বাইক এসে জোড়ে ব্রেক কষে থামলো। ভয়ে হিয়ার প্রাণপাখি তখনই যেন উড়াল দেয়! এমন অবস্থা। চোখ বন্ধ করে হাত মুঠো করে কলেজ এপ্রোণ দুহাতে মুঠো করে দাড়িয়ে ছিল। মুখের সামনে কারোর হাতের চুটকি বাজানোর শব্দে পিটপিট করে চোখ খুলেছিল হিয়া। চোখ খুলতেই চোখের সামনে বেশ লম্বা, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী জিহাদকে দেখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল হিয়া। আর জিহাদ না দেখেশুনে রোড পার হতে দেখে হিয়াকে যাচ্ছে-তাই ভাবে বকে যাচ্ছিল। সেই বকাবকির হাত থেকে হিয়াকে বাঁচিয়েছিল আহির। আহিরের কথাবার্তা মুগ্ধ করেছিল হিয়াকে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে একবার বকা রত জিহাদকে দেখছিল তো একবার জিহাদকে থামানোয় তৎপর আহিরকে দেখছিল সে। অবশ্য তখন তাদের পরিচয় জানতোনা হিয়া। জিহাদকে থামাতে আহির জিহাদকে টেনে নিয়ে বাইকে বসিয়ে সেদিনের মতো শা করে চলে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় হিয়া হতভম্ব হয়ে তাকিয়েছিল শুধু। এরপর! এরপর কেটে যায় ২টা বছর। হিয়া এইচএসসি শেষে যে ভার্সিটিতে ভর্তি হলো! সেখানেই তখন জিহাদ আর আহির পড়াশোনা করতো। দুজনেই অনার্স ৪র্থ বর্ষের স্টুডেন্ট সেবার। ভার্সিটিতে পা রাখার প্রথম দিনেই হিয়া মুখোমুখি পরেছিল ওদের দুজনের। ২বছর পরে আকস্মিক তাদের সামনে পরে ইতস্তত বোধ করছিল হিয়া। জিহাদ তাকে ভার্সিটির গেটে ঢুকতেই চটকি বাজিয়ে তাকে ডেকেছিল। ডেকে বলেছিল, “তুমি সেই গর্দভ মেয়ে-টা না! যে আমার বাইকের সামনে পরেছিলে!” সিনিয়রদের সামনে গর্দভ বলায় অপমানে হিয়ার মুখটা থমথমে হয়েছিল যেমন! সাথে অবাকও হয়েছিল এই ভেবে যে, ২বছরেও ওরা তাকে ভুলেনি! কি করে সম্ভব মনে রাখা! জিহাদ যখন তাকে র‍্যাগ দিতে ব্যস্ত! আহিরও আগেকার দিনের মতো সেদিন তাকে বাঁচিয়ে নিয়েছিল। আহিরের এই বারবার তাকে বাঁচিয়ে নেওয়ার মাঝে তার প্রতি একপ্রকার মুগ্ধতা খুঁজে পেয়েছিল হিয়া। আর জিহাদ! তার প্রতি জমেছিল এক আকাশসম ক্ষোভ। যার ফলে সে জিহাদের ভালোবাসা বুঝতেই পারেনি। আর যার প্রতি জমেছিল আস্থা! সে কি সুন্দর করে বিয়ের পর বলেছিল, হিয়াকে ভালোবাসার জালে জড়িয়ে বিয়ে করার জন্য পেয়েছিল লাখ খানেক টাকা। আর আহির টাকার জন্য সব করতে পারে। হিয়া শুধু এটা জানতে পারেনি, তাকে নিয়ে এত বড় বাজে পরিকল্পনা করলো কে? কিন্তু আহিরের মতে মানুষটা জিহাদ। যদি জিহাদই হবে! তবে তার প্রতি জিহাদের যে ভালোবাসা দেখে হিয়া! সেসবের মূল্য কী আহিরকে টাকা দেওয়ার মাধ্যমেই চুকিয়েছিল জিহাদ? সেই প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে পেলোনা হিয়া।

‘ম্যাম আপনার সাজ কমপ্লিট৷ কাইন্ডলি একটু আয়নায় নিজেকে দেখে নিন৷ দেখুন কোনো কমতি আছে কিনা? থাকলে জানান, আমরা ঠিক করে দিবো।’

বিউটিশিয়ানদের মাঝে একজনের কণ্ঠ কানে যেতেই নিজের ভাবনার রাজ্য ছাড়লো হিয়া। দৃষ্টি মেললো আয়নার প্রতিবিম্বে নিজের দিকে। ভেবেছিল মেকআপের স্তুপে তাকে বড্ড বাজে করে সাজিয়ে দেওয়া হবে। না, তা হয়নি। বরং সিম্পল একটা লুক। তাকে বেশ ভালোই লাগছে। হিয়া যখন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখছিল! তখনই তার শাশুড়ি মাহিমা আহমেদ জিহাদ আর তার রুমের দরজার সামনে এসে দাড়ালেন। আয়নায় শাশুড়ীর চেহারা স্পষ্ট দেখলো হিয়া। উনার শীতল চাহনী লক্ষ করে অসস্তিতে গাঁট হয়ে রইলো সে। মাথাটা নিচু করে নিলো হিয়া। মাহিমা আহমেদ হিয়ার পাশে এসে দাড়িয়ে থুতুনিতে আঙুল রেখে মুখ উঁচু করে৷ ধরে বললেন,

‘রুপ তো মাশাল্লাহ। এই রুপ দিয়েই আমার ছেলের মাথাটা নষ্ট করেছিলে! তাই তো?’

হিয়া জানতো নিত্য-নতুন এমন অনেক কথার সম্মুখীন হবে সে৷ তাই কথাটা গায়ে মাখলো না। তবে মনে মাখলো ভীষণ করে। কিন্তু দোষ তো তারও আছে। তাই সেসব পাত্তা দিলো না। কিন্তু কিঞ্চিৎ অপমান বোধ করলো হিয়া। কারণ রুমে বাইরের মানুষ উপস্থিত। মাহিমা আহমেদ ভ্রূকুটি করে তাকালেন হিয়ার দিকে। শান্ত মেয়েটার মুখে অজস্র মায়া। এই মায়ায় জড়িয়ে গেলে মেয়েটার সাথে খারাপ ব্যবহার করা দুষ্কর হয়ে পরবে। তিনি হাতের ইশারায় রুম থেকে উপস্থিত সকলকে চলে যেতে বললেন৷ উনার ইশারা বুঝে সবাই রুম ছাড়লো। সবাইকে আচমকা রুম থেকে বের করে দেওয়ায় হিয়া চমকালো। তাকে একা পেয়ে কঠিন কিছু শোনানোর প্রস্তুতি চলছে নাকি মাহিমা আহমেদের মনের মাঝে। সে সরাসরি দৃষ্টি ফেললো উনার দিকে। চিকন ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে শুধাল,

‘আপনি কি কিছু বলতে এসেছেন?’

‘হ্যাঁ, ধরতে পারো তাই। তবে ওয়াদা করত হবে তোমায়।’

হিয়া আরও এক দফা চমকালো। ওয়াদা! কিসের ওয়াদা করাবেন উনি তাকে দিয়ে! সে কম্পিত কণ্ঠে বললো,

‘কি ওয়াদা?’

‘যা বলবো! আমাদের দুজনের মাঝে রাখবে। নতুবা এই বাড়ি থেকে তোমায় বের করে দিতে ২বার ভাববো না আমি।’

চলবে?

#এ_তুমি_কেমন_তুমি
#পর্বঃ৪(শেষাংশ এবং সমাপ্তপর্ব)
#জোহা_ইসলাম

আহিরের মুখোমুখি বসে আছে হিয়া এবং জিহাদ। কিছু বিষয় পরিস্কার হওয়া জরুরী। যে কারণে আজ তারা মুখোমুখি বসা। দেখতে দেখতে কেটে গেছে ২টা বছর। পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুই। এতকিছুর মাঝে সব স্বাভাবিক হলেও হয়নি শুধু জিহাদ এবং হিয়ার সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের মাঝে দেয়াল কী আহির? এই চিন্তা থেকে জিহাদ আজ আহিরের মুখোমুখি। হিয়া এবং জিহাদের বিয়ের পরপর আহির তাদের মাঝ থেকে সরে যেতে নিজেদের জেলা ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিল। আজকেই শহরে ফিরলো সকালে। সে খবর জিহাদের কানে যেতেই! সে আহিরের সাথে দেখা করার প্ল্যান করে ফেলে। সাথে হিয়াকেও আনে। তাদের মাঝের দূরত্ব টা এবার ঘুচানো দরকার। তিনজনের মাঝে যখন পিনপিনে নিরবতা চলছিল! তখন ওয়েটার এসে তাদের সামনে কফির মগগুলো রেখে যায়। আহির কফির মগে চুমুক দিতে দিতে শুধায়,

‘থম মেরে বসে থাকার জন্য ডেকেছিস তোরা?’

‘না, গুরুত্বপূর্ণ কথাও আছে।’

জিহাদের কাঠ গলায় উত্তর। হিয়া নড়লোও না, চড়লোও না। কফির মগও নিলোনা। সে তাকিয়ে তাকিয়ে দু বন্ধুকে দেখছে। আহির এবার কফির মগে আরেক চুমুক বসিয়ে বললো,

‘কি গুরুত্বপূর্ণ কথা? ঝটপট বলে ফেল। আমার সময় নেই। রাতের বাসে আবার চলে যাবো, যেখানে ছিলাম।

‘আমার আর হিয়া মাঝে যেন দূরত্বের দেওয়াল থাকে! এজন্য হিয়ার মাথায় আমার নামে ভুলভাল কথা ঢুকিয়ে! তা যেন মিথ্যা প্রমাণ না করতে পারি! সেজন্য তুই শহর ছেড়ে এমন জায়গায় গিয়ে ঘাপটি মেরে ছিলিস! যেখানে আমার সব পাওয়ার দিয়েওমতুই কোথায়! সেঃ খবর জানতে না পারি! তাইনা?’

‘ধরতে গেলে তাই। আমার টাকার দরকার ছিল।’

‘সেজন্য তুই হিয়ার মাথায় এটা ঢুকিয়ে দিবি! আমি তোকে ডেয়ার দিয়েছিলাম, হিয়ার সাথে ভালোবাসার নাটক করে! তাকে বিয়ে করে! একটা সময়ে গিয়ে ছেড়ে দিবি! এমন কথা কি আমাদের মাঝে কখনও হয়েছিল?’

‘না।’

আহিরের গা ছাড়া ভাবে করা উত্তরে হিয়া এবার নড়েচড়ে বসলো। আহির যখন তার থেকে মুক্তি চেয়েছিল! কারণ হিসেবে এটাই তো উপস্থাপন করেছিল। তবে আজ! তিনটা বছর পর এই সত্যি টা জানানোর দরকার কি ছিল? জিহাদকে সে কাছে ঘেষতে দেয়না! ভালোবাসেনা! এটাই? জিহাদের ভালোবাসায় যে এই ২টা বছরে! হিয়া দুর্বল হয়নি! বিষয়টা এমন নয়। হয়েছে সে জিহাদের প্রতি দুর্বল! কিন্তু কখনও প্রকাশ করেনি। হিয়া অসহায় চোখে জিহাদের দিকে তাকালো। জিহাদ এক পলক হিয়াকে দেখে নিয়ে আহিরের দিকে তাকালো। বললো,

‘তাহলে তোর আর হিয়ার ডিভোর্সের সময় এই সস্তার বাহানা কেন দিয়েছিলি?’

‘তোর মায়ের কথায়।’

জিহাদ থমকালো! তার মায়ের কথায়? মানে কি কথাটার? জিহাদ প্রশ্নাত্মক চাহনীতে তাকাতেই আহির নিজেই বললো,

‘হিয়াকে আমি তুই দুজনই একসাথে পছন্দ করে ফেলি। সমস্যা এক জায়গায়। আর্থিক ভাবে হোক বা অন্য ভাবে হোক! তুই আমার থেকে সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে ছিলি এবং এখনও আছিস৷ সহজ ভাবেই হোক তুই হিয়ার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলে ও গলে যেতো। কিন্তু তুই ওর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ না করে তোর মাকে বলেছিলি। তের মা হিয়ার সব ডিটেইলস জেনে আমায় বলেছিলেন, যেন আমি হিয়াকে ভালোবাসায় জড়িয়ে নিয়ে বিয়ে করে নিই। আর তোকে উনি হিয়ার সাথে বিয়ে দিবপন কিন্তু তোকে সবদিক থেকে হিয়ার যোগ্য হওয়ার কথা বলে পাঠিয়ে দিলেন কানাডায়। আমার রাস্তা ক্লিয়ার। আমার হিয়াকে ভালো লাগতো
কিন্তু তোর মতো ভালোবাসা আসতো না যে সারাজীবন সহ্য করতাম! ওকে তোর জীবন থেকে সরানোর বিনিময়ে তোর মায়ের থেকে অনেক টাকা পাই। তোদের থেকে হিয়ার বাবার আর্থিক খামতি! হিয়ার মা না থাকার বিষয়টা! তোর মা তোর জন্য বেস্ট একজনকে চেয়েছিলেন। হিয়ার সাথে বিয়ে হলে না পাবি জামাই আদর! না হবে একটা ভালো সম্পর্ক! কারণ বিয়ে মানেই তোদের দুজনের বিয়ে নয়। দুই পরিবারের মাঝে একটা আত্মীয়তা। মানে আত্মার এক সম্পর্ক। এদিকে হিয়ার প্রতি আমার বিরক্তি এসে করে বিয়ের দেড় বছরেই। এত এত যন আমার অসহ্য লাগতো। তোর মা বলেছিলেন, সারাজীবন হিয়াকে সহ্য করলে উনি সবসময় আমার যা টাকা লাগে! দিয়ে দিবেন। একটা সুখের জীবন পাবো। বাবা মা হীন আমার লোভ লেগে গেছিল। ব্যস যা হবার হয়ে যায়। হিয়ার করা আদর যত্ন ভালো লাগেনি৷ ওর ভেতরে নানান অসুস্থতা! রক্তশূন্যতা, মাইগ্রেন, শ্বাসকষ্ট, নাকের, গলা! একটু কিছু হলেই ডাস্ট এলার্জি! পিরিয়ডের প্রবলেম! সব মিলিয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটতেই ছুটতেই আমি বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে আসি এই সম্পর্ক থেকে। সম্পর্ক আর আগাতে পারবোনা! এটা তোর মা জানার পর বলে দিলেন, হিয়ার কানপ তোর নামে বিষ ঢেলে যেন ছাড়ি। কারণ তোর ওকে পাওয়ার জন্য পাগলামি তখনও ছিল। হিয়া যেন তোকে একসেপ্ট না করে! সেই ব্যবস্থা যেন করে দিই। আমি আমার কাজ অল ডান করি। করে এখন হিয়ার যাতনায় মরমে মরছি। মিস করি খুব ওকে। থাকতে সহ্য হয়নি। এখন মনে হয়! খুব করে ওসব দিন ফিরে আসুক। সব স্মৃতি থেকে পালাতে চলে গিয়েছিলাম নিজের ইচ্ছেমতো এক জায়গায়। চাকরি করি, ঘুরিফিরি! বপশ আছি। যে অন্যায় টা আমি করেছি! আমি ক্ষমা পাওয়ারও যে যোগ্য নই। জানি তা। এসব জানানের কথা আমার আর তের মায়ের মাঝে হয়নি। কিন্তু না জানিয়ে শান্তি হচ্ছিল না বলে জানিয়ে দিয়ে গেলাম। তোরা আমায় ক্ষমা করিস না। ভাো থাকিস। আল্লাহ হাফেজ।’

আহির একদমে কথাগুলো বলে উঠে যায়। যাওয়ার সময় কফির বিল মিটিয়ে দিয়ে হিয়া এবং জিহাদকে একপলক দেখে নেয়। জিহাদ নিজের মায়ের ব্যাপারপ এসব শুনে শক খেয়ে একদম পাথর বনে গেছে। হিয়া ফুফিয়ে কেঁদে উঠে। সে তো আহিরকে সত্যি ভালোবেসেছিল! আহির তাকে এভাবে ঠকিয়ে কি সুখ পেলো! তিনটা জীবন এলেমেলো। হিয়ার মনে পরলো! বৌভাতের দিন তিনি হিয়াকে দিয়ে ওয়াদা করিয়েছিলেন, যেন সে জিহাদকে তার কাছে ঘেষতে না দেয়। হিয়া না ভপবেই সেদিন শাশুড়ীর কথায় সায় দেয়৷ ফলাফল জিহাদ আর তার দূরত্ব। আজ সপ বুঝলো, উপরে তার শাশুড়ী মা সব মেনে নিলেও মন থেকে মানেনন তাকে৷ জিহাদ নিজেকে সামলে নিলো হিয়াকে থামানোর জন্য বলে,

‘ এ তুমি কেমন তুমি বলো তো? একটাবারও আমায় ভালোবাসলে না! বিনা দোষে দোষী বানিয়ে দূরে রাখলে। তোমার পিরিয়ডের সমস্যা ছিল বলে বেবি কন্সিভ নিয়ে তোমার বিভিন্ন কমপ্লিকেশন ছিল! এটাই তো জানতাম আমায় বিয়ে না করার৷ কিন্তু আমার সম্পর্কে এতটা বাজে ধারণা কেন পোষণ করেছিলে হিয়া! আমায় বিশ্বাস করতে এত কষ্ট কেন হতো তোমার? আজ তো সত্যি টা দিনের আলোর প্রতি পরিস্কার। ভালোবাসবে না আমায়?’

হিয়া জল টুপটুপে চাহনীতে তাকায় জিহাদের দিকে। জিহাদ যখন তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য বেকুল হতো! হিয়া বলতো, জিহাদ তো আহিরের সাথে মিলে তার জীবন নষ্ট করেছে। আজ তো সব সত্যি সামনে এলো। নিজের ভুলের ক্ষমা পাবে তো সে! কফিশপের এই কর্ণার টায় মানুষ না থাকায় হিয়া শাশুড়ী কে দেওয়া মিথ্যায় মোড়ানো ওয়াদা ভুলে ঝাপিয়ে পরলো জিহাদের বুকে। কেঁদে বললো,

‘ ভালোবাসবো! নিজের সবটা দিয়েই বাসবো।’

জিহাদের ঠোঁটে ফুটলো আলতো হাসি। অবশেষে ভালোবাসা নিজের হলো।

সমাপ্ত

(আসসালামু আলাইকুম। আমার বড়বোনের তিনটা বেবি হয় একসাথে। এরপর একটা বেবি মারা যায়। ২জন আলহামদুলিল্লাহ বেঁচে যায়। আপু সেই সন্তানের শোকে নিজেকে সামলাতে পারেনি। নিজের+বেবিদের যত্ন করেনি। ফলাফল হাসপাতাল বাড়ি আমায় দৌড়ে পার করতে হয় সময়। আপার আগের একটা বেবি ছিল, তাকে সামলাতে হয়। অলস সময় মুহুর্তে ব্যস্ততায় মুড়ে যায়। যার ফলে এত দেরি+তাড়াহুড়ো করে শেষ করতে হলো। আমি ক্ষমাপ্রার্থী।)