#কে!!
#১২তম_পর্ব
প্রায় ৮-৯ টা তার সমবয়সী মেয়ের লাশ সেখানে, একজন পুরুষের লাশও রয়েছে। মাথা যেনো ঘুরছে নীতির। স্নিগ্ধ ই কি তবে এগুলো করেছে।
– তুমি তো দেখছি সব জেনে গেছো বাবুইপাখি
কথাটা শুনতেই দম আটকে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে নীতির। পেছনে ফেরার সাহসটুকু ও করতে পারছে না। যে ভয়টা লাগছিলো সেটাই হয়েছে, কিন্তু সে তো স্নিগ্ধকে ঘুমের ঔষধ দিয়েছিলো। ভীত চোখে স্নিগ্ধ এর দিকে তাকাতেই বুক হুট করেই ধক করে উঠলো নীতির। চিরচেনা মুখটাকে আজ যেনো অচেনা লাগছে। যে হাসি তাকে মুগ্ধ করতো আজ সে হাসি ভয়ের আভাস দিচ্ছে। শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা শীতলতা বয়ে যাচ্ছে। হাত পা জমে গেছে এমন লাগছে। আবারও ভুল মানুষকে নিজের জীবনে এনেছে কি নীতি!! প্রশ্নগুলো মাথা এলোমেলো করে দিচ্ছে। জড়ানো গলায় বললো,
– তু…..তুমি ঘুমাও নি?
– আমার প্লান আমার উপর এপ্লাই করবে?
– মা…মানে?
– আরে আরে তুমি তো দেখি ভয় পাচ্ছো? বাবুইপাখি ভয় পেয়ো না। আমি আছি তো। চলো আমার পরিবারের সাথে তোমাকে দেখা করিয়ে দেই।
– প….পরিবার মা…মানে
ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আছে নীতির। ভয়ে পা রীতিমতো অবশ হয়ে যাচ্ছে। দাঁড়ানোর ক্ষমতাটুকু নেই। এর উপরে স্নিগ্ধ এর কথাগুলো যেনো আরো ভয়ের আভাস দিচ্ছে। সে কোথায় আছে, জায়গা কোথায় তাও জানে না। যদি এখানে স্নিগ্ধ তাকে মেরেও ফেলে তবুও কেউ ই জানবে না। তার বাবা-মাও জানে না কোথায় আছে নীতি। কে বাচাবে তাকে কে!!
– আমি তোমাকে কখনোই মারবো না বাবুইপাখি
স্নিগ্ধ এর ঠান্ডা গলায় কথাটা শুনে চমকে গেলো নীতি। তার মনের কথা স্নিগ্ধ এর জানার কথা না। স্নিগ্ধ মুখে হাসির রেখা টেনে বললো আবার,
– ভাবলে কিভাবে আমি তোমাকে মেরে ফেলবো? মারার হলে কি তোমাকে বাঁচাতাম?
বেশ সাহস সঞ্চয় করে নীতি তাকে বললো,
– এই ল….লাশ গুলো কার স্নিগ্ধ? তু..তুমি কি এ…এদের
– হ্যা, কি করবো বলো, এরা আমার কাছে থাকতেই চাচ্ছিলো না। তুমি তো আমাকে কথা দিয়েছো আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না। তাই তোমার গায়ে আচড় দেওয়ার কথা ভাববো না আমি। আসো আমার সো কল্ড বাবা-মার সাথে তোমাকে পরিচয় করে দেই।
বলেই হাত টেনে নীতিকে দুটো লাশের সামনে দাঁড় করায় স্নিগ্ধ। লাশ গুলোর অবস্থা দেখা যাচ্ছে না। চেহারা গুলো নষ্ট করে ফেলা হয়েছে, চোখ উপরে ফেলা হয়েছে। যে দেখবে তারই বমি চলে আসছে। নীতির মুখ থেকে চিৎকার বের হতে যেয়েও হাত দিয়ে আটকে ধরলো সে। স্নিগ্ধ ঠান্ডা গলায় বলতে লাগলো,
– ইনারা আমার জন্মদাতা-জন্মদাত্রী। আজ ইনাদের জন্যই আমার এই অবস্থা। আমি তো একটা পরিবার চেয়েছিলাম বলো, কি দোষ ছিলো আমার। অথচ আমার জীবনটা রাস্তার কুকুর বিড়ালের মতো হয়ে গেছিলো। প্রচুর রাগ উঠেছিলো এদের উপর। তাই এতো ঘৃণ্যভাবে হত্যা করেছি। জানো আমি না খুন করতে চাই নি। কিন্তু ওদের সুখের জীবন দেখে আমার সহ্য হলো না। একজন বাবা কিভাবে তার সন্তানকে অস্বীকার করে বলো। আর এই যে এই আমার মা, সে আমাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে ঠিকি নিজের জীবনটা সাজিয়ে দিলো। কিভাবে পারে বলো।
স্নিগ্ধের অসহায় মুখ দেখে নীতির খুব খারাপ লাগছিলো। তার কাধে হাত দিয়ে কিছু বলতে যেতে গেলেই স্নিগ্ধ বলতে থাকে,
– তাই মেরে ফেলেছি, দুটাকেই। এক বার না পাঁচবার গাড়ি চাপা দিয়েছি। তারপর ও প্রাণ ছিলো তখন জ্যান্ত অবস্থায় তাদের বুক চিড়ে ফেলেছি। ভেতরের সব অঙ্গগুলো বের করে ফেলেছি। কি যে শান্তি জানো না বাবুইপাখি।
স্নিগ্ধ এর মুখটা মূহুর্তেই হিংস্র পশুতে পরিণত হলো। এই ভয়ানক চেহারাটা নীতির একেবারেই অপরিচিত। স্নিগ্ধ এবার নীতির কাধে রাখতেই কেঁপে ওঠে নীতি। নীতির এই অবস্থা দেখে ম্লান হাসি হেসে স্নিগ্ধ বলে,
– তুমি অনেক বুদ্ধিমান বাবুইপাখি, এই মেয়েগুলোর মতো না। এরা কেউ ই এতো দ্রুত বুঝতেই পারে নি আমি এমন। আমি এদের কাউকেই মারতে চাই নি। কিন্তু এরা কেউ আমার সাথে থাকতে রাজী হচ্ছিলো না। এখন দেখো আমার সাথে থাকতে হচ্ছে। আমি এদের অনেক বুঝিয়েছে শুনেই নি। আমি নাকি পাগল, আমার সাথে জীবিত মানুষ থাকতে পারে না। আমি কি এতো খারাপ বাবুইপাখি?
– তুমি কি আমাকেও
– কখনোই না, তুমি তো আমার বউ। তোমাকে মারতে পারি? এদের সাথে তো আমার বিয়ে হয় নি। তুমি নিজে আমার কাছে ধরা দিয়েছো বাবুইপাখি। অবশ্য কম কাঠখড় পুড়াতে হয় নি। তোমার ঘরে ক্যামেরা ফিট করা, তোমাকে চোখে চোখে রাখা। কম কাজ করতে হয় নি। তোমার আপন লোকগুলোকে ধীরে ধীরে তোমার থেকে দূর করা, নির্ভীকের গার্লফ্রেন্ড আমার ঠিক করা ছিলো। ওই খুন, যার জন্য তোমাকে ধরে নিয়ে গেছে ওইটাও আমি করেছি। সেন্টমার্টিনে তোমার বাবা-মাকেও আমি ঝগড়া করতে মোদক দিয়েছি। সব আমি করেছি। শুধু তোমার ওই মনের ভেতর নিজের জায়গা করে নিতে। কিন্তু ঝামেলা তখন হলো যখন তুমি আত্নহত্যা করতে গেলে, তোমাকে মরতে দিতে পারলাম না। পারবো কিভাবে বলো ভালোবাসি সে। খুব ভালোবাসি।
স্নিগ্ধের কথা শুনে মাথা ঘুরছে নীতির। ধীরে ধীরে সব ঝাপসা হতে লাগলো। মনে হচ্ছে কোনো অতল গহব্বরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে চোখের সামনে অন্ধকার ছেয়ে গেলো_____
★★★★★★★
রাত ৯টা,
মাথাটা খুব ব্যাথা করছে নীতির। আজ তিনদিন পর জ্ঞান ফিরলো তার। চোখ মুখ খিচে উঠে বসতেই দেখলো সামনে উদ্বিগ্ন চোখে স্নিগ্ধ বসা। পরক্ষণেই রুমের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠলো। মূহুর্তেই হাত পা গুটিয়ে বসে পড়লো নীতি। স্নিগ্ধ একটু এগিয়ে আসতে নিলে আরও শিটিয়ে যায় নীতি। একটু সরতে যেয়ে নীতির হাতে টান লাগে। ক্যানোলা দিয়ে স্যালাইন দেওয়ার জায়গা থেকে ফিনফিন করে রক্ত বের হতে লাগে। সেটা দেখে আরো উদ্বিগ্ন হয়ে যায় স্নিগ্ধ। তড়িৎগতিতে হাতটা ধরে ফেলে। নীতির ভয়ার্ত মুখটি হাতে তুলে নেয়। ধীর কন্ঠে বলে,
– বাবুইপাখি ভয় পাচ্ছো কেনো? আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। সত্যি বলছি। বিশ্বাস করো।
নীতির গলা থেকে যেনো শব্দ বের হচ্ছে না। ভয়ে দলা পেকে রয়েছে সে। স্নিগ্ধ ইচ্ছে মতো তার মুখে ঠোটে চুমু দিয়ে বলতে থাকে,
– আমি তোমাকে ভালোবাসি বাবুইপাখি। তোমাকে আচড় দেবার কথাও ভাবতে পারি না সোনা। তোমাকে আমার এই মহলে রানী বানিয়ে রাখবো। তুমি শুধু আমার সাথে থাকো সোনা। আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি খুব একা, খুব একা।
– আ…আমি বাড়ি যেতে চাই, বাবা-মার কাছে। আমাকে ছেড়ে দেও।
বলেই কাঁদতে থাকে নীতি। হেচকি উঠে যায় কাঁদতে কাঁদতে। নীতিকে এমন্ন দেখতে যেনো একেবারেই ভালো লাগছে না স্নিগ্ধ এর। অসহায়ের মতো বলতে থাকে,
– আমাকে ছেড়ে যেও না নীতি। আমরা আবার তিন দিন আগের দম্পতি হতে পারি না? আমি তোমার সাথে থাকতে চাই বাবুইপাখি। আমার তুমি বাদে কেউ নেই। আমি প্রমিস করছি আর কাউকে ক্ষতি করবো না। আমি দানব নই। প্লিজ আমার সাথে থাকো।
– আমি এক মূহুর্ত এখানে থাকবো না, ছাড়ো। যেতে দেও প্লিজ। যেতে দেও আমাকে। ছেড়ে দাও।
স্নিগ্ধ এর রাগ উহতে থাকে ধীরে ধীরে। একটা সময়। না পেরে ঠাস করে গালে চড় লাগিয়ে দেয় নীতির। চড়ের আঘাতে ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরিয়ে যায়। নীতি গালে হাত দিয়ে চুপ করে বসে থাকে। আজ পর্যন্ত কেউ তাকে ফুলের টোকা অবদি দেয় নি। নীতির ঠোঁটের রক্ত দেখে পাগলের মতো করতে থাকে স্নিগ্ধ। উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
– বাবুইপাখি, আমি না তোমাকে মারতে চাই না। কেনো জিদ করো বলতো, কি চেয়েছি বলো শুধু আমার কাছে থাকতেই বলেছি তোমাকে কেনো এমন করছো। সরি আর হবে না আর হবে না বাবুইপাখি। সত্যি বলছি।
নীতি কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। নীরব দর্শকের মতো স্নিগ্ধ এর পাগলামি দেখছে। এই জাল ভেদ করেকি আদৌ বের হওয়া সম্ভব।
সকাল ৯টা,
একটা ক্লু শেষমেশ পেয়েছে হাবীব। অনেক কষ্টে দু সপ্তাহ পরে একটা ক্লু পেলো সে। স্নিগ্ধ বিগত চার দিন ধরে ভার্সিটি আসছে না।৷ সে নাকি আবার বাহিরে চলে যাবে। বিয়েও করেছে সে। কিন্তু ব্যাপারটা খুবই গোলমেলে লাগছে হাবীবের। এদিকে কিছুদিন আগ পর্যন্ত তাকে নীতির সাথে ঘুরতে দেখা গেছে। অথচ এখন নাকি সে বিয়ে করেছে। এদিকে নির্ভীক পাগলপ্রায় হয়ে গেছে নীতিকে খুঁজতে খুঁজতে। হাবীবের সামনে বসে আছে এখন। হাবীব বেশ চিন্তিত গলায় বললো,
– আচ্ছা আপনার স্নিগ্ধ লোকটাকে সন্দেহ হচ্ছে না?
– সন্দেহ করে কি হবে স্যার কোনো প্রমাণ নেই তো
– একবার যদি উনার ঘর সার্চ করা যেত।
হাবীবের কথা শেষ হতে না হতেই একটি ফোন এলো নির্ভীকের মোবাইলে। মোবাইলটা বের করতেই দেখলো আননোন একটা নাম্বার। নির্ভীক ফোনটা রিসিভ করতেই……
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি