কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব-২১

0
647

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ২১
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

হাতে একটা নীল রঙের ডাইরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেহেক।এই ডাইরিটা সৌন্দর্যের।আসলে মেহেক এসেছিল সৌন্দর্যের বুক শেল্ফ থেকে তার(সৌন্দর্য) একটা বই নিতে আর বই নেওয়ার সময় মেহেক দেখতে পাই এই নীল রঙের ডাইরিটা।ডাইরিটা পড়তে মেহেকের অনেক হেজিটেশন হচ্ছে তবে কিউরিওসিটিও হচ্ছে।নিষিদ্ধ জিনিসে বরাবরি আমাদের কিউরিওসিটি বেশি থাকে ঠিক তেমনি মেহেকের ক্ষেত্রেও।অনেক ভেবেচিন্তে মেহেক ডাইরিটা খুলে।

ডাইরির প্রথম পেইজে একটা কাশফুলের ছবি আঁকা এবং সুন্দর করে ‘কাশফুল’ লেখা।মেহেক পরের পেইজ উল্টোয় আর মনে মনে পড়তে থাকে।

প্রিয় কাশফুল,

‘কাশফুল’ নামটা খুবই অদ্ভুত তাইনা?তবে আমার কাছে এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নাম।জানো যেদিন জানতে পারলাম তোমার কাশফুল পছন্দ সেইদিন থেকেই আমি তোমার নাম দিয়েছি কাশফুল।কেমন আছো তুমি?আমি আশা করি তুমি ভালোই আছো।কিন্তু তুমি কি জানো তোমাকে ছাড়া আমি মোটেও ভালো নেই।তুমিহীনা আমার প্রত্যেকটা মূহুর্ত কাটানো যে এখন খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।কেন তুমি এতো দূরে কাশফুল?কেন এতো দূরত্ব আমাদের মধ্যে?তুমি কি আমার কাছে থাকতে পারতে না?পারতেনা আমার চোখের সামনে থাকতে?জানিনা কখনো আমি তোমাকে বলতে পারবো কিনা যে আমি তোমাকে ভালোবাসি কাশফুল।ভালোবাসি তোমায়।তুমিই আমার প্রথম আর তুমিই আমার শেষ ভালোবাসা হয়ে থাকবে।তবে তুমি চিন্তা করোনা আমি কখনোই নিজের ভালোবাসার দাবি নিয়ে তোমার কাছে আসবোনা।আমি চাই তুমি যাকে নিয়ে আছো তাকে নিয়েই যেন সুখী থাকো।ভালো থেকে কাশফুল।হয়তো আবারো কোনদিন আমাদের দেখা হবে আবার হয়তো আর কোনদিন দেখাই হলোনা।

ইতি
নামটা নাহয় নাই লিখলাম।

মেহেক আর পরের পেইজগুলো পড়েনা।সে ডাইরিটা বন্ধ করে আবারো আগের জায়গায় রেখে নিজের রুমে চলে আসে।রুমে এসে মেহেক দরজা বন্ধ করে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আয়নায় কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চিৎকার করে কান্না শুরু করে মেহেক।সে ধপ করে নিচে বসে পড়ে।না সৌন্দর্যের ডাইরি পড়ে কাশফুলের প্রতি তার ভালোবাসা দেখে মেহেক কান্না করছেনা,মেহেক কান্না করছে এই কারণে কারণ তার মুগ্ধের কথা মনে পড়েছে।মুগ্ধের সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মূহুর্ত তার আবারো মনে পড়েছে।মেহেক নিজেই নিজেকে বলে—-

” আচ্ছা,ভালোবাসা কি সত্যিই এতো কষ্ট দেয়?ভালোবাসলে কি সত্যিই এতো যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়?কেন আমি যাকে ভালোবাসি,যাকে আমি চাই সেই কেন আমার থেকে দূরে চলে যায়?কেন আমি একা হয়ে যায় সবসময়?”
___________________________________________

টিউশন থেকে ফিরছে মেহেক।রাস্তায় একা একা হাঁটছে সে।শরীর তার চলছেই না।ইদানিং কেমন যে সবকিছু তার বিরক্ত লাগলে শুরু করেছে।মেহেকের আজ ভয় ভয় লাগছে কারণ আজ সে যে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছে সে রাস্তা দিয়ে সচরাচর সে কখনো চলাফেরা করেনা কারণ রাস্তাটা খুব একটা ভালোনা।মেহেক এদিকে আসতো না তবে সে যে রাস্তা দিয়ে আসাযাওয়া করে সেখানে কিছু কাজ চলছে যার কারণে রাস্তাটা কিছুদিন ধরে বন্ধ।যেদিন থেকে রাস্তাটা বন্ধ হয়েছে সেদিন থেকে মেহেক তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে যেতো তবে কাল স্টুডেন্টের পরীক্ষা তাই আজ তার ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।ব্যাগটা শক্ত করে ধরে মেহেক নিঃশব্দে হাঁটছে তবে কথায় আছেনা যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।মেহেকের বেলাও ঠিক তাই হয়েছে।

সামনে একটা ছোট দোকানে কয়েকটা ছেলেকে দেখা যাচ্ছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে ছেলেগুলো ভালোনা।মেহেক একবার আশেপাশে তাকিয়ে নেয় না কেউ নেই আর থাকবেই বা কিভাবে খারাপ কিছু হওয়ার ভয়ে সবাই অন্ধকার হওয়ার আগেই কাজ শেষ করে নিজের ঘরে ফিরে যায়।ছেলেগুলোকে দেখে মেহেক দাঁড়িয়ে পড়ে।মেহেক অনেক সাহস সঞ্চয় করে সামনে আগাতে থাকে।সে চুপচাপ দোকানটার সামনে দিয়ে চলে যায়।মেহেক ভেবেছে ছেলেগুলো থাকে দেখতে পাইনি কিন্তু না ছেলেগুলো ঠিকই মেহেককে খেয়াল করেছে।

” কিগো সুন্দরী এতো রাতে একা একা কোথাই যাও?”

” আমরা পৌঁছে দেবো নাকি?”

কথা বলে কুৎসিত একটা হাসি দেয় সবাই।তাদের হাসি শুনে মেহেক গা কেঁপে উঠে।মেহেক কোন কথা বলে চলে আসতে নিলে ছেলেগুলো তাকে ঘিরে ধরে।

” কিগো সুন্দরী বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছো বুঝি?চলো আমাদের সাথে চলো আমরা তোমাকে পৌঁছে দেবো।”

” ভাই মনে হচ্ছে মেয়ের কাছে অনেক কিছু আছে।”

আরেকটা ছেলে পকেট থেকে একটা ছোট ছুড়ি বের করে বলে, ” শোন যা যা আছে চুপচাপ সব আমাদের দিয়ে দে।নয়তো এতো সুন্দর জীবনটা খোয়াতে হবে তোর।”

” আমার কাছে কিছু নেই।” কাঁপা কাঁপা গলায় বলে মেহেক।

” দেখ মটকা গরম করিস না যা আছে চুপচাপ তা দিয়ে দে।”

” বললাম তো কিছু নেই।” কিছুটা চিৎকার করে বলে মেহেক।

” আরে তোরা ওকে রাগিয়ে দিচ্ছিস কেন?বিরক্ত করিস না তো মামুণিকে।আচ্ছা আমাদের টাকা পয়সা লাগবে শুধু কয়েকঘন্টার জন্য তোমার এই নরম শরীরটাকে আমাদের কাছে দিয়ে দাও।তাহলেই হবে।”

” হুম নিজে থেকেই দিয়ে দাও।তাহলে তুমিও মজা পাবে আর আমরাও।”

এগুলো বলে তারা হাসতে থাকে।এতো বাজে কথা শুনে মেহেকের চোখে পানি জমে যায়।মন থেকে সে প্রচুর কষ্ট পেলেও সে সেটা বাইরে প্রকাশ করেনা।

” আমাকে যেতে দিন।”

” আরে সোনা দেবো তো আগে একটু মসতি তো করেনি।” বলে ছেলেটা মেহেকের গায়ে হাত দিতে গেলে মেহেক সড়ে যায়।

” আপনাদের ঘরে কি মা-বোন নেই নাকি?আপনাদের মা-বোনের সাথে যদি কেউ এরকম করতো তখন?”

” আরে আবার সেই কমন ডায়লগ।শোনো সুন্দরী আমাদের ঘরে মা-বোন থাক না থাক তা আমাদের ব্যপার।আর আমরা এখানে মাশতি করবো এখানে মা-বোন এতো কিছু চিন্তা করার কি সময় আছে?আর থাকলেও তো তুমি আমাদের কেউ না তাই আমাদের কিছু যাই আসেনা।”

” এখন এতো কথা না বলে চুপচাপ আমাদেরকে আমাদের কাজ করতে যে।তাহলে তোরও কষ্ট কম হবে।”

ছেলেগুলো মেহেকের দিকে আগাতে গেলে মেহেক তাদের চোখে কিছু একটা স্প্রে করে দিয়ে দৌড়াতে থাকে।এদিকে ছেলেগুলো চোখ ধরে চিৎকার করতে থাকে।

” আহ্…..আমার চোখ।জ্বলে গেলো আমার চোখ।”

আসলে মেহেক তাদের চোখে পেপার স্প্রে করে দিয়েছে।সেফটির জন্য সবসময় মেহেক তার ব্যাগে একটা পেপার স্প্রে রাখে,যা মরিচের গুঁড়া,জিরা গুঁড়া,পেঁয়াজের রস এরকম আরো অনেক কিছু দিয়ে সে বানিয়েছে।প্রথমে পেপার স্প্রের কথা তার মনে ছিলনা হঠাৎ করেই তার স্প্রের কথা মনে পড়ে।তাই সুযোগ বুঝে সে সেটার ব্যবহার করে।

মেহেক দৌড়াতে থাকে।দৌড়াতে দৌড়াতে সে পেছন ফিরে তাকাই না এখনো পর্যন্ত কেউ তার পেছনে আসছেনা।মেহেক পুরো দমে আবারো দৌড়াতে থাকে।হঠাৎ করেই মেহেক থেমে যায়।সামনে থেকে একটা ট্রাক আসছে।এটা দেখে ভয়ে মেহেকের জান যায় যায় অবস্থা।সে সরতেও পড়ছেনা কারণ দৌঁড়ানোর কারণে সে পায়ে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছে আর মেহেকের একটা বাজে স্বভাব আছে ভয় পেলে সে একজায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে।ট্রাকটা মেহেকের খুব কাছে চলে এসে।মেহেক চোখ বন্ধ করে আল্লাহর নাম নিতে থাকে।হঠাৎ মেহেক অনুভব করে কেউ তাকে টেনে সরিয়ে নিয়েছে।মেহেক ফট করে চোখ খুলে তাকাই।দেখে সৌন্দর্য তার দিকে রেগে তাকিয়ে আছে।

” ইউ ইডিয়ট মেয়ে,দেখছো যে ট্রাক আসছে তাও একজায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?এটা কি সিনেমা পেয়েছো?আজ যদি আমি না আসতাম তাহলে এতোক্ষণে তো মরে ভুত হয়ে যেতে।”

মেহেক কিছু বলেনা চুপচাপ সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে।সে এতোটাই অবাক হয়ে গিয়েছে যে সে কি বলবে সেটাই বুঝতে পারছেনা।হঠাৎ কারো চিৎকার চেচামেচিতে মেহেকের ধ্যান ভাঙে।মেহেক চট করে পাশে ফিরে তাকাই।আরে সেই ছেলেগুলো তো এদিকেই আসছে।ছেলেগুলোকে দেখে মেহেক ঢোক গিলে।

” মিস্টার সৌন্দর্য তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলুন।ছেলেগুলো ভালোনা,প্লিজ তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলুন নয়তো কোন অঘটন ঘটে যাবে।”

সৌন্দর্য মেহেকের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা তবে তার মাথায় এতটুকু এসেছে যে এখন তাদের এখানে থাকা সেভ না,তাদের পালাতে হবে।আশেপাশটা একবার পর্যবেক্ষণ করে নেয় সৌন্দর্য।তার এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার পেছনেই একটা ছোট জঙ্গল আছে।আর কোন কিছু না ভেবে মেহেকের হাত ধরে জঙ্গলের ভিতরে ছুটতে শুরু করে সৌন্দর্য।

চলবে…….