#খেলাঘর
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ২২
পর পর তিনবার থাপ্পড় দেওয়াতে সবাই একদম অবাক হয়ে যায়। লাজ রাগে চিল্লিয়ে চোখ বড় বড় করে বলে…..
-“এই থাপ্পড় গুলো আপনাকে আমার আরো অনেক আগে দেওয়ার দরকার ছিলো। প্রথম থাপ্পড় টা সেদিন দেওয়ার দরকার ছিলো যেদিন আমাকে অপহরণ করার চেষ্টা করেছিলেন। ২য় থাপ্পড় টা তখন দেওয়ার দরকার ছিলো যখন আমাকে সহ বাকি আরো কতগুলো মেয়েকে পাচার করতে চেয়েছিলেন। ৩য় থাপ্পড় টা দেওয়ার দরকার ছিলো যখন মাহেরা তাকদিয়ার কে আপনার বন্ধি থেকে মুক্তি করেছিলাম। আর এই থাপ্পড় টা চন্দ্রা আন্টিকে মারার জন্য আর আজকের দিনের জন্য।”
লাজ এই বলে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। ফারিদ তাকদিয়ার নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখে ঠোঁট কেটে গেছে। ওনি লাজকে সজোড়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। লাজ তাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে যায়। লাজের সামনে এসে দাঁড়ায় সুহানি, তার পিছনে আরো কতগুলো মেয়ে, মাহেরা তাকদিয়ারের সাথে দাঁড়িয়ে আছে ফারিন। ফারিন এসে লাজ’কে তুলে বলে…..
-“আজকেই সময়, তুমি আজকে এই মুহুর্তে সবাই কে সব সত্য টা বলবে!”
-“হুম,ভেবেছিলাম আর কিছুদিন অপেক্ষা করবো কিন্তু আজকে ওনি যা করেছেন তাতে করে ওনাকে আর সময় দেওয়া যাবে না।”
লাজ চিৎকার করে বলে……
-“ফারিদ তাকদিয়ার, আপনাদের সবার প্রিয় এমপি সাহেব যিনি লোক সমাজে মুখোশ লাগিয়ে ঘুরিয়ে বেড়াচ্ছেন। আপনারা হয়তো এতক্ষণ বোঝে গেছেন ওনার ঠিক কি কি খারাপ কাজ গুলো আমি জানি, আর যা এখন আপনাদের সামনে আনবো। তার আগে একটা রিকুয়েষ্ট প্লিজ কেউ ওনাকে এখন থেকে যেতে দিবেন না৷পুলিশ স্যারদের কাছে অনুরোধ ওনার পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর!”
বিষয়টা খুবই সিরিয়াস বোঝতে পেরে পুলিশ অফিসার আদেশ করলো ফারিদ তাকদিয়ার কে ঘিরে দাঁড়াতে। ঘিরে দাঁড়ানোর পর লাজ বলল…..
-“ওনার খারাপ কাজের কথা আমি কোন জায়গা থেকে শুরু করবো, ওনার এত এত কুকর্ম কোথায় থেকে শুরু করবো বোঝতেই পারছি না। ওনি আমাকে প্রথমে অপহরণ করার চেষ্টা করে কিন্তু সেদিন ওনার ছেলে ফারাজ তাকদিয়ার আমাকে বাঁচিয়ে নেয়। নিজে গিয়ে আমাকে বাসায় দিয়ে আসে। ঐদিন আমার করা লাইভের জন্য ওনি আরে বেশী রেগে যায় আমার প্রতি, বার বার আমাকে চেষ্টা করে কিভাবে আমাকে শাস্তি দিবে। সেজন্য ওনি ওনার নিজের ছেলেকে ব্যবহার করে,কিন্তু ফারাজ তার বাবার কোনো খারাপ কাজের কথা জানতো না। কোনো একভাবে আমাদের বিয়ে হওয়ার পর আস্তে আস্তে ওনার সমস্ত কুকর্ম আমার সামনে আস্তে থাকে। এর মাঝে জেনেও যায় ফারাজ নির্দোষ সে এসব কিছু জানে না। কিন্তু তখন বড্ড দেরী হয়ে যায় আমি তখন আমার মা বাবাকে হারিয়ে ফেলি।ফারিদ তাকদিয়ার তার লোক দিয়ে আমার বাবা মা’র খুন করিয়ে দেয়। চন্দ্রা আন্টিকেও ঐদিন ফারিদ তাকদিয়ার নিজ হাতে খুন করেছিল। কারণ চন্দ্রা আন্টি হলো ওনার অনেক পুরনো প্রেমিকা আর তাদের প্রমান হলো ফারিন। মাহেরা তাকদিয়ার কে বছরের পর বছর আটকে রেখেছিল শুধুমাত্র সম্পত্তির জন্য। ওনি মেয়ে পাচার থেকে শুরু করে ড্রাগস এর ব্যবসাও করতো!”
-“এর কোনো প্রমান আছে আপনার কাছে?”
-আমরা নিজে এর প্রমান”
পুলিশ অফিসারের প্রশ্নের উত্তর দেয় সুহানির সাথে আসা মেয়ে গুলো। সুহানি সামনে এসে বলে….
-“এই ফারিদ তাকদিয়ার আমাদের মতো অসহায় মেয়েদের সাহায্য করার কথা বলে এনে পাচার করে দেয়।সেদিন আমরাও পাচার হয়ে যেতাম শুধু মাত্র লাজ আপার জন্য বেঁচে গিয়েছিলাম। ঐদিনের পর থানায় আসতে নিলেও ওনি আমাদের কে ভয় দেখিয়ে দেয়।”
-“ফারিন, লাজ যেগুলো বলছে ও গুলো কি সত্যি?”
পুলিশ অফিসারের প্রশ্নের উত্তরে ফারিন বলে….
-“এটা একটা চরম সত্য! দিনের পর দিন ওনি আমাদের সম্পর্ক টা লুকিয়ে রেখেছিলেন, আমি বার বার বলেছিলাম আমাদেরকে সবার সামনে নিতে কিন্তু ওনি আমাদের কে কখনো সামনে নিয়ে আসেনি বরং ঐদিন আমাদের মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। শুধু মাত্র ভাইয়ার জন্য বেঁচে গিয়েছিলাম, ভাইয়া নিজের জীবনের রিস্ক নিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে ছিলো।কিন্তু আমার মা’কে বাঁচাতে পারেনি, ওনি আমার মা’কে……”
ফারিন আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই কান্নায় ভেঙে পরলো, মাহেরা তাকদিয়ার এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো।লাজ নিজের চোখের পানি নিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলল…..
-“সব গুলো শুনার পর যদি আপনাদের আমাকে অপরাধী মনে হয় তাহলে আমাকে শাস্তি দিন আর যদি ফারিদ তাকদিয়ার কে অপরাধী মনে হয় তাহলে এমন শাস্তি দিন যাতে করে ওনি সারাজীবন মনে থাকে,প্রতিটা মুহুর্ত মরার জন্য ছটফট করে কিন্তু মরতে না পারে।ওনার প্রতিটা পাপের সাজা যেন ওনি এই দুনিয়াতেই তিলে তিলে পেয়ে যায়।”
লাজের কথা শুনে ফারিদ তাকদিয়ার পালাতে নিলেই পিছন থেকে কেউ একজন হকিস্টিক ছু্রে মারে। ঘাড়ে হকিস্টিক লাগায় নিচে পরে যায় ফারিদ তাকদিয়ার। পুলিশ ওনার চারপাশে বন্ধুক ধরে দাঁড়ায়। ফারাজ নিজের রক্তাক্ত শরীর নিয়ে পুলিশ অফিসারের সামনে গিয়ে বলে…..
-“অফিসার আমি ওনার সন্তান হয়ে বলছি ওনি যেন আর কখনো জেলখানা থেকে বের না হতে পারে। আর ওনার মনোনয়ন যেন বাতিল করে দেওয়া হয়!”
-“দেখুন, আমরা ওনাকে থানায় নিয়ে যাবো। তারপর আদালত যা সিদ্ধান্ত দিবে তাই হবে।”
পুলিশ অফিসার এই বলে ফারিদ তাকদিয়ার নিয়ে যায়। লাজ এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে…
-“তুমি ঠিক আছে তো?”
-“হুম,আমি ঠিক আছি।শুধু একটু ব্যাথা ব্যাথা লাগছে কিন্তু তখন আয়েরা না পৌঁছালে হয়তো আমি আর এখানে আসতে পারতাম না!”
ফারাজের কথা শুনে লাজ আয়েরা’র দিকে তাকালে আয়েরা বলে…..
-“আমি সুহানিদের কে নিয়ে যখন আসছিলাম তখনই রাস্তায় ফারাজ কে ওদের সাথে মারপিট করতে দেখলাম।আমি ওদেরকে আলাদা গাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে ফারাজের কাছে গেলাম। নিজের কাছে রাখা বন্ধুক টা বের করে উপরে গুলি করতেই ওরা ভয় পেয়ে গেল। আর ঐ ভয়টা কে কাজে লাগিয়েই আমি ফারাজ কে নিয়ে আসলাম!”
লাজ আয়েরা’কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলল….
-“তোকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না, তুই সেই দিন থেকে আমার সাথে ছিলি যেদিন থেকে ফারিদ তাকদিয়ার এর সাথে প্রথম কথা হয়। তুই প্রতিটা মুহুর্ত আমাকে সাহায্য করেছিলি, সবসময় আমাকে আগলে রেখেছিলি। তোর মতো বান্ধবী যেন প্রতিটা মেয়ে পায়”
-“যা, আমাকে কমন কেন করছিস। জানিস না আমি কমন জিনিস লাইক করি না। আমি ওয়ান পিস আর আনকমন!”
আয়েরা’র কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো।
কয়েক ঘন্টার ভিতরে পুরো শহরে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। ফারিদ তাকদিয়ারের বিরুদ্ধে একের পর এক র্যালি বের করছে৷ ফারিদ তাকদিয়ারের মতো পুতুলে জুতার মালা থেকে শুরু করে আগুনে পুরানোও হয়েছে। বাধ্য হয়ে সন্ধ্যায় নির্বাচন অফিস থেকে ঘোষনা দেওয়া হয়।
“মিস্টার ফারিদ তাকদিয়ারের মনোয়ন বাতিল করার সাথে সাথে ওনার এখনেও ক্ষমতাও শেষ করে দেওয়া হলো। আর আগামী মন্ত্রী কে হবে তা এক সপ্তাহ পর জানানো হবে।”
ফারাজ নিজের রুমে শার্ট খুলে দেখছিল কোথায় কোথায় আঘাত পেয়েছে। লাজ হঠাৎ রুমে ঢুকতেই ভেসে উঠলো পিঠে থাকা দাগ গুলো, অনেক জায়গাতেই ব্যাথা পেয়েছে। লাজকে দেখে তারাতাড়ি করে ফারাজ শার্ট জড়িয়ে নিলো। কারন সে জানে লাজ অনেক টেনশন করবে। লাজ দরজা লক ওর সামনে গিয়ে শার্ট টা সরাতে চায়লে,ফারাজ বাঁধা দেয়। লাজ কোনো বাধা না মেনে শার্ট টা টান দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। ফারাজের আঘাত পাওয়া জায়গা গুলোতে স্পর্শ করতেই ফারাজ চোখ বন্ধ করে ফেলে। লাজের চোখে পানি চলে আসে, সে ছলছল চোখে জিজ্ঞেস করে…..
-“খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না!জ্বালা করছে?”
-“কই নাতো!”
-“মিথ্যা বলো না,আমি জানি খুব কষ্ট হচ্ছে।”
ফারাজ আর কিছু বললো না, লাজ ফারাজের পিঠের আঘাত পাওয়া জায়গাতে নিজের ঠোঁট দিয়ে কিস করতেই ফারাজ চমকে উঠে। লাজ একে একে সমস্ত জায়গাতে কিস করতে লাগলো। ফারাজ একটু শয়তানি করে বলল….
-“ঠোঁটের পাশে আর ঠোঁট ও কিন্তু অনেকটা কেটে গেছে তাহলে কি?”
ফারাজের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই লাজ নিজে ফারাজের ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়। ফারাজ একদম অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলে। পরক্ষণে ফারাজও লাজের চুলের মুঠি ধরে স্বাদ নিতে লাগলো। লাজ কে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো, বুকের উপর থেকে শাড়ির আঁচল টা টান দিতে যাবে তখনই লাজ বাঁধা দেয়৷ ফারাজ বোঝতে পারলো লাজ আজকেও এসবের জন্য প্রস্তুত নয়। সে মুখ টা মলীন করে চলে যেতে নিবে তখনই লাজ ওর হাত ধরে ফেলে। লাজের দিকে তাকিয়ে দেয়ে লাজ হাসি দিচ্ছে তাও আবার লজ্জা মাখা৷ ফারাজকে একটানে নিজের বুকে উপর ফেলে দেয়৷ আবারো ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়। আস্তে আস্তে তাদের মাঝে থাকা অসম্পূর্ণ ভালোবাসা টাকে পূরন করে। তারা তাদের মাঝের সম্পর্ক টা আজকে আরো গভীরে নিয়ে যায়।
এক সপ্তাহ পর…..
কোনো প্রতিদন্ধী ছাড়ায় মন্ত্রী হলেন লাজ। পুরো শহর যেন এটাই চেয়েছিল। লাজ নিজেও জানতো না তাকে সবাই এতটা ভালোবাসে। সবটা জেন ওর কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে। এতকিছুর পরও যেন লাজের মনে শান্তি আসছে না। ফারিদ তাকদিয়ারকে যাবৎ জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সারা শহর জুড়ে একটা উকিলও পাওয়া গেল না ওনার জন্য যার ফলে এক সপ্তাহের ভিতরেই ওনার শাস্তির ঘোষনা হয়ে গেল। লাজ আজকে ফারিদ তাকদিয়ারের সাথে দেখা করতে থানায় এসেছে। ফারিদ তাকদিয়ার জেলের ভিতরে বসেছিল লাজ শিস দিয়ে বলল…
-“আহ, বড্ড কষ্ট হচ্ছে আপনাকে এভাবে দেখে। না জানি কত কষ্ট হচ্ছে। আচ্ছা রাত ঘুম হয়তো ঠিক মতো? নাকি এখনো স্বপ্ন দেখেন এম পি হওয়ার!”
লাজ কথাটা বলে শয়তানি হাসি দিলে ফারিদ তাকদিয়ার রেগে বলে….
-“এখানে তুমি কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে এসেছো?একটা বার বের হতে দাও তারপর তোমার আমি এমন হাল করবো যা ভাবতেও পারছো না!”
-“আপনার এই জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা আর গেল না।যায় হোক আপনাকে একটা শক নিউজ দিতে এসেছি।”
-“কি শক নিউজ?”
-” এই পেপার!”
লাজ একটা পেপার ওনার দিকে দিলে, ফারিদ তাকদিয়ার জিজ্ঞেস করে….
-“কিসের পেপার?”
-“আপনার সমস্ত সম্পত্তি ফারাজ ফারিন আর মায়ের নামে লিখে দিয়েছেন। ঠিক আগে যেমন করেছিল তেমনি শুধু আপনার কেনা সম্পত্তি গুলো ফারিনের নামে!”
-“হুয়াট! আমি কখন এমন করলাম?”
-“ওমা, মনে নেই। যেদিন আপনার কাছে নির্বাচন অফিস থেকে আপনার সই নিতে এসেছিল সেদিনই তো করলেন”
-“মানে?”
-“মানে হলো, ঐদিন আমি অফিসারের সাথে কাগজ চেন্জ করে দিয়েছিলাম ধাক্কা খাওয়ার নাটক করে, আর বের হওয়ার সময় পেপার টা আবার নিয়েছিলাম পেপার চেন্জ হয়ে যাওয়ার কথা বলে। তাই তো সেদিন আপনার দুইবার সাইন করতে হয়েছিল।”
-“তারমানে?”
-“একেই বলে কৈ এর তেল দিয়ে কৈ ভাজা! আচ্ছা আমার শক নিউজ দেওয়া হয়ে গেছে, আমি গেলাম বাই!”
লাজ একটা শয়তানি হাসি দিয়ে চুল উড়িয়ে চলে গেল। ফারিদ তাকদিয়ার ধপাস করে নিচে বসে পরলো। নিজের চুল ধরে টানতে লাগলো। রাগে জিদে পাশে থাকা পানির পাত্র টা ভেঙে ফেলল।
একদিকে লাজ তার সংসার এর পাশাপাশি এম পি এর কাজ সামলাচ্ছে, অন্যদিকে ফারিদ তাকদিয়ার সব হারিয়ে জেলখানায় পাগলের মতো আচরন করছে। একেই বলে অতি লোভে তাঁতি নষ্ট। ওনি যদি লোভ না করতেন তাহলে এত এত পাপ করতেন না আর আজকে এমনও হতো না৷ হয়তো পরিবারের সবার সাথে সুন্দর ভাবে বাকি জীবন টুকু কাটাতে পারতো।
সবার ভালোবাসা নিয়ে এইখানেই শেষ করলাম #খেলাঘর
গল্পটা যদি ভালো লাগে তাহলে সবাই একটা একটা করে রিভিউ দিবেন আশা করি।
#ধন্যবাদ
❤️সমাপ্তি❤️