কারণে অকারণে সে পর্ব-২৩

0
585

#কারণে_অকারণে_সে
#পর্ব:২৩
#লেখক:রিয়ান আহমেদ (ছদ্মনাম)
;
আরশির এমন ভয়ানক কথা শুনে শিলা ভড়কে যায়।আরশির চোখের চশমা দেখে তাকে বোকা ভাবাটা যে একদম ঠিক হয়নি তা শিলা হারে হারে টের পাচ্ছে।আরশি সোফায় ঠিক হয়ে বসে মোবাইল স্ক্রল করতে থাকে আগের মতোই স্বাভাবিকভাবে।মিলা রান্নাঘরে গিয়েছিল ঠান্ডা পানি আনতে তাই এখানকার ঘটনা তার দৃষ্টির আড়ালে রয়ে গেল।

মিলা পানি এনে বড় বোনকে মেঝেতে চিত হয়ে পড়ে থাকতে দেখে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলে,
“আপু তুমি এভাবে পড়ে আছো কেন?কি হয়েছে?”
শিলা রাগী গলায় বলল,
” আমার বাপের মাথা হয়েছে।বকবক না করে আমাকে উঠতে সাহায্য কর।”
মিলা শিলাকে দাঁড় করিয়ে সোফায় আরশির পাশে বসাতে চাইলে শিলা চোখ বড় করে ফেলে।আরশি ইশারা করে শিলাকে নিজের হাতের পিনটা দেখায় আর বাঁকা হাসে।এর সোজা অর্থ হলো,”তুই বসবি আর এটা তোর কোমরে ডুকবে।”
শিলা চেঁচিয়ে বলে,
“মিলা আমাকে সিঙ্গাল সোফায় বসা আমি একা বসতে চাই।”
মিলা পাল্টা প্রশ্ন না করে শিলার কথামতো কাজ করে।এর পরের আরশির সঙ্গে কাটানো সময়টুকু শিলার কাছে জাহান্নামের ন্যায় ছিল।সাভাশ সন্ধ্যায় আরশিকে নিতে আসতেই শিলা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে।
অরশিকে সাভাশের গাড়িতে চুপচাপ উঠে বসে।শিলারা নানু বাড়িতে যাবে না আজ কারণ তাদের মা বাবা চলে এসেছে।আজকের দিন তারা রেস্ট করে কাল আবার হসপিটালে চলে যাবে।আজ হসপিটালে থাকবে সাদমান চৌধুরি আর তাসনিম বেগম।

আরশি নিজেদের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।সাভাশ বারান্দায় টাওয়াল মেলে দিতে আসতেই আরশি আকাশের দিকে তাকিয়ে এমন একটা কথা বলে যা শুনে সাভাশ হা হয়ে যায়।আরশি বলে,
“শিলা তো আপনাকে সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসে।তার ভালোবাসার মূল্য না দিয়ে আমাকে কেন বেছে নিলেন?”
সাভাশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বারান্দার রেলিং এর উপর হাত রেখে বলে,
“কেন তুমি কি চাও আমি ওর ভালোবাসা এক্সেপ্ট করি?”
আরশি দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে বলল,
“একদম চাই না,,,মানে এখন চাই না।কারণ এখন আপনি আমার হাজব্যান্ড আর আমি কোনো মহান মানবী নই যে নিজের হাজব্যান্ডকে অন্যের হাতে তুলে দিয়ে বলবে,’সুখে থেকো।’ আমি বলছি আজ থেকে দেড় মাস আগের কথা যখন আপনার জীবনে আমি নামক ব্যক্তিটার কোনো অস্তিত্ব ছিল না।শিলা আমার থেকে সবদিক দিয়েই ভালো।”
সাভাশ এবার আরশির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওর নাক টেনে দেয়।আরশি বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে ফেলে।সাভাশ আরশির গালে হাত রেখে বলে,
“আমার তোমার থেকে ভালো কাউকে প্রয়োজন নেই আমার তোমাকে প্রয়োজন।,,আমার জীবনে শিলার চেয়েও সুন্দর চেহারার অধিকারী মেয়ে আসতে চেয়েছে কিন্তু আমি আসতে দেই নি।কারণ আমার মন মস্তিষ্ক হয়তো তোমার অপেক্ষায় ছিল।”
আরশি ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
“কি সব ফিল্মি কথাবার্তা বলছেন।আমার অপেক্ষা!আরে মিস্টার চৌধুরি আপনার সঙ্গে আমার দেখা সেই প্রথম আমার বাড়িতেই হয়েছিল।”
“হুম সেই একটা দেখাই হাজারটা দেখার সমান ছিল।আমি তোমাকে দেখতেই নিজের জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত তোমার সঙ্গে কিভাবে কাটাবো তা সাজিয়ে ফেলেছিলাম।আমি তোমাকে এর আগেও বলেছিলাম আমি আমার জীবনসঙ্গীর মাঝে যোগ্যতা কখনোই খুঁজি নি আমি সবসময় ভেবে এসেছি তাকে আমি কিভাবে ট্রিট করবো।তোমাকে দেখতেই অদ্ভুতভাবে সেই কল্পনার অদৃশ্য চেহারাটা তোমার ছবি দিয়ে পূর্ণ হয়ে গেল।,,আমি সত্যিই জানি না তোমাকে আমি কিভাবে ভালোবেসে ফেলেছি আর জানতেও চাই না।শুধু জানি ভালোবাসি।”

আরশি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে কথাগুলো শুনে যায়।অসাধারণ এই মানুষটা।একেকটা শব্দ এখনো আরশির কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।জীবনে কোনো ভালো কর্ম নিশ্চয়ই সে করেছি।নাহলে এমন একটা মানুষকে নিজের করে পেতো না।
সাভাশ আবার বলতে শুরু করে,
“শিলার কথা তুমি কিভাবে জানতে পেরেছো আমি জানি না তবে মনে রেখো আমার লাইফে ও কখনোই কাজিন ছাড়া অন্যকিছু ছিল না।রূপ ব্যাপারটা মানুষের মাঝে জরুরি কিছু নয় রুপ তো এই আছে এই নেই।আসল সত্যটা হলো মানুষ ভেতর থেকে কি।আজ একটা সত্য কথা বলি তোমার ভেতরের সবচেয়ে অসাধারণ বিষয়টা হচ্ছে তোমার পার্সোনালিটি।তোমার মনে যা মুখেও তা আর এটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি তোমার প্রতি টানে।”
সাভাশ আরশিকে ছেড়ে দিয়ে রুমে চলে যায়। আরশির মনে হচ্ছে সাভাশের আরো কিছু বলার ছিল কিন্তু বলে নি।আরশিও আর বিলম্ব না করে ঘরে চলে যায় বাইরে অনেক বাতাস।

ঝড় শুরু হবে বোধহয়।গাছপালা বাতাসের হাত ধরে উড়ে চলে যেতে চাইছে কিন্তু মাটি তা হতে দিচ্ছে না।সে গাছকে নিজের সঙ্গে আঁকড়ে ধরে রেখেছে।বিদ্যুত চমকাচ্ছে আর চারপাশ আলোকিত হয়ে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে।

আরশি এই দৃশ্য জানালার পাশে বসে উপভোগ করছে।গ্রামে বৃষ্টি হলে একটা আলাদা ঘ্রাণ পাওয়া যায়।এটা কিসের ঘ্রাণ আরশির জানা নেই তবে ধারণা করা যায় গ্রামের বিশুদ্ধ মাটির সঙ্গে মিশে এই ঘ্রাণের সৃষ্টি হয়েছে।আচ্ছা এই ঘ্রাণটাকে কি বোতলে বন্দী করে রাখা যাবে?

সাভাশ গালে হাত দিয়ে বসে আছে।মেয়েরা না কি বিদ্যুত চমকালে ভয় পেয়ে পাশের কাউকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে।কিন্তু তার বউ তো এমন কিছুই করছে না সে দিব্যি জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখছে আবার হাত বের করে ছুঁয়েও দিচ্ছে বৃষ্টির কণা গুলোকে।সাভাশ বিড়বিড় করে বলে,
“তোমার একটু ছোঁয়া পাওয়ার জন্য সাভাশ বর্ষণ হতেও রাজি।”
আরশি কান খাড়া করে কথাটা শুনে এরপর বলে,”আমার ছোঁয়ার দরকার কি?আপনার শিলা আছে না,,দেখলাম তো ছোটবেলা কতো সুন্দর করে ঘর ঘর খেলতেন।বাজার করে নিজের ছোটবেলার বউয়ের হাতে ব্যাগ দিয় বলছিলেন,’চিংড়ি মাছ রান্না করো আজ।’ সব দেখেছি আমি।আপনাদের টুনাটুনির সংসার দেখে তো আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেছি।ঐ মেয়ে কিভাবে আপনার গাঁয়ে পড়ে কথা বলছিল।”

সাভাশ কপালে হাত দেয়।তার বউ তাহলে সেই ভিডিও শেষ পর্যন্ত দেখেই ফেলেছে।সাভাশ করুন স্বরে বলল,
“আরু সেটা তো ছোটবেলার কথা।আমি তো জাস্ট ওর সঙ্গে খেলছিলাম আমরা কেউই তখন এসব বুঝতাম না।”
আরশি এবার সাভাশের দিকে ঘুরে চোখ বড় করে বলে,
“ছোট ছিলেন বলেই বেঁচে গেলেন।না হলে প্রথমে ঐ শিলা কি জাওয়ানিকে খুন করতাম পরে আপনাকে।”
সাভাশ কথাটা শুনে অবাক হয়।আরশি কি তাহলে তাকে ভালোবাসে?সাভাশ প্রশ্নটা মনের মাঝে দাবিয়ে রাখে না সরাসরিই বলে,
” তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?”
আরশি তব্দা খেয়ে যায় সাভাশের প্রশ্নে।প্রশ্নটা বড্ড বেশি কঠিন।উচ্চ মাধ্যমিকের ফিজিক্সের অংক এর চেয়ে সহজ।আরশি আমতা আমতা করে বলে,
“আমার মনে হয় আমাদের ঘুমানো উচিত।”
আরশি আর দেরী করে না।কাঁথা দিয়ে সারা শরীর ঢেকে ঘুমিয়ে পড়ে।আই মিন ঘুমিয়ে পড়ার নাটক করে।
সাভাশ মিটমিট করে হেসে মনে মনে বলে,
“তুমি বড্ড অলস মাই কিউটি।ভালোবাসার কথা বলতেও এতো অলসতা। ”
আজ আবার সাভাশের ভেতরের সত্তার আবির্ভাব ঘটে।সে এ কদিনে কথা বলার সুযোগ আর সময় দুটোই পায় নি তাই আজ কথা বলবে।ভেতরের সত্তা আড়মোড়া ভেঙ্গে বলে,
“শুধু শুধু কি বলি বোকা হয়ে থাকতে।চালাক স্বামীদের কপালে তোর বউয়ের মতো একখান বউ জুটলেই কেল্লাফতে!সময় গময়ের দরকার হবে না শুধু চালাকি করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা আর সঙ্গে সঙ্গে বউয়ের বাংলা ওয়াস।আজকে বেঁচে গেছিস তাই ভবিষ্যতে পর নারীকে নিজের নিকটে আসতে দেওয়ার আগে দশবার ভাবিস।”

সাভাশ কথাগুলো শুনে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে,”আমি মেয়েদের জ্বালাই না মেয়েরা আমায় জ্বালায়।”
ভেতরের সত্তা বলে,
“হুম তাতে কি?ছুড়ি সবজির উপরে পড়ুক অথবা সবজি ছুড়ির উপর কাটতে তো হবে সবজিকেই।আর তুই হচ্ছিস সেই সবজি।”
সাভাশ ভাবে কথা আসলেই ঠিক।

সে আরশির পাশে শুয়ে পড়ে আরশিকে জড়িয়ে ধরে আর লাইট অফ করে দেয়।আরশি নাকোচ করে না সে নিজের মতো এক পাশ ফিরে ঘুমিয়ে থাকে।দুজনের মুখে ফুটে উঠে মুচকি হাসি।

কুমিল্লায় আজ ছয় দিন হয়ে গেছে আরশিদের।সাভাশের মামারা ইতোমধ্যেই চলে এসেছেন।নানুল অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাকে আপাদত বাসায় আনা হয়েছে কারণ সে হসপিটালে থাকতে চাইছিল ষা।নানু নিজের বিছানায় বসে নাতি নাতনিদের সাথে কথা বলছেন।সাভাশের মামার বউ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সে স্পষ্ট বাংলা পারে না।
সাভাশের মামার দুই ছেলে মেয়ে।ছেলে তুহিনের বয়স বারো আর মেয়ের জারার বয়স তিন বছর।আরশির কান দুইজনের মুখ থেকে এই পর্যন্ত স্পষ্ট বাংলা শুনে নি।এরা ‘তোমার’ বলতে গিয়ে বলে,’ঠোমার’ এমন অদ্ভুত উচ্চারণ আর বিদেশিদের মতো চেহারা দেখে আরশি এদের ,”ইংরেজ” বলেই ডাকে।

নানু আরশির হাত নিজের হাতে নিয়ে বললেন,
“নানুভাই কি যে শান্তি লাগছে নিজের স্বামীর ঘরে এসে।ঐ হাসপাতালে দমটা একদম বন্ধ হয়ে আসছিল।বাকিটা জীবন এখানেই কাটাতে চাই।আল্লাহ্ যেন হাঁটা চলা অবস্থাতেই নিজের কাছে ডেকে নেয় অসুস্থ হয়ে যেন কখনো বিছানায় পড়তে না হয়।তোকে দেখে আমার যে কি ভালো লাগছি! আমি তো ভেবেছিলাম নাতি বউ না দেখেই মরে যাবো।এখন জলদি আমাকে বড় মা বানানোর ব্যবস্থা কর।”
সাভাশ পাশে দাঁড়িয়ে পানি খাচ্ছিল।কথাটা শুনেই ওর কাশি উঠে গেল মুখ থেকে সব পানি বেরিয়ে গেল।তুহিন সাভাশের পিঠে চাপড় দিয়ে বলল,
“সাভাশ ব্রো ঠুমি টিক আচো তো?”
সাভাশ নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে মাথা নাড়িয়ে বলল,
“ইয়াপ আম ওকে।”
তুহিন আবার মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

নানু হেসে বলে,
“নানু আমার নাতিটার খেয়াল রেখো।তোমাদের তো পারলে আমি এখানেই রেখে দিতাম।কিন্তু কিভাবে রাখবো বলো তোমাদের নিজেরও জীবন আছে।”
নানুর কথায় আরশি আশ্বাসের সুরে বলল,
“নানু এভাবে বলবেন না আমরা মাঝে মাঝে আসবো।”
সাভাশ নানুর পাশে বসে বলল,
“নানু এবার আমাদের বিদায় দেও আরেকটু পরে বের হলে সারাদিন জ্যামে বসে থাকতে হবে।”
নানু সাভাশের গালে হাত ধরে নিজের কাছে এনে কপালে চুমু দেন।আরশিকেও এভাবেই চুমু দিয়ে বলেন,
“তোরা তিনজনে সাবধানে পৌছে ফোন দিবি।আর আভাস কোথাও বেয়াদপটা নিশ্চিত বাগানে গাছে গাছে ঝুলছে।”
আভাস তখনই ঘরে প্রবেশ করে হাতে বিভিন্ন ধরনের ফল ঝুড়িতে ভরা।সে বলে,
“নানু তোমার গাছের অর্ধেক ফল আমার পেটে আর অর্ধেকটা হাতে।যাচ্ছি ভালো থেকো।”
আভাস কথাটা বলে চলে যায়।তারপর আবার ফিরে এসে নানুর গালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বলে,
“বায় সুইটি।”
নানু হেসে দিয়ে বলেন,” পাগল।”

আরশিরা গাড়িতে ওঠার আগে তাসনিম বেগম আর সাভাশের মামি লিজা এসে খাবারের বক্স ওদের হাতে দিয়ে দেন।লিজা বলেন,
“ঠোমরা এঠো জলদি চলে আমার ভীষণ কারাপ লাগচে।”
আভাস বলে,
“বিদেশি মামী আমাদের বাসায় অবশ্যই এসে ঘুরে যাবেন।”
লিজা হেসে মাথা নাড়ায়।তাসনিম বেগম আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
“সাবধানে পৌছে ফোন করো।আর তোমার চাচী শাশুড়ি তো আছেনই কোনো সমস্যা হলে বলবে।আমি আর তোমার বাবা আগামী সপ্তাহে চলে আসবো। মা একটু সুস্থ হলে আসবো তোমার মামীর এদিকে সব সামলাতে তো কষ্ট হয়ে বুঝলে।”
;
;
;
;
আজকে আরিয়ানার চেম্বারে আরহামের এপয়েন্টমেন্ট আছে।আরহাম চুপচাপ সোফায় বসে আরিয়ানার অপেক্ষা করছে।কিছুক্ষণ পর আরিয়ানা আসে।আরহাম তার দিকে তাকিয়ে হা হয়ে যায়।সবুজ শাড়ি পড়েছে আজ মেয়েটা।সৌন্দর্যের যদি কোনো সীমা থাকে তাহলে আজ মেয়েটা এই শাড়ি পরিধান করে তা পার করে নিয়েছে।আরহামকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরিয়ানা লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে আরহামের সামনের সোফায় বসে হাতে নিজের বোর্ডটা নিয়ে।

আরিয়ানা বলে,
“তো আরহাম আপনি কেমন আছেন?”
আরহাম উত্তর দিতে ভুলে গেছে।সে আশেপাশের কিছুই উপলব্ধি করতে পারছে না।হয়তো এই মুহুর্তে কেউ আরহামের একটা হাতের আঙ্গুল কেটে ফেললেও আরহামের কোনো রেসপন্স পাওয়া যাবে।
আরিয়ানা তুড়ি বাজাতেই আরহাম নিজের চোখ নিচে নামিয়ে ফেলে তার ভীষণ বলতে ইচ্ছে করছে,
“আপনি প্লিজ এই শাড়িটা বদলে অন্যকিছু পড়ে আসুন।”
কিন্তু সে বলতে পারে না।আরিয়ানা আবার বলে,
“আর ইউ ওকে?”
“হুম আমি ঠিক আছি।আজ কি একটু জলদি এপয়েন্টমেন্টটা শেষ করা যেতে পারে?”
“কেন?”
“আমার খুব জরুরী একটা মিটিং আছে।”
আরহামের কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যে।আসলে এমন কিছুই না সে শুধু এই ভয়ংকর সুন্দরী থেকে নিজেকে বাঁচাতে চাইছি।
আরিয়ানা বলল,
“ওকে,,,আপনার এই কয়েকদিন কি কোনো ধরনের সমস্যা হয়েছে।আই মিন রাগটা কি আপনি কন্ট্রোল করতে পেরেছেন?”
“বোধহয় অনেকটা পেরেছি।”
“আচ্ছা আপনার জীবনে এই ব্যাপারটা শুরু হয় কবে থেকে।”
আরহাম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“যখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন থেকে আমার আচরণ হঠাৎই উগ্র হয়ে উঠে। আমি বেশ লাজুক স্বভাবের ছেলে ছিলাম প্রথম দিকে কিন্তু সবাই আমাকে নিয়ে বেশ মজা করতো।তো এমনই একদিন একটা ছেলে আমাকে মারছিল আর চুপ করেছিলাম তখনই পেছন থেকে আমার বোন বলে,’ভাই ইউ হ্যাভ টু ফাইট ব্যাক।’ ব্যস সেদিন আমি ঘুরে দাড়ালাম।এরপর আমার ছোটছোট বিষয়েই মাথা গরম হতে শুরু করে।”
আরিয়ানা ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“আচ্ছা আপনি কি কখনো প্রেম করেছেন?আপনার জীবনে কি প্রেমিকা ছিল কখনো বা আছে?”
আরহাম হা করে আরিয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকে।আরিয়ানা কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নিজের প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য।কৌতূহল তো হবেই তার মাঝে তাও মাত্রাতিরিক্ত কারণ প্রশ্নটা সে নিজের জন্যই করেছে।

#চলবে!