ওয়েডিং স্টোরি পর্ব-২৮+২৯

0
872

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_২৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

রাস্তায় ইতিমধ্যে ভিড় জমে গেছে। আহনাফ পাগলের মত দৌঁড়ে ভিড় ঠেলে আভার সামনে এসে দাঁড়ালো। চোখের সামনে আভার এমন ছটফটানি দেখে আহনাফ পাথর হয়ে গেলো। আভা আঙ্গুল উঁচিয়ে আহনাফের দিকে তাক করে কি একটা বলতে চাইলো। তবে,মুখ ফুটে আর বলতে পারলো না। তার আগেই হাতটা নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো। আহনাফ আভার পাশে তাড়াহুড়ো করে বসলো। আভার রক্তাক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে অজান্তেই তার চোখের কোণা থেকে এক ফোঁটা জল গড়ালো। এই প্রথম আহনাফ কাঁদলো! তাও এক মেয়ের জন্যে! তার প্রথম অনুভূতির জন্যে! আভাকে এই অবস্থায় দেখে, আহনাফের কোনো হুশ নেই। ও পাগলের মত আভার মুখ ধরে নিজের দিকে উচুঁ করে বলছে,
— ” এই আভা? আভা? এই বউফ্রেন্ড? ফর গড শেক, প্লিজ একবার তাকাও! এই আভা? শুনতে পারছো আমাকে? এই বউফ্রেন্ড? ”

আহনাফ যখন দিশেহারা তখন তাদের পাশে এসে থামলো একটা আম্বুলেন্স। হয়তো, আশেপাশের মানুষজনের থেকে কেউ খবর দিয়েছে হসপিটালে। অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ কানে আসতেই আহনাফের টনক নড়লো। সে একমুহুর্তের মধ্যে আভাকে পাজকোলা করে কোলে তুলে নিলো। আভার শরীরের রক্ত আহনাফের নেভি ব্লু শার্টে মিশে একাকার হলো। আহনাফের হাতেও লাগলো আভার রক্ত! আহনাফ এলোমেলো পায়ে তাড়াহুড়ো করে হেঁটে আভাকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে উঠে বসলো।
_______________________
অটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে আভা আর আহনাফের পুরো পরিবার। সবার মুখে আতঙ্ক! আভার মা চেয়ারে বসে সেই কখন থেকে কেঁদেই যাচ্ছেন আর প্রলাপ বকছেন। মায়ের এমন অসহায় কান্না দেখে মিনহাজ ধীর পায়ে মায়ের কাছে এসে বসলো। মায়ের মাথাটা খুব যত্নে হাত দিয়ে নিজের কাঁধে রাখলো। ছেলের এমন আদুরে ব্যাবহার দেখে আভার মা পুনরায় দ্বিগুণ বেগে কেঁদে উঠলেন। মিনহাজ মা’কে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু, ভিতর ভিতর ও তো নিজেই ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। একটু আগে হঠাৎ, অজানা নাম্বার দেখে মিনহাজ রিসিভ করেছিল। ফোনের ওপাশ থেকে আহনাফের অস্থির কণ্ঠে বলা কথাগুলো এখনো তার কানে বাজছে,
— ” আ.আ.আভা অক্সিডেন্ট করেছে। আ.আমি আমাদের হসপিটালে আছি। একটু পর অ.অপাসরেশন হবে ওর। ”

আহনাফের কথাগুলো শুনে মিনহাজের মাথায় যেন সাত আসমান ভেঙে পড়ে। সকালেই তো ঠিক ছিলো চান্দের রাইত! কিন্তু, এই কয়েক মুহৃতের ব্যাবধানে? মিনহাজ আর এক মুহুর্তও বিলম্ব করেনি। অন্যদিনের মত আরোহীকে নিজে বাসায় পৌঁছে দেয়নি। বরং, একটা রিক্সা খুঁজে আরোহীকে উঠিয়ে দিয়েছে। তবে, এতকিছুর মাঝেও রিকশাওয়ালাকে কয়েকবার থ্রেট দেওয়া হয়েছে। প্রিয়তমাকে নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার থ্রেট!
আভার বাবা একপাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। মুখের উপর হাত শক্ত করে মুঠি করে রাখা। হয়তো, নিজের মুখের অভিব্যক্তি কাউকে দেখাতে ইচ্ছুক নন তিনি। আহনাফের বাবা-মা তারাও একপাশে চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সবার মুখে আজ আতঙ্ক! অস্থির এক আতঙ্ক!যা ধীরে ধীরে অসহ্য হয়ে ঠেকছে!
আহনাফের শরীরে জড়ানো অপারেশন ড্রেস। চোখে পাওয়ারফুল চশমা। চোখের সামনে শুয়ে আছে আভার রক্তাক্ত দেহ। পরনে হসপিটালের সবুজ ড্রেস। আহনাফ আভার অপারেশন করছে। এই প্রথম, অপারেশনের সময় আহনাফের হাত কাঁপছে। বারবার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। বারবার মনে হচ্ছে, সে আভাকে বাঁচাতে পারবে না। কিন্তু, যখনই আভার মৃত মুখ তার চোখের সামনে ভাসে, তখনই সে পুনোরদ্যমে কাজ করছে। সে আভাকে হারাতে পারবে না। কোনক্রমেই না! সে মরে যাবে, তবুও আভাকে বেচেঁ থাকতে হবে। তার জন্যে! আভাহীন সে তো নির্জীব বস্তু হয়ে যাবে। সে পারবে না! কিছুতেই না!

অটির লাল বাতি নিভে গেলো। সঙ্গেসঙ্গে অটির বাইরে থাকা সবাই অটির দরজার সামনে দাঁড়ালো। সবার মুখ উৎসুক হয়ে আছে। একটা ভালো খবর পাওয়ার জন্যে সবাই তৃষ্ণার্থ! একটু পর দরজা খুলে আহনাফ বেরিয়ে এলো। অপারেশন ড্রেস ইতিমধ্যে খুলে ফেলেছে ও। পরনে সেই নেভি ব্লু শার্ট। আভার রক্তে মাখা শার্ট! আহনাফ বেরিয়ে সবার মুখোমুখি হলো। আভার বাবা সবার আগে আহনাফকে জিজ্ঞেস করলেন,
— ” আ.আমার মে.মেয়ে কেমন আছে, আহনাফ? ”

আহনাফ সবার দিকে একঝলক তাকালো। সবার মুখে আশা! হরেক রকম আশা! আহনাফ ছোট্ট করে এক নিঃশ্বাস ফেলে থমথমে গলায় বললো,
— ” বাহাত্তর ঘণ্টা আগে কিছুই বলা যাবে না। এই বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে যদি আভার জ্ঞ্যান আসে, তবে ও বিপদমুক্ত। আর যদি না আসে…. ”

আহনাফের অর্ধেক কথা শুনে সবার মুখ ভয়ে নীল বর্ণ ধারণ করলো। আভার মা এবার এগিয়ে এসে থেমে থেমে জিজ্ঞেস করলেন,
— ” তা. তাহলে? কি হবে? ”

আহনাফ চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিলো। অতঃপর সবার দিকে তাকিয়ে একদমে বলে ফেললো,
— ” ও ক.কোমায় চলে যাবে। হয়তো কয়েক বছরের জন্যে নয়তো সারাজীবনের জন্য। ”

সবাই ‘ থ ‘ মেরে গেলো। আভার মা আবারও ভেঙে পড়লেন। একটাই মেয়ে তার। বড়ই আদুরে। নাড়িছেড়া ধন।এই মেয়ে পেটে থাকাকালীন জ্বালিয়েছে আর এতজীবনও জ্বালিয়ে গেছে। আর এখন? আভার মায়ের একটাই চাওয়া, মেয়ে আবার বেচেঁ উঠুক! আরো বেশি করে মা’কে জ্বালাক। তিনি কিচ্ছুটি বলবেন না। কিচ্ছুটি না!
___________________
আইসিইউ রুমে টিকটিক আওয়াজ বাজছে। আভাকে একা এক রুমে রাখা হয়েছে। হাতে অনেক যন্ত্রপাতি লাগানো। চোখ বুজে রাখা, চোখের পাপড়ি নিথর। আভা যে বেঁচে
আছে, সেটাই অনেক। বেঁচে থাকায়, সবাই তার ভালো হয়ে যাওয়ার আশা রাখতে পারছে। কিন্তু যদি এজীবনে আভা ভালো না হয়? তবে? কোমায় নিথর হয়ে পড়ে থাকা আর মরে যাওয়া কি দুটি আলাদা? হ্যাঁ, অবশ্যই আলাদা। মরে গেলে তো সবশেষ! কিন্তু বেচেঁ থাকলে, ছোঁয়া যায়, অনুভব করা যায়! এইবা কম কিসের?
আহনাফ ধীর পায়ে আভার পাশে এক চেয়ারে বসলো। এখনো পরনে সেই নেভি ব্লু রঙের শার্ট। শুধু মুখ-হাত ধুয়েছে। তাই, হাতের রক্তের দাগ আর নেই। আহনাফ বসে, বসে আভার দিকে অনেকক্ষন চেয়ে রইলো। আভার নিথর, নিস্তব্দ দেহ দেখে তার বুকটা মনে হয় জ্বলে যাচ্ছে। চোখে ভেঙে কান্না উপচে আসছে। কিন্তু, সে দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সামলালো। আস্তে আস্তে আভার হাত ধরলো। খুব আস্তে করে, নরম হাতে। হাতে ব্যাথা পেতে পারে, সেজন্যে। আহনাফ আভার হাত ধরে আভার দিকে ঝুঁকে এলো। আস্তে করে আভার দু ভ্রুয়ের মধ্যখানে চুমু খেলো। কিন্তু সবসময়ের মত, এবার আভা লজ্জা পেলো না। গাল লাল হলো না। কান গরম হলো না। কেমন যেনো প্রাণহীন হয়ে গেছে ও। আহনাফ সরে এলো আভার থেকে। আবারো বসলো চেয়ার’টাতে। আভার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

— ” আমি চাই তুমি ভালো হয়ে যাও। কিন্তু কেনো চাই, তা জানো? উফ, তুমি জানবে কি করে? আমিই বলি। তোমায় শাস্তি দেওয়ার জন্যে। আমাকে তিলে তিলে মারার জন্য শাস্তি পাবে তুমি। কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি! আর এই পৃথিবীতে সবচয়ে কঠিন শাস্তি কি জানো? অনুভূতির শাস্তি! তুমি ভুগবে, বউফ্রেন্ড। আমার দেওয়া শাস্তিতে, খুব বাজে ভাবে ভুগবে। ”

আহনাফ কথাগুলো বলে আভার হাত ছেড়ে দিলো। আবারো ঝুঁকে এসে আভার কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

#চলবে

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_২৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

হাসপাতালের দূষিত বাতাস নাকে-মুখে প্রবেশ করে বুকের ভিতরটায় হাহাকার তৈরি করছে। আহনাফ মাত্রই গোসল করে বের হলো। পরনে কালো ট্রাউজার আর সাদা-কালো টিশার্ট। হাতে ঝুলানো সেই নেভি ব্লু টিশার্ট। আহনাফ রক্তাক্ত সেই টিশার্টটা ধুতে গেলেও কি মনে করে টিশার্ট না ধুয়ে এমনই রেখে দিলো। হসপিটালের বাথরুম থেকে বেরিয়ে টিশার্টটা সুন্দর করে ভাজ করে একটা কাপড়ের ব্যাগে রাখলো। বরাবর, আহনাফ একজন গোছালো মানুষ! নিজের রুম থেকে শুরু করে পরিধেয় জামা-কাপড় সবসময় পরিষ্কার ফকফকা থাকে। সেক্ষেত্রে, আভা ব্যতিক্রম। নিজের ব্যবহার্য জিনিসপত্র আভার মা’ই গুছান। কিন্তু বলে না, বিপরীতে ভালো যুগলবন্দী হয়! আহনাফ-আভা বোধহয় তাই-ই।
আহনাফ ঔষধের প্যাকেট থেকে একটা ইনজেকশন বের করে তাতে মেডিসিন পুড়ে নিলো। ইনজেকশনটা হাতে নিয়ে আভার পাশের চেয়ার টেনে বসলো। আভার হাতে স্যাভলন লাগিয়ে আস্তে করে ইনজেকশনটা পুষ করে দিলো।এই ইনজেকশনটা জ্বালাময়ী! হাতে পুষ করার সঙ্গেসঙ্গে সম্পূর্ণ হাতে এক জ্বালা তৈরি হয়। সেই জ্বালা অনেকে সহ্য করতে না পেরে কেঁদে-কেটে হসপিটাল মাথায় তুলে।তবে, আভা এসবের কিছুই করলো না। করবেই বা কেমন করে? ও তো নির্জীব, নিশ্চল! এতকাল সবার চিৎকার শুনে আহনাফ বিরক্ত হলেও, আজ হঠাৎ করেই তার মনে হলো, আভার মুখে এই চিৎকারটা বোধহয় খুব বেশিই দরকার! অন্তত, তার বুকের ভিতর প্রবহমান এক চিনচিনে কঠিন ব্যাথাটা নিবারণের জন্য! আহনাফ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। চেয়ার থেকে উঠে এসে আভার দিকে ঝুঁকে কপালে চুমু দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। আহনাফ বেরিয়ে যাওয়ার পর, একে একে বাকি সবাই আভাকে একবার দেখে গেলো।

বাহাত্তর ঘণ্টা হতে আর মাত্র এক ঘন্টা বাকি। কিন্তু, সবাইকে হতাশায় ফেলে, এখনো আভার জ্ঞান আসে নি। আহনাফ সেই কখন থেকে আভার পাশে চেয়ার টেনে বসে আছে। এই মুহূর্তে, প্রতিটা ন্যানো সেকেন্ড তার জন্যে বছরসমতুল্য! বারবার, আভার দিকে তাকিয়ে দোয়া, দুরুদ পড়ছে। দোয়া যতটা জানে ততটা তো পড়ছে’ই, সেই সাথে মসজিদের ইমামের কাছ থেকে শিখেও নিয়েছে কিছু দোয়া। এখন আল্লাহ-তায়ালা’ই শেষ ভরসা! কেবিনের বাইরে আভার পুরো পরিবার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আহনাফ যেহেতু ডাক্তার, তাই ও’ই আইসিইউ রুমে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আর আভার প্রতিটা মুহূর্তের রেসপন্স আহনাফই ভালো বলতে পারবে।
আর মাত্র আধা ঘন্টা বাকি! আভার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া নেই। আহনাফ আভার দিকে তাকালো। চোখের কোণায় জল চিকচিক করছে তার! বুকের ভিতরটা আগুনে দাউদাউ করছে। প্রচন্ড জ্বালায় বুকটা প্রায় নেতিয়ে গেছে। আভাকে সে হারাতে পারবে না। কোনক্রমেই না! কিন্তু কি করবে ও? আহনাফ ত বাঁচানোর মালিক না। আল্লাহ যদি না বাঁচাতে চান, তবে তার বুকের দহন কেউ নিভাতে পারবে না। কেউ না! আহনাফ আভার হাত ধরলো। হাতের বাঁধন শক্ত, পাথরের ন্যায়। তার হাত কাঁপছে, স্পষ্ট! সে আভার হাতের উল্টোপিঠে ঠোঁট বসালো। হাতে ঠোঁটের উপস্থিতি বহাল রেখে, ধরা গলায় শুধু এটুকু বললো,
— ” প্ল.প্লিজ ডোন্ট গো, বউফ্রেন্ড! আমাকে এভাবে মেরো ফেলো না, তুমি। প্লিজ! ”
আহনাফের কণ্ঠ ভেজা। কন্ঠে স্পষ্ট হৃদয় নিংড়ানো কিছু কান্না! পুরুষদের চোখে কান্না বড্ড বেমানান। তবুও, তার চোখে জল। পুরুষালি নিয়মের বাইরে গিয়ে আহনাফের চোখ বেয়ে গড়ালো টসটসে দু’ফোঁটা জল।
সময় শেষ! সবাইকে দুঃখের সাগরে সাঁতার কাটিয়ে, বহুল প্রতীক্ষিত বাহাত্তর ঘণ্টা পেড়িয়ে গেছে। আহনাফ মাথা উচুঁ করে ঘড়ির দিকে তাকালো। ঘড়ির কাঁটা স্পষ্ট জানান দিচ্ছে, তার সব আশা শেষ। তার জ্যান্ত মরে যাওয়ার সময় এসে গেছে। তার সকল স্বপ্ন ধুলিস্মাৎ হয়ে গেছে। সে হেরে গেছে। হ্যাঁ, হেরে গেছে সে! আহনাফ ঘড়ি থেকে চোখ সরালো। তাকালো আভার দিকে। এতক্ষণ কান্না আটকানোর কারণে, ফর্সা নাক লাল টকটকে হয়ে গেছে। আহনাফ নাক মুছলো, চোখের জল মুছলো। আভার কপালে চুমু দিতে গিয়েও সরে এলো। বুকে আকাশসম পাথর চেপে আভার বুজে রাখা চোখে চোখ রেখে বললো,
— ” এই মুহুর্তে আমার তোমাকে ঘৃনা করা উচিৎ! কিন্তু আশ্চর্য! আমি তা একদমই পারছি না। হয়তো তোমার মত ওতটা পাষাণ দিল আমার নেই। আজ তোমার একটা বোকামির জন্যে, এতটা মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আমাকেও বাদ রাখো নি। ”

আহনাফ চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলো। কেবিন দরজার হাতলে হাত দিতেই পিছন থেকে শোনা গেলো, কালার ডপলার মেশিনে টিকটিক আওয়াজ। আহনাফ সঙ্গেসঙ্গে পিছন ফিরলো। চোখের আকৃতি অবাকে বিশাল আকার হয়ে গেছে। আহনাফ তাড়াহুড়ো করে মেশিনের কাছে এলো। মেশিনে স্পষ্ট জানান দিচ্ছে, আভা একটু একটু করে রেসপন্স করছে! আহনাফ সঙ্গেসঙ্গে আভার পালস মাপলো। পালস ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। খুশিতে আহনাফের চোখে জলের কয়েক বিন্দু জমলো। তার আভা রেসপন্স করছে, তার বউফ্রেন্ড ফিরে এসেছে।
একটু পর আভার হাত হালকা নড়ে উঠলো। তার কয়েক মুহূর্ত পর, আভার চোখের পাঁপড়ি কেঁপে উঠলো। কয়েক মিনিট পর, আভা আস্তে আস্তে চোখ খোলার চেষ্টা করলো। এসবই আহনাফ পাশ থেকে খুব সুক্ষভাবে লক্ষ করছে। অসম্ভব কাজ হঠাৎ করে সম্ভব হতে দেখে, তার মুখে উজ্জ্বল দীপ্ত খেলে গেলো।
আভা সম্পূর্ণ চোখ খুললো। তার চোখের দৃষ্টি সিলিংয়ের দিকে। আশপাশে কি হচ্ছে, কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না। আহনাফ পাশ থেকে প্রচড শীতল গলায় ডাক দিলো,
— ” বউফ্রেন্ড..! ”
আভা পাশ ফিরলো। স্পষ্ট দেখলো, আহনাফ। তবে ওর মস্তিষ্ক ততটা সক্রিয় না থাকায় চিনতে পারলো না তাকে। আভা দু-একবার পলক ঝাপটালো। আহনাফ চেয়ে’ই আছে আভার দিকে। ওর দৃষ্টি গভীর, দ্বিধাহীন! আভা একসময় অস্ফুটসুরে বললো,
— ” আ.আ.আহনাফ! ”
বেশি পাওয়ারের ইনজেকশনের প্রভাবে আভা আর চেয়ে থাকতে পারলো না। ঘুমিয়ে গেলো। তবে, এখন ও বিপদমুক্ত! সেটাই শুকরিয়া!
____________________
আভাকে কেবিনে দেওয়া হলো। ইতোমধ্যে তিনটা দিন পেরিয়ে গেছে। আভা এখন পুরোপুরি সুস্থ না হলেও, মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ সচল। কে আসছে, কে যাচ্ছে, সবই ও বুঝতে পারছে। কিন্তু, এই বুঝা’টাই যেনো ওর কাল হলো। গত তিনদিন ধরে আহনাফ একটিবারের জন্যেও আভাকে দেখতে আসেনি। একটিবারের জন্যেও না! সেদিন প্রথম চোখে খুলে এক বিধ্বস্ত আহনাফকে দেখেছিলো ও। যার চোখে-মুখ শুকিয়ে আধখান হয়ে গেছে। কিন্তু, তারপর! আর একবারের জন্যেও আহনাফকে দেখেনি! সেই বিধ্বস্থ আহনাফকেও না! আহনাফের এ কি নিষ্ঠুর অত্যাচার! আভার পাশে সবাই আছে। তার নিজের পরিবার, আহনাফের পরিবার। এমনকি মিনহাজ ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ীর লোকজন এসেও দেখে গিয়েছে কয়েকবার। তবুও, আভার ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। উচ্ছল পরিবেশেও তার ছোট্ট হৃদয় শূন্যতার ভারে পিষে যাচ্ছে। সবশেষে মনে হচ্ছে, আহনাফ এলেন না কেনো? তার কি অসুস্থ আভাকে দেখতে মন চায়না? কিন্তু আভা তো ছটফট করছে! একটিবার আহনাফকে দেখতে মন চাইছে। শুধু একটিবার আহনাফের আদুরে কণ্ঠে শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে সেই শব্দ, ‘ বউফ্রেন্ড…! ‘

#চলবে