#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন
|পর্ব-৩৮|
রীতির মামা সাদিব আর রীতির জন্য ফুচকা অর্ডার করে বসে আছে।রীতি আর সাদিবের হাতে ফুচকার প্লেট।রীতির মামা ফোনে চ্যাটিং করছে।
রীতি প্লেট হাতে বললো,
—-“মামা,তুমি খাবে না?তোমার জন্য অর্ডার করোনি?”
রীতির মামা মুচকি হেসে বললো,
—-“আমি খাবো না তোরা খা।”
রীতি ভ্রু কুচকে বললো,
—-“কেনো খাবেনা?তুমি তো সেদিন বেশ খেলে।”
রীতির মামা আলতো হেসে বললো,
—-“সেদিন তোর মামী ছিলো। তোর মামীকে ছাড়া আমি ফুচকা খাইনা।ঠিক স্বাদ পাইনা।”
রীতি ভেংচি কেটে বললো,
—-“ইশশ কি প্রেম?”
রীতির মামা সাদিবের দিকে তাকিয়ে হাসলো।তারপর বললো,
—-“দেখেছো ভালোবাসাকেও উপহাস করে।”
সাদিবও মামার সাথে আলতো হাসলো।তারপর বললো,
—-“মামীকে ছাড়া ফুচকা না খাওয়ার কারণ কি?”
—-“কারণ ওর খুব পছন্দ ফুচকা।তাই ওকে ছাড়া ফুচকা আমার মুখে রুচে না।”
সাদিব রীতির দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“তাহলে তো আমার চা খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে।রীতি যেই হারে চা খায়।ওর তো চা ফেভারিট।এখন আমার কি হবে?”
রীতি সাদিবের দিকে ভ্রু কুচকে ঠোঁট ফুলিয়ে তাকালো।
রীতির মামা বললো,
—-“তোমাদের দুজনকে একটা ঘটনা বলি।আমার তখন ২৫ বছর।সবে পড়াশোনার পাট চুকিয়েছি।চাকরি-বাকরি নেই।বেকার মানুষ আড্ডা-গল্পে দিন কেটে যায়।সবাই বাবার হোটেলে খায় আর আমি ভাইদের হোটেলে খাই।
কোনো চাপ নেই।এমন এক দিনে অর্থী ফোন করে কাদতে কাদতে বললো ওর জন্য ছেলে দেখা হচ্ছে।সেদিন সেই মুহুর্তে আমি ম্যাচুয়ুর হয়ে গেলাম।আমার সব বদলে গেলো।বেকার ছেলের কাছে কে মেয়ে দিবে?অর্থী বাবার আদরের মেয়ে।আমার মতো বেকার ছেলের কাছে কেনো বিয়ে দেবে?আর আমি ভাইদের কোন মুখে বলবো? চাকরি খোজা শুরু করে দিলাম।বর্তমান বাজারে চাকরি পাওয়া একটুখানি কথা না।মামা-খালু ছাড়া চাকরি পাওয়া যায়না।আমি কারো সাহায্য নিতে অনিচ্ছুক।বাড়িতে কাউকে কিছু জানাইনি।হতাশ হয়ে পড়েছিলাম।কিন্তু অর্থী আমার হাত ছাড়েনি,মনোবল বাড়াতে সাহায্য করেছে।আমার উপর বিরক্ত কিংবা রাগ হয়নি।আমি আশার আলো হিসেবে অর্থীকে দেখতাম ওর কথা শুনতাম।
অবশেষে চাকরি হয়ে গেলো।অর্থী প্রায় একটা বছর ওর পরিবারের সাথে লড়াই করেছে।কত বয়স ছিলো ওর।রীতির বয়সী ছিলো তখন।তারপর আমরা বিয়ে করলাম দু পরিবারের সম্মতিতে।তিনবছর চলছে বিয়ের।আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি।”
রীতি মামার কথা শুনে মুখ ভার করে ফেললো।সাদিবকে ছেড়ে দিয়েছিলো সেটা ভেবে।সাহস দেখাতে পারেনি।
রীতির মামা আবারো বললো,
—-“আমি বেখেয়ালী,উদাসীন একটা ছেলে ছিলাম।কোনো কিছু সিরিয়াসলি নিতাম না কিন্তু অর্থীকে নিয়েছি।তাই এক মুহুর্তেই সিরিয়াস হয়ে গিয়েছিলাম।তাই তোমাদের বলছি তোমরা একে অপরের হাত ছেড়োনা।দুজন দুজনকে আগলে রেখো ভালোবেসে।একে অপরের শক্তি হিসেবে পাশে থেকো।”
সাদিব বললো,
—-“রীতির কথা জানিনা।তবে আমি কথার খেলাপ করিনা।জীবন দিয়ে দেবো তবুও কথার খেলাপ করবোনা।আমি আজ কথা দিলাম রীতির হাত কখনো ছাড়িনি আর ছাড়বোও না।”
রীতি আলতোভাবে হাসলো।নিজেকে আর দূর্বল লাগছে না।
.
রীতিকে ওর মামা বাড়িতে পৌছে দিলো।যাতে রীতিকে কেউ সন্দেহ না করে।রীতির মামা বলেছে রীতির মন খারাপ ছিলো তাই ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলো।
.
হাসি-আনন্দে ভালোবাসায় কেটে গেছে আরো কতগুলো দিন।
সাদিবের বাবা সাদিবের উপর বেশ বিরক্ত।সাদিব আজকাল তার কথার পাত্তা দেয়না।কেমন অবাধ্য হয়ে উঠেছে।তিনি এর একটা বিহিত করতে চান।তাই বড় মেয়েকে ডেকেছেন।
সাদিবের বড় বোন এসেছে সাদিবদের বাসায়।
আলোচনার এক পর্যায়ে সাদিবের বাবা ঠিক করলো সাদিবের বিয়ে দিবেন।মেয়েও ঠিক করে ফেলেছেন।
সাদিবের মা কিছুটা শংকার মধ্যে থাকলেও সাদিবের বড় বোন এটাই ঠিক মনে করছে।
সাবিহা এতে ঘোর আপত্তি জানাচ্ছে।
—-“আপু,মা তোমরা ভুল করছো।ভাইয়া এসব কিছুতেই মেনে নিবেনা বরং বাড়িতে অশান্তির সৃষ্টি হবে।”
মারিয়া বললো,
—-“কেনো রাজি হবেনা?আমি ওকে বুঝাবো।ও আমার কথা ফেলতে পারবেনা।এমন পরিস্থিতিতে ওর বিয়ে দেওয়াটাই ব্যাটার।”
সাদিবের মায়ের চোখেমুখে দুঃশ্চিন্তা ভর করেছে।সেও দু-টানার মধ্যে আছে।
তাই আমতা আমতা করে বললো,
—–“আমারো মনে হচ্ছে সাদিব ঝামেলা করবে।”
মারিয়া বললো,
—–“মা,আমাদের এ ছাড়া আর উপায় নেই।সাদিব আর বাবার সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হচ্ছে।এভাবে চলতে পারেনা।বাবা-ছেলের সম্পর্ক এমন হলে এই সংসারে শান্তি ফিরে আসবেনা।আর বাবা রীতিকে মেনে নিবেও না।তাহলে এসবের ফায়দা কি?যেটা কখনো হবেই না সেটা নিয়ে ঝামেলা না পাকিয়ে সাদিবের একটা বিয়ে দিয়ে দেও।বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।”
সাবিহা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—-“আগে বিয়ে তো হোক!”
মারিয়া সাবিহার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।সাবিহা মায়ের রুম ত্যাগ করলো।
সাদিবের মাও ভাবছে মারিয়ার কথা ঠিক।একবার যদি বিয়েটা দিতে পারে তবে সব কিছু আবার আগের মতো হয়ে যাবে।বাবা-ছেলের সংঘর্ষ আর ভালো লাগছে না তার।এইবার একটু শান্তি চান।রীতিরা যাওয়ার সাথে সাথে সব শান্তি এই বাড়ি ছেড়ে পলায়ন করেছে।সুখের সংসারে আগুন লেগে গেছে।
সাদিব বাড়িতে আসতেই সাবিহা বিয়ের কথাটা সাদিবের কানে তুলে দিলো।সাদিব এসব শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।মাথায় যেনো আগুন জ্বলছে।পুরো বাড়ি সেই আগুনে জ্বালিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
সাদিব বাবার সাথে চিতকার চেচামেচি করছে।
—-“আমি যদি বিয়ে করি তবে রীতিকেই করবো।পৃথিবীর কোনো শক্তি আমাকে তোমার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করাতে পারবেনা।”
সাদিবের বাবা দাতে দাত চেপে বললো,
—-“তাহলে আমার কথাও শুনে রাখো আমি কিছুতেই ওই মেয়েকে এই বাড়িতে তুলবোনা।ওকে বিয়ে করলে তোমারও এই বাড়িতে জায়গা হবেনা।”
সাদিব মৃদুস্বরে বললো,”ঠিক আছে।”
তারপর টেবিলে জোরে হাত চাপকে চিতকার করে বললো,
—-“ঠিক আছে থাকবোনা এই বাড়িতে।তুমি থাকো তোমার রাজত্ব নিয়ে।এই রাজত্ব আমার চাইনা।”
সাদিব নিজের ঘরে গিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলো।সাদিবের মা,বোন সবাই সাদিবকে বাধা দিচ্ছে।
সাদিবের বাবা কড়া গলায় বললো,
—-“তুমি যদি আজ এই বাড়ি ছাড়ো তবে তুমি আমার সব সম্পত্তি,বাড়ি-গাড়ি থেকে বঞ্চিত হবে।তোমার জায়গা হবেনা আর এই বাড়িতে।”
সাদিব আবারো তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
—-“তুমি লোভী স্বার্থপর হলেও লোভী ছেলে জন্ম দেওনি।আমার কোনো কালেই এসবের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিলো না।আর না আজ আছে।আমি শুধু আমার প্রিয় মানুষগুলোকে নিয়ে আনন্দে থাকতে চেয়েছি আজীবন।আজ যদি আমার মনের আনন্দের জন্য সব ছাড়তে হয় তাতে আমার আপত্তি নেই।”
সাদিবের বাবা সাদিবের মাইন্ড চেঞ্জ করতে বললো,
—-“তোমার মা-বোনের কোনো দাম নেই তোমার কাছে?ওরা কেউ না তোমার?আজ রীতি সবার উর্ধ্বে?”
সাদিব বাবার কথা শুনে মায়ের কাছে গিয়ে দাড়ালো।
তারপর বললো,
—-“এই পৃথিবীতে যদি আমি কাউকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি সেটা হচ্ছে আমার মা।আর এটা সব ছেলে-মেয়েরই উচিত।মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।আমার মা আমাকে কখনো খারাপ শিক্ষা দেয়নি।আজ আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা মায়ের শিক্ষার ভিত্তিতেই নিচ্ছি।আমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকিনা কেনো মা সবসময় আমার মনে,আমার দোয়ায় থাকবে।তেমনি আমিও মায়ের মনে,মায়ের প্রতি মোনাজাতে থাকবো।”
সাদিবের মা সাদিবের কথার পিঠে কোনো কথা বলতে পারলোনা।
তারপর সাদিব সাবিহার সামনে গিয়ে দাড়ালো।তারপর বললো,
—-“সব সময় আমি আমার বোনের মাথার উপর ছায়া হতে চেয়েছি।বোনকে আগলে রেখেছি।আমার বোন আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান দিবে এটা আমার বিশ্বাস।আমি যেখানেই থাকিনা কেনো বোনের প্রয়োজনে ছুটে আসবো শুধু একটাবার ডাকিস।”
সাদিব সাবিহার মাথায় হাত বুলিয়ে স্নিগ্ধ হাসলো।সাবিহা দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিশ্চুপ কাদছে।
মারিয়া সাদিবের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,
—-“সাদিব কি করছিস তুই?মা দেখ কিভাবে কাদছে।মাকে কাদিয়ে চলে যাচ্ছিস?”
সাদিব মৃদু হেসে বললো,
—–“কেনো আপু তুই আছিস তো মায়ের জন্য।মাকে দেখে রাখিস।ভালো থাকিস।মন চাইলে আমার জন্য দোয়া করিস।”
পেছনে থেকে মারিয়া বারবার সাদিবকে ডাকছে।সাদিবের মা বসে বসে কাদছেন।
সাদিব বাইক স্টার্ট দিলো।আজ ও অজানার পথে পাড়ি জমিয়েছে।আজ ওর নিজেকে মুক্ত লাগছে,ডানা মেলে উড়ে যেতে ইচ্ছে করছে।মুক্তির স্বাদ উপলব্ধি করতে চাইছে।
“মা,ক্ষমা করো।আমি আবারো তোমার কোলে ফিরে আসবো কথা দিচ্ছি।তার আগে বাবাকে একটা শিক্ষা দিতে হবে।”
সাদিব বাইক চালাচ্ছে আর গান গাইছে,
“কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা,মনে মনে।মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা,মনে মনে।”
চলবে….!
#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন
|পর্ব-৩৮|
রীতির মামা সাদিব আর রীতির জন্য ফুচকা অর্ডার করে বসে আছে।রীতি আর সাদিবের হাতে ফুচকার প্লেট।রীতির মামা ফোনে চ্যাটিং করছে।
রীতি প্লেট হাতে বললো,
—-“মামা,তুমি খাবে না?তোমার জন্য অর্ডার করোনি?”
রীতির মামা মুচকি হেসে বললো,
—-“আমি খাবো না তোরা খা।”
রীতি ভ্রু কুচকে বললো,
—-“কেনো খাবেনা?তুমি তো সেদিন বেশ খেলে।”
রীতির মামা আলতো হেসে বললো,
—-“সেদিন তোর মামী ছিলো। তোর মামীকে ছাড়া আমি ফুচকা খাইনা।ঠিক স্বাদ পাইনা।”
রীতি ভেংচি কেটে বললো,
—-“ইশশ কি প্রেম?”
রীতির মামা সাদিবের দিকে তাকিয়ে হাসলো।তারপর বললো,
—-“দেখেছো ভালোবাসাকেও উপহাস করে।”
সাদিবও মামার সাথে আলতো হাসলো।তারপর বললো,
—-“মামীকে ছাড়া ফুচকা না খাওয়ার কারণ কি?”
—-“কারণ ওর খুব পছন্দ ফুচকা।তাই ওকে ছাড়া ফুচকা আমার মুখে রুচে না।”
সাদিব রীতির দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“তাহলে তো আমার চা খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে।রীতি যেই হারে চা খায়।ওর তো চা ফেভারিট।এখন আমার কি হবে?”
রীতি সাদিবের দিকে ভ্রু কুচকে ঠোঁট ফুলিয়ে তাকালো।
রীতির মামা বললো,
—-“তোমাদের দুজনকে একটা ঘটনা বলি।আমার তখন ২৫ বছর।সবে পড়াশোনার পাট চুকিয়েছি।চাকরি-বাকরি নেই।বেকার মানুষ আড্ডা-গল্পে দিন কেটে যায়।সবাই বাবার হোটেলে খায় আর আমি ভাইদের হোটেলে খাই।
কোনো চাপ নেই।এমন এক দিনে অর্থী ফোন করে কাদতে কাদতে বললো ওর জন্য ছেলে দেখা হচ্ছে।সেদিন সেই মুহুর্তে আমি ম্যাচুয়ুর হয়ে গেলাম।আমার সব বদলে গেলো।বেকার ছেলের কাছে কে মেয়ে দিবে?অর্থী বাবার আদরের মেয়ে।আমার মতো বেকার ছেলের কাছে কেনো বিয়ে দেবে?আর আমি ভাইদের কোন মুখে বলবো? চাকরি খোজা শুরু করে দিলাম।বর্তমান বাজারে চাকরি পাওয়া একটুখানি কথা না।মামা-খালু ছাড়া চাকরি পাওয়া যায়না।আমি কারো সাহায্য নিতে অনিচ্ছুক।বাড়িতে কাউকে কিছু জানাইনি।হতাশ হয়ে পড়েছিলাম।কিন্তু অর্থী আমার হাত ছাড়েনি,মনোবল বাড়াতে সাহায্য করেছে।আমার উপর বিরক্ত কিংবা রাগ হয়নি।আমি আশার আলো হিসেবে অর্থীকে দেখতাম ওর কথা শুনতাম।
অবশেষে চাকরি হয়ে গেলো।অর্থী প্রায় একটা বছর ওর পরিবারের সাথে লড়াই করেছে।কত বয়স ছিলো ওর।রীতির বয়সী ছিলো তখন।তারপর আমরা বিয়ে করলাম দু পরিবারের সম্মতিতে।তিনবছর চলছে বিয়ের।আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি।”
রীতি মামার কথা শুনে মুখ ভার করে ফেললো।সাদিবকে ছেড়ে দিয়েছিলো সেটা ভেবে।সাহস দেখাতে পারেনি।
রীতির মামা আবারো বললো,
—-“আমি বেখেয়ালী,উদাসীন একটা ছেলে ছিলাম।কোনো কিছু সিরিয়াসলি নিতাম না কিন্তু অর্থীকে নিয়েছি।তাই এক মুহুর্তেই সিরিয়াস হয়ে গিয়েছিলাম।তাই তোমাদের বলছি তোমরা একে অপরের হাত ছেড়োনা।দুজন দুজনকে আগলে রেখো ভালোবেসে।একে অপরের শক্তি হিসেবে পাশে থেকো।”
সাদিব বললো,
—-“রীতির কথা জানিনা।তবে আমি কথার খেলাপ করিনা।জীবন দিয়ে দেবো তবুও কথার খেলাপ করবোনা।আমি আজ কথা দিলাম রীতির হাত কখনো ছাড়িনি আর ছাড়বোও না।”
রীতি আলতোভাবে হাসলো।নিজেকে আর দূর্বল লাগছে না।
.
রীতিকে ওর মামা বাড়িতে পৌছে দিলো।যাতে রীতিকে কেউ সন্দেহ না করে।রীতির মামা বলেছে রীতির মন খারাপ ছিলো তাই ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলো।
.
হাসি-আনন্দে ভালোবাসায় কেটে গেছে আরো কতগুলো দিন।
সাদিবের বাবা সাদিবের উপর বেশ বিরক্ত।সাদিব আজকাল তার কথার পাত্তা দেয়না।কেমন অবাধ্য হয়ে উঠেছে।তিনি এর একটা বিহিত করতে চান।তাই বড় মেয়েকে ডেকেছেন।
সাদিবের বড় বোন এসেছে সাদিবদের বাসায়।
আলোচনার এক পর্যায়ে সাদিবের বাবা ঠিক করলো সাদিবের বিয়ে দিবেন।মেয়েও ঠিক করে ফেলেছেন।
সাদিবের মা কিছুটা শংকার মধ্যে থাকলেও সাদিবের বড় বোন এটাই ঠিক মনে করছে।
সাবিহা এতে ঘোর আপত্তি জানাচ্ছে।
—-“আপু,মা তোমরা ভুল করছো।ভাইয়া এসব কিছুতেই মেনে নিবেনা বরং বাড়িতে অশান্তির সৃষ্টি হবে।”
মারিয়া বললো,
—-“কেনো রাজি হবেনা?আমি ওকে বুঝাবো।ও আমার কথা ফেলতে পারবেনা।এমন পরিস্থিতিতে ওর বিয়ে দেওয়াটাই ব্যাটার।”
সাদিবের মায়ের চোখেমুখে দুঃশ্চিন্তা ভর করেছে।সেও দু-টানার মধ্যে আছে।
তাই আমতা আমতা করে বললো,
—–“আমারো মনে হচ্ছে সাদিব ঝামেলা করবে।”
মারিয়া বললো,
—–“মা,আমাদের এ ছাড়া আর উপায় নেই।সাদিব আর বাবার সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হচ্ছে।এভাবে চলতে পারেনা।বাবা-ছেলের সম্পর্ক এমন হলে এই সংসারে শান্তি ফিরে আসবেনা।আর বাবা রীতিকে মেনে নিবেও না।তাহলে এসবের ফায়দা কি?যেটা কখনো হবেই না সেটা নিয়ে ঝামেলা না পাকিয়ে সাদিবের একটা বিয়ে দিয়ে দেও।বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।”
সাবিহা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—-“আগে বিয়ে তো হোক!”
মারিয়া সাবিহার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।সাবিহা মায়ের রুম ত্যাগ করলো।
সাদিবের মাও ভাবছে মারিয়ার কথা ঠিক।একবার যদি বিয়েটা দিতে পারে তবে সব কিছু আবার আগের মতো হয়ে যাবে।বাবা-ছেলের সংঘর্ষ আর ভালো লাগছে না তার।এইবার একটু শান্তি চান।রীতিরা যাওয়ার সাথে সাথে সব শান্তি এই বাড়ি ছেড়ে পলায়ন করেছে।সুখের সংসারে আগুন লেগে গেছে।
সাদিব বাড়িতে আসতেই সাবিহা বিয়ের কথাটা সাদিবের কানে তুলে দিলো।সাদিব এসব শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।মাথায় যেনো আগুন জ্বলছে।পুরো বাড়ি সেই আগুনে জ্বালিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
সাদিব বাবার সাথে চিতকার চেচামেচি করছে।
—-“আমি যদি বিয়ে করি তবে রীতিকেই করবো।পৃথিবীর কোনো শক্তি আমাকে তোমার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করাতে পারবেনা।”
সাদিবের বাবা দাতে দাত চেপে বললো,
—-“তাহলে আমার কথাও শুনে রাখো আমি কিছুতেই ওই মেয়েকে এই বাড়িতে তুলবোনা।ওকে বিয়ে করলে তোমারও এই বাড়িতে জায়গা হবেনা।”
সাদিব মৃদুস্বরে বললো,”ঠিক আছে।”
তারপর টেবিলে জোরে হাত চাপকে চিতকার করে বললো,
—-“ঠিক আছে থাকবোনা এই বাড়িতে।তুমি থাকো তোমার রাজত্ব নিয়ে।এই রাজত্ব আমার চাইনা।”
সাদিব নিজের ঘরে গিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলো।সাদিবের মা,বোন সবাই সাদিবকে বাধা দিচ্ছে।
সাদিবের বাবা কড়া গলায় বললো,
—-“তুমি যদি আজ এই বাড়ি ছাড়ো তবে তুমি আমার সব সম্পত্তি,বাড়ি-গাড়ি থেকে বঞ্চিত হবে।তোমার জায়গা হবেনা আর এই বাড়িতে।”
সাদিব আবারো তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
—-“তুমি লোভী স্বার্থপর হলেও লোভী ছেলে জন্ম দেওনি।আমার কোনো কালেই এসবের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিলো না।আর না আজ আছে।আমি শুধু আমার প্রিয় মানুষগুলোকে নিয়ে আনন্দে থাকতে চেয়েছি আজীবন।আজ যদি আমার মনের আনন্দের জন্য সব ছাড়তে হয় তাতে আমার আপত্তি নেই।”
সাদিবের বাবা সাদিবের মাইন্ড চেঞ্জ করতে বললো,
—-“তোমার মা-বোনের কোনো দাম নেই তোমার কাছে?ওরা কেউ না তোমার?আজ রীতি সবার উর্ধ্বে?”
সাদিব বাবার কথা শুনে মায়ের কাছে গিয়ে দাড়ালো।
তারপর বললো,
—-“এই পৃথিবীতে যদি আমি কাউকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি সেটা হচ্ছে আমার মা।আর এটা সব ছেলে-মেয়েরই উচিত।মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।আমার মা আমাকে কখনো খারাপ শিক্ষা দেয়নি।আজ আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা মায়ের শিক্ষার ভিত্তিতেই নিচ্ছি।আমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকিনা কেনো মা সবসময় আমার মনে,আমার দোয়ায় থাকবে।তেমনি আমিও মায়ের মনে,মায়ের প্রতি মোনাজাতে থাকবো।”
সাদিবের মা সাদিবের কথার পিঠে কোনো কথা বলতে পারলোনা।
তারপর সাদিব সাবিহার সামনে গিয়ে দাড়ালো।তারপর বললো,
—-“সব সময় আমি আমার বোনের মাথার উপর ছায়া হতে চেয়েছি।বোনকে আগলে রেখেছি।আমার বোন আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান দিবে এটা আমার বিশ্বাস।আমি যেখানেই থাকিনা কেনো বোনের প্রয়োজনে ছুটে আসবো শুধু একটাবার ডাকিস।”
সাদিব সাবিহার মাথায় হাত বুলিয়ে স্নিগ্ধ হাসলো।সাবিহা দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিশ্চুপ কাদছে।
মারিয়া সাদিবের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,
—-“সাদিব কি করছিস তুই?মা দেখ কিভাবে কাদছে।মাকে কাদিয়ে চলে যাচ্ছিস?”
সাদিব মৃদু হেসে বললো,
—–“কেনো আপু তুই আছিস তো মায়ের জন্য।মাকে দেখে রাখিস।ভালো থাকিস।মন চাইলে আমার জন্য দোয়া করিস।”
পেছনে থেকে মারিয়া বারবার সাদিবকে ডাকছে।সাদিবের মা বসে বসে কাদছেন।
সাদিব বাইক স্টার্ট দিলো।আজ ও অজানার পথে পাড়ি জমিয়েছে।আজ ওর নিজেকে মুক্ত লাগছে,ডানা মেলে উড়ে যেতে ইচ্ছে করছে।মুক্তির স্বাদ উপলব্ধি করতে চাইছে।
“মা,ক্ষমা করো।আমি আবারো তোমার কোলে ফিরে আসবো কথা দিচ্ছি।তার আগে বাবাকে একটা শিক্ষা দিতে হবে।”
সাদিব বাইক চালাচ্ছে আর গান গাইছে,
“কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা,মনে মনে।মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা,মনে মনে।”
চলবে….!