কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব-১০

0
752

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

গাড়িতে বসে আছে সৌন্দর্য,স্পর্শ,মেহেক আর রিফা,উদ্দেশ্য তাদের ভার্সিটি।মেহেক আজকে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিল কিন্তু শেষ মহূর্তে এসে তার দুলাভাইয়ের একটা কাজ পড়ে যায় যার জন্য তিনি মেহেক ভর্তি সম্পর্কিত কাজে যেতে পারেননি।এখন তার বদলে মেহেককে ভর্তি করানোর দ্বায়িত্ব এসে পড়েছে সৌন্দর্যের কাঁধে।

ভার্সিটির সামনে এসে গাড়ি থামায় সৌন্দর্য।স্পর্শ আগেই নেমে ভার্সিটির ভেতরে চলে যায়।মেহেক নেমে রিফাকে প্রশ্ন করে,

” এই তোরা তিনজন কি একি জায়গায় পড়াশোনা করিস?”

” হ্যাঁ আর কিছুদিন পর থেকে তুইও এখানে পড়বি।”

” মেহেক চলো।বোনু তুই ক্লাসে যা।”

” আচ্ছা।সাবধানে থাকিস মেহু।আর বোরিং ফিল করিস না আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।”

রিফা মেহেক থেকে বিদায় নিয়ে ক্লাসে দিকে চলে যায়।সৌন্দর্য মেহেকে নিয়ে প্রিন্সিপালের রুমের কাছে আসে।

” তুমি এখানেই দাঁড়াও,আমি ভেতরে যাচ্ছি।যাও ফাইলটা আমাকে দাও।”

সৌন্দর্য মেহেক থেকে কাগজপত্রের ফাইলটা নিয়ে ভিতরে চলে যায়।বেশ কিছুক্ষণ সময় পর সৌন্দর্য বেরিয়ে আসে।

” ভেতরে কি হয়েছে?ভর্তি করিয়েছে আমাকে?নাকি….. ” ভীত গলায় সৌন্দর্যকে প্রশ্ন করে মেহেক।

” আরে বাবা শান্ত হয়।ভর্তি হয়ে গেছে তোমার।আর ভর্তি না করানোর কি আছে?তোমার তো সব জায়গা রেজাল্ট ভালোই আছে।শুধু শুধু এতো টেনশন নিচ্ছো তুমি।”

সৌন্দর্যের কথায় মেহেক স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।

” চলো সামনে একটা রেস্টুরেন্ট আছে ওখানে গিয়ে বসি।”

” কিন্তু আপনার ক্লাস?”

” ক্লাস আরো দেরি আছে।চলো তো।”

সৌন্দর্যের পেছন পেছন মেহেক রেস্টুরেন্টে চলে আসে।

” বলো কি খাবে?”

” কিছুক্ষণ আগেই তো খেয়ে এলাম।এখন খিদে নেই।”

” আরে তা বললে কি করে হয়।আচ্ছা আমি কফি নিয়ে আসছি।কফি খেতে তো কোন সমস্যা নেই।”

” আচ্ছা।”

সৌন্দর্য কফি নিতে চলে যায়।মেহেক আশেপাশে দেখছে হঠাৎ তার চোখ আটকে যায় তার থেকে কিছুটা দূরে থাকা টেবিলটাতে।একটা ছেলে একটা মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছে।এই দৃশ্যটা দেখে মেহেকের বুক ধক করে উঠে।কারণ যখন সে আর মুগ্ধ রিলেশনে ছিল মুগ্ধও তখন তাকে এভাবেই খাইয়ে দিতো।দৃশ্যটা দেখেই মেহেক পিছিয়ে যায় কিছুমাস আগে—-

ফ্ল্যাশবেক,

” এতো দেরি কেন হলো তোমার আসতে?জানো কতক্ষণ ধরে ওয়েট করছিলাম।”

” আরে বাবা সরি।আসলে কিছু কাজ ছিল।তা শেষ করে আসতে দেরি হয়ে গেলো।”

” যাও থাকো তুমি তোমার কাজ নিয়ে।আমার কাছে কেন এসেছো?”

” সরি জান,প্লিজ রাগ করোনা।আচ্ছা এই দেখো আমি তোমার জন্য কি এনেছি।”

মেহেক তাকিয়ে দেখে মুগ্ধ তার জন্য তার ফ্রেবারিট চকলেট ফ্লেভারের আইসক্রিম নিয়ে এসে।এটা দেখে তো মেহেকের সব রাগ পানি হয়ে যায়।মেহেক আইসক্রিম নিতে গেলে মুগ্ধ হাত সরিয়ে ফেলে।

” কি হলো এটা?দাও আমাকে।”

” না দেবোনা।”

” কেন?দাও আমি খাবো।”

” হুম খাবে তবে এভাবে না।”

” তো কিভাবে?”

আইসক্রিম প্যাকেট থেকে বের করে মেহেকের মুখে সামনে ধরে মুগ্ধ।

” এভাবে।খাও এবার।”

” আমি খেতে পারবো তো।”

” না আমি খাইয়ে দেবো।এবার তাড়াতাড়ি খাও নয়তো গলে যাবে তো।”

মেহেকও মুচকি হেসে মুগ্ধের হাত থেকে আইসক্রিম খেতে থাকে।খাওয়ার সময় মেহেকের নাকের আইসক্রিম লেগে গেলে মুগ্ধ খুব সাবধানে তা মুছে দেয়।মুগ্ধের এতো কেয়ারিং কাজ দেখে মেহেক লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলে।

ফ্ল্যাসবেক এন্ড…..

” এইযে মেহুরানী,কোথায় হারিয়ে গেলো?”

সৌন্দর্যের কথায় মেহেক অতিত থেকে বেরিয়ে আসে।

” হ্যাঁ?”

” কি এতো ভাবছো তুমি?আর ওইদিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?বয়ফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ছে বুঝি?নাকি বয়ফ্রেন্ড ছেড়ে চলে গিয়েছে?” মজা করে বলে সৌন্দর্য।

কিন্তু সৌন্দর্য তো আর জানে না আসলেই মেহেকের সাথে এরকম কিছু হয়েছে।যদি জানতো তাহলে হয়তো এরকম কথা বলতো না।সৌন্দর্যের কথায় মেহেক কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসে।

” আবার কি ভাবছো তুমি?কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো।”

মেহেক কফির কাপটা নিয়ে তাকে চুমুক দেয় আর বাইরে দেখতে থাকে।

” আচ্ছা মেহেক তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”

” বলুন।”

” আচ্ছা তুমি হঠাৎ নিজ শহর ছেড়ে এই অচেনা শহরে এলে কেন?না মানে কোন বিশেষ কারণ আছে?”

” না তেমন কিছু না।আসলে ওখানে এখন আমার তেমন কেউ নেই।বড্ড একা লাগতো ওই শহরে,তাই শহর ছেড়ে চলে এসেছি নিজের একাকিত্ব দূর করার জন্য।”

” হা…..আবার তোমার জ্ঞানী জ্ঞানী কথা।”

মেহেক কিছু না বলে কফির কাপে চুমুক দেয়।

” উহু…উহু….মেহেক।”

” জ্বি।”

” তোমার মুখে কফি লেগে আছে।নাও মুছে নাও।” একটা টিস্যু পেপার বারিয়ে কথাটা বললো সৌন্দর্য।

” এবার ঠিক আছে?”

” না এখনো আছে।”

” কোন দিকে?”

” এইতো বাম দিকে,না না এখনো আছে।একটু উপরে।”

সৌন্দর্য উপরে,নিচে,পাশে বলেই চলেছে কিন্তু মেহেক ঠিক মতো মুছতে পারছেনা।অবশেষে বিরক্ত হয়ে সৌন্দর্য নিজেই টিস্যু দিয়ে কফিটা মুছে দেয়।সৌন্দর্যের কাজে মেহেক কিছুটা অস্বস্তিবোধ করে।

” খাবার সময় মুখে খাবার লাগে কেন?তুমি কি ছোট বাচ্চা?”

” হুম জানেন না আমি কিউট পিচ্চি বাচ্চা।” মজা করে বলে মেহেক।

” ওলে আমার পিচ্চি বাচ্চারে।আসো আমাকে একটু আদর করে দিয়।বাবু তুমি কি চকলেট খাবে?”

” উহু…..লাগবে না আমার চকলেট।”

এভাবেই হাসিমজা করে সময় পার করতে থাকে মেহেক আর সৌন্দর্য।এর মধ্যে মেহেক মুগ্ধ কথা ভুলে যায়।

১ সপ্তাহ পর,

আজ নতুন ভার্সিটিতে মেহেক প্রথম দিন।সৌন্দর্য,মেহেক,রিফা আর স্পর্শ আজও একসাথে ভার্সিটিতে আসে।

” বোনু মেহেকের খেয়াল রাখিস কিন্তু।ও কিন্তু এখানের কিছুই চেনেনা তাই ওকে সবসময় চোখে চোখে রাখবি।”

” আচ্ছা দাভাই।তুমি তোমার ক্লাসে যাও।মেহেককে নিয়ে চিন্তা করোনা আমি আছি তো।”

” সেই জন্যই তো বেশি চিন্তা হচ্ছে।তুই যে শয়তানি করিস।”

” দাভাই,তুমি এভাবে বলতে পারলে।” কিউট ফেস করে বলে রিফা।

” আচ্ছা যা এবার।আমিও গেলাম।মেহেক সাবধানে থেকে।”

রিফা মেহেকের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটা গাছের নিচে এসে দাঁড়ায়।

” কিরে রিফু আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি কেন?ক্লাসে যাবিনা?”

” একটু দাঁড়া,একজনের জন্য অপেক্ষা করছি।”

হঠাৎ কেউ এসে পেছন থেকে রিফাকে জরিয়ে ধরে।

” বেপি আই এম এসে পড়েছি।”

” তোর এতো সময় লাগে আসতে।”

” রাগ করিস না বেপি।আসলে সকালে উঠে দেরি হয়ে গিয়েছে।”

” দেরি তো হবেই।রাতে আরো কে-ড্রামা দেখ আর দেরি করে ঘুমা।তাহলে তো তুই আরো সকালে উঠতে পারবি।”

” ওই আমার কে-ড্রামা নিয়ে কিছু বলবিনা।আচ্ছা এটা কে?”

” ও এ হচ্ছে মেহেক।আমার ভাবীর ছোট বোন আর এখন আমার ফ্রেন্ড।মেহু এ হচ্ছে অথৈ স্টর্ট ফ্রম অথু।”

” আনেং মেহু।(হাই মেহু)”

” এই বেডি বাংলায় কথা ক।মেহু তুই ওর কথায় আবার উল্টাপাল্টা কিছু ভাবিস না।আসলে ও কে-ড্রামা দেখতে দেখতে পাগল হয়ে গিয়েছে।”

” গোয়েনচানা।(ইট’স ওকে)”

” তুইও কোরিয়ান পারিস?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে অথৈ।

” ওই একটু আকটু পারি।”

” বইন প্লিজ তোরা তোদের কোরিয়ান ভাষা বন্ধ করবি?আমি বাঙালি মানুষ আমি বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা বুঝিনা সো বাংলায় কথা বলবি।”

” আরাতসোও।(ওকে)” হাসতে হাসতে বলে অথৈ।

” অথু কি বাচ্ছি বাংলায় বল।বলছিনা আমি কোরিয়ান ভাষা বুঝিনা।”

” আচ্ছা আচ্ছা অথু আর কোরিয়ান বলিস না।না হলে দেখা যাবে রিফাকে এখনই মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে।”

” ওকে মেহু সোনা।ওই রিফু আমার জানটা কেমন আছে রে?”

” রিফু অথু কোন জানের কথা বলছে?অথু তোরও কি বয়ফ্রেন্ড আছে?”

” আরে ও ভাইয়ার(স্পর্শ) কথা বলছে।ও তো ভাইয়া উপর ক্রাশ খেয়ে উল্টো পড়ে আছে।”

” তাই নাকি অথু?”

” হুম।” লজ্জা মাখা মুখে মুচকি হেসে বলে অথৈ।

” বাহ্ বান্ধবী তোরা কত ফার্স্ট।তা মিস্টার স্পর্শ কি জানে?”

” না না জানে না।আর ভুলেও তুই ওর সামনে এই কথা বলিস না।না হলে আমি কোনদিনও লজ্জায় স্পর্শের সামনে যেতে পারবোনা।”

” আচ্ছা এসব রাখ।আর আজ তো মেহুর আমাদের ভার্সিটিতে প্রথম দিন,চল ওকে ক্যাম্পাসটা ঘুরিয়ে দেখায়।”

এরপর অথৈ আর রিফা মেহেকের দুপাশে দুটো হাত ধরে তাকে ক্যাম্পসটা ঘুরিয়ে দেখাতে থাকে।

চলবে…….