🖤#কালোবউ🖤
লেখিকাঃ Tahmina Toma
পর্বঃ ১৫
রুপঃ মিস্টার আকাশ চৌধুরী আমার বোনের যদি কিছু হয় আপনাকে আমি বুঝাবো প্রতিশোধ কাকে বলে??(আকাশের সামনে গিয়ে চাপা স্বরে)
আকাশঃ (রুপের কথা আমার কানে গেলেও মাথায় ঢুকেনি। আমার মাথায় একটা কথায় ঘুরছে সেটা হলো মেঘলা কোথায়? অনেক রাত হয়ে গেছে আর এই শহরে মেঘলা কিছু চিনে না। এক মুহুর্ত লেট না করে বেড়িয়ে আসতে গিয়ে আবার চাঁদের কাছে গেলাম) চাঁদ তোর কাছে মেঘলার ফোন নাম্বার আছে??
চাঁদঃ ( হা করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। বিয়ে হয়েছে কতদিন হয়ে গেলো সে কিনা বউয়ের নাম্বার আমার কাছে চাইছে)
আকাশঃ কী হলো হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?? থাকলে তাড়াতাড়ি দে।
চাঁদঃ তোর বউয়ের ফোন নাম্বার আমার কাছে চাইছিস??
আকাশঃ তোর বকবক শোনার টাইম নেই থাকলে দে।
চাঁদঃ দিচ্ছি,,,,,
আকাশঃ ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি চলে যা।(বেড়িয়ে এলাম আর লেট না করে মেঘলার নাম্বারে ফোন দিলাম। রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। বাড়ির গার্ডের কাছে ফোন দিলাম।) হ্যালো,,,,,,,তোমাদের ম্যাডাম মানে মেঘলা বাসায় গেছে??
গার্ডঃ না স্যার আসেনি। কেন স্যার কী হয়েছে??
আকাশঃ কিছু না,,,,, মেঘলা বাসায় পৌঁছালে আমাকে ইনফর্ম করো।
গার্ডঃ ওকে স্যার,,,,,,,,
আকাশঃ কোথায় যেতে পারে??? ড্যামিট,,,,,এটা না করলেও পারতাম। মেয়েটা একটু বেশি ইমোশনাল বুঝা উচিত ছিলো। এত মানুষের সামনে অপমান হতে দিয়ে ঠিক করিনি। হোয়ার আর ইউ মেঘপরী?? এখন কোথায় খোঁজবো তোমায়?? মেঘপরী???(নিজেই অবাক হয়ে গেলাম)
মেঘলাঃ ফাংশন থেকে বেড়িয়ে এসেছি।ওখানকার মানুষের কথা সয্য হচ্ছিল না। তাই দৌড়ে বের হয়ে এসেছি। দু’হাতে চোখ মুছছি আর হাঁটছি। পায়ে হিল জুতা থাকায় হাটতে কষ্ট হচ্ছে। খোঁলে হাতে নিয়ে নিলাম। অন্ধকারে ভয় পাই কিন্তু এখন ভয় করছে না। মনে হচ্ছে এখন একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দিলে ভালো হতো। এই বিষাক্ত জীবন থেকে মুক্তি পেতাম। কথায় আছে না,,,, বিয়ে সবসময় সমানে সমানে হওয়া উচিত নাহলে প্রতিনিয়ত ব্যবধানটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়। যার যন্ত্রণা তিলেতিলে মারে। এটাতো সত্যি আমি কোনদিক থেকে আকাশের যোগ্য নই। না আছে সৌন্দর্য আর না আছে যোগ্যতা। আমি সত্যি জানি না আপনার কী ক্ষতি করেছিলাম?? যার জন্য এই হৃদয়টাকে বারবার ক্ষতবিক্ষত করছেন। আপনিতো জানতেন আমি আপনার যোগ্য নই তাহলে মিথ্যে পরিচয় দিয়ে বিয়ে কেন করেছেন? আপনার সত্যি পরিচয় জানলে আমি কখনোই এই বিয়ে করতাম না।
,,,,,,,,,,,
আকাশঃ যে অন্যায়ের পরিণাম সয্য করতে পারবে না সেটা করো কেন?? আমিতো ঠিক করেই নিয়েছিলাম তোমাকে কষ্ট দেবো না কিন্তু তুমিই আমাকে বাধ্য করছো। রুপের মতো না হলেই পারতে,,,,,। এখন কোথায় পাই তোমায়??আবার কল দিলাম এবার ফোন অফ আসছে। এবার আরো বেশী টেনশন হচ্ছে।
মেঘলাঃ বেড়িয়ে এসেছি অনেক সময় হলো। তখন ঝোঁকের বসে বেড়িয়ে এসেছি কিন্তু এখন মাথা ঠান্ডা হওয়ায় ভয় করছে। এখানে কিছুই চিনি না এখন বাসায় যাবো কীভাবে আমি? সবাই হয়তো চিন্তা করছে। চাঁদকে কল দেওয়ার জন্য ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখি অফ হয়ে গেছে। সামনে চার-পাঁচটা ছেলে দাড়িয়ে আছে এখন আরো ভয় করছে। তাদের পাশকাটিয়ে যাওয়ার সময় কেমন বাজে নজরে তাকাচ্ছিলো। দ্রুত হাটা শুরু করলাম ছেলেগুলো পিছনে আসতে শুরু করেছে।
,,,,,,,
আকাশঃ মেঘলার ফোনের লাস্ট লোকেশন ট্র্যাক করে জেনে নিলাম। যে রাস্তায় গেছে সেই রাস্তায় দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছি। ফোনটা বেশিক্ষণ আগে অফ হয়নি তাই হয়তো বেশীদূর যায়নি। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে ওর কিছু হয়ে গেলে ওর বাবা-মার কাছে কী জবাব দেবো?? আর আমি,,,,, ওকেতো আমি ভালোবাসি না তাহলে হারানোর ভয় কেন পাচ্ছি??
,,,,,ফিগার দেখেছিস ওফ কী লাগছে মাইরি,,,,
একা কোথায় যাচ্ছো মামুনি?? আমাদের সাথে চলো (পথ আটকে)
মেঘলাঃ আমাকে যেতে দিন প্লিজ,,,,,
,,,আরে যাবে তো ভয় পাচ্ছো কেন?? আমরা গিয়ে দিয়ে আসবো শুধু রাতটা আমাদের সাথে থাকো?? হাহাহা
মেঘলাঃ প্লিজ আমাকে যেতে দিন,,,,, আ,,,,আপনারা দরকার হলে এগুলো নিয়ে যান( ডায়মন্ডের জুয়েলারিগুলো দেখিয়ে) এগুলো অনেক দামী সব ডায়মন্ডের। আমি খোলে দিচ্ছি এগুলো নিয়ে যান তাও আমাকে যেতে দিন প্লিজ,,,,,
আরে বাস হিরা,,,,,,,
মেঘলাঃ হুম হ,,,,হিরা এগুলো নিয়ে নিন তাও আমাকে যেতে দিন প্লিজ (হাত জোড় করে)
এগুলোতো নিবোই সাথে তোমাকেও বেইবি,,,,,,,,,
মেঘলাঃ (কোন উপায় না দেখে লোভ দেখিয়েছিলাম তাও কাজ হলো না। এমন পরিস্থিতিতে কোনদিন পরিনি ভয়ে মাথা কাজ করছে না। শরীরে যেটুকু শক্তি ছিলো ভয়ে তাও মনে হয় শেষ হয়ে গেছে। পা পর্যন্ত নাড়াতে পারছি না। কী করবো এখন আমি? ধর্ষিতা হয়ে বাঁচতে পারবো না। সামনের ছেলেটার মেইন পয়েন্টে একটা লাথি মেরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড় দিলাম। সবাই ঐ ছেলেকে ধরেছে। গ্রাউন পরে দৌড়াতেও পারছি না ঠিক মতো।
আরে আমাকে ছেড়ে ঐ শা***কে ধর আজকে এর খবর করে ছাড়বো।
মেঘলাঃ( ঐ ছেলে বাদে বাকি চারটা ছেলে আমার পিছনে দৌড়ে ধরে ফেললো। একজন আমার এক হাত ধরতেই হিজাবের একটা পিন খোলে হাতে গেথে দিলাম। )
আহ্ ,,,,, আরে এটা কী মেয়ে নাকি??
মেঘলাঃ( এবার দুজন আমার দুহাত ধরে ফেলেছে। ছাড়াতে পারছি না।) ছেড়ে দে আমাকে। আমার কিছু করলে তোরা বাঁচতে পারবি না।
কে কী করবে আমাদের হাহাহা???? ধর্ষকের শাস্তি নেই এই দেশে।
মেঘলাঃ দেশের আইন কিছু না করলেও আমার ভাই-বোন তোদের টুকরো টুকরো করে ফেলবে।
হাহাহা কেউ কিছু করতে পারবে না,,,,,,,,
মেঘলাঃ( তবে কী সব শেষ হয়ে যাবে? ধর্ষিতা হয়ে বাঁচতে পারবো না খোদা হয় রক্ষা করো নাহয় ধর্ষিতা হওয়ার আগে মৃত্যু দাও। হিজাব খোলার জন্য হাত বাড়াতেই চোখ বন্ধ করে বিপদের দোয়া পড়ছি। কিছুক্ষণ পর চোখ খুললাম। লোকটার হাত আমার হিজাব ছুইছুই কিন্তু ছুঁতে পারনি কেউ হাতটা ধরে আছে। সামনে তাকিয়ে যেন জীবন ফিরে পেলাম।) আকাশ,,,,,,,(অস্ফুটস্বরে,,,, আকাশ দাঁড়িয়ে আছে এক হাত দিয়ে লোকটার হাত ধরেছে আর অন্যহাতে হকিস্টিক)
আকাশঃ খুলছিস না কেন খোল??
,,,এই কেরে তুই হাত ছাড়। সাহসতো কম না আমার হাত ধরেছিস?? জানিস আমি কে??
আকাশঃ বল জেনে নিচ্ছি কে তুই??(হকিস্টিক দিয়ে মারতে শুরু করলাম।)
মেঘলাঃ( আমি এখনো ভয়ে কাঁপছি। আকাশ সবকটাকে ইচ্ছে মতো মারছে।)
আকাশঃ (ইচ্ছে করছে সবকটাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলি। ইচ্ছে মতো পিটাইলাম সবকটাকে। সবগুলোর হাত ভেঙে দিলাম। মেইন পয়েন্টে ইচ্ছে মতো লাথি দিয়েছি তাও শান্তি হচ্ছে না কী করি??)
মেঘলাঃ (উনি কেমন পাগলের মতো আচরণ করছে?? )
আকাশঃ (ওহ্ আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম গাড়িতে গান আছে। গাড়ি থেকে গানটা নিয়ে এলাম)
মেঘলাঃ( উনি গাড়ি থেকে গান নিয়ে গুলি করার জন্য তাক করতেই দৌড়ে উনাকে আটকালাম।) ক,,,কী করছেন?? মেরে ফেললে পুলিশ আপনাকে ধরবে।(উনি আমার দিকে তাকাতেই ভয়ে উনার হাত ছেড়ে দিলাম। রাস্তার সোডিয়ামের আলোয় উনার রক্ত লাল চোখ ভয়ংকর লাগছে)
আকাশঃ( ইচ্ছে করছে এটাকেই খুন করি। কতবড় সাহস এতরাতে একা বের হয়ে আসছে। আমি না আসলে এখন কী হতো?? গাড়ি থেকে দেখেই ওকে চিনতে পেরে নেমে এসেছি,,, সময় মতো না এলে,,,,ভাবতে পারছি না। গান নামিয়ে একজনকে ফোন দিলাম।) রোজা কফি শপের পাশের গলিতে পাঁচটা জানোয়ার পড়ে আছে তোলে নিয়ে যাও। আগামীকাল হেডলাইনে এদের খবর দেখতে চাই আমি।
মেঘলাঃ(এখন ওদের থেকে বেশী উনাকে ভয় করছে আমার। উনার গম্ভীর ভাবটা আমি দেখেছি কিন্তু এতটা হিংস্ররুপ আমি দেখিনি)
আকাশঃ( ওর সাথে কোন কথা না বলে হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলাম ।)
মেঘলাঃ (আমার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর আমি যাচ্ছি। গাড়ির স্প্রিড দেখে আরো ভয় করছে। ১ ঘন্টার রাস্তা ১০ মিনিটে চলে এসেছি। গাড়ি থেকে নেমে আবার টেনে ভেতরে নিয়ে গেলো)
মাঃ কোথায় ছিলে বউমা?? ওকে কোথায় পেলি আকাশ??
আকাশঃ রাস্তায়,,,,,, রেস্ট নাও রাত অনেক হয়েছে।(না দাঁড়িয়ে হাটার ওপর বলে মেঘলাকে টেনে রুমে এনে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেললাম)
মেঘলাঃ( আমার কপালে আজ কী আছে আল্লাহ মালুম)
আকাশঃ কী মনে করো নিজেকে?? রানী ভিক্টোরিয়া নাকি রানী এলিজাবেথ?? যখন যা ইচ্ছে করবে আর আমি তোমার পাহারা দেবো। এটা ঢাকা শহর তোমার বাড়ি না। রাস্তায় মানুষের থেকে জানোয়ারের সংখ্যা বেশী। আর একটু পরে গেলে কী হতো ভাবতে পারছো??
মেঘলাঃ কী আর হতো?? রেপ করতো তারপর হয় মেরে ফেলতো বা না মেরে কোন রাস্তার ধারে ফেলে যেতো আত্মহত্যা করার জন্য। আমিও আত্মহত্যা করে নিতাম। আপনিও মুক্তি পেতেন আর আমিও।
আকাশঃ তোকে কেউ টাচ করার আগে আমি তাকে খুন করে ফেলবো(গাল চেপে ধরে) নাহয় তোকে খুন করে ফেলবো। আমি তোকে স্ত্রীর অধিকার দেই আর না দেই। তোর একটা লোমও আমি ছাড়া কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। তোকে আমি স্পর্শ করি আর না করি এটার অধিকার শুধু আমার থাকবে,,,,,,, বুঝেছিস?? আজ থেকে আমার অনুমতি ছাড়া যদি এক পাও কোথাও গিয়েছিস পা ভেঙে বেডে বসিয়ে রাখবো। কথাটা মনে রাখিস??(ধাক্কা দিয়ে ফেলে রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম)
মেঘলাঃ আচ্ছা আমার এখন খুশী হওয়া উচিত নাকি কষ্ট পাওয়া?? এই কথাগুলো উনি কেন বলেছেন??
চলবে,,,,,
🖤#কালোবউ🖤
লেখিকাঃ Tahmina Toma
পর্বঃ১৬
মেঘলাঃ আচ্ছা আমার এখন খুশী হওয়া উচিত নাকি কষ্ট পাওয়া?? এই কথাগুলো উনি কেন বলেছেন??
আকাশঃ কিছুতেই রাগ কমছে না। গার্ডেনে গিয়ে সুইমিংপুলে ঝাঁপ দিলাম। দম বন্ধ করে সুইমিংপুলের ফ্লোরে বসে আছি। এতো রাগ কেন হচ্ছে আমার?? কেন মেঘলাকে অন্য কেউ স্পর্শ করবে ভাবতেও বুক কেঁপে ওঠে। রুপের বেলায় কখনোতো এমন হয়নি আমার সামনে অন্য ছেলেদের সাথে ডান্স করেছে, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেছে আমি কিছুই বলিনি। তাহলে এখন কেন মেঘলার পাশে অন্যকেউ দাঁড়িয়ে আছে এটাও ভাবতে পারি না। কেন কেন কেন??? তবে কী আমি ওকে ভা,,,,ভালোবেসে ফেলেছি?? দম বন্ধ হয়ে আসছে ওপরে ভেসে উঠলাম। না না এটা কী করে হতে পারে?? মেঘলাকে আর আমি?? কখনোই পসিবল না আর কোন বিশ্বাসঘাতকের জায়গা নেই আমার জীবনে (চোখ মুখ শক্ত করে) আমি শুধু আমার প্রতিশোধ চাই(শয়তানি হাসি দিয়ে) অনেক সময় সাঁতার কেটে ওঠে বসে রইলাম সুইমিংপুলের পাশে। আগামীকালের প্লান বানিয়ে ফেললাম।
মেঘলাঃ প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছিলো তাই গোসল করে এসে বেলকনির দোলনায় বসে আছি। ভয়টা এখনো কাটেনি। আকাশকে যতই এটা ওটা বলি আজকে প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং
মেঘলাঃ (ফোনের শব্দেও চমকে ওঠে আবার নিজেকে শান্ত করলাম) আসসালামু আলাইকুম,,,, কে বলছেন??
রুপঃ মেঘমনি আমি,,,,,,
মেঘলাঃ আপু,,,,,,,,
রুপঃ হুম কোথায় তুই এখন?? সেই কখন থেকে ফোন করছি অফ আসছে??
মেঘলাঃ আমি বাসায়,,,,,,চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিলো। এখন অন করলাম। কিন্তু তুমি নাম্বার কোথায় পেলে??
রুপঃ চাঁদের থেকে নিয়েছি। কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই??
মেঘলাঃ,,,,,,,,,,,
রুপঃ এমন কেউ করে?? কোন বিপদ হলে?? তুই বাড়ি ফিরলি কীভাবে??
মেঘলাঃ উনি নিয়ে এসেছে,,,,,
রুপঃ মেঘমনি একটা সত্যি কথা বলবি??
মেঘলাঃ হ্যাঁ আপু বলো,,,
রুপঃ আ,,,আকাশ,,, মানে আকাশ কী তোর সাথে খারাপ বিহেভ করে??
মেঘলাঃ ক,,,কই নাতো,,,,,,,,,কিন্তু তুমি হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন করছো??
রুপঃ এ,,,এমনি তেমন কিছু না( আমি জানি আকাশ তোর সাথে কী করছে?? কিন্তু তুই কখনোই কাউকে বলবি না),,,,আচ্ছা তুই তাহলে রেস্ট নে আমি রাখছি কাল ফোন দেবো।
মেঘলাঃ আচ্ছা (আকাশ আর আপু আমার থেকে কিছু লোকাচ্ছে। কিন্তু কী সেটা?? তাদের কথা শুনে আমার মনে হয়নি তারা ফ্রেন্ড। দুজনেই যেন রাগ পুষে রেখেছে। কী আছে যা সবাই আমার থেকে লোকাতে চাইছে??)
আকাশঃ (রুমে এসে দেখি মেঘলা রুমে নেই। মেঘলাকে রুমে না পেয়ে খুঁজতে লাগলাম। আবার কোথায় গেলো?? বেলকনিতে গিয়ে দেখি দোলনায় ঘুমিয়ে আছে। চুলে মুড়ানো ট্রাওয়েলটা খুলে ফ্লোরে পরে আছে। চুলগুলোও ফ্লোরে পড়ে আছে। চুলের পানিতে ফ্লোর ভিজে গেছে। আকাশী রঙের থ্রিপিস পরে আছে। বুকে ওড়না নেই। তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম। আমি কেন চোখ সরাচ্ছি?? ওকে সবভাবে দেখায় অধিকার আমার আছে। ধীরপায়ে এগিয়ে গেলাম ওর সামনে। বাইরের লাইটের আলো মুখে এসে পরেছে। আবছা আলোও অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। আজও চোখ পড়লো গলার তিলটায়,,,,, বড্ডটানে এই তিলটা। মেঘপরী,,,,,,,,,, আমার মেঘপরী,,,,,, আমার????? না না এই মেয়ের মুখের দিকে তাকালে সব ভুলে যাই। আবার ভুল করা যাবে না। রুমে এসে ওয়াশরুমে চলে এলাম। ভেজা কাপড় প্রায় শুকিয়ে গেছে। একটু শাওয়ার নিয়ে চেঞ্জ করে নিলাম। বেডে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি কিন্তু ঘুম আসছে না। ওঠে আবার বেলকনিতে গেলাম। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম মেঘলার দিকে। কোলে তুলে বেড়ে শুইয়ে দিলাম,,,,,,ট্রাওয়েল দিয়ে চুল মুছে দিলাম ভালো করে। তারপর আমি গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লাম। তাকিয়ে আছি মেঘলার দিকে। একটা পবিত্র ফুলের মতো লাগছে।
মেঘলাঃ (ঘুম ভাঙলো আযান শুনে। ওঠে বসে আড়মোড়া ভাঙে খেয়াল করলাম আমি বেডে বসে আছি। আমার যতটা মনে আছে বেলকনির দোলনায় বসে ছিলাম। তারপর রুমে কখন এলাম?? সোফায় চোখ গেলো আকাশ ঘুমিয়ে আছে। উনি এনেছেন এখানে?? ইশ আমার জন্য সোফায় ঘুমাতে হয়েছে উনার। উনার তুলনায় সোফাটা ছোট,,,, আমার ঠিক মতো হয়ে যায়। ওঠে পড়লাম বেড থেকে। আগের দিনের মতো সব গুছিয়ে আকাশকে ডাকলাম) এই যে উঠেন আযান দিয়ে দিয়েছে।
আকাশঃ(নীল শাড়ী পড়া একটা মেয়ে হেটে যাচ্ছে আর আমি তার পেছনে ছুটচ্ছি। মেয়েটা হেটে যাচ্ছে কিন্তু আমি দৌড়েও তাকে ধরতে পারছি না। মুখটা দেখতে পাচ্ছি না কিন্তু চেনা চেনা লাগছে। শাড়ীর আঁচলটা সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে যাচ্ছে, কালো মেঘের মতো চুলগুলো সারা পিঠ ছড়িয়ে আছে কোমরের নিচে পর্যন্ত। চুলগুলোও কেমন চেনা চেনা লাগছে আর ডানহাতে তিনটা পদ্মফুল সাদা,গোলাপি আর নীল। এ যে সেই মায়াবতী। আবার মনে হলো পেছন থেকে কেউ ডাকলো। পিছনে ফিরে কাউকে দেখলাম না আবার সামনে তাকালাম কিন্তু মেয়েটা নেই। পাগলের মতো খুঁজছি কোথাও নেই,,,,)
মেঘলাঃ এই যে শুনছেন?? (ধাক্কা দিয়ে)
আকাশঃ ঘুম ভেঙে গেলো। সামনে তাকিয়ে দেখি মেঘলা। আবার সেই স্বপ্ন কেন দেখলাম?? মানে কী এই স্বপ্নের?? পরপর দুদিন একই সময় একই স্বপ্ন কেন দেখলাম??
মেঘলাঃ (ডাকলাম বলে রাগ করলো নাকি??) ক,,,কী হয়েছে?? কী ভাবছেন??
আকাশঃ কিছু না( গম্ভীর কণ্ঠে) ওয়াশরুম থেকে এসে মসজিদের দিকে চলে এলাম।
মেঘলাঃ( আমিও নামাজ পড়ে উনার জগিং যাওয়ার ড্রেস বেডে রেখে কিচেনে চলে গেলাম।) আজ কী রান্না করছো মা??
মাঃ পরোটা আর গরুর মাংস কষা। সকালে এটা খেতে আকাশ খুব পছন্দ করে। আজকে সারাদিন আকাশের পছন্দের খাবার রান্না করবো।
মেঘলাঃ কেন আজকে কী স্পেশাল কোন দিন??
মাঃ হুম স্পেশাল,,,,,, গতকাল আকাশ তার বাবার স্বপ্ন পুরণ করেছে। মানুষটা খুব চাইতো আকাশ যেন তার দ্বায়িত্ব বুঝে নেয়। টপ বিজনেসম্যানের তালিকায় নিজের নাম লেখায়। তার ছেলে হিসাবে আকাশকে নয় বরং আকাশের বাবা হিসাবে যেন তাকে সবাই চেনে। কিন্তু আকাশ নিজের রাগ পুষে রেখে মানুষটা বেঁচে থাকতে কোনদিন অফিসে পা রাখেনি। সবই হলো কিন্তু মানুষটা দেখলো না। (টপ করে পানি গড়িয়ে গেলো চোখ থেকে)
মেঘলাঃ(পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম মাকে) প্লিজ কান্না করো না মা। বাবা যেখানেই আছে ভালো আছে। সব দেখছে তিনি। বাবা কী তোমার কান্না পছন্দ করতো??
মাঃ (চোখ মুছে) আমাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হয়েছে। কিন্তু ৩০ বছরের সংসারে কখনো আমার চোখের পানি মাটিতে পড়তে দেয়নি। এমন না ঝগড়া হতো না। কিন্তু ঝগড়া হলেও যারই দোষ থাক সবসময় উনিই সরি বলতো।
মেঘলাঃ তুমি অনেক লাকি মা (আনমনে)
মাঃ মন খারাপ করিস না। আকাশও তোকে ভালোবাসবে দেখিস। এতটা ভালোবাসবে তুই ভাবতেও পারবি না।
মেঘলাঃ হুম,,,(মলিন হেসে) এখন তুমি রান্না করো আমি দেখি।(উনি জগিং থেকে আসার আগেই রুমে এসে অফিসে যাওয়ার সব গুছিয়ে রাখলাম। তারপর শাওয়ার নিয়ে বের হলাম)
আকাশঃ(রুমে এসে ওয়াশরুমে যাবো দেখি দরজা অফ। মনে হয় মেঘলা গেছে তাই সোফায় বসে ওয়েট করছিলাম তখনই মেঘলা বের হলো। ওর দিকে না তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।)
মেঘলাঃ কী হলো উনি মনে হচ্ছে আমায় দেখেইনি?(রেডি হয়ে নিচে গেলাম। ব্রেকফাস্ট করার সময়ও উনি একবারও আমার দিকে তাকায়নি। উনি কী এখনো রেগে আছে আমার ওপর)
আকাশঃ( চুপচাপ ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে এলাম। আজকে একবারও তাকাইনি মেঘলার দিকে। নিজেকে শক্ত করছি। বারবার ঠকতে পারবো না)
মেঘলাঃ (ভার্সিটি চলে এলাম। লিজা ফোন দিয়েছে) হ্যাঁ লিজা কই তুই??
লিজাঃ বকুল গাছের নিচে বসে আছি,,তুই আয়।
মেঘলাঃ আচ্ছা(লিজা বসে আছে সেখানে গিয়ে বসলে সজীব আর ওর কিছু বন্ধু এসেও বসলো)
সজীবঃ কেমন আছিস তোরা??
মেঘলাঃ ভালো,,,,,,,ক্লাসের সময় হয়ে গেছে চল ক্লাসে যাই।(ওঠে পা বাড়াতেই কিছুতে হোচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলাম কিন্তু সজীব ধরে ফেলেছে। সজীবের এক হাত আমার পিঠে আর অন্যহাত কোমরে। কেমন অসয্য লাগছে। তাড়াতাড়ি ওঠে দাঁড়িয়ে সরে এলাম।) সরি।
সজীবঃ আরে নাহ্ ঠিক আছে,,,,
মেঘলাঃ লিজা চল,,,
লিজাঃ হুম চল,,,,
মেঘলাঃ( একটা জিনিস খেয়াল করেছি যেদিন সজীব আমাকে প্রপোজ করেছিলো সেদিন থেকে সজীব এলেই লিজা কেমন চুপচাপ হয়ে থাকে। কিন্তু কেন????)
সজীবঃ রবি কাজ হয়েছে??
রবিঃ হ্যাঁ ভাই হয়ে গেছে,,,
সজীবঃ দে এবার আমার কাজটা করে নেই।
,,,,,,
আকাশঃ ফাইল চেক করছিলাম তখনই ফোনে একটা ম্যাসেজ এলো ওপেন করে দেখেই ফোনটা ফ্লোরে ছুড়ে মারলাম। মেঘলা,,,,,,,,,,,,,, যখনই ভাবি তোমাকে আর কষ্ট দেবো না তখনই তুমি আবার কষ্ট দেওয়ার কারণ বের করো। এর পরিণাম তোমার ওপর ভারি পরে যাবে।
মেঘলাঃ একটা ক্লাস শেষ করে বাড়ি চলে এলাম। ভালো লাগছে না তাই।
মাঃ কী রে এত তাড়াতাড়ি চলে এলি??
মেঘলাঃ এমনি ক্লাস করতে ভালো লাগছিলো না তাই।
মাঃ শরীর খারাপ লাগছে?? দেখি জ্বর এলো নাকি(কপালে হাত দিয়ে)
মেঘলাঃ আরে মা ব্যস্ত হইয়ো না। কিছু হয়নি এমনি ক্লাস করতে বিরক্ত লাগছিলো।
মাঃ আচ্ছা,,,, ঠিক আছে রুমে গিয়ে রেস্ট নে,,,,
দুপুরে,,,,
মাঃ টিয়া,,,,,,,
টিয়াঃ হ্যাঁ খালাম্মা,,,
মাঃ কোথায় থাকিস তুই?? সারাদিন শুধু টিভির সামনে বসে থাকিস,,
টিয়াঃ এখনই একটু বসেছিলাম
মাঃ যখনি বলি তখনই এই কথা বলিস। এখন যা বউমাকে ডেকে আন।
টিয়াঃ আচ্ছা,,,,,,(মেঘলার রুমে) বউমনি খালাম্মা তোমাকে ডাকছে,,,,,
মেঘলাঃ (একটা গল্পের বই পড়ছিলাম টিয়া আপু ডাকাতে তার দিকে তাকালাম) তুমি যাও আমি আসছি,,,,, (নিচে) মা ডাকছিলে,,,
মাঃ আজকে আকাশের পছন্দের সব খাবার রান্না করেছি। আজকে তুই অফিস গিয়ে দিয়ে আয়।
মেঘলাঃ মা আমি,,,,,কিন্তু,,,
মাঃ কোন কিন্তু না তুই যাবি এটাই ফাইনাল। এখন আমার রুমে চল রেডি করে দিচ্ছি।
মেঘলাঃ(মা আমার কোন কথাই শুনলো না। জোড় করে রুমে এনে শাড়ি পড়ার জন্য ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে আসতে বললো।)মা আমার কথাটা শুনো,,,,
মাঃ কোন কথা না,,,,একটা কথা মনে রাখবি সবসময় অধিকার এমনই এমনই পাওয়া যায় না। কিছু কিছু সময় নিজের অধিকার নিজেকে আদায় করে নিতে হয়।
মেঘলাঃ (মার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম) তোমার মতো শাশুড়ী যেন প্রতিটা মেয়ে পায় মা,,,,,,
মাঃ এখন কথা বাদ দিয়ে যা।
মেঘলাঃ(মা সুন্দর করে নীল রঙের একটা সুন্দর শাড়ী পরিয়ে দিলো। তারপর আমি হালকা একটু সেজে আকাশের খাবার নিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হলাম। গাড়ি যত এগিয়ে যাচ্ছে আমার ভয় তত বাড়ছে। যদি রাগ করে?? অবশেষে পৌঁছে গেলাম কিন্তু গাড়ি থেকে নামতেই ভয় করছে)
ড্রাইভারঃ ম্যাডাম এটাই অফিস নামেন।
মেঘলাঃ হুম(ধীরেধীরে নেমে এলাম। অফিসটা অনেক বড়। পনেরো তলা হবে মে বি। ভিতরে যেতেই রিসেপশনিস্ট দাঁড়িয়ে সালাম দিলো)
রিঃ ম্যাম কী হেল্প করতে পারি??
মেঘলাঃ আ,,,আকাশ মানে আকাশ চৌধুরীর কেবিন কোন ফ্লোরে??
রিঃ কিন্তু আপনি কে??
মেঘলাঃ আমি মেঘলা উনাকে বললেই হবে,,,,
রিঃ ওকে আমি জিজ্ঞেস করে নিচ্ছি,,(ফোন করার আগেই ফোন বেজে ওঠলো) ইয়েস স্যার,,,,,
আকাশঃ ওকে আমার কেবিনে নিয়ে এসো,,,,,,
রিঃ ওকে স্যার,,,,, (ফোন রেখে) চলুন।
মেঘলাঃ(রিসেপশনিস্টের সাথে যেতে লাগলাম। টেন ফ্লোরে লিফট খোলে গেলো। কেউ কেউ আমাকে দেখে কিছু ফিসফিস করছে।)
রিঃ এটাই স্যারের কেবিন,,, আপনি যান আমি আসছি
মেঘলাঃ ধন্যবাদ,,,, (একটু দাঁড়িয়ে থেকে সাহস করে নক করতে যাবো তার আগেই)
আকাশঃ coming,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,