কারণে অকারণে সে পর্ব-২১

0
526

#কারণে_অকারণে_সে
#পর্ব:২১
#লেখক:রিয়ান আহমেদ (ছদ্মনাম)
;
সাভাশের মায়েরা দুই বোন এক ভাই।সাভাশের মামার প্রায় পনেরো বছর যাবত লন্ডনে থাকেন স্ত্রী সন্তান নিয়ে।প্রতি বছরে ঈদের দিনগুলোতে অবশ্য সপরিবারে এসে মায়ের সঙ্গে এক মাস থেকি যান তিনি।
মায়ের অসুস্থতার খবর জানার পর তিনি আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।দুই তিনদিনের মধ্যে আসার চেষ্টা করবেন বলেছেন।আপাদত হসপিটালে সাভাশের খালা তাজরিন বেগম এবং ওনার স্বামী ও দুই মেয়ে আছেন।সাভাশের খালু তাদের এলাকার চেয়ারম্যান তাই একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের কারণে ওনারা সাভাশের বিয়ে এটেন্ড করতে পারে নি।দুই মেয়েকে বলেছিলেন অবশ্য গাড়ি নিয়ে চলে যেতে কিন্তু মেয়েরা নাছোড়বান্দা বাবা মাকে ছাড়া তারা যাবে না।তাই বলতে গেলে সাভাশের নানা বাড়ির কেউই সাভাশের বিয়েতে অংশগ্রহণ করতে পারে নি।

সাভাশদের গাড়ি হসপিটালের নিচে এসে থামতেই একজন বয়স্ক লোক এগিয়ে আসে।সাভাশ তাকে দেখে বলে,
“নুরুল কাকা নানু এখন কেমন আছে?”
নুরুল কাকা মুখটা কালো করে বলেন,
“আগের থেকে ভালো।তোমরা আমার সাথে আসো।”

আরশি জানে সাভাশের মন খারাপ এখন তাকে কিছু জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হবে না তাই সে আভাসকে বলল,
“আভাস ভাইয়া এই আঙ্কেলটা কে?”
আভাস বলল,
“উনি আমাদের নানু বাড়ির সবকিছুর দেখাশোনা করেন অনেক বছর যাবত।আসলে মামা নেই তাই কাউকে তো এসব দেখতে হবে।”
;
;
;
সাভাশের নানুর কিছুদিন যাবত শরীর অসুস্থ যাচ্ছিল কিন্তু এই ব্যাপারে তিনি কাউকে তেমন কিছু বলেন নি।আজ দুপুরে হঠাৎ করে উনি মাথা ঘুরে পড়ে যান সিঁড়ি দিয়ে।ভাগ্য ভালো বেশি উপর থেকে পড়েন নি তাই মারাত্মক একটা দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছেন।কিন্তু ক্ষতি যে কম কিছু হয়েছে তা না ওনার হাতের হাড্ডিতে ব্যাথা পেয়েছেন সাথে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।ডাক্তার বলেছে অবস্থা বেশি সঙ্কটাপন্ন হলে রোগীকে অন্য হসপিটালে শিফ্ট করতে হবে তবে এখন না নেওয়াই ভালো যেহেতু ব্যাপারটা তাদের আওতায় আছে আপাদত।

নানুর জ্ঞান ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে।উনি নিজের সামনে বড় মেয়েকে দেখে বললেন,
“কি রে তাসনিম তুই আমার দাদুভাইদের সাথে আনিস নি আমি তো আজ ওদের জন্য বাগানে দোলনা বানিয়েছি।”

সবাই বুঝতে পারে নানু ওষুধের ইফেক্টের কারণে ভুলভাল বকছে।নানু আবার বললেন,
“সাভাশ বলিস আমি ওর সঙ্গে আজ হাড়ি পাতিল নিয়ে রান্না বান্না করতে পারবো না আমার শরীর ভালো না।ওর যদি রান্না বান্নার ইচ্ছা হয় তাহলে ফুল বিবিকে যেন বলে।”

আরশি কথাটা শুনে হেসে দিয়ে সাভাশকে বলে,
“সাভাশ আপনি ছোটবেলা হাড়ি পাতিল দিয়ে রান্না রান্না খেলতেন মেয়েদের মতো!বাহ্।”
সাভাশ কিছু বলে শুধু একটু সরু চোখে তাকায়।

আভাস নানুর হাত ধরে বলে,
“নানু তোমার নাতি বউকে সামনাসামনি দেখবে না?ঐ যে দেখো দাঁড়িয়ে আছে।”
নানু অবাক হয়ে বললেন,
“নাতি বউ?কোন নাতি বউ?”
আভাস হেসে বলল,
“ভাইয়ার বউ মানে সাভাশের বউ। তোমার সাভাশ তো এখন আর ছোট নেই।সে অনেক বড় হয়ে গেছে তার বিয়ে হয়ে গেছে।”
নানু কথাটা শুনে বেশ খুশি হলেন।নিজের সাদা ভ্রু উচু করে হাসলেন আর বললেন,
“আমার নাতি তো তাহলে অনেক বড় হয়ে গেল।,,আরে আমি তো ওর বউয়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম।ভীষণ মিষ্টি মেয়েটা।এদিকে আসতে বল আমি ওকে ছুঁয়ে দেখতে চাই।”

আরশি এগিয়ে আসে নানুর পাশে বসে।তাসনিম বেগম মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“মা এই যে দেখো,,ও আরশি।”
নানুর ব্যান্ডেজ করা হাতটা আরশি আলতো করে ছুঁয়ে বলল,
“আসসালামু ওয়ালাইকুম নানু।ভালো আছেন?”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম নানুভাই।তোমার আসতে কোনো অসুবিধা হয় নি তো?”
“না কোনো অসুবিধা হয় নি।”
নানু এবার রাগী গলায় বললেন,
“স্কাউন্ড্রেলটা কোথায়?আসার পর থেকে একবারও আমার কাছে আসলো না।বউ পেয়ে এই বুড়ি নানীর কথা তো সে একদম ভুলেই গেছে।”
আরশি বুঝতে পারলো নানু সাভাশের কথা বলছে।নানু যে বেশ শিক্ষিত মানুষ তা বুঝতেও আরশির খুব একটা সময় লাগলো না।

এদিকে সাভাশ চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে তার চোখ অসম্ভব লাল চোখের জলগুলোকে সে কোনো মতে আটকে রেখেছে।আরশি টেনে সাভাশকে নানুর কাছে বসিয়ে দিল।নিজের চশমা ঠিক করে বলল,
“নানু এই নিন আপনার স্কাউন্ড্রেলকে।”

নানু আবেগমাখা কন্ঠে বললেন,
“আমার নানা ভাইটা আমাল সঙ্গে কথা বলবে না?”
সাভাশ আর নিজের চোখের জল আটকাতে পারে না গাল বেয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। সাভাশকে কিছুক্ষণ চোখের জল ফেলে স্বাভাবিক হয়ে বলে,
“নানু আমি তোমার প্রতি খুব রাগ করেছি।তুমি বেশ কিছুদিন যাবত যেহেতু অসুস্থ ছিলে তাই তোমার উচিত ছিল এই ব্যাপারটাকে একটু গুরত্ব দেওয়া।গতকাল সকালেও তোমার সঙ্গে কথা হয়েছিল তখনও তুমি কিছু বলো নি।”

এভাবেই দুজনের মাঝে অনেক কথা।

আরশি করিডোরে বসে আছে সাভাশের সঙ্গে।বড়রা ভেতরে কেবিনে।একসাথে এতোজন রোগীর কেবিন এলাউড না তাই ওরা বের হয়ে এসেছে।
এখানে ওদের সাথে আছে আভাস আর ওদের খালাতো বোন।দুই খালাতো বোনের নাম শিলা আর মিলা।শিলার বয়স আরশি যতটুকু আন্দাজ করতে পারছে তাতে মনে একুশ বাইশের মতো হবে আর মিলার চৌদ্দ পনেরোর মতো।দুজনেই বেশ সুন্দরী।

শিলা সাভাশকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“তোমার ওয়াইফকে জিজ্ঞেস করো কিছু খাবে কি না?অনেক সময় তো হলো তোমরা এসেছো।”
সাভাশ আরশিকে জিজ্ঞেস করে,
“আসলেই অনেকক্ষণ হয়েছে।আরশি,আভাস তোরা আমার সঙ্গে চল নিচে কেন্টিন থেকে সকালের নাস্তাটা করে নিবি।,,শিলা,মিলা তোমরাও চলো।”

শিলা বলল,
“না তার দরকার নেই আমরা এখন কিছু খাবো না।তুমি তোমার ওয়াইফকে নিয়ে যাও।”
আভাস বলল,
“শিলা তুমি বার বার তোমার ওয়াইফ তোমার ওয়াইফ কেন করছো?ভাইয়া যেহেতু তোমার ভাই হয় আরু আপু তাহলে তোমার ভাবীই হবে।”
শিলা শক্ত গলায় বলল,
“আচ্ছা আমি ভাবী বলেই ডাকবো।”
আরশি হেসে বলল,
“ভাবী ডাকার দরকার নেই আপনি আমাকে নাম ধরেই ডাকতে পারেন।আমরা একই বয়সের।”

শিলা কথার উত্তর দেয় না।আরশির কাছে শিলায আচরণ বেশ অদ্ভুত লাগছে।মেয়েটার ভেতরে দেমাগ যে একটু বেশিই তা আরশি তা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে।মন মানসিকতা ভালো নেই আরশির কারণ রাতে সে দুই ঘন্টারও কম ঘুমিয়েছে।তাই এখন আপাদত আরশি কিছু বলল না।আরশি মনে মনে বলল,
“মিস শিলা কি যাওয়ানি এইবার ছেড়ে দিয়েছি বলে যে আগামীতেও ছাড় দেবো এটা ভেবো না।,,,সাম হাউ আমার মনে হচ্ছে তোমার গলার স্বরটা বোধহয় আমি কোথাও শুনেছি।”

সন্ধ্যা সাতটা বাজে এখন।সাভাশদের গাড়িটা একটা বিশাল বড় গেট দিয়ে ঢুকছে।গেইটের বাইরে একটা পিতলের নেমপ্লেট লাগানো ছিল যাতে লেখা,”তালুকদার বাড়ি”

আরশির লাইফে এটাই প্রথম এক্সপেরিয়েন্স জমিদার বাড়িতে থাকার।
এসব পুরনো বাড়িগুলোর প্রতিটি দেয়াল নাকি একেকটা ইতিহাসের বই হয়।এখানে বেশ ভয়ংকর ঘটনা ঘটে থাকে।আচ্ছা এখানে কি আত্মা থাকতে পারে?অথবা জ্বীন? আচ্ছা এখানে গুপ্তধন থাকতে পারে?আরশির মনে এইসব অদ্ভুত প্রশ্ন ঘুরতে থাকে।
অন্ধকারে বাড়িটিকে পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে না তবে এর আয়াতন যে ঢাকার একটা ছোটখাটো মহল্লার সমান এই বিষয়ে আরশির কোনো সন্দেহ নেই।

যাইহোক সবাই গাড়ি থেকে নামে।বড়রা হসপিটালে রয়ে গেছে আর ছোটদের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে এতোজন কোথায় থাকবে এই ভেবে।আরশি সাভাশ হাত চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে,
“সাভাশ আপনার কি মনে হয় এই বাড়িতে আমি হারিয়ে যেতে পারি?”
সাভাশ ঠোঁট উল্টে একটু ভাবার ভঙ্গিতে বলল,
“হুম হয়তো পারো।সমস্যা নেই আমি একটা ম্যাপ তৈরি করে তোমার মোবাইলে দিয়ে দেবো তখন হারালে সমস্যা হবে না।”
“ধন্যবাদ।”

আরশি ভেতরে ঢুকে দেখে চারপাশ শুধু এন্টিক জিনিসপত্রে ভর্তি।মনে হচ্ছে সে পুরানো দিনে চলে এসেছে।একজন সার্ভেন্ট এগিয়ে এসে বলল,
“সাভাশ বাবা আমি তোমাদের সবার ঘর গুছিয়ে দিয়েছি।তোমরা কি রাতের খাবার একসাথে খাবে না কি আমি ঘরে পাঠিয়ে দেবো?”
“ফুল বুবু তুমি আমাদের খাবার ঘরেই পাঠিয়ে দিও আজকে সবাই ক্লান্ত।সকালের নাস্তা আমরা একসঙ্গে করবো।”
ফুল বুবু মাথা নাড়িয়ে বললেন,
“ঠিকাছে।”

আরশি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে।আরশির মনে পড়লো সারাদিনে তার মাকে ফোন দেওয়া হয় নি তাই ফোন দিল।আরশি ফোন ট্রাই করছে কিন্তু নেটওয়ার্ক আসছে না।আরশি দাঁড়াতেই নেটওয়ার্ক পেয়ে যায়।মায়ের সঙ্গে দুই মিনিট কথা বলেই সে ক্লান্ত হয়ে যায়।কথা একবার আসে তো আরেকবার আসে না এমন একটা অবস্থা।আরশি তাই আর না পেরে ফোন কেঁটে দেয়।
ফোন কেঁটে পেছনে ঘুরতেই কারেন্ট চলে যায়।ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার তার উপরে চোখের চশমাটাও নেই।কি একটা অবস্থা!আরশি ঠোকড় খেয়ে খেয়ে হাঁটতে থাকে।কিন্তু পরক্ষণেই থেমে যায়।নিজের বোকামির জন্য নিজেকে দুটো গালি দেয়।মোবাইলের ফ্ল্যাশ না জালিয়ে এমন কানার মতো ঘুরার কোনো মানে হয় না কি।আরশি ফ্যাশ জ্বালাতেই দেখে ব্যাটারি একেবারে লো মাত্র দশ পার্সেন্ট চার্জ আছে।এই দশ পার্সেন্ট যাওয়ার আগে চশমা, মোমবাতি অথবা টর্চলাইট খুঁজে বের করতে হবে।আরশি ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে বলে,
“সাভাশ আপনি প্লিজ জলদি বের হন।কারেন্ট চলে গেছে আমি মোমবাতি খুঁজে পাচ্ছি না।”
কিছুক্ষণ পর সাভাশ বের হলো।আরশি মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখে মোবাইলের হার্ট রেট মাত্র পাঁচ পয়েন্ট।ফ্ল্যাশ জ্বালানোর দরুন চার্জ জলদি চলে যাচ্ছে।আরশি তাড়াহুড়ো করে বলল,
“সাভাশ জলদি মোমবাতি বা লাইট কিছু একটা খুঁজে বের করুন।”
সাভাশ বলল,
“এই টাইমে তো কারেন্ট যাওয়ার কথা না আর জেনারেটর তো ছিল।”
আরশির মাথায় আগুন জলছে।ও কি বলছে আর সাভাশ কি উত্তর দিচ্ছে।আরশি সাভাশের হাতে চিমটি দিয়ে বলে,
“আপনাকে যা বলছি তা করুন,,আর আপনার মোবাইল কোথায়?”
সাভাশ কিছু একটা ভেবে মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“হায় হায় আমার মোবাইল তো গাড়িতে ফেলে এসেছি।”
;
;
;
আরশি আর সাভাশ খাটে আসন করে বসে আছে।সাভাশ আরশির থেকে মুখ লুকানোর চেষ্টা করছে।আরশিকে এই মুহুর্তে কোনো হিংস্র বাঘিনী মনে হচ্ছে ওর যদিও এতো অন্ধকারে মুখটা স্পষ্ট বোঝা দায় তার উপর আবার ভাবভঙ্গি আবিষ্কার করা তো অসম্ভব।কিন্তু সাভাশ আরশিকে খুব ভালো করে জানে আর এটাও জানে এই মেয়ে কখন কেমন আচরণ করে।আরশি রেগে চেঁচিয়ে বলল,
“নিজের মোবাইলটা আপনি কিভাবে সাথে রাখেন না?আপনি জানেন আমার কতো ভয় লাগছে।মোমবাতি রেখে কি লাভ যদি লাইটার বা ম্যাচ বক্স না থাকে।আমি কি পাথর দিয়ে আগুন জ্বালাবো।,,,ওহ পাথরও তো নেই।”
সাভাশ মিনমিনে গলায় বলল,
“আমার এতে কি দোষ?আমি কি কারেন্ট যাওয়ার জন্য দায়ী নাকি?”
আরশি চোখ বড় করে বলল,
“তো আমি দায়ী?”
“না মানে তুমি হতে যাবে কেন?”
“তাহলে কে দায়ী?”
সাভাশ বুঝতে পারে না কি উত্তর দেবে।বউয়ের সঙ্গে তর্কে না যাওয়াই ভালো তাও আবার তখন যখন সে মারাত্মকভাবে রেগে আছে।

আরশি কয়েকটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“কেউ আসছে না কেন?আলোর ব্যবস্থা তো করতে হবে।”
“আসলে এখন বাজে রাত প্রায় নয়টা আমাদের খাওয়া দাওয়া হতেই সবাই ঘুমিয়ে গেছে বুঝলে?”
আরশি নাচ ফুলিয়ে ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“হাউ রেডিকিউলাস এতো জলদি ঘুমিয়ে গেল সবাই!”
“আমরা ঘুমাই চলো।বসে বসে কি করবো,,কারেন্ট চলে আসবে।”
“কতক্ষণে?”
“এই ধরো রাত দুইটা তিনটার মধ্যে।”
“ওকে নট আ বিগ ডিল। আমার সেসবে কোনো সমস্যা নেই আমার শুধু একটাই সমস্যা তা হলো আমি বারোটার আগে ঘুমের কথা চিন্তাও করি না।”
“তো কি করবে?”
“গতকাল আমার যেই মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল তার সম্পর্কে বলুন।”
“দেখো এটা কোনো জরুরি বিষয় না তাই না জানলেও চলবে।”
“আচ্ছা তাহলে এই জায়গাটার কোনো বিখ্যাত কাহিনী শোনান।”
“ওকে তাহলে শুনো।,,,আমার নানা এই জায়গাটা কিনেছিল হিন্দু জমিদারের থেকে তুলনামূলক কম দামে।তখন হিন্দুরা নিজেদের বাড়িঘর বিক্রি করে ভারত চলে যাচ্ছিল।”
“ও এটা মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল তাই না?”
“হ্যা।তো ঐ হিন্দু জমিদারের মেয়ের নাম ছিল রোহিনী।ও খুব সুন্দরী ছিল দেখতে ওর জন্য না কি এই অনেক ধনী লোকেরা বিয়ের সম্বন্ধ পাঠাতো।কিন্তু মেয়েটার বাবা চাইছিলেন মেয়ের বিয়ে নিজের বন্ধু এক ছেলের সঙ্গে দিতে।ওনার বন্ধুর ছেলে ছিল অনেক বড় ম্যাজিসেট্রট তখনকার সময়ের।কিন্তু এদিকে মেয়েটা প্রেমের সম্পর্ক হয়ে যায় গ্রামের এক গরীব কৃষকের ছেলে দুলালের সাথে।একেই তো ছেলে মুসলমান তার উপর গরীব মেয়েটার বাবা রেগে যান অনেক।সিদ্ধান্ত নেন যত দ্রুত সম্ভব বন্ধুর ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেবেন।বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত উনি রোহিনীকে ঘরে আটকে রাখেন।অবশেষে বিয়ের দিন বর পক্ষ আসে,আয়োজন হয় কিন্তু বিয়ে হয় না।রোহিনী এই বাড়ির পেছনের একটা কুয়ার মধ্যে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।বলা হয় আজও রোহিনীকে সেই কুয়ার উপর পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।সে আজও দুলালের অপেক্ষায় আছে।হয়তো আজীবন থাকবে।ঐ কুয়াটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অনেক বছর আগে কিন্তু বলা হয় রোহিনীর বিয়ের লগ্ন যেহেতু দুপুর বেলা ছিল তাই সেই সময় কুয়াটা খুলে যায়।,,আর।”

সাভাশ আর কিছু বলতে পারে না এক জোড়া হাত তাকে জাপ্টে ধরে আছে।যেন ছেড়ে দিলেই সাভাশ থেকে তাকে রোহিনী দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে।সাভাশ হাত জোড়ার মালিককে জাপ্টে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়ে।আরশি বলে,
“আমাকে একদম ছাড়বেন না।আপনি এতো ভয়ানক কাহিনী আমাকে না শুনালেও পারতেন।আমার তো মনে হচ্ছে ঐ রোহিনী না মোহিনী আমার পেছনেই আছে।,,,সব দোষ হচ্ছে আপনার নানার এই বাড়িটা সে কেন কিনলো?আল্লাহ্,,,আল্লাহ্ তুমি আমাকে সহি সালামতে রেখো।সাভাশ আপনিও দোয়া করুন,,,আমি মরে গেলে কিন্তু আমি আপনাকে ভুত হয়ে জ্বালাবো।”
সাভাশ মুচকি হাসে তার তো আজকে খুশি ধরছে না। তবুও একটু ভাব নেওয়ার জন্য গম্ভীর গলায় বলে,
“আরু আমার ভীষণ গরম লাগছে।তুমি যদি আমাকে একটু ছাড়তে তাহলে একটু আরাম পেতাম আমি।”
আরশি সাভাশের বুকের ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে দেবে এমন অবস্থা।সে বলে,
“এমন করেন কেন?আজকে আমি জড়িয়ে ধরেছি বলে আপনার ভাব বেড়ে গেছে।”
“আচ্ছা তুমি যে এভাবে জড়িয়ে ধরেছো তাতে তো আমার কষ্ট হচ্ছে তাই না এই কষ্টের বিনিময়ে কিছু তো দেবে।”
আরশির খেয়াল নেই সে কি বলছে তাই জলদি বলল,
“যা চাইবেন তাই দেবো শুধু আমাকে ছাড়বেন না।”
সাভাশ ডেবিল স্মাইল দিয়ে বলল,
“ওকে তাহলে আমার সারা মুখে কিস করতে হবে,,সাথে আমার ঠোঁটেও।”
আরশি কথাটা শুনে ফ্রিজড হয়ে যায় কিন্তু সাভাশকে ছাড়ে না।

চলবে