গল্পের নাম তোমাকে চাই পর্ব-০৬

0
589

#গল্পের_নাম_তোমাকে_চাই
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৬
দেখলো অধরা নিজ সীট থেকে উঠে বাস থেকে নিচে নেমে পরলো রক্তিমও বাস থেকে নেমে পরলো।এক এক করে সবাই বাস থেকে নেমে পরলো ব্যাগ নিয়ে রির্সোটের ভিতরে চলে গেলো।অধরা ইরার সাথে হেঁটে চলছে রক্তিম শওকতের সাথে কথা বলছে আড়চোখে অধরার দিকে তাকাচ্ছে।রির্সোটে গিয়ে রুমের চাবি নিয়ে রক্তিম সবার মাঝে চলে আসলো যার যার রুমের চাবি তাদের দিয়ে দিলো অধরা আর ইরা একই রুমে থাকবে।রক্তিম আর শওকত তাদের পাশের রুমটা নিয়েছে রক্তিম বললো,
~সবাই ফ্রেশ হয়ে চলে আসো একসাথে ডিনার করবো আমরা।
সবাই রুমে চলে গেলো অধরা রুমে এসেই ফ্রেশ হয়ে বসে পরলো ইরা তা দেখে বললো,
~আপু, তোমার কী মন খারাপ?
অধরা বললো,
~নাহ ইরা একটা কথা সত্যি সত্যি বলবি?
ইরা বললো,
~কী কথা আপু?
অধরা বললো,
~তুই আমার পাশের সীটে আজ বসলিনা কেন?
ইরা অধরার কথায় শুকনো ঢোক গিলে বললো,
~খেয়াল করিনি আপু শাওন ভাইয়ের পাশে বসে পরেছিলাম তো তাই।
অধরা বললো,
~ইরা আমার সাথে আর কোনোদিন মিথ্যা বলবিনা আর আজ যেটা হয়েছে সেটা কোনোদিন করার চেষ্টা করবিনা।এসব যদি বড়চাচী জানে তাহলে আমার অবস্থা অনেক খারাপ হবে আমি চাই না এসব অশান্তি হোক।
বলেই অধরা বারান্দায় চলে আসলো ইরা একবার সেদিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
সবাই একসাথে ডিনারের জন্য বসেছে খোলা আকাশের নিচে সবাই বসে আছে।অধরা ইরার পাশে বসে আছে মুখটা তার ফ্যাকাশে হয়ে আছে হঠাৎ প্রিয়া বলে উঠলো,
~আমি শুনেছি এখানে একটা খুব সুন্দর পার্ক আছে আমরা কালকে সেখানে গিয়ে একবার ঘুরে আসি।
রক্তিম বললো,
~এখান থেকে বেশি সময় লাগবেনা মনে হচ্ছে সকাল ১০ টায় বের হলে খুব তাড়াতাড়ি পৌছে যেতে পারবো।
পৃথুলা বললো,
~আমার তো নৌকা ভ্রমণ করতে মন চাইছে চলো না সবাই আজ রাতে নৌকা ভ্রমণ করি এই রির্সোটেই সব ব্যবস্থা করা আছে।
রক্তিম বললো,
~আজ সবাই ক্লান্ত কালকে পার্ক থেকে এসে অবশ্যই সবাই নৌকা ভ্রমণে বের হবো।
সবাই রক্তিমের সাথে সহমত পোষন করলো ডিনার শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো অধরা ইরার সাথে কথা বলতে বলতে রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখনই রক্তিম পিছন থেকে বললো,
~অধরা,তোর সাথে আমার কথা আছে।
অধরা পিছন ফিরে একবার রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি খুব ক্লান্ত ঘুমাতে চাই।
ইরা বললো,
~আপু, একটু শুনে আসো ভাইয়া ডাকছে।
অধরা চোখ বড় বড় করে ইরার দিকে তাকাতেই সে চুপসে যায় রক্তিম তা দেখে বলে,
~চোখ বড় করে লাভ নেই ইরা তুই রুমে যা অধরা আমার সাথে যাবে।
অধরা এবার একটু রেগে গিয়ে বললো,
~আমি যাবো না কোথাও চল ইরা।
এতটুকু বলেই অধরা তার পাশে তাকালো আর দেখলো ইরা তার পাশে নেই।

_____________♥______________

ইরা তো অনেক আগেই এখান থেকে চলে গেছে বেচারি ওদের মাঝপ থাকতে চায় না তাই।রক্তিম অধরার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এসে অধরার হাত ধরে তার সাথে নিয়ে আসলো।রক্তিম অধরাকে নিয়ে রির্সোটের সুইমিংপুল সাইডে চলে গেলো অধরা রক্তিমকে কড়া গলায় বলে উঠলো,
~আমার হাত ছাড়ুন ভাইয়া এসব কেউ দেখলে আমার জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে।
বলেই সে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো রক্তিম এবার রেগে গিয়ে অধরার হাত শক্ত করে ধরে নিজের কাছে টেনে এনে বললো,
~সবার কথা তোর শুনতে হবে এমন তো কোথাও লেখা নেই।ভালো কথা তুই শুনতে চাস না আর খারাপ কথা তোর কানে ঘর করে বসে থাকে।
অধরা অবাক নয়নে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে আছে রক্তিমের এমন ব্যবহার সে কোনোদিন আশা করেনি।
অধরা বললো,
~আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?
রক্তিম অধরাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যপাশ ঘুরে বললো,
~আমার সাথে রাতের আকাশ দেখবি অধরা?রাতের আকাশটা দেখতে খুবই সুন্দর।
অধরা রক্তিমের কথায় বিষম খেলো সে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো রক্তিমের দিকে। রক্তিম সুইমিংপুলে পা ভিজিয়ে বসে পরলো তারপর অধরাকে বললো,
~আয় আমার পাশে বস।
অধরাও নির্বাক হয়ে রক্তিম থেকে একটু দুরত্ব বজায় রেখে বসে পরলো আকাশের চাঁদটার প্রতিচ্ছবি পানিতে ভেসে উঠেছে একদম পূর্ণিমার রাত আজ।
অধরা রক্তিমকে দেখতে ব্যস্ত নীল রঙ্গের শার্টটায় তাকে খুব মানিয়েছে অধরা শার্টটা খুব ধ্যান ধরে দেখলো তখনই সে খেয়াল করলো এই শার্টটা অধরা রক্তিমকে গিফট করেছিল তার জন্মদিনে। অধরা বললো,
~এই শার্টটা তো আমি আরো দুবছর আগে গিফট করেছিলাম আপনি এখনো সামলে রেখেছেন।
রক্তিম বললো,
~প্রিয় মানুষের দেওয়া জিনিস সামলে রাখতে জানি আমি।
অধরা রক্তিমের কথা শুনে সুইমিংপুলের পানির দিকে তাকিয়ে রইলো।রক্তিম বললো,
~তোর মন কেন খারাপ আমি কী জানতে পারি?
অধরা পানিতে পা নাড়াতে নাড়াতে বললো,
~জার্নি করে এসেছি তাই এমন লাগছে।
রক্তিম বললো,
~মিথ্যা বললে পেটে পোকা হয় ভুলে গেছিস দাদী বলতো যে।
অধরা হেসে বললো,
~হুম মনে আছে দাদী থাকতে সব ঠিক ছিল এখন তো সব
অধরা কথাটি শেষ না করেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রক্তিম স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে আছে যদি এই পানির মতো অধরার মনটাও দেখতে পারতো তাহলে হয়তো অধরার সব কষ্ট হয়তো দূর করে দিতে পারবো।
অধরা অন্যদিকে মুখ করে বললো,
~ঠান্ডা লাগছে ভাইয়া আমি রুমে যেতে চাই।
রক্তিম বললো,
~ঠিক আছে চল।
বলেই সে দাড়িয়ে পরলো নিজ হাতটা অধরার দিকে এগিয়ে দিলো অধরা একবার রক্তিমের দিকে তাকিয়ে সেই হাতটা আকড়ে ধরলো অধরা দাড়িয়ে পরতেই তার পা পিছলে যায় সে রক্তিমের উপর পরে যায়।রক্তিম অধরাকে শক্ত করে ধরে নিজেকে ব্যালেন্স করে ফেলে।অধরা রক্তিমের শার্ট আকড়ে ধরে আছে সে রক্তিমের চোখের দিকে তাকাতেই নিজ ধ্যান থেকে বের হয়ে আসলো।অধরা রক্তিম থেকে দূরে সরে আসলো রক্তিম বললো,
~যা রুমে চলে যা।
অধরা আর এক সেকেন্ডও সেখানে আর দাড়ালোনা দৌড়ে রুমে চলে আসলো।তাদের এই ঘটনা দূর থেকে কেউ ক্যামেরাবন্দী করে ফেলেছে সেই মানুষটার মনে যে প্রতিশোধের আগুন বইছে সে আর কেউ নয় পৃথুলা। সে মনে মনে বললো,
~এই ছবি গুলো বড় মামীকে না দেখালে বড্ড অপরাধ হয়ে যাবে।

________________♥________________

সকালে সবাই নাস্তা করেই বের হয়ে যায় পার্কের উদ্দেশ্যে গাড়ি বুক করা হয়েছে সবাই গাড়িতে বসে পরেছে। ইরা এবার অধরার পাশে বসেছে পৃথুলা রক্তিমের সাথে বসতে চাইলেও শওকতের জন্য তা পারেনি শাওন আর পৃথুলা একসাথে বসেছে শাওন পৃথুলাকে বললো,
~আপাজান,কেমন আছেন?
পৃথুলা বললো,
~শাওন,কোনো ধরনের বেয়াদবি করবেনা।
শাওন বললো,
~এতো সুন্দর শ্রদ্ধা জানিয়ে কথা বললাম এটাকে বেয়াদবি বলে দিলে।
পৃথুলা বিরক্তি নিয়ে প্রিয়াকে বললো,
~প্রিয়া,তুমি যদি মাইন্ড না করো তাহলে রায়হান শাওনের সাথে বসুক আমি তোমার সাথে চলে আসি।
প্রিয়া রায়হানের হাত ধরে বললো,
~পৃথুলা আপু,নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে আমাদের আলাদা কেন থাকবো?
পৃথুলা নাক ফুলিয়ে বললো,
~ওকে ফাইন আমি সামনে ড্রাইভারের সাথে বসে পরবো।
বলেই সে দাড়িয়ে পরলো কিন্তু উঁচু হিলের জুতা পরার কারণে পৃথুলা হোঁচট খেয়ে পরে যায় তা দেখে সবাই মুখ টিপে হেসে ফেললো অধরা সীট থেকে উঠে পৃথুলাকে আকড়ে ধরে বললো,
~আপু,তুমি কোথাও ব্যাথা পাওনি তো?
পৃথুলা কোমড় ধরে অধরাকে ধমকে বললো,
~Stupid মেয়ে পরে গেছি আমি অবশ্যই ব্যাথা পেয়েছি।
পৃথুলার ব্যবহার দেখে ভড়কে উঠলো রক্তিম সে রেগে গিয়ে বললো,
~পৃথুলা,তোমার সাহায্য করার জন্য মেয়েটা এগিয়ে এসেছে আর তুমি।অধরা নিজ সীটে গিয়ে বসে পর এইসব মানুষদের সাহায্য করার কোনো দরকার নেই।
অধরা রক্তিমের কথা অগ্রাহ্য করে পৃথুলাকে নিজের সীটে বসিয়ে দিয়ে বললো,
~আপু,তুমি এখানে বসো আমি শাওন ভাইয়ার সাথে বসে পরবো।
অধরা শাওনের পাশের সীটে বসে পরলো রক্তিম রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,
~সব নাটক শেষ হলে গাড়ি স্টার্ট করুন।
গাড়ি চলতে শুরু করলো সবাই আড্ডা দিচ্ছে তো গান গাইছে কিছুক্ষণ পর সবাই নিজ গন্তব্যে পৌছে গেলো।
সবাই গাড়ি থেকে নেমে পরলো পার্কের ভিতরে প্রবেশ করতেই সবাই ঘুরতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। ইরা বললো,
~অধরা আপু,আমার ছবি তুলে দিবে কতো সুন্দর দৃশ্য দেখেছো।
অধরা বললো,
~গ্রামীণ ভাবে সব সাজানো হয়েছে।
ইরা বললো,
~অনেক সুন্দর আপু।তোমার তো এগুলো খুব পছন্দ

______________♥______________

সারাদিন সবাই পার্কে কাটিয়ে রাতের খাবার খেয়ে রওনা দেয় রির্সোটের উদ্দেশ্যে। রক্তিম সবার উদ্দেশ্যে বললো,
~সবাই কী নৌকা ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত?
রায়হান বললো,
~আসলে ভাইয়া আমি আর প্রিয়া আলাদা একটা নৌকা নিতে চাই।
রক্তিম মুচকি হেসে বললো,
~কোনো চিন্তা করোনা সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রির্সোট পৌছে সবাই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নৌকা ভ্রমনের জন্য একত্রিত হয়ে চলে আসলো রির্সোটের অনেক ভিতরে।সেখানে গিয়ে দেখলো পানির চারপাশে আলোকিত করা আছে পুলের পাড়েই নৌকা গুলো বাঁধা আছে।প্রিয়া আর রায়হানের জন আলাদা করে একটা নৌকা সাজানো হয়েছে তারা সেটায় উঠে পরলো।আরেকটা নৌকায় শাওন, ইরা,শওকত উঠে পরলো অধরা যখন উঠতে যাবে তাদের সাথে তখনই শাওন পৃথুলার হাত ধরে তাদের নৌকায় উঠিয়ে বললো,
~এক নৌকায় চার জনের বেশি উঠতে পারবেনা।তুই আর রক্তিম ভাইয়া আলাদা নৌকায় চলে আয়।
পৃথুলা বললো,
~আমি তোদের সাথে যাবো না।
শাওন মাঝিকে বললো,
~আরে ভাই নৌকা কী দাড় করিয়ে রাখবেন?
শাওনের বলতে দেরি মাঝির নৌকা চালাতে দেরি হয়নি।পৃথুলা আর কিছুই করতে পারিনি সে নৌকায় দাড়িয়ে রক্তিম আর অধরার দিকে তাকিয়ে রইলো।
অধরা বললো,
~আমি রুমে চলে যাবো নৌকা ভ্রমণ করবো না।
রক্তিম বললো,
~তাহলে চল আমি আর তুই মিলে রেস্টুরেন্টে বসে থাকি।
তখনই অধরার মোবাইলে ম্যাসেজ আসলো শাওনের অধরা তা দেখতে লাগলো তাতে লেখা আছে
“আপু,আমার মোবাইলটা তোমার ব্যাগে প্লিজ সাবধানে নিয়ে আসবে তাই শাওন ভাইয়ার মোবাইল দিয়ে ম্যাসেজ করলাম”।
অধরা বিরক্তি নিয়ে বললো,
~আমাদের যেতে হবে ইরার ফোন আমার কাছে ওদের নৌকা কতদূর পর্যন্ত গিয়েছে?
রক্তিম বললো,
~বেশিদূরে যায়নি চল নৌকায় উঠতে হবে।
অধরা আর রক্তিম একসাথে নৌকায় উঠে পরলো মাঝি নৌকা চালাতে শুরু করলো প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার থেকে অধরা এখন বেশি চিন্তিত কারণ

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো 🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)