কাশফুলের মেলা পর্ব-০৭

0
318

#কাশফুলের_মেলা
#পর্ব_৭
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

সময় আর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করেনা। দেখতে দেখতে মধ্যে একদিন কেটে গেলো।ইশানের জ্বর কমেনি বিধায় সে আরশির বাড়িতেই আছে। রাতে ইশানের জ্বর বেড়ে যায় অনেক সময় ভুলোমনেরও হয়ে যায়।দুপুরে খেয়েছে কী না সেটাও ভুলে গেছে। আরশি এবার বেশ চিন্তায় পরে গেলো বিশেষজ্ঞ ডক্টরকে জিজ্ঞেস করলে উনি বলেন এরকম অনেকরই হয়। সব ফিবার একরকম হয়না। উত্তেজনা বেড়ে যায় অনেক ফিবারে।রাতে জ্বর হওয়া সাধারন কোনো বিষয় নয়।জ্বরের কারনে কেবল রাতে আপনার অস্বস্তি হয়না সকালেও মধ্যে ক্লান্তি অনুভব করেন। শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঁপুনি, খিদের অভাব,ডিহাইড্রেশন,ডিপ্রেশন, হাইপার অ্যালগেসিয়া বা অতি অল্পেই অতিরিক্ত যন্ত্রণা বোধ,লেথার্জি, উত্তেজনা,ঘুম ঘুম রেশ যেসব কারনে সে ভুলে যায় সে কী করে।এটা স্বাভাবিক বাট সবার ক্ষেত্রে না। ইশানের প্রতি আরও খেয়ালি হতে হবে।

[যারা যারা কথাটি বিশ্বাস করেননি তারাও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করতে পারেন আই হোপ আপনারা আপনাদের উত্তর পেয়ে যাবেন]

আরশি হাতে করে ঔষধ এনে ইশানের পাশে বসে ইশানের মুখের কাছে গ্লাস দিতেই ইশান গ্লাস হাত দিয়ে টেলে দূরে সরিয়ে দিলো।কোনোরকমে উঠে বসে বলল,,,,

—-আমার এতো যত্ন নিতে কে বলেছে?তোমার সিমপ্যাথির আমার কোনো প্রয়োজন নেই। এখন কেনো আমাকে এতো টেক কেয়ার করছো বয়ফ্রেন্ড ধোকা দিয়েছে বলে?কোনো কূলকিনারা পাচ্ছোনা বলে এখন আমাকে বলির পাঠা বানাচ্ছো?তোমাদের মেয়েদের না বিশ্বাস করাই যায়না। যদিও সব মেয়েরা এক না। কেনো আরশি? তোমার মনে কী এখন আমার জন্য প্রেমের ফুল ফুটেছে হুম?তিন বছর সামনাসামনি পাগলের মতো ভালোবেসে গিয়েছি তোমার জন্য নিজেকেই নিজে চরিত্রহিনের পরিচয় দিয়েছি কিন্তু তোমার কাছ থেকে কী পেলাম ঘৃনা আর অপমান। তুমি আমেরিকা থেকে চলে আসার পর বাবা আমার জন্য অনেক পাত্রি দেখেছে কিন্তু আমি বিয়ে করেনি শুধুমাত্র তোমার কথা ভেবে। দেশে ফিরেও কী হলো চরিত্রহীন আর লম্পট উপাধি পেলাম। তোমার বয়ফ্রেন্ড যে তোমাকে ধোকা দিলো কই তাকে তো এসব বললে না? তোমার আমার প্রতি এতো যত্ন আমার ঠিক হজম হচ্ছেনা।কী কারনে এতো কিছু করছো আরশি?

ইশান ভালো করে কথাও বলতে পারছেনা গলা ধরে আসছে ঘনঘন চোখের পাতা ফেলছে।চোখ অসম্ভব লাল হয়ে গেছে।হাত পাও কেমন কাঁপছে। ইশানের কথা শুনে আরশি একটু দূরে সরে গেলো সত্যিই তো সে কেনো ইশানের এতো টেক কেয়ার করছে ইশান অসুস্থ ওর তো খুশি হওয়ার কথা। তাহলে কী আরশি এবার ইশানের প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু এত তারাতাড়ি কী করে।পরশু অব্দি ওতো নিজের বয়ফ্রেন্ডকে সে মনেপ্রানে চাইতো, তার দেওয়া ধোকাটা আরশির মনে এতোটাই প্রভাব ফেলল যে একনিমিষে অন্যরকম হয়ে গেলো।আরশি চোখের কোনায় থাকা জলটা মুছে বলল,,,,

—-আপনি যা ভাবছেন সেসব কিচ্ছুই না।আপনি অসুস্থ তাই আপনাকে এতো টেক কেয়ার করছি।পরে তো মানুষ বলবে যে স্ত্রী আছে তবুও কেন স্বামীর এমন অবস্থা।

—-তাহলে তুমি মানছো তুমি আমার স্ত্রী?

—-আব আমি মানলে কী আর না মানলেই কী? তিনবার কবুল বললেই তো দুটি মানুষ পর থেকে স্বামী স্ত্রী হয়ে যায় আইন আর ধর্মগ্রন্থও ঠিক সেটাই বলে। তাই আমার মানা না মানাটা কিছুইনা।

—-আমি বাড়ি ফিরবো।

—-সে কী এখন তো রাত বারোটা বাজে আপনি এতো রাতে বাসায় ফিরবেন মানে কী?

—-তোমাকে এতো ভাবতে কে বলেছে? আমি যখন বলেছি আমি বাড়ি ফিরব মানে ফিরবই।

—-আপনার কাছে আমি হাতজোড় করছি দয়াকরে অধৈর্য্য হবেননা।কাল সকালে আমরা চলে যাব আপনার বাসায় দয়াকরে আজ রাতটুকু আমাদের বাসায় কাটিয়ে নিন।

—-তোমার কথা মানতে যাব কেনো?

—–আমার কথা মানতে হবেনা যদি আপনি আমাকে কখনো ভালোবেসে থাকেন তাহলে সেই ভালোবাসার দোহাই আপনি যাবেননা।আপনার শরীরের অবস্থা ভালো নেই।ভালো করে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারেননা আপনি বাসায় যাবেন কী করে?।

আরশি ওর হাতে থাকা গ্লাস আর ঔষধগুলো ইশানের পাশে রেখে দূরে সরে দলো।

—-আপনি তো আমার হাতের জলও খাবেননা তাই দয়া করে ঔষধগুলো খেয়ে নিন।

ইশান ঔষধ মুখে দিয়ে পানি খেতে যাবে তার আগেই গ্লাসটা হাত থেকে পরে ভেঙে গেলো। আরশি ভাঙা গ্লাসের দিকে না তাকিয়ে ইশানকে ধরতে এসে ওর পায়ে কাঁচ বিধে গেলো।কিন্তু শব্দ করলো না ঠোঁট কামড়ে ব্যথা সহ্য করে নিলো।ইশান আরশির হাত ওর কাঁধ থেকে ঝাড়া দিয়ে ফেলে একটু দূরে সরে গেলো।
আরশিও আর ইশানকে না ধরে ফ্লোর থেকে কাঁচ তুলতে লাগলো।কাঁচগুলো তুলে জানালা দিয়ে ফেলে দেওয়ার সময় ইশানের চোখ পরলো ফ্লোরে থাকা ছুপছুপ রক্তের দিকে। সে আরশির দিকে বিষ্ময়ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। আরশি ব্যাপারটা বুঝে চোখ নামিয়ে নিলো।

—-এখন কী তুমি আমাকে পা কেটে ইম্প্রেস করতে চাইছো?

—-মানে???

—-তোমাকে কে বলেছিলো পা কেটে আমাকে এসে ধরতে।যাও পা ক্লিন করো এসো।

আরশি পায়ের পাতা একটু তুলে তুলে রুম ছেড়ে চলে গেলো।আরশি চলে যাওয়ার পর ইশানের চোখ পরলো একটা সুন্দর করে আর্টিস্ট করা পেপারের দিকে সেখানে সুন্দর করে লিখা,,,,,,

আগমনীর সুর বেজে উঠেছে,
সাদা কাশফুল উড়ছে আকাশে।
মনটা খুঁজে তোমার ছোঁয়া,
এই শরৎ এর আশ্বিন মাসে।

আরশির লিখা ছন্দ দেখে ইশান একটু মুচকি হাসলো। তবে বেশি সময় লেখাটার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলোনা চোখ বন্ধ করে নিলো।

সকাল হতেই ইশান বাড়ি ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে গেলো।আরশির মা বাবা ওকে অনেক বুঝিয়েছেন যাতে অসুখটা কমলে বাড়ি ফিরে কিন্তু না ইশান কারো কথা শুনবে না সে লাগেজ পত্র সব সকালেই গুছিয়ে নিয়েছে।আরশির পায়েও ব্যান্ডেজ করা।সে আরও দুইদিন থাকতে চাইছিলো বাপের বাড়ি কিন্তু ইশানের জেদের কাছে হার মেনে তাকেও ইশানের সাথে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।

বাড়ি ফেরার পর ইশান ভালোই ছিলো সবার সাথেই হেঁসে হেঁসে কথা বলেছে একসাথে খাবার খেয়েছে কিন্তু রাত হতেই তার জ্বর আরও বেড়ে গেলো।আরশির ভিষন ভয় লাগছে ইশানের মা থাকে কী বলেন সেটা ভেবে। পাতিলে চিনি দিতেও তার হাত কাঁপছে। এতো রাতে আরশিকে রান্নাঘরে দেখে ইশানের মা কিছুটা অবাক হলেন।

—-একি আরশি তুমি এতো রাতে কিচেনে কী করছো?

—-আসলে মা আপনার ছেলে একটু অসুস্থ তাই তার জন্য চা করে নিয়ে যাচ্ছিলাম।

—-অসুস্থ মানে কী হয়েছে ওর।?

ইশানের মা আরশিকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বড় বড় কদমে ইশানের রুমে চলে গেলেন। ইশান তখন চোখ বন্ধ করে আছে।মাথায় কারও ছোঁয়া পেয়ে আলতো করে চোখ খুলল সে।

—-মা তুমি এতো রাতে?

—-আরশি বলল তুমি নাকী অসুস্থ। একি তোমার গা দেখছি পুড়ে যাচ্ছে সন্ধ্যা বেলায় ওতো ঠিক ছিলে তাহলে এখন এতো জ্বর কীভাবে এলো।

আরশি রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,,,,

—-মা ওর রাত হলে জ্বর বেড়ে যায়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনা।

—-রাত হলে জ্বর বেড়ে যায় মানে কতদিন ধরে ওর জ্বর।

—-তিনদিন ধরে।

—-কীহ কিন্তু দিনে ভালো রাতে জ্বর এটাতো খারাপ লক্ষন।অতি মাত্রায় ডিপ্রেশনে থাকলে এই জ্বরটা এসে দেখা দেয়।আমার ছেলে কী নিয়ে এতো ডিপ্রেশনে ছিলো হুম?নিশ্চিয় তুমি আমার ছেলে কে কিছু বলেছো?

—-না মা ও আমায় কিছু বলেনি।

—-তুমি চুপ করো।

ইশানের মা আঁচল দিয়ে উনার চোখ মুছে রুমে ছেড়ে বেড়িয়ে গেলেন।
আরশি ইশানের সামনে চায়ের কাপ ধরে বলল,,,

—-এই নিন আপনার চা।

এই মুহুর্তে ইশানের চা খেতে মন চাইছে তাই সে না করেনি।

রাত একটা বাজে ইশান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আরশি সোফায় বসে বসে উপন্যাস পড়ছে।হঠাৎ ইশানকে ওর নাম ধরে ডাক দিতে দেখে সে ইশানের কাছে গিয়ে ওর মুখের কাছে একটু ঝোকে বলল,,,

—-কিছু বলবেন?

—-আরশি আমার ভিষন শীত করছে।

কথাটা বলেই ইশান আরশির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।ইশানের মুখের গরম শ্বাস আর তাপে আরশির মুখ পুড়ে যাচ্ছে বলতে গেলে, সে একহাত দিয়ে টেলে ইশানকে দূরে সরিয়ে দিলো।

—-আপনি হুঁশে নেই তাই আামকে কাছে পেতে চাইছেন।পরে দেখা যাবে সকালে আপনিই আমাকে বকাঝকা করছেন।

আরশির কথা বালর মাঝেই ওর ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রিনে তুর্ব নামটা জ্বলজ্বল করছে।এতো রাতে তুর্বর ফোন দেখে আরশি ভিষণ রেগে গেলো। ইশানও ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। ইশানের চাহনি দেখে আরশির অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো।সে ফোনটা কেটে দিতে যাবে তার আগেই ইশান ওকে বলল যেন কলটা না কেটে রিসিভ করে আর ফুল স্পিকার দেয়।

চলবে,,,,,