#কারণে_অকারণে_সে
#পর্ব:২৬
#লেখক:রিয়ান আহমেদ (ছদ্মনাম)
;
আচ্ছা ভালোবাসি শব্দটা বলার জন্য কি আয়োজন করা জরুরি?কিন্তু যদি আয়োজন করতে হয় তাহলে সেটা কেমন?আরশির জানা নেই এই বিষয়ে।রাত এখন এগোরোটা পঁয়ত্রিশ। চাইলেই এই সময়টাতে এক গুচ্ছ গোলাপ জোগাড় করা সম্ভব না যেটা দিয়ে সাভাশকে ভালোবাসি বলা যেতে পারে।সাভাশ ঘরে আসে নি এখনো।আরশি আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নিজেকে একটু পর্যবেক্ষণ করে দেখে।একটা কুর্তি পড়ে আছে সে খুবই সাধারণ বলতে গেলে।কোনো দিক দিয়েই তাকে বউ বলে মনে হচ্ছে না।বউ বউ ভাব আনার জন্য আরশি শাড়ি পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
শাহজাহান ভালোবেসে মমতাজের জন্য তাজমহল বানাতে পারলে আরশি সাভাশকে ভালোবেসে সাধারণ একটা শাড়ি পড়তে অবশ্যই পারবে।আরশি দ্রুত আলমারির কাছে যায় আর একটা টিয়া কালার শাড়ি হাতে নেয়।এই শাড়িটা পড়লে তাকে কেমন লাগবে তা সে একটু কল্পনা করে নেয়।
সে ঠোঁট উল্টে বলে,
“নাহ্ খারাপ লাগবে না।”
দীর্ঘ বিশ মিনিট চেষ্টার পর আরশি শাড়ি পড়তে সফল হয়।একেই তো আরশি এই ব্যাপারে বেশ কাঁচা তার উপর শাড়িটির ভাঁজ আজকেই প্রথম খোলা হয়েছে তাই পড়তে গিয়ে ভালোই পরিশ্রম করতে হয়েছে।
আরশি আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ঘুরে ঘুরে আরেকবার নিজেকে দেখে।গলায় সোনার চেইন, কানে দুল,নাকে ফুল,গায়ে শাড়ি এগুলোই তো বউদের চিহ্ন।আরশি ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে কাজলটা নিয়ে নেয়।আজ সে চশমা পড়বে না ঠিক করে। সাভাশকে নিজের কাজল কালো চোখ জোড়ার মায়ায় ফেলতে চায় সে। ঠোঁটে একটু লিপ লস দিয়ে নেয়।
আরশি হেসে বলে,
“পারফেক্ট মিসেস সাভাশ চৌধুরি।আজকে তোমার হাজব্যান্ডকে নিজের মনের কথা বলে দেও।বলে দেও তাকে ঐ শিলা কি জাওয়ানির সাথে কেন পৃথিবীর কোনো মেয়ের সঙ্গেই মেনে নিতে পারবে না।তোমাকে কারণে অকারণে সে জ্বালিয়েছে বিয়ের আগে।বিয়ের পরেও শান্তি দেয় নি। নিজের ভালোবাসার আগুনে আমাকে পোড়ানোটা তো সেই জ্বালাতনের চেয়েও বেশি নিষ্ঠুরতার কাজ।যাইহোক এবার আমি তাকে জ্বালাবো।আমার আচরণের থেকেও বেশি নিষ্ঠুর হবে আমার ভালোবাসা।আপনার কাল্পনিক আরুর চেয়েও বেশি রোমান্টিক হবো আমি।এতো রোমান্টিক হবো যে আপনি তখন আফসোস করবেন যে কেন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যেন আমি রোমান্টিক বউ হয়ে।আপানার জীবনে আনলিমিটেড রোমান্স আসতে চলেছে গেট রেডি ফর ইট মিস্টার সাভাশ। ”
আরশি কথাগুলো বলে মিটমিটিয়ে হাসে।সে কিছুটা লজ্জা পাচ্ছে কখনো সাভাশের সামনে এতো সেজে যায় নি সে।
হঠাৎ দরজায় নক পড়ে।আরশি দরজা খুলে দেখে তুযে দাঁড়িয়ে আছে।বেচারির চোখে রাজ্যের ঘুম তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।নিজের চোখে চশমাটা দিতে দিতে তুযে আড়মোড়া ভেঙে চোখ বড় বড় করে তাকানোর চেষ্টা করে।আরশি বলল,
“তুযে তোমাকে ঘুমের থেকে কেউ টেনে তুলেছে না কি?তুমি তো ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছো না।”
তুযে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
“ভাবী তোমাকে নিচে ডেকেছে।”
আরশি ঘড়িতে সময় দেখে।বারোটা ছুই ছুই এই সময় কে তাকে ডাকবে?প্রশ্নটা তুযেকে করার সময় আর সে পেল না তার আগেই তুযে চলে গেল।আরশি নিচে যাওয়ার জন্য না বাড়ায়।কি অপেক্ষা করছে তার জন্য? আচ্ছা সাভাশ কি সত্যিই শিলাকে বিয়ে করে এনেছে না কি?নাহ্ তাহলে তুযের চোখে ওরকম ঘুম থাকতো না।ঐ খবর শুনে ঘুম নিদ্রা সব উড়ে চলে যেতো।তখন হয়তো তুযে কাঁদতে কাঁদতে আসতো আর বলতো,
“ভাবী আমার হারামাজাদা ভাইটাকে বিয়ে করে ভুল করেছো।সে একটা জঘন্য মানুষ।”
কিন্তু তেমন কিছুই হয় নি।আরশি হলরুমে পৌছাতেই তার চোখে ছানাবড়া হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।সবাই একসাথে চেচিয়ে বলে উঠে,
“Happy Birthday Arshi”
একটা ব্লাস্টের সাউন্ড হয় আরশির মাথার উপর ঝড়ে পড়তে থাকে রঙবেরঙের কাগজের টুকরো।আরশি এখনো চোখ বড় বড় করে সবাইকে দেখছে।কে কে আছে এখানে তা বলে রাখা ভালো।
আরহাম,রিজা আহসান,আয়েশা বেগম, সাদমান চৌধুরি, তাসনিম বেগম, আভাস,সাভাশ,তুযে আর তুযের মা বাবা,আরিয়ানা আর সাভাশের একমাত্র ফুপু শারমিন বেগম।
আরশি মা বাবাকে প্রায় আঠারো দিন পর দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে।কিছুক্ষণ তাদের সঙ্গে আবেগী কথাবার্তার পর্ব চলে।
আরশি নাক টেনে বলে,
“আজকে আমার জন্মদিন আমি একদম ভুলে গেছিলাম।”
আরহাম হেসে বলে,
“কিন্তু আমরা ঠিকই মনে রেখেছি।”
আরশি বলল,
” ভাই আমাকে হ্যাপি বার্থডে উইশ করে ভালো করলে না।আমি হ্যাপি না কারণ আমার জীবন থেকে আরো একটা বছর চলে গেছে।আমি বুড়ো হয়ে গেলাম।”
তুযে বলল,
“ভাইয়া তুমি আমাকে পাঁচশ টাকা দিবা।এতো রাতে আমার ঘুম ভাঙার জরিমানা হিসেবে।”
আভাস নাক ছিটকে বলল,
“হায় হায় কি দিন এসে পড়েছে আজকাল চৌধুরি বাড়ির মেয়েরা আধুনিক পদ্ধতিতে ভিক্ষা চায়।এই খবর তো আগামীকাল পত্রিকায় ছাপবে আর এই ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত।”
তুযে চোখ পাকিয়ে বলে,
“আমি ভিক্ষা কখন চাইলাম?আমি আমার পারিশ্রমিক চেয়েছি।”
“এটা কোন ধরণের পদ্ধতি ভিক্ষা চাওয়ার! আগে তো দেখতাম ভিক্ষুকেরা ছেড়া জামাকাপড় পড়ে ভিক্ষা করে কিন্তু আজকালের কিত্রপট দেখি একদম ভিন্ন।দামী জামাকাপড় পড়ে ভিক্ষুকেরা ভিক্ষা করতে আসে।”
কথাটা শুনে আভাস নিজে সহ সবাই হাসিতে ফেটে পড়লো।তুযে আর তর্কে না গিয়ে সোফায় পা তুলে বসে পড়লো।
আরশি সাভাশের দিকে তাকায়।সাভাশের মুখটা মলিন মুখে হাসি থাকলেও দেখে মনে হচ্ছে বেশ ক্লান্ত।আরশি দেখে সবকিছু বেলুন, আর সুন্দর কাগজ দিয়ে সাজানো।
সাভাশ আরশির দিকে এতক্ষণ ঠিকমতো খেয়াল করে নি কিন্তু খেয়াল করতেই সে দ্বিধায় পড়ে যায় এটা তার বউ আরু না টিয়া পাখি?হ্যা টিয়া পাখি এটা তার টিয়া পাখি।
কেক কেটে সবাই ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।বাকি সব আয়োজন না কি সেখানেই।আরশির পাশে দাঁড়িয়ে ফিস ফিস করে,
“এই টিয়া পাখিকে খাঁচায় বন্দী করার মতো সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়?উঁহু যায় না হৃদয় নামক খাচাটা তো অনেক আগেই এই টিয়া পাখির নামে করে দিয়েছি।এখন সে যদি চায় তবে বন্দি হবে সে।”
আরশি হেসে সাভাশের দিকে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে বলে,
“অদ্ভুত কথা বলছেন আপনি।এই বলছেন বন্দি করতে চান টিয়া পাখিকে আবার এই তার অনুমতি চাইছেন!”
সাভাশ আরশির হাতের আঙ্গুলের মাঝে নিজের আঙ্গুল জড়িয়ে নিয়ে হেসে বলে,
“আমি বন্দি জীবনের বন্দিনী হওয়ার অনুমতি চাইছি না আমি একটা হৃদয়কে বন্দি করার অনুমতি চাইছি।মানুষের দেহ তার অনুমতি ব্যতীত বন্দি করা গেলেও মনের ক্ষেত্রে তা করা যায় না। কারণ বন্দি কারাগারে থেকেও মানুষ খোলা আকাশ কল্পনা করতে পারে নিজের মনের কল্পনা থেকে। তাই এই টিয়া পাখির হৃদয়কে বন্দি করতে আমি তার অনুমতি চাই।”
আরশি কি বলবে ভেবে পায় না।লোকটার কথাগুলো অসাধারণ সে ‘ল’ নিয়ে পড়াশুনা না করে ফিলসফি নিয়ে পড়লে খুব একটা ক্ষতি হতো না।আরশির ঘোর ভাঙ্গে আরিয়ানার ডাকে। আরিয়ানা বলে,
“আরু ছাদে চলো।”
সাভাশ এর মাঝেই বলে উঠে,
“ওয়েট।” সে প্যান্টের পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে আরশির চোখে বেঁধে দেয়।আরশি বিরক্তি কন্ঠে বলল,
“এটা বাঁধলেন কেন?আমার এখন ঘরের মধ্যে কানা মাছি খেলার শখ আমার নাই।”
সাভাশ বলল,
“কানামাছি খেলার শখ নাই তো আমি জানি কিন্তু তোমার জন্য যেই সারপ্রাইজটা রেখেছি তা দেখতে হলে একটু অন্ধকারে তো থাকতেই হবে।”
“আমি সিঁড়ি দিয়ে কিভাবে উঠবো?”
“আমি আছি কি করতে?”
কথাটা বলেই সাভাশ আরশিকে কোলে তুলে নিলো।আরশি হাসির শব্দ শুনে না কিন্তু বুঝতে পারে ইয়াং যারা আছে তারা মিটমিট করে হাসছে আর বড়রা হয়তো লজ্জা পাচ্ছে।
সাভাশ আরশিকে নিয়ে হাটতে শুরু করে।সিঁড়ি বেয়ে উঠতে তার বেশ কষ্ট হচ্ছে কিন্তু প্রেয়সীর খুশির জন্য এতটুকু কষ্ট করা সাজে।
আজ বিকালে সাভাশ যখন ইচ্ছে করে আরশিকে ইগনোর করেছিল তখন আরশির শুকনো মুখটা তার বুকে বেশ কষ্ট দিয়েছিল।
ভালোবাসা বোধহয় এমনই হয় ভালোবাসার মানুষের একটু কষ্টে আমরা ব্যথিত হই আবার তাদের মুখের একটু হাসিতেই আমাদের হৃদয় খুশি হয়ে যায়।
আজকেই যে প্রথম সাভাশ আরশিকে কোলে তুলেছে তা কিন্তু নয় এটা দ্বিতীয় বার।
আপনারা ভাবছেন তো তাহলে প্রথমবার কবে হয়েছিল ঘটনাটা।প্রথমবার সাভাশের নানুবাড়ি কুমিল্লায় এটা ঘটেছিল।আরশি গাছে উঠছিল আম পাড়ার জন্য কিন্তু অভিজ্ঞতা কম থাকার দরুন সে ওঠার আগেই পা মোচকে ফেলে আর এরপর সে কি কান্নাকাটি! আরশি নিজের পায়ে হেঁটে বাগান থেকে আসতে পারছিল না তাই সাভাশ পাঁজাকোলা করে ওকে বাড়িতে নিয়ে যায়।
সাভাশ আরশিকে ছাদে এনে নামিয়ে দেয়।সাভাশ হাঁপিয়ে উঠেছে।আরশিকে কোলে নিয়ে এতোগুলো সিঁড়ি বেয়ে ওঠা সত্যিই খুব কষ্টসাধ্য ছিল তার জন্য।
আরশি আর দেরী না করে চোখের বাধন সরিয়ে নেয়।সাথেই সাথেই আতসবাজির মেলায় তার চোখ ধাঁধিয়ে উঠে।আতসবাজি দিয়ে আকাশে লেখা “Love to the most savage girl” আরশি মুখে হাত দিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলে,
“ও মাই গড! আমি এতোটাই বর্বর না কি যে তা আকাশের গায়ে লিখে সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে?”
সবাই হেসে দেয়।ছাদে ডিনারের টেবিল সেট করা তার উপরে একটা বড় বুকে ফুলের না চকলেটের।আরশি বুকেটার চকলেটগুলো সাজানোর ধরণ দেখে প্রথমে ভেবেছিল কোনো জাতীয় ফুল কিন্তু কাছে গিয়ে দেখতেই জিনিসটা যে ফুলের পরিবর্তে চকলেট দিয়ে সাজানো তা ওর কাছে ক্লিয়ার হলো।
সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করে।বড়রা নিচে চলে যায় আর ছোটরা সিদ্ধান্ত নেয় ছাদে বসে আড্ডা দেবে।কার্পেট বিছিয়ে সবাই বসে পড়ে পড়ে।আভাস ভালো গিটার বাজাতে জানে সে গিটার সাথে নিয়েই এসেছে।আজ সবাইকে পালা করে গান গাইবে আর গিটারিস্ট হবে আভাস।সবার প্রথমেই আরশিকে সবাই ধরে যেহেতু আজ তারই জন্মদিন।আরশি বলে,
“তোমাদের ভাগ্য ভালো আমার গলার গান শুনবে।আমার গান শুনে মরা মানুষ কথা বলতে না পারলেও জিন্দা মানুষ কথা বলতে ভুলে যায়।”
আভাস বলে,
“ভাবী এবার বলো কোন গান গাইবে। আজকে আমি গিটারিস্ট হয়েছি তাই আমার একটা প্রস্তুতি আছে না।”
আরশি বলল,
” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভালোবাসি ভালোবাসি গানটা।”
আভাস বলল,
“ওকে তাহলে শুরু করো।”
আরশি গলা ছেড়ে গাইতে শুরু করলো।আরহাম জানে তার বোন কেমন গান গায় তাই আগেই কানে হাত দিয়ে রেখেছিল।কিন্তু একি!এটা আরশিই গাইছে তো না কি কোথাও কোনো রেকর্ডার বাজছে।আরশি অতি সুন্দর করে গান গাইছে,
“ভালোবাসি ভালোবাসি
এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায়
বাজায় বাঁশি
ভালোবাসি ভালোবাসি
আকাশে কার বুকের মাঝে ব্যথা বাজে
দিগন্তে কার কালো আঁখি
আঁখির জলে যায় ভাসি
ভালোবাসি
ভালোবাসি ভালোবাসি
সেই সূরে সাগর কূলে বাঁধন খুলে
অতল রোদন উঠে দুলে
সেই সূরে সাগর কূলে বাঁধন খুলে
অতল রোদন উঠে দুলে
সেই সুরে বাজে মনে অকারনে
ভুলে যাওয়া গানের বাণী
ভোলা দিনের কাঁদন
কাঁদন হাসি
ভালোবাসি ভালোবাসি
ভালোবাসি ভালোবাসি!!”
সাভাশ গানের ন প্রতিটা লাইন অনুভব করতে পারছে।শরীরের রন্দ্রে রন্দ্রে একটা অদ্ভুত শীতলতা অনুভব হচ্ছে তার।মেয়েটা গান গাওয়ার সময় বার বার তার দিকেই তাকাচ্ছিল।যেন বলতে চাইছে,
“এই গানের সুর ছন্দ তোমার জন্য।”
সবাই হাত তালি দেয়।আরহামের চোখ আর কান এখনো বিশ্বাস করতে চাইছে না এটা আরশির গাওয়া গান।আরহাম বিড়বিড় করে বলল,
“আমি কি স্বপ্ন দেখছি না কি?আরুর গান শুনে আজ পর্যন্ত কেউ কানে হাত না দিয়ে থাকতে পারে নি আজ সে কি না এতো সুন্দর করে গাইলো।”
আরশি নিজের ভাইয়ের অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে মনে মেন বেশ আনন্দ পায়।আসলে সে আজকেই প্রথম নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে গানটা গেয়েছিল শুধুমাত্র সাভাশের জন্য।নাহলে অন্য সময় জীবিত মানুষও তার গান শুনে কথা বলতে ভুলে যেতো।মানে এতোটা জঘন্য ছিল ওর গলার গান।
এরপর সাভাশকে বলা হলো গাইতে।সাভাশ বুঝতে পারছে না কোন গানটা গেয়ে সে নিজের মনের ভাবটা আরশির সামনে তুলে ধরতে পারবে।অনেক চিন্তা করে বলে,
“অভিযোগ গানটা গাইবো।”
আভাস দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
ভাবীর প্রতি কি কোনো অভিযোগ আছে না কি?,,আমার এতো ভালো ভাবীর নামে ভাইটার অভিযোগ কি করে থাকতে পারে!”
সাভাশ চোখ পাকিয়ে তাকাতেই আভাস সোজা হয়ে বসলো।সাভাশ শুরু করলো,
“আমার সকল অভিযোগে তুমি
তোমার মিষ্টি হাসিটা কি আমি?
আমার না বলা কথার ভাঁজে
তোমার গানের কত সুর ভাসে!
তোমায় নিয়ে আমার লেখা গানে
অযথা কত স্বপ্ন বোনা আছে!
আমার হাতের আঙুলের ভাঁজে
তোমাকে নিয়ে কত কাব্য রটে!
ভুলিনি তো আমি
তোমার মুখে হাসি
আমার গাওয়া গানে তোমাকে ভালোবাসি
আসো আবারও কাছে
হাতটা ধরে পাশে
তোমায় নিয়ে যাব আমার পৃথিবীতে
এই পৃথিবীতে
তোমার পথে পা মিলিয়ে চলা
তোমার হাতটি ধরে বসে থাকা
আমার আকাশে তোমার নামটি লেখা
সাদার আকাশে কালো-আবছা বোনা
তোমায় নিয়ে আমার লেখা গানে
অযথা কত স্বপ্ন বোনা আছে!
আমার হাতের আঙুলের ভাঁজে
তোমাকে নিয়ে কত কাব্য রটে!
ভুলিনি তো আমি…”
সাভাশের গানে আরশির প্রতি যেই অভিযোগ তা আরশি বুঝতে পারছে।একে একে আরিয়ানা,আরহাম,তুযে এবং আভাস গান গাইলো।একেক জন গল্প করতে করতে ছাদেই ঘুমিয়ে গেল।তুযে অবশ্য নিজের ঘরে চলে গেছে।আভাস কথা বলতে বলতে সাভাশের কাঁধের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।
আরশি নিজের ভাইয়ের পরিবর্তনে অবাক হওয়ার সাথে সাথে বেশ খুশিও কারণ আরহাম এখন সবার সঙ্গে কথা বলছে মন খুলে হাসছে।আরিয়ানার সঙ্গে চোখে চোখে কথা বলাটা আরশির চোখ এড়ালো না অবশ্য।দুজনকে একটু স্পেস দেয়া দরকার বলে আরশির মনে হচ্ছে।আরশি আড়মোড়া ভেঙ্গে বলল,
“সাভাশ আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে চলুন ঘরে চলুন।”
সাভাশ সঙ্গে আভাসকে নিজের কাঁধের থেকে সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“হুম চলো আমারও ঘুম পেয়েছে।”
আভাস পিটপিট করে তাকিয়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলে,
“মীর জাফর হয়ে গেছে আমার ভাই।বউয়ের জন্য আমাকে এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।”
সাভাশ আভাসের পিঠে চাপড় মেরে বলল,
“তোর জীবনে যখন বউ আসবে তুইও বুঝবি।বিয়ে তো করিস নি তাই বুঝতে পারছিস না।”
আভাস চোখ বন্ধ করে বলল,
“সমস্যা নেই খুব জলদি আমিও বিয়ে করবো।আমাকে আর ডিস্টার্ব করো না আমি ছাদেই ঘুমাবো।”
আরশি আরহামকে বলে,
“ভাই আমি যাচ্ছি তোমরা গল্প করো।”
আরশি আর সাভাশ চলে যেতে আরহাম আর আরিয়ানার মাঝে পিন ড্রপ সাইলেন্স তৈরি হয়।আরহাম মনে মনে বলে,
“আমার আগে কথা বলা উচিত ওর সাথে।ও মেয়ে হয়ে ফার্স্ট স্টেপ নিয়েছে আর আমি ওর সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছি।শেম অন ইউ আরহাম।”
আরহাম আর দেরী না করে বলল,
“তুমি আই মিন আপনি কেমন আছেন?”
আরিয়ানা লাজুক হেসে বলে,
“আপনি সামনে থাকলে আমি খারাপ থাকি কি করে?”
আরহাম আর দেরী না করে পকেট থেকে কাগজটা বের করে ইতোমধ্যেই সে ঘেমে গেছে নার্ভাসনেসের কারণে।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে সে বলল,
“আমি আজ থেকে আপনাকে তুমি বলে সম্বোধন করার মতো একটা সম্পর্ক বানাতে চাই।যেখানে থাকবে ভালোবাসা,বন্ধুত্ব এবং কখনো কখনো ছোট খাটো ঝগড়া।তুমি আমার লাইফে ডাক্তার রূপে এসেছো কিন্তু আমি চাই তুমি আমার জীবনে স্থায়ীভাবে বধু হিসেবে প্রবেশ করো।কথা দিচ্ছি আমার মনের ডাক্তারকে তার পাওনা ভালোবাসার এক আনাও কম দেবো না।সবশেষে বলতে চাই আমার জীবনে এটাই প্রথম প্রেম বক্তব্য যা আমি আমার ভালোবাসার আরিয়ানার জন্য পাঁচ ঘন্টা পরিশ্রমের পর লিখেছি।আর হ্যা আমি তোমাকে দেখে প্রথম প্রেমে পড়েছি নীল শাড়িতে দেখে আর প্রথম ভালোবেসেছি সবুজ শাড়িতে দেখে।তাই চাই আমাদের বিয়েতে এই দুটোর মধ্যে যেকোনো একটা রঙের পোশাকেই যেনো আমরা সজ্জিত হই।”
আরিয়ানা আরহামের বুকের উপর এক প্রকার হামলে পড়ে বলে,
“এতো অপেক্ষা না করিয়ে সেদিন সাথে সাথে আমার কেবিনে ঢুকলে একটা চুমু পেতে উপহার হিসেবে।”
আভাস ঘুমাচ্ছে তাই তার পাশের লাভ বার্ডের কাহিনী তার দেখতে হচ্ছে না।আরহাম আরিয়ানাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তাহলে এখন দেও।”
আরিয়ানা বলে,
“উহু বিয়ের আগে এসব নয়।তাছাড়া এটা তোমার শাস্তি আমাকে ওয়েট করানোর জন্য।”
আরহাম হাসে।
;
;
;
আরশি ঘরে এসে সাভাশের দিকে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“কি ব্যাপার ছাদে আপনার এতো অভিযোগের কারণ কি ছিল?আমি কি আপনাকে খেতে দেই না?না কি ঘুমাতে দেই না বলেন।”
সাভাশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
“খাওয়া দাওয়ার করি না বলি নি।আমার বউ তো আমাকে ভালোবাসে না।সবসময় ইগনোর করে একটুও চোখে হারায় না নিজের অবলা স্বামীকে।আমি,,,,।”
সাভাশ আর বলতে পারে না তার ঠোঁট জোড়া কেউ দখল করে নেয়।সাভাশ আরশির কোমর জড়িয়ে নিজের সঙ্গে আরো জড়িয়ে নেয়।কিছুটা সময় বাদে আরশি সাভাশকে গালে হাত রেখে ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে হেসে বলে,
“আজ থেকে আর কোনো অভিযোগ থাকবে না আর না থাকবে বাঁধা।আজ থেকে আমাদের জীবনে শুধু থাকবে আনলিমিটেড ভালোবাসা।আপনি কি তা সহ্য করতে প্রস্তুত?”
“আমি তো সবসময় প্রস্তুত।”
“ভালোবাসি।”
“ভালোবাসি তোমাকে কারণে অকারণে।”
পৃথিবীতে আরো দুইজন মানুষের ভালোবাসার সূচনা ঘটে।মিলে মিশে তারা একাকার হয়ে যাচ্ছে রাতের অন্ধকারে। সাভাশ শেষ পর্যন্ত নিজের ভালোবাসার মন জয় করেছে ভালোবাসা দিয়ে।
;
#চলবে!