কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব-২০

0
679

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

হসপিটালে চিন্তিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে মেহেক আর তার বোনের শশুড় বাড়ির লোক।আসলে মেহেক রান্নাঘরে গিয়ে দেখে তার বোন অজ্ঞান হয়ে মাটি পড়ে আছে।এটা দেখে মেহেক ঘাবড়ে যায় আর চিৎকার দেয়।মেহেকের চিৎকার শুনে রিফা আর তার মা নেমে আছে।সৃষ্টিকে এ অবস্থায় দেখে তারাও ঘাবড়ে যায়।ভাগ্যবসত তখন সৃষ্টির হাসবেন্ড স্বচ্ছ অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছিল।সে আর তাদের ড্রাইভার মিলে সৃষ্টিতে গাড়িতে তোলে আর সোজা হসপিটালে নিয়ে আসে।অন্য গাড়িতে করে মেহেক,রিফা আর রিফার মা আসে।বড় ভাবী অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে শুনে সৌন্দর্য আর স্পর্শও তাদের কাজ ফেলে চলে আসে।সবাই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে ডাক্তার বের হওয়ার।অবশেষে সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ডাক্তার কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে।স্বচ্ছ তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যায়।

” ডক্টর সৃষ্টি কেমন আছে?”

” আপনি ওনার কি হন?”

” আমি ওনার হাসবেন্ড।শাহরিয়ার স্বচ্ছ।”

” কংগ্রটেস মিস্টার স্বচ্ছ।সি ইজ প্রেগনেন্ট।আপনি বাবা হতে চলেছেন।”

ডাক্তারের কথা শুনে স্বচ্ছের গায়ে কাটা দিয়ে উঠে।সে নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে বাবা হতে চলেছে।

” এটা সত্যি ডক্টর?”

” জ্বি।”

” আমি কি ওর সাথে দেখা করতে পারি?” কাঁপা কাঁপা গলায় বলে স্বচ্ছ।

” অবশ্যই।আপনার কথা হয়ে গেলে আপনি আমার সাথে একটু দেখা করে যাবেন।”

” ওকে ডক্টর।”

স্বচ্ছ ভেতরে চলে যায় আর অনেকটা সময় পর বাইরে আসে।এরপর একেক করে সবাই সৃষ্টিকে দেখে আসে।সবার শেষে যায় মেহেক।মেহেক ঢুকে আস্তে করে দরজা বন্ধ করে দেয় তারপর দেয় এক চিৎকার।

” আপুনি……।” শক্ত করে সৃষ্টিকে জরিয়ে ধরে মেহেক।

” আস্তে আস্তে।”

” নো আস্তে।আপুনি…আমি খালামণি হতে চলেছি।ওয়াও….তুমি বুঝতে পারছো কতো সুন্দর ব্যপারটা।একটা কিউট বেবি হবে তোমার।আমাকে খালামণি বলে ডাকবে।আ…..আপুনি কবে আসবে কিউট বেবি?” বাচ্চা বাচ্চা ফেস করে বরে মেহেক।

” মৃদু মাত্র দু’মাস হয়েছে আর আজই তো খবর জানলে পারলি।এতো তাড়াতাড়ি কি করে বেবি আসবে?কমসে কম আরে ৮/৯ মাস লাগবে।”

” এইযে কিউট বেবি তাড়াতাড়ি আমার আপুনির পেট থেকে বেরিয়ে আসো তো।আর হ্যাঁ আমার আপুনিকে কিন্তু একটুও কষ্ট দিওনা তাহলে কিন্তু আমি তোমার সাথে রাগ করবো।” সৃষ্টির পেটে হাত দিয়ে বলে মেহেক।

বোনের এরকম পাগলামি দেখে হেসে দেয় সৃষ্টি।
___________________________________________

আধাঘন্টা ধরে পার্কে বসে আদিবের জন্য অপেক্ষা করছে লিজা কিন্তু আদিবের কোন খবর নেই।এই কড়া রোদে বসে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে গিয়েছে লিজা।সে যখন চলে যেতে হবে তখন দেখে গেট দিয়ে আস্তে ধীরে আসছে আদিব।

আদিব এসে লিজার সামনে দাঁড়ায়।লিজা অগ্নি দৃষ্টিতে আদিবের দিকে তাকাই।

” হ্যালো বেবি।”

লিজা কোন উওর না দিয়ে চলে যেতে নিলে আদিব তার হাত ধরে ফেলে।

” আরে বেবি চলে যাচ্ছো কেন?”

” এতো তাড়াতাড়ি কেন এসেছো?আরো একটু দেরি করে আসতে।”

” তাড়াতাড়ি এসেছি?আচ্ছা ঠিক আছে পরের বার আরো দেরি করে আসবো।”

লিজা নিজের হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলে আদিব আবারো তার হাত ধরে ফেলে।

” আরে বেবি রেগে যাচ্ছো কেন?আচ্ছা এর পরের বার থেকে আসে তাড়াতাড়ি আসবো।”

তাও লিজা কিছু বলেনা।মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে তাকে।আদিব পকেট থেকে একটা গোলাপ ফুল বের করে।

” আমি একটা গোলাপ ফুল এনেছিলাম।কিন্তু যার জন্য এনেছিলাম মনে হয় তাকে দেওয়া আর হবেনা।মনে হচ্ছে ফুলটা এখন অন্যকাউকে দিয়ে দিতে হবে।”

আদিবের কথা শেষ হওয়ার আগেই লিজা আদিবের হাত থেকে ফুলটা ছিনিয়ে নেয়।

” আমার জন্য আনা জিনিস অন্যকাউকে দিলেনা খুন করে ফেলবো।”

” এবার রাগ কমেছে।”

” হুম।চলো কোথাও গিয়ে বসি।” হাসি মুখে বলে লিজা।

আদিবা মুচকি হেসে লিজার সাথে পাশের একটা বেঞ্চে বসে।আদিব জানে লিজা গোলাপ ফুল পছন্দ করে,তাইতো সে এই ফুলটা নিয়ে এসেছে।

লিজা নিজের মতো কথা বলছে হঠাৎ সে খেয়াল করে আদিবের কথায় মন নেই।সে শুধু হুম হুম করছে আর অন্য মেয়েদের দেখছে।এটা দেখে লিজার রাগ তো আকাশ ছুঁয়ে যায়।

” আদিব তুমি শুনছো আমার কথা?”

” হুম।”

” আমাদের রাজধানী ঢাকা।”

” হুম।”

” পানির রঙ লাল।”

” হুম।”

” তাজমল আমেরিকায় অবস্থিত।”

” হুম।”

লিজা আর নিজের রাগ কনট্রোল করতে পারছেনা।সে উঠে খপ করে আদিবের চুল ধরে ফেলে আচমকিক এরকম কিছু হওয়ায় আদিব ঘাবড়ে যায়।

” আরে বেবি কি করছো?ছাড়ো আমার চুল।আ….লাগছে তো।”

” তোর চুলতো আমি আজ ছিঁড়েই ছাড়বো।আজ যদি তোরে আমি টাকলা না বানিয়েছি তো আমার নাম ও লিজা না।”

” কি হয়েছে বেবি?”

” কি হয়েছে।পানির রং লাল না?তাজমল আমেরিকায় অবস্থিত না?”

” আরে বেবি না না।পানি তো নীল হয় আর তাজমল তো আগ্রায় অবস্হিত।”

” তো আমি যখন বলেছি তখন হুম হুম করছিলি কেন?তোর সাহস তো কম না আমার সাথে বসে তুই অন্য মেয়েরে দেখোস।”

” আহ্…..বেবি লাগছে প্লিজ ছাড়ো।তোমার কোথাও ভুল হয়েছে।আমি কেন অন্য মেয়েদের দেখবো?তুমি জানোনা আমি ভালো নম্র ভদ্র একটা ছেলে।”

” হুম জানি তুই কতটা ভদ্র।আজ তোর চুল ছেড়ে দিলাম কিন্তু আজকের পর থেকে তুই যদি আর আমার সাথে কথা বলতে আসিস না তো তোর চুল আর থাকবেনা।মনে রাখিস।”

কথাটা বলেই লিজা রেখে গটগট করে চলে যায় আর আদিব এখনো সেখানে বসে নিজের চুলে হাত বুলাচ্ছে।
_________________________________________

মাত্রই কলেজে এসেছে অথৈ।হঠাৎ পাশে থেকে তাকে অদ্ভুত নামে কেউ ডাকে।

” এই ব্ল্যাকপিংক।”

অদ্ভুত এই নাম শুনে অথৈ আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।বাম পাশে তার চোখ পড়তেই সে দেখে এটা তো সেই রেগিং করা ছেলেটা।অথৈ সেদিক পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে নিলে ছেলেটা মানে রুদ্র দৌড়ে অথৈয়ের সামনে এসে দাঁড়ায়।

” কি হলো ব্ল্যাকপিংক?কথা না বলে চলে যাচ্ছো কেন?”

” কি চাই?”

” যদি বলি তোমাকে?”

” সোজাসুজি বলবেন না আমি যাবো।”

” সত্যি বলছি।জানো তোমাকে দেখে না আমার মনের ঘরের ঘন্টাটা না ঢংঢং করে বাজে।”

” আর কিছু?” বিরক্ত নিয়ে বলে অথৈ।

” আর আমার হার্টবিটটা ব্যাঙের মতো লাফাতে থাকে।”

” এটা হার্ট নাকি ব্যাঙের মতো ঘড়ি।” অন্যদিকে তাকিয়ে বলে অথৈ।

” সে যাই বলো সব তো তোমার জন্যই।”

” হয়েছে আর এতো ফ্ল্যার্ট করতে হবেনা।আমি তোমার নেচার সম্পর্কে অলরেডি জানি।তো আমার সামনে এসব চলবেনা।”

” বাহ্ তার মানে তুমি আমার খবর রাখো,রাইট?”

” ও হ্যালো আমার কি আর কোন কাজ নেই নাকি যে আমি তোমার খবর রাখতে যাবো।আর তোমার কীর্তিকলাপ না ভার্সিটির সবাই জানে।” অথৈ চলে যেতে নিলে রুদ্র আবার তাকে আটকিয়ে দেয়।

” আরে দাঁড়াও না,একটু কথা বলি।”

” কেন কথা বলবো?তুমি কি আমার ফ্রেন্ড বা পরিচিত কেউ?”

অথৈয়ের কথা রুদ্রের গায়ে লাগে তাও সে সেটা ইগনোর করে।

” আচ্ছা তুমি বলেছিলে না তুমি রেগিং করা শেখাবে।শেখাবি নাকি তুমি।”

” নাউ আই এম নট ইন্টারেস্ট।এখন সরো হয়তো তোমার ক্লাস না থাকতে পারে তবে আমার ক্লাস আছে।আর হ্যাঁ আর আমার পথ আটানোর চেষ্টা করবেনা।নয়তো এমন হাল করবোনা যে হাঁটারো জোর থাকবেনা।”

” ওকে ওকে।”

রুদ্র একপাশে সরে দাঁড়ায় আর অথৈ বিরক্তি নিয়ে নিজের ক্লাসে যায়।এদিকে দূর থেকে আজো শান্ত তাদের দুজনের উপর নজর রেখেছি।হাত মুঠো করে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে শান্ত।তাকে দেখে মনে হচ্ছে পারলে এখনই সে রুদ্র মেরে হসপিটালে পাঠিয়ে দিতো।

চলবে…….