কাব্যের আঁধার ২ পর্ব-১১

0
608

#কাব্যের_আঁধার_২
#লেখনীতে: আঁধার চৌধুরী বর্ষা
#পর্ব-১১

আঁধারকে বোকা বানানো এত সহজ নয়। যাইহোক সাইনটা তো আমি করে দিয়েছি এবার আপনিও করে দিন। আর আপনার সাইন করা হয়ে গেলেই আমি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা। আমার হোস্টেলের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। কলেজের হোস্টেল থাকবো আর বাবা-মা তোমাদের সঙ্গে দেখা করে যাব সময় পেল।
নাদিরা, তুই এমন কেন করছিস একটু বলতে পারবি কি আধার?? কাব্য তোকে ঠকিয়েছে মানে কি বলতে চাচ্ছিস ভালো করে খুলে বল।

শমসের, আধার মা আমার রাগের মাথায় এরকম সিদ্ধান্ত নিতে নেই। তুই এখন রেগে আছিস তাই এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি কিন্তু পরে ঠিকই আফসোস করবে।
আঁধার, না বাবা আমার মাথা মোটেও গরম নয় এখন আমি এই গানটা পুরো সাতদিন ধরে সময় নিয়ে করেছি। বৃষ্টির খান আপনার মনে আছে আমি আপনার কাছ থেকে সাত দিনের সময় দিয়েছিলাম। হ্যাঁ ওই সাত দিনেই আমি অনেক ভেবে চিন্তে ডিভোর্স পেপার ফাইল করে সবকিছু রেডি করে তারপর ঠান্ডা মাথায় আপনাকে এখন এই পেপার টা দিচ্ছি।

কাব্য, তোমার ডিভোর্স চাই তাই না ডিভোর্স?? ঠিক আছে আমি তোমাকে ডিভোর্স দিবো বলেই কাগজটা হাতে নিয়ে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে সেটা আঁধারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
কাব্য, এই নাও দিলাম তোমাকে ডিভোর্স। একেবারে সাইন করে তোমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছি।
আঁধার, (আমি তো ভাবতেই পারিনি মিস্টার খান এভাবে ডিভোর্স পেপার টা ছিড়ে ফেলবেন। আমি তো ভেবেছিলাম উনি আরো খুশি হয়ে আমায় ডিভোর্স দিয়ে দেবেন তার মানে কি আমার ধারণা ভুল। উনি কি সত্যি আমায় ভালোবাসো?? উনি আমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসেন না। ভালবাসলে আমাকে এমন একটা লেম এক্সকিউজ দিয়ে দেশে ফেলে রেখে চলে যেতেন না। তুমি আমাকে ভালবাসনি আর এটাই সত্যি। উনার উপর বিশ্বাস করলে চলবে না। আধার উনার উপর বিশ্বাস করবিনা আমি তোকে ঠকাচ্ছে। এখন হয়তো মা-বাবার হয় এভাবে ডিভোর্স দেওয়া নিয়ে আপত্তি করছেন কিন্তু মনে মনেও উনিও চান আমাকে ডিভোর্স দিতে। ) কাম অন মিস্টার খান। আমি বুঝতে পারছি যে আপনি মা বাবার ভয়ে এভাবে করতে করতে আপত্তি করছেন। কিন্তু আপনি চিন্তা করবেন না উনারা কিছু বলবেনা। আফটার অল উনারা আমার মা বাবাই আর ওরা আমার ভালই চায় । আপনি চিন্তা করবেন না আমি আপনাকে আরেকটা ডিভোর্স পেপার ফাইল করে পাঠিয়ে দিব আপনি জাস্ট সই করে দিবেন আর মা-বাবাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ওরা আমার ভালৈ চায় আর ওরা জানে যে এখন এই সম্পর্কটা ভাঙতে পারলে আমি খুশি থাকব।

কাব্য এবার কাদতে কাদতে নিচে বসে আঁধারের পা জড়িয়ে ধরে ফেলে আর বলে,

কাব্য, প্লিজ পিচ্ছি বউ আমায় ছেড়ে যেও না। তুই বিশ্বাস কর আমি তোমায় খুব ভালোবাসি আর আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তুমি একটা বার আমার কথা বিশ্বাস করো। আচ্ছা আমার কথা নয় বিশ্বাস নাই করলে তুমি তো আমাকে ভালোবাসো বলো একবার নিজের ভালোবাসার মানুষের কথা বিশ্বাস করতে পারবে না। একবার আমার কথাটা বিশ্বাস করতে পারবে না তুমি। তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না করো একফোঁটাও??

আধার পরে এক চিমটি পরিমাণ আঙ্গুল দেখিয়ে কাব্য কে বলে,
আঁধার, আমি আপনাকে এক ফোঁটা তো দূর এক ফোঁটারও একফোঁটা বিশ্বাস করি না। আর রইল কথা ভালোবাসার তাহলে বলব যে হ্যাঁ আমি আপনাকে একসময় ভালোবাসতাম কিন্তু এখন সেই ভালবাসাটা ঘৃণাই পরিনত হয়েছে। এখন আর আঁধার চৌধুরী বর্ষা মিস্টার কাব্য আহমেদ খানকে ভালোবাসে না। এখন আমি আপনাকে এক পলকও চোখের সামনে দেখতে চাই না। তাই আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বাড়ি থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা করছি বলেই ড্রইং রুম থেকে বেরিয়ে সোজা কাব্যর ঘরে আসে।আঁধার লম্বা হওয়ায় খুব সহজেই আলমারির উপর থাকা লাগেজটা নামিয়ে ফেলে তারপর সেটা কে বিছনায় রেখে নিজের বইখাতা ভরতে শুরু করে আর ততক্ষণে কাব্য উপরে ঘরে চলে এসেছে।

কাব্য আঁধারকে এ ভাবে বই খাতা দেখে অবাক চোখে আঁধার কে বলে,
কাব্য, একি তুমি বই খাতা বসে আছো কেন??
আঁধার, আসলে ডিভোর্সটা যখন হয়েই যাবে তখন আর আমি শাড়ি পড়ে করবোটা কি তাইনা। তাই কাপড় গুলো আর নিচ্ছিনা। শুধু বই খাতাগুলো নিয়ে নিচ্ছি আর বাকি রইল জিনিসগুলো। ওগুলো নিয়ে নিচ্ছি কিন্তু কাপড়গুলি আপনি পারলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিন ।আচ্ছা ঠিক আছে আপনার জালাতে হবে না আমি নিজেই জ্বালিয়ে দিচ্ছি বলে আলমারির সবগুলো শাড়ি নামিয়ে মেঝেতে ছুঁড়ে মারে তারপর লাইটার সবগুলোতে আগুল জ্বালিয়ে দেয়।

কাব্য দৌড়ে যায় শাড়িগুলো কে আগুনে হাত থেকে বাঁচাতে। কোনমতে হাত দিয়ে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সবগুলো শাড়ি সরিয়ে নেয় আর পানি ঢেলে দেয় সবগুলো শাড়িতে এতে পানির নিভে যায় কিন্তু কাব্যর হাত পুড়ে যায়।
আধার সেটা দেখে দৌড়ে যায় ফার্স্ট এড বক্স নিয়ে। তারপর কাব্যকে বিছানার ধারে বসিয়ে ওর হাতে এন্টিসেপটিক লাগাতে শুরু করেন। আঁধার কাব্যের হাতে ট্রিটমেন্ট করতে থাকে আর কাব্য এক দৃষ্টিতে আধারের দিকে চেয়ে থাকে। কাব্য বলে,
কাব্য, এখনো আমায় কত ভালোবাসো তাই না?? তাইতো আজও আমার হাত পুড়ে গেল বলে কিভাবে দৌড়ে এলে আমার হাতে অ্যান্টিসেপটিক লাগাতে। সে তুমি যতই বল না কেন আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। তুমি যদি এটাও বল না যে তুমি আমাকে ঘৃণা করো তাও আমি বিশ্বাস করব কারণ আমার নিজের ভালবাসার উপর বিশ্বাস আছে কিন্তু তোমার সেটা নেই তবে আমি শেষ অব্দি চেষ্টা করে যাবো। যতদিন না নিজের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছি ততদিন অবধি তোমাকে সত্যিটা জানানোর চেষ্টা করে যাবো। তোমাকে বিশ্বাস করিয়ই ছাড়বো যে আমি তোমাকেই ভালোবাসি। আর আমার বিশ্বাস যে একদিন না একদিন তুমি ঠিকই বুঝতে পারবে যে আমি তোমাকে ভালবেসেছি। কাব্য আহমেদ খান কখনো মিথ্যা বলে না আঁধার।

কাব্য, আমি জানি তোমারও কোথাও-না-কোথাও মনে হয় যে আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু আমার উপর জমে থাকে অভিমানটা এতই বেশি হয়ে গেছে যে তুমি বিশ্বাস করতে পারছ না যে আমি তোমাকেই ভালোবাসি। কিন্তু ব্যাপার না, একদিন না একদিন তুমি ঠিক বিশ্বাস করবে যে আমি তোমাকে ভালোবাসি। হয়তো সেদিন আর আমি থাকবো না এই পৃথিবীতে তবে তুমি ঠিক বিশ্বাস করবে। আর সেদিন তুমি আফসোস করবে।

আঁধার, আধার চৌধুরী বর্ষা একবার যেটা বলে সেটাই বলে দ্বিতীয়বার সে তার কথা বদলায় না তাই আপনি নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া বন্ধ করুন যে আমি আপনার কাছে ফিরে আসব। আপনার এই সান্তনা বিফলে যাবে। কোনো কাজেই লাগবে না আপনার এই কথাগুলো বলেই কাব্যের হাতে ব্যান্ডেজ করে উঠে চলে যেতে নিলে কাব্য ওর হাত ধরে বলে,
কাব্য, না গেলেই কি নয় আধার?? আমরা না হয় আমাদের মধ্যে সব কথা মিটিয়ে নেব। কি দরকার শুধু শুধু আলাদা হয়ে যাওয়া?? বিশ্বাস করো আমি এখনো তোমায় ভালোবাসি আর তোমাকেই ভালোবাসবো। প্লিজ যেওনা ছেড়ে…

আঁধার, আমি আপনাকে হোস্টেলে উঠে কিছুদিনের মধ্যেই ডিভোর্স নোটিশ পাঠিয়ে দেবো। আপাতত আমার এক্সাম শুরু হবে এক্সামের পর দিয়ে দেব আপনি সাইন করে দিয়েন। আসছি……

যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…
যদি মন কাঁদে

তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…
এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে
জল ভরা দৃষ্টিতে
এসো কোমল শ্যামল ছায় ।

যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরি
কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি ।।
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো
ছলকে ছলকে নাচিবে বিজলী আরো
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…

To be continued…..