#কাব্যের_আঁধার_২
#লেখনীতে: আঁধার চৌধুরী বর্ষা
#পর্ব-১০
সাত দিন পর,
সেদিনের পর কেটে গেছে সাতদিন। এই সাতদিনে অনেক কিছু বদলে গেছে। ফিহা আর শাওনের সম্পর্কের সমীকরণ বদলেছে। এই তো দুই দিন আগের কথা।
ফ্ল্যাশব্যাক,
শাওন, এই আঁধু একটু হেল্প কর না।
আঁধার, কি হেল্প??
শাওন, আমি ফিহাকে প্রপোস করতে চাই।কিন্তু ও কি রাজি হবে??
আঁধার,এই তুই অল্পতেই এত ভয় পেয়ে যাস কেন?? আগে তো বলবি যে তুই ওকে ভালোবাসিস তারপর সেটা ও অ্যাকসেপ্ট করবে কিনা সেটা ওর বেপার। তোর প্রপোস করার কথা তুই করে নিজের কাজ সেরে নেয় বাকিটা ও দেখবে।
শাওন, বলছিস??
আঁধার, হুম।
পরে অর্পা,ফিহা,আঁধার, রায়হান আর শাওন ক্লাস শেষ করে বের হয় বাড়ি ফিরবে বলে। হটাৎ শাওন ফিহার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে হাতে একটা কালো গোলাপ নিয়ে বলে,
শাওন, সবাই লাল গোলাপ দিয়ে করে আমি কালো গোলাপ দিয়ে করলাম কারণ তুই অনেক স্পেশাল আমার কাছে। সেই যেদিন প্রথম তোকে দেখেছিলাম সেইদিনই বুকের মধ্যে হাতুড়ি পেটানোর আওয়াজ পেয়েছিলাম। তখনও বুঝিনি কেন হচ্ছে এমন । তোর সাথে পাঁচ পাঁচটা বছর কাটিয়ে দিলাম তাও বুঝিনি।কিন্তু সেদিন রায়হানের সাথে তোকে এত ফ্রী দেখে খুব খারাপ লেগেছিল।তোকে রায়হানের বলা জোকস এ হাসতে দেখে খুব রাগ উঠেছিল বিশ্বাস কর।খালি মনে হলো যে তুই ওর কথায় কেন হাসবি?? তুই আমার কথায় হাসবি। তোর হাসি ও কেন দেখবে?? তোর হাসি শুধু আমি দেখবো। তোর একমাত্র আমার কথায় হাসার অধিকার আছে আর কারোর কথায় নয়। বিশ্বাস কর এতটা জেলাস ফিল হচ্ছিল যে বলে বুঝাতে পারবো না।
তারপরই বুঝতে পারলাম আমার মনের হাতুড়ি পেটানোর আওয়াজের রহস্য। বিশ্বাস কর সেইদিন থেকে খালি সুযোগ খুঁজে যাচ্ছি তোকে মনের কথা জানানোর কিন্তু পারিনি কারণ আমার লাকটাই খারাপ । তবে আজ সুযোগ পেয়েছি তাই সুযোগ টা ছাড়ছি না।
‘ I Love You…..
Will you be mine forever?? ‘
শাওনের প্রপোজ এ ফিহা খুশিতে আত্মহারা হয়ে শাওন কে জড়িয়ে ধরে বলে,
ফিহা, তুই আমাকে আজ বলছিস?? আমি তো কবে থেকে তোকে ভালোবাসি।তোকে আঁধারের সাথে দেখলেই রাগ হতো কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না কারণ সেই অধিকার আমার ছিলো না।তুই আর আঁধার বেস্ট ফ্রেন্ড কিন্তু আমি তোদের নরমাল ফ্রেন্ড তাই কিছু বলতাম না। যখনই তোকে আঁধারের সাথে দেখতাম বুকে চিনচিন ব্যাথা হতো কিন্তু সেটা কাউকে বলতে পারতাম না তবে আজ টিকে বলছি যে আমি তোকে ভালোবাসি শাওন।আমি তো অপেক্ষা করে আছি তোর হওয়ার জন্য কিন্তু তোর ফ্যামিলি কি আমার মত গরীব মেয়ে কে মেনে নিবে??
শাওন,আমি আমার মা বাবা কে আগেই বলেছি। ওরা রাজি এখন শুধু তোর রাজি হওয়ার পালা তাহলেই আমরা তোর বাড়িতে সম্বন্ধের প্রস্তাব পাঠাবো।তুই রাজি কোনো বল।
ফিহা, আমি তো সবসময় রাজি।
আঁধার রায়হান, আর মাঝখান দিয়ে আমরা পাজি…
শাওন, মানে??
রায়হান, তুই আমাকে ফিগার সাথে দেখলি জলতি অথচ তেমন কিছুই ছিল না।
আঁধার, ঠিক তাই । তুইও আমাকে শাওনের সাথে দেখলে জলতী কিন্তু আমি তো বিবাহিত ভাই।রায়হান নাহয় সিঙ্গেল কিন্তু আমি তো ম্যারিড সেখানে আমি কি করে…. সিরিয়াসলি ইয়ার ( ফিহা কে উদ্দেশ্য করে )
শাওন ফিহা, সরি মাফ করে দে বলে দুজনেই কান ধরে ফেলে আর আঁধার,অর্পা, রায়হান সেটা দেখে হাসতে থাকে।
ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড………
সেদিনের পর এখন শাওন আর ফিহা রিলেশনে গেছে।দুজনে চুটিয়ে প্রেম করছে । ওদের আপাতত এনগেজমেন্ট করিয়ে রাখা হবে আর বিয়েটা মেডিক্যাল পাস করে করবে দুজনেই।
অর্পা আর রায়হানের মধ্যেও ঝামেলা মিটে গেছে।অর্পা বুঝতে পেরেছে ও রায়হান কে ভালোবাসে তাই ও রায়হানের সাথে রিলেশনে আছে।ওদের বিয়েও ফিহা শাওনের সাথে একসাথে হবে। জোড়া বিয়ে হবে।
এই সাতদিনে আরও অনেককিছু বদলেছে। কাব্য আঁধার আরও কাছাকাছি এসেছে। আঁধার এখন কাব্যর মন মত সাজতে চেষ্টা করে। কাব্য তো ধরেই নিয়েছে যে আঁধার আস্তে আস্তে adjust করতে শুরু করেছে কিন্তু আঁধারের আসল উদ্দেশ্য কি আর কাব্য জানে।
আজ আঁধার কলেজ যাবে না তাই কাব্য কে একা একা যেতে হয়েছে।তবে পেশেন্ট দেখে ওটি করে আসতে আসতে বিকেল পাঁচটা বেজে গেছে । এমনিতে কাব্য এত তাড়াতাড়ি ফিরে না কিন্তু আধার বলেছে আজ তাড়াতাড়ি ফিরতে কারণ আজ নাকি একটা সারপ্রাইজ আছে তাই কাব্য তাড়াতাড়ি ফিরেছে।
কাব্য বাড়ি ফিরে উপরে নিজের ঘরে চলে আসে। কিন্তু সেখানে আধার কে খুঁজে পায়না তাই ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে ড্রইংরুমের দিকে পা বাড়ায়। কাব্য ড্রইং রুমে ঢুকতেই আধার ওকে দেখে ফেলে আর বলে,
আঁধার, আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আসুন এখানে এসে সবার সঙ্গে বসুন । আপনাদের সবাইকে একসঙ্গে সারপ্রাইজ দিব।
কাব্য তো টাসকি খেয়ে যায় কারণ ভেবেছিল ওকে একা সারপ্রাইজ দিবে কিন্তু তা না ঘরে শাওন,ফিহা, অর্পা, রায়হান, নাদিরা আর শমসেরও আছে। কি এমন সারপ্রাইজ যেটা সবার সামনে দিবে। সবাই সিরিয়ালে সোফায় বসে আছে আর আধার সামনে থাকা একটা রকিং চেয়ারে বসে কাব্যের সামনে একটা কাগজ রেখে বলে আঁধার,
আঁধার, আমি সাইন করে দিয়েছি, আপনিও করে দিন।
কাব্য কাগজটা দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
কাব্য, এটা কি??
আঁধার, আপনি নিজেই খুলে দেখে নিন।আপনার মুক্তির পথ….
কাগজটা খুলে পড়তেই কাব্যের পায়ের তোলা থেকে মাটি সরে যায়। কাব্যর পা টলে যায়। কাব্য বলে,
কাব্য, এটা কি?? ডিভোর্স পেপার?? তুমি আমাকে ডিভোর্স দিতে চাও???।
আঁধার, জি। আমিই বলেছিলাম যে আপনি কোনো রিলেশনে জড়ালে আমি আপনাকে ডিভোর্স দিব কিন্তু আপনি আমাকে সেই সুযোগ আর দেননি কারণ আপনি তো কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানই নি। কিন্তু আধার চৌধুরী বর্ষাকে আপনি মিথ্যা কথা বলেছেন সেটা শাস্তি হলো আপনার আর আমার মধ্যে সব সম্পর্ক শেষ। আপনি আধার চৌধুরী বর্ষা কে ঠকিয়েছেন।
ঘরে বাজ পরলো সকলের যতটা না অবাক হতো তার চেয়েও বেশি অবাক হয়ে আঁধারের কথা শুনে। শমসের বলেন,
শমসের, তুই এসব কি বলছিস মা?? কাব্য তোকে ঠকিয়েছে মানে?? কাব্য কি করেছে??
নাদিরা, আধার তোর মাথা ঠিক আছে তো? কাব্য তোকে ঠকিয়েছে মানে কি?? আর আজ হঠাত তুই এসব কথা কেন বলছিস?? এক সপ্তাহ তো ঠিকই ছিলি…
কাব্য, আধার তুমি এসব কি বলছ আমি তোমাকে ঠকিয়েছি মানে এসব একই কথা বলছ?? আমি তোমাকে কখন তো কাল আমার আমি তোমাকে ঠকাতে যাবই কেন??? আমি তো তোকে ভালবাসি আর তুমি সেটা জানো তাই না??
আঁধার, অবশ্যই আপনি আমাকে ভালোবাসেন আমি সেটা জানি কিন্তু সেটা কি আর আসল ভালোবাসা?? সেটা হল নকল ভালোবাসা। আমার ছোটবেলায় আমার রূপ গুণ বলতে কিছু ছিল না, তাই আপনি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন কিন্তু এখন আমি বড় হয়েছি এখন আবার রূপ-গুণ সামর্থ্য ক্ষমতা সব আছে। তাই এখন আমাকে বানোয়াট গল্প শুনিয়ে দিয়ে বলছেন যে আপনি আমাকে ভালবাসেন তাই না?? আপনার কি মনে হয় আধার কি বোকা বানানো এত সহজ তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। আঁধারকে বোকা বানানো এত সহজ নয়। যাইহোক সাইনটা তো আমি করে দিয়েছি এবার আপনিও করে দিন। আর আপনার সাইন করা হয়ে গেলেই আমি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা। আমার হোস্টেলের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। কলেজের হোস্টেল থাকবো আর বাবা-মা তোমাদের সঙ্গে দেখা করে যাব সময় পেল।
To be continued….