গল্পঃ তুমি_ছারা_আমি_শূন্য পর্বঃ ৩/৪

0
1790

গল্পঃ তুমি_ছারা_আমি_শূন্য
পর্বঃ ৩/৪
লেখকঃ #Mohammad_Asad

“এই শক্ত করে জরীয়ে ধরো আমায়। তোমাকে বাসায় রেখে আসি। তারপর নিজের বাসায় চলে যাবো আমি বুঝছো”
-হিহিহি হুম,
-পেত্নী একটা পেত্নীর মতো হ্যাঁসো।
-এই পাজি ছেলে আমি পেত্নী না।
-হা হা, তুমি পেত্নী না, তবে আমার দুষ্টু বউ।
-এখনো বউ হইনাই ওকে? আপনি আবার পাল্টে যাবেন নাকি আল্লাহ ভালো যানে।
-ইসস কি বলে পেত্নীটা, আমার এতো সুন্দর কিউট একটা বউ থাকতে পাল্টে যাবো কেন হুম?
-হয়েছে হয়েছে এবার বাসায় চলেন।
-তোমার বাসা কোনদিকে।
-ঔই তো ঔই দিকে।

নিশাতের কথা মতো নিশাতের বাড়ির দিকে বাইক নিয়ে যাচ্ছে ছাদিক।
-এই তো চলে এসেছি থামুন।
-এইটা তোমার বাসা?
-হুম
-আমাকে নিয়ে যাবে না তোমার বাড়ির ভিতরে?
-নাহ্ আম্মু দেখলে খারাপ ভাববে।
-ধুর বোকা মেয়ে মজা করলাম। আমি কি বোকা নাকি। যে তোমার আম্মুর হাতে মার খেতে যাবো।
-হিহিহি আচ্ছা বাই।
-হুম বাই।

-ভালোবাসি বলো একটু প্লিজ।
-হ্যাঁ অনেক বেশি ভালোবাসি।

ছাদিক মিস্টি হেঁসে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিয়ে দেয়। এদিকে নিশাত বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই আম্মু বলে উঠে।
-নিশাত কোথায় গিয়েছিলিস রে?
-কই আম্মু বান্ধবীদের সঙ্গে ঘুরতে গেছিলাম।
-ওহ, আচ্ছা।
-হুম

নিশাতের পরিবার বলতে, আব্বু আম্মু নিশাত আর ছোট্ট ভাই আরাফাত মিলিয়ে সুখি পরিবার। নিশাতের ছোট্ট ভাই ক্লাস সিক্স এ উঠেছে এবার।

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে তাই ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসে নিশাত। আম্মুর বানানো আমের আচার খেয়ে পড়তে বসে। নিশাত আসলে একটা বাচ্চা মেয়েদের মতো খাওয়াদাওয়া চলাফেরা কথা বলা। তবে ছেলেদের দেখলে বড় মেয়েদের থেকেও বেশি হয়ে যায় নিশাত। যাকে বলে ডাইনি।

নিশাত এবার ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। নিশাত এখনো ছোট্ট বলায় যায়। নিশাতের বাচ্চা টাইপের আচরণ গুলো ছাদিকের ভালো লেগে যায়। নিশাতের কেন যানি পড়ায় মন বসছে না আজ। শুধু ওই হাতিটার কথা মনে পরছে সবসময়। হাতি বলতে ছাদিককে বুঝানো হয়েছে। নিশাতের আম্মু রুমে এসে দেখে নিশাত বই নিয়ে বসে আছে। তাই মুচকি হেঁসে নিশাতকে দেখে রুমের বাইরে চলে নিশাতের আম্মু।

নিশাত কি আর পড়ছে? পাগলীটা সবসময় ছাদিকের কথা ভেবে যাচ্ছে। “ইসস ওই পাগলটার কি একটুও লজ্জা নেই। সরাসরি কেমন করে বললো। আমার বউ হবে। ছেলেটার মাথার তার ছিঁরা আছে মনে হয়। হিহিহিহি তবুও কেন যানি ছাদিককে ভালো লেগে গেছে আমার। উফফ্ যা লাগছিলোনা আজ একদম হিরো। “কথা গুলো ভেবে যাচ্ছে নিশাত। আর বইয়ের দিকে তাকিয়ে মিস্টি মিস্টি হেঁসে যাচ্ছে।” ছাদিকের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল কালকে। কতকি না বলে দিছিলাম হিহিহিহি। আরেকটু বকা দেওয়া লাগতো। তাহলে সারাজীবন মনে রাখতো হাতিটা।”

নিশাতের ভাই আরাফাত রুমে এসে বলে।
-আপু তুমি বইয়ের দিকে তাকিয়ে মিস্টি মিস্টি হেঁসে যাচ্ছো কেন বলোতো।
“নিশাত এবার বইটা রেখে আরাফাতের দিকে তাকিয়ে বলে।”
-ওহ তুই। ক’ই কখন হ্যাঁসলাম আমি।
-আপু তুমি একটু আগে বইয়ের দিকে তাকিয়ে হেঁসে যাচ্ছিলে আমি তা ভালো করে যানি।
“নিশাত হিহিহিহি হোহোহো করে হেঁসে বলে”
-তুই যা ভাবছিস তাই।
-মনে কি বাতাস বইছে নাকি আপু।
-ওই পিচ্চি এখান থেকে যাবি তুই।
-যাচ্ছি যাচ্ছি একটু মজা করাও যাবেনা।
-সবসময় মজা ভালোনা আরাফাত।
-ওকে ওকে চলে যাচ্ছি। আব্বু আরেকটু পর চলে আসবে অফিস থেকে। তখন তোমার ভ্যাগের খাররটাও খেয়ে নিবো।
-আচ্ছা খেয়ে নিস সমস্যা নেই।
-সত্যি আপু’ই
-হুম সত্যি

আজকে যে রোমান্টিক হাওয়া বইছে নিশাতের মনে। শুধু ছাদিকের কথাগুলো মনে পরে যাচ্ছে। নিশাত অনেকদিন ধরে টাকা জমা করে রেখেছিল। নিশাত কালকে ছাদিককে একটা গিফট দিবে তাই। ভালোবাসার প্রথম গিফট। নিশাত ভেবেছিলো। বিয়ের পর বরকে একটা গিফট দিবে তবে ছাদিক নিশাতের জীবনে চলে এসেছে। তাই নিশাতের আর তর সইছে না।
.
.

ছাদিক বাইক রেখে নিজের বাসার ভিতরে চলে যায়। নুসরাত ভাবি এসে ছাদিককে বলে”
-কোথায় গিয়েছিলিস ছাদিক?
-এই তো ভাবি, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম।
-ওহ আচ্ছা। তোর এখানে আবার বন্ধু আছে?
-হুম আছে তো।
“নুসরাত ভাবি ছাদিকের হাতে একটা কাগজ দিয়ে বলে।
-ছাদিক তোমার ভাইয়ার ঔষধ গুলো নিয়ে এসো তো।
-আচ্ছা ভাবি আমি এই যাচ্ছি। আর এই চলে আসছি।

ছাদিকের হাতে কাগজের টুকরোটা দিয়ে নিজের রুমের চলে যায় নুসরাত ভাবি। কাগজের টুকরোটায় লিখে দিয়েছে কি কি ওষুধ আনতে হবে। আসলে নুসরাত ভাবি ছাদিককে একদম পচ্ছন্দ করে না। ছাদিক যেন নুসরাত ভাবির চোখের বালি। ছাদিক বুঝতে পারে নুসরাত ভাবি ছাদিককে দেখতে পারেনা। তবুও হেঁসে হেঁসে চলে ছাদিক। কারণ ছাদিকের মা-বাবা এই পৃথিবীতে নেই। ছোট্ট থাকতে মা-বাবা মারা যায় ছাদিকের। তারপর খালার বাসায় মানুষ হয় ছাদিক। ছাদিকের ভাই রাসুল ভাইকে অনেক ভালোবাসে। নুসরাত ভাবি রাইসুলের কাছে গিয়ে বলে।”
-তোমার ঔষধ গুলো ছাদিকের হাতে লিখে দিলাম। এখন ভালো মতন নিয়ে আসলেই বাঁচি।
“রাইসুল মুচকি হেঁসে বলে”
-তুমি এমন করে বলছো কেন বলোতো। তুমি ছেলেটার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও ছেলেটা কতসহজে সবকিছু মেনে নেয়। তবুও এমন করো কথা বলো কেন? ছেলেটার সঙ্গে।
“নুসরাত ভাবি রেগে দাঁত কটমট করে বলে”
-আমার কোনো ইচ্ছে নেই ওকে। তোমার ভাইয়ের সঙ্গে ভালোবেসে কথা বলার।
-আচ্ছা জান ঠিক আছে। আমার কাছে একটু এসো তো মাথাটা একটু টিপে দেও ব্যথ্যা করছে।

নুসরাত ভাবি রাইসুলকে ভালোবাসে তবে ছাদিককে কেন যানি চোখে দেখতে পায় না। সামনে দেখলেই শুধু শরীল জ্বলতে থাকে। নুসরাত ভাবি মনে করে এই বাড়িতে এসে ছাদিক অন্ন নষ্ট করছে।

কিছুক্ষণ পর ছাদিক ঔষধ’গুলো কিনে রুমে নিয়ে আসে। এসেই ভাইয়ের কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর কিছুটা কমেছে। নুসরাত ভাবি রাইসুলের পার্শে বসে ছিলো। ছাদিককে দেখে শরীল জ্বলছে নুসরাত ভাবির।
-ভাইয়া এই তোমার ঔষধ। সময় মতো খেয়ে নিও। আমার রুমে গেলাম আমি।

কথাগুলো বলে ছাদিক নিজের রুমে চলে যায়। এদিকে নুসরাত রাইসুলকে বলে।
-তোমার ভাই আর কতদিন থাকবে এই বাড়িতে?
-এমন করে বলছো কেন নুসরাত!! কালকে চলে যাওয়ার কথা। একটু ভালোবেসে কথা বলতেই তো পারো।
-আমার বয়ে গেছে। ভালোবেসে কথা বলার।
-আচ্ছা নুসরাত তোমার এতো কিসের রাগ ছাদিকের উপর বলোতো?

আসলে নুসরাত ছিলো ছাদিকের বেস্ট ফেন্ড। নুসরাত ছাদিককে ভালোবাসতো। তবে ছাদিক বেস্ট ফেন্ডের চোখেই দেখতো নুসরাতকে। একদিন নুসরাত ছাদিককে বলে ফেলে ভালোবাসি তার পরিণামে ছাদিক নুসরাতের গালে কসে দুইটা থাপ্পড় মেরেছিলো। বলেছিলো আমরা শুধুমাত্র বেস্ট ফেন্ড আর কিছুনা ওকে। নুসরাত সেদিন চোখ দিয়ে জল ফেলেছিলো। তারপর নুসরাতের বিয়ে হয়ে যায়। ছাদিক যানতোনা নুসরাত তার নিজের ভাইকে বিয়ে করছে। বিয়ের দিন নুসরাত আর ছাদিক সবকিছু যেনে যায়। তারপর থেকে নুসরাত ভাবি ছাদিককে দেখতে পারে না। তবে ছাদিক নুসরাত’ভাবিকে নিজের মায়ের মতো সম্মান দেয়। আগে হয়তো বেস্টফেন্ড ছিলো। তবে এখন না।
নুসরাত এখন রাইসুলের বউ। ছাদিকের ভাবি এটাই বড় পরিচয়। ছাদিক নুসরাতের কাছে অনেক ক্ষমা চেয়েছে তবে নুসরাত কক্ষনো ক্ষমা করেনি।
.
.
ছাদিক নিজের রুমে সুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর আফরোজা রুমে আসে। আফরোজা হচ্ছে রাইসুল আর নুসরাতের পিচ্চি মেয়ে। ক্লাস ওয়ান এ পড়ে। কবেল মাত্র ৬বছর বয়স। টুকটুক করে ছাদিকের কাছে আসে আফরোজা। ছাদিক মিস্টি হেঁসে বলে।
-আমার মামনী নাকি এটা রে,,

আফরোজা ছাদিকের কাছে আসলে ছাদিক আফরোজার কাপালে ছোট্ট করে চুমু দিয়ে বিছানার ডানদিকে দিকে বসে নেয়।
-মামনী এতক্ষণ কোথায় ছিলে তুমি?
-হিহিহিহি
-বলো কোথায় ছিলে।
-আমি তো আম্মুর কাছে ছিলাম।
-তাই
-হু

আফরোজা বড়দের মতো কথা বলতে থাকে ছাদিকের সঙ্গে। ছাদিক আজকে আফরোজার জন্য পতুল কিনে এনেছে। পুতুলটা ব্যাগ থেকে বের করে। পিচ্চিটাকে দিয়ে বলে।
-মামনী পচ্ছন্দ হয়েছে তোমার।
-হুম খুব পচ্ছন্দ হয়েছে। এটাকি আমার।
-হুম তোমার। আমাকে একটা থান্কিউ দিবেনা মামনী?
-হিহিহিহি থান্কু

ছাদিক টেবিলে বসে আছে। আর আফরোজার দিকে তাকিয়ে আছে। আফরোজা বিছানায় বসে বসে পুতুল নিয়ে খেলা করছে। ছাদিক আফরোজার দিকে তাকিয়ে আছে। আফরোজার বাচ্চামি গুলো দেখছে আর মুচকি মুচকি হেঁসে যাচ্ছে।
.
.
রাত ৯টার দিকে।
ছাদিক রাইসুল নুসরাত আফরোজা সকলে মিলিয়ে রাতের ভাত খেয়ে নেয়। তারপর যে যার রুমে চলে যায়। আফরোজা আজকে ছাদিকের রুমে আছে। নুসরাত মানা করেছে তবে আফরোজা ছাদিকের সঙ্গে থাকবে জেদ ধরেছে পিচ্চিটা। তাই নুসরাত আর না করতে পারিনি। অনেক রাত পযন্তু পিচ্চি আফরোজার সঙ্গে গল্প করে ছাদিক।
.
.
রাত ১২টা,
আফরোজা ঘুমিয়ে পরেছে। পিচ্চিটা একদম কিউটের ডিব্বা। ঘুমের মাঝে আরো সুন্দর লাগছে পিচ্চিটাকে। ছাদিক ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে কে যেন অনেকবার মিসকল
দিয়েছে। ছাদিক বুঝে যায় এটা নিশাত ছারা আর কেউ না। “ছাদিক ঢুক গিলে মনে মনে ভাবতে থাকে। আজকে আমাকে খেয়ে ফেলবে মনে হয় মেয়েটা। ২৫বার মিসকল দিয়েছে। ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম তাই বুঝতে পারিনি। মিসকল উঠে থাকা নম্বরটায় ফোন দেয় ছাদিক।

ছাদিক ফোন দিলে বারবার কেঁটে দিচ্ছে নিশাত। অনেক রাগ করে আছে হয়তো। ছাদিক একটা মেসেজ দেয় নিশাতের ফোনে।”
“স্যরি জান ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম তাই বুঝতে পারিনাই। তুমি এতোবার মিসকল দিয়েছো।” মেসেজটা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিশাত ছাদিকের ফোনে কল দেয়।

(চলবে?)

গল্পঃ #তুমি_ছারা_আমি_শূন্য
পর্বঃ ৪
লেখকঃ #Mohammad_Asad

“ঔই হাতির বাচ্চা হাতি বাঁদর বিলাই কুত্তা হনুমান। তোকে আমি গিলে ফলবো একদম। কতক্ষণ থেকে ফোন দিচ্ছি ফোন রিসিভ করিস না কেন?
“ছাদিক একটু ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে বলে।
-স্যরি জান আমার পিচ্চি বাবুটার সঙ্গে গল্প করছিলাম। বাবুটা এখন ঘুমিয়ে পড়েছে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি তুমি অনেকবার ফোন দিয়েছো । তাই তো ফোন দিচ্ছিলাম তোমাকে। তবে তুমি তো ফোন রিসিভ করছিলেনা। আমি যানি তো তুমি অনেক রাগ করেছো।
-কিহহ্ তোমার পিচ্চি বাবু মানে। একটু আগে কি যেন বললে পিচ্চি বাবু। তোমার বাবু কোথা থেকে আসলো?
-আরে পাগলী, আফরোজার কথা বলছি।
-এই আফরোজাটা কে?
-আমার মামনী।
“নিশাত এবার রেগে দাঁত কটমট করে বলে”
-মামনী মানে? তোমার আবার মেয়ে আছে। তার মানে তোমার বউও আছে। তাহলে আমাকে মিথ্যা ভালোবাসা দেখালে কেন। আমি আগে যা ভাবতাম তাই ঠিক। ছেলেরা সত্যি’ই অনেক বাজে। অভিনয় করতে ভালোই পরে।
“ছাদিক মুখ চাপিয়ে হেঁসে হেঁসে বলে।”
-আরে পাগলী, আমার বউ থাকতে যাবে কেন? আমি শুধু তোমায় ভালোবাসি। আমি যাকে মামনী বলছি। মামনীটা আসলে আমার ভাইয়ার পিচ্চি মেয়ে আফরোজা। তাই আমি পিচ্চিটাকে মামনী বলি বুঝছো।
-ওহহ্ আচ্ছা। স্যরি তোমাকে ভুল বুঝার জন্য।
-পাগলী একটা। আমি শুধু তোমায় ভালোবাসি বুঝছো।
-হুম বুঝেছি বুঝেছি, কতটা ভালোবাসেন আমায়। হাতি একটা,
-এই আমাকে হাতি বললে কেন?
-কারণ আপনি একটা হাতি তাই।
-আমাকে তোমার কোনদিক দিয়ে হাতি মনে হয় বলোতো।
-আপনি তো এমনিতেই আস্ত একটা হাতি। অন্য ভাবে হাতি বলতে যাবো কেন হুম।
-ওহহ্ আচ্ছা আমি হাতি না। তাহলে তুমি পেত্নী।
-এ্যা এ্যা এ্যা এ্যা।
-এই কান্না করছো কেন?
-আপনি আমাকে পেত্নী বললেন কেন?
-তুমি আমাকে যে হাতি বললে, তাই আমি তোমাকে পেত্নী বললাম।
-এই আপনার ভালোবাসা। আমি নাহয় এট্টু ভালোবেসে হাতি বললাম। তাই বলে পেত্নী বলতে হবে আমায়?
“ছাদিক হাহাহা হিহিহি হেঁসে হেঁসে বলে।”
-তুমি আমাকে ভালোবেসে হাতি বলেছো তাই আমি ভালোবেসে তোমায় পেত্নী বলেছি। আমি কি কোনো ভুল করেছি বলো।
-এই বরজাদ ছেলে আমাকে পেত্নী বলবেন না একদম।
-আচ্ছা ঠিক আছে পেত্নী বলবোনা। তাহলে তুমিও আমায় হাতি বলবে না ওকে।
-আপনি তো হাতি’ই হাতি বলবো না কেন?
-তুমি তো পেত্নী’ই পেত্নী বলবো না কেন?
-আপনি কি আমার সঙ্গে ঝগড়া করতেছেন?
-হুম, তুমি যা ভাবছো তাই।
-আমাদের সম্পর্কটা এখানেই শেষ করে দিবো এমন করলে।
-বাহহ্ রে। তুমি ভালোবেসে হাতি বললে কিছু না। আর আমি ভালোবেসে পেত্নী বললেই দোষ তাই না। আর কি বললে সম্পর্ক শেষের কথা। তুমি চাইলেও তোমাকে ছেরে কোথাও যাবোনা আমি। কারণ অনেক ভালোবাসে ফেলেছি তোমায়। আজকে আমাদের সম্পর্ক শুরু হয়েছে আর এমন কথা বলছো কেন?
-স্যরি, আপনি আমাকে ছেরে যাবেন না প্রমিজ করুন প্লিজ।
-এই যে প্রমিজ করছি তোমাকে ছেরে কোথাও যাবো না আমি।
-আচ্ছা আপনি আমায় কবে বিয়ে করবেন?
-তোমাকে বলেছিলাম না এক বছর পরে।
-কেন কেন একবছর পরে কেন?
-ইসস্ তোমার কি তর সইছেনা নাকি?
-ওই পাজি ছেলে যা বলেছি তার উত্তর দে শুধু।
-সময় আছে মহারানী। আমাকে একটু তৈরি হইতে সময় দেও এই এক বছরে। তারপর লাল টুকটুকে শাড়ী পড়িয়ে বউ করে নিয়ে আসবো তোমায়।
-ইসস্ আপনার কি একটুও লজ্জা করে না?
-নাহহ্ লজ্জা করেনা।
-হাতি একটা,
-পেত্নী একটা,
-হাতি কালকে কলেজের রাস্তায় একটু আসবে কেমন।
-হুম যাবো তো। আমার পেত্নীটা যে যেতে বলেছে। আমি কি না করতে পারি বলো।
-হিহিহিহি,
-পেত্নী একটা।
-তোমার জন্য একটা গিফট আছে। কালকে সকাল নয়টায় কলেজের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে কেমন। আর হ্যাঁ বাইক নিয়ে আসবেনা একদম।
-আচ্ছা ঠিক আছে। কালকে সকাল নয়টায় কলেজের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবো। তবে গিফট কেন বুঝলাম না। টাকা নষ্ট করেছো তাই না?
-ঔই হনুমান আমি যা ইচ্ছে তাই গিফট করি। বেশি কথা না বলে চুপচাপ থাকবে।
-প্রথমতো আমি যানি না, তুমি কি গিফট করবে আমায়। তবে হাতি থেকে হনুমান বলতে শুরু করলে কেন?
-হিহিহিহি
-পেত্নী
-হনুমান নামটা আপনার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে তাই আপনি হনুমান।
-আচ্ছা পেত্নী আমি কি হনুমানের মতো দেখতে?
-হুম আপনি একদম হনুমানের মতো দেখতে হিহিহিহি।
-পেত্নী একটা,
-আমি পেত্নী না,
-আমিও হনুমান না বুঝলে।
-হিহিহিহি
-আচ্ছা নিশাত একটা কথা বলি।
-হুম বলেন।
-তুমি আমাকে আপনি আপনি করে বলছো কেন?
-স্যরি,
-থাক স্যরি বলতে হবে না। আমাকে তুমি পর ভাবো তাই তো।
-তা না, একদম না।
-তাহলে আপনি করে বলছো কেন?
-হিহিহিহি
-আবার হাঁসো কেন?
-আস্তে আস্তে তুমি করে বলবো ওকে। হনুমান, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে বাই।
-আচ্ছা আমারো খুব ঘুম পাচ্ছে, আল্লাহ হাফেজ।
-আল্লাহ হাফেজ।

ছাদিক ফোনটা কেঁটে দেয়। ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত একটা বেজে গেছে।
লাইটটা ওফ করে দিয়ে আফরোজার পার্শে সুয়ে পরে ছাদিক। নিশাতের কথাগুলো মনে পড়তেই ছাদিক মুচকি হেঁসে উঠে। আসলে মেয়েটা অনেকটাই বাচ্চা টাইপের।
.
.
ফজরের আজানের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে নিশাতের। “উফফ্ অনেক রাত করে ঘুমিয়েছিলাম তাই তো ঘুম ভাঙছিলোনা।”

নিশাত টুকটুক করে হেঁটে গিয়ে ওজু করে আসে। জায়নামাজ বিছিয়ে ফজরের নামাজ পড়ে নেয়। নামাজ শেষে আবার ঘুমিয়ে পড়ে নিশাত।
.
.
সকাল নয়টার সময় কলেজের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে নিশাত। “এই পাগলটা এখনো আসছেনা কেন? কালকে বললাম নয়টার সময় আসতে। এখনো আসছেনা কেন? আসুক আগে তারপর ঔই হনুমানটাকে দেখাচ্ছি।

৯ঃ৩০ বেজে গেছে ছাদিকের আসার কোনো নামি নেই। নিশাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বোঁর হয়ে গেছে। ” ধুর এতোক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে আছি হনুমানটা আসছেনা কেন এখনো? ফোনটাও তো ধরতেছে না।”
আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে নিশাত, মাথা নিচু করে আছে। “তাহলে আমাক ভালোবাসে না ছাদিক।” হাজারো প্রশ্ন বইতে থাকে নিশাতের মনে। “ছাদিক কেন আসছেনা।” আরো কিছুক্ষণ পর নিশাত তাকিয়ে দেখে ছাদিক হাঁফাতে হাঁফাতে আসছে। ছাদিক নিশাতের কাছে এসেই বলে।
-নিশাত স্যরি একটু লেট হয়ে গেছে।
“নিশাত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলছেনা”
-স্যরি বলছি তো। আমি যানি তো, তুমি অনেক রাগ করে আছো। কি বলোতো অনেক সকাল করে উঠছিলাম, তাই তো লেট হয়ে গেলো।
“নিশাত ছাদিকের চোখের দিকে তাকিয়ে রেগে দাঁত কটমট করে বলে।
-ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখেছো কয়টা বাজে?
“ছাদিক ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল দশটা বেজেছে। ছাদিক আমতা আমতা করে বলে”
-স্যরি এতো লেট করার জন্য।
-আগে বলো কয়টা বেজেছে?
-দশটা
-কয়টার সময় আসার কথাছিলো?
-নয়টার সময়।
-হুম
-এখনো রাগ করে আছো?
-হুম অনেক রাগ করে আছি।
-তুমি তো বাইক নিয়ে আসতে বারণ করলে। তাই তো এতো লেট হয়ে গেলো।

এদিকে নিশাত আর ছাদিককে দেখে ফেলে রাইসুল।
-তাহলে এই ব্যপ্যার এই জন্য আমার ভাইটা দৌড়ে দৌড়ে আসছিলো।”

নিশাত মিস্টি হেঁসে ছাদিকের হাতে একটা লাল টুকটুকে গোলাপ ফুল ধরিয়ে দেয়। আর ছাদিকের হাতটা শক্ত করে ধরে বলে। -কখনো ছারবোনা তোমার এই হাত। তুমিও প্রমিজ করো কখনো ছারবেনা আমার এই হাত।”
-কথাদিলাম কখনো ছারবোনা তোমার এই হাত।

নিশাত আর ছাদিকের প্রেম ভালোবাসা দেখে রাইসুল ছাদিক আর নিশাতের কাছে আসে। রাইসুল বলে উঠে।
-নিশাত তুমি এখানে!!
-স্যার আ……আ…আপনি!
-হুম আমি, তো তোমার পর্শে যে একটা বান্দর দাঁড়িয়ে আছে। তাকে আমার দিকে তাকাতে বলোতো।
“ছাদিক ভয় পেয়ে একদম পিছনে তাকাচ্ছে না। ছাদিক ভালো করে বুঝতে পেরেছে পিছনে ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।”
“রাইসুল নিশাত আর ছাদিকের কাছে এসে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে”
-তোমরা রাস্তা ঘাঁটে প্রেম না করে। কোথাও ঘুরতে গেলেই তো পারো। মানুষ দেখলে খারাপ ভাববে। ছাদিক আমার দিকে তাকা একটু।
“ছাদিক একটু ভয়ে পেয়ে ভাইয়ার দিকে তাকায়।”
-ভাইয়া আমি………….
-থাক আর কিছু বলতে হবেনা। আমি যানি তুই কখনো খারাপ কাজ করতে পারিস না।তুই পারফেক্ট মেয়েকে চয়েস করেছিস। নিশাত অনেক ভালো মেয়ে। আমি তা ভালো করে যানি। তবে এখানে কথা না বলে কোথাও ঘুরতে গেলে তো পারিস। লোকজন দেখলে খারাপ ভাববে।
-আচ্ছা ভাইয়া ঠিক আছে।
-এই নে ৫০০টাকা।
-ভাইয়া তুমি টাকা দিচ্ছো কেন আমার কাছে তো টাকা আছে।
-আছে তো কি হয়েছে। দিলাম নিয়ে নে।
-আচ্ছা

রাইসুল নিশাত আর ছাদিকের মাথায় হাত দিয়ে বললো। “প্রেম করো তবে খারাপ কাজে লিপ্ত হই’ও না।” কথা গুলো বলে রাইসুল ওখান থেকে চলে যায়।

ছাদিক নিশাতের দেওয়া গোলাপটা হাতে নিয়ে আছে। ছাদিক আর নিশাত এক রিকশায় চড়ে বসে। নিশাত ছাদিকের হাতটা শক্ত করে ধরে। নিশাত আর ছাদিক নদীর পার্শে নেমে নৌকায় বসে আছে। নিশাত ছোট্ট ব্যাগটা থেকে কি যেন বের করছে। নিশাত ছাদিকের হাতে গিফটটা দিয়ে বলে।
-হনুমান এই তোমার গিফট।
-দেখি দেখি কি গিফট দিয়েছো তুমি।

“ছাদিক নিশাতের হাত থেকে গিফটের প্যাকেটটা খুলে দেখে একটা সম্মাটফোন।”
-এই তুমি ফোন কিনেছো কেন?
-আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই। তোমার ভাঙা ফোন আমার একদম পচ্ছন্দ না।
-মানে, ফোনটার দাম অনেক তাই না। তুমি এইসব করতে গেলে কেন?
-এই হনুমান বেশি কথা না বলে, যা গিফট দিয়েছি। খুশিমনে নিয়ে নে।
-তোমাকে না আমি।
-কি
-এইসব করতে গেলে কেন? অনেক টাকা খরচ করেছো তাইনা। এতো টাকা কোথায় পেলে তুমি।
-জমা করেছিলাম তোমার জন্য। ভেবেছিলাম বিয়ের পর আমার বরকে গিফট করবো কিছু একটা। তবে তুমি আমার জীবনে চলে এসেছো তাই তোমাকে গিফট করলাম। ভালো না লাগলে পানিতে ভেসে দিতে পারো সমস্যা নেই।
-আমি তো এইসব ফোন ব্যবহার করতে পারিনা।
-আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।

নিশাত ছাদিকের কাছে এসে ছাদিককে শিখিয়ে দিচ্ছে। নিশাত ফেসবুক একাউন্ট খুলে দেয় ছাদিককে। আর ইমু, যেন ভিডিও কলে কথা বলতে পারে দুজনে। নিশাতের পাগলামী গুলো দেখে ছাদিক মুচকি মুচকি হেঁসে চলেছে। যেখানে ছাদিকের গিফট করার কথা সেখানে নিশাত ছাদিককে গিফট করেছে।

দুপর ১২টার সময় দুজনে দুজনার বাসায় চলে যায়। আজকে রাত্রের বাসে রাজশাহী চলে যাবে ছাদিক। যানিনা আবার দেখা হবে কিনা নিশাতের সঙ্গে ছাদিকের। তবে ফোনে কথা চলতে থাকবে দুজন দুজনার।।

(চলবে?)