#খেলাঘর
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ১৭
লাজ আর ফারাজ বের হলো লাজের বাবা মা’র খুনীর উদ্দেশ্যে,ফারাজ ঐ লোকটার বাড়ি চিনে। ফারাজ ড্রাইভ করছে লাজ তার পাশে বসে। সারাটা রাস্তা টুকটাক কথা বলেই গেল। লোকটির বাড়ির সামনে আসতেই দেখতে পেল অনেক লোক। এত ভীড় কেন কিছুই বোঝতে পারলো না। ভীড় ঠেলে বাড়ির ভিতরে ঢুকে ওরা যা দেখলো তাতে তারা চমকে উঠলো।
যে লোকটি লাজের বাবা মা কে মেরেছিল সেই লোকটিই লাশ হয়ে শুয়ে আছে। পাশে অল্প বয়সী মহিলা কান্না করছে। ফারাজ তার পাশে দাড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধ লোককে জিজ্ঞেস করলো….
-“ওনি কিভাবে মারা গেলেন?”
-“গতকাল রাতে কতগুলো লোক এসে কাজের কথা বলে নিয়ে যায়,মাঝরাতে একটা গাড়ি থেকে ওর মৃত্যু দেহ ফেলে রেখে চলে যায়।”
লোকটির কথা শুনে ফারাজ আর লাজ একজন আরেকজনের দিকে তাকায়, বোঝতে পারে এটা কার কাজ। তারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, লাজ বলল….
-“নিজের আসল চেহারা বেড়িয়ে আসার ভয়ে মেরে ফেলল লোকটিকে!”
-“হুম,কিন্তু আমি একটা জিনিস বোঝতে পারছি না লোকটি তো বাবার অনেক কাছের ছিলো তাহলে কেন মারলো?”
-“তুমিও তো ওনার কাছের ছিলে, ওনার রক্তের ছিলে, তাহলে তোমাকে কেন ব্যবহার করলো?”
লাজের কথা শুনে ফারাজ চুপ হয়ে লাজের দিকে তাকায় লাজ আবার বলতে শুরু করে…
-“আসলে তোমার বাবার কাছে আপন-পর,রক্তের কাছের-দূরের এসবের কোনো মানে নেই। ওনি যখন যাকে যেভাবে ব্যবহার করতে পারেন সেটাই মানে,যখন ব্যবহার শেষ তখন তাকেও শেষ করে দেয়।যায় হোক, চলো বাসায় যাওয়া যাক।”
-“হুম!”
ফারাজ গাড়ি ঘুড়িয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হবে ঠিক তখনই লাজ দেখলো ফারিদ তাকদিয়ার নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে কোথায় যাচ্ছে।লাজ বলল…
-“তোমার বাবা নিজে গাড়ি চালিয়ে কোথায় যাচ্ছে?”
লাজের কথা শুনে ফারাজ তাকিয়ে দেখে সত্যি তার বাবা নিজে ড্রাইভ করছে। সে অবাক হয়ে বলে..
-“বাবা এই সময় বাহিরে? ওনি তো এইসময় ইউগা করেন তাহলে?”
-“কিছু তো একটা আছেই,নাহলে ওনি তো নিজে ড্রাইভ করতেন না। ফারাজ ওনাকে ফলো করো!”
লাজের কথা মতো ফারাজ গাড়ি ঘুড়িয়ে নিলো, ফারিদ তাকদিয়ার কে ফলো করতে লাগলো। প্রায় ১ ঘন্টা ফলো করার পরও যখন ফারিদ তাকদিয়ার কোথাও থামছেন না তখন ফারাজ জিজ্ঞেস করলো…
-“কোথায় যাচ্ছে বাবা? এতদূরে আসলো তাও কোনো ড্রাইভার আনলো না!”
-“যেখানেই যাচ্ছে, আমার কাছে কেন জানি লাগছে ঐ লোকটার কাছে গেছে।”
-“কোন লোকটা?”
-“আরে বাবা,সকাল বলছিলাম না!”
ফারাজ কিছু প্রশ্ন করতে যাবে তার আগেই সামনে তার বাবার গাড়ি থেমে গেল। ফারাজ একটু দূরে থেকেই ব্রেক করে দাঁড়িয়ে গেল। একটা বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল ফারিদ তাকদিয়ার, লাজ আর ফারাজ গাড়ি থেকে নেমে আশে পাশে ভালো করে দেখলো। ফারাজ বলল,”ভিতরে যাবে?”
-“ভিতরে যাবো তো অবশ্যই কিন্তু তার আগে দেখো কোথাও কোনো সিকিউরিটি গার্ড আছে কিনা?”
-“নাহ,এখানে কোথাও কোনো সিকিউরিটি গার্ড নেই।”
-“তাহলে চলো যাওয়া যাক!”
ফারাজ আর লাজ চুপিচুপি বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল। খুব সর্তকতার সহকারে দুজন দুই সাইড হয়ে লুকিয়ে পরলো। কারন ড্রয়িং রুমেই ফারিদ তাকদিয়ার বসে আছে।
-“তো তুমি তাহলে আজকেই চলে এসেছো?”
একজন মহিলা কথাটা বলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলো। ফারিদ তাকদিয়ার বসা থেকে উঠে বলল,”তুমি এমন এমন কান্ড করো যার জন্য আমাকে আসতেই হয়!”
-“আর তোমাকে আনার জন্যই আমাকে এমন এমন কান্ড করতে হয়!”
-“এত কথা বলার সময় আমার কাছে নেই, কি জন্য ডেকেছো বলো?”
-“এত তারা কিসের? শুনেছি মাহেরা নাকি ফিরে এসেছে তাহলে তারজন্য কি প্রেম জেগে উঠেছে?”
-“চন্দ্রা! তুমি ঠিক ভালো করেই জানো ও কে আমি ভালোবাসি কি না!”
-“হুম, তাহলে কেন আমাকে তুমি তোমার ২য় স্ত্রী হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছো না? কেন এতদিনের সম্পর্ক সবার সামনে আনছো না? কেন ফারিন কে তোমার মেয়ে হিসাবে সবার সামনে পরিচয় দিচ্ছো না!”
মহিলা’র কথাতে রীতিমতো অবাক হয়ে যায় ফারাজ আর লাজ। তারা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। কি শুনছে এরা? ওরা এসব কল্পনাও করতে পারেনি, ওরা অন্যকিছু আইডিয়া করেছিল। ফারিদ তাকদিয়ার বলে,” এর জবাব তোমাকে আমি আগে আরো বহুবার দিয়েছি!”
-“আমি হিন্দু বলে? আমি হিন্দু হওয়ায় যদি এতটাই সমস্যা থাকতো তাহলে সম্পর্ক কিভাবে করে ছিলে? রাতের পর রাত কাটানোর সময় মনে ছিলো না এই কথা? ফারিন যখন পেটে ছিলো তখন মনে পরেনি এই কথা!”
-“তখন মনে করেছিলাম মাহেরা কে মেরে তোমাকে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দিবো কিন্তু মাহেরা যে তলে তলে জল খেয়েছে সেটা কি করে জানতাম?”
-“হুম কিন্তু এখন কি সমস্যা? মেনে নাও আমাকে!পরিচয় দাও তোমার স্ত্রী হিসেবে!”
-“অসম্ভব, সামনে নির্বাচন আর মাত্র কয়েকদিন পর মনোনয়ন দিবে আর এখন যদি এসব হয় তাহলে অনেক ঝামেলা হয়ে যাবে!”
লাজ ফারাজকে ইশারা করে ফারাজের ফোন দিতে কারন লাজ আজকে তারাহুড়া করে নিজের ফোন রেখে এসেছে।ফারাজ ফোন ফ্লোরে মিশিয়ে লাজের দিকে ধাক্কা মারে। লাজ ফোনটা নিয়ে কতগুলো ছবি তুলে ফেলে ফারিদ তাকদিয়ার আর চন্দ্রা মহিলার।চন্দ্রা বলল,” আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু ফারিন তোমাকে কিছু বলতে চায়,ফারিন ফারিন, তোমার বাবা এসেছে।”
মহিলার ডাক শুনে একটা ১৭-১৮ বছর বয়সী মেয়ে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নাম তারপর ফারিদ তাকদিয়ার’কে জড়িয়ে ধরে,” বাবা, তুমি এতদিন আসোনি কেন?”
-“এখন তো অনেক কাজের ঝামেলা তাই আসতে পারিনি!”
-“বাবা, আমাকে কবে তোমার মেয়ে বলে পরিচয় করাবে,আমার বান্ধবীরা সবাই অনেক কথা বলে। প্লিজ বাবা তারাতাড়ি আমাদেরকে সবার সামনে আনো”
-“আব, আনবো আনবো। এখন বলো কি লাগবে তোমার?”
এমন আরো অনেক কথায় হলো তাদের মাঝে। লাজ আর ফারাজ আগের মতো চুপিচুপি বের হয়ে আসলো বাড়ি থেকে। ফারিদ তাকদিয়ার বের হওয়ার আগে আগেই ওরা সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলো। বাসায় এসে ফারাজ সোজা নিজের রুমে চলে গেল, লাজও তার পিছু পিছু আসলো। লাজ বোঝতে পারলো ফারাজের কি হয়েছে সে তার সামনে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারাজ বলল,”প্লিজ লাজ, আমাকে একটু একা থাকতে দাও!”
-“ফারাজ, তুমি যদি এটা ভেবে কষ্ট পাও, তোমার বাবা এতটা নিচ কি করে? তাহলে তুমি শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছো, কারন ওনি এর থেকেও আরো নিচু।”
-” আমি সেটা ভাবছি না, ভাবছি ঐ মেয়েটার কথা। যে মেয়েটা বাবার পরিচয় কোনোদিনও পাবে না। আমি আমার বাবা’কে এতটুকু চিনে গেছি। ওনি কখনোই সবার সামনে ওদের আনবে না।”
-” কিন্তু তোমার বাবা তাহলে ওদের এভাবে রেখেছে কেন? ইচ্ছে করলেই তো ওদের মেরে ফেলতে পারতো!”
-“কারন ওদের মারলে, ফারিদ নিজের ক্ষতি নিজেই করবে।”
পিছন থেকে মাহেরা তাকদিয়ার কথাটা বলল। লাজ কিছুটা চমকে গেল ওনাকে দেখে কারন ওনি কি করে জানলেন এসব কথা। মাহেরা তাকদিয়ার তাদের সামনে এসে বলল,” আমি জানি তোমরা চন্দ্রা এর কথা বলছো? চন্দ্রাই হলো সেই মহিলা যার সম্পত্তির প্রতিও লোভ ছিলো ফারিদের, লিখেও নিয়ে ছিলো। কিন্তু চন্দ্রা ও খুব চালাক, সে তাদের কিছু ক্লোজ ছবি তার কিছু ফ্রেন্ড আর রিলেটিভস দের কাছে পাঠায় আর তাদের বলে রাখে ওর যদি কিছু হয় তাহলে যেন সবকিছু ফাঁস করে দেয়। সেই ভয়েই ফারিদ কিছু করছে না।”
-“কিন্তু এখন আমি তো করবো!”
লাজ কথাটা বলে একটা শয়তানি হাসি দেয়।ফারাজ জিজ্ঞেস করে,”কি করবে তুমি?”
-“তোমার বাবা-র নতুন ব্যান্ড বাজাবো আমি!”
-“মানে?”
-“মানে হলো, কিছু একটা ধামাকা হতে যাচ্ছে!”
#চলবে!
#খেলাঘর
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ১৮
সকাল সকাল ফারিদ তাকদিয়ার রাগে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলছে। ওনার চিৎকার এতটাই ভয়ংকর ছিলো যে বাড়ির সব গার্ড এক হয়ে গেল। মাহেরা তাকদিয়ার আর ফারাজ দৌড়ে ড্রয়িং রুমে আসলো।ফারিদ তাকদিয়ার রাগে একের পর এক জিনিস ভেঙে যাচ্ছে। লাজ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,”জিনিস ভাঙ্গছেন? ভাঙ্গেন কিন্তু মনে রাখবেন ২০% কিন্তু আমাদের!”
ফারিদ তাকদিয়ার লাজকে একটানে মাঝখানে দাঁড় করিয়ে জোরে হাত চেপে বলল,” তোমাকে এর শাস্তি পেতেই হবে!”
-“আমাকে তো আপনি শাস্তি দেবার মতো কিছু বাকি রাখেননি। আপনি আমার থেকে আমার বাবা মাকে কেড়ে নিয়েছেন। এর থেকে বড় শাস্তি আর কি হতে পারে একটা মেয়ের কাছে বলতে পারেন?”
লাজ ছলছল চোখে কথাটা বলল। লাজকে জোরে ধাক্কা দিতেই ফারাজ ওকে ধরে ফেলে। ফারাজ জিজ্ঞেস করে,”কি হয়েছে? সকাল সকাল এত চিৎকার করছো কেন?”
-“ওনাকে আর জিজ্ঞেস করে কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিও না, আমিই বলছি!”
লাজ কথাটা বলে ফারিদ তাকদিয়ারের শয়তানি হাসি দিলো। সবার সামনে টিভি টা চালু করলো। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দিচ্ছে….
-“বিগত কয়েকদিন ধরেই বার বার বিতর্কের সামনাসামনি হচ্ছেন এমপি ফারিদ তাকদিয়ার, আর ওনাকে বার বার বিতর্কের সম্মুখীন করছেন ওনার ই পুত্রবধূ, এবারের বিতর্কের উৎস হলো এই দুটো ছবি( একটা ছবিতে চন্দ্রা ফারিদ তাকদিয়ারের হাতে ধরে আছে আরেকটা ছবিতে ফারিদ তাকদিয়ার,চন্দ্রা আর তাদের মেয়ে ফারিন ফারিদ তাকদিয়ার কে জড়িয়ে আছে) এখন প্রশ্ন হলো কারা ওরা? কি ওদের পরিচয়? কেনই বা এতটা গভীর দেখাচ্ছে ওদের? সবার সামনে উত্তর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছে জনগনের পক্ষ থেকে তার পুত্র বধূ লাজ, ওনার কাছে এসবের কারণ জানতে চায়লে ওনি বলেন, তিনি চান ওনার শ্বশুর মশাইয়ের কাছ থেকে সবটা জানতে।”
এতটুকু দেখানোর সাথে সাথে ফারিদ তাকদিয়ার রাগে টিভি তুলে আচার মারে। টিভি ভেঙে গুড়ো হয়ে যায়। লাজ শয়তানি হাসি দিয়ে ওনার সামনে গিয়ে বলে,” এভাবেই আপনাকেও ভেঙে যেতে হবে মিস্টার ফারিদ তাকদিয়ার! প্রস্তুত হোন!”
ফারিদ তাকদিয়ার কিছু বলার আগেই লাজ সেখান থেকে সরে যায়। সাথে সাথেই কতগুলো প্রেসের লোক বাড়ির ভিতরে ঢুকে পরে। তারা এসে ফারিদ তাকদিয়ার কে প্রশ্ন করে,”আপনার সাথে ঐ মহিলা, মেয়ের সম্পর্ক কি? এতটা ক্লোজ হয়ে আছেন কেন? কি হয় ওরা আপনার?” এসব আরো প্রশ্ন ওনাকে করা হয় ওনি কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উপরে চলে যায়। গার্ড’রা প্রেসের লোকদের বাহিরে নিয়ে যায়।
লাজ এসে ফারাজকে ফিসফিস করে বলে,” আমাদের কে এখনই বের হতে হবে। নয়তো তোমার বাবা ঐ মহিলাকে আর মেয়েকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিবে।”
-“হুম তারাতাড়ি চলো!”
ফারাজ আর লাজ দৌড়ে বের হয়ে গেল। ঐ বাড়ির থেকে কিছু দূর থাকতেই দেখতে পেলো, চন্দ্রা আর ফারিন কে কতগুলো লোক গুলি ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ফারাজ জোরে গাড়ি টেনেও ওদের কে আটকাতে পারলো না। লাজ বলল,” ফারাজ ওদেরকে ফলো করে, ওদের কিছু হতে দেওয়া যাবে না। তুমি ওদের কে ফলো করো!”
ওদের কে ফলো করতে করতে ওরা একটা পুরনো বাড়িতে আসলো। বাড়িটা একটা ভাঙা বাড়ির মতো দেখা যাচ্ছে। ওরা ভিতরে গেলে ফারাজ বাড়ির পিছনে গাড়ি রেখে লাজ কে নিয়ে চুপিচুপি ভিতরে যায়। ফারিন ভয়ে কান্না করছে আর বলছে,” মা এরা কারা?আমাদের কে এখানে কেন নিয়ে এসেছে?”
ওর মা বলল,” এগুলো সব তোর বাবা-র কাজ। আজকের সকালের নিউজের জন্য ও এমন করছে।”
-“একদম ঠিক ধরেছো!আমি তোমাদেরকে এজন্যই এখানে এনেছি যাতে করে তোমাদের কে লাজ আর ফারাজ খুঁজে না পায়!”
ফারিদ তাকদিয়ার ভিতরে ঢুকে কথাটা বলল। ফারিন কান্না করে বলল,”বাবা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিতে বলো।”
-“ওহ মাই ডেয়ার, তোমার কষ্ট হচ্ছে। এই তোরা একটু ওকে আদর করে দে তো!”
বলতেই কতগুলো লোক ওকে দরি দিয়ে উপরে তুলে ফেলল।তাতে ফারিন আরো ভয় পেয়ে চিৎকার করতে লাগলো। চন্দ্রা বলে,”প্লিজ ফারিদ,ওকে ছেড়ে দাও,তোমার যা করার আমাকে করো ওকে ছেড়ে দাও।”
-“ছেড়ে তো দিবোই কিন্তু এভাবে না মৃত্যু!”
বলে গুলি টা বের করতেই বাড়ির সমস্ত আলো নিভে যায়। তার কারণ লাজ মেইনসুইচ অফ করে দিয়েছে। ফারাজ পাশ থেকে একটা ছুড়ি নিয়ে দড়ির এক প্রান্ত কেটে ফেলে। ফারিন নিচে পরতেই লাজ ওর মুখ চেপে ধরে। চন্দ্রার হাত খুলতে যাবে তখনি একটা গুলি এসে চন্দ্রার বুকে লাগে আর বাড়িতে আলো চলে উঠে। ফারিদ তাকদিয়ারের সামনে ভেসে আসে লাজ আর ফারাজের মুখ। নিজের মা কে চোখের সামনে গুলি করতে দেখে লাজের হাত ছাড়িয়ে চিৎকার করে উঠে ফারিন। ফারিদ তাকদিয়ার বলে,”তাহলে আজকে এক সাথে সবগুলো শয়তানের শেষ হবে!”
-“লাজ তুমি ফারিনকে নিয়ে বাহিরে যাও,আমি আসছি।”
লাজ বের হতে যাবে কিন্তু ফারিনকে বের করতে পারছে না। সে বার বার বলছে,”নাহ, আমি আমার মাকে ছাড়া কোথাও যাবো না। কোথাও না!”
লাজ ওকে টেনে নিয়ে বের হতে যাবে তার আগেই কতগুলে লোক ওদের সামনে চলে আসে। লাজ নিজের সেফটির জন্য রাখা পেপার স্প্রে বের করে ওদের দিকে ছুড়ে মারে। ওরা আর কিছু দেখতে না পেলে লাজ ফারিনকে নিয়ে চলে বের হয়ে পরে। ফারিদ তাকদিয়ার ফারাজকে বলে,” এখনো সময় আছে তুই ওদের দল থেকে সরে আয়। তুই আমার ছেলে, আমার বিপক্ষে যেতে পারিস না। তুই তো জানিস আমি তোকে কতটা ভালোবাসি!”
ফারাজের মুখটা মলিন হয়ে গেল। সে ছলছল চোখে নিজের বাবা’র দিকে তাকালো। ফারিদ তাকদিয়ার দু হাত মেলিয়ে ওকে ইশারা করলে ফারাজ দৌড়ে গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরে।
বাপ ছেলের এমন মুহুর্তে ফারিদ তাকদিয়ারের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তার কারন ফারাজ নিজের হাতে থাকা ছুড়িটা ওনার পেটে বসিয়ে দিয়েছে। ফারিদ তাকদিয়ার কে এক ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়৷ তারপর বলে,” আমি কখনোই তোমার পক্ষে ছিলাম না ছিলাম ভালোর পক্ষে।তাই তোমার দলে ফিরে যাবার প্রশ্নই আসে না।”
-“তুই ছেলে হয়ে নিজের বাবা’র সাথে বেইমানি করলি?”
-“এটাকে যদি বেইমানি বলা হয় তাহলে তোমার প্রতিটা কাজ কি? আমার মা’র সাথে করা কাজ, ফারিন আর ফারিনের মা’র সাথে করা কাজ। জানি না আর কার কার সাথে বেইমানি করেছো। কিন্তু আমি বেইমানি করিনি, নিজ হাতে নিজের বাবা’র ভুলের শাস্তি দিলাম।”
ফারাজ এতটুকু বলে নিজের চোখের পানি মুছে সেখান থেকে বের হতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে গুলি করে ফারিদ তাকদিয়ার। কিন্তু গুলি টা ফারাজের গায়ে লাগার আগেই চন্দ্রা এসে তার সামনে দারায় যার ফলে গুলিটা ওনার গায়ে লাগে। ফারাজ দৌড়ে চন্দ্রা কে ধরলে আবারো গুলি করতে চায় ফারাজ কিন্তু কোনো বুলেট না থাকায় গুলি করতে পারেনি। ফারাজ ওনাকে কোলে নিয়ে বললেন,”এটা কি করলেন আপনি? আপনি আমার জন্য কেন এমন করলেন?”
-“আমি এমনিতেও মরে যেতাম তাই ভাবলাম মরার আগে নিজের কিছু পাপ কমিয়ে যায়। আমার শয়তানি প্লানের জন্য তোমার মা’র সাথে এমন খারাপ করছে। প্লিজ ওনাকে বলো আমাকে মাফ করে দিতে, ওনার সংসার নষ্ট করে আমি নিজেও করতে পারিনি। আমার সময় শেষ হয়ে আসছে, তুমি আমাকে কথা দাও, ফারিন কে তুমি তোমার নিজের বোনের মতো করে দেখবে, কখনো কোনো ক্ষতি হতে দিবে না। কথা দাও ফারাজ! আমার ভুলপর শাস্তির কোনো আচড় ওকে দিবে না কথা দাও!”
-“কথা দিলাম, আমি কোনোদিন….”
আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই চন্দ্রা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো। নিথর দেহ হয়ে গেল তার, সে কি করবে কিছু বোঝতে না পেরে পুলিশকে কল করে এই জায়গার এড্রেস দিয়ে সে বেড়িয়ে পরে। বাহিরে আসতেই ফারাজের শরীরে রক্ত দেখে লাজ জিজ্ঞেস করে,”তোমার শরীরে রক্ত কেন? কি হয়েছে তোমার?”
-“কিছু হয়নি!”
-“আমার মা কোথায়? মা বের হচ্ছে না কেন?”
ফারিন কথার কোনো উত্তর ছিলো না ফারাজের কাছে। সে শুধু চুপচাপ ফারিন কে জড়িয়ে ধরে। ফারিন বোঝতে পারে এই জড়িয়ে ধরার মানে সে কান্নায় ভেঙে পরে। লাজ জিজ্ঞেস করলো,” তোমার বাবা কোথায়?”
-“মরে গেছে!”
-“মানে কি বলছো তুমি?”
-“ঠিকই বলছি, আমি নিজ হাতে ওনার পেটে ছু্রি বসিয়ে দিয়েছি!”
-“এটা কি করলে তুমি? এখন যদি এগুলো জানাজানি হয় তাহলে পুলিশ তোমাকে দরে নিয়ে যাবে।”
-“আমি নিজেই পুলিশকে এ বাড়ির এড্রেস দিয়ে দিছি!”
-“তুমি পাগল হয়ে গেছো? এখন ওরা তোমাকে ধরে নিবে।”
-“কে খুন করেছে তা এখনো জানাজানি হয়নি।এখন কথা না-বাড়িয়ে চলো এখান থেকে।”
লাজকে টেনে গাড়িতে তুলল।ফারিন কে চোখে ইশারা করলে সেও গাড়িতে উঠে বসে।
#চলবে!!!