#কারণে_অকারণে_সে
#পর্ব:১৮
#লেখক:রিয়ান আহমেদ (ছদ্মনাম)
;
“আপনি আজকাল অদ্ভুত আচরণ একটু বেশিই করছেন।কারণটা কি?”
সাভাশ উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
“কারণ অনেক কিছু।আমি তোমাকে এক শর্তে বলবো শুধু তুমি আমাকে একবার জড়িয়ে ধরো।”
আরশি ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থাকে সাভাশের দিকে।এরপর মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে বলল,
“ওকে ধরবো বাট মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের জন্য আর হ্যা আপনি আমাকে ধরবেন না আমি আপনাকে আমার সুবিধামতো ধরবো।”
সাভাশ হ্যা বোধক মাথা নাড়ায়।এখন তার সবকিছুই চলবে।আরশির জড়িয়ে ধরাটাই যদি এই কম্পন থামানোর সমাধান হয় তাহলে তাই হোক।আরশি সাভাশের পাশে বসে একটু এগিয়ে যায়।সে মুখটা সাভাশের বুকের একটু কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নেয়।আরশি বলে,
“বাহ্ ঘ্রাণটাতো বেশ দারুণ কোন পারফিউম ব্যবহার করেন?আমাকে একটু দিয়েন আমার পছন্দ হয়েছে।”
সাভাশ শুকনো ঢোঁক গিলে।তার ভেতরের সত্তা কি তাহলে মিথ্যা বলল?এখন তো মনে হৃদপিন্ড লাফাতে লাফাতে বুক চিরে বেরিয়ে আসবে।সাভাশ আরশির মাথাটা আর দেরী না করে নিজের বুকের উপর রাখে আর বলে,
“আমি মানুষটাই তো তোমার তাই আমার সবকিছুতেই তোমার অধিকার।”
আরশির নিজেকে মাতাল মাতাল লাগছে এই পারফিউমের ঘ্রাণে সে সাভাশের পিঠে আড়াআড়ি হাত রেখে সাভাশকে জড়িয়ে ধরে।আরশি চোখ বন্ধ করে বলে,
“এই রকম পারফিউম কোথা থেকে পেলেন? আমার তো আপনাকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে,,,আপনার ভাগ্য ভালো আপনি আমার বিয়ে করা জামাই না হলে এতক্ষণে আপনাকে খেয়ে ফেলতাম।”
ভেতরের সত্তাটির কথা তাহলে সত্যিই হলো।আরশি বুকে মাথা রাখার সাথে সাথে সাভাশের বুকের সাথে সাথে সারা শরীর শান্ত এবং ঠান্ডা হয়ে গেল।সাভাশ চোখ বন্ধ করে আরশির কথায় মুচকি হেসে বলল,
“বিয়ে করা জামাই বলে কেন বেঁচে গেলাম?”
“সেটা বলবো না।আপনাকে ছাড়তে ইচ্ছা করছে না।”
“তাহলে ছেড়ো না।আমি তো চাই তুমি আমার বুকের মাঝে এভাবেই থাকো।”
সাভাশের কথা সবসময় আরশির মাঝে অন্যরকম ভালো লাগার সৃষ্টি করে।সেই অন্যরকম ভালো লাগার আভাস পেতেই আরশি বুঝতে পারে সে কি করছে।আরশি সাভাশের বুক থেকে মাথা তুলে সাভাশের দিকে একবার তাকিয়ে সরে বসে।
সে মুখে কঠিন ভাব এনে বলে,
“আপনি নিয়মের খেলাপ করেছেন।আমি বিগত তিন মিনিট যাবত আপনার বুকে মাথা রেখেছিলাম অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের তুলনায় অধিক।”
সাভাশ আরশির কথায় বোকা বনে চলে যায়।সে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আমি কোথায় নিয়মের খেলাপ করলাম তুমিই তো আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলে।আমাকে তোমাকে জোর করেছিলাম?”
আরশি আমতা আমতা করে বলে,
“আমার মনে হয় আমাদের এবার ঘুমানো উচিত।”
“এতো জলদি!,,,,।”
আরশি এমন ভাবে তাকায় যে সাভাশ ভয় পেয়ে যায়।সাভাশ জোরপূর্বক হেসে বলে,
“আরে না না জলদি কোথায়?কতো রাত হয়ে গেছে বলো।বাই দ্যা ওয়ে আমার তোমাকে কিছু দেওয়ার আছে।”
“যা দেওয়ার আগামীকাল দিবেন।আমি ঘুমাবো আমাকে ভোর ছয়টায় উঠতে হয়েছে এরপর একদন্ড ঘুমানোর সুযোগ পাই নি।”
সাভাশ টাউজারের পকেট থেকে একটা বক্স বের করে সেটার থেকে একটা প্লাটিনামের ব্রেসলেট বের করে।আরশির হাত টেনে সে সেটা পড়িয়ে দিতে দিতে বলে,
“সবাই নিজের ওয়াইফকে এই দিনে বিশেষ কিছু উপহার দেয় আমার হাতের ব্রেসলেটটা আর তোমারটা সেম ডিজাইন।তোমারটায় কুইন লেখা আর আমারটায় কিং।”
আরশি ব্রেসলেটটার উপরে হাত বুলিয়ে মনে মনে মুচকি হাসে।প্রকাশ করে না।
আরশির মনে হয় সাভাশকে এখনই কথাগুলো বলা প্রয়োজন।আরশি বলতে শুরু করে,
“সাভাশ আমি এই মুহুর্তে কোনো গভীর সম্পর্কে জড়াতে চাইছি না,,আশা করি আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেন।আমরা কিছুদিন নিজেদের ঠিকমতো জেনে নেই,,,আমি জানি আপনি আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন কিন্তু,,,।চলুন আমরা ‘No touch’ করি।”
আরশি ডাইরেক্টলি কথাটা বলে সাভাশের দিকে তাকায়।সাভাশ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“No touch?,,,তুমি কি বলছো আমি বুঝতে পারছি।কোনো সমস্যা নেই টেক ইওর ওউন টাইম।”
সাভাশ ধপ করে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়ে।আরশি ঠোঁট কামড়ে ভাবে,সাভাশ কি তার কথায় মাইন্ড করলো না কি?পরক্ষণেই আরশি মনে মনে বলে,
“মাইন্ড করলে করুক।আমার আবার মানুষের মাইন্ড করাতে কবে থেকে যায় আসতে শুরু করলো।ঘুমিয়ে পড় আরশি।টেনশন নিয়ে লাভ নেই।”
আরশি বাতি অফ করে সাভাশের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লো।এখন কথা হলত আরশির চাদর মুড়ি দিয়ে না ঘুমালে ঘুম হয় না।আরশি ধীরে ধীরে সাভাশের কাছে গিয়ে চাদর টান দিয়ে নিয়ে নেয়।
সাভাশ হঠাৎ খেয়াল করে তার গায়ে চাদর নেই।আরশির দিকে তাকিয়ে দেখে আরশি চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।সাভাশ বলে,
“পুরোটা তুমি নেবে না কি?আমাকে দেও।”
আরশি মুখের উপর বলে দেয়,
“হুহ পারবো না।আরশি কখনো নিজের চাদর কারো সাথে শেয়ার করে না।”
“তাহলে আমি কি গায়ে দেবো?”
“আরশি সবার কথা ভাবে না শুধু নিজের কথা ভাবে।”
দুজনের মাঝে শুরু হলো চাদর নিয়ে টানাটানি।এক পর্যায়ে সাভাশ আর না পেরে ছেড়ে দিল।কারণ আরশি তাকে বার বার সুরসুরি দিচ্ছে।সাভাশের মারাত্মক সুরসুরি আছে যদি তার ঘাড়ে শুধু আঙ্গুল দিয়ে একবার স্লাইড করা হয় তাহলেই হাসতে হাসতে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।আরশি নিজের গায়ে চাদর ভালো মতো জড়িয়ে নিয়ে বিজয়ের হাসি দিয়ে বলল,
“হুহ শুধু শুধু কষ্ট করলেন।শেষে তো আপনাকে আমার কাছে হারতেই হলো।”
“একজন মেয়ে হিসেবে তুমি ভালোই শক্তিশালী,,কিন্তু তুমি শুধুমাত্র আমার সুরসুরি ছিল বলেই জিতে গেছো।”
আরশির উত্তর পায় না সাভাশ।আরশি কোল বালিশের উপর এক পা তুলে ঘুমিয়ে আছে।সাভাশ দুই হাতের উপর মুখ রেখে বিছানায় শুয়ে আরশির ঘুমন্ত মুখ পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।মেয়েটা যদি তার বুকে রাতের আঁধারে এসে আশ্রয় নেয় তাহলে কেমন হবে?অনেক ভালো হবে নিশ্চয়ই।সাভাশ খুব করে চায় ঘুম থেকে উঠে তার কিউটিকে নিজের বাহুডোরে দেখতে।আরশিকে বাহুডোরে ঘুমের মাঝে বন্দী করার সাহস সাভাশের আছে কিন্তু অনুমতি নেই।কারণ আরশির স্ট্রিক্ট রুল No touch পালন করতে হবে।
সকালের আলো সাভাশের চোখে এসে পড়ে।সাভাশ বুকের উপর ভারী অনুভব করে।সে চোখ বন্ধ করেই মুচকি হাসে আর ভাবে চোখ খুললেই হয়তো আরশির ঘুমন্ত মাথাটা তার বুকে দেখতে পাবে।সাভাশ মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে চোখ খুলে যা দেখে তাতে তার মুখের হাসি গায়েব হয়ে যায়।তার বুকের উপর একটা ছয় সাত মাস বয়সের বাচ্চা বসে আছে।সাভাশ ধপ করে উঠে বসে বাচ্চাটাকে ধরে এরপর আশেপাশে তাকিয়ে আরশিকে খুঁজে।আরশি কোথাও নেই।সাভাশ দেখে বাচ্চাটার গায়ে আরশির ওড়না।সাভাশ অবাক হয়ে বলে,
“আরশি তুমি কি বাচ্চা হয়ে গেছো না কি?হায় আল্লাহ্ এসব কি করে হলো?”
বাচ্চাটা সাভাশের কথায় বোধহয় বেশ মজা পেয়েছে।তাই দাঁত ছাড়া মুখে হাসি দিতে থাকে।
তখনই পেছন থেকে আরশি রাগী কন্ঠে বলে উঠে,
“সকাল সকাল পাগল হয়েছেন না কি?এসব কি উল্টাপাল্টা বলছেন?”
সাভাশ চমকে পেছনে তাকিয়ে আরশিকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বলে,
“সাবাশ তুই নিশ্চিত পাগল হয়ে গেছিস না হলে এমন অদ্ভুত কথা কিভাবে ভাবতে পারলি।”
আরশি সাভাশের কাছ থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে নেয় আর বলতে শুরু করে,
“আপনাদের এক আত্মীয়ের বাবু এটা।ওর মা ওর দুধ গরম করছিল কিন্তু কারো কাছে দিয়ে কাজটা করতে পারছিল না।আমি দেখলাম আর ওকে নিজের সাথে নিয়ে চলে এলাম।ওকে একটু ওড়না পড়িয়ে সাজাচ্ছিলাম কিন্তু হঠাৎ ইমার্জেন্সি ওয়াশরুমে যেতে হলো।আমি ওর চারপাশে বালিশ দিয়ে গেছিলাম যেন পরে না যায়।”
“ও আমার বুকের উপর উঠে গিয়েছিল।আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।”
আরশি আফসোসের সুরে বলল,
“সাভাশ আপনি সত্যিই পাগল হয়ে গেছেন না হলে এমন অদ্ভুত কথা কিভাবে কারো ভাবনায় আসে।,,যাইহোক আমি যাচ্ছি ওকে ওর মায়ের কাছে দিয়ে আসতে।”
আরশি চলে গেল।সাভাশ মাথা চুলকাতে লাগলো এটা ভেবে যে তার মাথার বুদ্ধি এতো কমে গেল কবে থেকে?সাভাশের এই প্রশ্নের উত্তরটাও সাভাশের ভেতরের সত্তাটা দেয়,
“তোর মাথার বুদ্ধি তোর বউয়ের সামনে এলেই শুধু লোপ পায় বাদ বাকি সময় তো তুই পৃথিবীর অন্যতম বিজ্ঞ ব্যক্তি হয়ে ঘুরিস।এসব কোনো সমস্যা না বউয়ের সামনে একটু বোকা থাকা ভালো। কথায় আছি বোকা মানুষের কপালে ভাত জোটে না কিন্তু আমার মতে চালাক স্বামীদের কপালের বউয়ের রান্না করা খাবার জোটে না।এর কারণ তোকে ভবিষ্যতে বলবো।”
সাভাশ আর দেরী করে না ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
;
#চলবে!