#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন
|পর্ব-৩৯|
রীতি নাস্তা করে রুমে গিয়ে বসেছে আর ফোনটা বেজে উঠলো।রীতি ফোন হাতে না নিয়েই বুঝতে পারছে সাদিব ফোন করেছে।রীতি ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
—-“পিজ্জা খাচ্ছি,খাবে?”
রীতি বেকুব হয়ে গেলো।ফোন করে মানুষ কুশল বিনিময় করে আর সাদিব ফোন করে পিজ্জা খাবে কিনা জিজ্ঞেস করছে।
—-“সকাল সকাল পিজ্জা? কোথায় আছেন আপনি?”
—-“এই তো একটা রেস্টুরেন্টে।আমার তো আর বউ নেই যে রান্না করে খাওয়াবে।”
রীতি উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,
—-“কেনো আন্টি কই?শরীর খারাপ না বাড়িতে নেই?”
সাদিব স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
—-“আমি বাড়িতে নেই।চলে এসেছি বাড়ি ছেড়ে।”
রীতি সাদিবের কথা শুনে শকড।নিজের শকড কাটিয়ে উঠতে পারছেনা।সাদিব এমন ভাবে বলছে যেনো এটা হওয়ারই ছিলো।অনুতাপ,ভ্রুক্ষেপহীন ভাব করছে।
রীতি আমতা আমতা করে বললো,
—-“মানে কি?বাড়ি থেকে চলে এসেছেন মানে?”
সাদিব পিজ্জা চিবানো শেষ করে বললো,
—-“সে অনেক কাহিনি।সামনাসামনি বলতে হবে।”
রীতি বিচলিত হয়ে বললো,
—-“তাহলে সামনাসামনিই বলুন।আমি বের হচ্ছি আপনি চলে আসুন।”
সাদিব টেবিল ছেড়ে উঠতে নিলে রীতি বললো,
—-“খাবার শেষ করে উঠুন।আমার রেডি হয়ে মাকে মানিয়ে বের হতে সময় লাগবে।একদম তাড়াহুড়ো করবেন না।বাইক কম স্পিডে চালাবেন।ভুলে যাবেন না বাইকের মালিক রীতি।”
সাদিব স্মিত হেসে বললো,
—-“আচ্ছা আচ্ছা।”
রীতি মাকে ম্যানেজ করে সাদিবের সাথে দেখা করতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বের হতেই রীতির মা একটা বক্স নিয়ে রীতির সামনে এসে বললো,
—-“এটা সাদিবকে দিবি।”
রীতি মায়ের কথা শুনে চমকে গিয়ে বড়সড় ঢোক গিলল।শিরদাঁড়া বয়ে শীতল শিহরণ বয়ে গেলো।ভয়ে মায়ের দিকে তাকাতে পারছেনা।মা কি করে জানলো সাদিবের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি?
রীতির মা রীতির অবস্থা দেখে বললো,
—-“তুই আমার পেটে জন্মেছিস আমি না।তোর নাড়ি-নক্ষত্র সব জানি।ওকে দিস অনেক দিন যাবত ও আমার হাতের কিছু খায়না।”
রীতির মায়ের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো।মাও সাদিবকে মিস করে প্রচুর।
.
রীতিকে আসতে দেখে সাদিব উঠে দাড়ালো।রীতির চোখেমুখে নানা প্রশ্ন,চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে।রীতি বিমর্ষ মুখে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই সাদিব বললো,
—-“বিএফের সাথে কেউ এভাবে দেখা করতে আসে?”
রীতি সাদিবের কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।
—-“মানে?মানে কি?কিভাবে এসেছি?”
তারপর রীতি নিজেকে পা থেকে দেখছে যতটুকু পারছে।
সাদিব হেসে বললো,
—-“বিএফের সাথে দেখা করতে আসলে একটু সেজেগুজে আসছে হয়।”
রীতি ভ্রু কুচকে সাদিবের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ফাজলামি করেন?এমন মুহুর্তেও আপনি ফাজলামি কি করে করতে পারেন?কি হয়েছে বলুন।”
সাদিব বসে বললো,
—-“কি হবে?বাড়ি থেকে চলে এসেছি।”
রীতি সাদিবের পাশে বসে বললো,
—-“চলে এসেছেন?না আংকেল রাগের মাথায় বের হয়ে যেতে বলেছে?”
সাদিব বললো,
—-“তেমনি বলতে পারো।”
—-“আংকেল রাগের মাথায় বললো আর আপনিও চলে এলেন?আপনার এতো রাগ কবে থেকে হলো?আপনার তো এতো রাগ নেই।”
সাদিব রীতির দিকে চেয়ে হালকা হেসে বললো,
—-“তাহলে তুমি আমাকে চেনো নি।আমি ভয়ংকর রাগী।তবে হুটহাট অযথা রেগে যাইনা।যেখানে প্রয়োজন সেখানেই আমার রাগটা দেখাই।কাউকে ছাড় দেইনা।”
রীতি চুপ করে গেলো।তারপর নিচু গলায় বললো,
—-“আপনি কাজটা ঠিক করেন নি।রাগের মাথায় বাড়ি ছেড়ে চলে আসবেন?”
সাদিবের এখন রীতির কথা শুনে রাগ হচ্ছে।সাদিব রাগান্বিত সুরে বললো,
—-“আচ্ছা,তাই নাকি?তাহলে বাবার কথা মতো বাবার পছন্দ করা মেয়ের সঙ্গে বিয়ে করে সংসার করা উচিত ছিলো।আর সেই বিয়েতে তোমাকে দাওয়াত করা উচিত ছিলো।”
রীতি সাদিবের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।সাদিবের বিয়ের কথা শুনে বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে উঠলো।গলা ধরে আসছে।চোখ ভারী হয়ে যাচ্ছে পানিতে।অবাধ্য চোখের পানি গুলো বাধ মানতে চাইছেনা।টুপ করে এক ফোটা পানি গালে পড়লো।
সাদিবের রাগ নিমিষেই কেটে গেলো।সাদিব বিচলিত হয়ে পড়লো রীতির চোখের পানি দেখে।
সাদিব রীতির আরো কাছে বসে বললো,
—-“এই সরি সরি।আমি তোমার সাথে আর এভাবে কথা বলবোনা।সত্যি বলছি আর রাগ করবো না।”
সাদিব রীতির চোখের পানি মুছে দিলো।
রীতি ভাঙা গলায় বললো,
—-“আপনার যত ইচ্ছে রাগ করুন আমার সাথে।তবুও অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা বলবেন না।”
সাদিব চোখ বন্ধ করে নিজের মাথায় নিজেই গাট্টা মারলো।
“আমিও না।এই অবুঝ মেয়েটাকে কেনো কষ্ট দেই।”
—-“বোকা মেয়ে।আমি তো তোমাকে রিজন জানালাম।কেনো বাবার সাথে রাগারাগি হয়েছে।কেনো চলে এসেছি বাড়ি ছেড়ে।”
রীতি নরমাল হয়ে সাদিবকে বললো,
—-“হুট করে আংকেল আপনার বিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো কেনো?কি করেছেন আপনি? আমি শিওর আপনি কিছু করেছেন।”
সাদিব মাথা চুলকে নাক কুচকে হাসছে।
রীতি ভ্রু কুচকে চেয়ে আছে।
—-“আসলে তোমরা যে ফ্ল্যাটে থাকতে সেখানে নতুন ভাড়াটিয়া আসতে দিচ্ছিনা।কেউ ভাড়ায় আসতে চাইলে উল্টো পাল্টা কথা বলে ভাগিয়ে দিতাম।আরো উল্টো পাল্টা কাজ করেছি।তাই বাবা ক্ষেপে গেছেন।আমাকে বিয়ে দিয়ে সোজা করতে চান।তাই।”
রীতি অবাক হয়ে বললো,
—-“আপনি এসব কেনো করছেন?ভাড়াটিয়া আসতে দিচ্ছেন না কেনো?আপনার কি মনে হচ্ছে আমরা ও বাড়িতে আবার ভাড়ায় যাবো?”
—-“উহু,,জানি আর যাবে না আংকেল।বাট আমি ওখানে শুধু তোমার ছোয়া,তোমার স্মৃতি রাখতে চাই।অন্য কারো ছোয়ায় তোমার ছোয়াকে মলিন করতে চাইনা।তালা মেরে এসেছি।”
রীতি অন্যমনস্ক হয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—-“তালা ভাঙা যায়।”
সাদিব বললো,
—-“সে যাক।ওখানে কেউ ভাড়া আসবেনা সাদিব থাকতে।”
রীতি অনুতাপের সুরে বললো,
—-“এ-সব আমার জন্য হচ্ছে।আমার জন্য আপনি বাড়ি ছেড়েছেন।”
সাদিব রীতিকে আগলে নিয়ে বললো,
—-“তোমার জন্য না।আমার জন্য।বাবাকে আমি ঠিক পথে আনতে চাই।টাকার চেয়ে সম্পর্কের মূল্য যে বেশী সেটা বুঝাতে চাই।আমার শূন্যতা বুঝাতে চাই।এটা আমাদের সবার জন্য ভালো হবে।”
—-“আপনি থাকছেন কোথায়?”
—-“জনির ফ্ল্যাটে।ওখানেই থাকবো।আর একটা জবের চেষ্টা করবো।”
—-“উনি কি একাই থাকেন?”
—-“নাহ।দু বেড রুমের ফ্ল্যাট।শেয়ারে থাকে এক বড় ভাইয়ের সাথে।”
—-“আচ্ছা সাবধানে থাকবেন।আর রাগ কমে গেলে বাড়িতে ফিরে যাবেন।”
—-“তুমি যদি আবারো বাড়ি যাওয়ার কথা বলো তো আমি আবারো বিয়ের কথা বলবো।”
—-“ঠিক আছে আর বলবোনা।এখন এটা নিন।আপনার শাশুড়ী মা দিয়েছেন।”
সাদিব উৎসুক হয়ে রীতির হাত থেকে বক্স খোলে দেখে পিঠা।
—-“বউ আনাড়ি হলেও সমস্যা নেই।শাশুড়ীর হাতে বেশ জমিয়ে খাওয়া যাবে।”
.
সাদিব জনির সাথে বসে গল্প করছিলো তখনই পাশের রুমের বড় ভাই এসে ওদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।জনি পরিচয় করিয়ে দিলো উনার নাম রাসেল।সাদিবের সবার সাথে মেশার ভালো গুণ রয়েছে।তাই অল্প সময়েই রাসেল ভাইয়ের সাথে ভালো ভাব হয়ে গেলো।
।
সাদিব বাড়ি থেকে এসেছে আজ ৫দিন।বাবা একদিনের জন্যও ফোন করে খোজ নেয়নি।মা বারবার বাড়ি ফিরে যেতে বলছে।সাদিবের বন্ধু বাইরে গেছে।সাদিবের মনটা আজ ভিষণ খারাপ।এই মুহুর্তে কাউকে প্রয়োজন যার সাথে মন খোলে দুটো কথা বলতে পারে।নিজেকে হালকা করতে পারে।আজ সাদিব একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলো।ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে যা দেখলো তাতে মন ভেঙে গেছে।আসলেই মামা,খালু ছাড়া চাকরি হয়না।যতটা সহজ ভেবেছিলো ততটাও সহজ না।সাদিবের আজ নিজেকে অসহায় লাগছে।বাবার পয়সায় আরাম করে গেছে আজীবন।এই কঠিন বাস্তবতার মাঝে এসে বুঝতে পারছে মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা রোজ কতটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ঘুমাতে যায়।কতটা কষ্ট বুকে চেপে রাখে।কতটা অনিশ্চয়তার মাঝে দিন পার করে।
সাদিবের সব মিলিয়ে কিছুই ভালো লাগছে না।রীতির সাথেও কিছু শেয়ার করতে ইচ্ছে করছে না।এতে রীতির টেনশন বেড়ে যাবে।তাছাড়া রীতি নিজেকে আরো অপরাধী ভাববে।নিজেকে আরো দায়ী করবে।
সাদিব এসব ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।ড্রয়িংরুমে এটাচ করা বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাসেল ভাই নিকোটিনের ধোয়া উড়াচ্ছে।সাদিবকে দেখে বললো,
—-“আরে ইয়াং ম্যান! কি খবর তোমার?”
সাদিব মৃদু হেসে তার সামনে গিয়ে রেলিঙ ধরে আকাশের দিকে তাকালো।ঘুটঘুটে অন্ধকার।আকাশে দু-এক তারা দেখা যাচ্ছে।সাদিবের মনে হচ্ছে এই আকাশ সাদিবের প্রতিচ্ছবি।
সাদিব যতই ডোন্ট কেয়ার ভাব করুক যতই বলুক আ’ম ওকে।ওর ভেতরে একটা চাপা কষ্ট পুষে রেখেছে।প্রথমে রীতির দূরে চলে যাওয়া,বাবার এমন ব্যবহার,ওর বাড়ি,ওর পরিবার,
মা,বোনকে ছেড়ে এসে ও ভালো নেই।
একদম ভালো নেই।ডিপ্রেশনে ভুগছে।জীবন যেনো ডিপ্রেশনে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হচ্ছে।
রাসেল ভাই সাদিবের কাধে হাত রেখে বললো,
—-“কি ব্যাপার সাদিব?মন খারাপ?”
সাদিব রাসেল ভাইয়ের দিকে ঘুরে হেসে বললো,
—-“না,আমার মন কখনো খারাপ হয়না।”
রাসেল ভাই তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—-“হয়,মন খারাপ হয়।তোমার চোখে আমি একটা চাপা কষ্ট দেখতে পাই।সব সময় যেটা লুকিয়ে রাখো।কেনো রাখো?নিকোটিনের ধোয়ার মতো উড়িয়ে দেও।”
সাদিব একরাশ বিস্ময় নিয়ে রাসেল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।উনি সবটা কি করে বুঝে ফেললো।
রাসেল ভাই হেসে বললো,
—-“আমি জানি তুমি কি ভাবছো।আমি তোমার প্রতিচ্ছবি তাই।কতদিনের প্রেম?”
সাদিব চমকে গিয়ে বললো,
—-“আপনি…. ”
—-“কেউ বলেনি,জানিও না।তবে মনে হলো তুমি কাউকে ভালোবাসো।ভয়ংকর ভালোবাসা যাকে বলে।”
সাদিব লজ্জা মিশ্রিত হেসে বললো,
—-“জ্বি ৮মাসের সম্পর্ক।”
রাসেল ভাই নাক-মুখ দিয়ে ধোয়া ছেড়ে বললো,
—-“এই প্রেম শুধু পুড়ায়।কিছু দেয়না।৮মাস?আমার ৮বছরের সম্পর্ক ছিলো।কতশত প্রতিশ্রুতি ছিলো।সেও ছেড়ে চলে গেছে।”
সাদিব কৌতুহল নিয়ে বললো,
—-“কেনো?”
রাসেল ভাই তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—-“কেনো আবার?বেকার ছিলাম তাই।মেয়েরা যাকে ভালোবাসে না তার সাথে আজীবন থাকতে পারলেও চাকরি নেই এমন ভালোবাসার মানুষকে ভুলেও বিয়ে করে না।”
রাসেল ভাই আবারো হাসলো।
শেষের কথাটা সাদিবের একদম পছন্দ হলোনা।নিজের ব্যক্তিগত ক্ষোভ ঢালছেন তিনি।
রাসেল ভাই সিগারেট ফেলে বললো,
—-“জানো খুব ভালোবাসতাম ওকে।তার বদলে কি পেলাম?আমরা একই ক্লাসে পড়তাম।এক সাথে গ্রাজুয়েট করেছি।তার পরই ওর বাড়িতে ওর বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেলো।আমার চাকরী নেই।বেকার আমি। চাকরী পাচ্ছিলাম না।তাই ওর পরিবার আমার কাছে মেয়েকে বিয়ে দিতে নারাজ।আর অপেক্ষাও করবেনা।ওকে বলেছিলাম চলো পালিয়ে বিয়ে করে নেই।তারপর সবাই মেনে নিবেই।কিন্তু ও রাজি হলোনা।একটা চাকরীর কাছে আমার ৮বছরের ভালোবাসা হেরে গেলো।আমার বাবা-মা চাইলে হয়তো ওর বিয়েটা আটকাতে পারতো কিন্তু আটকায় নি।তাই আমি সবাইকে ছেড়ে দিয়েছি।পরিবার যদি প্রয়োজনে পাশে না থাকে সে পরিবার দিয়ে কি করবো?”
সাদিব রাসেল ভাইয়ের কষ্টটা অনুভব করতে চাইছে।আর কষ্টটা কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারছে।ওর পরিবারও ওর পাশে নেই।আর নিজেরও চাকরি নেই।তবে রীতি আছে।কিন্তু এখন সাদিবের ভয় হচ্ছে রাসেল ভাইয়ের মতো ও নিজের ভালোবাসাকে না হারিয়ে ফেলে।সাদিবের অস্থির লাগছে।বুকের ভেতর অদ্ভুৎ কষ্ট হচ্ছে।হারিয়ে ফেলার ভয় ঝেকে ধরেছে।
সাদিব জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।
রাসেল ভাই আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে বললো,
—-“কি কষ্ট হচ্ছে? কষ্ট পুষে না রেখে উড়িয়ে দেও।”
রসেল ভাই একটা সিগারেট বাড়িয়ে দিলো।সাদিব সিগারেটের দিকে তাকিয়ে ভদ্রতাসূচক হাসি দিয়ে বললো,
—-“আমি সিগারেট খাইনা।”
—-“তাতে কি?একবার ট্রায় করে দেখো।নিজেকে হালকা লাগবে।মাথা থেকে সব টেনশন বেড়িয়ে যাবে।সিগারেটই তো ভাই।এখনকার দিনে সবাই খায়।কিছু হবেনা।একবার ট্রায় করে দেখো।”
সাদিব সিগারেটের দিকে তাকিয়ে আছে।সিগারেটটা ওকে প্রচন্ডভাবে টানছে।বলছে নে কষ্টগুলো উড়িয়ে দে শূন্যে।সাদিব কাপা কাপা হাতে সিগারেটটা নিলো।তারপর রাসেল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।
.
এক সপ্তাহ পর
সাদিব আজ রীতির সাথে দেখা করতে এসেছে।রীতিকে ওর কিছু বলার আছে।গুরুত্বপূর্ণ কিছু।এই এক সপ্তাহে সাদিবের বাবা মোট ৩বার ফোন করেছে।আর ফোন করে প্রতিবার কড়া কথা বলেছে।সাদিব আশা করেছিলো অন্তত একবার ওর বাবা মোলায়েম গলায় ভালোবেসে বলবে,”সাদিব ফিরে এসো।তোমাকে ছাড়া বাড়িটা শূন্য শূন্য লাগছে।”
কিন্তু বলে নি।সাদিব হাল ছেড়ে দিয়েছে।কিছু মানুষ কখনো শোধরাবার নয়।সাদিবের বাবাও তাদের মধ্যে একজন।এই এক সপ্তাহে সাদিব দুই জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েছে।সেখান থেকেও ফোন আসেনি।আজ এতো এতো সার্টিফিকেট,ভালো রেজাল্ট সব মূল্যহীন মনে হচ্ছে।সব মিলিয়ে সাদিব শূন্যতায় মারা যাচ্ছে।কিছুই ভালো লাগছে না।এখন তো রীতিকে হারিয়ে ফেলার ভয়টাও জেকে বসেছে।রীতি না কবে ছেড়ে চলে যায়।নিজের পরিবারের কথায়।
মানুষ যখন হতাশায় নিমজ্জিত থাকে তখন একটা হাত খোজে উঠার জন্য।আর সেই হাতটা পেয়ে গেলে তাকে শক্ত করে ধরে।তাকেই জীবনের একমাত্র ভরসার স্থান মনে হয়।
সাদিবের এখন রাসেল ভাইকে নিজের আইডল মনে হচ্ছে।কারণ রাসেল ভাই ওর অনুভূতিগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে।ওর শান্তনার স্থান মনে হয়।রাসেল ভাই তার প্রেয়সীকে পায়নি তাই সাদিবের মনে হচ্ছে সাদিবও রীতিকে পাবেনা।মনে হচ্ছে ওর জীবনেও সেই ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।
সাদিব পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে জ্বালালো।ধোয়া উড়াচ্ছে।সেদিনের পর থেকে সাদিবের সিগারেট না হলে হয়না।
রীতি দূর থেকে সাদিবকে ধোয়া উড়াতে দেখে হতভম্ব।রীতি দাড়িয়ে গেলো।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।মনে হচ্ছে ভুল দেখছে নয়তো অন্য কেউ।এটা আর যাইহোক সাদিব হতে পারে না।
রীতি দাড়িয়ে সাদিবকে দেখছে।সাদিব আপন মনে ধোঁয়া উড়াচ্ছে।যেনো ধোয়া না আনন্দ উড়াচ্ছে।
রীতির পায়ের নিচে মাটি সরে যাচ্ছে।আর নয়তো পায়ের নিচের মাটি বরফ হয়ে গেছে।তাই নড়তে পারছেনা।
সাদিবের চোখে চোখ পড়তেই সাদিব সিগারেট ফেলে দিলো।রীতিও নিজেকে স্বাভাবিক করে সাদিবের সামনে গিয়ে দাড়ালো।সাদিবকে দেখছে।সাদিবের।চোখ,মুখ,ঠোঁট খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।
তারপর ভারী কন্ঠে বললো,
—-“আপনি সিগারেট খান কবে থেকে? ”
সাদিব অপ্রস্তুত হয়ে বললো,
—-“কিছুদিন হবে।”
রীতি কিছু বললো না শুধু নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তারপর মনে মনে বলছে,
“সাদিব অনেক কষ্ট পাচ্ছে তাই সিগারেট ধরেছে।উনার সময়টা খারাপ যাচ্ছে।এখন এ নিয়ে বেশী কথা না বলাই ভালো।হিতে বিপরীত হতে পারে।সবটা ঠিক হয়ে গেলে আস্তে ধীরে বুঝিয়ে বলবো।উনি আমার কথা ফেলতে পারবেনা।”
রীতি সাদিবের কাছে গিয়ে সাদিবের শুকিয়ে যাওয়া চোখেমুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।সাদিব চোখ বন্ধ করে নিলো।রীতির ছোয়া অনুভব করছে।
রীতি বললো,
—-“এত কেনো কষ্ট পাচ্ছেন?একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি আছি তো আপনার পাশে।”
সাদিব রীতির হাত ধরে ফেললো।তারপর চোখ খুলে রীতির হাত বুকের বা পাশে নিয়ে বললো,
—-“রীতি চলো আমরা বিয়ে করে নেই।একমাত্র তুমিই পারো আমাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে।”
রীতি সাদিবের কথা শুনে বিস্ময় নিয়ে সাদিবের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।তারপর আস্তে করে হাত সরিয়ে নিতে নিলে সাদিব আরো শক্ত করে ধরে বললো,
—-“কি হলো? সরে যাচ্ছো কেনো?”
রীতি অসহায় ফেস করে বললো,
—-“আপনি কি বলছেন? এটা কি করে সম্ভব? আপনার ফ্যামিলি কিংবা আমার ফ্যামিলি কেউ রাজি নয়।তাহলে বিয়ে কি করে?”
—-“পালিয়ে!”
রীতি সাদিবের কথা শুনে দ্রুত বললো,
—-“অসম্ভব!”
সাদিব দাতে দাত চেপে বললো,
—-“কেনো সম্ভব না?আমি যদি তোমার জন্য সব ছাড়তে পারি।সব ছেড়ে এমন এলোমেলো জীবনযাপন করতে পারি তবে তুমি কেনো নয়? ওহ, আমার কোনো চাকরি নেই তাই?”
রীতি সাদিবকে বুঝানোর চেষ্টা করে বললো,
—-“কি বলছেন এসব?একটা চাকরির জন্য আমি আপনার হাত ছেড়ে দেবো?আমাকে এমন মনে হয় আপনার?”
—-“তাহলে কেনো নয়?আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলে সবাই সবটা মেনে নিবে।দুই পরিবারের দ্বন্দ মিটে যাবে।আমার চাকরি বাকরি নেই তার মানে এই না যে আমি তোমাকে খাওয়াতে পারবোনা।আমি চাকরি খোজছি নিজেকে প্রমাণ করার জন্য।”
রীতি ভয়ার্ত চেহারায় বললো,
—-“কিন্তু…”
সাদিব বললো,
—-“কোনো কিন্তু নয়।তোমাকে ভাবার জন্য সময় দিচ্ছি এরি মধ্যে আমাকে জানাবে।যদি না বলো তবে জোর করবোনা।তবে ভেবে দেখো।”
।
রীতি নিজের রুমে পাইচারি করছে।কি করবে?সাদিবকে কি বলবে?সাদিবের এমন অবস্থা আর দেখতে পারছেনা রীতি।সাদিবের এই অবস্থার জন্য নিজেকে দায়ী করছে।সাদিব এমন কোনো কালেই ছিলো না।সাদিবকে সঠিক পথে ফেরাতে হলে সাদিবকে বিয়ে করতে হবে।সাদিব ওর জন্য সব ছেড়েছে।
রীতি এসব ভাবতে ভাবতে মায়ের রুমের দিকে গেলো।দরজার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে গেলো।
“মেয়েটার সাথে আর কতদিন এমন করবে? ও খুব কষ্ট পাচ্ছে।সব ভুলে যাও না।ওকে আবার আগের মতো আদর করে কাছে টেনে নেও।”
রীতির মা বললো রীতির বাবাকে।
রীতির বাবা বললো,
—-“আমি কি খুব ভালো আছি?এটা রীতির জন্য দরকার ছিলো।ওকে আমি এবারের মতো ক্ষমা করে দিলাম।কিন্তু এর পর যদি আর কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটায় তবে আমি ওকে ক্ষমা করবোনা।”
।
রীতির মা রীতিকে ডাকতেই রীতি কাদতে কাদতে বাবার পায়ের উপর মাথা রেখে বললো,
“আমি তোমাকে খুব মিস করেছি বাবা।”
রীতির বাবা রীতির মাথায় হাত রাখলো।তারপর বললো,
—-“বাবার চেয়ে বেশী কেউ তোমাকে ভালোবাসবে না তাই বাবার অনুভূতিগুলো আর অপমান করোনা।”
রীতি ভাবছে এখন ওর কি করা উচিত? কিছুক্ষণ আগে যে সিদ্ধান্ত নিলো তা কি করা ঠিক হবে?বাবাকে আবার হারিয়ে ফেলবে না তো?আর সাদিব?ওর ভালোবাসা?
চলবে…!