কাননবালা পর্ব-০৯

0
441

#কাননবালা!
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ৯

রাবেয়া বেগম বাথরুমে পড়ে কোমড়ে ব্যথা পেয়েছেন।নতুন বেয়াই বাড়ি এসে এমন একটা কেলেঙ্কারিতে তিনি যারপরনাই বিরক্ত।কোমড় ব্যথায় টনটন করছে।রাতেই ঝড় বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল।সকাল বেলা নতুন বউ নিয়ে ফিরবার সময় এমন একটা কান্ড ঘটে গেলো।
হতভম্বও নীতুর মা।ঝকঝকে বাথরুমে কি করে বেয়ান পড়ে গেলেন? এই ভাবনায় কপাল কুঁচকে আছে।বিয়ের আগে ও পড়ে ছোট বড় দূর্ঘটনা হওয়া অশুভ লক্ষ্মণ! মেয়েটার আবার কোন ক্ষতি হবে না তো?

সেতু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তাজের মুখপানে।উজ্জ্বল শ্যামর্বণ মুখটা কেমন কাঠের ন্যায় শক্ত! চোখ দুটোতেও কেমন বিরক্তির ছাপ!সেতু গাঢ় গোলাপি রঙের শাড়ি পড়ে আছে।ফর্সা মুখশ্রীতে তা আরো গোলাপি আভা এনে দিয়েছে।সেতু নিজেকে আয়নায় দেখে।নিজের রুপ নিয়ে সেতু সন্তুষ্ট! যে কোন ছেলের চোখে আটকে যাবার মত! কিন্তু আজ সেতু সন্তুষ্ট হতে পারলো না।নিজেকে বড় তুচ্ছ মনে হলো।বিয়ের পর থেকে তাজ তার সাথে গুনে গুনে কয়েকটা কথা বলেছে।তার দিকে প্রতিবার এমন ভাবে তাকিয়েছে যেন সাক্ষাৎ শাঁকচুন্নি সেতু!সকালে নাস্তার টেবিলে চাচাতো মামাতো বোনেরা কত হাসি ঠাট্টা করলো অথচ নির্বিকার ভাবে খাবার খেয়ে গেলো তাজ।একবারো কোন রিয়েকশন দিলো না।সেতুর ডাগর ডাগর চোখে জল জমতে শুরু করলো।বিয়ে নিয়ে তার যত ফ্যান্টাসি ছিল মুহুর্তেই তা কাঁচের পাত্রের মত ঝনঝন করে ভেঙে গেলো।

****************
ইতু তুতুনকে খাওয়াচ্ছে। পাশে মিলন আধশোয়া ভাবে বসে আছে ক্লান্ত শরীরে। গত কালের দৌড়াঝাপের ক্লান্তি সাড়া শরীরে।মিলন মেদু দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ইতুর মুখের দিকে।ইতু সাড়া রাত ফুপিঁয়ে ফুপিঁয়ে কেঁদেছে! ইতু ভেবেছিল মিলন ক্লান্ত শরীরে ঘুমাচ্ছে কিন্তু মিলন ঘুমের ভান করে মটকা মেরে শুয়েছিল।মিলন ইতুর প্রতিটা ফোপাঁনিতে সুপ্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে তবুও কান্না থামানোর কোন চেষ্টা করেনি।প্রতিটা মানুষেরই গোপন কিছু কথা থাকে, থাকে নিজস্ব নিঃশব্দ কান্নার বিষাদ!যা কখনো খুব কাছের মানুষটাকেও বলা যায় না।

তুতুন খাওয়া শেষে রুম থেকে দৌড়ে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই জায়েদ নক করে প্রবেশ করে।জায়েদকে দেখে মিলন নড়েচড়ে উঠে বসে।ইতু কোন রা করে না।জায়েদ মিলনের দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাশে একটা হাসি দিয়ে ইতুর পাশে বসে।ইতুর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় ধরে বলে, “ইতু,তুই কখনো আমাকে দাদাভাই ডাকিস নি।এ ডাক কেবল ছিল নীতুর।তারপরও আমার কাছে তুই নীতু সেতু তিনজনেই সমান!আমি কখনো তোদের বউয়ের বোন হিসেবে ট্রিট করিনি।সবসময় নিজের বোন জানি এবং মানি।এখন আমাকে বল?এই কাজটা কেন করলি?তারা আমাদের নতুন কুটুম ইতু!”

ইতু আবার কাঁদে। চোখে জল নিয়ে ঠোঁট প্রশস্ত করে। তারপর বলে,”উচিত কাজ করেছি।যেমন কর্ম তেমন ফল!”

“তারপরও কাজটা তুই ভালো করিস নি।”

“চুপ করো ভাইয়া।আমার যদি ক্ষমতা থাকতো তবে তোমার এই শশুড়বাড়ির প্রতিটা সদস্য ও সাথে ওই কুটুমদের সবাইকে এক দড়িতে বেঁধে পিটাতাম।কত বড় অনুষ্ঠান হলো অথচ নীতু আপা থাকতে পারলো না!যা করেছি, বেশ করেছি! ”

জায়েদ কতক্ষণ চুপ থেকে ইতুর জেদ দেখে পরক্ষণেই হাসে। তারপর বলে,”বাথরুমে কি দিয়েছিস?”

ইতু হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে।মুখে হাসির রেখা টেনে বলে,”হ্যান্ডওয়াশ ঢেলে দিয়েছি।টাইলসের মেঝেতে পিচ্ছিল পদার্থ, পা পড়তেই খাল্লাস!”

ইতুর কথায় জায়েদ কি রিয়েকশন দিবে ভেবে পেলো না। পরক্ষণেই জায়েদ মিলনের দিকে তাকিয়ে দেখে তার ভায়রা ভাই বড় বড় চোখে তাকিয়ে নিজের বউকে দেখছে।বেচারার জন্য জায়েদের মায়া হলো।বেচারার ওই গোল গোল চাহনি যেন বলছে,”কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা!”

সেতু বিদায় বেলা হাউমাউ করে কাঁদলো।তার কান্না দেখে বিয়ে বাড়ির সবাই বিস্মিত হলো।যে মেয়ে বিয়ের কথা শুনে লাজলজ্জা ভুলে তিরিংবিরিং করে লাফিয়েছে সেই মেয়ের এমন মরা কান্নায় বিস্মিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাজ বিরক্ত মুখে সবটা দেখলো।তাজের দমবন্ধ লাগছিল। এই বাড়িটাকে অভিশপ্ত মনে হলো।রাবেয়া বেগম কোমড়ে ব্যথা নিয়েই বউ নিয়ে বিদায় হলেন।সারাটা পথ সেতু নিরবে কান্না করলো আর তাজ গাড়ির জানালা গলে বাহিরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাখলো।স্ত্রীর কান্নায় তার ভাবান্তর না হলেও নীতুর জন্য বুকের ভিতর নিঃশব্দ রোদনে হাহাকার তুললো!

************
নীতুর হোস্টেল জীবনের দু মাস অতিবাহিত হলো।অনেকের সাথেই ভালো সম্পর্ক হয়েছে নীতুর।তার মধ্যে রিশার সাথে একটু বেশিই সখ্যতা!যে গায়ের রঙের জন্য নীতু বুঝ হওয়ার পর থেকে অবহেলা পেয়ে এসেছে সেই গায়ের রঙকে এখন নীতুর আশির্বাদ মনে হয়।মানুষের শতরঙ চিনেছে নীতু কৃষ্ণ বর্ণ দিয়ে।

সকালে নাস্তা খেয়ে রিশা আর নীতু একসাথেই বের হয় কাজের জন্য। এরপর সারাদিনের কর্মব্যস্ততা থাকে নীতুর।একটু দম ফেলাবার জো থাকে না।হক টাওয়ারের সবাই কেমন আপন করে নিয়েছে নীতুকে।শরীফুল কাকা ইদানীং সেলসের থেকে বেশি পন্য আউটিং ও ইনপুটের দায়িত্বে রেখেছে নীতুকে।কম্পিউটার সেকশনও দেখা হয় নীতুর।সকল আয় ব্যয়ের অনুপাত,ক্রয় বিক্রয়ের তালিকা পুঙ্খানু ভাবে পর্যবেক্ষণ করে নীতু!শরীফুল কাকাও সন্তুষ্ট। আগে যে ছেলেটা এসব দায়িত্ব দেখতো সে অনেক গরমিল করলেও নীতু সৎ ভাবে দায়িত্ব পালন করে। এত এত ব্যস্ততার মধ্যে নীতুর তাজের কথা খুব একটা মনে পড়ে না।হুট করে কোন বিষন্ন দুপুরে বা ঘুম না আসা রাত গুলোতে তাজ নামটি এসে কড়া নাড়ে মনোদ্বারে।নীতু জানে এ কেবল মিছে মিছে ডাকা।তাই আজকাল কড়া নাড়লেও নীতু দ্বার খুলে না।খুব সহজে নিজেকে সামলে নেয়!যা কখনোই নিজের ছিলনা তা নিয়ে আক্ষেপ করতে নেই!

নীতু কম্পিউটার সেকশনে কাজ করছিল।তখনি শরীফুল কাকা এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,” নীতু কটা বাজে খেয়াল আছে?দুপুর দুটো।লাঞ্চ করতে হবে না?”

“করবো কাকা হাতের কাজটা গুছিয়ে নেই।”

“আমার মুখের উপর কথা বলবে না নীতু।তাহলে চাকরি নট।বুঝেছো?”

নীতু একগাল হেসে বলে, “বুঝেছি।চাকরি নট।”

শরীফুল কাকা নীতুর হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে আফসোস করেন।তার এই মেয়েটার জন্য মায়া হয়!মাস্টার্স কম্পিলিট করা একটা মেয়ে শুধু কৃষ্ণ বর্ণের জন্য সবার কাছে অবহেলিত! তার নিজের তিনটা ছেলে। মেয়ে নেই।নীতুকে কেন জানি নিজের মেয়ে মনে হয় তার।

“তোমার কাকি খাবার পাঠিয়েছে, আসো এক সাথে খাবো।”

নীতু হাত মুখ ধুয়ে খাবার খেতে বসে এক কোণার টেবিলে।শরীফুল টিফিন ক্যারিয়ার খুলে খাবার সাজায়। এর মধ্যে কোথা থেকে ছুটে এসে বসে রিশা।জিন্স টপ পড়া ক্লান্তমুখ!ববকাট চুল গুলো রুক্ষ!হাত দিয়ে সজনে ডাটা উঠিয়ে মুখে পুড়ে নেয়। শরীফুল অবাক হন না।নীতুর জন্য রিশার সাথেও তার ভালো পরিচয়।মেয়েটা রোজ রাত আটটায় আসে আর নীতুর কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকে।কাজ শেষ হলে দুজন একসাথে হোস্টেলে ফিরে। নীতু এই ভর দুপুরে রিশাকে দেখে প্রশ্ন করে,”তুই এই সময়ে?”

রিশা সজনে ডাটা মুখে নিয়েই বলে,”আজ এনজিওতে কাজ কম ছিল তাই চলে আসলাম।এখন আর কোন প্রশ্ন করো না।খুব খিদে পেয়েছে ডার্লিং! ”

দুজনের খাবার তিনজনে ভাগ করে খেতে বসলো।ছোট ছোট ট্যাংরা মাছ দিয়ে সজনে ডাটার ঝোল।বেগুন ভাজি আর ভাত।খেতে খেতেই শরীফুল কাকা বলে ওঠে, “নীতু কাল তোমার সার্টিফিকেট গুলো নিয়ে আসবে মনে করে।”

নীতু প্রশ্ন চোখে তাকিয়ে বলে, “কেন?তা দিয়ে কি করবেন কাকা?”

শরীফুল কাকা ঝাঝিয়ে ওঠা সুরে বলে,”প্রশ্ন ছাড়া তুমি কাজ করতে পারো না।যা বলেছি তাই করবে।”

শরীফুল ইসলাম আসলে সত্যটা এখুনি বলতে চাইছেন না।নীতু মেধাবী স্টুডেন্ট। আর এই হক টাওয়ারে শরীফুল অনেক কাল থেকে কাজ করে।তাই চেনা শোনা লোকের অভাব নেই।নীতুর জন্য ভালো একটা সম্মানীয় জব খুঁজে দেয়া তার দরকার।নীতুকে সে অত্যাধিক স্নেহ করেন।আর ভালো জব পেলে নীতু চলে যাবে এই জন্য তার মেজাজ খিটমিট থাকে।তাই বলে সন্তানের অমঙ্গল কেউ চায় না!মেয়েটা সারাদিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করে!

নীতু আহত স্বরে বলে,”কাকা আপনার বোধহয় ডায়বেটিস এবং প্রেসার দুটোই বেড়েছে, তাই এমন মেজাজ চড়ে থাকে! ”

শরীফুল জবাব দিলো না। রিশা বলে ওঠে, “কাকা আপনার বউকে আমার এওয়ার্ড দিতে মন চাইছে।এত ভালো সজনে তরকারি আমি কখনো খাইনি।”

“তোমার কাকির কেবল এই একটাই গুণ আছে বৈকি!”

নীতু টিপ্পনী কেটে বলে,”আপনার মত লোকের মেজাজ যে কাকি এতদিন সইছে এটাও কি বড় গুন নয়?”

নীতুর কথায় শরীফুল আহত দৃষ্টিতে চাইলেন আর রিশা এঁটো হাতে হেসে গড়াগড়ি খেলো।

********

রাত এগারোটা।নীতু টঙ দোকানে বসে দুধ চা খাচ্ছে। আগে মা খেতে দিতো না।বলতো,”একেতো গায়ের রঙ ময়লা তারপর দুধ চা খেয়ে আরো ময়লা করতে হবে না!”
কিন্তু এখন আর নীতুর এসব কথা ভাবতে ইচ্ছে করে না। পাশে বসে রিশা অনবরত সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছে।নীতু জানে না রিশার কিসের দুঃখ কিন্তু মেয়েটা প্রায় রাতই ঘুমায় না।হোস্টেলের বারান্দায় পায়চারি করে বা স্কুটি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
দুজনেই উঠে পড়ে দোকান থেকে।বিল মিটিয়ে সবার প্রথমে স্কুটিতে উঠে নীতু।রিশা পাশে দাঁড়িয়ে নীতুর এই পরিবর্তন রুপ দেখে।কৃষ্ণ বর্ণ মুখটায় কেমন অদৃশ্য এক মায়া।পদ্মদিঘির মত চোখ দুটোতে কাজলের প্রলেপ! ঠোঁটে শুস্ক লিপস্টিকের ছোয়া!নাকের উপর বিন্দু বিন্দু ঘাম!লম্বা চুল গুলো এলোমেলো বেণীতে সজ্জিত! কুর্তি, জিন্স আর সর্ট স্কাফ গলায় জড়ানো। এই দুমাসে নীতু অনেকটাই শুকিয়েছে!নীতুকে ভীষণ ভালো লাগছে দেখতে রিশার।বর্ষার কালো মেঘের মত সুন্দর লাগছে নীতুকে! রিশা মৃদু হাসে। এই বৈশাখী রুপে যে কোন পুরুষ বিধ্বস্ত হতে বাধ্য! রিশার কেন জানি মনে হয়,খুব বেশি দূরে নয় সেদিন!
নীতু স্কুটিতে স্টার্ট দেয়।রিশার কাছ থেকে স্কুটি চালানোটা শিখে নিয়েছে খুব ভালো ভাবে নীতু।রিশা যেই না উঠতে যাবে তখনই পাশ থেকে একটা ছেলে শিশ মেরে কুৎসিত কথা বলে ওঠে।রিশা দোকানের পায়ার কাছে ইট দেখতে পেয়ে সেটা হাতে উঠিয়ে নিয়ে বলে,”আয়, আয় খাচ্চরের বাচ্চা। তোদের খায়েশ মিটিয়ে দেই, আয়।পালাচ্ছিস কেন?”
ছেলেটা চলে যেতেই রিশা নীতুকে বলে,”নীতু ডার্লিং তুমি তো দিনদিন এট্রাকটিভ হয়ে যাচ্ছো।তোমাকে নিয়ে রাস্তা ঘাটে চলাই তো মুশকিল!”
নীতু চোখ গরম করে তাকায়।রিশা একগাল হেসে স্কুটির পিছনে উঠে বসে।নীতু স্কুটি চালাচ্ছে। আর রিশা পিছনে বসে সিগারেট ফুঁকছে!
বাইশ বছরের রিশা আর সাতাশ বছরের নীতুর মধ্যে গড়ে উঠেছে এক অদৃশ্য বন্ধুত্ব!একজন আর একজনের খুব আপন হয়ে উঠেছে!
নীতু শক্ত হাতে স্কুটি চালাচ্ছে। মুখে ফুটে উঠেছে আত্মবিশ্বাসের ছাপ!নীতু জানে একা চলা কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়!সবার আগে নিজের একটা পরিচয় থাকা একান্ত জরুরী!

রিশাকে আবার একটা সিগারেট ধরাতে দেখে নীতু রাগ নিয়ে বলে,”ওসব ছাইপাঁশ গিলে কি শান্তি পাস?”

“নীতু ডার্লিং, এই একটা মাত্র জিনিসই পারে মানুষের শরীর ও মন দুটোই পুড়িয়ে ঝাঝড়া করে ফেলতে।আর এই দুটো অংশ পুড়িয়ে ছাড়খার করে ফেলার একমাত্র ইচ্ছে আমার!”

“ওসব ছেড়ে দে রিশা।সবারই নিজস্ব কষ্ট থাকে তাই বলে নিজেকে এভাবে শেষ করতে নেই।”

“আমার ছোট-দার পরে আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি নীতু ডার্লিং।আমায় এমন কোন অনুরোধ করো না যা মানতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে হয়!”

****************

আজ শুক্রবার। সবাই আছে হোস্টেলের।যে যার মত কাজ করছে। বিকেল বেলায় বারান্দার এক কোণায় বসে আছে নীতু।চোখের দৃষ্টি বিষন্ন!ভ্যাপসা গরমে ভিজে গেছে পিঠ ও গলার নিম্নাংশ!ঘামে ভেজা চুলগুলোও উড়ছে বিষন্ন ভাবে!ওই মানুষটাকে নিয়ে নীতু ভাবতে চায় না।তবুও কেমন করে যেন আপনাআপনি ভাবনায় চলে আসে!নীতু নিজেকে সামলে নিয়েছে কিন্তু কোথাও যেন একটা কিছু রয়েই যায়!সারা ঘর সুন্দর করে গোছানোর পরও যেমন মনে হয় কোথাও একটা ঠিক নেই, তেমন করে নীতুর মনে তাজের প্রতি একটা অদৃশ্য অনুভূতি খুব লুকিয়ে চুড়িয়ে রয়ে গেছে! যা কখনো অস্বীকার করা যাবে না, আর না স্বীকার করা যাবে। নীতু চুপিসারে দীর্ঘশ্বাস ফেলে!”মন নামক অদৃশ্য স্বত্বাটা এত বেহায়া কেন হয়?নিষিদ্ধ কিছুতেই কেন তার এত আকর্ষণ?কেন বুঝেনা? যার প্রতি অধিকার খাটানো যায় না, তাকে ভালোবাসতে নেই!”

************

সেতুর দম বন্ধ লাগছে সবকিছু। বিয়ের মাত্র দেড় মাসেই হাঁপিয়ে উঠেছে পুরোপুরি ভাবে।তাজ নামক মানুষটাকে সেতু বুঝেনা।কেমন যেন মানুষটা?সকালে অফিসে চলে যায়, রাতে ফিরে কিছু খেয়ে দেয়ে চোখ বুঝে শুয়ে পড়ে।সেতু জানে তাজ ঘুমায় না।ঘুমের ভান ধরে থাকে।সেতু ঘুমিয়ে গেলে তাজ উঠে পড়ে।সেতু তা খেয়াল করেছে।কখনো সারারাত বিছানায় মানুষটা ছটফট করে।তবুও পাশে শুয়ে থাকা মানবীটিকে কাছে টেনে নেয় না।একদিন সেতু ইচ্ছে করেই হাত উঠিয়ে দিয়ে ছিল তাজের শরীরে। তাজ খুব সন্তোপর্ণে সে হাতের ছোঁয়া প্রত্যাখ্যান করেছে।সে রাতে আর বিছানায় আসে নি তাজ। সেতু দেখেছে তাজ প্রায়ই বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের অন্ধকার দেখে।সেতু বুঝতে পারে না,কালো ঐ অন্ধকারকে দেখার কি আছে?

সেতু ঠিক করে আজ সে তাজের মুখোমুখি হবে।এরকম আর কদিন? সব প্রশ্নের উত্তর তাকে জানতেই হবে!

চলবে,