ওয়েডিং স্টোরি পর্ব-২২+২৩

0
838

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_২২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

ঢাকা ফিরে যাচ্ছে আভাদের পুরো পরিবার। নিজের ছেলের জেদে আভার দাদুমনি লেংড়া পা নিয়ে গাড়িতে চড়েছেন। বার্ধক্যের ভারে ঝুলে পড়া মুখেতে বিশাল অভিমান। নিজের সাজানো-গোছানো বাড়ি, নিজের মরা স্বামীর কবর সব ফেলে আসায় ছেলের উপর রেগে আছেন। তবে, ছেলের জেদের কাছে হার মানতে হলো।

আর একটু পরই মেয়ে দেখতে বের হবে আভারা। আভা রেডি হয়ে রুম থেকে বের হলো। কোমর অব্দি চুল ছেড়ে কাঁধের দুপাশে রাখা। পরনে মেরুন রঙের কামিজ। সেই সাথে কাজল আর নুড লিপস্টিক। সাজ এটুকুই। আভা ভাইয়ের রুমে এসে একবার উঁকি দিলো। মিনহাজ রেডি হয়ে গায়ে পারফিউম স্প্রে করছে। আভা দরজার সামনে থেকে একবার চেঁচিয়ে বললো,
— ” চারদিকে কি প্রেম প্রেম গন্ধ ছড়াচ্ছে। আহা! কি সুভাস! ”
মিনহাজ আভার কথা শুনেও নির্লিপ্ত ভাবে পারফিউমের বোতল ড্রেসিং টেবিলে রেখে দিলো। শার্টের কলারটা একটু ঝাঁকিয়ে আয়নায় একবার দেখে নিলো, সব ঠিক আছে কিনা। সব কাজ শেষে মিনহাজ চেয়ারে বসলো, জুতো লাগানোর জন্য। জুতোর ফিতে বাঁধতে বাঁধতে আভার উদ্দেশ্যে বললো,
— ” কিছু বলবি? ”

মানে? ভাই কি তার একটু আগের বলা কথা শুনে নি? এমন ভাবলেশহীন ভাব করছে কেনো? ধ্যুর! শুনবে না কেনো? শুনেই এমন ভাব করছে। অসহ্য! আভা ভাইয়াকে আর জ্বালালো না। আস্তে করে মিনহাজের রুমের দরজার সামনে থেকে সরে গেলো।
অতঃপর সবাই চললো মেয়ের দেখতে। আহনাফের পরিবারকে একবার বলা হয়েছিলো মেয়ে দেখার কথা। তবে আহনাফের বাবা খুব অমায়িক সুরে মানা করেছেন। তার ভাষ্যমতে, বিয়ের কথা আগে পাঁকা হোক। তারপর নাহয় তিন পরিবার একসাথে বিয়ের আমেজ উপভোগ করবে। আভার বাবা,জুনায়েদ এতে আর আপত্তি করেননি।

মেয়ের বাড়ি খুব সিমসাম ধরনের। পাঁচ তলা এক বাড়ির তিনতলায় ভাড়া থাকেন তারা। আভা নিচ থেকে একবার তিনতলায় চোখ দিলো। বারান্দায় নানা রঙের ফুলের গাছ লাগানো। বারান্দার গ্রিলে লতানো গাছ পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে নিজের জায়গা দখল করে আছে। ব্যাপারটা দারুন! মেয়েদের পরিবার খুব শৌখিন বলা চলে।
দরজায় কলিংবেল বাজাতেই সেকেন্ড তিনেক পর একজন মধ্যবয়স্ক লোক এসে দরজা খুলে দেন। আভাদের সবাই লোকটাকে সালাম দিলো।
মিনহাজদের পরিবার দেখে লোকটার মুখে সৌজন্যমূলক হাসি টেনে ভিতরে আসতে বললেন। ড্রয়িং রুমে এসে বসলো আভাদের পরিবার। ড্রয়িং রুমটা বেশ সুন্দর! দুটো লম্বা আর একটা ছোট হাতিলের সোফা। একটা কাঠের কেবিন জুড়ে নানারকম শৌখিন শোপিস। দেয়ালে কোনো ময়লা বা মাকড়সার জাল নেই। পরিবারের মেয়েরা খুব পরিষ্কার, বলাবাহুল্য! আভা ভাইয়ের পাশে এসে বসলো।
মধ্যবয়সী লোকটা মেয়ের বাবা, তা মাত্রই জানা গেলো। মেয়ের বাবার পাশে বসে আছেন একজন গুরুগম্ভীর এক ভদ্রলোক। জানা গেলো, ভদ্রলোক মেয়ের চাচা। তবে এখনো মেয়ের মায়ের দেখা মিলেনি।
মিনহাজের বাবা, জুনায়েদ খুব অমায়িক সুরে সবার সাথে কথা বলছেন। সবার হালচাল জিজ্ঞেস করছেন। মেয়ের বাবার মুখ দেখে মনে হচ্ছে, ছেলের বাবার এই নরম ব্যাবহার তার খুব পছন্দ হয়েছে। মিনহাজ নিজেও তাদের একটি দুটো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।
একটু পর মেয়ের বাবা ভিতরে লোক পাঠালেন, মেয়েকে নিয়ে আসার জন্যে। আভার মনে মনে এক উত্তেজনা কাজ করছে। সেদিন রিকশায় মেয়েকে ভালো করে দেখা হয়নি। আজ দেখবে। একমাত্র ভাইয়ের বউ বলে কথা!
পর্দা সরে গেলো। একটা শাড়ি পড়া মেয়ে মাথা নিচু করে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলো। হাতে চায়ের ট্রে। চোখে মুখে লজ্জার আঁকাবাকা আঁচড়! আভা জানে, মেয়েটার মনের ভিতরে এখন কি চলছে। তারও তো একবার এই মেয়ে দেখানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে। মেয়েটা সবাইকে চা দিলো। মেয়ের বাবা মেয়েকে নিজের পাশে বসালেন। মেয়ের মা’ও এসে দাঁড়ালেন মেয়ের পাশে। মেয়ের মা দেখতে অসম্ভব সুন্দর বলা চলে। যৌবন কালে উনার চেহারা যে ঘায়েল করার মতো ছিলো , সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। মেয়ের নাম জিজ্ঞেস করা হলে মেয়েটা অস্ফুট স্বরে বললো, আরোহী। জুনায়েদ এবং রেহেনা মেয়ের হালচাল জিজ্ঞেস করলেন। কোথায় পড়ে, কি পছন্দ, মিনহাজকে তার কেমন লাগে? এমন কিছুই!
আভা ভাইয়ের দিকে একবার তাকালো। মিনহাজ আরোহীর দিকে তাঁকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। আরোহী চোরা চোখে মিনহাজের দিকে একবার তাকিয়ে সঙ্গেসঙ্গে চোখ সরিয়ে নিলো। মিনহাজ ইচ্ছে করেই আরোহীকে লজ্জায় ফেলছে, সেটা আভা হলপ করে বলতে পারে। ভাই তার বহুত বজ্জাত আছে।

অতঃপর পাত্র আর পাত্রীকে একা কথা বলতে পাঠানো হলো। বড়দের কথামত, মিনহাজ আর আরোহী এসে দাঁড়ালো সেই ফুল গাছ সমৃদ্ধ বারান্দায়।
মিনহাজ গ্রিল গেসে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখের দৃষ্টি আরোহীকে লজ্জায় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারছে। আরোহী চোখ তুলে তাকাতে পারছে না মিনহাজের দিকে। এবার মিনহাজ আরোহীর দিকে আরও একটু ঘন হয়ে দাঁড়ালো। আরোহীর নত হয়ে থাকা মাথার দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” কাল কি যেনো বলছিলে ? আরেকবার বলো ত! ”

আরোহী এবার দাঁত দিয়ে জিভ কাটলো। মিনহাজ এখনো কথাটা ভুলেনি! উফ! না জানি এখন ওর কি হাল করে? আরোহী মাথা তুললো। মিনহাজের দিকে তাঁকিয়ে নিষ্পাপ এক চাহনি রেখে বললো,
— ” আসলে.; আমি..; সরি! ভুল হয়ে গেছে! আর হবে না। সরি! ”

মিনহাজ আরোহীর নিষ্পাপ চাহনি পরোয়া করলো না। বরং ভ্রু নাচিয়ে বললো,
— ” নো ওয়ে, আজকে তোমার ইনোসেন্ট চাহনিতে আমি গলছি না। দোষ করেছো, শাস্তি প্রাপ্য! কিন্তু, এখন চিন্তার বিষয়, কি শাস্তি দেওয়া যায়? কি শাস্তি দেওয়া যায়, বলো তো? ”

আরোহী এক ঢোক গিললো। গলাটা তবু শুকনো’ই রয়ে গেলো। অদ্ভুত! চোখে নিষ্পাপের মেলা বসিয়ে মিনহাজকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিনহাজ এক আরোহীর কোমরে রাখল। আরোহী সঙ্গেসঙ্গে কেঁপে উঠলো। কি করছে,মিনহাজ? মিনহাজ ধীরে ধীরে আরোহীর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
— ” তোমার শাস্তি হচ্ছে, তোমার শাস্তি হচ্ছে,.. তোমার শাস্তি…”

মিনহাজ এরপর কি বললো শোনা গেলো না। আরোহী ভয় পেয়ে ইতিমধ্যে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। মিনহাজ মুচকি হেসে আরোহীর বন্ধ চোখের পাতায় চুমু খেয়ে আরোহীর কপালে কপাল ঠেকালো। আরোহী ধীরে ধীরে চোখ খুললো। মিনহাজ কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধকর অবস্থায় বললো,
— ” শাস্তিটা বিয়ের পরের জন্যে তোলা রইলো, মিসেস মিনহাজ। ”

#চলবে

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_২৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

— ” শাস্তিটা নাহয় বিয়ের পরের জন্যে তোলা রইলো, মিসেস মিনহাজ। ”

আরোহীর বন্ধ চোখের পাতা কেপে উঠলো জানা-অজানা শিহরনে। রক্তলাল ঠোঁট শুকিয়ে এলো অদ্ভুত এক তৃষ্ণায়। একে প্রেম তৃষ্ণা নাম দেওয়া যায় কি? মিনহাজ ধীরে ধীরে সরে এলো আরোহীর থেকে। আরোহী ইতিমধ্যে চোখ খুলেছে। তবে থুতনি এখনো নামিয়ে রাখা। চিবুক স্পর্শ করবে,করবে ভাব। মিনহাজ তা দেখে আলতো হাসলো। বড্ড সুন্দর দেখালো সেই হাসি!

— ” ভাই,আর কতক্ষন? মেয়ে দেখতে এসেছি আমরা। মান সম্মান রাখো, এটলিস্ট। বেরোও। ”

রুমের বাইরে থেকে আভার কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো। মেয়েটা বড়ই অধৈর্য্য! ভাইয়ের শান্তি দেখতে পারলো না কখনোই। বেদ্দপ! মিনহাজের গলা শুকিয়ে তেতো হয়ে উঠলো। আরোহী মিনহাজের ওমন বিরক্ত ভাব দেখে ফিক করে হেসে ফেললো। মিনহাজ আরোহীর দিকে তাকালো। অকারণে হাসায় রেগে গেছে সে। আরোহী তাৎক্ষণিক চুপ হয়ে গেলো। মিনহাজের রাগ বাড়ানো আর রেললাইনে গলা দেওয়া, দুটিই এক। মিনহাজ শার্টের কলার ঠিক করলো। আরোহীর শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছলো। অতঃপর আস্তে ধীরে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলো। যাওয়ার আগে অবশ্য ছোটখাটো সতর্কবাণী দেওয়া হলো,
— ” ফারদার, তোমার মুখে কোনো ছেলের নাম যদি শুনি, তখন বিয়ের আগেই চট ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাবো। বউয়ের বাপ আমার কিছুই করতে পারবে না। মাইন্ড ইট! ”

মিনহাজ বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। মিনহাজের আগ্নেয়গিরির বার্তা শুনে আরোহী থম মেরে গেলো। চোখ’দুটো বিশাল আকৃতির হয়ে গেলো। কি ভয়ানক ছেলে! আমার বাড়ি এসে আমাকেই থ্রেট!

বিয়ের কথা পাঁকা হলো, দশদিন পর। আভার অ্যাডমিশন ছদিন পর। অ্যাডমিশনে যেনো কোনোরূপ গাফলতি নাহয় সেজন্যেই এই সিদ্ধান্ত।
________________________
গত চারদিন যাবৎ আভা নিজের রুমে বন্দী হয়ে আছে। জব্বর পড়াশোনা চলছে ওর। সকালে একটা টিউসন, বিকেলে উদ্ভাস আবার সন্ধায় আরেক টিউশন। রাতে পুরোটা সময় নিজের পড়াশোনা। সব মিলিয়ে দমবন্ধকর অবস্থা।
এখন দুপুর দুইটা বাজে। আভা দুপুরের খাবার খেয়ে নিজের রুমে এলো। বাথরুম থেকে হাতে মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে এলো। অতঃপর রেডি হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। উদ্ভাসে পরীক্ষা আছে আজ।
আসরের আযান দিয়েছে। আভা মাত্রই উদ্ভাস থেকে বের হলো। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রিকশা খুঁজছে ও। আচানক একটা বাইক ওর পাশে এসে থামলো। বাইকে বসা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আভা একটু বেশিই অবাক হলো। আহনাফ এসেছেন! আজ কতদিন পর দেখা! কতদিন হবে? এক সপ্তাহ? আঙ্গুলে দিন গুনতে গেলে,এক সপ্তাহ খুব বেশি দিন নয়। কিন্তু মনে হচ্ছে, আহনাফকে না দেখার তৃষ্ণা তাকে এতটাদিন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো। আহনাফকে এতদিন পর সচক্ষে দেখে আভার মুখের সবত্রই গোলাপী হাসি ছড়িয়ে পড়লো। আভা এগিয়ে গেলো বাইকের দিকে।

— ” আপনি? এখানে? ”

আহনাফ হেলমেট খুলে হাতে নিলো। হেলমেটের বাঁধন থেকে ঘন চুলগুলো ছাড়া পাওয়ায় কয়েকটা চুল কপালে ছড়িয়ে পড়লো। চুলগুলোর এমন ছন্দপতন দেখে আভা ভারী মুগ্ধ হলো। আহনাফের মুখখান ক্লান্ত। শরীরের শক্তি নিঃশেষ হয়ে প্রায় নেতিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আজকের দিনে আহনাফের উপর বিশাল ধকল গেছে। আহনাফ কোনো ভনিতা না করে আভার উদ্দেশ্যে বললো,
–” বাইকে উঠো। ”

আভা এখনো চেয়ে আছে আহনাফের দিকে। সাধারনত, ক্লান্ত থাকলে মানুষের মুখের সৌন্দর্য্য কমে যায়। কিন্তু সেক্ষেত্রে আহনাফ! ক্লান্ত মুখমন্ডল এত সুন্দর হয় সেটা আভা মাত্রই জানলো। আভাকে চুপ থাকতে দেখে আহনাফ আভার কাধ ধরে ঝাঁকালো।
— ” হেই? কি হলো? ”

আভা ধ্যান থেকে বেরিয়ে এলো। পরক্ষণে আহনাফের দিকে ওমন করে চেয়ে থাকতে দেখে ভারী লজ্জায় পড়লো। ইশ! আহনাফ ওকে কি মনে করলেন? নির্লজ্জ? আভা সাত চিন্তা করলো, পাঁচও চিন্তা করলো। তবে লজ্জা আড়াল করতে পারলো না। চুপচাপ আহনাফের কাধে হাত দিয়ে বাইকে উঠে বসলো। দুজনের মাঝখানে আভার স্কুলব্যাগ দিয়ে রাখলো, যাতে আহনাফের শরীর স্পর্শ না করতে পারে।

বাইক থামলো নদীর পাড়ের সামনে। আভা বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালো। আহনাফ বাইক এক পাশে পার্ক করে নিজেও নামলো।
আভা চারপাশে একবার তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— ” আমরা এখানে কেনো? ”

আহনাফ বাইক ছেড়ে আভার ডান হাত ধরলো। আভার গায়ে শিহরণ খেলে গেলো। আহনাফের দখলে থাকা হাতের দিকে একবার চোরা চোখে তাকালো। তবে, আগেরকার মত এবার অস্বস্তি লাগলো না। বরং, ভালো লাগলো। শুধুই কি ভালো লাগলো? নাকি এই স্পর্শ সকল ভালো লাগার অনুভূতির উর্ধ্বে?
আহনাফ আভার হাত ধরে হাঁটা শুরু করলো। মুখে শুধু এটুকু বললো,
— ” আমরা এখানে মন চর্চা করতে এসেছি। ”

‘ মন চর্চা ! ‘ আভা এই শব্দ শুনে অবাক হলো। মন চর্চা আবার কি? এই অদ্ভুত নাম প্রথম শুনলো ও। তবে, কথা বাড়ালো না। আহনাফ যেদিকে নিয়ে যায়, ও বিনা দ্বিধায় সেদিকেই যাবে। এ দু’মাসে আহনাফ আভার এটুকু ভরসা অর্জন করতে পেরেছে, বৈকি।

ওরা এক গাছের নিচে এসে দাঁড়ালো। গাছের নাম কি জানেনা কেউ। তবে, গাছটা বিশাল আকৃতির। মাথার উপর ছায়া দিতে সক্ষম। আহনাফ আভাকে নিয়ে বসলো গাছের নিচে। আভা এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই আহনাফ আভার কোলে মাথা রেখে লম্বা করে শুয়ে পড়লো। আভা চমকে উঠলো। কি করছেন আহনাফ? আভা কণ্ঠে বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলো,
— “আরে, শুয়ে পড়লেন কেনো? ”

আহনাফের চোখ বন্ধ। ক্লান্তমাখা গলায় উত্তর করলো,
— ” বউফ্রেন্ড, চুলটা টেনে দাও তো। বড্ড ক্লান্ত আজ। তোমার নরম নরম হাতে একটু স্বস্তি দাও তো! ”

‘ বউফ্রেন্ড ‘ শব্দটা আভার শিরদাঁড়া অব্দি কাঁপিয়ে তুললো। আজ কতদিন পর এই শব্দ শুনলো? জানে না! আভার কান্না পেয়ে যাচ্ছে। আশার চেয়ে বেশি কিছু পেয়ে গেলে, তখন চোখের কান্না আটকানো কঠিনের থেকেও কঠিন কিছু। আভার এই মুহূর্তে কেমন লাগছে, সে বুঝাতে পারবে না। তবে এটুকু বলতে পারে, আহনাফের কণ্ঠে এই ছোট্ট সম্বোধন শুনলে আভার হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। মন চায়, আহনাফ সারাদিন তজবিহ পাঠের মত তাকে এই নামে ডাকতে থাকুক। আর সে শুধু শুনতেই থাকুক, শুনতেই থাকুক আর শুনতেই থাকুক।

আভা আহনাফের চুলে হাত দিলো। আস্তে করে চুল টেনে দিতে লাগলো। আহনাফ চোখ বন্ধকর অবস্থায় বললো,
— ” খাও না নাকি তুমি? জোরে টানো। ”

আভা আরো জোরে চুল টানলো। তবু আহনাফের পোষালো
না। আরো জোড়ে টানতে বললো সে। আভা এবার হাতের সর্বশক্তি দিয়ে চুল টানলো। এবার কিছুটা আরাম মিলছে আহনাফের।
বেশ কিছুসময় পার হয়ে গেলো। আহনাফের কোনো সাড়া-শব্দ নাই। ঘুমিয়ে গেছে, নাকি? আভা চুল টানতে টানতে আস্তে করে ডাক দিলো,
— ” হ্যালো, ঘুমিয়ে পড়েছেন নাকি? শুনছেন? ”

তবে, আহনাফের পক্ষ থেকে কোনো জবাব মিললো না। আভা আরো দুবার ডাক দিলো। নাহ! কোনো জবাব নেই। আভা হঠাৎ’ই আহনাফের মুখের দিকে ঝুঁকে এলো। আহনাফের মুখের একেকটা সূক্ষ্মতা লক্ষ্য করলো। চোখের পাপড়ি কয়টা, নিঃশ্বাসের শব্দ কেমন, ঠোঁটের ইঞ্চি কতটুকু, ভ্রু কতটা ঘন। এসব কিছু মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করতে লাগলো ও। কেনো করছে এসব, ও নিজেও জানে না। তবে আহনাফকে এভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে তার দারুন লাগছে। কখনো তো সেভাবে দেখার সুযোগ মিলে নি। আজ মিলেছে, তাই ও সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে। আচ্ছা, মুহূর্তে আহনাফের নাম ধরে ডাকলে কি হবে? আহনাফ ত ঘুমিয়ে পড়েছেন। শুনতে পারবেন না। একবার নাম ধরে ডাকবে কি? আভা নিজের মনের প্রশ্ন করলো। উত্তর হ্যাঁ মিলতেই আভা আলতো কণ্ঠে ডাক দিল,
— ” আহনাফ! ”
— ” আই লাভ ইউ, বউফ্রেন্ড! ”

#চলবে।