কাব্যের আঁধার ২ পর্ব-০৮

0
637

#কাব্যের_আঁধার_২
#লেখনীতে: আঁধার চৌধুরী বর্ষা
#পর্ব-৮

আধারের কথা শুনে শাওন পিছতে পিছতে বলে,
শাওন, না আঁধার তুই এটা করতে পারিস না। তুই এভাবে আমাকে মারতে পারিস না…মারবি না আমাকে…এই আমি তোকে বলে দিলাম।
আঁধার, এখন তোর পিছনে ঘোরার মত সময় নেই আমার।আমার পিঠাগুলো বানাতে হবে।অর্পা, ফিহা আর রায়হানের জন্য রাখতে হবে। মা ওদের জন্যও রেখে দিব।

নাদিরা, এগুলো বলার কি আছে?? বাচ্চা তিনটার জন্য রাখবি তাও আবার আমাকে জিজ্ঞেস করে কেন?? আচ্ছা যা বলছিলাম কোন পিঠা বানাবি?? অর্পার তো সমুচা পছন্দ।ফিহা রায়হানও তাই।তাহলে ওটা বানাবি নাকি??

কাব্য, এই ফিহা,অর্পা, রায়হান এরা কে??
শমসের, তোর বউয়ের বন্ধুরা।ওরা শাওনেরও বন্ধু।
কাব্য, আচ্ছা।আঁধার তোমার কলেজে কি সবাই জানে তুমি বিবাহিত??
আঁধার, অবশ্যই জানে।এটা না জানানর তো কিছু দেখছিনা।

কাব্য, তাহলে ছেলেরা তোমাকে প্রপোস করে কোন সাহসে।তুমি তো ম্যারিড তাও ছেলেরা প্রপোস করে।
আঁধার, আমার হাসবেন্ড যদি বছরের পর বছর বিদেশে পরে থাকে, আমাকে এক ফোঁটা ফোনও না দেয় সেখানে সবার আমাকে প্রপোস না করাটা অস্বাভাবিক, করাটা স্বাভাবিক । তাই যদি করে থেকে সেখানে আমার কিংবা ওদের কারোরই দোষ নেই। তাই এই ব্যাপারে আর কথা না বললেই খুশি হবো এমনিতেও সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমাকে পিঠা বানাতে বসতে হবে।নাহলে দেরি হয়ে যাবে।তাহলে মা ওদের জন্য তুলে রাখবো।

নাদিরা, হ্যা বেশি করে তুলে রাখিস আর আমিও আসছি তোকে হেল্প করতে।
আঁধার, তোমাকে করতে হবে না। শাওন আছে, ও করবে।তুমি টেনশন করোনা।সব সময় মত হয়ে যাবে।
নাদিরা, আমি টেনশন করছি না আর এইতো ঝগড়া করলি এখন আবার বলছিস শাওন করবে।তোদের নিয়ে আর পারিনা বাপু। এই ঝগড়া তো এই মিল।
নাদিরার কথা শুনে আঁধার শাওনের পাশে দাড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বলে,

আঁধার, তুমি বুঝবেও না।আমরা দুই বন্ধু হলাম ইউনিক কিন্তু তারমানে এই না যে শাওনের সাথে প্যাচ আপ করে না গেছি, I am still angry with him. আর যতক্ষণ না ও নিজে সরি বলছে আমি ওর সাথে কথা বলবো না।
আধারের কথা শুনে শাওন সরি বলে কান ধরে উঠবস করতে থাকে।
শাওন, সরি, তুই তো জানিস বল দুষ্টুমি করতে করতে সবাই কে কষ্ট দিয়ে ফেলা আমার অভ্যাস। এর আগেও তোকে অনেকবার কষ্ট দিয়েছি কিন্তু প্রমিজ করছি আর করবো না।এবার ক্ষমা করে দে।

আঁধার, আচ্ছা ঠিকাছে চল।এখন দেরি হয়ে যাচ্ছে।মা তো সব রেধে রেখেছে এখন শুধু পিঠাগুলো বানিয়ে ভাত খেলেই হবে। চল কাজে লেগে পড়ি বলে আঁধার রান্নার ঘরের দিকে হাঁটা দে। ওর পিছন পিছন বাকিরাও ড্রইং রুমে চলে আসে।শাওন আর আঁধার কে এত ক্লোজ দেখে তো জ্বলে পুড়ে। শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আঁধার পুর বানিয়ে নিয়ে আটা মেখে পিঠা বানাতে বসে। প্রথমে অনেক রুটি বেলে নেয় তারপর সবগুলোকে কেটে এক সাইজ করে নিয়ে পুর ভরে বানাতে বসে। শাওনও বানাতে থাকে আর একেক সময়ে একেকটা শেপ দেয় পিঠার । আঁধার কে দেখিয়ে বলে,

শাওন, আঁধার দেখ তো এটা কেমন হয়েছে?
আঁধার, সুন্দর বারবার দেখাস না তো। তুই না কোনো কাজ করতে বসলে অনেক জালাস। কোন দিন যে তোর জ্বালায় আমি এই বাড়িতে চলে যাই তুই নিজেও বুঝতে পারবি না।
কাব্য, (যেখানে স্ত্রীরা নিজের স্বামীর সাথে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় সেখানে আমার ওয়াইফ বলছে যে আমার ভাই মানে নিজের দেবরের সাথে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। এটা কোন কথা হলো। আমার অনুপস্থিতিতে শাওন আঁধারের এত ক্রস হয়ে গেল যে আঁধার আমার সাথে অন্য ভাবে কথা বলে আর শাওনের সাথে অন্য ভাবে কথা বলে। আমি এটি এক্সপেক্ট করিনি। যে করেই হোক আঁধারকে নিজের কাছে ফেরাতে হবে। না হলে আমার সংসার ভাঙতে দুদিন লাগবে না আর আমি আঁধারকে আমার কাছ থেকে দূরে যেতে দেবে না )

এভাবেই খুনসুটি করে শাওন আর আধার পিঠাগুলো বানিয়ে নেয় তারপর আঁধার সব গুছিয়ে রেখে দেয় অবশ্য ফিহা অর্পা আর রায়হান এর জন্য অনেকগুলো তুলে রেখেছে । তারপর সেগুলো কে হালকা তেলে ভেজে ফ্রিজ করে দেয়। ব্যস রেডি হয়ে গেল পিঠা। আধার কয়েকটা সবার জন্য ভেজে বাকি সব গুলো তুলে রেখে দেয়। তারপর ভাত বারে খাওয়ার জন্য।
তারপর সবাই একসঙ্গে খেতে বসে। খেয়েদেয়ে সবাই যে যার ঘরে চলে যায় আর আধার সব জিনিস গুছিয়ে নিজের ঘরে ফিরে আসে। কিন্তু ফিরে এসে কাব্যকে দেখে টাসকি খেয়ে যায়। কাব্য আধার কি কিছু বলতে না দিয়ে ওকে কোলে তুলে নেয় আর আঁধার কাব্যের কোলে ছটফট করতে থাকে। আঁধার বলে,

আঁধার, এসব কি করছেন মিষ্টার খান…. ছাড়ুন আমাকে….. ছাড়ুন বলছি।
কাব্য আঁধারকে চুপ করাতে বলে,
কাব্য, ইশশশ…..কোনো কথা নয়।আজ থেকে তুমি আমার সঙ্গে ঘুমোবে বলে আঁধার কে নিজের ঘরে নিয়ে এসে নামিয়ে দিয়ে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে আঁধার কে ধাক্কা মারে বিছনায় ফেলে দেয়।তারপর নিজে ওর পাশে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে।তারপর বলে,

কাব্য, আমার অনুপস্থিতিতে তো ভালোই শাওনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নিয়েছো। কিন্তু তুমি কি জানো যে স্বামী ছাড়া কোন ছেলের দিকে চোখ তুলে তাকাতে নেই, আর সেই ভুলটা তুমি করেছ আর সেটা শাস্তিও তুমি পাবে। সেটা শাস্তি হলো এখন থেকে তোমাকে আমার সঙ্গে ঘুমোতে হবে সে তুমি ম্যানেজ করার জন্য সাতদিন নাও আর না নাও। তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাবে এটাই তোমার শাস্তি।

আধার কাব্যর কথা শুনে কোন উত্তর না দিয়ে মনে মনে বলে,
আঁধার, (আর মাত্র কয়েকদিন মিস্টার খান। তারপরে আপনার আর আমার মধ্যে সবকিছু শেষ। আপনার আর আমার কোনো সম্পর্কই থাকবে না। যেখানে আপনার আমার মধ্যে কোনো সম্পর্কই থাকবে না সেখানে কিছুদিন আপনাকে সহ্য করাটা কোন ব্যাপারই না তাই আপাতত আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনা। এখন আপনার সব কথা শুনব কিন্তু সময় আমারও আসবে। তখন আপনি বুঝবেন আধার চৌধুরী বর্ষাকে ঠকানোর ফল। আপনি যত দ্বিতীয়বার আমাকে ঠকাতে না পারলে তার ব্যবস্থা আমি করব। আমার জীবনে আপনার আর কিছুদিন বাকি তারপরেই আমার আর আপনার পথ আলাদা। আপনি তখন চাইলেও আমাকে আটকাতে পারবেনা মিস্টার খান। তাই আপনাকে আমার জিমেইল এ শেষ কটা দিন সুখের কাটাতে দেবো আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনবো। একটা শব্দ করবো পর্যন্ত করবো না কিন্তু এরপর যা ঘটবে তার জন্য প্রস্তুত আপনি থাকবেন না। এন্ড আই মিন ইট যে আপনি পস্তাবেন তো সিওর। )

কাব্য, (আধার এত সহজে সবকিছু মেনে নিল। ওকি সত্যিই সব মেনে নিয়েছি নাকি ওর মাথা অন্য কিছু চলছে। যদি নেমে না থাকে তাহলে কি করতে পারে। ও কি কিছু করবে?? ও কি করবে?? আমার মনে হচ্ছে ও হয়তো কিছু করবে না, হয়তো ও সত্যি সত্যি সব মেনে নিয়েছে। আমি হয়তো একটু বেশি বেশি ভাবছি। সত্যি এত ভেবে কাজ নেই এখন ঘুমিয়ে পড়ি )তারপর আধার কে জড়িয়ে ধরে কাব্য ঘুমিয়ে পড়ে।

পরেরদিন সকালে,

রোজকার মতো আধার সকাল সকাল উঠে সব ঠিক করে নিয়েছে। এখন রেডি হতে হবে। আঁধার ফ্রেশ হয়ে একটা মেরুন রঙের শাড়ি পরে নেয়।মূলত কালারটা কাব্যর পছন্দ। কয়েকদিন পর যখন ছেড়ে দিবে তখন ততদিন না হয় কাবুল পছন্দের কাজগুলোই করুক। তাই আধার মেরুন কালারের শাড়িটা পড় নেয় হাতে কিছু চুরি আর চুলগুলো সাইডে সিথি করে চুল ঠিক করে নেয়।

To be continued….