#কাব্যের_আঁধার_২
#লেখনীতে: আঁধার চৌধুরী বর্ষা
#পর্ব-৯
পরেরদিন সকালে,
রোজকার মতো আধার সকাল সকাল উঠে সব ঠিক করে নিয়েছে। এখন রেডি হতে হবে। আঁধার ফ্রেশ হয়ে একটা মেরুন রঙের শাড়ি পরে নেয়।মূলত কালারটা কাব্যর পছন্দ। কয়েকদিন পর যখন ছেড়ে দিবে তখন ততদিন না হয় কাবুল পছন্দের কাজগুলোই করুক। তাই আধার মেরুন কালারের শাড়িটা পড় নেয় হাতে কিছু চুরি আর চুলগুলো সাইডে সিথি করে চুল ঠিক করে নেয়।
তারপর আয়নায় নিজেকে দেখে ঠিক করতে থাকে। কি মনে হতে একটা কালো রঙের টিপ নিয়ে পরে ওমনি কাব্য এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। কাব্য আঁধারের চুলে মুখ গুজে বলে,
কাব্য, ইউ আর লুকিং নাইস ওয়াইফি….
কাব্যের এমন সন্তুষ্টি মূলক উক্তিতে আঁধারের মনে ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি হয় কিন্তু সেই অনুভূতিগুলোকে গলা চেপে দিয়ে হত্যা করে আঁধার কাব্যকে ছড়িয়ে দিয়ে বলে,
আঁধার, নিচে খেতে চলুন সবাই অপেক্ষা করছে।
কাব্য, উফফ ওয়াইফি রোমান্টিক মুডের পুরো বারোটা বাজিয়ে দিলে তুমি। কাছেই আসতে দাও না। ( ভ্রু কুঁচকে বলে )
আঁধার, একটু সময় লাগবে মিস্টার খান।আমি বলেছিলাম আমাকে সাতদিন দিন, আমি ম্যানেজ করে নিবো।আপনি কিছুদিন সময় দিন আমাকে বলছি তো।
কাব্য, আচ্ছা ঠিকাছে বাবা সরি। আর তুমি তো দেখছি আজ আমার পছন্দের রঙের শাড়ি পরলে।
আঁধার, ম্যানেজ করতে যখন শুরু করেছি তখন আপনার পছন্দের রং দিয়েই মা হয় শুরু করি।আপনার ভালো লেগেছে নাকি শাড়িটা??
কাব্য, অনেক পছন্দ হয়েছে বলেই আঁধার কে জড়িয়ে ধরে কপালে ভালবাসার পরশ ছুঁইয়ে দিয়ে আলমারির কাছে চলে যায়।তারপর আলমারি খুলতে খুলতে বলে,
কাব্য, আমিও তাহলে মেরুন রঙের শার্টটাই পড়ি।দুজন কে কেমন ম্যাচিং ম্যাচিং লাগবে…
কাব্য কথা বলতে বলতে আঁধারের দিকে তাকায় কিন্তু সাথে সাথে ভ্রূ কুচকে ফেলে কারণ আঁধার হাবার মত হা করে দাড়িয়ে আছে।
কাব্য আঁধারের সামনে গিয়ে দাড়ায়। দুয়েক বার ডাক দে আবার চোখের সামনে তুরিও বাজায় কিন্তু আঁধারের কোনো হেলদোল নেই তাই কাব্য বাধ্য হয়ে আধার কে হাত দিয়ে ঝাকি দেয় আর তাতে আঁধারের হুস ফিরে আর বলে,
আঁধার, কিছু বলছিলেন??
কাব্য, সেটাই তো কখন থেকে বলছি কিন্তু তুমি তো আছি অন্য দুনিয়ায়। যাক যাই হক যেটা বলছিলাম সেটা হলো যে আজ আমিও মেরুন রঙের শার্টটা পরি।দুজন কে ম্যাচিং ম্যাচিং লাগবে তাইনা??
আঁধার, ভালই।পড়েন আপনাকে ভালো লাগবে।
তারপর কাব্য জামা কাপড় নিয়ে গোসল করতে চলে যায় আর আধারও নিচে নেমে আসে।তারপর কিছুক্ষণ পর কাব্যও নেমে আসে। দুজনে খেয়ে একসাথে বেরিয়ে পরে। অবশ্য আঁধার আলাদা বের হতে চেয়েছিল কিন্তু কাব্য জোর করে একসাথে নিয়ে বেড়িয়েছেন। শমসের আর নাদিরা ছেলের এই উন্নতিতে বেজায় খুশি।তারা তো ভাবতেই পারেন নি ছেলে এত তাড়াতাড়ি সুধরবে।
আঁধার আর কাব্য কলেজে চলে আসে। আঁধার কলেজ থেকে একটু আগেই নেমে যায় কারণ ও কাব্য আর ওর সম্পর্ক নিয়ে কোনো ক্লারিফিকেশন দিতে চায়না যেখানে আর দুই দিন পরই সম্পর্ক ভেঙে যাবে। কাব্য অবশ্য রাগ করেছিল কিন্তু আঁধার হাজারটা বাহানা দেখিয়ে বেরিয়ে যায়।
আঁধার ক্লাসে ঢুকে নিজের সিটে গিয়ে শাওন,অর্পা, ফিহা আর রায়হানের সাথে বসে। আঁধার নিজের পড়া রিভাইজ করতে থাকে তখনই ক্লাসে কলেজের ওনার আসে সাথে কাব্য।
ওনার, স্টুডেন্টস উনি হলেন আমাদের কলেজের নিউ প্রফেসর কাব্য আহমেদ খান। উনি একজন কার্ডিওলজিস্ট।অনেক এক্সপেরিয়েন্সড ডক্টর। পাঁচ বছর বিদেশে থেকে তারপর ফিরেছেন।আজ থেকে তোমাদের উনি cardiology পড়াবেন। Now greet him.
তারপর সবাই কাব্যকে গ্রিট করে সাথে আঁধারও। সকলের অলক্ষে কাব্য আঁধার কে চোখ মেরে দে আর সেটা দেখে আঁধারের হিচকি উঠে যায়। শাওন আঁধারের পিঠে থাপর দিয়ে ওকে পানি খেতে দেয়।
আঁধার কোনমতে নিজেকে কন্ট্রোল করে বসে পড়ে তারপর ক্লাস করতে থাকে। এভাবেই আঁধারের সব ক্লাস শেষ হয়।
আঁধার, অর্পা, ফিহা, রায়হান,শাওন সবাই কলেজের মাঠ দিয়ে যাচ্ছিল তখনই আঁধার কে একটা ছেলে লাভ লেটার দিয়ে প্রপোস করে।
আঁধার, আব……
আঁধার কিছু বলবে তার আগেই কে যেন ছেলেটার মুখে দেয় এক মুক্কা।ছেলেটা সেকেন্ডে মাটিতে ছিটকে পড়ে। আঁধার চোখ বড় বড় করে দেখে কে মেরেছে আর যে মেরেছে তাকে দেখে ওর চোখ আরও বড় বড় হয়ে যায় কারণ ঘুসিটা কাব্য মেরেছে।
অলরেডি অনেক ছেলে মেয়ে জমা হয়েছে তাই আঁধার সিন যাতে না হয় তাই চলে যেতে চাচ্ছিল কিন্তু কাব্য ওকে আটকে দিয়ে ওর হাত ধরে সবাইকে দেখিয়ে বলে,
কাব্য, নেক্সট টাইম যে ওর দিকে চোখ তুলে তাকাবে তার চোখ আমি উপরে নিবো কারণ ও হলো আমার ওয়াইফ মিসেস আঁধার চৌধুরী বর্ষা। তাই কেউ ভুল করেও ওকে প্রপোস করতে যেও না তাহলে তোমাদের কাব্য আহমেদ খানের লাশের উপর দিয়ে যেতে হবে।
অলরেডি কানাঘুষা শুরু হয়ে গেছে যে কাব্যই আঁধারের স্বামী তাহলে এতদিন কোথায় ছিল ?? কেন আঁধারের খোঁজ নেয় নি।
কাব্য, আমি আমার ওয়াইফের খোঁজ খবর রাখবো কিনা, তাকে দেখতে আসবো কিনা এটা আমার পারনালমেটার। এতে ইন্টারফেয়ার করা আপনাদের কাজ নয় তাই নেক্সট টাইম যদি কেউ এমন কিছু করেন তাহলে এই কাব্যর থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম তাই নিজেদের চরকায় তেল দিন । অন্যের সংসারের খবর আপনাদের জানতে হবে না। আপনারা যদি নেক্সট টাইম এমনটা না করেন তাহলেই আমি খুশি হবো আর একজন টিচার হিসেবে আপনাদের কাছ থেকে এটা আশা আমি করতেই পারি জে আপনারা আমার আর আমার ওয়াইফের মধ্যে আপনাদের এই লম্বা নাকটা গলাবেন না বলেই আঁধার কে নিয়ে বেরিয়ে যায়। আঁধার কে ওর সিটে বসিয় দিয়ে নিজে বসে ড্রাইভিং করতে শুরু করে।
আঁধার, এটা আপনি ঠিক করলেন না।আপনার এই কাজে সবাই জেনে গেছে আমি আপনার ওয়াইফ।আমি চাইনি কেউ জানুক।এখন আমার ডিগনিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
কাব্য, তোমার কোনটাতে ভালো আর কোনটাতে খারাপ সেটা আমি ভালো বুঝি আঁধার তাই আমাকে বুঝাতে এসো না কারণ সেটা করে লাভ নেই।ইতে তোমারই সময় নষ্ট।
আঁধার, কি দরকার ছিলো এসবের?? সবাই এখন আমাদের সম্পর্ক জেনে গেছে।এখন আমার ডিগনিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
কাব্য, আমার মাথা তখন ঠিক ছিল না।খালি মনে হচ্ছিল তুমি দিনদিন আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছ।মনে হচ্ছিল তুমি আমাকে ছেড়ে দূরে চলে যাবে কিন্তু বিশ্বাস করো আমি সেটা সহ্য করতে পারব না।আমি তুমি চলে গেলে থাকতে পারবো না।
আঁধার, ( অভ্যাস করে নিন মিস্টার খান।আমি খুব তাড়াতাড়ি আপনার থেকে দূরে যাবো আর সেইদিন বেশি দূর নেই।আর মাত্র ছয়টি দিন তারপর আমি মুক্তি পাওয়া পাখির মত ফুরুৎ হয়ে যাবো।আপনি চাইলেও আমাকে ধরতে পারবেন না তখন শত চেষ্টা করেও। তাই এখনই অভ্যাস করে নিন। ও করবেন কি করে?? আপনি তো জানেন না।ঠিক আছে কিছুদিন গেলে অভ্যাস হয়ে যাবে । )
কাব্য, আমি তোমাকে কখন আমাকে ছেড়ে যেতে দিব না সে তুমি যতই রাগ করোনা কেন। আর তুমি ভয় পেও না।কেউ তোমার আমার সম্পর্ক আর তোমার ডিগনিটি নিয়ে কিছু বলবে না । দরকার পড়ে তো আমি যাতে কেউ কিছু বলতে না পারে তার ব্যবস্থা করব।কিন্তু কাউকে তোমার বেপারে একটা কথাও বলতে দিব না।আমি থাকতে আমার বউকে কথা শুনাবে এমন সাধ্য কারোর নেই। আর যদি শুনায় তাহলে আমিও কাব্য আহমেদ খান না।তুমি চিন্তা করো না।কেউ কিছু বলবে না।আমি আছি তোমার সাথে।কেউ সুযোগ পাবে না বলেই আঁধারের হাতের উপর হাত রাখে।
সাত দিন পির…….
To be continued……