গোধূলি বেলায় প্রেম পর্ব-৩৫

0
3680

#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-৩৫|

রীতি নিষ্প্রাণ শরীর নিয়ে হেলেদুলে বাড়ির ভেতরে ঢুকছে।নিজের বাড়িকেই আজ অপরিচিত মনে হচ্ছে।একদমই আপন লাগছেনা।অচেনা লাগছে।
রীতি চুপচাপ বাড়িতে ঢুকছে।নিচতলার ভাড়াটিয়া তাড়াহুড়ো করে অনেকটা বিস্ময় নিয়ে রীতির মায়ের সামনে এসে দাড়ালো।তার চোখেমুখে হাজারো কৌতুহল,প্রশ্নের পাশাপাশি বিস্ময়।

—-“ভাবি কাউকে কিছু না বলে হুট করে চলে এলেন যে?কোনো সমস্যা হয়েছে?”

রীতির মা ভাড়াটিয়ার প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলো।যে ঘটনা ঘটেছে তা কাউকে জানানো যাবেনা।রীতির মা নিজেকে স্বাভাবিক করে জোরপূর্বক হেসে বললো,
—-“হুট করে নয়।অনেক আগে থেকেই আসার পরিকল্পনা করেছি।আপনাদের জানানো হয়নি।আসলে সময় পাইনি।”

—-“কিন্তু ভাবি কেনো?রীতির তো থার্ড ইয়ারের পরীক্ষাও হয়নি।আরো কয়েক বছর থাকার পর আসার কথা ছিলো।”
তার চোখে মুখে এখনো অবিশ্বাস।

রীতির মা তার অবিশ্বাস দূর করার জন্য বললো,
—-“নিজের বাড়ি রেখে অন্যের বাড়িতে মন টিকে নাকি?আমরা কেউই ভাড়া বাড়িতে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না।সব কিছুই অন্যরকম লাগতো।তবুও চেষ্টা করেছি।কিন্তু আর পারছিলাম না তাই চলে এলাম।আগের মতো এখান থেকেই পড়াশোনা করবে রীতি।”

—-“ওহ!আচ্ছা।আমি আপনাদের জন্য রান্না করছি।কষ্ট করে আজ আর রান্না করবেন না।সবটা গোছাতেও তো সময় লাগবে।”
স্নিগ্ধ হেসে বললো।

রীতির মা না করা স্বত্তেও তিনি শুনতে নারাজ।ভদ্রমহিলার ছেলে আয়ান, রিমনকে দেখে দৌড়ে এলো।রিমনের সাথে ওর ভালো সখ্যতা।রিমন ভাড়া বাড়িতে যেতে নারাজ ছিলো।কিন্তু আজ বাড়িতে ফিরে সেও খুশি হতে পারছেনা।চেনা বাড়ি,চেনা পরিবেশ,চেনা বন্ধু,খেলার মাঠ তবুও রিমন আয়ানকে পাশ কাটিয়ে বিমর্ষ মনে নিজেদের ঘরে চলে গেলো।

রীতি নিজের রুমে এসে বারান্দায় বসে পড়লো।চোখের পাতাদুটো ভারী হয়ে আসছে।মাথা কেমন ঝিমঝিম করছে। জীবনে অনেক খারাপ সময় গেছে কিন্তু এমন সিচুয়েশনে কখনো পড়েনি।
কি থেকে কি হয়ে গেলো? জীবন কোথায় এসে দাড়ালো।সাদিবের কথা ভাবতেই চোখ আরো ভারী হয়ে আসছে।রীতি যেনো বোবা হয়ে গেছে।

.

সাদিব কতক্ষণ ওভাবে বসে আছে অজানা।বেলা পড়ে গেছে,সন্ধ্যা নেমে আসছে।সাদিবের হুশ হতেই সাদিব উঠে দাড়ালো কিন্তু শরীরে শক্তি পাচ্ছেনা।
হেলে-দুলে বাড়িতে গিয়ে পৌছালো।গেইট দিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই তিনতলার রীতির বারান্দার দিকে তাকালো।
সাদিবের বিশ্বাস হচ্ছে না রীতি চলে গেছে।ওর মনে হচ্ছে সাবিহা প্রাঙ্ক করেছে।শুধু মনে হওয়াই না মনে প্রানে বিশ্বাস করছে রীতি ওকে ছেড়ে যেতেই পারেনা।কখনো না।
সাদিব সিড়ি বেয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে না গিয়ে তিনতলায় রীতিদের ফ্ল্যাটে গেলো।ফ্ল্যাটের দরজা খোলা দেখে কিছুটা অবাক হলো।সাদিব দরজা ঠেলে ফ্ল্যাটে ঢুকে স্তব্ধ হয়ে গেলো।পুরো ফ্ল্যাট ফাকা।সাদিব হন্তদন্ত হয়ে এদিক সেদিক দেখছে আর ‘রীতি’ ‘রীতি’ বলে চিতকার করে ডাকতে ডাকতে রীতির রুমে গেলো।রীতির রুমেও কিছু নেই।তবুও সাদিবের বিশ্বাস হচ্ছে না।সাদিব বারান্দায় গেলো।বারান্দায় রীতির ফুলের টপগুলো সাজানো।

সাদিব নিজেকে আনমনে বলছে,
—-“না রীতি যায়নি।ওর প্রিয় বেলীফুল রেখে ও যেতে পারেনা। না রীতি যায়নি।কিন্তু কোথায় আছে?ছাদে?হ্যা ছাদে আছে।আমি ছাদে গেলেই রীতিকে পেয়ে যাবো।”

সাদিব রীতির রুম থেকে বেরুতেই সাদিবের মা,সাবিহা,দিয়া দৌড়ে এলো।সাদিবকে দেখে ওরা দাঁড়িয়ে গেলো।সাদিবের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করছে।
সাদিব সাবিহাকে দেখে বললো,
—-“তুই আমার সাথে মজা করেছিস?রীতি কোথায়? ছাদে তো?”

সাবিহা ভাইয়ার কথা শুনে মায়ের দিকে তাকালো।সাবিহা কিছু বলার অবস্থায় নেই।ও ছলছল চোখে বললো,
—-“ভাইয়া তুমি সব দেখার পরেও এসব কেনো বলছো?রীতি আপু চলে গেছে।”

সাদিব অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে সাবিহাকে দেখছে।দিয়া আশেপাশটা ভালো করে দেখে কাদো কাদো হয়ে বললো,
—-“কি থেকে কি হয়ে গেলো?রীতি আপুকে অনেক মনে পড়ছে।”

সাদিব কারো কথা বিশ্বাস করতে পারছেনা।ওর অস্থির লাগছে।এই অস্থিরতা বেড়েই চলেছে।শ্বাস আটকে আসছে।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।সাদিবের মা সাদিবকে ধরে বললো,
—-“সাদিব নিজেকে সামলে নে।”

সাদিব মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“আই কান্ট মা,আই কান্ট।”
সাদিব মেঝেতে বসে পড়লো।
সাবিহা,দিয়া দৌড়ে সাদিবের কাছে এসে বসলো।
সাদিব ওর মাকে ধরে বললো,
—-“রীতি সত্যিই চলে গেলো আমাকে ছেড়ে?কেনো গেলো?কি হয়েছিলো?”

সাবিহা বললো,
—-“ভাইয়া আমরা কেউ কিছু জানিনা।তবে বিল্ডিংয়ের অন্য মানুষের কাছে শুনলাম বাবা আর আংকেলের(রীতির বাবা)মধ্যে তর্কাতর্কি চলছিলো।কেউ ঠিক করে কিছু বলছেনা।বাবাকে ভয় পায় তাই হয়তো।”

সাদিব ফোন বের করে রীতিকে ফোন করলো।রীতির ফোন বন্ধ আসছে।
সাদিব ফোনটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে চোখ-মুখ শক্ত করে বললো,
—–“সেটা তো বাবাই ভালো বলতে পারবে।চলে যেতে কেনো বলেছে?”

.

সাদিব বাবার আসার অপেক্ষা করছে।ওর মাথা গরম হয়ে আছে।সবকিছু শূণ্য শূন্য লাগছে।কিছুই ভালো লাগছে না।রীতি কেনো কিছু বলে গেলো না?একটা ফোন করে নি কেনো?আর এখন ফোনটাও অফ কেনো?সাদিবের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
সাদিবের বাবা আসতেই সাদিব বাবার সামনে গিয়ে দাড়ালো।সাদিবের বাবা সাদিবের চেহারা দেখে বুঝতে পারছে সাদিব কি বলতে এসেছে।

তাই তিনি পায়ের জুতা খুলতে খুলতে বললো,
—-“সাদিব আমি জানি তুমি কি বলতে চাও।তবে এই মুহুর্তে আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাইনা।তোমার সাথে এসব নিয়ে পরে কথা বলবো।”

সাদিবের রাগটা আরো বেড়ে যাচ্ছে বাবার এমন নির্লিপ্ত ভাব দেখে।কিন্তু রাগটা প্রকাশ করতে পারছেনা।
সাদিব শক্ত মুখে বললো,
—-“বাবা আমি এই মুহুর্তেই কথা বলতে চাই।এই মুহুর্তেই।সন্ধ্যা থেকে অপেক্ষা করছি।”

সাদিবের বাবা সাদিবের দিকে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে কড়া গলায় বললো,
—-“তুমি আমার মুখের উপর কথা বলছো?এতো স্পর্ধা বেড়েছে তোমার?বেয়াদব ছেলে।”

সাদিব বাবার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে বললো,
—-“বাবা আমি কোনো বেয়াদবি করছি না।শুধু একটা কথা জানতে চাই।রীতিরা হটাৎ করে চলে গেলো কেনো?কি বলেছো তাদের?”

সাদিবের বাবা ঠান্ডা গলায় বললো,
—-“চলে যেতে বলেছি ওদের।দুদিন সময় দিয়েছি।একদিনেই চলে গেছে।বুঝতে পেরেছে এখানে সুবিধা করতে পারবেনা তাই সময় নষ্ট করে লাভ নেই।”

সাদিব অবাক হয়ে বাবার কথা শুনছে।
—-“কিসের সুবিধা করতে পারবেনা? আর কেনো চলে যেতে বলেছো?”

সাদিবের বাবা রাগান্বিত সুরে বললো,
—-“কেনো চলে যেতে বলেছি জানো না?তুমি কি করেছো?এমন ঘটনা কিভাবে ঘটালে?আমার ছেলে হয়ে নিচের দিকে দৃষ্টি দিয়েছো?যা হয়েছে সব ভুলে যাও।ওরা চলে গেছে।তুমি তোমার রাস্তা বেছে নেও।”

সাদিব মৃদুস্বরে হেসে বললো,
—-“আমি আমার রাস্তা বেছে নিয়েছি।”

তারপর নিজের রুমে চলে গেলো।বাবার সাথে কথা বাড়ানোকে সাদিব বোকামি মনে করছে।ওর বাবা যে রীতিকে মেনে নিতে নারাজ আর এর জন্য রীতির বাবাকে কথা শুনিয়েছে,দুদিনের মধ্যে চলে যেতে বলেছে সেটা বুঝতে সাদিবের বাকি নেই।আর এই জন্য রীতির বাবা একদিনের মধ্যেই চলে গেছে।রীতির বাবা প্রচন্ড আত্নসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি।তিনি অপমান মেনে নিতে পারেনি।আর রীতি ও হয়তো অভিমান করে কিছু বলেনি অথবা বাবাকে প্রচন্ড ভালোবাসে তাই বাবার অপমান মেনে নিতে পারেনি।রেগে আছে।
সাদিব ঠিক করে নিলো আগামীকাল রীতিদের বাড়িতে যাবে।রীতির বাবার কাছে ক্ষমা চাইবে।যা হবার হবে।বাবার অহংকার ছেলে হয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিবে।

সাদিবের মনে হচ্ছে না রীতি এই বাড়িতে নেই।মনে হচ্ছে রীতি উপর তলায় ঠিক ওর রুমের উপরে রীতি আছে।বই পড়ুয়া মেয়েটা বইয়ে ডুবে আছে।
সাদিব নিজের ফোনটা খোজছে।তারপর মনে পড়লো সেটা তো রীতিদের ফ্ল্যাটে ফেলে এসেছে।
সাদিব রীতিদের ফ্ল্যাটে গিয়ে ফোন তুলে ফোন সেট করে নিলো।তারপর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।গতকাল কি সুন্দর একটা মুহুর্ত কাটিয়েছে ঠিক এই সময়ে।কত কথা বলেছে।ভালোবাসার কথা।
সাদিব বারান্দায় গিয়ে লাইট অন করলো।ফুলের টপগুলো সুন্দর করে সাজানো।রীতির কত প্রিয় ছিলো গাছগুলো।
সাদিব বেলীফুল গাছে একটা কাগজ দেখতে পেলো।তাড়াতাড়ি কাগজটা তুললো।তারপর খোলে পড়া শুরু করলো।
রীতির হাতের লেখা,
“আমি জানতাম আপনি এখানে আসবেন।আর এই কাগজটা আপনার চোখে পড়বে।আমার জন্য আমার বাবা অনেক অপমানিত হয়েছে।সেগুলো চুপচাপ হজম করা ছাড়া উপায় ছিলো না।কারণ যোগ্য জবাব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করিনি।তাই ভেবে নিয়েছি বাবাকে আমার জন্য আর অপমানিত হতে দেবোনা।বাবার অসম্মানের কারণ আর হবোনা।ভালো থাকবেন।”

সাদিব চিঠিটা পড়ে বুঝতে পারলো ওর বাবা রীতির বাবাকে অনেক কড়া কথা শুনিয়েছে।

.

রীতির চোখে ঘুম নেই।দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
অর্থ,ধন-সম্পদ মানুষকে কতটা নিচে নামিয়ে দেয়।কতটা বর্বর করে দেয়।নিচুতলার মানুষকে মানুষই মনে করে না।এই অর্থ-বিত্তের কাছে প্রতিনিয়ত ভালোবাসা গুলো হেরে যায়।রীতি আর সাদিবের ভালোবাসাও হয়তো হেরে গেছে।
রীতি সাদিবের কথা ভাবছে।সাদিব কি করছে?সাদিব যখন জানতে পেরেছে রীতি চলে এসেছে তখন কি রিয়েক্ট করেছে।নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পেয়েছে।হয়তো এখনো পাচ্ছে।রীতির সাথে যোগাযোগ করার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে।রীতিকে কয়েকশ বার হয়তো ফোন দিয়ে ফেলেছে।
রীতি চোখের পানি মুছে ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করলো।
ফোন অন করতেই ফোনটা অনবরত কাপছে।মেসেজ আসছে একের পর এক।রীতি আবারো ফোনটা অফ করে দিয়ে মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে কাদছে।খুব কষ্ট হচ্ছে ওর।ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
সাদিবের সাথে কথা বলে নিজেকে আর দূর্বল করতে চায়না।

.

সকাল ৮টা।রীতি ওর মাকে কাজে সাহায্য করছে চুপচাপ।কেউ কারো সাথে কথা বলছেনা।ঘর এখনো এলোমেলো।জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

সাদিব পুরনো দুতলা একটা বাড়ির সামনে এসে বাইক থামিয়ে দাড়ালো।তারপর বাইরে থেকেই উঁকিঝুকি দিয়ে দেখছে।গেইটে কোনো ওয়াচ ম্যান নেই।তাই সাদিবের ভেতরে ঢুকতে সমস্যা হলোনা।ভেতরে ঢুকতেই বড় উঠোন।উঠোনে বিভিন্ন গাছের বাহার দেখে মুগ্ধ হলো।
সাদিব রীতির কথা মনে করলো।বলেছিলো দোতলায় থাকে।তাই সরাসরি দোতলায় উঠে গেলো।
সাদিব কলিং বেল বাজাবে কিনা বুঝতে পারছেনা।তাদের সামনে কিভাবে গিয়ে দাঁড়াবে।সাদিব জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে বুকে হাত দিয়ে নিজেকে রিলেক্স করলো।
তারপর বেল বাজালো।
রীতির মা নিচতলার ভাবি মনে করে দরজা খোলে সাদিবকে দেখে চোখ কপালে।।
সাদিব শুকনো মুখে দাড়িয়ে আছে।চোখগুলো লাল হয়ে আছে।মনে হচ্ছে সারারাত ঘুমায়নি।

রীতির মা সাদিবকে দেখে অস্ফুটস্বরে বললো,
—-“সাদিব!”

রীতির মায়ের মুখে সাদিবের নাম শুনে কেপে উঠলো।তারপর তাড়াতাড়ি উঠে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো।রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে রইলো।
সাদিব রীতির মাকে সালাম দিয়ে বললো,
—-“আমি আংকেলের সাথে কিছু কথা বলতে চাই।”

রীতির মা কি করবে বুঝতে পারছেনা।
ভেতরে আসতে দিলে রীতির বাবা দেখলে নিশ্চয়ই রাগ করবে।
সাদিবকে রীতির মা বললো,
—-“সাদিব তুমি চলে যাও।এখন পরিস্থিতি ঠিক নেই।তুমি অন্যদিন এসো।আজ চলে যাও।”

সাদিব নাছোড়বান্দা।আজই কথা বলবে।যেভাবেই হোক।
সাদিব ভেতরে ঢুকে গেলো।
ভেতরে ঢুকে ওর অতৃপ্ত চোখ রীতিকে খোজছে।কিন্তু রীতিকে নয় রীতির বাবাকে পেলো।রীতির বাবা সাদিবকে
দেখে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—-“তুমি!”

সাদিব মাথা নিচু করে বললো,
—-“জ্বি আংকেল।আমি জানি না বাবা কি বলেছে।আমি ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করবেন কিনা।কিন্তু এতসবের মধ্যে আমার দোষটা কোথায়? কেনো আমি শাস্তি পাচ্ছি?আমার ভালোবাসাটা তো মিথ্যে না।আমি এখানে আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।”

—-“তুমি চলে যাও।”

—-“আমি রীতির সাথে কথা বলতে চাই।শুধুমাত্র একবার কথা বলতে চাই।”

রীতি দরজা বন্ধ করে দিলো।দরজা বন্ধ করার শব্দে সাদিব দরজার দিকে তাকালো।দরজা যে রীতি বন্ধ করেছে বুঝতে বাকি নেই।সাদিব দৌড়ে দরজার সামনে গিয়ে দরজায় নক করছে।
রীতি দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে।সাদিবের সামনে গিয়ে দাড়াতে চায়না।দূর্বল হতে চায়না।
সাদিব বারবার বলছে,
—-“রীতি দরজাটা খোলো প্লিজ।একবার কথা বলতে চাই।প্লিজ রীতি দরজাটা খোলো।তোমাকে যে আমার অনেক কথা বলার আছে।”

সাদিব বারবার দরজা ধাক্কাচ্ছে।রীতির বাবা ক্ষেপে যাচ্ছেন কিছুটা।সাদিব অতন্ত্য ভালো ছেলে।উনার জন্য,উনার পরিবারের জন্য অনেক কিছু করেছে তাই সাদিবের বাবার এহেন আচরনের পরেও সাদিবের সাথে নিম্নমানের আচরণ করতে পারছেনা।কিন্তু রাগ হচ্ছে।উনার বাড়িতে এসে উনার মেয়ের রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে।
রীতির মা রীতির বাবাকে বললো,
—-“তুমি কিছু বলোনা।আমি কথা বলছি।”

রীতির মা সাদিবকে বললো,
—-“সাদিব থামো।”

—-“আন্টি রীতিকে বলুন না দরজাটা খোলে দিতে।আমি ওর সাথে একটু কথা বলতে চাই।”
দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো।

রীতির মা কড়া গলায় বললো,
—-“সাদিব থামতে বলেছি।”

সাদিব থেমে গিয়ে রীতির মায়ের দিকে তাকালো।

রীতির মা বললো,
—–“সাদিব তুমি কি করছো?কারো বাড়িতে এসে এমন আচরণ করা ঠিক না।এটা তুমি ভালো করে জানো।রীতি দরজা খোলার হলে দরজা বন্ধ করতোনা।তুমি চলে যাও।আমাদের মন-মানসিকতা ভালো নেই।আমরা অনেক ডিস্টার্বে আছি।বুঝার চেষ্টা করো।বাড়িতে চলে যাও প্লিজ।আমার কথাটা রাখো।”

সাদিব অসহায় ফেস করে তাকিয়ে বললো,
—-“আন্টি আমার অপরাধটা কোথায়?আমাকে যদি অপরাধী মনে হয় তো ফাসি দিয়ে দিন।তবুও এমন করবেন না,আমার বাবার শাস্তি আমাকে দিবেন না।আমি রীতিকে বড্ড বেশী ভালোবাসি।”
সাদিব চোখের কোনা থেকে আঙ্গুল দিয়ে পানি মুছে চলে গেলো বাইরে।

রীতি সাদিবের কথা শুনে ডুকরে কেঁদে উঠলো।তারপর দৌড়ে বারান্দার এক কোনায় গিয়ে দাড়ালো।সাদিব চলে যাচ্ছে।উপর থেকে রীতি সাদিবের যাওয়া দেখছে।
“আমি আর পারছিনা সাদিব।কোথায় ফেসে গেলাম আমি?আমাকে মেরে ফেলুন,আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আপনাকে ফিরিয়ে দিতে।আপনাকে কষ্ট দিতে।আমি জানি আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু কি করবো?আমি বড্ড অসহায়।”

.

সাদিব রাতের গভীরে ছাদে বসে গিটার বাজাছে।দৃষ্টি দূর আকাশের দিকে।আনন্দ-কোলাহলের চেয়ে নীরবতা,নির্জন পরিবেশ বেশি ভালো লাগে আজকাল।

“নিকষ কালো এই আধারে
স্মৃতিরা সব খেলা করে।
রয় শুধু নির্জনতা
নির্জনতায় আমি একা
একবার শুধু চোখ মেলো
দেখো আজো পথে জ্বালি আলো
তুমি আবার আসবে ফিরে
বিশ্বাসটুকু দু’হাতে আকড়ে ধরে। ”

চলবে….!