#কারণে_অকারণে_সে
#পর্ব:২৮
#লেখক:রিয়ান আহমেদ (ছদ্মনাম)
;
আরশি সাভাশের কোলে বসেছিল তখনই ওর মোবাইলে ফোন এলো।আরশি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আরহামের নম্বর।আরশি দ্রুত সাভাশের কোল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ফোন রিসিভ করে।সাভাশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তার জান এতক্ষণ আসছিল আয যাচ্ছিল।
আরশি দুষ্টু হেসে বলে,
“আসসালাম ওয়ালাইকুম ভাই।ভাবীর সঙ্গে প্রেম কেমন চলছে?”
আরহাম বলে,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,আরু এসব কথা বাদ দে কি ঘটেছে কিছু জানিস?”
আরশি একটু অবাক হয়ে বলল,
“কি হবে?”
“মিনুর এক্সিডেন্ট হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি।”
“কি বলো ভাই? কিভাবে হলো এসব?”
“ও স্কুল থেকে ফিরছিল তখনই রাস্তায় একটা বাইক ওকে ধাক্কা মেরে চলে যায় এরপর একটা সিএনজিতে গিয়ে ওর মাথা বাড়ি খায়।অবস্থা অনেক খারাপ।আমি এখন হসপিটালে আছি আমাদের এলাকার এক লোক ওকে হসপিটালে এনেছে ওর মামা মামী আসে নি।”
আরশি বুঝে ফেলেছে কি ঘটেছে।সে ভাইয়ের থেকে ঠিকানা নিয়ে হসপিটালে রওনা হয় সাভাশের সাথে।
সাভাশকে রাস্তায় যেতে যেতে সব ঘটনা বলে।আরশি তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,
“আমি প্রথমেই জানতাম ওর মামা মামী খুব জলদি রঙ পাল্টাবে।সেদিন শুধুমাত্র সবার চোখে ভালো সাজার জন্য ওকে বাসায় নিয়ে গিয়েছিল এখন হসপিটালে আসছে না সেখানকার বিল দেওয়ার ভয়ে।আমার তো মনে হয় সৌরভই এই ঘটনার সাথে যুক্ত।”
সাভাশ ড্রাইভ করতে করতে বলে,
“আমারও তাই মনে হয়।কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় কথা হলো মিনুর জীবন বাঁচবে কি না।এতোটুকু বাচ্চা মেয়ে এতো বড় আঘাত থেকে রিকভার হয়ে উঠলে সেটা আল্লাহর কুদরত ছাড়া আর কিছু না।”
;
আরশি আর সাভাশ হসপিটালে পৌছাতেই দেখে আরহাম আর ওর মা বাবা সহ এলাকার আরো কিছু লোক বসে আছে।আরশি কেবিনের সামনে গিয়ে আয়না দিয়ে এক নজর ভেতরে ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢাকা শরীরটা দেখে।শরীরের প্রতিটা জায়গা ব্যান্ডেজে ঢাকা আর রক্তের লাল ছোপ ছোপ দাগ।নাকে অক্সিজেনের নল লাগানো।আরশির চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি ঝড়ে পড়ে।কি অবস্থা হয়েছে বাচ্চা মেয়েটার।
ডাক্তার তখনই বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে।তিনি মুখ কালো করে বলেন,
“আমাদের যতটুকু সম্ভব আমরা করছি কিন্তু মনে হয় না বাঁচানো সম্ভব।মাথায় আঘাতটা অত্যন্ত গুরুতর সে যতক্ষণ বাঁচবে ততটা সময় তার জন্য মৃত্যুসম যন্ত্রণা।নাক আর কান দিয়ে রক্ত পড়ছে অনবরত আমরা এটা কোনোমতে আটকাতে পারছি না।”
সবাই বুঝে গেল এখন আর কোনো আশা নেই।ডাক্তার বলল,
“ওকে লাইফ সাপোর্টে রেখে যতক্ষণ বাঁচিয়ে রাখব ততটা সময় ও শুধু কষ্টই পাবে।”
ডাক্তার আর কিছু না বলে চলে গেল।
রাত আটটার দিকে মিনুর লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে দিয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করা হলো।
আরশির কেন যেন মনে হচ্ছে আজ মিনুর এই অসময়ে মৃত্যুর জন্য সেই দায়ী সেদিন যদি মিনুকে ওর মামীর সঙ্গে ও না যেতে দিতো তাহলে হয়তো সৌরভের ক্রোধটা মিনুর জীবন এভাবে নিয়ে নিতো না।ইতোমধ্যেই সৌরভের নামে থানায় কেস দায়ের করা হয়েছে।
আরশি এখন নিজের বাড়িতে।ফজরের আজানের আগেই মিনুর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
আরশি নিজের ঘরের জানালার কাছে বসে আছে।সাভাশ মিনুর দাফন সম্পন্ন করে মাত্র বাসায় এসেছে।সে পান্জাবি খুলে আরশির পাশে বসে।আরশি সাভাশের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“মিনু ঘুমিয়ে গেছে চিরদিনের জন্য তাই না?”
সাভাশের গলা ভারী লাগে সে উত্তর দিতে পারে না।আরশি আবার জানালার উপর হাত রেখে মিনুর মামার বাড়ির উপর দৃষ্টি রেখে বলে,
“ভালোই হয়েছে।এখন আর কোনো সৌরভ ওর সারা গায়ে নিজের কুৎসিৎ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে পারবে না।ওকে ভোগ করার চেষ্টা করতে পারবে না।,,আমি মরে গেলে আমার জন্য কাঁদবে এমন অনেক মানুষ আছে আপন পর কারো অভাব নেই।কিন্তু মেয়েটা মরে গেলো ওর মামা মামি এক ফোঁটা চোখের জল ফেলা তো দূরের কথা একটাবার ওর মিষ্টি মুখটাকে শেষবারের মতো দেখলো না পর্যন্ত।আল্লাহ্ এমন জালিম মানুষ পৃথিবীতে কিভাবে থাকে আমার জানা নেই।আল্লাহ্ যেন এদের জীবনে এমন দিন আনে যাতে একজন মানুষ এদের কবরে মাটি দেওয়ার জন্য না থাকে।মিনু যেভাবে হসপিটালের বেডে শুয়ে অসম্ভব যন্ত্রণায় নিজের মৃত্যু কামনা করেছে সৌরভ যেন এর চেয়েও যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু পায়।”
আরশি কাঁদছে সেটা সাভাশ না দেখলেও বুঝতে পারছে।আরশির পেট সে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“নিজের ভেতরের কান্নাটাকে প্রকাশ করো সেটাকে আটকে রেখো না।”
আরশি আর আটকায় না নিজেকে সাভাশের হাত দুই হাতে আঁকড়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।
আজ দুইদিন হয়ে গেছে মিনুর মৃত্যুর আরশি বেশ চুপচাপ থাকে।কথা কম বলে আর মনে মনে কি যেন ভাবে।মিনুর কেসটা আদালতে উঠতে বেশি সময় লাগবে কারণ এখনো তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি সৌরভের বিরুদ্ধে।ঐ বাইকটার নাম্বার একজন বৃদ্ধ মনে রেখেছে এখন সেই নাম্বারের বাইক খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
;
রাতে সাভাশ ঘরে আসতেই আরশি চুপচাপ সবকিছু এগিয়ে দেয় ওকে।সাভাশের আর সহ্য হচ্ছে না আরশির এমন নীরবতা।সে জামাকাপড় সব পাশে রেখে দিয়ে আরশিকে কোলে তুলে নিলো।আরশি হঠাৎ এমন হওয়ায় বেশ অবাক এবং অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
“তুমি কি করছো?নামাও আমাকে?”
সাভাশ বাড়ির সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে বলল,
“আজকে আমরা ঘুরবো।”
আরশি অবাক হয়ে বলল,
“কোথায় ঘুরবো?এতো রাতে কোথাও যাবো না আমি।”
সাভাশ আরশিকে নামিয়ে ওর হাত ধরে রাস্তায় হাঁটা ধরে বলে,
“আজ আমরা রাতের শহর দেখবো।”
“রাতের শহর!তোমার কি মনে হয় আমি এতোদিন রাত কানা ছিলাম যে এতো বছর রাতের শহর দেখি নি কিন্তু আজকে দেখবো?”
“এতোদিন কি দেখেছো তা আমি জানি না কিন্তু আজ তুমি তোমার প্রেমিক স্বামীর সঙ্গে নতুন রূপ দেখবে এই শহরের।”
আরশি সাভাশের কথা শুনে মুচকি হেসে হাঁটতে থাকে।কিছুক্ষণ পর সাভাশ একটা রিকশা থামায়।দুজনে উঠে বসে।সাভাশ বলে,
“মামা হাতির ঝিল চলুন।”
“নাহ্ হাতির ঝিল গিয়ে কাজ নেই অনেকবার গিয়েছি।”
“তাহলে মামা রিকশা চালাতে থাকুন আমরা যেখানে বলবো সেখানে থামাবেন।”
রিকশাওয়ালা বলল,
“ওকে ব্রো।”
আরশি রিকশাওয়ালার এমন ইংলিশ বলা দেখে অবাক হয়ে যায়।আরশি মনে মনে বলে,
“বাহ্ আজকাল রিকশাওয়ালারাও কথায় কথায় ফটর ফটর ইংলিশ বলে।”
আরশি প্রশ্ন করে,
“ভাই আপনি কি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন?”
রিকশা চালাতে মনোযোগী হয়ে লোকটা বলে,
“এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারি নাই কিন্তু টেন পর্যন্ত পড়ছি।”
“কেন?দেন নি কেন?”
“বাবা বেতন দিতো না স্কুলের মা কোনোমতে কাজ কাম করে বেতন দিয়ে পড়াশুনা চালাইতো।,,”
আরশি কথার মাঝেই বলে,
“আপনার মায়ের কি কিছু হয়েছিল?”
রিকশাওয়ালা হেসে বলেন,
“না আপা।আমার আম্মা এখনো আলহামদুলিল্লাহ হেঁটে চলে খেতে পারে।টেনে পড়ার সময় এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক হয় মেয়ে পড়তো নাইনে।মেয়ের মা বাবা বিয়ে ঠিক করে অন্য এক ছেলের সাথে এরপর আর কি মেয়েকে নিয়ে আমি পালিয়ে বিয়ে করি।তারপর পড়াশুনা বাদ দিয়ে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি আম্মাও আর চেষ্টা করে না পড়াশুনা করানোর।”
আরশি অবাক হয়ে বলল,
“এতো ছোট বয়সে প্রেম আবার বিয়ে।নিশ্চয়ই আপনাদের মধ্যে অনেক ভালোবাসা।”
লোকটা হতাশ গলায় বলল,
“না আপা।টাকা না থাকলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায় এই কথাটা সত্য।প্রথম প্রথম আলেয়া মানে আমার বউ বলতো আমার ভালোবাসা হলে তার আর কিছুর দরকার নাই। কিন্তু আস্তে আস্তে যখন তার চাহিদা আমি পূরণ করতে পারি না তখন তার ভালোবাসা উড়ে যায়। বিয়ের দুই বছর পর আমাদের একটা ছেলেও হয় কিন্তু তবুও সংসারে তার মন ফিরে না।তিন বছরের মাথায় ছোট্ট বাচ্চা ছেলেটারে ফেলে অন্য ছেলের হাত ধরে চলে যায়।এরপর বাবা মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করেছি এখন ভালোই আছি বউ বাচ্চা নিয়ে।”
আরশির কথাটা শুনে লোকটার জন্য খারাপ লাগে এতোটুকু বয়সে ছেলেটা মেয়েটার জন্য পড়াশুনা ছেড়ে এতো কষ্টের একটা জীবন বেছে নিলো আর মেয়েটা এভাবে অন্যের হাত ধরে চলে গেল!আরশি জিজ্ঞেস করে,
“আপনার বয়স কতো ভাইয়া?”
“পঁচিশ বছর হইলো কিছুদিন আগে।”
আরশি অবাক হয় কথাটা শুনে।এতো কম বয়স লোকটার অথচ দেখে মনে হয়েছিল ত্রিশের বেশি হবে।
সাভাশ আর আরশি রিকশাটা থামায় একটা ফুড স্টলের সামনে।দুজনে সেখান থেকে বিভিন্ন ফাস্ট ফুড খায়।আরশিকে সাভাশ বলে,
“আরু একটা চেলেন্জ হয়ে যাক।”
আরশি খাবার চিবুতে চিবুতে বলে,
“কেমন চেলেন্জ?”
“এখানে অনেক বড় একটা ডোসা পাওয়া যায় তুমি যদি সেটা পাঁচ মিনিটে শেষ করতে পারো তবে তোমাকে আমি পাঁচ হাজার টাকা দেবো।”
“পাঁচ হাজার! আমার অন্যকিছু চাই।”
“কি চাই বলো।”
“এই যে আপনার সুন্দর চেহারা এটাতে আমি মনে মতো মেকাপ করতে চাই এবং ছবি তুলতে চাই।”
সাভাশ ঢোঁক গিলে ভাবে মেকাপ করলে তাকে কেমন লাগবে।তবুও আরশির খুশির জন্য রাজি হয়ে যায়।ডোসা আসতেই আরশি হামলে পরে।চার মিনিট আটত্রিশ সেকেন্ডে শেষ করে।আরশি সাভাশের দিকে ভ্রু নাচিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,
“বাসায় গিয়ে আপনাকে অনেক সুন্দর করে সাজাবো আর ছবিও তুলবো।”
সাভাশ ফাঁকা ঢোঁক গিলে।সে আরশিকে চেলন্জটা দিয়ে ভুল করেছে।
দুজনে অনেক রাত পর্যন্ত ঘুরে শহর দেখে।আরশির মন ভালো হয়েছে এটাই সাভাশের জন্য অনেক।দুজনে সিএনজিতে উঠে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।আরশি সিএনজিতেই ঘুমিয়ে যায় সাভাশ বাড়ি পৌছে ওকে না ডেকে কোলে করে ঘরে নিয়ে যায়।এরপর ড্রেস চেন্জ করে আরশিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।
;
;
;
“পরী!আমি আপনাকে কিছু জরুরী কথা বলতে চাই।”
পরী ওরনার আঁচলে আঙ্গুল পেচাচ্ছিল অস্বস্তিতে কারণ এর আগে সে কখনো অচেনা একটা ছেলের সঙ্গে একান্তে কথা বলে নি।তীব্রর মুখে নিজের নামটা শুনে পরী ঠান্ডা হয়ে যায়।এর আগে হয়তো এই জীবনে হাজার মানুষ ওর নাম ধরে ডেকেছে কিন্তু এরকম তো কখনো লাগে নি।এই মানুষটার ডাকে আকুলতা ছিল একটা অদ্ভুত টান ছিল।
পরী মাথা তুলে তাকাতেই তীব্র চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়।বিড়বিড় করে বলে,
“তোমার ঐ ভয়ংকর চোখ একবার দেখার পর আমার মাথায় তিনটা সিলি পড়েছে দ্বিতীয়বার হয়তো ছয়টা পড়বে।”
পরী কান খাড়া করে কথাটা শুনার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না তাই ইতস্তত করে বলল,
“আপনি কিছু বললেন?”
তীব্র মাথা নাড়িয়ে বলে,
“বলেছিলাম কিন্তু সেটা তোমার না শুনলে চলবে।”
“আপনার জরুরী কথাটা বলুন।আমারও কিছু জরুরী কথা আছে।”
“হুম,,তুমি হয়তো জানো আমার এংগেজমেন্ট হয়েছিল একজনের সাথে কিন্তু সে পরবর্তীতে এংগেজমেন্ট ভেঙ্গে দেয়।সবাই এটা নিয়ে বিভিন্ন কারণ বের করলেও বাস্তব কারণটা ছিল ও অন্য একজনকে ভালোবাসে।আমরা দুজনেই বেশ তাড়াহুড়োর মাঝে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যেটা ছিল আমাদের ভুল।আমরা প্রথমেই যদি চিন্তা ভাবনা করতাম এটা নিয়ে তাহলে হয়তো এসব ঘটতো না।যাইহোক সে এখন ঐ ছেলেকে বিয়ে করে দেশের বাইরে সেটেল্ড হয়ে গেছে।তুমি আবার ভেবো না আমি তাকে ভালোবাসি কিংবা তার থেকে ছ্যাঁকা খেয়ে তোমাকে বিয়ে করে তার থেকে প্রতিশোধ নিতে চাইছি। আমি শুধু বিয়ে করতে চাইছি কারণ আমার জীবনটা বড্ড অগোছালো আমার কাউকে প্রয়োজন সেই জীবনটা গুছিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি তোমার মাঝে সেই মানুষটাকে দেখেছি।তুমি নাম শুধু পরী তুমি আমার জীবনে এসেছো পরীর মতো।মরুভূমিতে হেঁটে চলা পথিকেরা পিপাসা লাগলে প্রথমে পানি কল্পনা করে আমার জীবনে নেহা ছিল তেমনই একটা কল্পনা করে কিন্তু একসময় তারা সত্যিকার অর্থে পানির সন্ধান পায়।তীব্রতর রোদে ঐ পানিই তাদের জন্য আল্লাহর সবচেয়ে বড় বরকতের ন্যায় হয়।তুমিও আমার কাছে তেমনই।আমার হৃদয় তোমার বিড়াল চোখের কথা ভাবলেই ধুকপুক করতে শুরু করে।আমি সেদিন তোমার এই চাহুনির জন্যই নিজের জ্ঞান হারিয়ে মাঝ রাস্তায় অচেতন হয়ে গিয়েছিলাম।দেখো মাথায় এখনো ব্যান্ডেজ লাগানো।”
কথাটা বলে তীব্র ঝুকে নিজের মাথার পেছনের ব্যান্ডেজটা দেখায়।পরী মুখে হাত দিয়ে বলে,
“ইসস কি ব্যাথাটাই না লোকটা ব্যাথা পেয়েছে।আমার জন্য এমনটা হয়েছে!লোকটা কি পাগল?”
পরীর মনের কথা যেন তীব্র শুনতে পেল তাই সঙ্গে সঙ্গে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি দিন দিন তোমার জন্য।কেন আমার সঙ্গে এমনটা হচ্ছে বলো তো?”
পরী জানে না এর উত্তর সে কি দেবে তাই বলে,
“আমি কিভাবে জানবো?”
তীব্র হতাশ গলায় বলে,
“আসলেই তুমি কিভাবে জানবে।তোমাকে আমার অনেক বেশি ভালো লেগেছে তুমি মানুষের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারো।তুমি ইন্ট্রোভার্ট তাই না?,,পারলে আজকেই তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে গিয়ে সারা রাত তোমার সঙ্গে কথা বলতাম।কিন্তু সেটা তো সম্ভব না।আচ্ছা এবার বলো আমাকে তোমার কেমন লেগেছে?ভালো লাগলে এই সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ে করবো আমরা।”
তীব্রর এমন পাগলাটে কথাবার্তায় পরীর বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল প্রথম প্রথম কিন্তু এখন তার তেমন লাগছে না।তবে শেষের কথাটা শুনে পরী ভড়কে গিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলে।বলে কি এই লোক?সোজাসুজি কেউ কি এভাবে জিজ্ঞেস করে না কি পছন্দ হয়েছে না কি হয় নি?পরী বলে,
“জ্বী,,,আসলে আমার কিছু কথা আছে আপনার সঙ্গে।”
তীব্র হেসে বলে,
“তুমি বলো আমি শুনছি।বায় দ্যা ওয়ে তোমার কি আমার কথা পাগলাটে লাগছে? আসলে আমার চাচাতো বোন আরশির মতো হওয়ার চেষ্টা করছি আমী।ও মনে যা মুখেও তা বুঝলে?ওর বিয়ে হয়ে গেছে কিছুদিন আগে।ও আমাকে অনেক বড় একটা শিক্ষা দিয়ে গেছে।,,, যাইহোক এখন তোমার কথা বলো।”
পরী মৃদ্যু হেসে বলে,
“আপনি কি সবসময় এমন পাগলাটে কথাবার্তা বলেন?বললে আমার কোনো সমস্যা নেই।মন খোলা স্বভাবের মানুষই আমার পছন্দ।বর্তমান পৃথিবীতে মানুষগুলো একটা অদৃশ্য মুখোশ পড়ে থাকে।তারা মিথ্যার পাহাড় তৈরি করে নিজেদের সিদ্ধ পুরুষ বলে দাবি করে।এরচেয়ে তারাই বেশি ভালো যারা সবসময় নিজের আসল রূপটাই সকলের সামনে উপস্থাপন করে।আমি অবশ্যই আপনার সেই বোনের সঙ্গে দেখা করবো।” তীব্র বুঝতে পারলো পরী তাকে এই রূপেই পছন্দ করেছে।পরী আরো বলে,
“আমার জরুরী কথাটা এবার বলি।আমার বাবা মায়ের দুটো মেয়ে হলাম আমি আর আমার বড় বোন।আমার আপু নিজের হাজব্যান্ডের সঙ্গে সিলেট থাকে সে চাইলেও আমাদের কাছে যেকোনো সময় আসতে পারে না।এখন আমি তাদের সবকিছু বলতে গেলে।আপনার বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ি মাত্র পনেরো মিনিটের দুরত্বে তাই বিয়ের পর আমি যখন তখন আমার বাবার বাসায় চলে আসবো আর এর জন্য আপনি চাইলেও আমাকে কিছু বলতে পারবেন না। আমি যেভাবে আপনার মা বাবাকে নিজের মা বাবা ভাববো আপনাকেও আমার মা বাবাকেও নিজের মা বাবা ভাবতে হবে।আর এট লাস্ট আপনি কি বুড়ি পরীর চোখের দিকে তাকালেও বুড়ো বয়সে অজ্ঞান হবেন না কি?”
তীব্র হেসে দিয়ে বলে,
“আমার পরীর এমন ভয়ংকর চোখ দেখে হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে বুড়ো বয়সে।”
পরী হা হা করে হেসে দিল।তীব্র নিজেও হাসতে শুরু করলো।
;
#চলবে!