কাননবালা পর্ব-১০+১১

0
605

#কাননবালা!
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ১০

শারিরীক অসুখের চিকিৎসা যতটা দ্রুত মানুষ করে মানসিক চিকিৎসাকে তার থেকেও বেশি ইগনোর করে। তাজকে দেখলে যতটা স্বাভাবিক মনে হয় আসলে সে ততটা ঠিক নেই।আস্ত শরীরে অবস্থিত ছোট্ট মনটা যে বড়ই ভঙ্গুর! মা বাবার জন্য নিজেকে সে স্বাভাবিক রাখে।একমাত্র ছেলে সে।না চাইতেও দায়িত্বটা এসেই যায়।সকাল সন্ধ্যা অফিস করে রাতটা কাটে বড় বিষন্নতায়! বুকের ভিতর কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরের মত বুকের বাম পাশটা খাঁ খাঁ করে!সে খবর তাজ ছাড়া আদৌও কেউ কি রাখে?
তাজ আজ অফিস থেকে ফিরেই খেয়াল করে ঘরের পরিবেশ থমথমে!মা আজ কোন কথা বললো না।বাবা তাকে দেখে রুমে চলে গেলো।সেতু গম্ভীর মুখে বসে আছে হাত পা গুটিয়ে খাটের কোণে।এমনিতে তাজ অফিস থেকে ফিরলে সেতু তারপাশে ঘুরঘুর করে।না চাইতেও এটা সেটা এগিয়ে দেয়।চঞ্চলতায় দু একটা ভুল করে,তাজ তা দেখেও দেখে না।কোন কিছুতেই তাজ আগ্রহ দেখায় না।বড় পানসে লাগে সব কিছু। নীতুর না থাকাটা যে তাকে এতটা ভোগাবে জানলে সে মা বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও বিয়ে করতো তবুও তো এতটা কষ্ট হতো না!

তাজ ফ্রেশ হলো,নিজেই খাবার বেড়ে খেলো।কেউ এগিয়ে এল না।টেবিলের সব কিছু গুছিয়ে রেখে বিছানায় এসে শরীর এলিয়ে দিলো।এক হাত বুকের উপর রেখে আর এক হাত চোখের উপর রেখে ঘুমের আয়োজন করলো।সবটা সেতু নিষ্পলক দৃষ্টিতে দেখলো। সেতুর নিরাবতার কারণ তাজ একবারো জানতে চাইলো না। সেতু আহত হলো।চোখে জল জমলো। তবুও হতাশা কন্ঠে বললো,”রোজ রোজ কেন অভিনয় করেন বলুন তো?চোখ বুজে থাকলেই মানুষ ঘুমায় না। ডাইরেক্টলি বললেই তো হয়, আমি আপনার ডিস্টার্বের কারণ।সেই তো আমি ঘুমানোর পর বারান্দায় গিয়ে বসে থাকেন।”

তাজ চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে সেতুর দিকে তাকিয়ে রইলো অনেক্ক্ষণ। সেতুর মুখে রাগের ছটা। তাজ দৃষ্টি ঘুরিয়ে সিলিংয়ের দিকে রেখে বলে,”ঘরের ভিতর হেঁটে তোমাকে ডিস্টার্ব করতে চাইনি।আর আমি কখনো বলেছি তুমি আমার ডিস্টার্বের কারণ?”

সেতু তেজের সাথে বলে,”সব কথা মুখ ফুটে বলতে হয় না।আপনার আচরণই আমায় বুঝতে বাধ্য করেছে।”

তাজের বিরক্ত লাগলো।ইদানীং অল্পতেই সবকিছু বিরক্ত লাগে।তাই অল্প কথায় বললো,”সেতু আমার আচরণে তুমি কষ্ট পেলে আমি দুঃখিত!এর বেশি আমি কিছু করতে পারবো না।আমার থেকে বেশি কিছু এক্সপেক্ট করো না,পরে কষ্ট পাবে!”

সেতুর রাগে হাত পা কিড়মিড় করে উঠলো।বরের কাছ থেকে এক্সপেক্ট করবে না তো কার কাছ থেকে করবে? দুমাস হয়ে গেলো বিয়ের না কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেছে, না কোন রোমাঞ্চকর মুহূর্ত কেটেছে।চুমু তো দূরে থাক হাত টা অবধি ধরে নি তাজ। এক ঘরে, এক বিছানায় থেকেও অনুভূতি বিহীন একটা সম্পর্ক বয়ে বেড়াচ্ছে। সেতু তাজের দিকে ঘুরে বসলো।তাজ বুঝতে পারলো সেতু তার দিকে তাকিয়ে আছে তবুও দৃষ্টি সিলিং থেকে সরালো না।ওভাবেই উপরের দিকে তাকিয়ে রইলো।সেতু রাগ কমিয়ে মিহি স্বরে বললো,”আপনি এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। তাই না?”

তাজ সত্যিটাই বললো, “হ্যা!”

সেতুর বুকটা কেঁপে উঠলো।তাজের চোখের দিকে তাকিয়ে বড় ভয়ে ভয়ে বললো,”ভালোবাসতেন কাউকে?”

সেতুর কথায় তাজের চোখে কাঁপন দেখা গেলো।দুই ঠোঁট চেপে প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছাড়লো। গলার কাছে কষ্ট গুলো কান্না হয়ে দলা পাকিয়ে রইলো।হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচল একটা মুহূর্তের জন্য থেমে গেলো।একটা সময়ে দৃষ্টি সেতুর মুখের দিকে নিক্ষেপ করে ভারী স্বরে বললো তাজ,”ভালোবাসার কোন পাস্ট টেন্স হয় না,সবটাই প্রেজেন্ট!একদম সদ্য হওয়া দগদগে ক্ষতের মত সদা নবীন! ”

“তার মানে ভালোবাসেন কাউকে?”

“ভালোবাসি কিনা জানি না।তবে আমার সকল অনুভূতির মৃত্যু হয়েছে তাকে হারানোর পর।নতুন এই রুক্ষ, কঠিন তাজের সৃষ্টি হয়েছে তাকে হারানোর পর!বিশ্বাস করো, ভীষণ ভাবে আমি তাকে চেয়েছি তবুও হারিয়ে ফেললাম!এমন ভাবে হারালাম যে তাকে চাইবার অধিকার আর কখনো হবে না!”…… বড় করুণ শোনালো তাজের কথা।তাজের ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে সেতু মুখে ওড়না চেপে কেঁদে ফেললো।

” কেঁদো না সেতু।তোমাকে কষ্ট দিবার কোন ইচ্ছাই আমার ছিল না।তবু দিতে হলো।”…..সান্ত্বনার স্বরে বললো তাজ।
সেতু তবুও কাঁদছে।তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।তার বর অন্য একটা মেয়ে কে ভালোবাসে তার জন্য নাকি এই তাজের কষ্ট দেখে তার কষ্ট হচ্ছে তা বুঝতে পারলো না!

“সেতু তুমি কত সহজে কান্না করে তোমার কষ্ট হচ্ছে সেটা আমাকে বুঝালে অথচ আমার বুকের ভিতর অজস্র কান্নার ঢেউ রোজ বুকের জমিনটা ঝাঝড়া করছে তা কেউ জানে না।এক কৃষ্ণবতীর জন্য আমার আজন্ম হাহাকার থেকে যাবে!তার অপূরণীয় স্থান কেউ পূরণ করতে পারবে না!”

সেতু কান্না ভুলে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো তাজের মুখ পানে।তারপর বললো,”তবে আমায় বিয়ে কেন করলেন?”

“মা বাবার একমাত্র সন্তান হওয়ার প্রায়শ্চিত্ত করতে!”….. তাজ হেরে যাওয়া কন্ঠে বললো। এরপর আর কোন কথাই তাজ বললো না।পাশ ফিরে চোখ বুজলো।সেতু সারা রাত বিছানার এপাশ ফিরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলো।তার কিছুতেই ঘুম হলো না।তাজ সবটা বুঝেও চোখ বুজেই গোটা রাতটা পার করলো।সেতুকে কোন সান্ত্বনা দিলনা।যে নিজেই শূন্য, সে অন্যকে কি করে পূর্ণ করবে?

************

নীতুর হাত পা থরথর করে কাঁপছে।চোখ দুটো টলমল করছে।ঝাপসা দৃষ্টিতে হাতের কাগজটার দিকে তাকিয়ে আছে।নীতুর বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।এই অসম্ভব কাজটা কি করে সম্ভব হলো?নীতু বিস্মিত চোখে শরীফুল কাকার দিকে তাকালো।আশ্চর্য! শরীফুল কাকা হাসছে কেন? নীতুর ফ্যালফ্যাল চাহনি দেখে শরীফুল আস্বস্থ দৃষ্টিতে তাকালেন।এবার নীতু দু হাতে মুখ ঢেকে উচ্চস্বরে কেঁদে ফেললো।শরীফুল কাকার চোখও ছলছল করে উঠলো।
গোটা বিশটা দিন পরিশ্রম করে শরীফুল নীতুর জন্য একটা জব ঠিক করেছে।ঢাকার একটা বড় সফটওয়্যার কোম্পানিতে কম্পিউটার অপারেটরের কাজ।এই হক টাওয়ারের যে মালিক তার শ্যালক সে কোম্পানির এমডি।ফোন করে যখন শরীফুল অনুরোধ করলো তখন সে প্রথমে রাজি না হলেও শরীফুল শেষতক ঢাকা চলে গেলো তার বাসায়।নীতুর সকল সার্টিফিকেট সঙ্গে নিয়ে গেলো।হক টাওয়ারে যতগুলো কম্পিউটার সেকশনে কাজ করেছে নীতু তার একটা চার্টও নিয়ে গেলো।এরপর পুরানো লোক হিসাবে অনেকটা পায়ে ধরার মতই অনুরোধ করে চাকরির ব্যবস্থা করলো।অবশ্য তিনি বলেছেন,জব পারফর্মেন্স ভালো না হলে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিবেন।তাতেও শরীফুল রাজি হয়েছে।তার বিশ্বাস নীতু পারবে।নীতুর মত কর্মোঠ একটা মেয়ে সব পারবে।

নীতু তখনও কেঁদে যাচ্ছে। তার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।কোন ইন্টারভিউ ছাড়া কি করে তার চাকরি হয়ে গেলো? নীতু আশ্চর্য ভঙ্গিতে বললো,”কখন করলেন এসব কাকা?কেন করলেন?”

শরীফুল নীতুর মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,”এটা আমার কাছে আমার চমৎকৃত মেয়েটির প্রাপ্য!নিজেকে প্রমাণ করে দিও,এই বাপের বয়সী বুড়োকে যেন ছোট হতে না হয়।”

“এত ঋণ আমি কি করে শোধ করবো কাকা?”

শরীফুল বিরক্ত হলেন।খিটমিট করে বললেন,”সবসময় ফালতু কথা কেন বলো?একদম চাকরি নট করে দিবো।”

নীতু হেসে ফেললো।জলে টইটম্বুর চোখে খুশির হাসি। শরীফুল দ্রুত সেখান থেকে সরে পরলেন।”চোখের জল হলো ছোঁয়াচে গোত্রের,অন্যের কান্না সবসময়ই আমাদের স্পর্শকাতর করে তোলে!”

***************
নীতুর ঢাকা যাবার কথা শুনে রিশা ভীষণ খুশি হলো।কিন্তু নীতু খুশি হতে পারলো না।এই হোস্টেল,রিশা,শরীফুল কাকা,হক টাওয়ার সব কিছু নীতু ভীষণ ভাবে মিস করবে।রোজ রাতে হোস্টেলে ফিরে রিশার সাথে গল্প করা।শুক্রবার বিকেলে সবাই ভাগ করে ক্যারাম খেলা,মুড়ি মাখা,বিচ্ছিরি সাদা ফ্যাকাশে বয়লার মুরগীর তরকারি সব কিছু নীতু ভীষণ মিস করবে।নীতুর কান্না এসে গেলো।তা দেখে রিশা কতক্ষণ রাগারাগি করলো।এসব সিলি বিষয় নিয়ে ভাবতে বারণ করলো,আগে নিজের ক্যারিয়ার।এসব কথা বলে কতক্ষণ জ্ঞান দিলো। একসময় নীতু রিশাকে জাপটে ধরলো,রিশার বকবক থেমে গেলো! রিশা পাথরের মত মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলো আর নীতু ফোঁস ফোঁস করে কাঁদতে থাকলো।

*********
নীতু আজ নিজের বাসায় এসেছে।সুরভি দরজা খুলে নীতুকে দেখে ভীষণ অবাক হলো।নীতু সোজাসুজি বাবার রুমে চলে গেলো।সাথে জায়েদও এসেছে।জায়েদের মুখে হাসির আলোড়ন। নীতু যত নিজেকে গুছিয়ে নিবে তত ভালো থাকবে এটা জায়েদের ধারনা। বাবা নীতুকে দেখে অস্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। গড়গড় শব্দ করে কিছু বলতে চাইলেন।নীতুর চাকরির খবর শুনে বাবার চোখ থেকে জলের ধারা নামলো।নীতু নিজের ওড়না দিয়ে বাবার চোখ মুছে দিলো।

মহিমা বেগম সবটা শান্ত দৃষ্টিতে দেখলেন।কোন কথা বললেন না।নীতু চলে যাবার সময় মহিমা বেগম ভেজা স্বরে বলে উঠলেন,”কয় টা ভাত খেয়ে যা মা।খালি মুখে যাস নে।”মায়ের আবদার পূর্ণ কথা নীতু ফেললো না।নীতু চুপচাপ আবার বাবার রুমে চলে গেলো।জায়েদ ফোন করে মিতুকে ইতুকে আসতে বললো।একটু পরই গোটা ব্যাটালিয়ান চলে আসলো।নিখিল অফিস থেকে চলে আসলো।কেমন চাকরি, কোথায় কি সবকিছুর খোঁজ নিলো।নীতু শান্ত স্বরে জবাব দিলো।শান্ত বাড়িটা মুহূর্তেই হইহই করে উঠলো তিন বোনের মিলন মেলায়।সেতু ভিডিও কলে জয়েন করলো।নীতুর ঢাকা আসার কথা শুনে সেতু ভীষণ খুশি।ইচ্ছা হলেই বোনের সাথে দেখা হবে।

রান্নাকরার পুরোটা সময়ে মহিমা বেগম বারবার আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে থাকলো।তা দেখে সুরভি মুখ বেঙচালো।সবার আদিখ্যেতা সহ্য করতে না পেরে একটা সময় বলেই উঠলো,”এতদিন কেন চাকরি হলো না?সাতাশ বছর তো সবার ঘারে বোঝার মত লটকেই রইলে। আর যেই না আড়াই মাস হলো ঘর থেকে বের হলে ওমনি চাকরি হয়ে গেলো।কোন জাদুতে বলতো?রুপের তো এই ছিড়ি তবে কিসের জোরে পাইলে?”

জায়েদ রাগে গরম হয়ে কিছু বলতে নিলো।ইতু তাতিয়ে উঠলো।নীতু দুজনকেই হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে চুপ থাকতে বললো।তারপর ঠান্ডা স্বরে বললো,”ভাবি আমার জন্য তোমার চিরকালই চিন্তার কোন শেষ ছিল না।এর জন্য আমি কৃতজ্ঞ!আজ থেকে বরং নিজের জন্য চিন্তা করো।অনেক তো হলো পরের ধানে মই দেওয়া।আমাকে নিয়ে এত ভাবলে তোমার ধলা চামড়ায় বলিরেখা পরতে পারে।তারপর বুড়িদের মত লাগবে তোমায়।তুমিই তো বলো পুরুষ মানুষ সৌন্দর্যের পুজারি,তারপর ভাইয়া যদি আর একটা বিয়ে কে আনে।তখন কি করবে?তো অযথা অন্যের চিন্তা করা বাদ দাও!রেগো না আবার তোমার ভালোর জন্যই বললাম।”

নীতুর কথায় ইতু মুচকি হাসলো।জায়েদ হতভম্ব দৃষ্টিতে দেখলো নীতুর এই পরিবর্তনীয় রুপ!

সরষে ভর্তা,রসুন ভর্তা,পুইশাকের তারকারি,আর মাছ দিয়ে নীতু ভরপেট ভাত খেলো।তারপও মহিমা বেগম বললো,”আর একটু ভাত দেই? কিছুই তো খেলি না নীতু।”

বিকেলে চলে আসার সময় মহিমা বেগম হু হু করে কাঁদলেন।নীতু কাঁদলো না একফোঁটাও!মাকে সান্ত্বনা দিয়ে চলে আসলো।বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নীতুর মনে হলো,তার কেমন হালকা লাগছে বুকের ভিতরটা।নিঃশ্বাসে সতেজতার ছোঁয়া। নীতু ব্যস্ত পায়ে হাঁটা ধরলো।জায়েদ একটা রিকশা এনে থামলো নীতুর সামনে।নীতু একা যেতে চাইলেও জায়েদ সে বারণ শোনেনি, ঠিকিই রিকশা নিয়ে চলে এসেছে। নীতু রিকশায় উঠে বসলো।জায়েদ পাশে বসে রইলো।একটা সময় নীতু বলে উঠলো,”দাদাভাই,আমরা আপনমানুষের গুরুত্ব কেন সবসময় বেলাশেষেই বুঝতে পারি?”

জায়েদ কিছু বললো না।কিন্তু সস্নেহে নীতুর মাথায় হাত রাখলো।

চলবে,

#কাননবালা!
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ১১

নীতু তখন সবে কিশোরী। কিশোরী মেয়েদের মন হলো শরতের স্বচ্ছ আকাশের মত!নীতুর সেই স্বচ্ছ কিশোরী মনে কর্দমক্ত হলো এক গুচ্ছ মানুষের জন্য! নীতু সেই বয়সেই বুঝতে পারলো নীতুর গায়ের রঙটা নীতুর জন্য অভিশাপ।বুঝতে পারলো বললে ভুল হবে একদল লোক চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিতো।নীতুর কৃষ্ণ বর্ণ হাত পা দেখে কাজিনরা বলতো,”ডাহুকের মত হাত পা তোর। এই হাতে না মানাবে রেশমি চুড়ি, না মানাবে পায়ে রুপোর নুপুর! ” হাতে একগুচ্ছ রঙ বেরঙের রেশমি চুড়ি পরার শখ, পায়ে নুপুর পড়ে ঝুমঝুম শব্দ তুলে এঘর ওঘর দাপিয়ে বেড়ার শখ নীতু সেদিনই মাটি দিলো!
মামা-চাচা,ফুপি খালারা যেদিন থেকে নীতুর জন্য হালকা রঙের পোশাক উপহার দিতে শুরু করলো সেদিন থেকে খুব গোপনে নীতু রংধনুর রংকে তার জন্য নিষিদ্ধ বলে ঘোষিত করলো!
কালো মুখশ্রীর কালো চোখে কাজল পড়া মানায় না জানলো যেদিন সেদিন থেকে নীতুর ড্রেসিং টেবিলে কাজলের কৌটা আর দেখা গেলো না!
আত্মীয় স্বজনের আড্ডায় যখন নীতু হতো চিন্তার টপ সাবজেক্ট সেদিন থেকে নীতু নিজেকে ঘরবন্দী করলো!

কালো জামায় কাকতাড়ুয়া, সাদায় ভূত,লাল রঙে বাইদ্যানি, নীলে যে বড়ই মলিন আর কমলায় ইয়াক থু থু! এই সব কমপ্লিমেন্টের পর নীতুর নিজেকেই নিজের বড় কুৎসিত মনে হতো!
কৃষ্ণবতীর অঙ্গে কারুকার্যময় সোনালী চকচকে অলংকার মানায় না!না মানায় কারো পাশে!বড় বেমানান কেন হয় কৃষ্ণবতীরা? নীতু তা ভেবে পায় না।

সকল গুন যেন মাটি চাপা পরে যেতো এই পাহাড় তুল্য কৃষ্ণ বর্ণের ভারে!কেউ কখনো সেই পাহাড় খুঁড়ে দেখলো না!মন পড়লো না! জানতে চাইলো না নীতুর ভিতরের অভিমানী নীতু কে!পদ্মদিঘির মত চোখে কেউ ডুবে মরলো না,লম্বা চুলে কেউ বাঁধা পড়লো না,টানা হাসিতে কারো চোখ হাসলো না!কৃষ্ণ বর্ণতেই সব ঢাকা পড়ে গেল!

নীতু হোস্টেলের বারান্দায় বসে এসবই আনমনে ভাবছিল।কত অপমান,অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য যে নীতু সয়েছে তা কেবল তার কৃষ্ণবর্ণ স্বত্তাটাই জানে!
নীতুর এই সব মনে হলে এখন হাসি পায়!বিষাক্ত সেই হাসিতে নীতুর সারা শরীর বিষিয়ে ওঠে।অন্যের জন্য নিজের যা কিছু পায়ে ঠেলে জলাঞ্জলী দিয়েছে নীতু, বেলাশেষে আজ বড় সাধ জাগে সেই হারানো শৈশব,উচ্ছল কৈশরের প্রতিটা স্বপ্ন-ইচ্ছা কুড়িয়ে শাড়ির আঁচলে স্থান দিতে!

**************
নীতু হা করে তাকিয়ে আছে রিশার দিকে।নীতুর হতভম্ব রুপ দেখে রিশা বলে,”নীতু ডার্লিং এমন হা করে আছো কেন?মশা ঢুকে যাবে তো!”
রিশা একগাদা শপিং করে এনেছে নীতুর জন্য। শাড়ি, কুর্তি, সালওয়ার কামিজ!সেগুলো রিশা ভাজ করে নীতুর লাগেজে রাখছে।নীতু বিরক্ত কন্ঠে বলে,”এতগুলো টাকা নষ্ট কেন করলি?আর এত পোশাক দিয়ে আমি কি করবো?”
“মুখ বন্ধ করো তো।অযথা প্যানপ্যান আমার পছন্দ নয়।”….রিশা ব্যস্ত হাতে কাপড় ভাজ করা অবস্থায় বললো।
কাপড় চোপড় ভাজ করা থামিয়ে দিয়ে নীতু হাত ধরে টেনে রিশাকে পাশে বসায়।রিশার হাতে একটা কুর্তি,নত মস্তকে অনবরত পা দিয়ে মেঝে ঘসছে।রিশার আসলে কান্না পাচ্ছে! কিন্তু রিশারা তো কখনো কাঁদে না।তাই রিশা কাঁদলো না। ছোটদার পরে এই মানুষটা নীতুর এতটা আপন হযে গিয়েছিল।
নীতু রিশার কাঁধে মাথা রেখে বলে,” আমি তোকে ভীষণ মিস করবো রিশা!ভীষণ! ”

ধরা কন্ঠে রিশা বলে,”ঢং কম করো ডার্লিং!”

“ঢং?তুই আমাকে মিস করবি না?”….. নীতু মাথা উঠিয়ে অবাক হয়ে রিশার দিকে তাকিয়ে বলে।

” মোটেই না।মিস করার কি আছে?এই রিশা কাউকে মিস টিস করে না!”একগুঁয়ে ভাবে বলে রিশা।

“আমার সাথে যাবি রিশা?চল না।দুবোন এক সাথে থাকবো।”

“আমি কোথাও যাবো না ডার্লিং।আমার যে নির্বাসন চলছে!ছোটদা ফিরুক তারপর যেথা যাবার যাবো।”

নীতু রাগ করে। এই মেয়েটাকে একা ফেলে যেতে মন চাইছে না তার।তাই রাগ নিয়ে উঠে চলে যেতে নেয়।রিশা খাটে বসেই নীতুর ওড়না হাতে মুঠো করে ধরে।নীতু দাঁড়িয়ে পড়ে।রিশা ধরা কন্ঠে বলে,”নীতু ডার্লিং রাগছো কেন?আমি তোমায় মিস না করলও আমার স্কুটিটা কিন্তু তোমায় ভীষণ মিস করবে।সত্যি বলছি!আমার সিগারেটের দিব্যি!”

নীতু হেসে ফেলে।পিছন ফিরে রিশার ববকাট চুল ধরে টান মারে।রিশাও হেসে দেয়।

****************

মহিমা বেগম কিছু শুকনো পিঠা তৈরি করে ইতুর হাতে দেয়। ইতু দেখলো মা শাড়ির আঁচলে বারবার চোখ মুছছে।ইতু দীর্ঘশ্বাস ফেলে! জগতের সব মা এমন কেন হয়?
মহিমা বেগম ফের চোখ মুছেন আঁচলে তারপর বলেন,”নীতুর পাকন পিঠা খুব পছন্দ। মনে করে দিস।”
ইতু পিঠা হাতে নিয়ে আফসোসের সুরে বলে,”মা পরের কথাকে পশ্রয় দিয়ে নিজের মেয়েকে যদি অবহেলা না করতে তবে আজ তোমায় এই আফসোসের কান্না কাঁদতে হতো না।”
মহিমা বেগম কিছু বললেন না।ইতু চলে গেলো।মহিমা বেগম দরজা আটকে ধীর পায়ে স্বামীর কাছে এসে বসলেন।স্বামীর অচল হাতে নিজের হাত রেখে বিড়বিড় করে বলে উঠলেন,”কেউ আমায় বুঝলো না মিতুর বাবা!কেউ আমায় বুঝলো না!”
স্বামী ব্যক্তিটি কিছুই বলতে পারলেন না।কেবল ফ্যালফ্যাল করে স্ত্রীর মুখ পানে তাকিয়ে রইলেন।

******************
নীতু বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে বাসের অপেক্ষায়।নীতুর পাশে যথাক্রমে জায়েদ, রিশা, ইতু -মিলন,শরীফুল কাকা দাঁড়িয়ে আছেন।ওরা সবাই নীতুকে বাসে উঠিয়ে দিতে এসেছে।জায়েদ যাবে নীতুর সঙ্গে। নীতুর হাজার বারণ স্বত্তেও সে টিকিট কেঁটেছে যা এখনো নীতুর অজ্ঞাত! শরীফুল কাকা একগাদা উপদেশ দিচ্ছে নীতুকে।নীতু মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে শুনছে পাশে রিশা বিরক্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।তার এই উপদেশ বাণী অসহ্য লাগছে, তাই বলে উঠলো, “আহা কাকা এসব কি?এবার থামেন। নীতু ডার্লিং তো আর ছোট বাচ্চা না!”
শরীফুল কাকা মৃদু হেসে ফেললেন।ফের বললেন” আমার ভাগ্নীকে বলে রেখেছি তার কাছেই তুমি উঠবে।কোন সমস্যা আশা করি হবে না।তারপরও যদি হয় আমাকে বলতে দ্বিধা করো না। ” নীতুর কৃতজ্ঞতায় চোখ ভারি হয়ে উঠলো।নীতু হুট করেই কদমবুসি করে ফেললো শরীফুল কাকা কে।তিনি নীতুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
ইতু বোনের গলা জরিয়ে কেঁদে ফেললো।মায়ের দেওয়া পিঠা আর দুটো শাড়ি দিলো।নীতু বোনের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে কপালে চুমু খেলো।এরপর রিশার পাশে এসে দাঁড়ালো। রিশা স্কুটিতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।স্বভাব সুলভ ড্যামকেয়ার ভাব নিয়ে। নীতু রিশার হাত দুটো ধরে সস্নেহে চুমু খেয়ে বললো,”আসছি।ওসব ছাইপাঁশ ছেড়ে দিস।”
রিশা ববকাট চুল দুলিয়ে মাথা নাড়লো।হ্যা বললো নাকি না বললো নীতু বুঝতে পারলো না।নীতুর চোখে জল এসে গেলো।রিশা বললো,”শুনো নীতু ডার্লিং এত ছিচকাঁদুনেপনা ভালো না।কখনো কাঁদবে না।অলটাইম স্মাইল জোনে থাকবে, বুঝেছো?এত সুন্দর হাসি তোমার, সারাক্ষণ কাঁদো বলেই তো আমরা কোন দুলাভাই পাচ্ছি না।”…..তারপর এক চোখ মেরে বললো,”ঢাকার ছেলেরা কিন্তু হেব্বি জোস!বুঝেছো? ”
নীতু অশ্রুসিক্ত চোখে রিশার গালে হাত রেখে বিদায় নিল।জায়েদকে গাড়িতে উঠতে দেখে নীতু বুঝতে পারলো দাদাভাই ওকে একা ছাড়ছে না।বাসে উঠে জানালা থেকে হাত নাড়লো নীতু।তার প্রতিত্তোরে সবাই হাত নাড়লেও রিশা নাড়লো না।স্কুটিতে স্টার্ট দিয়ে বাসস্টপ ছেড়ে আসলো।কেউ দেখলো না ড্যামকেয়ার ভাব নিয়ে চলা রিশার ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট আর চোখে তার নিঃশব্দ অশ্রুরোদন! অনেক বছর পর রিশার চোখ থেকে আবার জল গড়ালো।রিশা চোখের জল মুছলো না।সবসময় চোখের জল মুছতে নেই!

***********
বাসটা যখন ছাড়লো নীতু জানালা গলে বাহিরে তাকিয়ে রইলো।এই খুলনা শহরে তার সাতাশ বছর কেটেছে।বড় আপন এই শহর ছেড়ে যেতে বুকের কোণে খাঁ খাঁ করতে লাগলো!জায়েদ পাশের সিটে চোখ বুজে মাথা এলিয়ে দিয়েছে।নীতু একটা সময় কেঁদে ফেললো বাবা মায়ের কথা মনে করে।জায়েদ কান্নার শব্দে ফিরে তাকালো। আহ্লাদী কন্ঠে বললো,”কাঁদিস না বোন।বাদাম খাবি?”
নীতু অশ্রু চোখেই ফিক করে হেসে দিল।জায়েদের ছেলে ভুলানো কথায় নীতু অবাক হলো না।নীতু চোখ মুছে বাদাম নিয়ে বললো,”দাদাভাই তুমি আর বদলালে না!”
জায়েদ আবার সিটে হেলান দিয়ে বললো,”কিছু মানুষের না বদলানোই ভালো।এখন চুপচাপ বাদাম খা!কান্নাটান্না করে আমাকে একটুও ডিস্টার্ব করবি না, এমনিতেই তোর বোনের যন্ত্রণায় কাল ঘুমাতে পারিনি।”
নীতু অবাক হলো।সে কখন ডিস্টার্ব করলো?বাদাম মুখে দিয়ে নীতু জানালা গলে উদাস দৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে রইলো।নীতু জানে না সামনে কি আছে?কতটা মসৃণ হবে পথটা?তবুও নীতু লড়াই করে যাবে!নিজের ক্যারিয়ারের সাথে আর কোন কম্প্রোমাইজ করবে না!

জায়েদ চোখ বোজা অবস্থাই বললো,”এত ভাবিস না নীতু।যা হবে গোটা টাই ভালো হবে।নিজেকে নিজের ভালো রাখতে হয়।”…… জায়েদ এই কথা গুলো বলে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লো।নীতু ঘুমালো না।তার রিশার জন্য বড় চিন্তা হতে লাগলো।

***********

নীতুকে শরীফুল কাকার ভাগ্নীর ফ্লাটে নামিয়ে দিয়ে জায়েদ তার বন্ধুর বাসায় চলে গেলো।পরশু নীতুকে অফিসে দিয়ে জায়েদ খুলনা চলে যাবে।এই ফাঁকে নিজের দোকানের জন্যও কিছু কাপড় কিনে নিবে ভেবে রাখল জায়েদ। মিরপুরের এই বাড়িটা সাত তলা।চার তলায় থাকে শরীফুল কাকার ভাগ্নী।
নীতু এখন বসে আছে ফ্লাটের বারান্দায়। নীতু ভীষণ বিস্মিত হয়েছে সাথির ব্যবহারে।শরীফুল কাকার ভাগ্নীর নাম সাথি।চার রুমের এই ফ্লাটটিতে মেয়েটা একা থাকে। ছিপছিপে শরীরে লম্বা গড়নের মেয়ে সাথি।চোখ দুটো ছোট ছোট,নাক বোঁচা টাইপের দেখতে কিউট লাগে, উজ্জ্বল চাপা গায়ের রঙ আর ভীষণ ছটফটে একটা মেয়ে সাথি।পঁচিশ ছাব্বিশ বয়স। আসার পর থেকে খুবই আন্তরিক আচরণ করেছে।মনে হচ্ছে নীতু তার মায়ের পেটের বোন।তোয়ালে এগিয়ে দিছে ফ্রেশ হওয়ার জন্য, ভাত খাওয়ার সময় পাশে বসে খুবই সুন্দর করে বেড়ে বেড়ে খাওয়াইছে।এটা ওটা পাতে তুলে দিয়েছে।
নীতু খাবার খেতে খেতে সাথির সম্পর্কে অর্ধেক জেনে গেছে। নীতু এতটুকু নিশ্চিত এই বাসায় তার বোর হতে হবে না।সাথি একাই একশ কথা বলাতে। সাথি সম্পর্কে খাবার খেতে খেতে যা জেনেছে তা হলো।সাথী অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে একটা এতিম ছেলের সাথে ফেইসবুকে বন্ধুত্ব করেছে।ছেলেটা তখন সিঙ্গাপুর থাকতো।ওখানের একটা কোম্পানিতে মালিকানাধীন কাজ করতো।সাথির ছেলেটার সাথে কথা বলতে বলতে ভালো লেগে গেলো।এরপর সাথি নিজেই প্রপোজ করলো।ছেলেটা দেশে আসলে সাথির মা বাবা বিয়ে দিতে চাইলো না,কেননা একে ছেলে এতিম তারউপর অল্প বেতনে বিদেশে কাজ করে।সাথি অসীম সাহসে তার সাথে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলো।কিন্তু পারলো না।সাথির কান্নাকাটিতে এরপর শরীফুল কাকা ছেলের সাথে কথা বললো নিজস্ব ভাবে। ছেলেটা কি বললো কে জানে শরীফুল কাকা নিজে দাঁড়িয়ে ওদের কাজি অফিসে বিয়ে দিলেন।সাথির বিয়ে হয়েছে আজ দু বছর।এখন পর্যন্ত পরিবারের কেউ মেনে নেয়নি। সাথি এখন একটা স্কুলে চাকরি করে আর একা এই বাসায় থাকে!

নীতুকে বসে থাকতে দেখে সাথি এক মগ কফি বানিয়ে নিয়ে আসলো।মিষ্টি করে বললো,”আপু কফি নাও।” মেয়েটা এর মধ্যে তুমি বলা শুরু করেছে।
নীতু তাকালো সাথির দিকে।সাথির চোখ মুখ হাসছে।ছটফটে অঙ্গ ভঙ্গি! সাথির এই সহজ ব্যবহার নীতুর ভালো লাগল।নীতু কফিতে ঠোঁট ছুঁয়ে বললো,”ধন্যবাদ।!
সাথি আবার হাসলো।মেয়েটা হয়তো হাসতে পছন্দ করে।নীতুর হুট করেই রিশার কথা মনে পড়লো।
“আপু রিপনকে বলেছি তোমার কথা।সে আমাকে বলেছে, মামা যাকে পাঠিয়েছে তুমি তার কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা নিবে না।”

“না না আমি এভাবে থাকবো না সাথি।শরীফুল কাকাকে আমি কিচ্ছু বলতে পারিনি। তোমার প্রতি অনুরোধ টাকা না নিয়ে আমাকে ছোট করো না।”….. নীতু অনুনয় করে বলে।

সাথি কফির কাপে বিস্কিট ডুবিয়ে খাচ্ছে। চোখে মুখে শিশু সুলভ ছায়া।নীতু কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করে,” সাথি প্রেগন্যান্ট অবস্থায় এত ছটফট কেন করো?”

“তুমি কি করে বুঝলে আপু?”

নীতু উত্তরে কিছু না বলে কেবল হাসলো। সাথি কফির মগ রেখে মুহূর্তেই কেঁদে ফেললো। হাসি খুশি মেয়েটাকে আচানক কাঁদতে দেখে নীতু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
সাথি কাঁদতে কাঁদতে বললো, “আপু চার মাস চলছে প্রেগ্ন্যাসির তবুও মা বাবা মেনে নিচ্ছে না।কি হয় মেনে নিলে।এতিম একটা ছেলেকে ওরা আপন করে নিচ্ছে না অথচ রিপন বলে এই বেবির মুখ দেখলেই মা বাবা রাগ ভুলে যাবে।কিন্তু আমার তা মনে হয় না।বিয়ের পর রিপন যেদিন নতুন চাকরি পেলো ভালো বেতনের সেদিনও বাবা মাকে জানালে তারা বিচ্ছিরি গালি দিলো।এই সময় মেয়েরা বাপের বাড়ি থাকে,কতকিছু করে খাওয়ায়।অথচ আপু আমার কপাল দেখো এত বড় ফ্লাটে আমি একা থাকি।রাতে ভয়ে ঘুম হয় না।”

নীতুর ভীষণ মায়া লাগলো সাথির জন্য। নীতু কান্নারত সাথিকে দু হাতে আগলে ধরলো।মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।সাথির কান্না থেমে গেলো মুহূর্তেই, হাসি মুখে বলে উঠলো,”আপু আজ থেকে আমরা দুজন এক সাথে ঘুমাবো।তোমার সমস্যা হবে না তো?হলেও আমি ঘুমাবো।”

নীতু সাথির কথায় হেসে দিলো।নীতুর কেন জানি মনে হলো সাথি যেন রিশারই আর এক রুপ!

চলবে,