#কাব্যের_আঁধার_২
#লেখনীতে: আঁধার চৌধুরী বর্ষা
#পর্ব-৬
শমসের আর নাদিরা একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে।আঁধার আড়মোড়া ভেঙে খুলতে যায়। হোল দিয়ে কিছুই দেখতে পায় না কারণ মানুষটা অনেক লম্বা।আঁধার দরজা খুলতেই দরজার পাশের ব্যক্তিও আঁধারের দিকে তাকায়।
দুজনেই একসাথে বলে উঠে ‘ তুমি ‘
আঁধার, আপনার তো সাহস কম না আমাকে ফলো করছেন। আজ আপনার একদিন কি আমার একদিন দাড়ান দেখাচ্ছি মজা বলেই ঝাড়ু নিয়ে আসে আর ততক্ষণে আঁধারের চেঁচামেচিতে বাড়ির সবাই এসে জড়ো হয় দরজার কাছে।
আধার যেইনা ঝাড়ু দিয়ে বাড়ি মারতে যাবে অমনি নাদিরা বলে ওঠে,
নাদিরা, এই আঁধার তুই কাব্যকে মারছিস কেন?? তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি মা??
শমসের, আধার কাব্য যদি কিছু করে থাকে তাহলে আমাকে বল কিন্তু তুই নিজে ওকে মারিস না। কারণ স্বামী কে মারতে নেই।
আঁধার, স্বামী!!! Who is স্বামী?? আর এখানে মিস্টার খান কোথা থেকে এলেন?? বাবা মা তোমাদের কোন ভুল হচ্ছে। ইনি মিস্টার খান নন তিনি হলেন সেই অভদ্র ইতর ছেলেটা। ওই আমার সঙ্গে তর্ক করছিল সিগারেট খাওয়া নিয়ে। আজতো একে শিক্ষা দিতেই হবে বলে আবার ঝাড়ু নিয়ে তেড়ে যায় কিন্তু হটাৎ থমকে যায় কারণ কাব্য নিজের মুখের মাস্ক টা খুলে ফেলেছে।
আধার অস্ফুটে বলে উঠে,
‘ মিস্টার খান ‘
কাব্য দরজার কাছে দাঁড়িয়ে হেলান দিতে ঠোঁটে বাকা হাসি এনে বলে,
কাব্য, ও তার মানে তুমিই আঁধার যাকে আমি আমার 23 বছর বয়সে বিয়ে করেছিলাম, তারমানে তুমি আমার সেই বাচ্চা বউ। কিন্তু বাচ্চা বৌ তো এখন আর বাচ্চা নেই বড় হয়ে গেছে। এখন আমি তোমাকে বাচ্চা বউ কি করে ডাকবো??
আধার কাব্য কে দেখে অনেক অবাক হয়েছিল কিন্তু নিজেকে সামলিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,
আধার, যা বলার ভিতরে এসে বলুন। দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বললে পাশের বাসার ভাড়াটিয়া দেখবে আর আমি চাই না এখন কোন সিনক্রিয়েট হোক। প্লিজ ভিতরে চলে আসুন।
কাব্য ভীতরে ঢুকে দরজা আবজিয়ে দিয়ে বলে,
কাব্য, বাহবা বাবার আদরের মেয়ে আঁধারের একী অবস্থা?? আমাকে দেখে চমকে গেল দেখি। আল্লাহ আমি তো তোমার বরই আমাকে দেখে এত চমকানোর কি আছে?? আমি তো এটাই বুঝতে পারছিনা, তুমি আমাকে রেখে চমকালে কেন?? কেন আমাকে এক্সপেক্ট করো নি নাকি?? বাট আমি তো তোমার হাজব্যান্ড তোমার উচিত ছিল আমাকে এক্সপেক্ট করা।
আঁধার,…..
কাব্য, তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো…..
আঁধার, বলুন….
কাব্য, এখানে না ঘরে চলো। সব কথা এখানে বলা পসিবল না আর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কিছুটা প্রাইভেসি থাকে সেটা নিশ্চয়ই তুমি জানো। তাই ঘরে চলো আমি সেখানে কথা বলব।
আঁধার নাদিরার দিকে তাকালে নাদিরা ইশারায় হ্যা বলে আর আঁধার রাজি হয়ে যায়।
আঁধার, চলুন তাহলে। শাওন তুই এখানেই বস আমি আসছি।
শাওন, আচ্ছা আধু….
আঁধু বলতেই কাব্য শাওনের দিকে চোখ গরম করে তাকায় আর শাওন ভরকে যায়।
আঁধার আর কাব্য উপরে চলে আসে।আঁধার কাব্যকে ইশারা করে বিছানায় বসতে কিন্তু কাব্য ওর কথা না শুনে ওকে বিছানায় বসিয়ে ওর পায়ের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।
আঁধার, এটা আপনি কি করছেন মিস্টার খান….
আঁধার পুরো কথা বলার আগেই কাব্য ওর ঠোটে আঙ্গুল ছুঁইয়ে চুপ করিয়ে দেয়। কাব্য বলে,
কাব্য, কোনো কথা নয়।আজ শুধু আমি বলব আর তুমি শুনবে।
আঁধার তোমার মনে আছে তুমি যখন আশ্রমে ছিলে তখন কবির বলে একটা অজানা ছেলের কাছ থেকে রোজ চিঠি আসতো তোমার কাছে।
কবিরের নাম শুনে আঁধার চমকে উঠে। আর আঁধার কে চমকে উঠতে দেখে কাব্য বলে,
কাব্য, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।আমি জানি কে ছেলেটা। আর আমি এটাও জানি তোমার ওর সাথে সম্পর্কটা শুধু বন্ধুত্বের। হ্যাঁ অন্যরা জানলে ভাববে ভালবাসার সম্পর্ক কিন্তু আদতে ওটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
কাব্যের কথায় আঁধার সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সায় জানায় যে ও জানে। কাব্য আবার বলে,
কাব্য, সেই ছেলেটা ছিল একটা ২৩ বছরের যুবক।মেডিক্যাল থার্ড ইয়ারে পড়ত।সারাদিন পড়াশুনা, ক্যারিয়ার এসবই তার দিন কাটানোর রসদ ছিল। ওর বাবা মা ছিলো এই শহরের সবচেয়ে ধনী মানুষ আর অনেক সোসিয়াল সার্ভিসও করতেন তাই সেই সুবাদে ওদের আশ্রমও ছিল।সেই আশ্রমে ছোটো থেকেই থাকতো একটা মেয়ে। ছেলেটা যখন মেয়েটাকে প্রথম দেখে তখন মেয়েটার ১৩ বছর।আর ছেলেটার ২১। ছেলেটা মেয়েটাকে দেখার পর থেকেই তার প্রেমে পরে যায়।দিনদিন মেয়েটার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়তে শুরু করে।নিজের দূর্বলতা কে কাটাতে ছেলেটা মেয়েটাকে চিঠি লিখতে শুরু করে। মেয়েটাও বন্ধু ভেবে চিঠি লিখতে শুরু করে।ছেলেটা চেয়েছিল মেয়েটা নিজের পায়ে দাড়াক যাতে সমাজে নিজের পরিচয় গড়ে তুলতে পারে কিন্তু তার আগেই ছেলেটার বাবা মা ছেলেটার সাথে মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দেয়।
সেদিন ছেলেটা খুব খুশি হয়েছিল যে নিজের পিচ্ছি প্রেমিকা কে বউ হিসেবে পেয়েছে কিন্তু কষ্টও পেয়েছিল কারণ ও এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে মেয়েটির জীবন নষ্ট করতে চায়নি। তাই কি করবে ভাবতে থাকে।হটাৎ মাথায় আসে যে দেশ ছেড়ে মেয়েটিকে ছেরে চলে যাবে তার আগে মেয়েটাকে একটু কষ্ট দিতে হবে নাহলে মেয়েটা ওকে ঘৃণা করবে না।তাই ছেলেটা বিয়ের দিন রাত থেকে মেয়েটা কে কষ্ট দিতে থাকে।কিন্তু পরেরদিনই মেয়েটার অ্যাকসিডেন্ট হয় আর ছেলেটা পাগল প্রায় হয়ে যায় আর বুঝতে পারে যে এভাবে ও বেশিক্ষণ টিকতে পারবে না।তাই মেয়েটার জ্ঞান ফেরার আগেই ছেলেটা দেশ ছেড়ে,নিজের আপনজন দের ছেরে চলে যায়।
তবে ছেরে গেলেই কী সব হয়?? ছেলেটা ছেরে চলে গেলে পাঁচ বছর কেটে যায় নিজের মতো করে কিন্তু ছেলেটার জীবন তখনও পাঁচ বছর আগেই পরে থাকে। ছেলেটা ডক্টর হিসেবে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করে কিন্তু একজন স্বামী হিসেবে কিছুই করতে পারে না। মেয়েটাও পাঁচ বছরে কলেজ শেষ করে মেডিক্যাল এ অ্যাডমিশন নেওয়ার দুই বছর হয়ে যায়।
তার পিচ্ছি বউ এখনো তাকে ভালোবাসে এই বিশ্বাসই আছে সে।কিন্তু সত্যি কি ভালোবাসে??
এতদিন ছেলেটা তার পরিচয় লুকিয়েছে কিন্তু আর না।এখন সে সব বলবে। ছেলেটা হলো……
আঁধার এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিল কিন্তু এতক্ষণে মুখ খুলে বলে,
আঁধার, ছেলেটা হলো মিস্টার খান আর মেয়েটা আঁধার বলেই কাব্য কে নিজের পায়ের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে ঘরটা গুছাতে শুরু করে।
কাব্য আঁধার কে এত নরমাল দেখে হজম করতে পারছে না তাই বলে,
কাব্য, আঁধার তুমি কিছু বলবে না??
আঁধার বিছানা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,
আঁধার, কি বলবো?? কিছু বলার নেই, আর আপনি যে আমাকে ভালোবাসেন সেটা তো আমার চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্য।আপনি যে আমাকে ভালোবাসেন এটা তো আমার জন্য খুশির খবর।আর শুধু তাইনা আপনি আমাকে এখন থেকে না আরো ৭ বছর আগে থেকে ভালবাসেন আর আপনার মত সুপুরুষের ভালোবাসা পাওয়া আমার সৌভাগ্য।
কাব্য বুঝতে পারে লোহা গরম আছে তাই আস্তে করে আঁধার কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
কাব্য, Your husband loves you Andhaar….
আঁধার কাব্যর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
আঁধার, আমার কিছুদিন সময় লাগবে মিস্টার খান সবটা অ্যাডজাস্ট করতে। সেই সময় টা কি আমি পাবো??
কাব্য, ( আঁধার সময় চাচ্ছে তারমানে ও আমাকে মাফ করে দিয়েছে।কিন্তু এত তাড়াতাড়ি মাফ করার মেয়ে তো আঁধার না। ওর মাথায় কি চলছে )
অবশ্যই পাবে কিন্তু মিস্টার খান না কাব্য বলো।কেউ নিজের হাবি কে এভাবে ডাকে।
আঁধার, বললামই তো সময় লাগবে।আপনি আমাকে সাতদিন সময় দিন তারমধ্যে আমি অ্যাডজাস্ট করে নিবো।
To be continued….