গল্পের নাম তোমাকে চাই পর্ব-১৩

0
530

#গল্পের_নাম_তোমাকে_চাই
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৩
রক্তিম অফিসে বসে জরুরি ফাইল দেখছিল তখনই তার মোবাইলটা ভাইব্রেট করতে লাগলো।সে ফাইল থেকে নজর সরিয়ে মোবাইলে নজর দিয়ে দেখতে পেলো শাওন নামটা ভেসে উঠছে।রক্তিম হাতের ফাইলটা টেবিলে রেখে কলটা রিসিভ করে কানে দিতেই
শাওন আতঙ্কিত কন্ঠে বলে উঠলো,
~ভাইয়া,অধরাকে কোথাও খুজে পাচ্ছিনা।তুমি কী জানো সে কোথায়?আমি বাসায় কল করেছি কোনো খবর পায়নি।
রক্তিম শুধু কথা গুলো শুনলো কিছু না বলেই খট করে ফোনটা রেখে গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে আসলো অফিস থেকে।হার্টবিট বেড়ে গেছে তার মনে হচ্ছে কেউ তার বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করছে সে গাড়ি চালাচ্ছে আর আশেপাশে দেখছে। কিন্তু কোথাও অধরার খোজ খবর নেই রক্তিম ফোন বের করে শাওনকে ফোন করলো শাওন কল রিসিভ করতেই রক্তিম বললো,
~ওর বান্ধবীদের জিজ্ঞেস করেছিস?
শাওন বললো,
~হ্যাঁ ওরা বলেছে অধরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল।
রক্তিম চোয়াল শক্ত করে বললো,
~শাওন,এটা অনেক সিরিয়াস ম্যাটার আমার কাছে অন্য কিছু মনে হচ্ছে।
শাওন বললো,
~পুলিশের কাছে যেতে হবে অধরা কিডন্যাপ হয়েছে।
রক্তিম বললো,
~পুলিশ না শাওন আমাদের অন্য কোথাও যাওয়া উচিত। রোকেয়া ফুপির বাসায় এসে পর
বলেই সে খট করে ফোন রেখে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো আর বলতে লাগলো,
~কিছু হবে না তোমার অধরা আমি এসে পরবো তোমার কাছে।
অধরার জ্ঞান ফিরতেই সে তার সামনে তিনজন বলিষ্ঠ মানুষকে দেখতে পায়।অধরা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
~আমাকে কেন এখানে নিয়ে এসেছেন?
সেই তিনজনের থেকে একজন বলে উঠলো,
~বস জানে কেন তোরে উঠায়া আনতে কইসে।হোন মাইয়া তোর লগে খারাপ কিছু করবার চাইনা তাই চুপ মাইরা বয়া থাকবি বুঝসোস।
অধরা চিৎকার করে বললো,
~আমাকে বাসায় দিয়ে আসেন আমার পরিবার আমার জন্য চিন্তিত যেতে দিন আমায়।
একজন লোক এগিয়ে অধরার চিৎকার শুনে রেগে গিয়ে ঠাস করে অধরার গালে চড় মেরে বললো,
~তোরে কী কইছে চুপ থাকতে চুপ থাকবি নইলে কিন্তু একেবারে সব শেষ কইরা দিমু।
অধরা বললো,
~আমাকে দিয়ে কে কী করবে?আমি তো কারো ক্ষতি করিনি।
লোকগুলো উচ্চস্বরে হেসে বললো,
~সেইটা কেমতে কমু টাহা পাইসি কাম করছি।এই চল বাইরে যাই বস আয়া পরবো।
অধরাকে রেখে সেই তিনজন সেখান থেকে চলে গেলো অধরা ডুকরে কেঁদে উঠলো কিন্তু পরক্ষণেই মনে করলো সে যদি হাল ছেড়ে দেয় তাহলে তো সে মারা যাবে তাই অধরা আশেপাশে তাকিয়ে হাতের বাঁধন খোলার জন্য কিছু খুঁজতে।
রক্তিম আর শাওন দাড়িয়ে আছে রোকেয়া হোসেনের বাসার সামনে শাওন বললো,
~Are u sure ভাইয়া?তুই ভিতরে যাবি
রক্তিম বললো,
~পৃথুলা সব জানে শাওন আমার বিশ্বাস ও জানে আমার অধরা কোথায়?
রক্তিম কলিংবেল চাপতেই কাজের মেয়ে দরজা খুলে দিলো রক্তিম কে দেখে বললো,
~ভাইজান যে ভালা আছেন?
রক্তিম আর শাওন ভিতরে প্রবেশ করলো রক্তিম বললো,
~তোমার পৃথুলা আপুকে ডেকে দে।
কাজের মেয়ে বললো,
~ভাইজান আপা আর ম্যাডাম বাইরে গেসে আমি জানিনা কোহানে গেসে?
রক্তিম একবার শাওনের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আজ মার্ডার হবে আমার হাত থেকে।

___________♥___________

অধরা একটা কাঁচের টুকরো খুজো পেলো এখন সে চেষ্টা করছে সেটাকে উঠানোর তখনই সেখানে কেউ উপস্থিত হয়ে বললো,
~আহারে বেচারি কতো কষ্ট করছে ওকে একটু পানি তো দেও।
অধরা চোখ উপরে করলো আর যে মানুষগুলোকে দেখতে পেলো এতে সে অবাক হয়ে পরলো।তার সামনে স্বয়ং দাড়িয়ে আছে পৃথুলা আর রোকেয়া হোসেন।রোকেয়া হোসেন অধরার কাছে এসে তার থুঁতনি ধরে বললো,
~অনেক সুখের দিন কাটিয়ে ফেলেছিস এখন মরনের দিন হাতে গুনতে থাক।
অধরা বললো,
~এসব কী বলছো? ফুপি আমি কী করেছি?
রোকেয়া হোসেন বললেন,
~কঁচি খুকী বুঝে না কিছু।তোর কারণে আমার মেয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছে।
অধরা কিছু বললো না শুধু নিষ্পলক ভাবে রোকেয়া হোসেনের দিকে চেয়ে রইলো।পৃথুলা এগিয়ে এসে বললো,
~মা,ওকে এখন মারা যাবে না আমাদের দলের আরেকজন এখন পর্যন্ত এসে পৌছাইনি আসল কাজ এখনো বাকি।
অধরা বললো,
~তোমাদের সাথে আর কে আছে?
পৃথুলা বললো,
~My sweet littel sister মানুষটাকে নিজ চোখে দেখে নিস তাহলেই বুঝতে পারবি।
রক্তিম তার পুলিশ বন্ধুর সাহায্যে পৃথুলার মোবাইল লোকেশন ট্রেস করে ফেলেছে।শাওন বললো,
~ওরা এই পুরোনো বাড়িতে কী করছে এটাতো ফুপার বদ্ধ বাড়ি।
রক্তিম বাঁকা হেসে বললো,
~কী করতে পারে আর অধরা সেখানেই আছে।
বাসায় সবাই জেনে গেছে অধরা কিডন্যাপ হয়েছে অধরার মা কেঁদে কেটে দোয়া করছে মেয়ের জন্য প্রিয়া শশুড় বাড়ি থেকে এসে পরেছে।সবার অবস্থা নাজেহাল জোহোরা খাতুনের কেন জানি আইয়ুব হোসেনের ওপর সন্দেহ হচ্ছে বার বার ফোন আসছে তার।জোহোরা খাতুন বললেন,
~আপনি কী কিছু জানেন?
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~দুখের সময় এসব বলবেনা বুঝতে পেরেছো।
তখনই তৈয়ব হোসেনের ফোন বেজে উঠলো সে রিসিভ করতেই শাওন সব বলে দিলো শুধু রোকেয়া হোসেন আর পৃথুলার কথা গোপন রাখলো।তাদের ঠিকানা দিয়ে দিলো তৈয়ব হোসেন ফোন রেখে বলে উঠলো,
~আমার মেয়েকে পাওয়া গেছে চলো তাহিদা মেয়ের কাছে চল।
সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো জোহোরা খাতুন আইয়ুব হোসেনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার চেহারার রঙ্গ পাল্টে গেছে।
অধরা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে পৃথুলা বললো,
~অধরা,জানিস রক্তিমকে সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসতাম আর তুই দুদিনের অতিথি আমার রক্তিমকে ছিনিয়ে নিলি।
অধরা বললো,
~সে আমাকে ভালোবাসে আপু আমি তাকে দেখবে ঠিক এসে পরবে সে।
পৃথুলা ঠাস করে একটা অধরাকে থাপ্পড় মারলো তখনই একজন গুন্ডা এসে বললো,

__________♥____________

~বাহিরে পুলিশ এসে পরেছে আমার তো মনে হয় ভিতরেও চলে আসবে আমার দুজন সাথী পালিয়েছে আমি গেলাম।
বলেই সে ভো দৌড় অধরা হাসি দিয়ে বললো,
~দেখেছো আপু মাত্র ৪ঘন্টার ভিতরে আমাকে খুজে ফেললো সে।
রোকেয়া হোসেন বললেন,
~এই জায়গার কথা কীভাবে জানলো?
তার কথা শেষ হতেই রক্তিম ভিতরে প্রবেশ করে বললো,
~আপনার গুনধর মেয়ের জন্য জেনেছি ফুপি।
সামনে তাকালো রোকেয়া হোসেন ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠলো পুরো পরিবার একসাথে পুলিশও আছে সাথে অধরা রক্তিমকে দেখে কেঁদে উঠলো।লেডি কনস্টেবল কৌশলে পৃথুলার হাতে লকআপ পরিয়ে দিলো রোকেয়া হোসেনকেও ধরে ফেললো।রক্তিম অধরার হা-পায়ের বাঁধন খুলে দিলো অধরা ছাড়া পেয়ে রক্তিমকে জড়িয়ে ধরলো।অধরাকে তাহিদা ইসলামের কাছে দিয়ে পৃথুলার কাছে গিয়ে তার গালে পরপর দুটো থাপ্পড় মেরে বললো,
~কোন সাহসে ওর গায়ে হাত দিয়েছিস?
পৃথুলার চোখে কোনো অনুতাপ নেই সে বললো,
~শুধু থাপ্পড় মারার না গলা টিপে মেরে ফেলার প্ল্যান ছিল।
রক্তিম আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো পৃথুলার গালে তারপর বললো,
~নিয়ে যান।
রোকেয়া হোসেন বললেন,
~আমরা তো গুটি মাত্র আসল খেলা অন্য কেউ খেলছে আপন মানুষ তোকে শেষ করে দিচ্ছে যা ওকে শেষ করে দেখা।
রোকেয়া হোসেনের কথা শুনে আইয়ুব হোসেনের মাথা বেয়ে ঘাম ঝড়লো পুলিশ তাদের নিয়ে যেতে সবাই অধরাকে নিয়ে হাঁটা ধরলো পায়ের ব্যাথার কারণে সে হাঁটতে পারছেনা রক্তিম অধরাকে কোলে নিয়ে হাঁটা ধরলো।গাড়িতে বসিয়ে দিলো তারপর নিজেও গাড়িতে বসে পরলো অধরা রক্তিম কে শক্ত কর জড়িয়ে ধরে রাখলো তার অনেক ভয় করছে ভীষন ভয়।
আইয়ুব হোসেনের মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছো জোহোরা খাতুন বলে উঠলেন,
~আমার ছেলেকে আর কষ্ট দিবেন না দয়া করে সুখে থাকতে দিন ওকে।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~ওর সুখ ওই মেয়ের সাথে নেই।তুমি জানোনা কেন এমন করছি আমি?
জোহোরা খাতুন বললেন,
~এরমানে এসব আপনি?
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~বাসায় গিয়ে কথা বলবো।
বাসায় পৌছে রক্তিম অধরাকে কোলে তুলে নিলো রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। অধরা রক্তিমের গলা শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে রক্তিম অধরাকে বিছানায় বসিয়ে কার্বাড থেকে অধরার প্রয়োজনীয় সব জিনিস নিয়ে ওয়াশরুমে রেখে আসলো।আবারও অধরাকে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে ঝর্ণার নিচে দ্বার করিয়ে দিলো।পানি ছাড়তেই অধরা আর রক্তিমের শরীরে পানি পরতে শুরু করলো।রক্তিম অধরার গাল দুটো ধরে বললো,
~অধরা,তুমি একদম ঠিক আছো কথা বলো আমার সাথে।
অধরা চুপ করে দাড়িয়ে পরলো অধরার চোখে মুখে পানি পরছে।হঠাৎ অধরা রক্তিমকে জড়িয়ে ধরে সে জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।রক্তিম অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~আপন মানুষদের আঘাতটা দাগ কেটে যায় মনে।

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো 🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)