কাঁচের গায়ে বৃষ্টি ফোঁটা পর্ব-১৪+১৫

0
294

#কাঁচের_গায়ে_বৃষ্টি_ফোঁটা (প্রথম পরিচ্ছদ)
–(পর্ব-১৪)

————–
“হও যদি তুমি নীল আকাশ আমি মেঘ হবো আকাশের
হও যদি অথৈ সাগর আমি ঢেউ হবো সাগরের
হও যদি ওই হিমালয় তোমাকে করব আমি জয়

তোমাকে চাই তোমাকে
তুমি যে আর কারো নওওওও

বলতে পারি আমি নির্ভয়ে তুমি আছো হৃদয়ে”

(বাকিটা নিজ দ্বায়িত্বে শুনে নেবেন)

,,,,,,,,,

নিঝুমের নিরবতা দেখে ইহান নিজেই গান ধরে।
গান শেষ করে ইহান বন্ধ চোখের পাতা মেলে। নিঝুম এতক্ষণ সেই চোখেই তাকিয়ে ছিলো। ইহান চোখ খুলতেই তার ধ্যান ভাঙে। একটু নড়েচড়ে বসে সে। ইহান আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,

— “কেমন হয়েছে বললে না তো?”

নিঝুম অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। এই মানুষটাকে আজ তার বড্ড বেশিই অচেনা লাগছে। এই ইহানের সঙ্গে সে পরিচিত নয়। নিঝুম কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,

— “খুব সুন্দর হয়েছে। অতুলনীয়।”

নিঝুমের ইচ্ছে ছিলো আরও অনেক কিছু বলার কিন্তু কন্ঠনালী যে বিরোধিতা করবেই। ইহান কিঞ্চিৎ হাসল। ট্রাউজারের পকেট হতে সিগারেট বের করে তাতে আগুন জ্বালাতে নিয়ে বলল,

— “অনেক রাত হয়েছে এবার ঘরে যাও।”

নিঝুম নতমস্তকে উত্তর দিলো, “হুম”। অতঃপর চুপচাপ উঠে চলে যেতে চাইল কিন্তু কিছু একটা ভেবে দাড়িয়ে গেলো। পেছন ফিরে আমতা আমতা করতে করতে বলল,

— ” আপনি ধুমপান করেন?”

ইহান সিগারেটে টান দিতে দিতে বলল,
— “মাঝে মধ্যে।”

নিঝুম কিছু বলল না আর। চুপচাপ নিচে চলে গেল। ইহান সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। মেয়েটাকে দুপুরে অহেতুক কষ্ট দিয়েছে। তার কী দোষ ছিল সে তো আর অতসব ঘটনা জেনে নেই। তবুও তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। সেই অনুশোচনা থেকেই এতক্ষণ নিঝুমের মন ভালো করার সামান্য প্রচেষ্টা করেছে মাত্র। কিন্তু এদিকে নিঝুম তো তার এই সামান্য চেষ্টাকেই অসামান্য ভাবে গ্রহণ করে নিয়েছে তা কী সে জানে? তার এই সামান্য অভিনয় তৈরি করেছে নিঝুমের মনে অনেক বড় ভালো লাগার অনুভূতি।

————–
নিঝুমের মনটা আজ বেশ ভালো। ইরার সঙ্গে একটু আড্ডা দিলে মন্দ হয় না। যেই ভাবা সেই কাজ, ওরনাটা গায়ে জড়িয়ে বেড়িয়ে পড়ল ইরার ঘরের উদ্দেশ্যে। দু’বার টোকা দিতেই ইরা দরজা খুলে দিলো। নিঝুমকে দেখে সে দ্রুতই ভেতর আসতে বলল।

ইরার চোখ জোড়া ফোলা ফোলা। চেহারাটাও লালচে বর্ণ। মুখশ্রী থমথমে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেঁদেছে ভীষণ। নিঝুম খেয়াল করল ইরা আজ বেশ চুপচাপ। কথা বলছে না তেমন। শুধু হু হা করছে। নিঝুম অনেক মোচড়া মুচড়ি করে অবশেষে মনের মধ্যে দমিয়ে রাখা প্রশ্নটা করেই ফেলল,

— “কী হয়েছে তোমার ইরা। কেঁদেছো নাকি?”

— “ক কই না তো। কেন কাঁদব?”

— “তোমায় দেখে কিন্তু মনে হচ্ছে।”

— “আসলে শরীর টা ভালো নেই তাই হয়তো।”

ইরা ইনিয়ে বিনিয়ে চলে যেতে নেয় তখনই নিঝুম খপ করে তার হাত ধরে বসে। ইরা নিঝুমের দিকে কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। নিঝুম ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে,

— “আমি জানি ইরা কাল অবশ্যই কিছু একটা হয়েছে। কী হয়েছে পরিষ্কার করে বলো আমায়। ওই ছেলেটার সঙ্গে কী এমন আছে তোমার। তোমাদের মধ্যে কোনো অ্যাফেয়ার্স নেই তো?”

ইরা আঁতকে ওঠে। লুকায়িত অনুভূতি গুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে যেনো। তবুও সে নিশ্চুপ। কোনো মতেই ভেঙে পড়বে না এমন। কিন্তু নিঝুম! সে ও তো নাছোড় বান্দা। যেন পণ করে নিয়েছে সত্যিটা শুনবেই। অবশেষে ইরা মুখ খুলতে বাধ্য হয়। নিজের সমস্ত কাঠিন্যতা নিমেষেই ভেঙে গুড়িয়ে যায় নিঝুমের সম্মুখে। অস্বাভাবিক ভাবে কেঁদে উঠে নিঝুমের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে। নিঝুম আঁতকে ওঠে। এ কোন ইরাকে দেখছে সে। বরাবরই ইরাকে বেশ শক্ত সামর্থ্য নারী হিসেবেই দেখে এসেছে সে কিন্তু আজ ইরা এমন কেনো করছে? নিশ্চিত বড় কোনো কারণ আমি। ইরার কান্নার মাত্রাটা এতটাই অস্বাভাবিক যে নিঝুম পাল্টা কোনো প্রশ্নও করতে পারছে না। ধ্যান মে’রে বসে থাকা ছাড়া তার আর কোনো উপায় নেই। হঠাৎই কান্না মিশ্রিত কন্ঠের আকুতি,

— “আমি আর পারছি না বউমনি। সে কেন আসে আমার সামনে। আমি আর নিজেকে আটকাতে পারছি না। তার এমন হঠাৎ আগমন আমার হৃদয়ে প্রবল ঝড়ের কারণ। আমি ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছি। শত চেষ্টায়ও তাকে আপন করতে পারছি না আবার চিরতরে দুরে ঠেলে দিতেও পারছি না। সে খনে খনে আমায় চরম বিপাকে ফেলছে। এখন কেমন আছে আমার জানা নেই। গতকাল ভাইয়া ভীষণ রেগে গিয়েছিলো। না জানি কী থেকে কী করেছে। জিজ্ঞেস করারও সাহস নেই।”

খুব মনোযোগ দিয়ে ইরার প্রতিটি কথা শুনল নিঝুম। তাতে করে বুঝল ইরা ভীষণ কষ্টে আছে। আচ্ছা সত্যিই তো নিঝুমও তো একবারও এটা ভাবে নি যে কাল ওখানে হলো টা কী। ইহানের সঙ্গে কী তার এ ব্যাপারে কথা বলা উচিত? ইরার যে পরিস্থিতি তাতে করে ওর থেকে এখন কিছুই জানতে চাওয়া যাবে না। ইহানের থেকেই জানতে হবে হয়তো।

—————
ইহানের সামনে কফি নিয়ে দাড়িয়ে আছে নিঝুম। উদ্দেশ্য কিছু প্রশ্ন করা। নিঝুমকে ইতস্তত করতে দেখে ইহান বলে,
— কিছু বলবে?

নিঝুম কফিটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
— আসলে হয়েছে কী! ইরার কী হয়েছে? গতকাল থেকে অস্বাভাবিক আচরণ করছে। আচ্ছা ওই ছেলেটা কে? কী হয়েছিল গতকাল?

ইহান খুব সুক্ষ্ম ভাবে কিছু একটা চিন্তা করে নিল। অতঃপর বলল,

— ওসব কিছু নয়। তুমি তোমার কাজে যাও। এসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। ইরা ঠিক হয়ে যাবে।

ইহানের কন্ঠের কাঠিন্যতা নিঝুমের মনটা বিষাক্ত করে তুলল। গতরাত থেকে মনে যে ফুরফুরে আমেজ ছিল তা মুহূর্তেই বিষাদে পরিণত হলো। এই লোকটা এমন কেন? এই কাছে টানে তো এই ছুড়ে ফেলে দেয়। নিঝুম দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে যায়। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল যে। নিঝুম চলে যেতেই ইহান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মনে মনে ভাবে, “উহ! মেয়েটা বড্ড সেনসিটিভ। একটুতেই ভেঙে পড়ে। কিন্তু একটা বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেল। ইরা নিহানকে এখনো চায় তবে এখন সেটা স্বীকার করার অপেক্ষা।

————-
রাতে ইহান ঘুমতে যাওয়ার জন্য বের হলেও নিঝুমও আজ তাকে ফলো করতে থাকে। দেখা গেল ইহান পশ্চিম পাশের একটি কক্ষে ঠুকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। নিঝুম আলতো হাতে ঠেলা দেয় দরজা টা কিন্তু নাহ খোলে না। বুঝতে পারে ভেতর থেকে সিটকিনী লাগিয়ে দিয়েছে। নিঝুম একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে চলে যায়। সিদ্ধান্ত নেয় আগামী কাল ইহান বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলে এই কক্ষে ঢুকবে সে। ভেতরটা দেখার তীব্র ইচ্ছে জেগেছে তার কৌতুহলী মনে।

অনিলা খান একটি ফটো ফ্রেম হাতে বসে আছেন। এখানে তাদের পুরো পরিবারের ছবি একত্রে আছে। তিনি বেশ পরখ করে দেখছে সকলকে। একটা ছবিতে গিয়ে তার দৃষ্টি আটকে গেল। চোখের কার্ণিশে ভিড় জমালো নোনাজলেরা। কয়েকবছর আগের কথা মনে পড়ে গেল। সবকিছু কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার কাছে।

—————
সকাল সকাল নাস্তা করে ইহান বেড়িয়ে গেছে। ইশানও চলে গেছে কলেজে৷ ইরা, নিঝুম কেউই আজ কলেজে যায় নি। ইরা তো শরীর খারাপের অজুহাতে যায় নি। ইরা যাবে না তাই নিঝুমও যায়নি সকলে এটাই জানে কিন্তু নিঝুমের আসল উদ্দেশ্য তো অন্য কিছু। আজ সে ওই ঘরটা দেখবেই ওখানে কী এমন আছে?

—————–

চলবে,
®সাদিয়া আফরিন নিশি

কাঁচের গায়ে বৃষ্টি ফোঁটা (প্রথম পরিচ্ছদ)
–(পর্ব-১৫)

————–
সকলে যখন নিজেদের কাজে ব্যস্ত তখন নিঝুম যায় পশ্চিম পাশের সেই কক্ষটিতে। কক্ষটির দরজায় কোনো লক ছিল না কিন্তু বাহির থেকে সিটকিনী দেওয়া। নিঝুমের একটু ভয় ভয় করছে তবুও মনে সাহস সঞ্চার করে খুলেই খুলল দরজাটা। অতঃপর চুপিচুপি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে দরজাটা খুবই সন্তর্পণে ভিড়িয়ে দিল।

জানালা থেকে আগত আবছা আলোয় ঘরটা বেশ স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। খুব পরিপাটি করে ঘরটা সাজানো। হবে নাই বা কেন ইহান মানুষ টাই যে এমন। পরিপাটি, গোছালো, ছিমছাম প্রকৃতি। ঘরটির আনাচে কানাচে খুব ভালো ভাবে দেখে নিচ্ছে নিঝুম। সুন্দর একটি বিছানা, আলমারি, প্রয়োজনীয় জিনিসে ঘরটা পরিপূর্ণ। ঘরের এক সাইডে সুগঠিত লাইব্রেরী। বলা যায় ছোটো খাটো হোম লাইব্রেরী। নিঝুমকে বেশ আকর্ষণ করল লাইব্রেরীটা। কৌতুহল বসত সে সেই দিকটায় অগ্রসর হলো। সেখানে একটি বুকশেলফে সুন্দর করে বইপত্র জানানো। তার সামনেই একটি টেবিল,চেয়ার পরিপাটি করে গোছানো। নিঝুম ধীরে ধীরে বইগুলো ওপর থেকে ছুয়ে দিতে লাগল। সে খেয়াল করল ওখানে বইয়ের থেকে ফাইল, কাগজপত্রের পরিমাণ বেশি। হয়তো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। নিঝুম সেদিক থেকে চোখ তুলে টেবিলে দৃষ্টি রাখল। টেবিল টার ওপর একটা কিছু নিঝুমের দৃষ্টি কাড়ল। হয়তো সেটা কোনো নেমপ্লেট। কিন্তু উল্টো করে রাখা। নিঝুম কৌতুহল বসত ওটা তুলে দেখার জন্য অগ্রসর হলো ঠিক তখনই ঘটল বিপত্তি। কারো শক্তপোক্ত হাতের বন্ধনে আটকা পড়ল তার নরম তুলতুলে হাতটি। নিঝুম তীব্র যন্ত্রণায় কুকিয়ে উঠল। চোখের কোণে পানি এসে জমা হয়েছে। করুণ দৃষ্টিতে পাশ ফিরে তাকাতেই সে আঁতকে ওঠে। ইহান ক্ষিপ্র দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখনই গিলে খেয়ে নেবে। নিঝুম অশ্রু সিক্ত নয়নে নিভু নিভু চাহনিতে ইহানের দিকে তাকাল। চোখে চোখে বুঝাতে চাইল অনেক কিছু। কিন্তু ইহান সেই দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে কঠিন কন্ঠে বলল,

— এখানে কী করছ তুমি? এতো সাহস পেলে কীভাবে? এই রুমে কারো ঢোকার পারমিশন নেই জানো না? কী করছিলে এখানে?

শেষোক্ত কথাটি বেশ চিৎকার করেই বলে ইহান। নিঝুম ডুকরে কেঁদে ওঠে। ক্রন্দনরত কন্ঠে বল,

— আ আ আমি তো শুধু দেখতে এসেছিলাম আপনি রাতে কোথায় থাকেন তাই।

ইহান হুংকার দিয়ে বলে ওঠে,

— কে বলেছে তোমায় আমার ওপর গোয়েন্দাগিরি করতে? আমি বলেছি? স্পিক আপ ড্যাম ইট।

নিঝুম হাউমাউ করে কেঁদে ভাসায়। এই ক্ষুদ্র ব্যাপার নিয়ে এতদূর কান্ড তার ঠিক হজম হচ্ছে না। ইহানের ক্রোধ যেন দিগুণ বেড়ে যায়। অন্যায় করে আবার কান্না করা হচ্ছে। মেলোড্রামা চলছে না কি? অদ্ভুত! ইহান রাগ সংবরণ করতে পারছে না। এই মেয়ে সামনে থাকলে নির্ঘাত কিছু করে বসবে। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়ে নিঝুমকে আরও একটি কড়া ধমক দিয়ে বসল,

— এই মেয়ে, এখনই এখান থেকে বেড়িয়ে যাও। দুর হও আমার সামনে থেকে। আর কখনো যেন এই রুমের আশেপাশে না দেখি।

নিঝুম ওরনার আঁচল মুখে চেপে ধরে দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে যায়। ইহান মাথায় দুহাত চেপে ধরে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। নাহ!এ বাড়িতে কিছুই এখন আর তার জন্য নিরাপদ নয়। আজ যদি নিঝুম সত্যি টা জেনে যেত তবে কেমন রিয়েক্ট করত কে জানে?

ইহান ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে যাওয়ার পর পরই তার নলেজে আসে সে একটা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ফেলে গেছে। ওটা নিতেই ব্যাক করেছিল। কিন্তু এসেই দেখে নিঝুম সেখানে তল্লাসি করছে। মুহুর্তেই রাগ উঠে যায় তার মস্তিষ্কে। ফলস্বরূপ এমন পরিস্থিতি।

————-
ইদানিং নিঝুম কেমন একটা ডেস্পারেট হয়ে যাচ্ছে। ইহানের প্রতি একটু বেশিই আসক্ত আরকি। এই যেমন! হুটহাট ইহানকে জড়িয়ে ধরা, তার ধমকে ভয় না পেয়ে আরও বেশি আনন্দ পাওয়া, ইহানের সঙ্গে সব সময় লেগে থাকা,ইহানের সকল টেককেয়ার করা ইত্যাদি নানারকম অপ্রীতিকর কান্ড ঘটিয়ে ফেলছে। এরমধ্যে তো একদিন “ভালবাসি” কথাটি বলতেও ছাড়ে নি। ইহান অবশ্য এসবে চরম বিরক্ত। তবুও কিছু বলতে পারে না। বললেও লাভ হয় না নিঝুম কিছুরই তোয়াক্কা করে না। এই ভীতু মেয়েটা যে এত সাহস কোথায় পেল এটাই ভেবে পায় না সে। অবশ্য ইদানিং এগুলো অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে ইহানের।

কিছুদিন ধরে ইরা অনেকটা চুপচাপ থাকে। কারো সঙ্গ তেমন একটা পছন্দ করে না। একা থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সর্বক্ষণ নিজের ঘরে, পড়ালেখা এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চায়। কিন্তু আদৌ কী সেটা সম্ভব? সেই তো দিনশেষে একা ঘরে তার কথাই মনে পড়ে। সেদিনের পর থেকে নিহানের আর দেখা পাওয়া যায় নি। ইরা সংকোচে ইহানের থেকে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারে নি। নিহান কলেজ এটেন্ডও করছে না। আচ্ছা নিহানের কোনো ক্ষতি হয়নি তো? ইহান সেদিন নিহানের সঙ্গে খুব খারাপ কিছু করে নি তো? নানা প্রশ্নে জর্জরিত ইরার ভাঙা হৃদয়। প্রিয়’কে দেখার তীব্র বাসনা তার অন্তরে তৈরি করছে গভীর ক্ষত।

ইশান শুধু লাইফ টাকে নিজের মতো করে ইনজয় করে চলেছে। ভাই, বোনের অবস্থা দেখে তার বেশ আক্কেল হয়েছে। তার ভাষ্যমতে, এসব প্রেম ভালবাসা মানেই বেদনা তার থেকে লাইফ টা ইনজয় করে সিঙ্গেল ম’রে – টরে যাওয়া টা আরও বেটার।

————
সবকিছু ঠিক থেকেও আবার কোনো কিছুই ঠিক নেই। ইদানিং নিঝুমের ওপর প্রায়শই এ্যাটাক হচ্ছে। তবে সেসব কোনো কিছুই নিঝুমের সম্মুখে পড়ে নি। মানে পড়তে দেয়নি ইহান। তার প্রখর বৃদ্ধি দ্বারা খুব সন্তর্পণে সবটা ম্যানেজ করে নিয়েছে। কিন্তু আজ হঠাৎই নিঝুম বায়না করে বসে সে ইহানের সঙ্গে ঘুরতে যাবে। ইহান তো একবারেই না করে দিয়েছে। কিন্তু নিঝুমও তো নাছোড়বান্দা। সে গিয়ে শ্বাশুড়ি মা’র কানের কাছে ইচ্ছে মতো কান্নাকাটি করে অবশেষে তার শ্বাশুড়ির গুনধর পুত্রকে রাজি করাতে সক্ষম হয়েছে।

————-
একটা নীল শাড়িতে নিজেকে আচ্ছাদন করে আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে নিঝুম। নীল শাড়ির সঙ্গে নীল কাচের চুড়ি। চোখে গাঢ় কাজল। ঠোঁটে খয়েরী লিপস্টিক। কপালে কালো টিপ। খোলা চুলগুলো বাতাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উড়ে চলেছে। নিজের প্রতি সে নিজেই ক্রাশ। আয়নায় বারকয়েক খুশি মনে বিরবির করে নিজের প্রশংসা নিজে করে উল্টোপথে হাঁটা ধরল। ইহান তারজন্য গাড়িতে অপেক্ষা করছে।

গাড়ির কাছে যেতেই ইহান দরজা খুলে দিল। নিঝুম মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে দরজা লাগিয়ে দিল। ইহান কোনো কথা না বলে গাড়ি স্টার্ট দিল৷ বেশ অনেক টা সময় পার হয়ে গেল। সময় পেরনোর সঙ্গে সঙ্গে নিঝুমের মনটা বিষন্ন হতে লাগল। একটা রোবট সাথে করে এনেছে সে। গাড়ি চালানো ছাড়া আর কিছুই পারে না। এই যে সে এত সুন্দর করে সাজুগুজু করল তা কেবল কার জন্য? অথচ সেই ব্যক্তিটিরই কোনো হেলদোল নেই। অভিমান গাল বেয়ে তরল পদার্থের আবির্ভাব ঘটতে চাইছে। নিঝুম খুবই সন্তর্পণে সেটা মুছে নিল। হঠাৎ কী মনে করে তার বিষন্ন মুখশ্রীতে যেন পূর্ণিমার চাঁদ দেখা দিল। সিট বেল্ট টা খুলে ধীরে সুস্থে ইহানের বেশ খানিকটা নিকটে গিয়ে বসল। রিনরিনে গলায় বলল,

— আমাকে কেমন লাগছে বললেন না তো?

ঠিক তখনই কষে গাড়িতে ব্রেক করার কারণে থড়বড়িয়ে লাফিয়ে ওঠে নিঝুম। মূলত সিট বেল্ট খোলার দরুণ এমনটা হয়েছে। নিঝুম বুকে হাত দিয়ে ইহানের দিকে তাকাল। কিছু বলতে নিবে তার আগেই…..

—————–

চলবে,
®সাদিয়া আফরিন নিশি