#কারণে_অকারণে_সে
#পর্ব:২২
#লেখক:রিয়ান আহমেদ (ছদ্মনাম)
;
“আপনি সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন এডভোকেট সাহেব।”
সাভাশ দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
“এতোটুকু ফায়দা যদি নিজের বউয়ের কাছ থেকে না নিতে পারি তাহলে তো আমার এডভোকেট পদবীটা থাকার কোনো মানেই হয় না।”
“দেখুন অতিরিক্ত লোভ করা ভালো না।বেশি লোভ করলে আপনার কপালে কিছুই জুটবে না।”
“দেখো কোনো জায়গায় লেখা নেই বিয়ে করা বউয়ের ভালোবাসার লোভ করা পাপ।আমি তো আর পর না তোমার বর ।তাই এতোটুকু আদর করলে ক্ষতি কি?”
“দেখুন আমাদের মাঝে এর আগে এমন কিছু হয় নি তাই ব্যাপারটা আমার জন্য বেশ কঠিন।”
সাভাশ হেসে বলল,
“ওও এই কথা।হইনি হতে কতক্ষণ।”
আসলেই হয়নি হতে কতক্ষণ!সাভাশ কথাটা বলেই আরশির দুই গালে ফটাফট দুটো চুমু খেয়ে বসলো।ঠোঁটের দিকে এগোনোর আগেই আরশি সাভাশের ঠোঁটে হাত দিয়ে দিলো।সাভাশ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কি ব্যাপার?এভাবে আমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে আটকালে কেন?”
আরশি রাগী গলায় বলল,
“এটা আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ? আপনার লজ্জা করলো না এভাবে আমাকে চুমু খেতে।”
সাভাশ নির্লজ্জের মতো হেসে নিজের চুলগুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিয়ে বলে,
“একদম না।তবে প্রথমবার করেছি এমন একটা কাজ একটু লজ্জা লাগছিল বাট আমি বেশরম।আর আমি তো তোমাকে প্রাক্টিক্যালি দেখাচ্ছিলাম কিভাবে করতে হয়।এখন হাত ঠোঁটেরটা বাকি।”
আরশি মাথার পেছন থেকে ছোট বালিশটা নিয়ে সাভাশের মুখে মেরে দিয়ে বলে,
“বেশি বেশি করলে আজ আপনাকে বেঁধে ওয়াশরুমে বন্ধ করে রেখে আসবো।”
“তোমার এতো শক্তি আছে বুঝি?আমি তোমাকে যদি এখন সামান্য জোরে ধরে রাখি না তাহলে হাতটা পর্যন্ত নাড়াতে পারবে না।আর সেই মেয়ে কি না আমাকে বলে ওয়াশরুমে বন্ধ করে রেখে দিবে।”
সাভাশের নিজের শক্তি নিয়ে এমন অহংকার করা দেখে আরশি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।সে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,
“আমার সঙ্গে বেশি ভাব দেখাবেন না।কত কেজিই বা ওজন আপনার?”
সাভাশ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,
“৭৫ কেজি ৫২৫ গ্রাম আজকে সকালেই হসপিটালের মেশিনে মাপিয়েছিল।”
আরশি থেমে যায়।এতো ওজন এই লোকের!সে তো মাত্র বায়ান্ন কেজির কিভাবে পারবে এর সাথে?সুরসুরিও তো দেওয়া যাবে না সাভাশের হাত তাকে এতো শক্ত ভাবে ধরে আছে।
আরশি আস্তে করে বলল,
“সাভাশ প্লিজ একটু তো ছাড়ুন আমি কিন্তু এবার কান্না করে দেবো।”
সাভাশ চোখ বন্ধ করে বলে,
“তুমি কাঁদো আমি একটু ঘুমাই।কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে গেলে আমাকে ডেকে বলবে,’আমার চোখের জল আর আসছে না কি করবো?’ তখন আমি তোমাকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরবো দেখবে চোখের জল আপন গতিতে ঝড়ে পড়ছে।”
সাভাশ চোখ বন্ধ করতেই চোখে রাজ্যের ঘুম চলে আসে প্রথমবার প্রেয়সী তার এতো কাছে, তার বুকের মাঝে।এমন প্রশান্তিময় সময়ে কি ঘুম না এসে থাকতে পারে?
আরশির চোখের ঘুম উড়ে গেছে।তাকে এমন কোল বালিশ বানিয়ে তার স্বামী শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে এটা মেনে নেওয়ার মতো ব্যাপার নয় তার কাছে।আরশির সাভাশের এমন জড়িয়ে ধরাটা যেমন আরশিকে অস্বস্তি দিচ্ছে তেমনই কোথাও না কোথাও এ নিয়ে আরশির ভেতর অদ্ভুত একটা অনুভূতি তৈরি হয়েছে।
আরশি নিজে নিজেই বলে,
“আমি কি পাগল হয়েছি না কি?না আরশি তুই পাগল না পাগল হচ্ছে এই ছেলেটা যে তোকে সবসময় জ্বালায়।,,কিন্তু আমার তো এর পাগলামিগুলো ভালো লাগে,,,আমি এসব কি বলছি পাগলামি কি করে কারো ভালো লাগতে পারে?,,,আজকেও কি গায়ে ঐ পারফিউম দিয়েছে না কি? এর গায়ের ঘ্রাণটাতো অনেক সুন্দর।”
আরশি সাভাশের বুকে নাক ঘসে সাভাশের গায়ের ঘ্রাণ নিতে থাকে আর আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।এরই মধ্যে কারেন্ট চলে আসে কিন্তু আরশির সেই খেয়াল আর হয় না সে একইভাবে সাভাশের গায়ে লেপ্টে থাকে।চোখ বন্ধ করে বুকের ভেতর মুখ গুঁজে রাখায় লাইটের আলোও চোখে পড়লো না ওর।
;
;
;
সবাই খাবার টেবিলে বসে নাস্তা খাচ্ছে।সাভাশ,আরশি,আভাস,শিলা,মিলা সবাই একসাথে বসে আছে।
সাভাশ বলল,
“আভাস খাওয়া দাওয়া করেই আমরা বের হবো হসপিটালের জন্য।,,আরশি তুমি সাবধানে থেকো কেমন?”
আরশি জিজ্ঞেস করলো,
“আমি সাবধানে থাকবো মানে?আমি আপনাদের সাথে যাবো না?”
“না তুমি গিয়ে কি করবে?আমাদের আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে এতক্ষণ শুধু আমাদের সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি করে তো লাভ নেই তাই বাসায়ই থাকো।”
আরশি মুখ কালো করে ফেলল।একা একা এই ভুতুড়ে বাড়িতে থাকতে হবে তাকে।এটা ভাবতেই ওর গা শিরশির করে উঠলো।
;
সাভাশ ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শার্ট পড়ছে আর আরশি ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।সাভাশ ভ্রু তাকায় অর্থাৎ ,”কিছু বলবে?”
আরশি যেন এই প্রশ্নের অপেক্ষায়ই ছিল।উত্তর দিতে সে সেকেন্ড সময়ও নিলো না।
“সাভাশ আপনি প্লিজ আমাকে এভাবে এই ভুতুড়ে বাসায় ফেলে যাবেন না প্লিজ।আমি সত্যিই বলছি আমি আপনাদের একটুও ডিস্টার্ব করবো না তবুও আমাকে নিয়ে চলুন।”
সাভাশ গম্ভীর গলায় বলল,
“দেখো তোমাকে আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো?তুমি গতকাল রাতে আমাকে বলেছিলে আমি যদি তোমাকে জড়িয়ে ধরে রাখি তাহলে আমি তোমাকে যা বলবো তুমি তাই করবে কিন্তু তুমি করো নি। তাই আমি তোমার এই কথাতেও বিশ্বাস করতে পারছি না।”
আরশি হতাশ হয়।কিন্তু সে হার মানবে না।
আরশি ভাবে এবার সাভাশকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করবে।আরশি নাক টেনে যেই কিছু বলতে যাবে সাভাশ নিজেই বলে,
“নো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করার একদম করবে না।”
আরশি এবার দম নিয়ে বলে,
“তাহলে কি করবো?আমাকে যদি ঐ রোহিনীর স্বীকার হয়ে যাই।”
“দেখো শুকনো কথায় চিড়ে ভিজবে না।তুমি আমাকে কিছু দেও আমিও তোমাকে নিয়ে যাবো।”
“আপনি ঘুষ চাইছেন তাও নিজের বউয়ের থেকে?ছিহ্ বাবাই দেখে যাও কেমন ছেলের কাছে তোমরা মেয়ের বিয়ে দিয়েছো।”(ন্যাকা কান্না করে)
সাভাশ ধমকে বলল,
“এই মেয়ে চুপ!”
আরশি চুপ হয় না উল্টো আরো জোরে কাঁদতে থাকে।সাভাশ এবার না পেরে আরশির মুখ চেপে ধরে।সাভাশ বাঁকা হেসে বলল,
“এবার কুমিরের চোখের ফেলো।”
আরশি চুপ করে অপলক সাভাশের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।সাভাশ হেসে বলল,
“তুমি আমাকে আমি যেটা চেয়েছিলাম সেটা দেও আমি সত্যিই বলছি তোমাকে ঐ রোহিনী থেকে বাঁচাবো।”
সাভাশ আরশির মুখ থেকে হাত সরায়।আরশি দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,
“কি চান আপনি?”
“ভুলে গেলে?আচ্ছা সমস্যা নেই আমি আবার বলছি,,আমাকে কিস করতে হবে।সারা মুখে ইনক্লুডেড ঠোঁট।”
আরশি বিরাট চিন্তায় পড়ে যায়। কি করবে এখন সে?সাভাশের শর্ত মানবে?আরশি মনে মনে বলে,
“সাভাশের শর্ত না মানলে আমাকে এখানেই থাকতে হবে।যদি ঐ পেত্নি রোহিনী আমাকে মেরে ফেলে?আচ্ছা সাভাশকে কিস করতে এতো বেশি ভাবছি কেন আমি,,ছোট বাচ্চাদের তো আদর করে মানুষ কতো চুমু খায় চোখ বন্ধ করে আমি সাভাশের জায়গায় কোনো বাচ্চাকে কল্পনা করে কিস করে দেই তাহলেই তো হবে।যদি এই কাজ না করি তাহলে আমার আমও যাবে ছালাও যাবে।”
আরশি সাভাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,”আমি রেডি।”
সাভাশ খুশিতে গদগদ হয়ে উঠে মুখ এগিয়ে আনে।সাভাশের মতে তার নানা বাড়িটা তার জন্য লাকি।কারণ এখানে আসার পল তার বউয়ের ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে।
আরশি চোখ বন্ধ করে একটা শুকনো ঢোঁক গিলে।যতই সে ভাবার চেষ্টা কোনো ছোট বাচ্চার কথা ততোই সাভাশের হ্যান্ডসাম চেহারাটা ভেসে উঠে।তাই আরশি আর না পেরে চোখ খুলে।
সে পা উঁচু করে সাভাশের কাঁধে হাত রাখে।সাভাশের গরম নিঃশ্বাস ওর মুখে এসে বাড়ি খাচ্ছে।সাভাশ আরশির মুখের দিকে তাকিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে সাহায্য করে তার মুখে চুমু দিতে।আরশি নিজের কোমরে সাভাশের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে সাভাশের শার্ট খামচে ধরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
“Svash I can’t,,,”
সাভাশ কথাটা শুনে আরশির কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
“কিন্তু তোমাকে তো পারতেই হবে।না হলে রোহিনী,,,।”
সাভাশের কথায় আরশির গাঁয়ের লোম দাঁড়িয়ে যায় কারণ সাভাশের ঠোঁট আর আরশির কানের ছুঁই ছুঁই ভাব।আরশি আর দেরী না করে সাভাশের গালে বাম হাত রেখে চুমু খায়।
আরশি নিজেকে এবার ছাড়াতে চাইলে সাভাশ আরো গভীরভাবে আরশিকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
“তুমি ঠোঁটে চুমু দিতে ভুলে গেলে।”
আরশি মাথা নিচু করে বলে,
“আ,,আমি পারবো না।”
সাভাশ আরশির থুতনিতে হাত রেখে আরশির মুখ উঠিয়ে বলে,
“আমার চোখের দিকে তাকাও।”
আরশি সাহস পায় না তাকানোর।বড় ভয়ানক সামনের মানুষটার এই চোখ জোড়া তাকালে আর অন্য কোথাও চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা করে না।
সাভাশ আলতো করে আরশি ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় আর বলে,
“সো ফর ব্রেকিং নো টাচ।”
আরশি অবাক হয়ে সাভাশের দিকে তাকায়।এটা লিপ কিস ছিল!আরশি বরফ হয়ে গেছে এমন ঘটনায়।
সাভাশ আরশিকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
“তৈরি হয়ে এসো আমি তোমাকে,শিলাকে আর মিলাকে খালামনিদের বাসায় ড্রপ করে আসবো।”
;
আরশি গাড়িতে বসে আছে নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে।সাভাশের সেই স্পর্শ যেন সে এখনো অনুভব করতে পারছে।হঠাৎ কারো ধাক্কায় আরশি নিজের জগত থেকে বাস্তবে ফিরে আসে।চমকে বলে উঠে,
“আমি,,আমি কোথায় যাচ্ছি?আমি গাড়িতে বসে আছি কেন?”
মিলা আরশির পাশের সিটে বসেছিল সে বলল,
“ভাবী তুমি এসব কি বলছো?তুমি আমাদের বাসায় যাচ্ছো সেটা কি ভুলে গেলে?”
আরশির নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সে একটা কালো লং ফ্রক পড়ে আছে।ঘোরের মধ্যে থেকে সে ড্রেস পাল্টে ফেলেছে আবার গাড়িতেও উঠে বসেছে।আর মজার ব্যাপার হলো এসব কিছু কখন ঘটলো তা সে টেরও পায় নি।
মিলার কথা শুনে শিলা তাচ্ছিল্য করে বলল,
“আরে মিলা তোর ভাবী হয়তো ভুলে যায় কখন কি করে।এসব হচ্ছে পাগল হওয়ার লক্ষণ।”
আরশি বিড়বিড় করে বলল,
“আমাকে পাগল বলা।দাঁড়া তোর একটা ব্যবস্থা তো আমি করবো।”
তখনই গাড়ি থামে একটা ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে।সাভাশ বলে,
“আরু তুমি সাবধানে থেকো।আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন করো।তোমাকে হসপিটালে নিতে পারছি না কারণ আমাদের সারাদিন অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হবে তুমি ক্লান্ত হয়ে যাবে।”
শিলা বলল,
“সাভাশ তোমার বউকে নিয়ে এতো চিন্তা করছো।কই আমাদের তো একবারও বললে না সাবধানে থাকার কথা।”
আভাস হেসে বলল,
“আপুরা তোমরাও সাবধানে থেকো বায়।ভাই গাড়ি ছাড়ো।”
আরশি ঘুরে ঘুরে সাভাশের খালামনির বাসা দেখতে লাগলো।
মিলা আরশিকে বলল,
“ভাবী ভেতরে চলো।”
“হুম।”
আরশি বুঝতে পারছে না এখানে এসে ঠিক করেছে কি না।কারণ শিলা মেয়েটা যে আরশিকে দুই চোখে সহ্য করতে পারে না তা আরশি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে।কোনো কথা যদি বলতে হয় সেটা ডায়রেক্টলি না বলে মিলাকে দিয়ে বলায়।
আরশি সোফায় বসে বসে মোবাইল স্ক্রল করছিল এই বাড়িতে এসে একটা লাভ তার অবশ্যই হয়েছে আর তা হলো ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে এখানে।
আরশির অনুভব করে তার পাশে কেউ একজন এসে বসেছে।তাই সে ঘাড় ঘুরিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কে।দেখে মিলা বসেছে হাত ল্যাপটপ।আরশিকে একটু ইতস্তত করে বলে,
“ভাবী তুমি সাভাশ ভাইয়ের ছোটবেলার ভিডিও দেখবে?”
আরশি খুশি হয়ে বলে,
“অবশ্যই দেখবো।তোমার কাছে আছে না কি?”
মিলা উত্তর দিল না।আরশি মিলার চেহারা দেখে বুঝতে পারছে মিলার দেখানোর ইচ্ছা মোটেও নেই তাকে হয়তো কেউ জোর করছে ভিডিও দেখানোর জন্য।আরশি হেসে বলল,
“তুমি বোধহয় দেখাতে চাইছো না।সমস্যা নেই আমি তোমাকে জোর করছি না।”
তখনই হুট করে শিলা এসে আরশির অপর পাশে বসে বলে,
“এ কি মিলা তুই ভাবীকে ভিডিওটা দেখাচ্ছিস না কেন?”
মিলা শিলার কথা শুনে বাধ্য হয়েই ভিডিওটা অন করে।আরশি দেখতে শুরু করে।
ভিডিওটাতে সাভাশের বয়স এগারো বছরের মতো হবে।সাভাশ ছোটবেলা থেকেই যে বেশ গোছানো স্বভাবের মানুষ তা ভিডিও দেখে আন্দাজ করা যায়।সুন্দর করে শার্ট ইঙ্ক করা, হাতে ঘড়ি,চুল সুন্দর করে ব্রাশ করা।
সাভাশের একটা মেয়ের সঙ্গে ঘর ঘর খেলছে।মেয়েটার বয়স বোধহয় ছয় সাত হবে।মেয়েটার চেহারা দেখে আরশি বুঝতে পারলো এটা শিলা।ভিডিও চলতে থাকে আর আরশির মাথায় রক্ত উঠে যায়।আরশি রেগে মনে মনে বলে,
“বাহ্ ছোটবেলাই দেখি এই মেয়েকে বউ বানিয়ে ফেলেছেন।কি সুন্দর বাজার করে এনে এই মেয়ের হাতে দিয়ে বলছেন,’আজকে চিংড়ি মাছ রান্না করো।’ বাহ্ টুনাটুনির সংসার তো একেবারে জমে ক্ষীর।,,,আর এই মেয়ে দেখি শাড়ি পড়ে ছোটবেলায় বউ হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।আমার জামাইয়ের গায়ে কিভাবে ঢলে পড়ছে।আল্লাহ্ এই মেয়ের যেন আমার হাতে কোনো বড় ক্ষতি না হয়।”
ভিডিও শেষ হতেই শিলা হেসে বলল,
“কেমন লাগলো আপনার ভিডিওটা।আমাদের দুজনকে জামাই বউ সাজে অনেক মানিয়েছিল তাই না।”
আরশি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলে,
“হ্যা অসাধারণ লেগেছে।নিশ্চয়ই তোমার কাছেও মুহূর্তটা অসাধারণ ছিল?”
“হ্যা,,সাভাশরা নানু বাড়িতে আসলে আমরা প্রায়ই এই খেলাটা খেলতাম।”
আরশি বলে,
“বাহ্ এমন খেলা তো প্রায় খেলার মতোই জিনিস।তা এখন বাদ দিয়েছো কেন?আজকে সাভাশ আসলে বলবো ও যেন তোমার সঙ্গে আবার এই খেলা খেলে।”
শিলা এতোটা সময় হাসলেও তার মুখ থেকে হাসি উধাও হতে শুরু করেছে।তার ধারণা ছিল না আরশি এসব কথা বলবে।
আরশি শিলার আরেকটু কাছে গিয়ে বলল,
“তুমিই ঐ মেয়ে যে বৌ ভাতের দিন সাভাশের মোবাইলে ফোন করে উল্টাপাল্টা বলছিলে। এম আই রাইট?”
শিলা শুকনো ঢোঁক গিলে একটু পিছিয়ে যায়।আরশি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রাগী গলায় বলল,
“বিয়ের আগে যা হওয়ার হয়েছে।আমার আর সাভাশের সম্পর্কে যদি গিট্টু লাগানোর চেষ্টা করিস তুই শুধু দেখবি তোর সাথে কি হয়।”
কথাটা বলে যেই আরশি শিলার দিকে আরেকটু আগায় শিলা আরো পিছিয়ে গিয়ে ঠাস করে সোফা থেকে পড়ে যায় আর কোমরে ব্যথা পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে বলে,
“ও আল্লাহ্ আমার কোমর গেলরে।”
আরশি বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
“আমার কিছু করার আগেই এই অবস্থা কিছু করলে না জানি এর কি হয়।”
;
#চলবে!