কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব-২৫

0
909

#কারনে_অকারনে_ভালোবাসি
#পর্ব:25
#Suraiya_Aayat

আরিশ বেশ গম্ভীর সুরে প্রশ্ন করে উঠলো
” কি হলো উত্তর দাও?”

আরু ভয়ে আরিশের চোখের দিকে তাকাচ্ছে না, কি ই বা বলবে সত্তিই তো ও কালকে অনেক নাড়ু খেয়ে ফেলেছে আর যার কারনে এখন রাস্তার ধারে বমি করতে হচ্ছে৷ আরিশ পুনরায় প্রশ্ন করে উঠলো
“আমি কিছু জিজ্ঞাসা করেছি আরুপাখি৷”

আরু এবার বোতল থেকে জল নিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ঢকঢক করে জলটা খেয়ে বোতলটা দূরে ছুড়ে ফেলছ দিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে উঠলো যেন আরিশের কোন কথা কোন কানেই এসে পৌছায়নি৷ আরু ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল
” কিছু বলছেন?”

আরিশ বুঝতে পারলো যে আরু ইচ্ছা করে এমনটা করছে তবুও অযথা মেজাজ না হারিয়ে বেশ শান্ত ভাবেই বলল
” কালকে রাতে নাড়ু খেয়েছিলে?”

আরু ফটাফটা মাথা নাড়িয়ে অতি সাবলীল ভাবে উত্তর দিলো
“একদম না৷”

আরিশ আরুর ইশারা পেতেই পুনরায় বলল
“সত্যি করে বলো নাহলে কিন্তু এখানেই রেখে চলে যাবো৷”

আরু ভ্রু কুঁচকে বলল
“আপনার কি আমাকে মিথ্যা বাদী মনে হয়?”

আরিশ আল কথা বাড়ালো না, ফটাফট গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিতে নিলো আরুকে ছাড়াই৷ আরু দৌড়ে গাড়ির কাছে ছুটে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল
” এই যে মি অভদ্র দরজা খুলুন,দরজা বন্ধ করলেন কেন?”

আরিশ জানালা খুলে বলল
“তোমার মিথ্যা বলার শাস্তি, বাকিটুকু রাস্তা নিজে হেটে এসো৷”

কথাটা বলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল৷ আরু রাস্তার ধারে আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে রইলো, ভাবলো আরিশ আসবে কিন্তু আসছে না দেখে আরু রাস্তায় বসে গেল আর বিড়বিড় করে বললো
“উনি যতখন না আসবে আমিও ততখন এ পা ও এগোবোনা এখান থেকে, কয়েকটা নাড়ুর ই তো ব্যাপার, খেয়েছি খেয়েছি বেশ করেছি , আমার শাশুড়ি আম্মার বানানো নাড়ু উনি কি বানিয়েছেন নাকি? হাহ!”

এরকম নিজের সাথে বেশ কিছুখন কথা বলেও লাভ হলো না কারন আরিশ আসছেনা৷ আরু এবার উঠে দাঁড়ালো,এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর দেখছে যে আরিশ আসছে কি, ফোনটাও গাড়ির ভিতরেই রেখে দিয়েছিলো তাই আর কোন উপায় নেই৷ আরু এবার একটু এগোতে গেলেই পিছন থেকে একটা পুরুষালি কন্ঠ থেকে ডাক আসলো
” এই যে মিস, তুমি আরুশি না? আসরাফ সাহেবের নাতনি৷”

আরু থমকে গেল, আরিশের ওপর রাগে বিড়বিড় ও বন্ধ হয়ে গেল৷ এই সুনশান রাস্তায় ওর নাম ধরে কেউ ডাকছে বিষয়টা সহজ হলেও সুবিধার না,আরু পিচের রাস্তায় পা 30ডিগ্রি করে ঘেষড়াতে ঘেষড়াতে পিছন ঘুরছে , মনের মাঝে ভয় ও কাজ করছে ভীষনরকম৷ পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখলো একটা অল্পবয়সী ছেলে যাকে দেখে আরুর চিনতে অসুবিধা হলো না, বাইকে বসে আছে সে৷ আরু এক নিমেষেই পুনরায় 180 ডিগ্রি ঘুরে চম্পট হাটতে শুরু করলেই ছেলেটা বাইক স্টার্ট দিয়ে ওর কাছে এগিয়ে এলো
” এই যে মিস চললেন কোথায়?”

আরু পা চালিয়ে হাটছে আর এদিকে লোকটাও আরুর পাশে পাশে আসছে৷ আরুর এই মুহূর্তে আরিশের ওপর রাগ হচ্ছে ভীষন৷ পিছন থেকে আবার “এই মেয়ে” ডাক আসতেই আরু থেমে গেল আর বেশ মুড নিয়ে বলল
” সমস্যা কি আপনার? এই মেয়ে এই মেয়ে বলে ডাকছেন কেন? আমার একটা বিশেষ নাম আছে!”

ছেলেটা হেসে বলল
“ওহহ আচ্ছা তাই নাকি৷”

আরু রাগের চোটে আর কিছু বলল না, পুনরায় হাটতে শুরু করলে ছেলেটা বলল
” মনে আছে সেদিনের কথা যেদিন তোমার নানাভাই তোমরা আর আমার বিয়ের ব্যাবস্থা করেছিলেন কিন্তু একটা ছেলে এসে সবার সামনে তোমার সাথে এনগেজমেন্ট করে চলে যায়৷”

আরুর গলা শুকিয়ে কাঠ, ছেলেটা পুরোনো কথা টেনে আনছে নিশ্চয়ই তার কোন মতলব আছে তা বুঝে আরু আবার হাটতে হাটতে আমতা আমতা করে বলল
“তো?”

ছেলেটাও ধীরে ধীরে আরুর পাশ দিয়ে আসতে আসতে বলল
” তো কিছুই না, এমনিই মনে হলো তাই আর কি!”

আরু কিছু বলল না৷
ছেলেটা বলে উঠলো
” তা নানুবাসায় যাচ্ছো বুঝি? এতোটা পথ হেটে? এখনো 10 কিলোমিটার হেটে?”

আরু কিছু বলছে না, হাটছে ও, তখনই ছেলেটা বলে উঠলো
“আমার বাইকে ওঠো আমি নামিয়ে দিচ্ছি৷”

আরুর হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল কথাটা শুনে, রাস্তায় না আছে কোন মানুষজন আর না আছে আরিশ, কান্নাও পাচ্ছে ভীষন, এই মুহূর্তে ওর যদি কোন বিপদ আপদ হয় তখন ওকে কে বাঁচাবে? কথাগুলো আরু ভাবছে, তখনই খেয়াল করলো আরিশ গাড়ি নিয়ে আসছে আরিশকে দেখে আরুর রাগ আকাশ ছুঁয়ে গেল আর ভাবলো আরিশকে আজ ও শিক্ষা দেবে, ততখনে আরিশ ওর কাছে এসেছে৷ আরিশ গাড়ি থেকে নামলো, ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আরুর দিকে ভ্রু উচিয়ে বলল
” আরুপাখি গাড়িতে ওঠো৷”

আরু ছেলেটার দিকে একবার তাকালো তারপর আরিশের দিকে বেশ গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো৷ ছেলেটা বলে উঠলো
“কে তুমি?”

আরিশ কোন উত্তর না দিয়ে আরুর হাতটা ধরে গাড়ার দিকে নিয়ে যেতে গেলেই ছেলেটা বলে উঠলো
” এই ছেলে এই,জোর করে নিয়ে যাচ্ছো যে, জানো ও কে?”

আরিশ সানগ্লাসটা খুলে পকেটে রেখে বলল
” কে ও?”

ছেলেটা কতো সাবলীল ভাবে বললো
” ও আমার গার্লফ্রেন্ড৷ তোমার তো সাহস কম না আমার সামনে দিয়ে আমার গার্লফ্রেন্ডে নিয়ে যাচ্ছো”
আসলে ছেলেটা এতোদিনে আরিশের মুখশ্রী ভুলে গেছে তাই অরিশকে দেখে চিনতে পারেনি৷

আরিশ আরুর হাত ছেড়ে দিয়ে আরুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
” ওহ রিয়েলি৷”

আরু ছেলেটার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আরিশের দিকে মিউমিউ করে বললো
” এই আপনি কি যা তা বলছেন এসব,আমি আপনার জি এফ হলাম কি করে? আমি কি আপনাকে চিনি?”

ছেলেটা আরুকে একটু ধমকে বলল
” এই তুমি এতো কথা বাড়িও না তো, কে না কে ওই ছেলে নিশ্চয়ই তোমার ক্ষতি করার ধান্দায় আছে,তুমি তাড়াতাড়ি গাড়িতে ওঠো৷”

কথাটা শোনার সাথে সাথে আরিশ বেশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
” আচ্ছা আপু আপনি তাহলে আপনার বি এফ এর সাথে আসেন,হ্যাভ আ সেফ জার্নি৷😊”

কথাটা বলে আরিশ গাড়িতে উঠে গেল তবে স্টার্ট দিলো না৷ আরু রেগে গিয়ে ছেলেটার কাছে গিয়ে জামার কলার ধরে ঝাকিয়ে বলল
” এই আমি তোর কোন জন্মের প্রেমিকা লাগি হু! কোন জন্মের প্রেমিকা ৷ আর ওটা আমার জামাই বুঝলি! যা ভাগ৷”

ছেলেটার কলারটা ছড়তেই ছেলেটা হুমড়ি খেয়ে বাইক নিয়ে পড়ে গেল আর বোকা বনে গেল একদম, ছেলেটা ভেবেছিলো যে আরুকে সাহায্য করবে আর এদিকে কি হয়ে গেল৷ আরিশ এদিকে লুকিং গ্লাস দিয়ে সবটা দেখছে আর মুচকি হাসছে, আরু দৌড়ে আরিশের পাশে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে আরুশকে একপ্রকার ঝাপটে ধরে বলল
” এই মি অভদ্র আপনি বিশ্বাস করুন উনি মিথ্যা বলছে৷”

আরিশ ইচ্ছা করে বলল
” আপু আপনি সরে যান প্লিজ,আপনার বডি থেকে ভোমিটিং এর স্মেল আসছে৷”

আরু নাজের জামা কাপড় একবার স্মেল নিয়ে বলল
“কই না তো৷”

আরিশ মুচকি হাসছে৷ আরু বুঝতে পারলো আরিশ ইচ্ছা করে তাই এমন করছে আরও শয়তানি করে আরিশকে আরও জোরে জাপটে ধরে বলল
” ধরে ফেলেছি ,এবার নো মোর ওয়ার্ডস৷”

আরিশ লূকিং গ্লাস দিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো, ছেলেটার শরীরের তুলনায় ওর বাইকটা বেশি ভরী ,বেচারা অনেক ওঠার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, আরিশ মুচকি হেসে গিড়ি স্টার্ট দিলো ৷

#চলবে,,,,,