ওয়েডিং স্টোরি পর্ব-২৪+২৫

0
836

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_২৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

— ” অ্যাই লাভ ইউ, বউফ্রেন্ড! ”
হঠাৎ বলা এই ভয়ঙ্কর বাক্য শুনে আভা এক ছিটকে মাথাটা পিছিয়ে নিলো। আহনাফ ততক্ষণে চোখ মেলে তাকিয়েছে। তার শীতল চোখের দৃষ্টি আভাকে যেনো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারছে। ঠোঁটে চিরচেনা সেই গম্ভীর ভাব। আভা চোখ বড়বড় করে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মানে, এতক্ষণ আহনাফ এক বিন্দুও ঘুমায় নি? সব অভিনয় ছিলো? আর, আভা আহনাফকে নাম ধরে ডেকেছে, আহনাফ সেটাও শুনেছে? কিন্তু, আহনাফ একটু আগে এটা কি বললেন? তিন ম্যাজিকাল ওয়ার্ড! মনে পড়তেই আভার বুক ‘ ধুকধুক ‘ করতে আরম্ভ করলো। আহনাফ আভার কোলে মাথা রেখে আভার দিকেই চেয়ে আছে। আভা কি করবে ভেবে না পেয়ে আহনাফের দিকেই পলকহীন তাকিয়ে আছে। আহনাফ আবারও বললো,
— ” ভালোবাসি, আকাশরানী। ”

আভার এই মুহুর্তে কেমন অনুভূতি প্রকাশ করা উচিৎ, ও জানে না। শুধু জানে, আহনাফের মুখে জাদুকরি তিনটি শব্দ শুনে ও নিথর হয়ে গেছে। শরীরের লোমকূপ অব্দি জেগে উঠেছে। বুকের মাঝে গুটিশুটি মেরে লুকিয়ে থাকা মন’টা গলা ছেড়ে চিৎকার করে বলছে, ‘ আমি এমন অসহ্য সুখময় বাক্য কখনো শুনিনি! এমন করে আমায় কেউ কখনো বলেনি! এজীবনে আপনার মত আমায় কেউ ভালোবাসে নি! ‘ তবে বলতে পারলো না। কেনো যেনো সব কথা, সমস্ত অনুভূতি গলার ঠিক মধ্যখানটায় দলা পাকিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করলো। আহনাফের বলা এই বাক্যের উত্তরে কি বলবে আভা? ‘ সময় দরকার? ‘ নাকি ‘ মিথ্যে বলবে? ‘ কিন্তু মিথ্যে বললে আহনাফকে ঠকানো হবে! আহনাফের অনুভূতিকে হেয় করা হবে! সেটা কি আদৌ উচিৎ?এসব ভেবে আভা হঠাৎ করে’ই ছটফট করতে আরম্ভ করলো। আরামে বসেও শান্তি পাচ্ছে না। মাথার উপর শীতল ছায়াটাও এই মুহুর্তে অসহ্য লাগছে। অদ্ভুত! আহনাফ আভাকে এমন ছটফট করতে দেখে উঠে বসলো। আভা যেনো এতে একটু স্বস্তি পেলো। আহনাফ আভার পাশে গাছে ঠেস দিয়ে বসলো। মাথাটা উপরের দিকে তুলে আকাশের দিকে তাকালো। কোথায় যেনো শুনেছিল,
” শূন্যতার আভিধানিক অর্থ, মেঘ! ” আজ আকাশের দিকে তাকিয়ে এই কথার অর্থ বুঝতে পারলো সে। আভা ঘাপটি মেরে চুপচাপ বসে রইলো আহনাফের পাশে। আহনাফ বেশ কিছুসময় চুপ থেকে হঠাৎ’ই বললো,
— ” বউফ্রেন্ড, একটা গল্প শুনবে? এক রাজার গল্প? ”

আভা চেয়ে রইলো আহনাফের পানে। গল্প! তবে আভা আপত্তি করলো না। সম্মতি জানাতে বললো,
— ” বলুন। ”

আহনাফ চোখ খুলে তাকালো। চোখের দৃষ্টি লাল, রক্তের মতোই রক্তাক্ত! মাথাটা গাছের সাথে ঠেস দিয়ে বলতে শুরু করলো,
— ” এক শহরে একটা রাজা ছিলো। যার রাজ্যে তার বাবা-মা ছিলেন। কিন্তু, সে ছিলো ভবুগুরে এক রাজা। রাজ্য নিয়ে তার বিন্দুমাত্র দুশ্চিন্তা ছিলো না। সারাক্ষণ তার বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াতো, এই রাজ্য থেকে ওই রাজ্য। তবে, একদিন সে রাজার পায়েও শিকল বাঁধলো। শিকলটা কে ছিলো, জানো? এক রাজকন্যা! সেদিন রাজার রাজ্যে মেলা বসেছিল। রাজা আর তার বন্ধুবান্ধব সেই মেলা দেখতে এসেছিল। সেই মেলায় কাকতালীয় ভাবে সেই রাজকন্যাও এসেছিল। একসময় মেলায় রং খেলা হয়। রাজকন্যা সেই হরেক রঙের ভিজে যায়। রঙের কারণে, কলাপাতা রঙের শাড়ি নষ্ট হয়। রাজকন্যা সেই অগোছালো শাড়ির কুচি সামলে হাঁটছিলো। তবে, রাজকন্যার হাতের ছোঁয়ায় শাড়ির কুচি গুছিয়ে গেলেও অগোছালো হয়ে গেলো সেই ভবুগুরে রাজা। রাজকন্যার কাজল মাখা চোখে সে নিজের সর্বনাশ দেখতে লাগলো। মায়াবী মুখে মাখামাখি হওয়া হরেক রং দেখে রাজার মন আলুথালু হয়ে উঠলো। প্রথম দেখায় রাজা সেই রংমাখা মেয়ের প্রেমে পড়ল! রাজার মন ভেঙে চুরমার হলো। সেই মেয়েকে পাওয়ার নেশা রাজার রন্ধ্রে রন্ধ্রে সঞ্চালিত হতে লাগলো। রাজা প্রতিজ্ঞা করলো, এই মেয়েকে সে নিজের করবে’ই! রাজার চলে এলো মেলা থেকে। বাবা-মাকে রাজি করিয়ে বাগদান করলো সেই রাজকন্যার সাথে। তবে,সেই রাজা তখনো জানত না তাদের ছোট্ট জীবনে আরো কারো অস্তিত্ব আছে। রাজকন্যার উপর নজর পড়ল আরেক দুষ্টু রাজার। দুষ্টু রাজা কেড়ে নিতে চাইলো রাজকন্যাকে। তবে, রাজা তা হতে দিলো না। তার আগেই, রাজকন্যার আঙ্গুলে নিজের নামের আংটি পরিয়ে দিলো। সেই থেকে রাজার অপেক্ষা শুরু হলো, রাজকন্যার মনে নিজের একটু জায়গা তৈরি করা। ”

এটুকু বলে আহনাফ থামলো। আভা এখনো অবিশ্বাস্য চোখে আহনাফের দিকে চেয়ে আছে। গল্প সম্পূর্ণ হয়নি তো! শেষে কি হয়েছিল? আভা প্রশ্ন করলো,
— ” কিন্তু, শেষ পর্যন্ত রাজা কি রাজকন্যার মন জয় করতে পেরেছিল? ”

আহনাফ হাসলো। মলিন, নির্মল সেই হাসি।এই হাসিতে কোনো প্রাণ নেই। শুধু ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলেই, মানুষ হাসে না। হাসি মন থেকে আসে। জোর করে কি কখনো হাসা যায়? আহনাফের ওমন হাসি দেখে আভার হঠাৎ করেই মন খারাপ হলো। মনে হলো, ‘ তার পাশে বসে থাকা এই মানুষটার মুখে মলিনতা মানায় না! একদমই মানায় না। মানুষটা হাসুক, প্রাণ খুলে হাসুক। সেটা’ই ও চায়! ‘ আভা সেই মন খারাপের রেশ ধরে বললো,
— ” আপনার কি মন খারাপ? প্লিজ মন খারাপ করবেন না। আপনাকে মন খারাপ হতে দেখলে আমার ভালো লাগে না।”

আহনাফ আভার কথা শুনে সোজা হয়ে বসলো। মুখ ঘুরিয়ে আভার দিকে চেয়ে শীতল গলায় প্রশ্ন ছুড়লো,
— ” আমায় ভালোবাসো, বউফ্রেন্ড? ”

আভা চমকে উঠলো সেই প্রশ্নে! কি বলবে, কি উত্তর দিবে ভেবে পেলো না। আহনাফ এভাবে সোজাসুজি প্রশ্ন করে বসবে সেটা সে ভাবতে পারেনি। এবার? কি বলবে আহনাফকে? আভা আমতা আমতা করতে আরম্ভ করলো। মনের মাঝে কথাগুলো সাজিয়ে-গুছিয়ে মুখ ছুঁড়ে বলতে গেলো,
— ” আসলে..আমি..আমি আপনাকে… ”
— ” ফরগেট ইট! ”

আভার কথার পিঠে আহনাফ ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠলো। সে জানে, আভা এখন মিথ্যে বলবে। আভার মুখে মিথ্যে শোনার চেয়ে, তার কান দুটো গলে-পঁচে যাক! সেই শ্রেয়! আহনাফ উঠে দাঁড়ালো। শার্টের হাতার বোতাম খুলে কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে নিল। আভা এখনো বসে আছে মাটিতে। ভাবছে বসে, বসে। আহনাফ আভার দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” বউফ্রেন্ড,দেরি হচ্ছে। বাসায় যেতে হবে আমাদের। তোমার না একটু পর টিউশন আছে? ভুলে গেছো? ”

আভা আহনাফের দিকে তাকালো। তার দু’চোখে অপরাধবোধ! আহনাফকে নিরাশ করার অপরাধটা তার মনের ভিতরটা গুন পোকার মতো কুটকুট করে খেয়ে ফেলছে। আহনাফের চোখে চোখ রাখার সাহস হচ্ছে না। আহনাফ আভার এই দৃষ্টি খুব সহজে বুঝে ফেললো। সে আস্তে ধীরে আভার মুখোমুখি বসলো। আভার দুহাত পরম যত্নে নিজের হাতের মুঠোয় রাখলো। আলতো সুরে বললো,
— ” এখানে গিল্টি ফিল করার মতো কিছু হয়নি। আমি জানি, তুমি আমাকে ভালোবাসার চেষ্টা করছো। তবে, তোমার চেষ্টা না করলেও হবে। আমার একার ভালোবাসা’ই আমাদের দুজনের জন্যে যথেষ্ট! এতে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। আমি তোমায় ভালোবাসি, আমাদের দুজনের কাছেই সেটাই সত্য এবং তুমি, আমি, আমরা দুজনেই সেটা মানি। ”

আভা অপলক চোখে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফের এমন আদুরে কথা শুনে আভার চোখ ছলছল করছে। এত কেনো ভালোবাসে মানুষটা? একটু কম ভালোবাসলে হয়না? এই যে এখন আভার এই প্রেমিক মানুষটাকে জোরে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে, তার বেলায়। আভা কেনো মানুষটাকে একটু ভালোবাসতে পারলো না? কেনো? ও একটুও ভালোবাসলে তো আর মানুষটা আর কষ্ট পেতো না। ও কতটা পাষাণ! ধিক্কার তোমায়, আভা!
আহনাফ আভার হাত ধরে তাকে বাইকের কাছে নিয়ে এলো। আভা জড় বস্তুর মত চুপচাপ বাইকে উঠে বসলো। এতকিছুর কারণে, আজ দুজনের মাঝে ব্যাগ দেওয়ার কথা সে বেমালুম ভুলে গেলো। আহনাফ বাইক স্টার্ট করে আরো একবার পিছন ফিরলো। তাদের মধ্যে আভার স্কুল ব্যাগ না থাকায় সে ভারী অবাক হলো। কিন্তু, পরক্ষণে আভাকে নির্জীব হয়ে বসে থাকতে দেখে সে নিজেই দুজনের মাঝে স্কুল ব্যাগটা দিয়ে দিলো। অতঃপর, এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইক চালু করলো। আজকের বাতাস এত ভারী কেনো?

#চলবে

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_২৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

সন্ধ্যা নেমেছে শহরে। সূর্য চাঁদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে উধাও হয়েছে। আকাশের বুকে বিশাল এক চাঁদ সগৌরবে হাসছে। তবে, চাঁদের হাসি দেখে আভার তুমুল মন খারাপ হলো। কোনো বিষয় নিয়ে তুমুল মন খারাপের অনুভূতি’টা খুবই বিশ্রী! আভা জানালার মাথা ঠেকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না তার। বারবার চোখের সামনে আহনাফের মলিন মুখখানা ভাসছে। আভা নিজের কল্পনায় আহনাফের সেই মলিন মুখখানা কেটেকুটে একটা অতীব হাস্যোজ্বল মুখ তৈরি করতে চাচ্ছে। তবে, বারবার ব্যর্থ হচ্ছে ও। আহনাফকে মন খারাপ দেখতে ওর মোটেও ভালো লাগে না। কিন্তু, ও নিজেই তো আহনাফের মন খারাপের কারণ! তবে?
আভার কল্পনার জগৎ থমকে গেলো কলিংবেলের আওয়াজে। টিওশনের ম্যাম আসছেন। আভা বাথরুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসলো। তবে, আজকে পড়ায় বিন্দুমাত্র মন বসছে না। বারবার মন চাচ্ছে, কোনো এক ম্যাজিক হোক! আহনাফ নামক মানুষটা সেই ম্যাজিকের কারণে আবার হেসে উঠুক!
_______________________
আজকে আভার অ্যাডমিশন পরীক্ষা। সকাল থেকে পড়ার টেবিলের উপর একপ্রকার মুখিয়ে আছে ও। একবার এ বই খুলছে , তো আরেকবার অন্য বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে। অ্যাডমিশন নিয়ে নার্ভাস নিউরন তার মস্তিষ্কে ভোঁতা এক যন্ত্রণা দিচ্ছে। এই মুহূর্তে আভার নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।
হঠাৎ’ই রুমে আগমন ঘটলো আভার মায়ের। তিনি রুমে এসেই আভার বইটা ঠাস করে বন্ধ করে দিলেন। যার কারণে, আভার এতক্ষণ ধরে পুঁজি করে রাখা মনোযোগ ব্যর্থ হলো। সে বই ছেড়ে মায়ের দিকে তাকালো। তার চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে, মায়ের এ কাজে সে যথেষ্ট বিরক্ত। রেহেনা আভার বই খাতা টেবিলের একপাশে রেখে ধমকের সুরে বললেন,
— ” সারাবছর কি পড়াশোনা করেছিস? এখন, পরীক্ষার দুই ঘন্টা আগে পড়াশোনা করে উল্টাইয়া দিবি? এক্ষুনি উঠ, বলছি !”
আভা ঠোঁট উল্টে মায়ের দিকে তাকালো। কন্ঠ অসহায় থেকে অসহায়তর করে বললো,
— ” আমার মনে হচ্ছে, আমি সব ভুলে যাচ্ছি। কিছু মনে করতে চাইলে, মনে পড়ছে না। ”
— ” অ্যাডমিশনের আগে এসবই মনে হয়। চিন্তা নেই। সব ঠিক হবে। এখন যা, ফ্রেস হয়ে আয়। আহনাফ এসেছে! ওর সাথে বেরুতে হবে তোর। জলদি কর! ”

মায়ের মুখে আহনাফের কথা শুনে আভার হুট করে মনে পড়লো, আহনাফ ওদের বাসায় কি করছে? আভা একবার মায়ের দিকে তাকালো। চোখে বিস্ময় নিয়ে বললো,
— ” আহনাফ? উনি এখানে কি করছেন? উনার না হসপিটাল আছে। আজ যান নি? ”
আভার মা ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
— ” আহনাফ ডাক্তার তাই তোর অ্যাডমিশন সম্পর্কে তারই ভালো আইডিয়া থাকবে। আহনাফ নিজেই তো তোর বাবাকে এসব বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে। ও বললো, তোকে বাসায় দিয়েই তারপর হসপিটাল যাবে।এখন সময় নষ্ট না করে, জলদি তৈরি হ! কতক্ষণ ধরে বসে আছে বেচারা। খারাপ লাগবে ওর! জলদি যা! ”
আভা মায়ের এমন আহাজারি শুনে যারপরনাই বিরক্ত হলো। মাঝেমধ্যে আভার মনে হয়, আহনাফ’ই বোধহয় মায়ের আপন ছেলে! নাহলে, নিজের মেয়ে জামাইকে নিয়ে এত আদিক্ষেতা কে করে? এই আহনাফ মানুষটার হাতে কি কোনো জাদু আছে? কেমন করে সবাইকে হাত করে নেয় সে? আভা সেই উদ্ভট প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাবে, তার আগেই মায়ের আরো একটা ধমক শুনে চুপচাপ মাথা হেলিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আভা পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠে পড়তেই আভার মা অগোছালো পড়ার টেবিল গুছিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে বসার ঘরে চলে গেলো। মেয়ে জামাই এসেছে! আরো কি খাবার বানানো যায় এবং তা মেয়ে জামাইকে ঠুসেঠুসে খাওয়ানো যায়, আপতত তার চিন্তা এসব’ই। কিন্তু তিনি কি ভুলে গেছেন, আহনাফকে ইতিমধ্যে তার হাতের বানানো চার প্রজাতির নাস্তা জোর করে খাইয়েছেন?
_________________
সোহওয়ার্দি মেডিকেলের সামনে একপাশে আহনাফ গাড়ি থামালো। আহনাফ গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে আভার দিকে তাকালো। এখনো বসে আছে কেনো মেয়েটা? আভা দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। বসে, বসে গভীর কোনো চিন্তা করছে। আহনাফ আভার এই অস্থিরতা দেখে ছোট্ট করে শ্বাস ফেললো। অতঃপর আভার দিকে একটু ঝুঁকে আভার গালে হাত রাখলো। আহনাফের স্পর্শ পেয়ে আভা চকিতে তাকালো আহনাফের দিকে। আহনাফ আভার গালে হাত রেখে আদুরে কণ্ঠে বললো,
— ” ভয় পাচ্ছো? নার্ভাস টাইপ ফিল হচ্ছে? ”
আভা চোখ বুজে লম্বা শ্বাস টানলো। কোনক্রমেই নিজের অন্তঃস্থলে প্রবাহিত নার্ভাসনেস দূর করতে পারছে না ও। আহনাফ আভার অবস্থা দেখে হাসলো। কিন্তু, আচমকা সবচেয়ে অবাক কাজ করে বসলো ও। আভার কপালের ঠিক মধ্যখানে নিজের ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো। খুব সময় নিয়ে, শুদ্ধতম ভালোবাসার বহিঃপ্রকাস্বরূপ। আহনাফের ঠোঁটের স্পর্শ আভা যখন তার কপালে অনুভব করলো, আভা তাৎক্ষণিক কেঁপে উঠলো। মনে হলো, একটা চিকন বৈদ্যুতিক প্রশান্তি তার কপাল বেয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করলো। এই প্রথম আহনাফের আভাকে স্পর্শ করলো। আহনাফের এই সামান্য স্পর্শ আভার নিউরন অব্দি কাঁপিয়ে তুললো। আহনাফ ধীরে ধীরে সরে এলো আভার থেকে। আভার চোখে চোখ রাখলো সে। কিন্তু, আভা সেই নেশালো চোখে চোখ রাখলো না। সত্যি বলতে, ও সক্ষম হলো না। আহনাফের ছুঁয়ে দেওয়া জায়গাটা যেনো অবশ হয়ে যাচ্ছে। মনের মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। কিন্তু, কেনো এমন হচ্ছে? আহনাফ আভার গালে হাত রেখে নরম গলায় সুধালো,
— ” দেখো আভা, অ্যাডমিশন এক্সাম কোনো ভয়ের বিষয় না। তুমি যদি এটাকে অনেক বড় কিছু ভেবে নিয়ে ভয় পাও, তবে সেই ভয় তোমাকে প্রতিক্ষণ তাড়া করবে। কিন্তু, যদি তুমি একে একটা কুইজ প্রতিযোগিতা হিসেবে ধরো, দ্যান ইউ’ল ইনজয় ইট। প্রতিটা এমসিকিউ তুমি একটা কুইজ হিসেবে ধরো, দেখবে মজা পাবে। তখন ভয়’ই তোমার থেকে পালাবে। গট ইট ? ”
আভা অবাক চোখে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। এত সুন্দর করে আহনাফ আভাকে বুঝালো, আভা ভাবতেই পারলো না। এই মুহূর্তে তার অ্যাডমিশন নিয়ে একটা ফ্যান্টাসি কাজ করছে। মুহুর্তেই যেনো সব ভয়, সব নার্ভাসনেস কেটে গেলো। আহনাফের মুখের কথায় সত্যিই কি জাদু আছে? অদ্ভুত!
আভা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। আহনাফ আভার পাশ গেসে দাঁড়ালো। চোখের সামনে হাজারো স্বপ্নদেখা শিক্ষার্থী নিজের স্বপ্ন পূরণে এখানে জড়ো হয়েছে। আভা হেঁটে গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো। আভা গেটের ভিতর প্রবেশ করবে, তার আগেই সে আহনাফের দিকে আরও একবার তাকালো। আহনাফ আভার এমন করে থেমে যাওয়া দেখে ভ্রু কুচকালো। জিজ্ঞেস করলো,
— ” হোয়াট? দাঁড়িয়ে পড়লে কেনো? যাও ভিতরে। ”
আভা মাথা চুলকে বোকার মত প্রশ্ন করলো,
— ” উম..ঘাসফড়িং যেনো কোন পর্বের প্রাণী? ”
মানে? এতদিন পড়াশোনা করে এই প্রশ্ন? আহনাফ আভার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। আহনাফের এমন রাগ করা চাহনি দেখে আভার মুখখানা ফুটো বেলুনের মতন চুপসে গেলো। মেকি হেসে বললো,
— “সরি, সরি! ওকে, বাই। ”
আভা তরিগরি করে ভিতরে চলে গেলো। আহনাফ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুসময়। হুট করে আভার বলা প্রশ্ন মনে পড়ে হেসে দিলো ও। পাগল একটা! আহনাফ হেঁটে গাড়ির কাছে এলো। গাড়িতে উঠে ইঞ্জিন চালু করে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে এলো। একটা কাজ আছে ওর। সেটা শেষ করে আবার আসতে হবে এখানে। এখন ভালোই-ভালোই পরীক্ষাটা শেষ হলেই হয়!

#চলবে