কৃষ্ণডাহুক পর্ব-১৭+১৮

0
212

#কৃষ্ণডাহুক – ১৭
আয়ানা আরা (ছদ্মনাম)

রাত পোহালেই বিয়ে! কিন্তু বিয়ের কনে আচানক উধাও! রাত্রি বাজে তিনটা সাতাশ। মার্জিয়া বেগম ঘরে মেয়েকে না পেয়ে হুলস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে দিলেন! চিৎকার চেঁচামেঁচি করা শুরু করলেন। তার চিৎকারে সকলে বিরক্তি নিয়ে ঘুম থেকে উঠে আসলো, আসলো মীরাও। ঘুমঘুম চোখ মূহুর্তেই উধাও হয়ে গেলো। অরিন এসে তার পাশে দাঁড়ালো, ফোলা ফোলা বিরক্তি চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে ও! মার্জিয়া বেগম ফুঁপিয়ে বললেন,’ আদ্রিকা তো ঘরে নেই। ‘

আদিল ভ্রুকুঁচকে বললেন,’ তো তাতে ডাকার কি আছে? নিশ্চয়ই অন্য কোথাও আছে? ‘

‘ রাত তিনটা বাজে ও কোথায় যাবে? ‘ সাহিলের প্রশ্ন! আদিল দমে গেলেন। মৌন রইলেন, অরিন ফট করে বলল,’ আদ্রিকা আবার পালিয়ে যায়নি তো? ‘

অরিনের কথায় সবাই পিলে চমকে উঠলো। আদ্রিক শক্ত কণ্ঠে বলল,’ আমাদের ফ্যামিলি ম্যাটারে কেউ কিছু বলতে বলেছে তোমাকে? ‘

অরিন মুখ কালো করে ফেললো। মার্জিয়া বেগম এবার মীরার কাছে আসলেন, বললেন,’ তুমি না আদ্রিকার বান্ধুবি? নিশ্চয়ই জানার কথা ও কোথায়? ‘

মীরা চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,’ আমি তো জানি না আন্টি! আমি নিজেও চিন্তায় পড়েছি। ‘

‘ মিথ্যা বলছো কেনো? তুমি নিশ্চয়ই ওকে পালাতে সাহায্য করেছো! ‘ মার্জিয়া বেগমের দৃঢ় কণ্ঠস্বর!

মীরা বলল,’ আমি জানতাম না ও পালিয়েছে। জানলে পালাতে দিতাম না। ‘

মার্জিয়া বেগম প্রতুত্তর করবেন তার আগেই সাহিল গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,’ মার্জিয়া, মীরাকে জেরা করে লাভ নেই! চুপচাপ আদ্রিকাকে খোঁজো এখন। অন্যকে এর জন্য দোষ দিও না। ‘

সাহিলের কথায় মার্জিয়া চুপ হয়ে গেলেন। সকলে গেলো আদ্রিকাকে খুঁজতে। তখন বাজে ভোর পাঁচটা। সারা জায়গা খুঁজেও আদ্রিকার খোঁজ পাওয়া গেলো না তখন সবাই নিশ্চিত হলো আদ্রিকার কোনো বিপদ হয়নি বরং সে পালিয়েছে! কারো সঙ্গে। আদিল মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়লেন! যে কারণে আদ্রিকার ঠিক করলেন সেই তো তার মানসম্মানেই চুনকালি।মেখে দিয়েছে তার দুই ছেলে মেয়ে! মার্জিয়া বেগম থেমে থেমে কাঁদছেন। সাহিল বললেন,’ আদ্রিকার মত নিয়ে বিয়ে যেহেতু ঠিক করিস নি তাহলে এমন সমস্যা পোহাতেই হতো! এখন আফসোস করে লাভ নেই! ‘

‘ আদ্রিকাকে পেলে আমি জা নে মে রে ফেলবো। ‘ আদিলের শক্ত কণ্ঠস্বর! সাহিল বললেন,’ এখন কেনো এতো আফসোস করছিস আদিল? তুই নিজের মানসম্মানটাই ভাবলি নিজের সন্তানের সুখটা ভাবলি না। ‘

‘ ভাই, তুমি কথা বলো না, সন্তান মুখে চুনকালি মেখে গেলে কেমন লাগে তুমি বুঝবে না! ‘

কথাটা গায়ে লাগলো সাহিলের! তাচ্ছিল্য হাসলেন তিনি, জবাব দিলেন না কোনো। দিতে ইচ্ছে করলো না, চুপচাপ নিঃশব্দে হেঁটে চলে গেলেন নিজের ঘরে। মর্তুজা বেগম চুপ করে বসে আছেন। তার মৌনতা কেউ মেনে নিতে পারছে না! তিনি তো চুপ করার মানুষ নন! তবে এখন কেনো চুপ? উনাকে নিয়ে কেউ বেশ ঘাটাতে যাচ্ছে না। সবার এখন আশা আদ্রিকার।

___

শক্ত করে হাত ধরে বাড়িতে প্রবেশ করলো আদ্রিকা। বাড়ির সবাই তখন হলরুমেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। কলিংবেলের শব্দে সবার ঘুম মূহুর্তেই উবে গেলো! তাড়াহুরা করে দরজা খুললো। আদ্রিকাকে দেখে থমকে গেল তারচেয়েও বেশি পাশের ছেলেটিকে দেখে চমকালো, থমকালো! মার্জিয়া বেগম আদ্রিকার কাঁধ চেপে ধরলেন! মেয়েটিকে মারতেও তার গা ঘিনঘিন করছে। এই মেয়েটাই তো ছিলো তার কলিজার টুকরা! আদিল তাকাচ্ছেন না আদ্রিকার দিকে! আদ্রিক গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে।

আদ্রিকা চাপা স্বরে বলল,’ আমাকে মাফ করে দিও! ‘

‘ মুখ রাখিস নি তুই আমাদের। এই ছেলেটি কে? ওকে কেন বিয়ে করেছিস? ‘

ছেলেটি মুখ খুললো, নরম সুরে বলল,’ আমার নাম তিশান, আদ্রিকা আমাকে ভালোবাসে। দু বছরের সম্পর্ক আমাদের। ‘

কেউ জবাব দিলো না। উলটা রাগী দৃষ্টিতে তাকালো তিশান নামক ছেলেটির দিকে! সবার চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে একমাত্র কোমল দৃষ্টিতে তাকালেন মর্তুজা বেগম। এগিয়ে এসে বললেন,’ ওদের কেউ বাড়িতে ঢুকতে দে। ‘

‘ এই মেয়ের জন্য জায়গা নেই এই বাসায়! ওর মুখ দেখতে চাইনা আমি। ‘ মার্জিয়ার কণ্ঠ শক্ত। মর্তুজা বললেন,’ এই বাসা আমার! আমি যারে চামু সেই এই বাসায় প্রবেশ করবে! তোমার আর তোদের যদি মন চায় বেরিয়ে যেতে পারিস। ‘

অপমানে মুখ থমথমে হয়ে গেলো মার্জিয়ার চলে গেলেন তিনি। তার যাওয়ার পর সবাই চলে গেলো একে একে। তিশান আর আদ্রিকা বাড়িতে প্রবেশ করতে চাইলো না। মর্তুজা জোর করলেন, তারাও বাধ্য হয়ে এসে বসলো। মীরা অনেক কিছু বলতে চাইলো কিছুই বললো না। আদ্রিকা নিজের ঘরে এলো প্রয়োজনীয় জিনিস নেবার জন্য। তখন মীরাও গেলো, প্রশ্ন করলো,’ গতকাল যখন জিজ্ঞেস করলাম তখন কিছু বললে না কেনো? ‘

‘ যে মানুষটা একুশ বছর ধরে আগলে রাখলো তাকে কিভাবে ঠকাই? আর যে মানুষটা দু বছর ধরে ভালোবেসে গেলো নিদারুণ ভাবে! ভালোবেসে মেনে নিলো দোষগুলো তাকেও বা ঠকাই কিভাবে? ঠকাতে নিয়েছিলাম! বাবার সম্মানের কথা ভেবে। কিন্তু তিশানকেও ছাড়তে কষ্ট লাগছিলো আমার! ভীষণ কষ্ট! মানুষটা আমাকে অনেক ভালোবাসে,সে আমাকে না পেলে হয়তো বাঁচবে কিন্তু জীবন্ত লাশ হয়ে, আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়তোবা ছেলেটা আমি বাবার কথায় বিয়ে করে নিতাম কিন্তু আমার জীবন বিষে ভরে যেতো! মানুষ স্বার্থপর! নিজের সুখের জন্য মানুষ স্বার্থপর। ‘

মীরা চুপ রইলো। আদ্রিকা বলল,’ যারা ভালোবাসা পেয়েও হারিয়ে ফেলে নিজের ইচ্ছেতে তারা নির্বোধ! মীরা সুখে থাকার জন্য ভালোবাসা প্রয়োজন! ‘

বসার ঘরে সাহিল হুমায়ূন আসলেন। তিশানকে বললেন,’ তোমাদের কেউ মানুক আর না মানুক আমি মেনেছি এই সম্পর্ক! সুখে থাকো তোমরা। ‘

তারপর মর্তুজা বেগমকে বললেন,’ মা আপনি যে আদ্রিকাকে পালাতে সাহায্য করেছেন তা আমি খুব ভালো করেই জানি! নিজের পেটে ধরা সন্তানের ভালোবাসা পাইয়ে না দিলেও নাতনীর ভালোবাসা যে পাইয়ে দিয়েছেন তা দেখে খুশি হলাম আমি। প্রথমবারের মতো আপনি কোনো ভালো কাজ করেছেন মনে হচ্ছে। ‘

মর্তুজা বেগম জবাবে কিছু না বলে চুপ করে রইলেন! সেই তো সাহায্য করেছে পালাতে! যতই চিল্লাক! সে তার নাতনীকে ভীষণ ভালোবাসে। গতকাল সে পানি খেতে উঠেছিলো আদ্রিকার ঘরের সামনে সিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পেলো চাপা স্বরের কান্না,আর্তনাদ। ভেবেছিলো বিয়ে দেখে কাঁদতে কিন্তু যখন শুনলো যে আদ্রিকা বলছে,’ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি কিন্তু একুশ বছরের ভালোবাসার কাছে দুবছরের ভালোবাসা হেরে গেলো! ‘

#চলবে?

#কৃষ্ণডাহুক – ১৮
আয়ানা আরা (ছদ্মনাম)

স্কুল,কর্মজীবনে পুনরায় ফিরে এসেছে মীরা! গতকালই ঢাকায় ফিরেছে তারা। আদিল হুমায়ূন তো পারলে দেশ থেকেই পালিয়ে যায়! মেয়ে-ছেলে দুটোই মুখ রাখেনি তার!
কয়েকদিন হলো স্কুলে আসেনি অথচ মীরার লাগছে কয়েকশত বছর হয়েছে! অতি কম সময়ে শিক্ষকতা করেও যেনো স্কুলের বাচ্চাদের মায়ায় জড়িয়ে পড়েছে। বাচ্চা মানেই মায়া! কতো মিষ্টি তারা! তারা যখন মিষ্টি সুরে ‘মিস’, ‘ম্যাডাম’ বলে ডাকে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়!

পরপর তিনটি ক্লাস শেষ করে স্কুল থেকে বের হলো মীরা। স্কুলের সবাই ভদ্র তাই ওতো অসুবিধা হয়নি তার কাউকে সামাল দিতে। কিছু আছে দুষ্টু প্রকৃতির! কান মলে দুটো কথা বুঝিয়ে বললেই তারা চুপচাপ শুনে ব্যাপারটা বেশ মজা লাগে মীরার।

রাস্তা দিয়ে ব্যস্ত পায়ে হাঁটছে মীরা। রাস্তাঘাটে গাড়ি নেই বললেই চলে, ভরদুপুর, নিরব সুনশান রাস্তা একদম। অন্যমনস্ক হয়ে হেঁটেই যাচ্ছে মীরা। কখনো কখনো আবার অস্থির দৃষ্টিতে পিছে ঘুরে একটি গাড়ির আশায় তাকাচ্ছে! গাড়ির আসার নাম গন্ধ নেই! মীরা কা্ধের ব্যাগটা চেপে ধরলো। ভরদুপুরে একটা ছোটখাটো টং এর দোকান খোলা পেলো। হুমায়ূন দের এই স্কুলটার আশেপাশে এইটা ছাড়া বড় কোনো দোকান নেই! কেনো এই নির্জন জায়গাটাই বেছে নিলো কে জানে? মীরা টং এর সামনে দাঁড়িয়ে দোকানদারকে বলল,’ আংকেল, একটু চা দিন তো। ‘

স্কুল শেষ থেকেই মীরার মাথায় অসম্ভব রকমের ব্যথা করছিলো। মীরার আন্দাজ অনুযায়ী তার মাইগ্রেন আছে। আশ্রমে থাকাকালীন এই ব্যথা প্রতিদিনই হতো। আশ্রমে দেখাশোনা করা মহিলাটা তাকে সবসময়ই বলতো,’মীরা, আমি তোকে কটা টাকা দেই! ডক্টর দেখিয়ে আয়। পরে মাথা ব্যথার জন্য বড় কোনো অসুখ হলে? ‘

মীরা শুনতো না, ভাবতো সে ডক্টর দেখিয়ে শুধু টাকা কেনো খরচ করবে? টাকা কি সামান্য জিনিস! এই টাকা আশ্রমের কাজে লাগালে বাচ্চাদের জন্যই সুবিধা! আতিফা মা কেনো শুধু শুধু এতো টাকা খরচ করতে চায় কে জানে? সেই মনোভাব থেকেই মীরা আর ডক্টর দেখাইনি, ইচ্ছাও নেই কোনো। টাকা তো আর সামান্য নয়, মাথার ঘাম পায়ে পেলে একটা টাকা কামাতে লাগে! এইসব ডক্টর দেখিয়ে কি লাভ? হায়াত থাকলে বাঁচবো! হায়াত না থাকলে না!

মীরা চা খাচ্ছে আর ভাবছে কথাগুলো। টং এর সামনেই দুটো লোক আড্ডা দিচ্ছে। লোক বললে ভুল হবে তাগড়া যুবকরা আড্ডা দিচ্ছে। খানিক পরপরই হাসতে হাসতে একে অপরের শরীরে লুটিয়ে পড়ছে। চুলগুলো সোনালী রঙ, শার্টের প্রথম তিনটা এবং শেষের একটা বোতাম খোলা। দেখেই বুঝা যাচ্ছে কোনো মা বাবার বিগড়ে যাওয়া সন্তান! যারা এই মূহুর্তে বখাটেদের ভূমিকা পালন করছে। মীরা নাক মুখ কুঁচকে ফেললো। কলেজে পড়ুয়া ছেলেগুলো তার দিকে তাকিয়ে আছে! বয়সে ছোট ছেলেদের নজর দেখে মীরার নিজেরই গা গুলিয়ে আসছে! এইসবে সে পরিচিত নয়! আজীবনই বদ্ধ একটা আশ্রমে কাটিয়েছে সে, কিভাবে হবে পরিচিত?ইয়ামিনের সাথে তার প্রেমও চলেছে অদ্ভুত ভাবে একেবারে যা তা ভাবে! প্রায় প্রায় কথা হতো না বললেই চলে। ১৭ বছর বয়সে ইয়ামিনের সাথে প্রেম করতো, তখন ইয়ামিনের বয়স কি ২৪/২৫! সবে পড়ালেখা শেষ করে ব্যবসা শুরু করবে করবে বলছে। সেই মূহুর্তে ভাঙা ভাঙা প্রেম তাদের। কথা হয় কখনো আবার হয়না। ঠিক যেদিন তার আঠারো বছরসম্পন্ন হলো সেদিন ইয়ামিন আশ্রমের সামনে এসে বিয়ের প্রস্তাব রাখলো। নিয়ম মোতাবেক আঠারো হলে আশ্রম থেকে যেতে হয়, মীরারও যেতে হবে তাই আশ্রমের যেসব বড়রা ছিলেন তারা মিলে ঠিক করলেন মীরার বিয়ে ইয়ামিনের সাথেই দিয়ে দিবেন যেহেতু তাদের প্রেম চলছে, তেমন খোঁজ না নিয়েই দিয়ে দিলেন বিয়ে! খুব সাদামাটা ভাবে। মীরা সালওয়ার কামিজ আর ইয়ামিন একটা সাদা ফুলস্লিভসের শার্ট পড়ে বসলো আশ্রমের মাঝে দুটি চেয়ারে! আরেকটি চেয়ার রাখলো কাজীর জন্য! চারপাশে বাচ্চারা ঘিরে বসে রইলো। কাজী আসলো, বিয়ে পড়ানো শুরু করলো তিনকবুলে বিয়ে শেষ! ভাঙা ভাঙা প্রেমটাই পেলো পূর্ণতা! তবে আসলেই কি সেটা পূর্ণতা পেয়েছিলো? লোকে ঠিকই বলে ভাঙা ভাঙা প্রেম কখনো পূর্ণতা পায়না।

মীরা কতো কথাই ভাবছিলো চা খেতে খেতে! অতীতের চিন্তায় মগ্ন যখন যুবকদের মধ্যে একজন বলল,’ আপু কোন চিন্তায় মগ্ন? ‘
কথাটা সামান্য হলেও মীরার কানে শোনালো বিশ্রী ভাবে। ছেলে দুটোই হাসলো হলদেটে দাঁতগুলো কেলিয়ে! মীরার রাগ হলো! মন চাচ্ছে চড়িয়ে দুটোরই গাল লাল করে দিতে! দেওয়াই উচিত!কিন্তু মীরার ভউ লাগছে! কেনো লাগছে? আচ্ছা মেয়েদের কি ভয় লাগাটা স্বাভাবিক না? একদম স্বাভাবিক! মীরার মনে হলো অন্য মেয়েদের মতো না সে! তার জীবনটা ভিন্ন ভাবে খেলছে! এই জীবনে চুপ রইলে তো হেরে গেলে! সে চায় না হেরে যেতে! সমাজে সবসময়ই নিচু হয়ে বেঁচে এসেছে সে! কিন্তু আজ সে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায়!

মীরা বলতে চেয়েও বললো না, তাদের আরো একটিবার কিছু বলার সুযোগ দিয়ে দিলো। দ্বিতীয় ছেলেটি অবস্থা এইবার আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো! সে বলল,’ আপুকে মনমরা, অখুশি লাগছে কেন? ‘

ছেলেটার কথায় মীরা হাসলো, বলল,’ মনমরা, অখুশি লাগছে কেনো জেনে কি তুমি আমাকে খুশি করবা? ‘

ছেলেটা হাসলো,বলল,’ আপনি চাইলে! ‘

‘ বাসায় মা-বোনকে অখুশি দেখলেও বুঝি এমন করো?’

মীরার কথায় থতমত খেলো ছেলে দুজনই! তারা একেঅপরের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলো একবার। মীরা এবার বলল,’ বয়স কতো তোমাদের? দেখে লাগে সবে স্কুল গন্ডি শেষে কলেজে উঠেছ! এরই মধ্যে এতো কিছু? বাকি জীবন কি করবে? এভাবেই মেয়েদের উত্যক্ত করে কাটাবে? দেখা যাবে কাল তোমার বোনকে কেউ উত্যক্ত করেছে! তখন কি করবে? সময় থাকতে ভালো হয়ে যাও! ভালো পথে চলো! পড়ালেখা করো। তোমাদের মা-বাবার হয়তো তোমাদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন! তাদের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করো, মেয়েদের বিরক্ত করা ছেড়ে। যে ভালো তার সব ভালো! নিশ্চয়ই জানো? সমাজে মাথা উঁচু করে গর্বের সহিত বেঁচে থাকতে চাইলে বখাটেপনা ছেড়ে পড়ালেখায় মনোযোগী হও। ‘

কথাগুলো একনাগারে আঙুল তুলে শাসিয়ে বলল মীরা। ছেলেগুলো হা করে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখলো মীরাকে। মীরা চায়ের কাপ রেখে, যেতে যেতে পিছে ঘুরে বলল,’ আর হ্যাঁ, বখাটেপনার সাথে সাথে চুলের এই স্টাইলটাও বদলাবে তোমরা! ফাজলামোর সীমা থাকে! তা অতিক্রম করে ফেলেছো তোমরা! ‘

বলেই মীরা সামনে ঘুরলো! আচমকাই থেমে গেলো মীরার পা দুটো! স্থির হয়ে গেলো। স্থির দৃষ্টিতে সামনে তাকালো মীরা। স্থির হয়েও যেনো দৃষ্টিজোড়া অস্থির! বুকে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো মীরার! কেউ যেনো বুকের মাঝে দুরু দুরু করে ঢোল পেটাচ্ছে! বুক মোচড় দিয়ে উঠলো। চোখদুটো ঝাপসা হয়ে এলো মীরার।

#চলবে?