গল্পটা তোমারই পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0
1164

#গল্পটা_তোমারই
[অন্তিম পর্ব]

|২৪|
– ইফাজ মারা গেছে অহমি ও আর কখনো আপনার কাছে ফিরবে না!(নিচু দৃষ্টিতে)

কথাটা কর্নপাত হতেই স্থির হয়ে গেলো অহমি।কল্পনায় আনতে কষ্ট হচ্ছে যে ইফাজ আর নেই।স্থির চাহনিতে কম্পিত গলায় বলর উঠলো।

– আপ আপনি মিথ্যা বলছেন ত ত তাইনা সেহরিশ!না ইফ ইফাজ ওনার কিছু হতে পা পারেনা আমার ইফাজের কিছুই হতে পারেনা!!(কম্পিত গলায়)

সেহরিশ শান্ত দৃষ্টি অহমি দিকে স্থির করলো ইফাজ অহমিকে এত ঠকিয়েছে তবুও পরিশেষে অহমি তাকেই ভালোবাসে।সেহরিশ নির্লিপ্ত গলায় বলে উঠলো।

– ইফাজের সাথে এইরকমটাই লিখে রেখেছে নিয়তি যেটা কখনো পাল্টাতে পারবেনা।অহমি আপনি এখনো ইফাজকেই পছন্দ করেন!ওতো আপনাকে ঠকিয়েছে সবার সামনে দুশ্চরিত্রা প্রমান করেছে তবুও আপনি ওকেই ভালোবাসেন!(নির্লিপ্ত গলায়)

অহমি যেনো রাগে ফুলে উঠলো।হাজার হোক প্রথম ভালোবাসার মানুষটি হাসবেন্ড হোক বা প্রেমিক হোক কখনো তাকে ভোলা যায় না ঠিক তেমনি ইফাজ যতই অহমিকে ঠকাক না কেন অহমির মনে ইফাজের ঠিকই অস্তিস্ত রয়েছে।
অহমি তেড়ে গিয়ে সেহরিশের কলার ধরে ঝাকিয়ে বলে উঠলো।

– আপনি কেনো মিথ্যা বলছেন ইফাজের কিছু হয়নি ও আমায় য যতই ঠকাক না কেনো যতই আমাদের ডিভোর্স হোক না কেনো আমরা একে অপরকে কথা দিয়েছিলাম
আজীবন পাশে থাকবো ও কথাটাকে মিথ্যা প্রমান করতে পারেনা।(বলতে বলতে অহমি সেহরিশের বুক মাথা ঠেকালো)

নারীরা সত্যিই এমন প্রকৃতির মানুষ যারা নিজের প্রথম ভালোবাসাকে ভুলতে পারেনা।তেমনি ইফাজ অহমিকে যতই অপমান,অসম্মান করুক না কেন অহমির ইফাজের প্রতি একটু হলেও ভালোবাসা অবশ্বিস্ট আছে।
সেহরিশ অহমির মনের অবস্থা বুঝে কিছু বলল না নিস্চুপ হয়ে দৃষ্টি নত করে রাখলো।
সেহরিশেরও আব পড়ে গেলো তার ভালোবাসার কথা যা কখনোই কারো সামনে প্রকাশ্য করতে পারবে না।
সেহরিশের প্রথম ভালোবাসা ইশা।

_________________________________

সময় সবসময় চলমান তেমনি দেখতে দেখতে ইফাজের মৃত্যুর আজ এক সপ্তাহ্ পুরন হয়ে গেলো।
এই এক সপ্তাহ্ অহমি কারো সাথে ভালো করে দেখা করেনি প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বের হয়নি একপ্রকার অন্ধকারে নিজেকে ঘুটিয়ে নিয়েছে অহমি।
অহমি তার বাবার বাড়ি আর প্রাক্তন শ্বশুড় বাড়িও গিয়েছে।
ইফাজের মা মিসেস রুপশা অহমির কাছে কান্নাকাটি করে অনেক মাফ চেয়েছেন।মিসেস রুপশা সাফ পরিস্কার বুঝতে পেরেছেন তিনি হিরের ক্ষণি হাড়িয়ে ফেলেছেন সাথে নিজের সোনার টুকরো ছেলেটাকেও।

রাত প্রায় ৯টা বাজে।
দরজায় টোকা পড়ার শব্দ ধীর পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো অহমি।দরজা খুলতেই দেখতে পেলো সেহরিশ মাতাল অবস্থায় দাড়িয়ে আছে।
অহমি দরজা খুলতেই সেহরিশ ডুলতে ডুলতে রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো।
অহমির নাকে মদের গন্ধ প্রবেশ করতেই অহমি নাকে হাত দিয়ে ঘৃন গলায় বলে উঠলো।

– সেহরিশ আপনি এত রাতে ড্রিংক করে আমার রুমে কেন ডুকেছেন!
সেহরিশ ডুলতে ডুলতে বলে উঠলো

– ইউ নো অহমি আপনার ভালোবাসা মাত্র ৯ মাসের ছিলো জানেন কি আমার ভালোবাসা কত বছরের ছিলো ৭ বছরের ভালোবাসা ছিলো।

অহমি অবাক হয়ে সেহরিশের মুখের দিকে তাকালো।
সেহরিশ খানিকটা হেসে বলে উঠলো।

– জানেন ইশাকে না আমি অনেক ভালোবাসি এখনো কিন্তু ভাগ্য ও আমার হয়েও হতে পারলো না।(হাসতে হাসতে বললেও পরে সেহরিশ আপনাআপনিই কান্না করে দিলো)
অহমি অবাকের উপর অবাক সেহরিশ হঠাৎ এমন রিয়েক্ট করছে কেনো!
সেহরিশ কান্না করতে করতে ডুলতে ডুলতে অহমির উপর গিয়ে পড়লো।সাথে সাথে অহমি সেহরিশকে নিয়ে বিছানায় পড়ে গেলো।

অহমি বুঝতে পারলো সেহরিশ নিজের মধ্যে নেই।অনেক কস্ট করে সেহরিশকে নিজর উপর থেকে সরিয়ে উঠে দাড়ালো অহমি।শ্বাস বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো।
অহমি বেলকনির দিকে যেতে নিলেই হাতে টান পড়লো।
দেখলো সেহরিশ তার হাত ধরে আছে।

– আমায় ব বিয়ে ক্ করবেন অহমি(কাপাঁ কাপাঁ গলায়)

অহমি সেহরিশের হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে বেলকনিতে চলে গেলো আর বেলকনির দরজা লকড করে দিলো।
|২৫|
রাতের পরিবেশটা বেশ স্নিগ্ধ তবে আজকের পরিবেশটায় দম বন্ধ হ্য়ে আসছে অহমির নিশ্বাস অতি থেকে অতি ভারী হচ্ছে।
সেহরিশের বিয়ের কথাটা বার বার কানে বাজছে অহমি।
পাশাপাশি আবারো ইফাজের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে অহমির।শেষ বারের জন্যেও ইফাজকে সে দেখতে পেলোনা।
______
১ মাস পর,,
আজ দ্বিতীয় বার নিজের জীবন সাজাতে যাচ্ছে অহমি।সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে মুভ অন করবে নিজের জীবনটাকে সাজাবে নতুন করে বাচঁবে সে। আর এমন একজন মানুষের সাথে জীবন সাজাতে যাচ্ছে যার মাঝে কোন খুদ,হিংসা,পরনারী আসক্তিতা,অসম্মান নেই।যার কাছে শুধু পাওয়া যাবে ভালোবাসা,ছোট ছোট আবদার,সম্মান।

বিয়ের জন্য পরিপাটি হয়ে বসে আছে অহমি।নজর তার আয়নায় এই সাজটাতো পরম ভালোবাসা নিয়ে ইফাজের জন্যের সেজেছিলো কিন্তু সেই সাজ বর্তমানে অন্যকারো জন্যে সাজছে আর সেই শুভাকাঙ্খী আর কেউ না সেটা হলো সেহরিশ।
মিসেস রূপসা নিজে থেকে অহমি আর সেহরিশের বিয়ে দিচ্ছেন।ওনার মতো জীবনে অহমির জন্যে ভালো কিছু করতে পারেননি সবসময় অপমান করে গিয়েছেন তাই আজ অহমির ভাগ্য একটু একটু সুখ,সম্মান ফিরিয়ে দিতে উনি নিজে সেহরিশ আর অহমির বিয়ে ঠিক করেছেন।
কারন মিসেস রূপসা নিজে দেখেছেন সেহরিশের থেকে ভালো ছেলে আরও কোথাও নেই তাই অহমির জন্য সেহরিশই বেস্ট।বর্তমানে অহমি মির্জা বাড়িতে মানে তার প্রাক্তন স্বামির বাড়িতে রয়েছে।
অহমি ভাবছে সেখানে সে প্রথম বউ হয়ে এসেছে সেখান থেকেই সে অন্য কারো বাড়ির বউ হতে যাচ্ছে।
আয়নার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অহমি।
জীবনে কখনো দ্বিতীয় কারো হবে কখনোই সে ভাবতে পারেনি কিন্তু নিয়তি যে সবসময় চাওয়ার বিরুদ্ধেই ভাগ্য লিখে।

|২৬|
বিয়ের কার্যক্রম শেষ বিদায়ের পালা এলো এখন।অহমি মিসেস রূপসার সামনে গিয়ে দাড়ালো।
মিসেস রূপসা অহমির হাত ধরে কান্না করে বলে উঠলেন।

– আমায় সত্যিই ক্ষমা করে দিও অহমি ইফাজের সাথে বিয়ের পর থেকেই তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি।গালমন্দ করেছি তার জন্যে আমি সত্যিই দুঃখিত অহমি মা!দুঃখিত পারলে আমার মতো মহিলাকে ক্ষমা করে দিও।তোমার নতুন জীবন যেনো অনেক সুখ ময় হয় কখনো কস্টরা তোমাকে পুনরায় গ্রাস না করতে পারে।সেহরিশের সাথে সুখে থেকো পারলে ইফাজকে ভুলে যেও আর ওর জন্য একদম কস্ট পেও না কারন ও তো ওর শাস্তি পেয়েছে(বলতে বলতে মিসেস রূপসার চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো)

অহমি কিছু বলল না অনুভূতিরা যখন পালিয়ে যায় তখন কোন রিয়েকশন দেওয়া যায় না।ব্যাপারটা ঠিক অহমির সাথে মিলছে।
তবে মিসেস রূপসার মুখে ইফাজের কথা শুনতেই চোখ থেকে আপনাআপনিই জল গড়িয়ে পড়লো অহমির।

দেখতে দেখতে অহমি আর সেহরিশ তাদের বাড়িতে চলে গেলো।যেখান থেকে অহমি তার নিজের নতুন জীবন সাজাবে যেখান কোন কস্ট,দুঃখ থাকবে না

|২৭|

– অহমি আমি আবারো বলছি আপনি কি এই বিয়েতে খুশি হয়েছেন!আপনার মুখই বলে দিচ্ছে আপনি ইফাজকে সরিয়ে এখনো আমায় মেনে নিতে পারছেন না তবে সমস্যা নেই আপনার ভালোবাসার অপেক্ষায় থাকবো জানেন এই কয়েকমাসেই আপনার প্রতি আমি অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছি অনেক মায়া,সম্মান,ভালোবাসা জমেছে আপনার প্রতি,(আনমনে অহমির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো সেহরিশ)

সেহরিশের কন্ঠ পেয়ে মাথা তুলে তাকালো অহমি।সাহস করে আজ প্রথম সেহরিশের চোখের দিকে তাকালো সে।
সেহরিশের চোখে সেই সত্যিই তার প্রতি ভালোবাসা,শ্রদ্ধা,সম্মান,মায়া দেখত পারছে তবে মোহটা দেখতে পারছে না যেই মোহ্ কেটে গেলেই হাত ছুটে যাবে তার জীবন থেকে।
অহমি চোখ নামিয়ে নিলো দীর্ঘ একটা নিশ্বাস টেনে বলে উঠলো।

– আপনি জানেন সেহরিশ প্রথম ভালোবাসা কখনো ভোলা যায়না যেমন আপনি ইশাকে ভুলতে পারছেন না তেমনি আমিও. ইফাজকে ভুলেও ভুলতে পারছি না।
সত্যি বলতে পারবেন সেহরিশ আপনি কি সবসময় আমায় আগলে রাখতে পারবেন কখনো ছেড়ে যাবেন না আর কস্টও দিবেন না।(দীর্ঘশ্বাস নিয়ে)

মুহুর্তেই সেহরিশের চোখ চকচক করে উঠলো।ঠোঁটে মুচকি হাসি প্রসারিত করে বলে উঠলো।

– সারাজীবন আপনা,, তোমাকে নিজের কাছে আগল রাখবো কখনো কস্ট দিবো না যেদিন তুমি আমার জন্য একটুও কস্ট পাবে সেদিনও আমার মৃত্যু হবে গড প্রমিস!(ঠোঁটে মুচকি হাসি‌ প্রসারিত করে)
সেহরিশের কথা শুনে অহমির ঠোঁটের কিনারায় আপনাআপনিই হাসি ফুটে উঠলো।

সেহরিশ অহমিকে একটান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে জরিয়ে বলে উঠলো।
– আজ থেকে এবাড়ি দ্বায়িত্ব তোমার সাথে আমার,মনিমার,বাবাইয়েও দ্বায়িত্ব তোমায় কারন #গল্পটা_তোমারই

ভালোবাসি আপনাকে অহমি সরি তোমাকে।(ধীর গলায় মুচকি হেসে)

হঠাৎ টাম দেওয়ায় অহমি প্রথমে চমকে উঠলেও সেহরিশের কথাগুলো শুনে আলতো হাতে সেহরিশকেও জরিয়ে ধরলো সে।হয়তো বাকিটা জীবনে তার জন্য খুনশুটি,ভালোবাসা লেখা আছে কারন যোগ্য জীবনসঙ্গী হিসেবে সেহরিশকে যে পেয়েছে।

সমাপ্ত,,