কাশফুলের মেলা পর্ব-০৪

0
325

#কাশফুলের_মেলা
#পর্ব_৪
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

আরশির এমন ভাবভঙ্গি দেখে ইশান আরও ঘোরে চলে যাচ্ছে।কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু মুক্তোর ন্যায় ঘামগুলোকে হাত দিয়ে মুছে সে চলে গেলো রুম ছেড়ে।ইশান চলে গেছে দেখে আরশি একটা বড় শ্বাস নিলো। সে তো ভেবেই নিয়েছিলো আজ কোনো না কোনো অঘটন নিশ্চয় ঘটে যাবে। বুকের ভিতরের ধুকপুকানি আওয়াজটা কিছুটা কমে আসছে। আরশি ফোনটা হাতে নিয়ে নিজের ঠোঁটটা দেখলো কেমন জানি লাল হয়ে গেছে।প্রথমে ঠোঁটে আলতো করে হাত বুলালেও এখন রাগে জোড়ে জোড়ে ঠোঁট ঢলছে।পাশে থাকা টিস্যু বক্স থেকে একটা টিস্যু নিয়ে ঠোঁটে ঘষতে লাগলো সে। ইশান দরজার ওপার থেকে সবকিছুই দেখছে।সে আরশির আচরন দেখে যথটুকু বুঝতে পারলো যে আরশির মনে এখোনো সেই ছেলেটা আছে।তাই ইশানকে সময় দিচ্ছেনা

পরেরদিন সকাল সকাল আরশিকে লাগেজ গোছাতে দেখে ইশানের বেশ খটকা লাগলো। আশ্চর্য আরশি লাগেজ গোছাচ্ছে কেনো?তাহলে কী কালকের আচরনের জন্য সে এমন করছে।কিন্তু কাল যা হয়েছে তার জন্য তে আমি একলা দায়ি ছিলাম না।ও নিজে থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো।তাহলে এখন কেনো এমন করছে?

—-একি আপনি রেডি হবেননা??

আরশির কন্ঠস্বর কানে আসতেই ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে এলো ইশান। কিছুক্ষন এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,,,,

—-কিছু বলছিলে কী??

—-বলছি আপনি রেডি হবেননা

—-কেনো কোথায় যাবো??

—-ওমা আজ তো আমাদের বাসায় যাওয়ার কথা। আড়াই দিন এখানে আড়াইদিন সেখানে।আমি এতোক্ষন আপনার জন্য অপেক্ষা করতে পারবনা। তারাতাড়ি রেডি হোন নয়তো আমি আপনাকে ছেড়েই চলে যাবো।

—-হ্যাঁ ছেড়ে চলে যেতেই পারো।এছাড়া আর কীই বা করতে পারো।পারলে জীবন থেকেও সরে যেতে পারো আটকাবো না আমি।

ইশান কথাটা বলে খাটের উপরে রাখা একটা টিশার্ট নিয়ে বাথরুমে চলে গোলো

—এভাবে ইশানকে বলা আমার উচিৎ হয়নি।ওর জন্য আজ আমার সম্মান বেচে আছে।এ কথাটা আমাকে ভুলে গেলে চলবেনা।আর আমিই বা কী করবো।ওকে আমার একদমি ভালো লাগেনা।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে।জানালায় হাত রেখে তার উপরে থুতনি রেখে বাইরে চলন্ত গাড়ি দেখায় ব্যস্ত আরশি।যতই বাড়ির দিকে এগোচ্ছে ততই তার মন ভারি হয়ে আসছে।যদি ইশান বাড়ির সকলের সাথে উল্টাপাল্টা ব্যবহার করে তাহলে। নানা ইশান এটা করবেনা কেনোই করবে।ওতো আমায় ভালোবাসে।

আরশি ঘার কাত করে একবার ইশানের দিকে তাকালো ইশান ফোন ঘাটছে আরশিকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ইশানের ভ্রু কুঁচকে তাকানো দেখে আরশি সাথেসাথে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

—-ছিঃছিঃ এসব কী ভাবছিলাম আমি।ইশান কোন দুঃখে আমায় ভালোবাসতে যাবে।অন্যবার তাকালে সে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতো আর আজ ভ্রু কুচকে তাকালো তারমানে এখন আর সে আমাকে ভালোবাসে না।

আরশি এসব ভাবতে ভাবতে কখন নিজের বাসায় পৌছে গেছে টেরই পায়নি।চোখে ঘুম এসেও লেপ্টে আছে।দুচোখের পাতায় ভর করে আসছে দুই রাজ্যের ঘুম তারউপরে আবার ইশানও ওকে গাড়ি থেকে নামার জন্য বকছে।
আরশি টলমল পায়ে গাড়ি থেকে নামলো। ওর থেকেই কিছুটা দূরে ওর মা বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। ইশান দুজনের সাথেই কোশল বিনিময় করে বাসার ভিতরে চলে গেলো।আরশিও ওর মা বাবার সাথে কোশলবিনিময় করে বাসার ভিতরে চলে আসতে নিবে ওমনি ওর মা খপ করে ওর হাত ধরে ফেললেন।আরশি হাত ধরার মানেটা বুঝতে না পেরে ওর মায়ের দিয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে তাকালো।

—-তুমি কী এখনো ইশানকে মেনে নাওনি? ওর হাবভাব এমন কেনো?অন্যসময় হলে সে তোমাকে ধরে আমাদের কাছে নিয়ে আসতো কিন্তু আজ তাকালো পর্যন্ত না।নিশ্চয় তুমি এখনও ওকে মেনে নাওনি। শুনো আরশি বেশি অহংকার ভালো না।তোমার অহংকারের জন্যই তোমার আজ এই অবস্থা।

—-মা আমি এখন কথা বলতে চাইছিনা।আমার ঘুম পাচ্ছে আমাকে রুমে যেতে দাও।

আরশি ওর হাত মায়ের হাত থেকে ছাড়িয়ে ওর রুমের দিকে ছুটলো।রুমের দরজাটা খুলেই খাটে গিয়ে দড়াম করে শুয়ে পরলো।ইশান বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো আরশি খাটে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।তোয়ালে দিয়ে মুখটা মুছতে মুছতে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। আয়নার এক সাইডে তোয়ালেটা রাখতে যাবে তখুনি ওর চোখে পরলো একটা বুকসেল্ফের নিচের তাকটায়।সেখানে একটা নীল রঙের ডায়েরি আছে যেটার উপরে খুব সুন্দর করে নকশা করা। ইশান আগ্রহবশত ডায়েরিটা হাতে নিলো।অনেকদিন হয়ে গেছে মনে হয় এই ডায়েরিতে কেউ হাত লাগায়নি।ধুলোবালি জমে আছে ডায়েরির কবারে। ইশান ডায়েরির প্রথম পাতা উল্টাতেই একটা নাম দেখে থমকে গেলো। প্রথম পাতায় খুব সুন্দর করে লেখা আছে”””””খুব ভালোবাসি তুর্ব”””” এই তুর্ব নামটা দেখে মুহুর্তেই ইশানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। বুঝার আর বাকি রইলো না এই সারা ডায়েরিতে কী আর থাকতে পারে। একবার আরশি আরেকবার ডায়েরিটার দিকে তাকিয়ে ডায়েরিটা আরশি উপরে ছুড়ে মারলো। হাতে হঠাৎ আঘাত লাগাতে ঘুম ভেঙে গেলো আরশির।হাতের কনুইর উপর নীল ডায়েরিটা দেখে সেও হকচকিয়ে গেলো।ভ্রু কুঁচকে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-এটা এখান কেনো??

—-সেম কুয়েশ্চন আমারও এই ডায়েরিটা এখানে কেনো

—-আশ্চর্য আমার জিনিস তো আমার কাছেই থাকবে। আমি বলতে চাইছি এই ডায়েরি আপনি কেনো ধরলেন আর আমার দিকেই বা কেনো ছুড়ে মারলেন?

আরশির কথায় ইশানের রাগ হলেও সে রাগটাকে কন্ট্রোল করে বলল,,,

—-সি আরশি তোমার এখন বিয়ে হয়েছে যত পুরোনো জিনিস আছে সব ফেলে দাও শুধু শুধু অতীত নিয়ে পরে থাকার কী কোনো মানে আছে বলো?

—-আপনি কী ভাবছেন আমি সবকিছু ভুলে আপনার সাথে সুখে সংসার করব কক্ষনো না।

ইশানের রাগ এবার সপ্তম আকাশে। সে রেগে আরশির মুখ চেপে ধরলো,,,

—-বেশি বারাবাড়ি করিস না আরশি। আগের ইশানকে আবার ফিরিয়ে আনিস না।তোর যদি এতই ইচ্ছে হয়ে তাহলে তুর্বর কাছে ফিরে যা আর আমি তোকে বাধা দিবনা।আর ডিভোর্সের বন্দোবস্তও হয়ে যাবে।

ইশান আরশির মুখ এতই জোড়ে চেপে ধরেছে আরশি কথা পর্যন্ত বলতে পারছেনা শুধু গোঙাচ্ছে। আরশির গোঙানো দেখে ইশান ওর মুখ ছেড়ে দিলো।আরশি বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বলল,,,,

—-আপনি একটা জানোয়ার। দেখিয়েই দিলেন যে আপনি এখনো পাল্টাননি আগের ইশানই আছেন।

দেখতে দেখতে দিন ফুরিয়ে রাত চলে এলো। ইশান আর আরশি একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে পর্যন্ত না।আর যদি ভুলে তাকায় তাহলে সাথেসাথে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে যেনো তাকালেই কতো বড় পাপ হয়ে যাবে। আরশি ওর খাট থেকে একটা বালিশ এনে সেটা ফ্লোরে ছুঁড়ে মেরে নিজে খাটে শুয়ে পরলো। ইশান বুঝতে পারলো আরশি ওকে ফ্লোরে ঘুমানোর নির্দেশ দিচ্ছে।ইশানও কম যায়না সেও আরশির হাত ধরে টেনে ওকে নিচে নামিয়ে নিজে খাটে শুয়ে পরলো।

—-আপনি একটা অভদ্র, অসভ্য,অসহ্য। সব জায়গায় অধিকার ফলান কেনো?আপনার বাড়িতে আমায় ফ্লোরে জায়গা দিতেন মেনে নিলাম কিন্তু আমার বাড়িতে এসে আমাকে কেনো ফ্লোরে জায়গা দিচ্ছেন বলুন

—-অতি বাড় বেড়োনা ঝরে পরে যাবে।কথাটা নিশ্চয় শুনেছো।আর যাই বলো তোমার মুখে এসব অভদ্র অসভ্য কথাগুলো শোভা পায়না।আমি যে তোমার সম্মান তোমাকে ভিক্ষা দিতে পেরেছি সেটাই অনেক নয় কী।আর যদি বেশি কথা বলোতো তুমি আমার সঙে যে অভদ্রের মতো ব্যবহার করছো সেই সব গুলো কথা আমি তোমার মা বাবার কাছে বলে দিব। আর এটাও বলে দিব যে আমি আপনাদের মেয়েকে নিয়ে যেতে চাইছিনা।কাল কক্সবাজার যেতে হবে আমি চাইনা আর কোনো সিন ক্রিয়েট হোক

আরশি গোমড়া মুখ করে গায়ে কাঁথা টেনে শুয়ে পরলো।

সকাল সকাল চোখে মুখে পানির ছিটে পরতেই ঘুম থেকে ধরফরিয়ে উঠলো আরশি। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটির দিকে তাকিয়ে বুঝার আর বাকি রইলোনা কে ওকে পানির ছিটে দিয়েছে।আরশি মুখ খোলার আগেই ইশান বলল,,,,

—-যদি কারও কক্সবাজার যাওয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে সে আমার সাথে আসতে পারে।আর আমি বেশি সময় অপেক্ষা করতে পারবনা কক্সবাজর তো মামার বাড়ি না যে চাইলেই এক দৌড়ে চলে যেতে পারবে।

ইশানের এমন পিঞ্চ মার্কা কথা শুনে আরশি একটা ভেঙচি কেটে ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ালো। তারপর রোবটের ন্যায় হেঁটে হেঁটে বাথরুমে চলে গেলো।

সকাল সাড়ে দশটা বাজে।আরশি আর ইশান মা বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। আরশির মা আরশিকে পইপই করে বলে দিয়েছেন যেন সে সেখানে গিয়ে কোনো অঘটন না ঘটায়। গাড়ি চলেছে তার আপনি গতিতে।রাস্তায় ফুচকা ওয়ালারা ফুচকা নিয়ে বসেছে।আরশি কাঁদো কাঁদো মুখ করে মানুষের ফুচকা খাওয়া দেখছে।ইশান অনেক্ষন ধরেই আরশির কান্ড দেখছে সে মুচকি হেসে গাড়ি দাঁড় করিয়ে এক প্যাকেট ফুচকা নিয়ে এলো। ইশানের হাতে ফুচকা দেখে আরশির কেঁদে দেওয়া উপক্রম সে জানে ইশান থাকে একটা ফুচকাও দিবেনা। ইশান মুখে দুইটা ফুচকা দিয়ে বাকিগুলো এগিয়ে দিলো আরশির দিকে।

কক্সবাজার পৌঁছাতে পৌঁছাতে চারটা বেজে গেলো। ইশান আর আরশি গিয়ে রিসোর্টে উঠলো।আরশির বাবার এক ফ্রেন্ড আছেন যিনি এই রিসোর্টের ম্যানেজার উনাকে বলে তিনি আগেই রুম বুক করে রেখেছিলেন। ইশান আগেই রুমে চলে গেছে আরশিও যাবে তার আগেই একটা মানুষকে দেখে ওর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো।,,,,,

চলবে।