কারণে অকারণে সে পর্ব-২৪

0
666

#কারণে_অকারণে_সে
#পর্ব:২৪
#লেখক:রিয়ান আহমেদ (ছদ্মনাম)
;
“জ্বী,,,আসলে আমার জীবনে কখনোই কোনো মেয়ে আসে নি প্রেমিকা হিসেবে।আসলে আপনাকে তো বললামই ক্লাস সিক্স থেকেই আমি বেশ উগ্র স্বভাবের হয়ে গিয়েছিলাম।,,তো মানুষের জীবনে প্রথম প্রেম আসে হাই স্কুল লাইফে আর আমার স্বভাবের কারণে মেয়েরা তো দূরের কথা ছেলেরা পর্যন্ত আমার সঙ্গে কিছু বলতে গেলে দশবার ভাবতো।আর আমার নিজেরও এসবে তেমন ইন্টারেস্ট ছিল না আমার কথা হলো প্রেম ট্রেম সব বিয়ের পর করবো।অল্প বয়সের আবেগে ভেসে কাউকে সারাজীবন সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়াটা ঠিক না।।”
আরিয়ানা কথাটা শুনে বেশ খুশিই হলো।আরিয়ানা মনে মনে বলল,
“এই সুদর্শন ছেলেকে আল্লাহ্ আমার জন্যই সিঙ্গেল রেখে দিয়েছি।আলহামদুলিল্লাহ! ওর ধারণা আমার সঙ্গে কতো মিলে।,,ইয়াহ উই আর ম্যাড ফর ইচ আদার।”
আরিয়ানা কিছুক্ষণ মিটমিটিয়ে হাসে।এরপর নিজেকে সামলে মুখটা গম্ভীর করে বলল,
“হুম গুড,,আই আপনার ধারণাকে আমি সম্মান করি।আজকাল টিনেজাররা আবেগে ভেসে নিজের সঙ্গীদের সারাজীবন সাথে থাকার কমিটমেন্ট দিয়ে বসে ভবিষ্যতে কি হবে তা চিন্তা না করেই।তারা একবারও ভাবে না তারা কথাটা না ভেবে চিন্তে বললেও অপর পাশের মানুষটার মনে এটা কত গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।,, পরে যখন মেয়েটা বা ছেলেটা দুঃখ কষ্টে নিজের জীবন দিয়ে দেয় তখন আফসোস করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।,,আপনি আজ আসতে পারেন আমি মেডিসিন এর ডোজ কমিয়ে দিয়েছি যেহেতু আপনার ভিতরে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে।”

আরহাম প্রেসক্রিপশনটা নিয়ে বাইরে বের হয়।আরিয়ানার এসিসট্যান্ট সেটা ফাইলে লাগিয়ে আরহামের হাতে দেয়।এসিসট্যান্ট কেমন মুচকি মুচকি হাসছে।আরহাম বুঝতে পারে না এই হাসির মানে কি।বাইরে বের হতেই হঠাৎ কি ভেবে যেন সে প্রেসক্রিপশনটা দেখে।আরহামের মুখ হা হয়ে যায়।প্রেসক্রিশনে লেখা,
“আপনার সঙ্গে আমি আমাদের বিয়ের পর প্রেম করতে চাই।”
আরহাম কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে কথাটার ভাবার্থ বুঝতে পেরে নিজেই হাসতে শুরু করে।সে একবার ভাবে আরিয়ানার চেম্বারে যাবে আবার পর মুহূর্তেই ভাবে নাহ্ আজ যাবে না।আরিয়ানার ভেতরের কথাগুলো যদি আজই সব জেনে যায় তাহলে পরবর্তী সাক্ষাতটা নিরামিষ হয়ে যাবে।

আরহাম গাড়ির সিট বেল্ট বাঁধতে বাঁধতে নিজেকে নিজে বলে,
“আপনাকে আমি ভাবতে চাই।আগামী সাক্ষাতের জন্য নিজের মনের অনুভূতিদের শব্দে সাজাতে চাই। হয়তো হাজারো শব্দ কাটতে হবে একটি বাক্য লিখতে গিয়ে। হয়তো শত শত কাগজ ডাস্টবিনে জায়গা পাবে।তবুও আমি লিখবো প্রথমবারের মতো প্রেম বক্তব্য লিখবো।সবাই লিখে প্রেম পত্র কিন্তু আমি লিখবো প্রেম বক্তব্য।”
কথাগুলো বলে আরহাম নিজেই হেসে দেয়।
;
;
;
আরশি তুযের সঙ্গে বসে বসে টিভি দেখছে।হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো।তুযে যেন কলিং বেলের অপেক্ষায় বসেছিল সে দৌড়ে চলে গেল মেইন ডোর খুলতে।কিছুটা সময় পর একটা মাঝারি আকারের লম্বা এবং পাতলা কিছু হাতে নিয়ে ফিরে এলো।
আরশি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
“এটা কি তুযে?দেখে তো মনে ফ্রেম টাইপের কিছু।”
তুযে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
“ভাবী এমন জিনিস আছে না এতে দেখে তোমার চোখ ডলতে হবে এরপর বিশ্বাস করবে।”
আরশি মাথা একটু ঝাকিয়ে বলল,
“কুয়াইট ইন্টারেস্টিং।তা কি আছে জলদি খুলো আমার এক্সাইটমেন্ট হচ্ছে।”
তুযে একটু ভাব নিয়ে চশমা ঠিক করে বলে,
“এখন তো দেখাবো না।ভাইয়া আসুক দুজনকে একসঙ্গে দেখাবো।”
আরশি হেসে বলল,
“সমস্যা নেই তোমার দেখাতে হবে না আমি নিজেই দেখে নেবো।”
আরশি কথাটা বলে আবার টিভির দিকে মনোযোগ দিল।তুযে কথাটা শুনে সাবধান হয়ে গেল।এটা যেকোনো মতে আরশির দৃষ্টি সীমানার বাইরে ওকে রাখতেই।কিন্তু সমস্যা হলো জিনিসটা যথেষ্ট বড় কোথাও রাখা যাচ্ছে না।তুযে তাই শেষ মেষ জিনিসটা নিয়ে রাখলো আরশি আর সাভাশের বিছানার নিচে।

আরশি যে তুযের রুমেই এটা সবার আগে খুঁজবে তা তুযে ভালো মতো জানে।সেখানে না পেলে বাকি সবার রুমে খুঁজবে কিন্তু নিজের রুমে খুঁজতে ভুলেই যাবে।
মাগরিবের আজানের কিছুক্ষণ পরেই তুযের স্যার এলেন ওকে পড়াতে।এই সুযোগ আরশির কাছে তুযে হল রুমে পড়বে এই সুযোগে আরশি সেই জিনিসটা খুঁজে বের করবে।

আরশি সব রুম খুঁজে কিন্তু কোথাও পায় না।সাধারণভাবেই নিজের রুমের খুঁজে না।

আরশি ছাদের চিলেকোঠায় খোঁজ অভিযান চালাতে চালাতে বিরক্ত হয়ে বলল,
“কোথায় রাখলো আমার ননদিনী?ধুরর আর পারবো না।”
আরশি টর্চ লাইট নিয়ে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে।তার শরীর ইতোমধ্যেই ধুলাবালিতে ভরে গেছে।আরশি রুমের সামনে যেতেই দেখে সাভাশ রুমে ঢুকছে।
আরশি রুমে ঢুকতেই সাভাশ ওকে দেখে বলে,
“কি ব্যাপার তোমার এই অবস্থা কেন?দেখে মনে হচ্ছে এতক্ষণ ধুলোবালিতে গড়াগড়ি করেছো।”
আরশি বলে,
“আমি সাসপেন্স রাখতে পারি না তাই আজ আমার এই অবস্থা।”
সাভাশ অবাক হয়ে বলে,
“মানে!?”
“মানে কিছুই না।”
আরশি ওয়াশরুমে চলে যায় জামাকাপড় নিয়ে।

এক ঘন্টা পর তুযের আগমন ঘটে ঘরে।আরশির এদিক দিয়ে সারা শরীর চুলকিয়ে অবস্থা খারাপ কারণ ওর ডাস্ট এলার্জি আছে।তুযে আরশিকে দেখে অবাক হয়ে বলল,
“হায় হায় ভাবী তোমার মুখ এমন ফুলে গেছে কেন?ইসস শরীরটা কেমন লাল হয়ে গেছে।”

আরশি চিরুনি দিয়ে পর্যন্ত শরীর চুলকাচ্ছে আর বলছে,
” আরে বলো না চিলেকোঠায় গিয়েছিলাম ধুলাবালিতে আমার এই অবস্থা এই সাত সন্ধ্যায় গোসল পর্যন্ত করেছি কিন্তু আমাকে এই এলার্জি আর মুক্তি দিল না।”
তুযের অপরাধবোধ হলো তার লুকিয়ে রাখা জিনিস খুঁজতে গিয়ে আরশির আজ এই অবস্থা। তুযে মুখ ছোট করে বলে,
“ভাবী ভাই কোথায়?আমি তো তোমাদের গিফ্টটা এখন দেবো।ভাইকে তো আসতে দেখলাম।”
আরশি রাগি গলায় বলল,
“তোমার ভাইয়া চুলোয় যাক আমাকে গিফ্টটা দিয়ে যাও। আমার এখন গিফ্টটা না পেলে কলিজায় শান্তি লাগবে না।”
“ওকে ওকে দিচ্ছি আগে বলো তো ভাইয়া কোথায়?”
“সাভাশ বন্ধুদের চা খেতে গেছে।আড্ডা দিতে দিতে দুই ঘন্টা ব্যয় করবে চায়ের দোকানে।”

তুযে কথাটা শুনে আর দেরী না করে খাটের নিচ থেকে গিফ্টটা বের করে।যা দেখে আরশি নিজের কপাল চাপড়াতে থাকে।সারা বাড়িতে সে চিরুনি অভিযান চালিয়েছে কিন্তু নিজের ঘরটাকেই ভুলে গেছে।

তুযে আরশির হাতে গিফ্টটা দিতেই আরশি সেটা দ্রুত খুলতে শুরু করে।তুযে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে বলতে থাকে,
“ভাবী আস্তে খুলো।,,এটা আমি তোমাদের বৌ ভাতের দিন দেবো ভেবেছিলাম।কিন্তু যার কাছে বানাতে দিয়েছিলাম সে নিজের গ্রামে গিয়েছিল কোনো এক কাজে।যেখানে আমাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তার দেওয়ার কথা ছিল সেখানে লোকটা আমাকে টানা এক মাস ঘুরিয়ে এটা দিয়েছে।আমিও কম না ত্রিশ পার্সেন্ট টাকা কেটে তার মূল্য পরিশোধ করেছি।শালার শিক্ষা হয়ে যাবে এবার মানুষকে দিনের পর দিন ঘুরাতে গেলে দশবার ভাববে।”

আরশি বক্সটা খুলে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।ছবিটা তার আর সাভাশের।আরশি যেদিন প্রথম এই বাসায় এসেছিল আর সাভাশ ওর শাড়ির কুচি হাটু গেড়ে বসে ঠিক করে দিচ্ছিল ছবিটা ঠিক সেই মুহূর্তের।আরশি অবাক হয়ে তুযের দিকে তাকতেই তুযে মিষ্টি হেসে বলল,
“সরি তোমাদের অনুমতি ছাড়া এই ছবিটা তোলার জন্য।কিন্তু আমি সত্যিই এমন অসাধারণ একটা দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করা থেকে নিজেকে আটকাতে পারি নি।”
আরশি মৃদ্যু হেসে তুযেকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকে।তুযে কাছে আসতেই তুযের গালে হাত রেখে বলল,
“এই অসাধারণ উপহারটার জন্য আমার ছোট্ট বোনটাকে আমি কিছু দিতে চাই।”
তুযে ঠোঁট উল্টে ভেবে বলে,
“আমাকে তোমার হাতের পায়েশ বানিয়ে খাওয়াবে তাহলেই হবে।”
“আমি কারো জন্য কখনোই রান্না করি না কিন্তু আমার এই ছোট্ট কিউট ননদিনী যদি পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন রেসিপির খাবারটাও খেতে চাইতো তবুও আমার বানাতে কোনো আপত্তি নেই।”
তখনই সাভাশ ঘরে আসে আর বলে,
“কি কথা হচ্ছে ননদ আর ভাবীর মাঝে?”
তুযে বলে,
“তোমাদের জন্য আমার তরফ হতে একটা গিফ্ট তোমরা এই গিফ্টটা উপভোগ করো আমি এখন যাই কেমন।”
তুযে কথাটা বলে চলে যায়।সাভাশ আরশির দিকে তাকিয়ে মৃদু চিৎকার করে বলে,
“আল্লাহ্ তোমার মুখের এ কি অবস্থা হয়েছে?”
“এগুলো এলার্জি সমস্যা নেই সকালের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে আমি ওষুধ খেয়ে নিয়েছি।”
সাভাশ আরশির কাছে এসে মুখ হাত দিয়ে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে বলল,
“আর ইউ শিওর? আমি ডক্টরকে ফোন করি।”
সাভাশ যেতে নিলে আরশি সাভাশের হাত ধরে আটকে বলে,
“দরকার নেই আমার সঙ্গে এরকমটা দুই তিন মাসে একবার হয় স্কিন ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ আমি এজন্য সবসময় সাথে রাখি।”

আরশিকে সাভাশ রাতের বেলা ছাদে টেনে এনেছে।সাভাশ বলল,
“আজকে অনেক স্পেশাল একটা দিন আমাদের জীবনের।আমি সত্যিই তোমাকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে অনেক খুশি।এই খুশি কিভাবে প্রকাশ করা যায় আমার জানা নেই।”
আরশি হঠাৎ সাভাশের বলা এমন অদ্ভুত কথার কোনো মানে খুঁজে পায় না তাই শান্ত স্বরে বলে,
“আজকে কি এমন স্পেশাল দিন?”
সাভাশ অবাক হয়ে বলে,
“তোমার সত্যিই মনে নেই?”
“কি মনে থাকবে?আজ আপনার জন্মদিন?তাহলে এটা আপনার স্পেশাল দিন আমাদের স্পেশাল দিন কিভাবে হয়?”
সাভাশ কিছুটা ইমোশনাল হয়ে বলল,
“আজ আমার জন্মদিন না।আজ আমাদের বিয়ের দুই সপ্তাহ পূর্ণ হয়েছে।মানে আজ আমাদের টু উইক এনিভার্সারি। তুমি আমার অনুভূতি বুঝলে না।সত্যিই আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি।”
সাভাশ কথাটা বলে আরশির দিকে পিঠ করে দাঁড়ায় এমন ভাব করে যেন সে খুব কষ্ট পেয়েছে আরশির কথায়।এদিক দিয়ে সে মিটমিট হাসছে।
আরশি সাভাশের কথা শুনে মনে মনে বলে,
“হোয়াট টু উইক এনিভার্সারি!এটা মনে রাখার মতো জিনিস না কি?আচ্ছা উনি কি সত্যিই কষ্ট পেল না কি?”
আরশি পেছন থেকে সাভাশের কাঁধে হাত রেখে আদুরে গলায় বলল,
“সাভাশ আম সরি আমার একদম মনে ছিল না একদম।”
তখনই সাভাশ নাক টেনে বলল,
“আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি তুমি আমার কষ্ট কমাতে চাইলে আমার ঠোঁটে নিজের কোমল ঠোঁটের ছোঁয়া দিতে পারো।”
আরশি কথাটা শুনতেই বুঝে ফেলল সাভাশ নাটক করছে তাই সে অনেক জোরে সাভাশের পিঠে থাপ্পড় মেরে বলল,
“আপনার চালাকি আমি ধরে ফেলেছি।”
সাভাশ পিঠে হাত দিয়ে আরশির দিকে ঘুরে বলল,
“উফফ এতো জোরে মারলে কেন?”
“আপনি কোমল ঠোঁটের স্পর্শ চেয়েছিলেন কিন্তু আমার মন বলছিল আপনাকে আমার কোমল হাতের স্পর্শ দিলে আপনার কষ্ট কমবে।”
সাভাশ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ওহ রিয়েলি?”
“হুম।”
“তোমাকে না একদম টমেটো লাগছে এলার্জি র কারণে মুখ লাল হয়ে যাওয়ায়।ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি।”
আরশি ছাদের চেয়ারে বসতে বসতে বলল,
“টমেটো খেতে ভালোবাসেন বুঝি?আপনি চাইলে ছাদের গাছ থেকে টমেটো ছিড়ে খেতে পারেন।”
সাভাশ আরশির পাশের চেয়ারে বসে আরশির গাল টিপে দিয়ে বলল,
“আমি আমার টমেটো সুন্দরীকে ভালোবাসি।”
আরশি মুখ ফুলিয়ে মনে মনে বলে,
“শুধু কি বলি?সত্যিই ‘কারণে অকারণে সে’ ভালোবাসে।”
;
#চলবে!