কিছু জোড়াশালিকের গল্প পর্ব-২৯

0
414

গল্পের নাম : #কিছু_জোড়াশালিকের_গল্প
পর্ব ২৯ : (প্রথম অংশ)
লেখিকা : #Lucky_Nova(কপি নিষেধ)

নীল ওর মুখের অবস্থা দেখে হেসে ফেললো। ভ্রু উঁচিয়ে নামিয়ে ফিচেল গলায় বলল, “এখন!”

ত্রয়ী বেজার বিপদে পড়লো। নীল যে এভাবে ধোকাবাজি করবে বুঝতেই পারেনি ও। মুখটা আরক্তিম হলো ওর। অস্থির দৃষ্টিতে এদিকে ওদিকে তাকাতে তাকাতে মুখটা নুয়ে ফেললো।
নীল ওর কাছে এসে দাঁড়ালো।
ভেতরে ভেতরে শিহরিত হলো ত্রয়ী। মিনমিন করে বলে উঠলো, “খারাপ আপনি!”
নীল হাসলো। ত্রয়ীর দিকে সামান্য ঝুঁকে গিয়ে বলল, “তাই? আমি তো জানাতামই না!”

ত্রয়ী লাজে, কপট রাগে চোখ মুখ কুচকে ফেললো। লোকটার সাথে কথায় পারা যায় না!

নীল ওর দুই গালে হাত রেখে মুখটা তুলে ধরলো।
ত্রয়ী চমকালো। বড়ো বড়ো চোখ মেলে একপলক তাকাতে নীলের গভীর চোখের চাহনিতে শিউরে উঠলো। তাড়াহুড়ো করে তাকে ঠেলেঠুলে সরিয়ে দিতে দিতে বলল, “আমি ফ্রেশ হবো। যান আপনি।”

বলতে দেরি মেয়েটার হাতের নাগালের বাহিরে যেতে দেরি হলো না। ঝটপট ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো সে।

কিছু সময়ের জন্য হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো নীল। তবে পর মুহূর্তেই হেসে ফেললো সে।

🌸
একে তো কালো শিফন শাড়ি, তার উপর স্লিভ আর ব্যাকলেস ব্লাউজ। এই জিনিস পরে ও যদি সত্যি সত্যি সারা অফিস ঘুরে বেড়ায় তাহলে ইভান যে রেগে গিয়ে ওকে কাচা চিবিয়ে খাবে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই ক্যান্ডেলের। এজন্যই শালটা গায়ে জড়ানো!
যতো নাটক, তার কেবিনেই নাহয় চলুক।

ইভানের কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চিপে ক্যান্ডেল হাসলো কিছুক্ষণ। মুখটায় সিরিয়াস ভাব আনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করলো তারপর। তবুও কেন জানি খুব হাসি পাচ্ছে ওর। কিন্তু কেবিনে ঢোকার পর একদম হাসা চলবে না। তাহলে জব্দ করা হবে না।

ক্যান্ডেল মুখ ফুলিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। নিজেকে সামলে নিয়ে নক দিলো দরজায়।
ভেতর থেকে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির গলার আওয়াজ পাওয়া গেল সাথে সাথেই। ভেতরে আসতে অনুমতি পেতেই গায়ের শালটা খুলে ফেললো ক্যান্ডেল।

পাশের রিসিপশনের মেয়েটা হা হয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না ক্যান্ডেল। মেয়েটার টেবিলের উপর শালটা রেখে বাদামিরাঙা চুলগুলো গলার পাশ থেকে সরিয়ে পিছনে ঠেলে দিলো। ফাইলগুলো নিয়ে দরজার নব ঘুরিয়ে ঢুকলো ভেতরে।

ইভান ফাইলের কাজে ব্যস্ত ছিল। একটু আগে যাকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, চোখ তুলে একপলক তার দিকে তাকিয়ে পুনরায় ফাইলে নজর দিলো।

তবে অনুপলেই থমকালো। ভ্রু খুব করে কুচকে গেল তার। আনমনা মস্তিষ্ক সচল হতেই ঝট করে ফাইল থেকে চোখ তুলে তাকালো সামনের রমনীর দিকে।

ক্যান্ডেল ততক্ষণে দরজা আটকে সরাসরি ইভানের টেবিলের কাছে এগিয়ে এসেছে। এতটুকু সময়ে সে মোটেও তাকায় নি ইভানের দিকে। কারণ তাকালেই হেসে ফেলবে ও। এমনিই এখন অনেক কষ্টে হাসি ধরে রেখেছে। কারণ না তাকিয়েও সে দিব্যি বুঝতে পারছে লোকটা ওর দিকে চোখ মুখ কুচকে তাকিয়ে আছে।

ক্যান্ডেল ফাইলগুলো রাখলো স্বাভাবিক ভাবে। ইভানের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল, “সব কমপ্লিট। রিচেক করাও হয়ে গেছে।”

ইভান ফাইল প্রসঙ্গের ধার কাছ দিয়েও গেল না। চোয়াল শক্ত করে ক্ষুদ্ধ মেজাজে সরাসরি জিজ্ঞেস করলো, “এসব কখন পরেছ তুমি? আর কেন পরেছ? তোমাকে আমি মানা করেছি না কোনো রকম উলটা পালটা জিনিস পরতে?”

ইভানের থমথমে গলায় স্বরই ঝড়ের পূর্বাভাস জানাচ্ছে। তবে তাতে ক্যান্ডেল একদম চমকালো না, বিচলিত হলো না। বরং মনে মনে খুশি হলো খুব। জমপেশ হেসেও নিলো একগাল। অদৃশ্য এক আত্মতুষ্টির হাসি। যা কারোর নজরে পড়বে না।

তারপর খুব শান্ত চোখে ইভানের দিকে তাকালো। ইভানের মাত্র বলা কথাটা যেন সে কানেই শোনে নি তেমন ভান ধরলো।
হালকা হেসে বলল, “আর কিছু তো মনে হয় করতে হবে না! আমি আসি তাহলে?”

বলে ইভানের প্রতিউত্তরের অপেক্ষা না করেই বের হবার উদ্দেশ্য পা বাড়াতে চাইলো ক্যান্ডেল। কিন্তু তার আগেই ইভান ঝাঁঝালো স্বরে বলে উঠলো, “Stop there, Kendel!”

ক্যান্ডেল থেমে দাঁড়ালো। ঠোঁটের হাসি প্রশস্ত হলো ওর। কারণ ও যেমন চাচ্ছিলো সব তেমনই হচ্ছে।

ইভান নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে গেল ক্যান্ডেলে কাছে। ক্যান্ডেলের এক হাতের বাহু চেপে ধরে নিজের পানে ঘুরিয়ে তপ্ত গলায় বলল, “আমার কথা কানে যাচ্ছে না তোমার? কেন পরেছ এসব?”

ক্যান্ডেল একটু চমকালো। তবে সবচেয়ে বেশি অবাক হলো। কারণ আজ প্রথমবারের মতো ইভানকে প্রকাশ্যে এতটা রেগে যেতে দেখলো ও। এর আগে এতটা রাগতে দেখে নি। প্রতিবারই রেগে গেলে ঠান্ডাভাবেই জবাব দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়েছে।

কিন্তু আজ!

ভাবা যায় এই লোক কিনা ঘণ্টা কয়েক আগে ‘তাকে চেনেই না’ ধরনের ভাব নিচ্ছিলো! এখন কোথায় গেল সেই ভাব!
তবে যতো যাই হোক, ক্যান্ডেল একটু হলেও প্রতিশোধ তো নিয়েই ছাড়বে!
এজন্যই একদমই আকাশ থেকে পড়ার মতো করে বলল, “মানে?”

ওর এই ধরনের হেয়ালিপনাতে রাগ দ্বিগুণ হারে বাড়লো ইভানের। সে দাঁত কিড়মিড় করে হাতের চাপ দৃঢ় করতেই আঁতকে উঠলো ক্যান্ডেল। ভ্রুকুটি করে হাতের উপর হাত রেখে বলল, “আহ্! ছাড়ো, লাগছে!”

“এসব কেন পরেছ?” তপ্ত কণ্ঠের এক প্রশ্ন তার। চোখের দৃষ্টি অস্বাভাবিক কঠিন হয়ে এসেছে।

ক্যান্ডেল নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করতে করতে তিরিক্ষি মেজাজে বলল, “অদ্ভুত তো! আমি খারাপ কিছু পরেছি বলে তো আমার মনে হয় না। তাছাড়া তুমি বলার কে? আমি কি তোমার কেউ হই?”
শেষ কথাটা একটু বিদ্রুপ করেই বললো ক্যান্ডেল। চোখমুখেও কেমন একটা জব্দ করতে পারার জৌলুসতা।

ইভান সব আন্দাজ করতে পারলো এবার। হাতটা আরো চেপে ধরে তীব্র আক্রোশ নিয়ে বলল, “এই কারণে পরেছ? আমি মানা করার পরও!”

ক্যান্ডেল আর নাটক চালু রাখতে পারলো না। হাতটা জ্বলে যাচ্ছে রীতিমতো। অতিরিক্ত রেগে গেছে লোকটা। আরো রাগাতে গেলে কিনা হাত পা-ই গুড়োগুড়ো করে দেয়। তাই বলল, “আমার ড্রেসে কফি পরেছিল, তাই…তাই পরেছি। ছাড়ো!”

ডাহা মিথ্যা কথা। তাও কিছু একটা বলে তো কাটাতে হবে।
তবে এই মিথ্যা দিয়ে ভুলানো গেল না ইভানকে। শক্ত গলায় সে বলে উঠলো, “আর এজন্য তুমি এসব চিপ জিনিস পরেছ? ভালো কিছু ছিল না?”

ক্যান্ডেলের একবার মনে হলো বলে যে এটার দাম আট হাজার। এটা মোটেও চিপ না।
কিন্তু বলল না। হাত যথেষ্ট টনটন করছে। আপাতত এই অব্দিই থাক!
আর বাকি শোধ তো তুলে রাখা আছেই। শ্বশুর বাড়ি চলো একবার বুঝবে মজা!

“আর জীবনেও পরবো না। ছাড়ো।” নিভানো গলায় বলল ক্যান্ডেল। একপলক তাকালোও ইভানের দিকে।
ইভান গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। চোখাচোখি হতেই কাটকাট গলায় বলল, “সেকেন্ড টাইম আমি তোমাকে ছেড়ে দেব না। মনে রেখো!”

ক্যান্ডেল মনে মনে ভেংচি কাটলো। কিন্তু মুখে নিশ্চুপ রইলো।

হাত ছাড়লো ইভান। সাথে সাথেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো ক্যান্ডেল। অন্যহাত দিয়ে বাহুতে হাত বুলিয়ে নিতে নিতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকালো। আর সেই মুহূর্তেই চমকে উঠলো।
তাকে অনাহাসেই নিজের গায়ের কোটটা খুলে ফেলতে দেখে কেঁপে উঠলো পুরোদস্তুর।
“তু..তুমি..!” জড়ানো গলায় কিছু বলার চেষ্টা করে উল্টো দিকে ঘুরে এখান থেকে বের হবার চেষ্টা করলো।
কিন্তু তার আগেই ওর হাত টেনে ধরলো ইভান। ক্যান্ডেল শিউরে উঠে তাকালো। নিমিষেই লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো ক্যান্ডেল। যা দেখে ভ্রু সংকুচিত করলো ইভান।

নিজের কোটটা ক্যান্ডেলের গায়ে পরাতে পরাতে বলল, “Don’t give me that look! আমি জানি এটা আমাদের বেডরুম না।”

ক্যান্ডেল হতবিহ্বল হয়ে পড়লো। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকাতেই সে পুনরায় বলল, “পাঁচ মিনিটের মধ্যে চেঞ্জ করে আসবা। আর তার আগ অব্দি এই কোটটা যেন গা থেকে না সরে।”

গল্পের নাম : কিছু_জোড়াশালিকের_গল্প
পর্ব ২৯ : (দ্বিতীয় অংশ)
লেখিকা : Lucky_Nova(কপি নিষেধ)

বউভাতের পরে শ্বশুরবাড়ি যাবার রীতি আছে বলে আজ এবাড়িতে আসার কথা ছিল। যদিও ইভান শুক্রবার আসতে চেয়েছিল। কারণ পুরাতন প্রজেক্টের অনেক কাজ বাকি পড়ে আছে। তার উপর নতুন একটা প্রজেক্টও হাতে এসেছে।
কিন্তু ক্যান্ডেল আজই আসবে বলে হম্বিতম্বি করায় অফিসের পরেই চলে আসতে হলো।
ক্যান্ডেল ওর আগেই এসে পড়েছিল অবশ্য। আর ইভানের কাজ থাকায় ওর থেকে ঘণ্টা দুয়েক পরে এসেছে সে। আর এসে থেকেই ক্যান্ডেলের কেমন অদ্ভুত ব্যবহার লক্ষ্য করে চলেছে।
অন্যদের সাথে গল্প করতে ব্যস্ত হলেও মাঝে মাঝে বাঁকালো চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।

মেয়েটা যে নতুন করে আবার কি তালগোল পাকাতে চাইছে তা এই মুহূর্তে ঠিক আন্দাজ করতে পারছে না ইভান। তবে খুব সন্দিহান হয়ে আছে। কিছু তো অবশ্যই চলছে ওর মাথায়! আর তা যে ওর জন্য খুব সুবিধার হবেনা সেটা ভালোই বুঝতে পারছে।

ইভানের ধারণা ঠিক প্রমানিত হলো রাতের বেলা।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে ক্যান্ডেলের রুমে ঢুকলো ইভান। এতসময় পর একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়লো যেন। অচেনা মানুষদের ভিড়ে বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল খুব। তার উপর তথাকথিত বয়স্ক আত্মীয়দের ‘বাচ্চাকাচ্চা কবে নিবা’ টাইপের চ্যাঁ চ্যাঁ শুনতে বিরক্ত লাগছিল।
কে কবে বাচ্চা নিবে না নিবে সেটা দিয়ে তাদের এতো মাথাব্যথা কেন! Ridiculous!

ইভান মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ফেলে সামনে তাকালো। বিছানার উপরে চুপচাপ ভঙ্গিতে বসে থাকা তিন চার বছরের একটা ছোটো বাচ্চার উপর চোখ পড়লো তখনি।
বাচ্চা মেয়েটা ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। তাই চোখাচোখি হতেই হাসলো একগাল। মুক্তোর মতো ঝরঝরে পরিষ্কার হাসি।
ইভান অবাক হলো। প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণ এলিয়ে কিঞ্চিৎ হাসলো। সন্দিহান হাসি।
মেয়েটাকে ইভান চেনে৷ ওর নাম অবন্তী। ক্যান্ডেলের ছোটো মামার মেয়ে।
তবে একটু আগ পর্যন্তও যার দুর্দান্ত চাঞ্চল্য দেখে এসেছে, তার এমন চুপচাপ বসে থাকাটা কেমন যেন বেমানান! তার উপর মেয়েটা একা একা এখানে বসে কী করছে?

ইভান চোখ বুলিয়ে নিলো সম্পূর্ণ ঘরটাতে।
নাহ্! কেউ-ই তো নেই। তাহলে!

ইভান ফের ওর দিকে তাকালো। একটু হেসে ভ্রু উঁচিয়ে নামিয়ে অবন্তীর উদ্দেশ্যে বলল, “তুমি এখানে?”

“হুম।” মাথা দুলিয়ে বলল অবন্তী। মুখ জুড়ে এখনো উজ্জ্বল হাসি, “আমি আজ এখানে ঘুমাবো। তোমাদের কাছে। ঠিকাছে?”

মেয়েটার প্রশ্ন করার ধরণ দেখে ইভানের সীমিত হাসিটা প্রশস্ত হয়ে অধরে ছড়িয়ে পড়লো। হাতঘড়িটা খুলতে খুলতে নমনীয় স্বরে বলল, “ঠিকাছে।”

অবন্তী খুশি হয়ে গেল। চোখের তারায় খুশির ঝলক দেখা দিলো। তবে হঠাৎই হাসিটা একটু কমিয়ে নিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে প্রশ্ন করলো, “তাহলে মা কেন বলল এখানে ঘুমানো যাবে না?”

ইভান সাথে সাথেই উত্তর দিলো না। মুচকি হাসলো। হাতঘড়িটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে বলল, “আমি তো বললাম যাবে।”

আনন্দিত হাসির ঝলকে চোখদুটো বুজে এলো অবন্তীর। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল, “সত্যি!”

“Yeah.”
“তাহলে কি আমি অনেক চকলেট পাবো?”

অবন্তীর প্রশ্নটা ইভান ঠিক বুঝলো না। তবুও বাচ্চা মানুষ চকলেট চাচ্ছে ভেবে কোমরে হাত রেখে বলল, “এখন আপাতত আমার কাছে নেই। কাল এনে দেই?”

“দিদি তো আজকেই দেবে আমাকে! বলেছে, আজ এখানে ঘুমালে এত্ত এত্ত চকলেট দেবে।” দুই হাত মেলে দেখালো অবন্তী।

অবন্তীর কথায় ইভানের হাসিটা প্রশ্নসূচক হয়ে উঠলো। মৃদু কুঞ্চিত হলো ভ্রু দুটো।
“এখানে ঘুমালে?”
“হ্যাঁ। অনেক গুলো দেবে।” মাথা নেড়ে বলল অবন্তী।

ইভান অবাক হলো। এখানে ঘুমানোর জন্য ক্যান্ডেল অবন্তীকে চকলেট দেবে কেন?

মনের ভেতর প্রশ্ন জাগতে দেরি কিন্তু উত্তরটা পেতে দেরি হলো না। কারণ ঠিক সেই মুহূর্তেই ওয়াশরুম থেকে বের হলো ক্যান্ডেল।
অবন্তী তাকালো।
‘খট’ করে দরজা খোলার আওয়াজে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো ইভানও। আর তাকানোর সাথে সাথেই দ্বিতীয়বারের মতো থমকালো। ঠোঁটের হাসিটা মিলিয়ে গেল আস্তে আস্তে। বিস্ময় খেলে গেল চোখমুখে। ক্যান্ডেলের আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে ভ্রু বাঁকিয়ে ফেললো ও।
ফর্সা শরীরে গাঢ় কালো বর্ণের পাতলা শাড়ি জড়ানো ক্যান্ডেলের। হাতাবিহীন ব্লাউজের পিঠের প্রায় সম্পূর্ণ অংশই উন্মুক্ত।
ভুল না হলে এটাই সেই শাড়ি যেটা অফিসেও পরেছিল সে। ওকে জ্বালানোর জন্য।
কিন্তু এখন এটা পরার মানে কী!

ক্যান্ডেল ততক্ষণে ইভানের দিকে পিঠ ফিরিয়ে দাঁড়িয়েছে।
সামনের ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ইভানের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে ব্লাউজের ফিতেগুলো দেখিয়ে ও বলল, “এটা একটু বেঁধে দেও।”

ইভান বিহ্বলিত হয়ে কপাল কুচকে ফেললো। সংকুচিত চোখে সরাসরি তাকালো ক্যান্ডেলের চোখের দিকে।
ক্যান্ডেল খুব স্বাভাবিক। সে তাড়া দিয়ে বলল, “কই? জলদি!”

ইভানের মুখটা গম্ভীর হলো। সে চোখ ঘুরিয়ে একপলক তাকালো অবন্তীর দিকে। সে খুব বিস্ময় নিয়ে ক্যান্ডেলের দিকে তাকিয়ে আছে। থেকে থেকে বিস্ময়ে মুখটা হা হয়ে যাচ্ছে তার।

“আমি হাতে পাচ্ছি না তো!” বিরক্ত হবার ভান ধরে বলল ক্যান্ডেল।
ইভান শক্ত চোখে ফিরে তাকালো আয়নায়। ক্যান্ডেলের দিকে।
ক্যান্ডেল ভয় তো পেল না, বরং মিচকি মিচকি হাসতে লাগলো। চুলগুলো হাতখোপা করতে করতে আরেকবার বলল, “কি হলো! বাঁধো!”

ইভান টানটান চাহনিতে চাইলো। অগত্যা পিছন থেকে ক্যান্ডেলের কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো।
প্রায় সাথে সাথেই মিষ্টি একটা ঘ্রাণ নাকে এসে লাগলো ওর। শরীরে শিহরণ বয়ে গেল।
মেয়েটার অপার্থিব, চোখ ধাধানো সৌন্দর্যে খুব আকর্ষণ অনুভূত হলো হঠাৎই। একরাশ মাদকতা এসে ভিড় করলো মন, মস্তিষ্কে। কাছে পাওয়ার অভিপ্রায় তীব্র হলো।

তবুও নিজেকে শান্ত করলো ইভান। মনের অভিপ্রায়কে জোরপূর্বক ধামাচাপা দিলো। কারণ পিছনেই বিছানার উপরে পিচ্চি মেয়েটা বসে আছে। যার জন্য এতোসব ভদ্রতা বজায় রাখা!

ইভান চোখ নামিয়ে ফিতেটা বাঁধতে বাঁধতে নিচু তবে গাঢ় কণ্ঠে বলল, “এসব কেন পরেছ তুমি?”

“কেন? বেডরুমে নাকি সবই allowed!” অবাক হবার ভান ধরলো ক্যান্ডেল।
তবে কথাটা যে ঠেস মেরে বলল তা বুঝতে পারলো ইভান।
হাত থেমে গেল কয়েক মুহূর্তের নিমিত্ত। অবাক হয়ে চোখ তুলে তাকালো আয়নায়।
ক্যান্ডেলের ক্ষীণ বাঁকালো হাসি দেখে এবার সবকিছু বুঝতে পারলো ও।
অবন্তীকে চকলেটের লোভ দিয়ে এখানে রাখা আর সাথে এমন শাড়ি পরা!
তারমানে এসবের পরিকল্পনাই করেছিলো সে সারাটা সন্ধ্যা বসে!

“সারা রাত ফিতেই বাঁধবে?” ভ্রু উঁচিয়ে নামালো ক্যান্ডেল।
ইভান পলক ঝাপটালো। ধাতস্থ হতে দৃষ্টি সরিয়ে ফিতে বাঁধায় মনোযোগ দিলো। ঠোঁট এলিয়ে স্বগতোক্তি করে বলল, “আমাকে জ্বালাতে চাচ্ছো!”

“Why? Are you burning?” ঠোঁটের কোণের হাসিটা প্রসারিত হলো ক্যান্ডেলের।

ইভান আরেকবার তাকালো আয়নায়।
মুচকি হেসে বলল, “এতো বুদ্ধি এসব কাজে না লাগিয়ে প্রজেক্টের কাজে খাটালে আমরা অনেক উন্নতি করতে পারতাম।”

ক্যান্ডেল ইভানের কথা গায়ে লাগালো না। কারণ এই তো সবে শুরু! আজ সে শুধু দেখবে আর জ্বলবে, কিন্তু ছুঁতে পারবে না।

সে ঘুরে তাকালো অবন্তীর দিকে। চোখাচোখি হতেই অবন্তী ঝলমলে হেসে বলল, “তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।”
ক্যান্ডেল মুচকি হাসলো। অবন্তীর পাশে গিয়ে বসে বলল, “Thank you.”
“Welcome.”
“আজ আমরা সারারাত গল্প করবো ঠিকাছে?” অবন্তীকে বলে ক্যান্ডেল ইভানের দিকে তাকালো।

গল্পের নাম : কিছু_জোড়াশালিকের_গল্প
পর্ব ২৯ : (তৃতীয় অংশ)
লেখিকা : Lucky_Nova(কপি নিষেধ)

ইভান ওর ঠোঁটের দুষ্টুমির হাসি আর চাহনি দেখে যা বোঝার বুঝে গেল। তাই ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে গিয়ে এক পাশের চেয়ারে থাকা তোয়ালেটা হাতে নিলো। এখনকার মতো ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়াই ভালো। পরের হিসেব পরে বোঝা যাবে।

ইভান তোয়ালেটা হাতে নিতে না নিতেই সেটা টেনে ধরলো ক্যান্ডেল।
অবাক হলো ইভান। ভ্রু কুচকে ক্যান্ডেলের দিকে তাকাতেই সে শঠভাবে বলল, “এটা আমার তোয়ালে।”
“তো?”
” ‘তো’ মানে! আমার তোয়ালে লাগবে আমার। নিজেরটা নিয়ে ফ্রেশ হও, যাও!” ধূর্ত ভঙ্গিতে বলে মুচকি হাসলো ক্যান্ডেল।

ভ্রু সোজা হলো ইভানের। মেয়েটা যে আজ সবকিছুর জন্য মেপে মেপে প্রতিশোধ নিতে বসেছে তা ভালো মতো বুঝলো হয়তো।

তবুও সুক্ষ্ম হাসলো। এক পা এগিয়ে এসে ক্যান্ডেলের চোখে চোখ রেখে বলল, “এক মাঘে শীত যায় না, জানো?”
ক্যান্ডেল মোটেও বিচলিত হলো না। ঠোঁটের হাসিটা ধরে রেখে ডান হাতের তর্জনী ইভানের বুকে ঠেস দিলো। পালটা জবাবে বলল, “কিন্তু আপাতত আগামী সাতদিন আমার জন্য পৌষমাস, আর তোমার সর্বনাশ!”

ইভানের দৃষ্টি প্রশ্নসূচক হয়ে উঠলো। ভাঁজ পড়লো কপালে।
ক্যান্ডেল ওর দৃষ্টিতে থাকা প্রশ্নটা হয়তো পড়ে ফেললো। তাই সহজ গলায় উত্তর করলো, “সাতদিন আমরা এখানেই থাকছি।” বলে তোয়ালেটা ইভানের হাত থেকে নিয়ে নিলো ক্যান্ডেল।

ইভান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিজের হাতের দিকে একবার তাকিয়ে আবার ক্যান্ডেলের দিকে তাকালো। ক্যান্ডেল ওর কানের কাছে মুখ এগিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, “তোমার জামাকাপড় খুঁজে পাচ্ছিনা। তবে ওইযে আলমারিটা! ওখানে লুঙ্গি আর ট্রান্সপারেন্ট ফতুয়া আছে৷ সেটা পরতে পারো, I Won’t mind!
তবে অবন্তী না থাকলে বলতাম, কিছুই পরার দরকার নেই, আমি আর তুমিই তো!”

বলেই চোখ টিপ মেরে ফিচেল ভাবে একগাল হাসলো ক্যান্ডেল।
ভ্রু কুচকে ফেললো ইভান। গম্ভীর মুখখানায় গমগমে ভাবটা বাড়লো।
তবে এতে ক্যান্ডেলের হাসি বৈ আর কিছু পেল না!
অবশেষে ওকে জব্দ করার ইচ্ছেটা মনমতো পূরণ হচ্ছে বলে কথা!

🌼
নীল থেকে থেকে অধৈর্য হয়ে উঠছে। না শান্তিতে বসতে পারছে, আর না পায়চারি করে স্বস্তি পাচ্ছে। একটু পর পর রান্নাঘরে কাছে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে।
ত্রয়ীকে সে কখন থেকে রুমে আসতে বলছে কিন্তু মেয়েটার কোনো হদিসই নেই। সে এখনো ওই রান্নাঘরেই আছে। তার দাদীর সাথে। এতো কি করছে কে জানে!

আর তার দাদীও তো আরেকজন! রান্নাবান্না শেখানোর আর সময় পায় নি! এখনই তার শিখাতে হচ্ছে!
আচ্ছা ঠিক আছে, ত্রয়ী গাজরের হালুয়ার বানাতে জানেনা, তাই শিখতে চেয়েছে। তাই বলে আজই কেন শিখাতে হবে! এক বছর পরেও তো শিখানো যেত, তাইনা!

বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেললো নীল। এমনিই তার এসব ভিটামিন-এ জাতীয় গাজর-কুমড়া অসহ্য লাগে। আর তার বউ কিনা ওসব শিখতে বসেছে! কে খাবে ওসব!

মেয়েটাকে সারাদিনের মধ্যে তো খুঁজে পাওয়া যায় না। এখন তো রাতের বেলাতেও পাওয়া যাচ্ছে না।
কোথায় সে ওর আশেপাশে থাকবে! তা না, হালুয়া নিয়ে পড়ে আছে!

নীল বিরক্ত হয়ে সোফায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলো। এর মধ্যে কয়েকবার রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে ঘড়িও দেখলো।

নাহ্! এই গাজরের হালুয়াতে এতো সময় কেন লাগছে!
ভারি অসহ্যকর তো!
ওর এখন ইচ্ছে করছে সরাসরি ত্রয়ীকে ধরে নিয়ে আসতে।
কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। দাদী রান্নাবান্না করতে খুব পছন্দ করে। আর এদিকে তার বউও হয়েছে তেমন। রান্নাবান্নার কাজে উৎসাহী। দু’জন রাধুনি এক জায়গায় হলে যা হয়, তাই-ই হচ্ছে আরকি!

তাছাড়া এভাবে গিয়ে তো নিয়েও আসা যায় না।

নীল অস্থির হয়ে পা নাড়াতে লাগলো। অধীর চোখে বারবার তাকাতে লাগলো রান্নাঘরের দিকে।

🌼
ত্রয়ীর খুব ভাব জমে গেছে নীলের দাদীর সাথে। এমনকি ওর খুব পছন্দ হয়েছে তাকে।
এইযে সারাটা সন্ধ্যা গল্প গুজবের পর এখন রান্নাও শিখছে তার থেকে। তিনি টুকিটাকি অনেককিছুই জানেন। এতোসময়ে তো সে বিষয় নিয়েও অনেক কথাও হয়ে গেল।

ত্রয়ী হালুয়ার পাশেপাশি ফুলকপির পাকোড়া করার জন্য ভাবলো। দাদীও বানাতে বললেন।
এটা অবশ্য ও নিজেই পারে। আর তাছাড়া নীল নাকি এই হালুয়া খাবে না। এজন্যই এটা বানানো।

ত্রয়ী ফুলকপিগুলো কেটে নিতে নিতে কুমদিনী বললেন, “বউ, তুমি একটু থাকো, আমি আসতাছি এখনি। একটু ফোন করা হয়নাই বাসায়।”
ত্রয়ী হাসিমুখে মাথা নেড়ে সায় দিতেই বেরিয়ে গেলেন তিনি।
বৃদ্ধা প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোন করেন নিজের স্বামীকে। গ্রামে হাঁস মুরগী পালন করার দরুন দুজনের একসাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়ে ওঠে না। হয় তিনি আসেন আর তার স্বামী গ্রামে থেকে যান। নাহয় তার স্বামী আসেন তিনি থেকে যান।

একারণেই হয়তো বেশিদিন বেড়ান না তিনি। মন টেকে না তার। কারণ বয়স যতই হোক না কেন ভালোবাসাটা ঠিক আগের মতোই আছে। প্রানবন্ত।

আচ্ছা সবারটাই কি এমন থাকে? তাহলে নীলের সাথে ওর ভালোবাসাটাও কি এমনই থাকবে?

হঠাৎ করে এমন লেকটার বিষয় মাথায় আসাতে নিজেই লজ্জা পেল ত্রয়ী। একটু আগে লোকটার করা বাচ্চামিগুলোও মনে পড়ে গেল।
সে সন্ধ্যার পর থেকে এ-অব্দি অনেকবার ওকে ইতিউতি করে ডেকে গেছে। কিন্তু ও যেতেই পারে নি।
যাবেও বা কী করে! এভাবে তো নির্লজ্জের মতো যাওয়া যায় না, তাইনা?

আর সেও আছে! একটু অপেক্ষা করতে কী হয়!

“পাগোল লোক একটা!” বিড়বিড়িয়ে স্বগতোক্তি করে উঠলো ত্রয়ী। অকারণেই একটা মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে পড়লো ঠোঁটে।
অতঃপর মুক্ত শ্বাস ফেলে ধাতস্থ হয়ে কাজে মন দিলো। কাটা ফুলকপি গুলো তুলে নিলো একটা বাটিতে। সেগুলো ধোয়ার উদ্দেশ্য ট্যাপের কাছে নিয়ে পানি ছাড়তেই পেছন থেকে পুরুষালি দু’টি হাত জড়িয়ে ধরলো ওকে।

ত্রয়ীর পীলে চমকে উঠলো। আচমকিত এমন স্পর্শে হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলো ও।

নীল প্রচন্ড হকচকিয়ে গেল। ত্রয়ী এভাবে চেঁচানোয় প্রায় সাথে সাথে ছেড়ে দিলো ওকে।
ত্রয়ী চকিতে ঘুরে তাকালো। বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে নীলকে দেখে খানিকটা হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো। বোকা বনে গেল একদম।

নীল বিস্মিত চোখ সংকুচিত করতেই ত্রয়ী হম্বিতম্বি করে চোখ নামালো।
বুঝলো বোকার মতো আঁতকে ওঠা উচিত হয়নি।

আর নীল এভাবে জড়িয়ে ধরবে ও বুঝতেই পারেনি। কখন এলো লোকটা! আর এভাবে না বলে কেউ ধরে! ভয়ই পেয়ে গেছিলো ও৷ এজন্যই তো ভুলবসত চেঁচিয়ে ফেলেছে! কেউ শুনেছে কিনা কে জানে!

ত্রয়ী অস্ফুটে ‘আমি আসলে..!’ বলে কিছু বলার আগেই কুমুদিনী হাইহুঁই করে দ্রুত পদে ঢুকলেন রান্নাঘরে। তার পিছে পিছে নীলেও মাও ঢুকলেন।

ত্রয়ী, নীল উভয়েই খানিক ভ্যাবাচেকা খেয়ে দু’জনের থেকে আরেকটু সরে গেল।

“বউ, হাত পুড়াইলা নাকি..!” বলে শশব্যস্ত হয়ে ত্রয়ীর দিকে এগিয়ে গেলেন কুমুদিনী। তবে কাছে এসে ভালোমতো দেখে নিয়ে তেমন কিছুই পেল না বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
বাসন্তীও আশ্বাস্ত হলেন।
দু’জনেই ত্রয়ীর চিৎকারে ভয়ে পেয়ে গিয়েছিলেন অনেক। ভেবেছিলেন মেয়েটা কিনা হাতটাত পুড়িয়ে ফেলেছে!

“কিছুই তো হয়নাই! ওমন চিল্লানি দিলা কেন?” ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি।

ত্রয়ী থতমত খেলো। বেজার পরিস্থিতিতে পড়লো মনে হলো। নাক মুখ ঘেমে উঠলো ওর। কী বলবে বুঝতে না পেরে চোরের মতো ঘাবড়ানো দৃষ্টিতে তাকালো নীলের দিকে।
সাথে সাথে নীল চোখ রাঙানি খেয়ে ধড়ফড় করে চোখ নামালো।

বিষয়টা চোখ এড়ালো না কুমুদিনীর। ঘটনা যে অন্যরকম সেটা বুঝে আসতেই সশব্দে হো হো করে হেসে উঠলেন তিনি।

বাসন্তী ভ্রু কুচকে ফেললেন। তিনি এখনো বুঝতে পারেন নি বিষয়টা!

(চলবে…)

গল্পের নাম : #কিছু_জোড়াশালিকের_গল্প
পর্ব ২৯ : (দ্বিতীয় অংশ)
লেখিকা : #Lucky_Nova(কপি নিষেধ)

বউভাতের পরে শ্বশুরবাড়ি যাবার রীতি আছে বলে আজ এবাড়িতে আসার কথা ছিল। যদিও ইভান শুক্রবার আসতে চেয়েছিল। কারণ পুরাতন প্রজেক্টের অনেক কাজ বাকি পড়ে আছে। তার উপর নতুন একটা প্রজেক্টও হাতে এসেছে।
কিন্তু ক্যান্ডেল আজই আসবে বলে হম্বিতম্বি করায় অফিসের পরেই চলে আসতে হলো।
ক্যান্ডেল ওর আগেই এসে পড়েছিল অবশ্য। আর ইভানের কাজ থাকায় ওর থেকে ঘণ্টা দুয়েক পরে এসেছে সে। আর এসে থেকেই ক্যান্ডেলের কেমন অদ্ভুত ব্যবহার লক্ষ্য করে চলেছে।
অন্যদের সাথে গল্প করতে ব্যস্ত হলেও মাঝে মাঝে বাঁকালো চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।

মেয়েটা যে নতুন করে আবার কি তালগোল পাকাতে চাইছে তা এই মুহূর্তে ঠিক আন্দাজ করতে পারছে না ইভান। তবে খুব সন্দিহান হয়ে আছে। কিছু তো অবশ্যই চলছে ওর মাথায়! আর তা যে ওর জন্য খুব সুবিধার হবেনা সেটা ভালোই বুঝতে পারছে।

ইভানের ধারণা ঠিক প্রমানিত হলো রাতের বেলা।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে ক্যান্ডেলের রুমে ঢুকলো ইভান। এতসময় পর একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়লো যেন। অচেনা মানুষদের ভিড়ে বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল খুব। তার উপর তথাকথিত বয়স্ক আত্মীয়দের ‘বাচ্চাকাচ্চা কবে নিবা’ টাইপের চ্যাঁ চ্যাঁ শুনতে বিরক্ত লাগছিল।
কে কবে বাচ্চা নিবে না নিবে সেটা দিয়ে তাদের এতো মাথাব্যথা কেন! Ridiculous!

ইভান মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ফেলে সামনে তাকালো। বিছানার উপরে চুপচাপ ভঙ্গিতে বসে থাকা তিন চার বছরের একটা ছোটো বাচ্চার উপর চোখ পড়লো তখনি।
বাচ্চা মেয়েটা ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। তাই চোখাচোখি হতেই হাসলো একগাল। মুক্তোর মতো ঝরঝরে পরিষ্কার হাসি।
ইভান অবাক হলো। প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণ এলিয়ে কিঞ্চিৎ হাসলো। সন্দিহান হাসি।
মেয়েটাকে ইভান চেনে৷ ওর নাম অবন্তী। ক্যান্ডেলের ছোটো মামার মেয়ে।
তবে একটু আগ পর্যন্তও যার দুর্দান্ত চাঞ্চল্য দেখে এসেছে, তার এমন চুপচাপ বসে থাকাটা কেমন যেন বেমানান! তার উপর মেয়েটা একা একা এখানে বসে কী করছে?

ইভান চোখ বুলিয়ে নিলো সম্পূর্ণ ঘরটাতে।
নাহ্! কেউ-ই তো নেই। তাহলে!

ইভান ফের ওর দিকে তাকালো। একটু হেসে ভ্রু উঁচিয়ে নামিয়ে অবন্তীর উদ্দেশ্যে বলল, “তুমি এখানে?”

“হুম।” মাথা দুলিয়ে বলল অবন্তী। মুখ জুড়ে এখনো উজ্জ্বল হাসি, “আমি আজ এখানে ঘুমাবো। তোমাদের কাছে। ঠিকাছে?”

মেয়েটার প্রশ্ন করার ধরণ দেখে ইভানের সীমিত হাসিটা প্রশস্ত হয়ে অধরে ছড়িয়ে পড়লো। হাতঘড়িটা খুলতে খুলতে নমনীয় স্বরে বলল, “ঠিকাছে।”

অবন্তী খুশি হয়ে গেল। চোখের তারায় খুশির ঝলক দেখা দিলো। তবে হঠাৎই হাসিটা একটু কমিয়ে নিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে প্রশ্ন করলো, “তাহলে মা কেন বলল এখানে ঘুমানো যাবে না?”

ইভান সাথে সাথেই উত্তর দিলো না। মুচকি হাসলো। হাতঘড়িটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে বলল, “আমি তো বললাম যাবে।”

আনন্দিত হাসির ঝলকে চোখদুটো বুজে এলো অবন্তীর। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল, “সত্যি!”

“Yeah.”
“তাহলে কি আমি অনেক চকলেট পাবো?”

অবন্তীর প্রশ্নটা ইভান ঠিক বুঝলো না। তবুও বাচ্চা মানুষ চকলেট চাচ্ছে ভেবে কোমরে হাত রেখে বলল, “এখন আপাতত আমার কাছে নেই। কাল এনে দেই?”

“দিদি তো আজকেই দেবে আমাকে! বলেছে, আজ এখানে ঘুমালে এত্ত এত্ত চকলেট দেবে।” দুই হাত মেলে দেখালো অবন্তী।

অবন্তীর কথায় ইভানের হাসিটা প্রশ্নসূচক হয়ে উঠলো। মৃদু কুঞ্চিত হলো ভ্রু দুটো।
“এখানে ঘুমালে?”
“হ্যাঁ। অনেক গুলো দেবে।” মাথা নেড়ে বলল অবন্তী।

ইভান অবাক হলো। এখানে ঘুমানোর জন্য ক্যান্ডেল অবন্তীকে চকলেট দেবে কেন?

মনের ভেতর প্রশ্ন জাগতে দেরি কিন্তু উত্তরটা পেতে দেরি হলো না। কারণ ঠিক সেই মুহূর্তেই ওয়াশরুম থেকে বের হলো ক্যান্ডেল।
অবন্তী তাকালো।
‘খট’ করে দরজা খোলার আওয়াজে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো ইভানও। আর তাকানোর সাথে সাথেই দ্বিতীয়বারের মতো থমকালো। ঠোঁটের হাসিটা মিলিয়ে গেল আস্তে আস্তে। বিস্ময় খেলে গেল চোখমুখে। ক্যান্ডেলের আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে ভ্রু বাঁকিয়ে ফেললো ও।
ফর্সা শরীরে গাঢ় কালো বর্ণের পাতলা শাড়ি জড়ানো ক্যান্ডেলের। হাতাবিহীন ব্লাউজের পিঠের প্রায় সম্পূর্ণ অংশই উন্মুক্ত।
ভুল না হলে এটাই সেই শাড়ি যেটা অফিসেও পরেছিল সে। ওকে জ্বালানোর জন্য।
কিন্তু এখন এটা পরার মানে কী!

ক্যান্ডেল ততক্ষণে ইভানের দিকে পিঠ ফিরিয়ে দাঁড়িয়েছে।
সামনের ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ইভানের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে ব্লাউজের ফিতেগুলো দেখিয়ে ও বলল, “এটা একটু বেঁধে দেও।”

ইভান বিহ্বলিত হয়ে কপাল কুচকে ফেললো। সংকুচিত চোখে সরাসরি তাকালো ক্যান্ডেলের চোখের দিকে।
ক্যান্ডেল খুব স্বাভাবিক। সে তাড়া দিয়ে বলল, “কই? জলদি!”

ইভানের মুখটা গম্ভীর হলো। সে চোখ ঘুরিয়ে একপলক তাকালো অবন্তীর দিকে। সে খুব বিস্ময় নিয়ে ক্যান্ডেলের দিকে তাকিয়ে আছে। থেকে থেকে বিস্ময়ে মুখটা হা হয়ে যাচ্ছে তার।

“আমি হাতে পাচ্ছি না তো!” বিরক্ত হবার ভান ধরে বলল ক্যান্ডেল।
ইভান শক্ত চোখে ফিরে তাকালো আয়নায়। ক্যান্ডেলের দিকে।
ক্যান্ডেল ভয় তো পেল না, বরং মিচকি মিচকি হাসতে লাগলো। চুলগুলো হাতখোপা করতে করতে আরেকবার বলল, “কি হলো! বাঁধো!”

ইভান টানটান চাহনিতে চাইলো। অগত্যা পিছন থেকে ক্যান্ডেলের কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো।
প্রায় সাথে সাথেই মিষ্টি একটা ঘ্রাণ নাকে এসে লাগলো ওর। শরীরে শিহরণ বয়ে গেল।
মেয়েটার অপার্থিব, চোখ ধাধানো সৌন্দর্যে খুব আকর্ষণ অনুভূত হলো হঠাৎই। একরাশ মাদকতা এসে ভিড় করলো মন, মস্তিষ্কে। কাছে পাওয়ার অভিপ্রায় তীব্র হলো।

তবুও নিজেকে শান্ত করলো ইভান। মনের অভিপ্রায়কে জোরপূর্বক ধামাচাপা দিলো। কারণ পিছনেই বিছানার উপরে পিচ্চি মেয়েটা বসে আছে। যার জন্য এতোসব ভদ্রতা বজায় রাখা!

ইভান চোখ নামিয়ে ফিতেটা বাঁধতে বাঁধতে নিচু তবে গাঢ় কণ্ঠে বলল, “এসব কেন পরেছ তুমি?”

“কেন? বেডরুমে নাকি সবই allowed!” অবাক হবার ভান ধরলো ক্যান্ডেল।
তবে কথাটা যে ঠেস মেরে বলল তা বুঝতে পারলো ইভান।
হাত থেমে গেল কয়েক মুহূর্তের নিমিত্ত। অবাক হয়ে চোখ তুলে তাকালো আয়নায়।
ক্যান্ডেলের ক্ষীণ বাঁকালো হাসি দেখে এবার সবকিছু বুঝতে পারলো ও।
অবন্তীকে চকলেটের লোভ দিয়ে এখানে রাখা আর সাথে এমন শাড়ি পরা!
তারমানে এসবের পরিকল্পনাই করেছিলো সে সারাটা সন্ধ্যা বসে!

“সারা রাত ফিতেই বাঁধবে?” ভ্রু উঁচিয়ে নামালো ক্যান্ডেল।
ইভান পলক ঝাপটালো। ধাতস্থ হতে দৃষ্টি সরিয়ে ফিতে বাঁধায় মনোযোগ দিলো। ঠোঁট এলিয়ে স্বগতোক্তি করে বলল, “আমাকে জ্বালাতে চাচ্ছো!”

“Why? Are you burning?” ঠোঁটের কোণের হাসিটা প্রসারিত হলো ক্যান্ডেলের।

ইভান আরেকবার তাকালো আয়নায়।
মুচকি হেসে বলল, “এতো বুদ্ধি এসব কাজে না লাগিয়ে প্রজেক্টের কাজে খাটালে আমরা অনেক উন্নতি করতে পারতাম।”

ক্যান্ডেল ইভানের কথা গায়ে লাগালো না। কারণ এই তো সবে শুরু! আজ সে শুধু দেখবে আর জ্বলবে, কিন্তু ছুঁতে পারবে না।

সে ঘুরে তাকালো অবন্তীর দিকে। চোখাচোখি হতেই অবন্তী ঝলমলে হেসে বলল, “তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।”
ক্যান্ডেল মুচকি হাসলো। অবন্তীর পাশে গিয়ে বসে বলল, “Thank you.”
“Welcome.”
“আজ আমরা সারারাত গল্প করবো ঠিকাছে?” অবন্তীকে বলে ক্যান্ডেল ইভানের দিকে তাকালো।

(চলবে…)

গল্পের নাম : #কিছু_জোড়াশালিকের_গল্প
পর্ব ২৯ : (তৃতীয় অংশ)
লেখিকা : #Lucky_Nova(কপি নিষেধ)

ইভান ওর ঠোঁটের দুষ্টুমির হাসি আর চাহনি দেখে যা বোঝার বুঝে গেল। তাই ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে গিয়ে এক পাশের চেয়ারে থাকা তোয়ালেটা হাতে নিলো। এখনকার মতো ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়াই ভালো। পরের হিসেব পরে বোঝা যাবে।

ইভান তোয়ালেটা হাতে নিতে না নিতেই সেটা টেনে ধরলো ক্যান্ডেল।
অবাক হলো ইভান। ভ্রু কুচকে ক্যান্ডেলের দিকে তাকাতেই সে শঠভাবে বলল, “এটা আমার তোয়ালে।”
“তো?”
” ‘তো’ মানে! আমার তোয়ালে লাগবে আমার। নিজেরটা নিয়ে ফ্রেশ হও, যাও!” ধূর্ত ভঙ্গিতে বলে মুচকি হাসলো ক্যান্ডেল।

ভ্রু সোজা হলো ইভানের। মেয়েটা যে আজ সবকিছুর জন্য মেপে মেপে প্রতিশোধ নিতে বসেছে তা ভালো মতো বুঝলো হয়তো।

তবুও সুক্ষ্ম হাসলো। এক পা এগিয়ে এসে ক্যান্ডেলের চোখে চোখ রেখে বলল, “এক মাঘে শীত যায় না, জানো?”
ক্যান্ডেল মোটেও বিচলিত হলো না। ঠোঁটের হাসিটা ধরে রেখে ডান হাতের তর্জনী ইভানের বুকে ঠেস দিলো। পালটা জবাবে বলল, “কিন্তু আপাতত আগামী সাতদিন আমার জন্য পৌষমাস, আর তোমার সর্বনাশ!”

ইভানের দৃষ্টি প্রশ্নসূচক হয়ে উঠলো। ভাঁজ পড়লো কপালে।
ক্যান্ডেল ওর দৃষ্টিতে থাকা প্রশ্নটা হয়তো পড়ে ফেললো। তাই সহজ গলায় উত্তর করলো, “সাতদিন আমরা এখানেই থাকছি।” বলে তোয়ালেটা ইভানের হাত থেকে নিয়ে নিলো ক্যান্ডেল।

ইভান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিজের হাতের দিকে একবার তাকিয়ে আবার ক্যান্ডেলের দিকে তাকালো। ক্যান্ডেল ওর কানের কাছে মুখ এগিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, “তোমার জামাকাপড় খুঁজে পাচ্ছিনা। তবে ওইযে আলমারিটা! ওখানে লুঙ্গি আর ট্রান্সপারেন্ট ফতুয়া আছে৷ সেটা পরতে পারো, I Won’t mind!
তবে অবন্তী না থাকলে বলতাম, কিছুই পরার দরকার নেই, আমি আর তুমিই তো!”

বলেই চোখ টিপ মেরে ফিচেল ভাবে একগাল হাসলো ক্যান্ডেল।
ভ্রু কুচকে ফেললো ইভান। গম্ভীর মুখখানায় গমগমে ভাবটা বাড়লো।
তবে এতে ক্যান্ডেলের হাসি বৈ আর কিছু পেল না!
অবশেষে ওকে জব্দ করার ইচ্ছেটা মনমতো পূরণ হচ্ছে বলে কথা!

🌼
নীল থেকে থেকে অধৈর্য হয়ে উঠছে। না শান্তিতে বসতে পারছে, আর না পায়চারি করে স্বস্তি পাচ্ছে। একটু পর পর রান্নাঘরে কাছে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে।
ত্রয়ীকে সে কখন থেকে রুমে আসতে বলছে কিন্তু মেয়েটার কোনো হদিসই নেই। সে এখনো ওই রান্নাঘরেই আছে। তার দাদীর সাথে। এতো কি করছে কে জানে!

আর তার দাদীও তো আরেকজন! রান্নাবান্না শেখানোর আর সময় পায় নি! এখনই তার শিখাতে হচ্ছে!
আচ্ছা ঠিক আছে, ত্রয়ী গাজরের হালুয়ার বানাতে জানেনা, তাই শিখতে চেয়েছে। তাই বলে আজই কেন শিখাতে হবে! এক বছর পরেও তো শিখানো যেত, তাইনা!

বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেললো নীল। এমনিই তার এসব ভিটামিন-এ জাতীয় গাজর-কুমড়া অসহ্য লাগে। আর তার বউ কিনা ওসব শিখতে বসেছে! কে খাবে ওসব!

মেয়েটাকে সারাদিনের মধ্যে তো খুঁজে পাওয়া যায় না। এখন তো রাতের বেলাতেও পাওয়া যাচ্ছে না।
কোথায় সে ওর আশেপাশে থাকবে! তা না, হালুয়া নিয়ে পড়ে আছে!

নীল বিরক্ত হয়ে সোফায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলো। এর মধ্যে কয়েকবার রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে ঘড়িও দেখলো।

নাহ্! এই গাজরের হালুয়াতে এতো সময় কেন লাগছে!
ভারি অসহ্যকর তো!
ওর এখন ইচ্ছে করছে সরাসরি ত্রয়ীকে ধরে নিয়ে আসতে।
কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। দাদী রান্নাবান্না করতে খুব পছন্দ করে। আর এদিকে তার বউও হয়েছে তেমন। রান্নাবান্নার কাজে উৎসাহী। দু’জন রাধুনি এক জায়গায় হলে যা হয়, তাই-ই হচ্ছে আরকি!

তাছাড়া এভাবে গিয়ে তো নিয়েও আসা যায় না।

নীল অস্থির হয়ে পা নাড়াতে লাগলো। অধীর চোখে বারবার তাকাতে লাগলো রান্নাঘরের দিকে।

🌼
ত্রয়ীর খুব ভাব জমে গেছে নীলের দাদীর সাথে। এমনকি ওর খুব পছন্দ হয়েছে তাকে।
এইযে সারাটা সন্ধ্যা গল্প গুজবের পর এখন রান্নাও শিখছে তার থেকে। তিনি টুকিটাকি অনেককিছুই জানেন। এতোসময়ে তো সে বিষয় নিয়েও অনেক কথাও হয়ে গেল।

ত্রয়ী হালুয়ার পাশেপাশি ফুলকপির পাকোড়া করার জন্য ভাবলো। দাদীও বানাতে বললেন।
এটা অবশ্য ও নিজেই পারে। আর তাছাড়া নীল নাকি এই হালুয়া খাবে না। এজন্যই এটা বানানো।

ত্রয়ী ফুলকপিগুলো কেটে নিতে নিতে কুমদিনী বললেন, “বউ, তুমি একটু থাকো, আমি আসতাছি এখনি। একটু ফোন করা হয়নাই বাসায়।”
ত্রয়ী হাসিমুখে মাথা নেড়ে সায় দিতেই বেরিয়ে গেলেন তিনি।
বৃদ্ধা প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোন করেন নিজের স্বামীকে। গ্রামে হাঁস মুরগী পালন করার দরুন দুজনের একসাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়ে ওঠে না। হয় তিনি আসেন আর তার স্বামী গ্রামে থেকে যান। নাহয় তার স্বামী আসেন তিনি থেকে যান।

একারণেই হয়তো বেশিদিন বেড়ান না তিনি। মন টেকে না তার। কারণ বয়স যতই হোক না কেন ভালোবাসাটা ঠিক আগের মতোই আছে। প্রানবন্ত।

আচ্ছা সবারটাই কি এমন থাকে? তাহলে নীলের সাথে ওর ভালোবাসাটাও কি এমনই থাকবে?

হঠাৎ করে এমন লেকটার বিষয় মাথায় আসাতে নিজেই লজ্জা পেল ত্রয়ী। একটু আগে লোকটার করা বাচ্চামিগুলোও মনে পড়ে গেল।
সে সন্ধ্যার পর থেকে এ-অব্দি অনেকবার ওকে ইতিউতি করে ডেকে গেছে। কিন্তু ও যেতেই পারে নি।
যাবেও বা কী করে! এভাবে তো নির্লজ্জের মতো যাওয়া যায় না, তাইনা?

আর সেও আছে! একটু অপেক্ষা করতে কী হয়!

“পাগোল লোক একটা!” বিড়বিড়িয়ে স্বগতোক্তি করে উঠলো ত্রয়ী। অকারণেই একটা মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে পড়লো ঠোঁটে।
অতঃপর মুক্ত শ্বাস ফেলে ধাতস্থ হয়ে কাজে মন দিলো। কাটা ফুলকপি গুলো তুলে নিলো একটা বাটিতে। সেগুলো ধোয়ার উদ্দেশ্য ট্যাপের কাছে নিয়ে পানি ছাড়তেই পেছন থেকে পুরুষালি দু’টি হাত জড়িয়ে ধরলো ওকে।

ত্রয়ীর পীলে চমকে উঠলো। আচমকিত এমন স্পর্শে হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলো ও।

নীল প্রচন্ড হকচকিয়ে গেল। ত্রয়ী এভাবে চেঁচানোয় প্রায় সাথে সাথে ছেড়ে দিলো ওকে।
ত্রয়ী চকিতে ঘুরে তাকালো। বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে নীলকে দেখে খানিকটা হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো। বোকা বনে গেল একদম।

নীল বিস্মিত চোখ সংকুচিত করতেই ত্রয়ী হম্বিতম্বি করে চোখ নামালো।
বুঝলো বোকার মতো আঁতকে ওঠা উচিত হয়নি।

আর নীল এভাবে জড়িয়ে ধরবে ও বুঝতেই পারেনি। কখন এলো লোকটা! আর এভাবে না বলে কেউ ধরে! ভয়ই পেয়ে গেছিলো ও৷ এজন্যই তো ভুলবসত চেঁচিয়ে ফেলেছে! কেউ শুনেছে কিনা কে জানে!

ত্রয়ী অস্ফুটে ‘আমি আসলে..!’ বলে কিছু বলার আগেই কুমুদিনী হাইহুঁই করে দ্রুত পদে ঢুকলেন রান্নাঘরে। তার পিছে পিছে নীলেও মাও ঢুকলেন।

ত্রয়ী, নীল উভয়েই খানিক ভ্যাবাচেকা খেয়ে দু’জনের থেকে আরেকটু সরে গেল।

“বউ, হাত পুড়াইলা নাকি..!” বলে শশব্যস্ত হয়ে ত্রয়ীর দিকে এগিয়ে গেলেন কুমুদিনী। তবে কাছে এসে ভালোমতো দেখে নিয়ে তেমন কিছুই পেল না বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
বাসন্তীও আশ্বাস্ত হলেন।
দু’জনেই ত্রয়ীর চিৎকারে ভয়ে পেয়ে গিয়েছিলেন অনেক। ভেবেছিলেন মেয়েটা কিনা হাতটাত পুড়িয়ে ফেলেছে!

“কিছুই তো হয়নাই! ওমন চিল্লানি দিলা কেন?” ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি।

ত্রয়ী থতমত খেলো। বেজার পরিস্থিতিতে পড়লো মনে হলো। নাক মুখ ঘেমে উঠলো ওর। কী বলবে বুঝতে না পেরে চোরের মতো ঘাবড়ানো দৃষ্টিতে তাকালো নীলের দিকে।
সাথে সাথে নীল চোখ রাঙানি খেয়ে ধড়ফড় করে চোখ নামালো।

বিষয়টা চোখ এড়ালো না কুমুদিনীর। ঘটনা যে অন্যরকম সেটা বুঝে আসতেই সশব্দে হো হো করে হেসে উঠলেন তিনি।

বাসন্তী ভ্রু কুচকে ফেললেন। তিনি এখনো বুঝতে পারেন নি বিষয়টা!

(চলবে…)