কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব-১০

0
1039

#কারনে_অকারনে_ভালোবাসি😘
#পর্ব:10
#Suraiya_Aayat😘

” আরুপাখি ! আরুপাখি ! এখানে আসো ফাস্ট ৷”
খানিকটা উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বললো আরিশ ৷ আরু তো ডাইনিং এ বসে টোস্ট খাচ্ছিলো তখনই আরিশের কন্ঠস্বর শুনতে পেলো ও ৷ আরিশের গলার আওয়াজ শুনে অনিকা খান বলে উঠলেন
” কি হয়েছে ডাকছিস কেন? আরু খাচ্ছে এখন ৷”

আরিশ আরো জোরে চেঁচিয়ে বলল
” নো মোর ওয়ার্ডস , কাম ফাস্ট ৷”

আরু নিষ্পাপের মতো চেয়ে বলল
” দেখেছো তো ফুপি তোমার ছেলে আমাকে কেমন করে ডাকে, কন্ঠে রস কষ নেই, জন্মের সময় মুখে মধু দাওনি?”

আরুর কথা শুনে অনিকা খান হেসে উঠলেন আর সানা বলে উঠলো
” ভাইয়া আগে তো সারাদিন আরুপাখি আরূপাখি করতোই এখন আরো ডেকে তোর মাথা খাবে ৷”

আরু টোস্টটা অর্ধেক খেয়ে বলল
” শুধু কি মাথা? আমার কানের মাথাটাও খায় উনি ৷ সারাদিন খালি আরুপাখি📣 আর আরুপাখি📣৷”

অনিকা খান ব্রেডে বাটার লাগাতে লাগাতে বললেন
” তাড়াতাড়ি যা দেখ আবার কিসের জন্য ডাকছে, না গেলে রেগে যাবে ৷”

আরুর আর কি, আরু নাচতে নাচতে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছে, ওর হয়তো জানাও নেই যে আরিশ কি কারনে ডাকছে ৷
রুমে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল
” কিহ সারাদিন আরুপাখি আরুপাখি করেন, কি হয়েছে বলুন ৷”

আরিশ খানিকটা রেগে বলল
” আমার হোয়াইট শার্ট গুলো কি করেছো?”

কথাটা শুনতেই আরু দু কদম পিছিয়ে গেল,ওর মনেই ছিলো না শার্ট গুলোর কথা ৷ আরিশের মুখে রাগের প্রকাশ ঘটছে, আরু ভয় পেয়ে পালাতে গেলেই আরিশ খপ করে হাত ধরে টেনে কাছে আনলো
” পালাচ্ছো কোথায়? আমার সাদা শার্ট গুলো বেডের নীচে গেল কি করে ?”

আরু থতমত খেয়ে বলল
” আমি কি করে জানবো হু , আমি কি আপনার শার্টে হাত দিয়েছি নাকি?”

আরিশ আবার আরুকে কোলে তুলে বিছানায় ফেলে ওর ওপর উঠে গেল প্রায় ৷ আরুর দিকে ঝুকে রাগী মুখ করে বলল
” মিথ্যা আমার পছন্দ না ইউ নো, আমি জানি তুমিই করেছো নাহলে কারোর এতো সাহস নেই যে আমার রুমে এসে আমার জিনিস ঘেটে ঘ করবে তাও আমার ফেভারিট শার্ট গুলো ৷ আর কাল রাতে পারফিউম গুলো মাটিতে ছড়ানো ছিলো আমি এসে দেখেছি ৷ এখন বলো কেন করেছো এমন?”

আরু উঠতে গেলেই আরিশ আবার বিছানার সাথে চেপে ধরলো
” ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু ডু দিস, আগে আমার কথার উত্তর দাও ৷ কেন করেছো এমন?”

আরু ভাবলো যে এবার একটু ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইল করবে কারন আরিশ রেগে আছে ৷ আরু এবার কাঁদো কাঁদো সুরে বলল
” ভুল হয়ে গেছে ৷”

আরিশ ধমক দিয়ে বলল
” কাঁদবে না একদম , একটা থাপ্পড় দিবো ৷ এটা কোন রিজন হলো ৷”

আরু চুপ হয়ে গেল ধমক শুনে তারপর বললো
” বললাম তো ভুল হয়ে গেছে আর এমন হবে না ৷”

” ইউ নিড টু বি সরি, সে সরি ৷”

আরু মুখ ভঙচি দিয়ে বলল
” নেভার এভার ৷”

আরিশ আরুর থেকে সরে এসে বলল
” ওকে ফাইন, পানিশমেন্ট পাবে, আর পানিশমেন্ট হিসাবে তুমি আর কখনো তোমার বাসায় যেতে পারবা না আমার সাথে থাকবে এ বসায় ৷”

আরু আরিশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল
” আইসে রে মুরব্বি ! উনি বললেই বুঝি থকতে হবে ৷”

আরিশ চুপ করে বসে রইলো , আরুর মুখভঙ্গি দেখছে ৷
” তাহলে সরি বলবেনা?”

আরু বলল
” আপনি তো জানেন সরি আমি কখনোই আপনাকে বলবো না ৷”

কথাটা বলে আরিশের ওয়াড্রব থেকে একটা নেভি ব্লু কালারের শার্ট বার করে বলল
” এটা পরুন, আর বসায় ফেরার সময় শার্ট কিনে নেবেন ৷ যদি আপনি একান্তই ব্যাক্তিগত ফকিন্নি হন তাহলে বলিয়েন আমি আমার শ্বশুর বাবার কাছ থেকে টাকা চেয়ে আপনাকে দিয়ে দিবো ‌৷”

আরিশ মুচকি হসছে, কিছু বলছে না ৷ আরু চলে যেতে নিলেই আরুর হাত ধরে বলল
” পানিশমেন্ট হিসাবে কিছু তো পেতেই হবে ৷”
আরু একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলল
” নেভার ৷”

আরিশ আরুর কোমর ধরে কাছে টেনে এনে শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে পেটে হাত রেখে হাতটা আলতো স্লাইড করে বলল
” শার্ট নষ্ট করেছো ইটস ওকে বাট নেশা ধরিয়ে দিয়েছো হুইচ ইজ নট ওকে ‌৷”

কথাটা বলে আরুর ঠোঁটের দিকে এগোলো আরিশ তখনই সানা আসতে আসতে বলল
” কি রে তোরা কি আর খেতে খেতে আসবি না নাকি?”

কথাটা শুনতেই আরু ছিটকে দুরে সরে গেল , আরিশ আরুর দিকে দাঁতে দাঁত চেপে চেয়ে রইলো ৷ রাগ হচ্ছে ওর ৷

রেগে গিয়ে বলল
” সানা তোর টাইমিংটা ঠিক কর ৷”

কথাটা বলে শার্টটা পরতে লাগলো ৷ আরু মুচকি হাসলো , সানার দিকে একটা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিলো যা আরিশের চোখকে ফাঁকি দেইনি ৷ আরিশ কিছু বলল না, আরু নীচে চলে গেল ৷

আরিশ শার্টটা পরে নিয়ে একটা কাগজে করে কিছু ওষুধ পেসক্রাইব করে পকেটে নিয়ে নীচে নামলো ৷ আরু খাচ্ছে আর ওদের সাথে গল্প করছে ৷ কথায় কথায় অনিকা খান বললেন
” আরিশ আরুকে দিয়ে তুই বাসায় ফিরবি তো ? আজকে তো 15 ই আগষ্ট , হলিডে ৷”

আরু আরিশের দিকে তাকালো ৷ আরিশ ডিম খেতে খেতে বলল
“হমম চলে আসবো ৷ তাছাড়া আমার কাজ আছে সেটাও কমপ্লিট করতে হবে ৷”

আরু মুখ ভাঙচি দিলো আর বলল
” আসল কথা সেটা না ফুপি ৷ আসলে তো আমার নানাভাই আসবে তাই উনি ভয় পাচ্ছেন ৷”

আরিশ এবার খানিকটা রুক্ষ গলায় বলল
” সামহাও তুমি কি এটা মিন করতে চাইছো যে আমি তোমাদের বাসায় আজকে থেকে যাই ৷”

আরু অবাক হয়ে বলল
” আমি সেটা কখন বললাম, আর আমি কেনো চাইবো আপনি আমার বাসায় থাকেন ৷”

আরিশ হঠাৎ রেগে গিয়ে বলল
” তাহলে মুখ বন্ধ করে চুপচাপ খাও ৷”

আরু চুপ হয়ে গেল সাথে অবাক ও হলো ৷ অনিকা খান ধমক দিয়ে বলল
” আহ আরিশ , এটা কেমন করে কথা বলার ধরন ৷”

আরিশ জুসটা ঢকঢক করে খেয়ে বলল
” আই এম গেটিং লেট , তাড়াতাড়ি আসো, গাড়িতে ওয়েট করছি ৷”
কথাটা বলে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷ আরু অবাক হয়ে তাকালো ৷
অনিকা খান একটু সন্দিহান কন্ঠে বললেন
” আরিশ কি রেগে আছে, ঝামেলা হ‍লো নাকি আবার?”

আরু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
” ওনার কথা ছড়ো ফুপি, উনি এমনই চিরকাল নিরামিষ ৷”

কথাটা শুনে সবাই একসাথে হেসে ফেলল ৷

_____

” এই ওষুধ গুলো প্রতিদিন 3 বেলা খাবে, তাছাড়া ওষুধের খামে লেখা আছে যে কোনটা কখন খেতে হবে ‌৷ ডোন্ট মিস ইট ৷” একটা সিরপের দেখিয়ে বলল ৷
আরু ওষুধ গুলো নিয়ে বলল
” আমার এতো ওষুধ খেতে ভালো লাগে না সেটা কেউ বোঝে না , লাইক নো বডি ৷”
আরিশ কিছু বললো না কারন কথাটা নতুন না ৷ চুপ করে সোফাতে বসে রইলো , মাঝে মাঝে একটু মাথায় হাত দিচ্ছে, হয়তো হালকা মাথা ব্যাথা করছে অথবা কিছু নিয়ে চিন্তা করছে ৷ আরু ওষুধ গুলো রেখে চেন্জ করতে গেল ৷ তখনই আরিশ একটা কল করলো
” হ্যালো স্যার হাউ আর ইউ? ক্যান আই টক উইথ ইউ ফর ফিউ মিনিটস?”

ওপর পাশ থেকে ডক্টর শর্মা বলে উঠলেন
” ইয়াহ শিউর ৷”

” আরুশির প্রবলেমটা তো আপনি জানেন যে ওর দুটো টিউব ড্য৷মেজ আই মিন এক্সিডেন্ট এ এফেক্টেড হয় আর সেটার এখনও সার্জারি করা হয়নি, পেটে পেইন হয় ৷”

” হ্যাঁ সেটা তো জানি, বাট ওষুধ তো ডেইলি নেই তাইনা?”

আরিশ এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল
” ইয়াহ ডেইলি নেই , বাট কালকে ওর সাথে ইন্টিমেট হওয়ার পর বুঝলাম যে ওর পেইনি এখনো কমেনি ৷ আমার মনে হয় , সমস্যাটা এখনো আগের মতোই আছে ওষুধ খেয়ে কমেনি ৷”

উনি একটু থেমে বললেন
” ইজ সি নাও ইউর ওয়াইফ?”

” ইয়াহ ৷ সে আজ আমার বউ ৷”

উনি একটু উদাসীন কন্ঠে বললেন
” ওর বেবি হবে না জানার পর ও বিয়ে করলে? বিগ স্যাক্রিফাইস ইয়াং ম্যান ৷”

আরিশ মুচকি হেসে বলল
” আমাদের সকলের মাঝেই কিছু অপরিপূর্নতা থাকে আর সেটা জেনেও আমদের তাদেরকে মেনে নিতে হয় বিকজ উই লাভ দেম ৷ আপনার স্ত্রী ও তো হাটতে পারেন না বিগত 20 বছর তাই বলে কি আপনি তাকে ছেড়ে দিয়েছেন? না তো, বিকজ ইউ লাভ হার ৷ আর তাছাড়া আমি ওর পরিপূর্ধতা আর অপূর্নতা সবকিছু মিলেই ভালোবাসি , শুধু সে থাকলেই হবে ৷”

উনি মুচকি হেসে বলল
” প্রাউড অফ ইউ মাই সন ৷ যাই হোক তুমি একদিন আমার চেম্বারে নিয়ে এসো নাহলে একেবারে কিছু টেস্ট আমি বলছি সেগুলো করিয়ে আনো ৷”

” ওকে স্যার , থ্য৷ংক ইউ ৷”

কথাটা বলে আরিশ রেখে দিলো ৷ আরু বেরিয়ে এসে বলল
” কার আর কিসের টেস্ট ৷”

আরিশ চমকে গেল একটু , আরুর কথায় বুঝলো যে আরু ওর সব কথা শোনেনি তাই নরমাল হয়ে বলল
” তোমার পেটে পেইন হয় তাই চেক আপ করা দরকার ৷”

আরু মুখ কুঁচকে বলল
” মেডিসিন – চেক আপ, মেডিসিন- চেক আপ ৷ আচ্ছা একটা কথা বলুন তো আসলে আমার কি হয়েছে ৷”

আরিশ আরুর কাছে গিয়ে আরুকে জড়িয়ে দরে বলল
” আচ্ছা আরুপাখি একটা কথা বলবো?”

“আগে আমাকে ছাড়ুন তারপর যা বলার বলুন ৷”

আরিশ আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
” তুমি অনেক ছোট আরুপাখি তাই আমি চাইনা আমার জন্য ফিজিকালি তোমার কোন এফেক্ট বা সমস্যা হোক ৷ তাই…”

আরু অবাক হয়ে বলল
” তাই…তাই কি ?”

আরিশ চোখ বন্ধ করে বলল
” তাই আর কি ,তাই আমাকে তোমার থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে ৷ সো স্যাড ৷”
আরু কথাকে কাটানোর জন্য আরিশ কথাগুলো বলল ৷

” হোয়াটএভার ৷”

আরিশ আরও কিছুখন জড়িয়ে ধরে রাখতেই বাইরে থেকে আওয়াজ এলো
” সেই ব্যাটা আইসে নাকি? আমার নাতনিডারে তো এক্কেরে কব্জা করে লইসে , সে আবার এই বাসায় আইসে কিল্লাই ৷”

আরিশ কথাটা শুনে বলল
” এসেছে চিটাগং এর বুড়ো, উফফফ ৷”

আরু মুখ চেপে হেসে বলল
” আসছি নানাভাই ৷”

আরিশ বিরক্ত হয়ে বিছানায় বসলো ‌৷ উনি আরুর ঘরে এসে বলল
” দিদিভাই এই ছ্য৷ডা তোর ঘরে বইসা আসে কিল্লাই ৷”

আরিশ কিছু বলছে না দেখে উনি চোখের চশমাটা ঠিক করে বলল
” হেতি তো কালা, নাকি বোবা হইয়া গেসে কোনটা? আর হেতির কি কাম ধাম কিছু নাই যে সারাদিন এইহানে আইয়া পইড়া থাকে ব তর লগে ঘোরে ৷”

এই মুহূর্তে আরিশের এমন কোন কথায় শুনতে ইচ্ছা করছে না দেখে আরিশ আরু সাথেও আর কিছু না বলে গাড়ির চাবিটা নিয়ে বেরিয়ে গেল ৷ আরু অবাক হলো একটু ৷ কালকে রাত থেকে দেখছে আরিশের মন খারাপ হয়তো কোন কিছু নিয়ে ওভার থিংক করছে ৷ আরু আবার ভাবলো আরিশ কি কোনভাবেই সকালের ওর বিহেভিয়ারে কষ্ট পেয়েছে?

#চলবে,,,,