কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব-২৪

0
657

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

শাড়ি পড়ে মামা-মামীর সামনে বসে আছে মেহেক।সে পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে তার সাথে কি হতে যাচ্ছে।

” মাশাল্লাহ আমার মামুনিটাকে খুব সুন্দর লাগছে।কি বলো তুমি?” মেহেকের মামী বলে।

” হুম ঠিক বলেছো।এখন কথা আগানো যাক?”

” হ্যাঁ হ্যাঁ সৃষ্টি কি বলিস তুই?তোর কোন আপত্তি আছে?”

” আরে মামী কি বলছো?আমার আপত্তি থাকবে কেন?বাবা-মার পর তোমরাই আমাদের খেয়াল রেখেছো।তোমরা যে সিদ্ধান্ত নেবো আমরা তাতেই খুশি।”

” তাহলে তো ভালোই।আগামী সপ্তাহেই তাহলে নক্ষত্র আর মেহেক এনগেজমেন্টটা সেরে ফেলা যাক।” মেহেকের মামী বলে।

এদিকে নক্ষত্রের নাম শুনে মেহেক মাথায় পুরো পৃথিবী ভেঙে পড়ে।মেহেক ফট করে সৃষ্টির দিকে তাকাই।সে চোখ বড় বড় করে সৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকে।

” কি হচ্ছে এগুলো?” চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে মেহেক।

সৃষ্টি তাকে শান্ত থাকতে বলে।” ঠিক আছে মামী।”

তারা সবাই নিজেদের মধ্যেই মেহের আর নক্ষত্রের এনগেজমেন্টের এর কথা ফাইনাল করে ফেলে।মেহেকের রাগে গা কাঁপছে।সে শুধু অপেক্ষা করছে কবে সে সৃষ্টিকে একা পাবে।

” আপুনি এসব কি হচ্ছে?” রেগে সৃষ্টিকে জিজ্ঞেস করে মেহেক।

” কেন?কি হয়েছে?”

” কি হয়েছে মানে?নিচে এসব কি ছিল?”

” তুই তো বলেছিস তোর কোন পছন্দ নেই।”

” হ্যাঁ আমি বলেছি আমার কোন পছন্দ নেই।কিন্তু তাই বলে নক্ষত্র ভাই।আর ইউ সিরিয়েস?”

” এখানে সমস্যা কোথায়?নক্ষত্র ভাই দেখতে শুনতে ভালো,ভালো জব করে,তার আচরণও বেশ মার্জিত।”

” হ্যাঁ আমি জানি সেসব।কিন্তু তাকে আমি শুধুই আমার ভাইয়ের চোখে দেখি।তার সাথে কিভাবে…..”

মেহেককে পুরো কথাটা বলতে না দিয়ে সৃষ্টি বলে, “তো কি হয়েছে?এটা কোন সমস্যা নয়।আমিও প্রথমে তোকে সেখানে বিয়ে দিতে চাইনি কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম নক্ষত্র ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে হলে তুই সেভ থাকবি।মামা-মামীর সাথে থাকলে তোর কনফাটেবল ফিল হবে।তোকে নতুন পরিবেশ গিয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবেনা।তাই তুইও প্লিজ রাজি হয়ে যা।দেখ আমি তোর ভালোর জন্য,তোর সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

মেহেকের মন তাও মানছেনা।সে সৃষ্টিকে বলে তাকে একটু একা থাকতে দিতে।সৃষ্টিও আর মেহেকে জোর না করে চলে যায়।

বিকেলবেলা,

ছাদে আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেহেক।

” সত্যিই কি সামনের সপ্তাহে তোমার আর তোমার মামাতো ভাইয়ের এনগেজমেন্ট?”

হঠাৎ কারো কন্ঠস্বর শুনে মেহেক জলদি পাশে ফিরে তাকাই।মেহেকের পাশে স্পর্শ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

” হ্যাঁ।” স্পর্শের দিকে না তাকিয়ে উত্তর দেয় মেহেক।

স্পর্শও আর কোন প্রশ্ন না করে নিচে চলে যায়।

রাতে অল্প কিছু খেয়ে রুমে চলে আসে মেহেক।সে শুতে যাবে তখনই তার মনে পড়ে আরে আজ তো সে সৌন্দর্যকে একবারের জন্যও দেখেনি।তবে মেহেক বিষয়টাকে তেমন একটা পাত্তা না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

পরেরদিন সকালে,

” কিরে আপু আজ এতো কিসের প্রিপারেশন চলছে?”

” ও তুই চলে এসেছিস।ভার্সিটিতে যাবি?” সৃষ্টি প্রশ্ন করে।

” হ্যাঁ যাবো তো।”

” আজ যেতে হবেনা,আজ বাড়িতেই থেকে যা।”

” কেন?আজ তোদের বাড়িতে কোন অনুষ্ঠান আছে নাকি?”

” আরে না অনুষ্ঠান নেই তবে আজ একজন স্পেশাল মানুষ আসবো?”

” কে আসবে?” গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে প্রশ্ন করে মেহেক।

” আসবে আসবে,একটু সবুর কর।”

মেহেক আর কিছু বলবে তার আগেই বেল বেজে উঠে।

” যা গিয়ে দেখ হয়তো সে স্পেশাল ব্যক্তি চলে এসেছে।”

” এতো সকাল সকাল আবার কোন স্পেশাল ব্যক্তি এলো?” বিরবির করে বলতে বলতে দরজা খুলে দেয় মেহেক।দরজার বাইরে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটাকে দেখে তো মেহেক হা।মেয়েটা স্টাইল করে নিজের চশমাটা খোলে।

” হেই গার্ল,হু আর ইউ?”

মেহেক এতোটাই অবাক হয়ে আছে সে কোন কিছু তার মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।

” ওয়াট এভার,সাইট প্লিজ।”

মেয়েটা মেহেককে আর কিছু না বলতে দিয়ে এটিটিউট নিয়ে ভিতরে চলে আসে।মেহেকের হুশ আসতেই সেও দৌড়ে ভিতরে চলে আসে।

মেয়েটা দিয়ে সৃষ্টিকে জরিয়ে ধরে।

” তুই এতো তাড়াতাড়ি চলে আসবি আমি ভাবতেই পারিনি।”

” সারপ্রাইজ কেমন দিলাম?”

” আমি মোটেও সারপ্রাইজ হয়নি,আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম।কিরে মৃদু এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

মেহেক এখনো চোখ বড় বড় করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।

” আরে আপু বোঝোনা ওতো এখনো শকে আছে।কিরে মেহু এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?খেয়ে ফেলবি নাকি?” হাসতে হাসতে বলে মেয়েটা।

” নাইরা আপু তুমি এখানে!এই সময়।”

” আরে আমার ভাইয়ের এনগেজমেন্ট বলে কথা আর আমি আসবোনা এটা কি হয় নাকি?”

” তা না বলে…..”

” না বলে কোথায়?সবাই জানে শুধু তুই জানিস না।”

” ও আচ্ছা।” মন খারাপ করে।

” ভাবী আমাকে ব্রেকফার্স্ট দাও।আমার……” নামতে নামতে কথাটা বলে স্পর্শ।কিন্তু নাইরাকে দেখে তার কথা মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায়।

স্পর্শও চোখ বড় বড় করে নাইরার দিকে তাকিয়ে আছে।নাইরাও স্পর্শকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

” ভাবী এটা….. ”

” এ হচ্ছে নাইরা।আমার মামাতো বোন।সিওলে পড়াশোনার জন্য গিয়েছে।ভাইয়ের এঙ্গেজমেন্টের জন্য এসেছে।”

” হুম।আচ্ছা আমি আসছি।”

” আরে ব্রেকফার্স্ট করে যাও।”

” না আমার পেট ভরে গিয়েছে।” নাইরার দিকে তাকিয়ে বলে স্পর্শ।নাইরার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই স্পর্শ বেরিয়ে যায়।আর এদিকে নাইরা চুপ করে কিছু একটা ভাবছে।
___________________________________________

এনগেজমেন্টের শপিং করে সবাই বাড়িতে ফিরে এসেছে।সবাই এনগেজমেন্ট নিয়ে অনেক বেশি এক্সাইটেড থাকলেও মেহেকের মনে কোন ফিলিংস নেই।সে রোবেটের মতো সবকিছু পালন করে চলেছে।আজ ২/৩ দিন ধরে সৌন্দর্য কেমন যেন চুপচাপ থাকছে।মেহেকের সাথেও কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে অনেকটা।তবে মেহেক এসবকিছু তেমন একটা গুরুত্ব দেয়না।

কিছুদিন পর,

আজ মেহেক আর নক্ষত্রের এনগেজমেন্ট।সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত।মেহেক তৈরি হয়ে চুপচাপ তার রুমে বসে আছে,নাইরা আর রিফা তার পাশে বসে গল্প করছে।কিছুক্ষণ পর সৃষ্টি এসে মেহেককে নিচে নিয়ে যায়।এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠান সৌন্দর্যদের বাড়িতেই হচ্ছে।মেহেকের মামা-মামীরাও কাছেরই একটা হোটেলে উঠেছে।মেহেক এককোণে রিফার আর অথৈ এর সাথে দাঁড়িয়ে আছে।

” কিরে মেহু মুখটা এরকম বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন?আজ তোর এনগেজমেন্ট কই তুই খুশিতে লাফাবি তা না তুই গোমরা মুখ করে বসে আছিস।”

মেহেক কিছু না বলে মুচকি হাসে।মেহেকের হাসি দেখে রিফা আর অথৈয়ের মন খারাপ হয়ে যায়।কারণ তারা বুঝতে পেরেছে এই হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে একরাশ অভিমান আর কষ্ট।

” মেহেক মা দেখ কে এসেছে।”

মামার কথা শুনে মেহেক পেছনে ফিরে কিছু যাদের দেখে তাদের দেখে মেহেক ঘাবড়ে যায়,তার বুক কেঁপে উঠে।মেহেকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধের বাবা-মা।

” কেমন আছো মেহেক?” মুগ্ধের মা জিজ্ঞেস করে।

” জ্বি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ।” নিচু স্বরে জবাব দেয় মেহেক।

” তা তুমি হঠাৎ এখানে চলে এলে যা?আমার মুগ্ধরের বিয়েতেও আসোনি।তোমার বান্ধবীর সাথেই তো মুগ্ধের বিয়ে হয়েছে।শুনলাম রিয়া নাকি তোমার খুব ভালো বন্ধু ছিল।তাহলে বিয়েতে এলেনা কেন?”

মেহেককের কথাগুলো শুনে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ” কি করে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কারো হতে দেখবো?কি করে সহ্য করবো নিজের ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে যাওয়া কষ্ট?”

মেহেক কিছুনা না বলে রিফা আর অথৈয়ের দিকে তাকাই।তাদের কথা শুনে রিফা আর অথৈও বুঝতে পেরে গিয়েছে এনারা আসলে কারা।

” মেহু চল এনগেজমেন্টের সময় হয়ে গিয়েছে।মামা চলো।” সৃষ্টি বলে।

” হ্যাঁ হ্যাঁ চল চল,শুভ কাজে দেরি করতে নেয়।ভাবি,বন্ধু চল।”

মেহেককে স্টেজে নিয়ে আসা হয়।মেহেক কাঁপা কাঁপা হাতে হাতটা বাড়িয়ে দেয় আর নক্ষত্রও চুপচাপ রিংটা পড়িয়ে দেয়।এবার মেহেকের পালা।কিন্তু সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।এদিকে সবাই তাড়া দিতে থাকে।অবশেষে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে মেহেক যখন নক্ষত্রকে রিংটা পড়াতে যাবে তখন কেউ চিৎকার করে বলে উঠে—

” বন্ধ করো এসব।এই এঙ্গেজমেন্ট হবেনা।”

চলবে……..