#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন
|পর্ব-৪১|
সাদিব রীতির কথা শুনে,রীতির আকুলতা দেখে রীতির সাথে দেখা করতে এসেছে।না এসে পারেনি।
রীতি সাদিবকে দেখে কান্নাই করে দিয়েছে।সাদিব সুঠাম দেহের অধিকারী।
কিন্তু এখন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
রীতি চোখের পানি মুছে আমতা আমতা করে বললো,
—-“সাদিব চেহেরার এই হাল কি করে করেছেন?আপনি কি শুধু সিগারেট খান না কি….?”
সাদিব চমকে রীতির দিকে তাকালো।রীতি সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।সাদিব বললো,
—-“মানে কি?”
রীতি সংশয় কাটিয়ে বললো,
—-“অন্য কিছু খান নাকি?মানুষ ডিপ্রেশনে অনেক ভুল করে ফেলে।অনেকেই অনেক কিছুর উপর আসক্ত হয়ে পড়ে।আপনিও কি সে রকম কিছু,,, ইউ নো আমি কি বলতে চাইছি।”
সাদিব আমতা আমতা করে বললো,
—-“সে-রকম কিছু না।তুমি কি আমায় তেমন ভাবো?”
রীতি সাদিবের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“না,তবে আপনি অনেক বদলে গেছেন।”
দু’জনেই চুপ।সাদিব নিজেও জানে ও বদলে যাচ্ছে কিভাবে।রীতিকেও মিথ্যা বলেছে।গতকাল ই মদের বোতলে কয়েক চুমুক দিয়ে মাতাল হয়ে মাতলামি করেছে।বাবাকে উল্টো পাল্টা কথা বলছিলো।
রীতি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—-“সিগারেটটা ছাড়তে পারেন না?”
সাদিব রীতির চোখের দিকে তাকিয়ে রীতির ভেতরের গভীর ব্যথাটা লক্ষ্য করছে।রীতির মুখ একটা কথা বললেও রীতির চোখে সাদিব হাজারো অভিযোগ দেখতে পাচ্ছে।
সাদিব বললো,
—-“চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা।সিগারেট না খেলে অস্থির অস্থির লাগে।এই সিগারেটই আমার অস্থিরতা কাটাতে পারে।”
—-“আপনি শিক্ষিত ছেলে।আপনি জানেন আপনি কি করছেন।নিজের কতটা ক্ষতি করছেন।আমার আপনাকে বুঝানোর প্রয়োজন নেই।সবটাই আপনি বুঝেন।”
সাদিব মাথা নিচু করে চুপ করে আছে।রীতি বাতাসে উড়ন্ত সাদিবের এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করতে করতে বললো,
—-“জেদ ছেড়ে দিন।বাড়িতে ফিরে যান।আপনার ইগোতে বাধবে জানি।বাধাই স্বাভাবিক।তাই আমি সাবিহা আর আন্টিকে বললো ওরা যাতে আপনাকে নিয়ে যায়।আংকেলকে বলবে ওরা আপনাকে জোর করে বাড়িতে নিয়ে এসেছে।আংকেল নিশ্চয়ই রাগ করবেনা।”
সাদিব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—-“তোমার এই কথাটা আমি রাখতে পারবোনা।আমার বাবা তোমার বাবার মতো নয়।তেমন হলে আমি তার জন্য সব করতে পারতাম।এতোদিনে উনার মন গলেনি তাতে বুঝাই যায়,উনার লাইফে আমার জায়গা কতটুকু।”
এরপর রীতির আর কিছুই বলার থাকেনা।সাদিব পার্কের মানুষ-জনকে উপেক্ষা করেই রীতির কোলে মাথা রাখলো।রীতিও কিছু বললো না।সাদিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
রীতি সাদিবকে বললো,
—-“কতদিন আপনার গান শুনি না।”
সাদিব চোখ খোলে বললো,
—-“গিটার বাড়িতে রেখে এসেছি।”
রীতি বললো,
—-“খালি গলায় শুনান।”
সাদিব রীতির কোল থেকে উঠে বসে হাসি হাসি মুখে বললো,
—-“যাবে আমার সাথে?”
রীতি অবাক হয়ে বললো,
—-“সেখানে…!”
সাদিব ভ্রু নাচালো।রীতি বুঝতে পেরেছে সাদিব ওকে কোথায় নিয়ে যেতে চাই।সেই ব্রিজে।সাদিবের পছন্দের জায়গা।
রীতিও রাজি।সাদিব বললো,
—-“দেরী হওয়ার জন্য বকাও খেতে পারো বাড়িতে।”
—-“রাজী।”
সেদিন খুব সুন্দর সময় কাটিয়েছে দুজন।
গভীর রাত।ঝিঝি পোকারা ডেকে যাচ্ছে কিন্তু ক্লান্ত হচ্ছেনা।মাঝেমধ্যে দু-একটা পাখি ডেকে উঠছে।চারদিক নীরব-নিস্তব্ধ।এমন সময় এক জোড়া চোখ জেগে আছে।শুধু জেগে নেই সেই চোখ জোড়া থেকে অঝর ধারায় পানি পড়ছে।
রীতি বিছানায় শুয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে সাথে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
সাদিবের সাথে যোগাযোগ নেই অনেক দিন।রীতি হাজারো চেষ্টা করে সাদিবের খোজ পাচ্ছেনা।
রীতির ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকেই সাদিবের খোজ নেই।ফোন অফ।রীতি পরীক্ষার ব্যস্ততার মধ্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে সাদিবের খোজ নেওয়ার কিন্তু কোনো খোজ পায়নি।রীতি ভেবেছে সাদিব হয়তো ইচ্ছে করেই এমন করছে।যাতে রীতি শুধু পড়ার দিকে ফোকাস করে।পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই সাদিব ওকে ফোন করে নিবে।আজ রীতির পরীক্ষা শেষ।রীতি বিকেল থেকে ফোন হাতে অপেক্ষা করছে কিন্তু সাদিবের ফোন আসেনি।কত রাত হয়ে গেছে রীতির অপেক্ষার প্রহর কাটে না।
সকাল বেলায় রীতি আবারো সাবিহাকে ফোন করলো।কিন্তু সাদিব সেখানেও যায়নি।
রীতি নাস্তা করতে বসেছে এমন সময় ফোন বেজে উঠলো।
রীতি দ্রুত ফোন রিসিভ করলো।জনি ফোন করেছে।
—-“হ্যা ভাইয়া বলুন।”
—-“রীতি,সাদিব এসেছিলো সকাল সকাল।এসেই কিছু একটা নিয়ে সাথে সাথে চলে গেছে।আমি ওকে তোমার কথা বলার সুযোগ পাইনি।ও দেয়নি।তবে ওর বাইক রেখে গেছে।”
রীতি বিচলিত হয়ে বললো,
—-“সাদিব ঠিক আছে তো?”
জনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—-“মনে হয় নেশা-টেশা করে।ওর ফেস তাই বলছিলো।”
রীতি জনির কথা মোটেও বিশ্বাস করলোনা।রীতির প্রচন্ড রাগ হচ্ছে কিন্তু দমিয়ে বললো,
—-“আপনি আছেন তো?আমি আসছি আপনার ফ্ল্যাটে।বাইক যেহেতু রেখে গেছে আবার আসতে পারো।”
—-“ঠিক আছে এসো।”
রীতি একা একা একজনের ফ্ল্যাটে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেনা।তাই রাইসা আর আদনানকে ফোন করে নিলো।
ওরা তিনজন মিলে জনির ফ্ল্যাটে গেলো।রীতি সাদিব যে রুমে থাকতো সেখানে গিয়ে ওর জামাকাপড় গুলো নেড়ে নেড়ে দেখছে মনে মনে বলছে সাদিব আপনি কোথায় আছেন?প্লিজ একটু আসুন।একবার।আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই।আপনাকে একটু দেখতে চাই।আপনি কোথায় চলে গেছেন?আপনার কি আমার কথা মনে পড়ছেনা?
রীতি সাদিবের জামাকাপড় গুলো আবারো গুছিয়ে রাখছে।
রীতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সাদিবের।অপেক্ষা করতে করতে রাইসা আর আদনান বিরক্ত হয়ে পড়ছে।রীতিকে বারবার বলছে যেনো চলে যাওয়ার কথা।কিন্তু রীতি যাবেনা বলে দিয়েছে।
জনিও কাজের জন্য বের হয়ে গেছে।রাইসা আর আদনান রীতিকে নিতে পারছেনা আর যেতেও পারছেনা রীতিকে ছেড়ে তাই ওর সাথে বসে আছে।
অবশেষে সন্ধ্যা নেমে আসছে।রীতির বাড়ি থেকে ফোনের পর ফোন আসায় রীতি বাধ্য হলো বাড়িতে যেতে।বাড়িতে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
রীতির বাবা-মাও রীতিকে ডাকেনি।একা ছেড়ে দিয়েছে।তারা বুঝতে পারছে রীতির কিছু একটা হয়েছে।ওকে কোনো প্রশ্ন না করাই ভালো এই মুহুর্তে।
এভাবে কেটে গেছে কয়েকদিন।রীতি পাগলের মতো খোজছে সাদিবকে।কিন্তু তার কোনো হদিস নেই।
রীতির মনে হচ্ছে প্রেমের প্রথম গল্পটা সুন্দর হলেও শেষটা অনিশ্চিত।কত সুন্দর ছিলো প্রথম দিনগুলো ভালোবাসায় মাখা।আস্তে আস্তে সব কেমন মিলিয়ে যাচ্ছে।সব কিছু এখন গল্প কথা ছাড়া কিছু নয়।
গল্প উপন্যাসেও হাজারো ব্যর্থ প্রেমের কাহিনি পড়েছে।সুন্দর সুন্দর প্রেম-ভালোবাসা গুলো মুহুর্তেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে দেখেছে।তবুও ভালোবেসেছে।
রীতি মুখ ভার করে বসে আছে।রীতির মা লাঞ্চ করতে ডাকছে রীতিকে।কিন্তু রীতি খাবেনা।তখনই রীতির ফোন বেজে উঠলো।দিয়া ফোন দিয়েছে।
রীতি নির্লিপ্ত ভাবে ফোন রিসিভ করলো।দিয়া উচ্ছাস প্রকাশ করে বললো,
“সাদিব ভাইয়ার খোজ পাওয়া গেছে।ভাইয়া এখন বাড়িতে।”
রীতির চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।রীতি যেভাবে ছিলো সেভাবেই সাদিবের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে বের হলো।
চলবে……