🖤#কালোবউ🖤
লেখিকাঃ Tahmina Toma
পর্বঃ৩১
আকাশঃ(অনেকক্ষণ থেকে ফোন হাতে বসে আছি। গতকাল রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি টেনশনে। সকাল থেকে আশফাক আঙ্কেল কে কল দিতে চাইছি কিন্তু কীভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। অনেকক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে কল দিলাম।) আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল,,,,,
আশফাক আঙ্কেলঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,, কেমন আছো আকাশ???
আকাশঃ আলহামদুলিল্লাহ,,,, আপনি কেমন আছেন???
আশফাকঃ আলহামদুলিল্লাহ,,, চাঁদ মামুণি আর ভাবি কেমন আছে?? আশিক চলে যাবার পর আর তোমাদের সাথে তেমন যোগাযোগই করা হয়নি।
আকাশঃ আঙ্কেল সবাই ভালো আছে। আমি একটা কথা বলার জন্য কল দিয়েছিলাম।
আশফাকঃ কী কথা আকাশ?? কোন জরুরি কথা??
আকাশঃ আঙ্কেল কথাটা চাঁদকে নিয়ে,,,,
আশফাকঃ চাঁদ কী অসুস্থ?? কী হয়েছে ওর??
আকাশঃ না আঙ্কেল চাঁদ একদম ঠিক আছে।
আশফাকঃ তাহলে কী কথা??
আকাশঃ আসলে আঙ্কেল বাবা আপনাকে কথা দিয়েছিলো চাঁদের বিয়ে আপনার ছেলের সাথে দিবে,,,,,
আশফাকঃ হ্যাঁ,,,,, কথা দিয়েছিলো,,,,আর হৃদয়ের পড়া শেষ হলেই দেশে ফিরছে আর চাঁদেরও ১৮ হয়ে যাবে তখন বিয়ের কাজ সেরে ফেলবো।
আকাশঃ আসলে আঙ্কেল,,,,,
আশফাকঃ কোন সমস্যা আকাশ???
আকাশঃ আসলে চাঁদ অন্য একটা ছেলেকে ভালোবেসে ফেলেছে। সেই ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে সুইসাইড করতে গিয়েছিলো(চোখ বন্ধ করে এক দমে বলে দিলাম)
আশফাকঃ,,,,,,,,,,,
আকাশঃ এখন আপনি বলুন আমি কী করবো?? ঐ ছেলেকে না পেলে চাঁদ সুইসাইড করতে একবার ভাববে না। আপনি চাঁদকে চিনেন। আর ঐ ছেলের সাথে বিয়ে দিলে বাবার কথার খেলাপ হবে।
আশফাকঃ,,,,,,,,,,,,
আকাশঃ আঙ্কেল শুনতে পাচ্ছেন??
আশফাকঃ চাঁদকে আমি নিজের মেয়ের মতোই দেখেছি। আশিক বেঁচে থাকলে কী বলতো জানি না। কিন্তু আমার কাছে চাঁদের খুশির মূল্য সবচেয়ে বেশি। সেই ছেলের সাথেই বিয়ে দাও যাকে চাঁদ চায়। কিন্তু কখনো যদি মনে হয় চাঁদ ভালো নেই সেই ছেলের সাথে,,,, তাহলে তোমার আর সেই ছেলের খবর আছে।
আকাশঃ আপনি আমাকে কতবড় বোঝা মুক্ত করলেন বলে বুঝাতে পারবো না আঙ্কেল। অসংখ্য ধন্যবাদ আঙ্কেল।
আশফাকঃ ভালো থেকো,,,(রেখে দিলাম ফোন। হৃদয়কে কী বলে বুঝাবো আমি?? সে যে ছোটবেলা থেকেই চাঁদের স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়েছে। তাকে কী করে বলবো চাঁদ তাকে না অন্যকাউকে চায়??
,,,,,,
আকাশঃ(এখন একটু নিশ্চিন্ত লাগছে। কিন্তু আগে মাহিনের বিয়ে ভাঙতে হবে। এদের আবার কী বলে বুঝাবো?,,,,,,,,,,, মেঘপরী,,,,,,,,, ও মাই গড,,,, গতকাল বাসায় পৌঁছে মেঘলাকে কল করার কথা ছিলো। এত ঝামেলায় মনেই নেই৷ মহারানী মনে হয় রাগে আগুন হয়ে আছে। তাড়াতাড়ি কল দিলাম। কেটে দিলো,,,,,)
মেঘলাঃ যাওয়ার ১২ ঘন্টার বেশি হয়ে গেছে এখন আমার কথা মনে পরেছে। ধরবো না কল,,,ফালতু লোক একটা।
আকাশঃ (কয়েকবার দেওয়ার পরেও রিসিভ করছে না। বাপরে এত রাগ,,,ম্যাসেজ দিলাম,,,আমার মিষ্টি মেঘপরী রিসিভ করো প্লিজ,,, কথা আছে। আবার কল দিলাম,,,,)
মেঘলাঃ,,,,,,,,,,,
আকাশঃ রাগ করেছো??
মেঘলাঃ,,,,,,,,
আকাশঃ কথা বলবে না??
মেঘলাঃ,,,,,,,,,,,,
আকাশঃ আচ্ছা না বললে আমি বলছি তুমি শুনো।(তারপর বাসায় আাসার পর থেকে এখন পর্যন্ত যা যা হয়েছে সব বললাম)
মেঘলাঃ ও মোর আল্লাহ,,,,, এতো কিছু হয়ে গেছে,,,
আকাশঃ জী মহারানী,,,???
মেঘলাঃ এখন কী করবেন??
আকাশঃ আমার যা করার আমি করেছি এখন বাকিটা তুমি করবে।
মেঘলাঃ আমি কী করবো?? (অবাক হয়ে)
আকাশঃ তোমার বাবা-মাকে বুঝাবে।
মেঘলাঃ কিন্তু,,,
আকাশঃ কোন কিন্তু না,,,, আমার বোনের জীবনের প্রশ্ন এটা।
মেঘলাঃ তানহাও ভাইকে খুব ভালোবাসে,,,,সেই ছোটবেলা থেকে,,,,
আকাশঃ তুমি কী চাইছো আমি বসে বসে আমার বোনকে মরতে দেখি?? তুমি মানাতে পারলে ভালো নাহলে তোমার ভাইকে তোলে এনে আমার বোনের বিয়ে দেবো মনে রেখো।
মেঘলাঃ আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন??
আকাশঃ একবার ভেবে দেখো যখন আমার বোনটাকে মৃত্যুর একদম কাছে দেখেছিলাম আমার কেমন অবস্থা হয়েছিলো?? তোমার ভালোর জন্য তোমার ভাই আমাকে তোমার থেকে দূরে সরাতে একবার ভাবেনি। আমি আমার বোনের জীবন বাঁচাতে অন্যকারো কথা কীভাবে ভাববো?? যা বললাম তাই করো। আর কাজ না হলে আমাকে জানাও। আমার কাজ আমি খুব ভালোভাবে করতে পারি।
মেঘলাঃ আরে শুনুন,,,, যা কেটে দিলো,,,, এ কোন মুসিবত রে বাবা। কী করি এখন?? আগে ভাই কী চায় জানতে হবে।(ভাইয়ের রুমে গেলাম) ভাই আসবো??
মাহিনঃ হ্যা আয়,,,, আবার অনুমতি নিতে হয়,,??
মেঘলাঃ(চুপচাপ ভাইয়ের পাশে বসলাম মুখ ভার করে)
মাহিনঃ কী হয়েছে মেঘ?? মুখ ভার করে আছিস কেন??
মেঘলাঃ আর বলিস না,,, চাঁদ নাকি গতকাল বাসায় গিয়ে সুইসাইড করতে গিয়েছিলো।
মাহিনঃ কী,,,,,,,,,,( মনে হচ্ছে দম গলায় আটকে গেছে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না) কী বলছিস এসব??? এখন কেমন আছে চাঁদ?? কোথায় আছে?? কথা বলছিস না কেন??
মেঘলাঃ এখন ঠিক আছে। আকাশ দেখেছিলো তাই বেঁচে গেলো। নাহলে,,,,, আচ্ছা ওর কথা বাদ দে,, যেটা জানতে এসেছি সেটা জিজ্ঞেস করি। তানহা ভাবির সাথে কথা হয়েছে??
মাহিনঃ চাঁদ তুই এখন যা একটু একা থাকতে দে।
মেঘলাঃ বল না ভাই,,,,ভাবির সাথে কথা হয়েছে??
মাহিনঃ কিসের ভাবি হ্যা?? কিসের ভাবি?? যাকে তাকে ভাবি বানিয়ে ফেলবি??
মেঘলাঃ আরে যাকে তাকে কোথায় বানালাম?? কিছুদিন পরই তো বিয়ে।
মাহিনঃ বিয়ে ঠিক হয়েছে এখনোও হয়নি। তাই এটা নিয়ে একদম আমার সামনে নাচানাচি করবি না। ঠিক হলেই কেউ ভাবি হয়ে যায় না। যেমন ঠিক হয়েছে তেমন ভেঙেও যেতে পারে,,,,
মেঘলাঃ কী বলছিস এসব??
মাহিনঃ প্লিজ মেঘ এখন আমার সামনে থেকে যা,,,একা থাকতে দে একটু,,,,
মেঘলাঃ ওকে,,,(ভাইয়ের রুম থেকে চলে আসতে নিলাম। চাঁদের কথা শুনে এতটা রিয়াক্ট করলো আর তানহার কথা সয্যই করতে পারছে না। তাহলে কী ভাইও চাঁদকে ভালোবাসে?? হাত লেগে টেবিলের ওপর থেকে কী যেন পড়ে গেলো। তাকিয়ে দেখি একটা ডাইরি খোলা পড়ে আছে। “সরি চাঁদ” লেখা মাঝে কলম দেওয়া। তারমানে আমার সন্দেহ ঠিক। ভাইও চাঁদকে ভালোবাসে। ভাই জানলার সামনে দাড়িয়ে কাউকে হয়তো কল দিচ্ছে। ডাইরিটা তোলে নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে এলাম)
মাহিনঃ (বারবার চাঁদকে কল দিচ্ছি রিসিভ করছে না। আজ ওর এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী,,,, ওর গলা না শোনা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না।)
চাঁদঃ(এখন দেখেন কেমন লাগে?? ফোনটা অফ করে রেখে দিলাম।)
মাহিনঃ (এতক্ষণ তাও কল যাচ্ছিলো এখন অফ বলছে। ওকে না দেখে নিজেকে শান্ত করতে পারবো না। তাই বেড়িয়ে পড়লাম)
মেঘলাঃ(ডাইরিটা রুমে এনে পড়া শুরু করলাম। ভাই চাঁদকে শুধু ভালোবাসে না অনেক ভালোবাসে এই ডাইরিটা পড়লে যে কেউ বুঝতে পারবে। আমার বিয়ের জন্য যখন দেখতে এসেছিলো তখন চাঁদকে দেখে ভালোবেসে ফেলেছে ভাই। সেদিন থেকে যতবার ভাই চাঁদকে দেখেছে সব লেখা এখানে। চাঁদের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে তাও লেখা৷ সবকিছু আমার জন্য হয়েছে। ভাই আমাকে এতো ভালোবাসে?? আমার জন্য নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিতে একবার ভাবেনি। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। আমার জন্য এসব হয়েছে এখন আমিই সব ঠিক করবো।)
আকাশঃ (মেঘলার সাথে রাগ করাটা ঠিক হয়নি। সরি বলা উচিত। কল দিলাম আবার)
মেঘলাঃ,,,,,,,
আকাশঃ সরি,,,,,
মেঘলাঃ,,,,,,,,,,,,
আকাশঃ সরি বললাম তো।
মেঘলাঃ আপনি বলছিলেন আর কখনো কষ্ট দিবেন না। একদিনও কথা রাখতে পারলেন না।
আকাশঃ কষ্ট কোথায় দিলাম,,,??? শুধু একটু রাগ করে কথা বলেছি। আমি কী বলেছিলাম তোমার সাথে রেগে কথা বলবো না??
মেঘলাঃ না,,,
আকাশঃ তাহলে,,,,
মেঘলাঃ কিন্তু,,,,,,
আকাশঃ কোন কিন্তু না,,,এখন বলো কাজটা কখন করবে??
মেঘলাঃ অর্ধেক করা হয়ে গেছে,,,,
আকাশঃ মানে,,,,,
মেঘলাঃ(সব খোলে বললাম) এখন ভাই কোথায় যেন বের হয়ে গেলো অস্থির হয়ে।
আকাশঃ ওকে বাকি কাজটা তাড়াতাড়ি করে ফেলো। এদের বিয়ের ঝামেলায় আমার বাসরটাই হলো না এখনো,,,(মন খারাপ করে)
মেঘলাঃ ফালতু লোক একটা,,, সব সময় ফালতু কথা।
আকাশঃ আরে ফালতু কথা হলো কীভাবে?? বিয়ের দুইমাস হতে চললো এখনো আমার মিষ্টি বউটাকে কাছেই পেলাম না।
মেঘলাঃ কাছেই তো ছিলো তখন ফিরেও দেখেননি।
আকাশঃ প্লিজ মেঘপরী পুরনো কথা মনে করে নিজেও কষ্ট পেও না আর আমাকে অপরাধবোধে বিদ্ধ করো না। ভুলে যাওনা প্লিজ।
মেঘলাঃ হুমমম,,,
আকাশঃ আচ্ছা এখন রাখছি,,, একটু অফিসে যাবো। এতো ঝামেলায় অফিসের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।
মেঘলাঃ আল্লাহ হাফেজ,,,,
আকাশঃ ভালোবাসি,,,,,,,,
মেঘলাঃ,,,,,,,,,,,,,,,,
আকাশঃ যদি কখনো মনে হয় মন থেকে মাফ করতে পেরেছো তখন নাহয় বলো,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
আল্লাহ হাফেজ।
মেঘলাঃ(কেটে দিয়েছে,,, বলতে তো চাই কেন জানি না বলতে পারি না,,,,,)
,,,,,,,,,
আবিদঃ দেখো বাবা তুমি নিতে এসেছো ভালো কথা,, কিন্তু মেয়েটা ৩ বছর পর এসেছে এই বাড়িতে,,,, আবার ওর দুই ভাইয়ের একসাথে বিয়ে এখন কীভাবে দেই ওকে??
রবিনঃ ওকে আঙ্কেল তাহলে আমি বিয়ে মিটে গেলে এসে নিয়ে যাবো।
আবিদঃ আরে তা কেন?? তুমিও কয়েকটা দিন এখানে থেকে যাও।
রবিনঃ না আঙ্কেল আমার অফিস আছে।
আবিদঃ আরে সমস্যা কোথায় অফিস এখান থেকেই করবে। তোমারও তো শালকের বিয়ে।
রবিনঃ(রুপের দিকে তাকাতেই মুখ ফিরিয়ে নিলো। দাড়াও তোমার মুখ ফিরিয়ে নেওয়া দেখাচ্ছি) ঠিক আছে আমিই থেকে যাচ্ছি।
রুপঃ (যতসব নাটক)
,,,,,,
মেঘলাঃ(চাঁদের কথা শোনার পর আব্বা-মা কিছুক্ষণ শকড হয়েছিলো। চাঁদের মতো মেয়ে ছেলের বউ করার স্বপ্ন আব্বা-মা দেখেনি।)
আব্বাঃ আকাশ কী চাইছে??
মেঘলাঃ সে শুধু তার বোনের মুখে হাঁসি দেখতে চায়।
মাঃ মেঘরে বড়লোকের আদুরে মেয়ে পারবে আমাদের সাথে মানিয়ে নিতে??
মেঘলাঃ ভালোবাসা থাকলে সব সম্ভব মা। ২৫ বছর আগে চাঁদের জায়গায় তুমি ছিলে মা সেটা ভুলে যাচ্ছো। তুমি যখন পেরেছো চাঁদও পারবে।
আব্বাঃ ঠিক আছে আমি জামাল ভাইকে বুঝিয়ে বলে দিচ্ছি। ছেলেমেয়েদের ভালো থাকাটাই আগে।
মাঃ ঠিক আছে,,,, যা ভালো বুঝো করো,,,,
মেঘলাঃ(এত সহজে ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবো ভাবতেই পারিনি। কল করে আকাশকে সব জানিয়ে দিলাম। উনিও স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।)
,,,,,,,,
মাহিনঃ (অনেক চেষ্টা করেও চাঁদের দেখা পেলাম না। ফোনটাও আর খোলেনি। রাতে বাসায় এসে দেখি কেউ নেই।) আমেনা আপু,,,,
আমেনাঃ জে ভাইজান,,,
মাহিনঃ বাসা খালি কেন?? সবাই কোথায় গেছে??
আমেনাঃ সবাইতো রিয়াদ ভাইজানের জন্য মাইয়া দেখতে গেছে। আইয়া পরবো মনে হয়।
মাহিনঃ ওকে,,,,আমি রুমে যাচ্ছি কেউ যেন আমাকে না ডাকে,,,,,
আমেনাঃ আইচ্ছা,,,,
,,,,,,,,,,,,
মেঘলাঃ(আজকে লিজার এক্সপ্রেশন দেখার মতো ছিলো। আগামীকাল ভাইয়ের এক্সপ্রেশন দেখার অপেক্ষা এখন,,,,,হিহিহি। রুমে এসে আয়নার সামনে দাড়িয়ে জুয়েলারি খুলছিলাম খালি পেটে কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শে কেঁপে ওঠলাম )
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,