গোধূলী বেলার স্মৃতি পর্ব-০৫

0
1872

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রুদ্রিক নিজের রুমে চুল খামচে ধরে। আফজাল শেখ যে কোনো মুহুর্তে চলে আসবে। এই মুহুর্তে সে আফজাল শেখ নামক ঘৃণিত লোকটাকে ফেস করছে চাইছে নাহ। তাই রুদ্রিক তাড়াতাড়ি একটি নেবি ব্লু ফরলাম কটন শার্ট গাঁয়ে জড়িয়ে বেড়িয়ে পড়লো। রুদ্রিকের ফোন বেজে উঠতে ফোন রিসিভ করে, বিরক্তমাখা কন্ঠে বলে উঠে-
“কি হয়েছে নিয়না? এনিথিং ওকে?”
নিয়না কিছুটআ শান্ত সুরে বলে উঠে,

“বেবী প্লিয আজকে আমাকে একটু সময় দিবে? জাস্ট কিছু কথা বলার ছিলো তোমায়….”

রুদ্রিক বলে উঠে-

“নিয়না বেবস ট্রাই-টু আন্ডারস্টেন্ড….”

—“প্লিয রুদ্রিক আজকে আমার সাথে দেখা করো। আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা।”

রুদ্রিক এইবার ধমকের সুরেই বলে-

“নিয়না, ইউ নো। রাফসিন শেখ রুদ্রিক কারো ইচ্ছাতে দেখা করে নাহ। আমি যখন মুড হবে, তখন দেখা করবো। বাট এখন নয়। তুমি ফোনটা কাটো
রুদ্রিককে বেড়িয়ে যেতে দেখে মিসেস জেমমিন বলে উঠলো,

“রুদ্রিক তোমার বাবা আজকে ফিরছে,আজকে অন্তত চলে যেও নাহ। রুদ্রিক বাবা আমার কথাটা তো শুনো। ”

রুদ্রিক জেসমিন শেখের কথা কর্নপাত না করে বেড়িয়ে গেলো।

জেসমিন সদর দরজার কাছে আসতেই রুদ্রিকের গাড়ি চলে যায়। জেসমিন শেখ আশাহত হয়। তখনি
ইশানি শেখ কিছুটা কটাক্ষ করে বলে উঠে,

“জানো রুদ্রিক তোমার একটা কথাও শুনবে না ,তাহলে শুধু শুধু কেনো বলতে যাও কেন?”

——“ওর বাবা আসছে আজকে। ছেলেটাকে দুইমাস ধরে উনি দেখেন নি. । ছেলেটাও তো বাবার সাথে একটিবার কথা বলেনি। এখন এসে যদি ছেলেটাকে না দেখেন,তাহলে উনি বড্ড কস্ট পাবেন। ”

জেসমিনের কথায় ইশানি কিছুটা কটাক্ষ করে বলে উঠে,

“বাবা-ছেলের ব্যাপারে এতো ভাবতে যেও নাহ। তুমি নিজের টা ভাবো জেসমিন। ”

ইশানির কথায় জেসমিন বলে উঠে,
“ঠিক কোন কথা নিয়ে ভাবতে বলছো? ”

—–“অতীত ভুলা কী এতোটাই সহজ?

জেসমিন শেখ এক পলক দরজার দিকে আশাহত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলেন,

—” অতীত ভুলে যাওয়া-টাই ‘ সব থেকে বড় বোকামি। আমি খুব করে চাই,অতীত টা একদিন সবার সামনে আসুক। সবাই জানুক অতীতে ঠিক কী হয়েছিলো। ”

রুদ্রিকের এখন কিছুটা মনটা রিফ্রেশ করার প্রয়োজন,তাই সে তাড়াতাড়ি কাজলের নাম্বারে ফোন করে,

গোধূলী বেলা বেশ ভালো-ই ‘ উপভোগ করছিলাম।
তখনি আমার ফোনটি বেজে উঠে। ছোট সাহেব ফোন করেছে। ছোট সাহেবের ফোন ধরতেই। ফোনের ওইপাশ থেকে ছোট সাহেব জড়ানো কন্ঠে বলে উঠে,

“কাজল আমি জানিনা। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে নাহ তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আমি তোর বাড়িতে আসছি। বেশিক্ষন সময় নিবো নাহ। শুধু তোকে দেখেই চলে যাবো। ”

ছোট সাহেবের এমন কথায় আমি থম মেরে বসে থাকি কিছুক্ষন। এ আমি কার কন্ঠ শুনছি? এতোটা অনুরোধমাখা জড়ানো কন্ঠে তার! ভিতর থেকে কেমন একটা গভীর কোনো একটা টান কাজ করছে আমার। আমি বলে উঠলাম,

“কোথায় আপনি? ”

—“বাড়ির নীচে।”

ছোট সাহেবের কথায় আমি অবাক হয়ে নীচে তাঁকিয়ে দেখি উনি সত্যি বাড়ির নীচে দাঁড়িয়ে আছেন। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। দৃষ্টি আমার দিকে।

ছুটকি দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে বলে,

“মা ছোট সাহেব এসেছেন।”

—-”ছোট সাহেব হঠাৎ? ”

——” তা তো জানিনা মা। ছোট সাহেব ছাঁদে চলে গেলো। মনে হয় আপুর কাছে গিয়েছে।”

—— “মনে হয় কোনো কাজে এসেছেন।যাক গে উনাদের বাড়ি আসতেই’ই পারেন। আমি তোকে নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছে। তুই গিয়ে উপরে দিয়ে আয়। ”

__________________________________

এয়ারপোর্টে,,

মধ্যবয়স্ক একজন লোক হাতে লাগেজ নিয়ে বেড়িয়ে আসেন। হ্যা আফজাল শেখ এসেছেন। পড়নে তার ফরমাল ড্র্বেস-আপ। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা।আফজাল শেখ বরাবর-ই ‘ ড্রেসাপ নিয়ে সচেতন।
আফজাল শেখকে দেখে সিথি ও দিয়া ছুটে গিয়ে আফজাল শেখকে জড়িয়ে ধরেন।
আজজাল শেখ ও তাদের পরম মমতায়-ই ‘ জড়িয়ে ধরেন।

সিথি বলে উঠে-
“আই মিস ইউ লট ড্যাড…। তুমি জানো তোমাকে ছাড়া পুরো বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো।”

আফজাল শেখ মেয়েকে জড়িয়ে বলে উঠেন-

“আমিও আমার প্রিন্সেসকে অনেক মিস করেছি।”

—-“তোমার বোনটাকে মিস করোনি বুঝি? ”

দিয়ার কথায় আফজাল শেখ বলে উঠেন-

“আমার ছোট্ট বোন-টাকে আরো বেশি মিস করেছি। বিশেষ করে তার সেল্ফি। ”

— “হুম, তোমার সাথে কত্তগুলো সেল্ফি তুলা বাকি আছে। বাই দ্যা রাস্তা আমার ভাইয়ু দেখি আগের থেকে বেশি হ্যান্ডসাম হয়ে গিয়েছো।”

আফজাল শেখ হেঁসে মতিউর রাহমানের দিকে তাঁকিয়ে বলেন,

“মতিউর তোমার খবর কী?কেমন আছো তুমি? ”

মতিউর রাহমান (কাজলের বাবা) বলে উঠে,

” আমি তো আল্লাহর রহমতে ভালো-ই ‘ থাকি। এখন আপনি চলে এসেছেন বড় সাহেব, এখন আরো ভালো হয়ে গিয়েছি। হা হা হা। ”

—-“ভালো হলেই ভালো। কিন্থ রুদ্রিককে আসলো নাহ যে, আজ ও কী ও আমার সাথে দেখা করবে নাহ। ”

আফজাল শেখের কথায় দিয়া কিছুটা তাড়া দিয়ে বলে,

“ভাইয়ু রুদ্রিক বাড়িতে আছে তো। তুমি বাড়িতে চলো। সেখানে-ই ‘ রুদ্রিকের সাথে দেখা করে নিও। ”

মতিউর রাহমান ও বলে উঠেন,

“হ্যা বড় সাহেব। আপতত বাড়ি চলুন। বাড়িতে গিয়ে সব হবে। ”

_________________________________________

আপতত রুদ্রিক কাজলদের বাড়ি ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িটা ঠিক কাজলদের নয়। দুতালা বিশিষ্ট ছোট্ট বাড়িটা আফজাল শেখ-ই’ মতিউর রাহমানকে থাকার জন্যে দিয়েছেন। মতিউর রাহমান আফজাল শেখের বড্ড প্রিয়ভাজন লোক।

রুদ্রিক অনেক্ষন ধরে কাজলকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। কাজলের চুল বেশ বড় নাহ হলেও বেশ সফ্ট। মৃদ্যু বাতাসেও উড়ে যাচ্ছে। কাজল দেখতে কিছুটা কিউট কিউট লাগে রুদ্রিকের কাছে৷ গাল গুলো কিছুটা গোলাপি রংয়ের। আচ্ছা মেয়েটা কী প্রতিদিন গালে ম্যাকাপ করে? রুদ্রিকের যত গার্লফ্রেন্ড আছে সবাই তো এক একটা পার্লারের দোকান। রুদ্রিক ভাবলো কাজলকে একবার জিজ্ঞাসা করবে সে গালে কি মাখে? কিন্তু জিজ্ঞাসা করতে গিয়েও করলো নাহ। সে কেনো করবে? রাফসিন শেখ রুদ্রিক সে। আচ্ছা রুদ্রিক কাজলকে দেখার জন্যে তখন এতোটা ছটফট করছিলো কেনো? কি হয়েছিলো তার? কথাটা ভেবেই চুপ হয়ে গেলো।

—-“আমাকে দেখা শেষ? ”

রুদ্রিক চমকে উঠে।
কাজলের দৃষ্টি সামনের দিকে।

রুদ্রিক আমতা আমতা করে বলে,

—-“আমি তোকে কেনো দেখতে যাবো? ”

আমি ছোট সাহবের কথায় কিছুটা অদ্ভুদ ভাবে হাঁসলাম।

রুদ্রিক খেয়াল করলো মেয়েটা সত্যি অদ্ভুদ ভাবে হাঁসে। হাঁসার সময় কাজলের ডাগর ডাগর চোখের পলক বার বার পড়তে থাকে। বেশ ভালো লাগে কিন্তু।

ছোট সাহেব বলে উঠেন,

” সামনে এতো কী দেখছিস?”

—–“গোধূলী দেখছি। গোধূলীর বেলা আমার বড্ড পছন্দের। ”

ছোট সাহেব আমার দিকে তীক্ন দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলেন,

“গোধূলী বেলা পছন্দের এমন কী কারণ আছে? ”

——-“গোধূলী বেলা মনটাকে সতেজ করতে কিংবা মনটাকে উৎফুল্ল করতে যথেষ্ট। আমার যদি কখনো মন খারাপ হয়। আমি ছাদে এসে গোধূলী উপভোগ করি। মনটা ভালো হয়ে যায়৷ ”

—–“কীভাবে করিস? আমাকেও বলে দে আমার মনটাও আজকে বড্ড খারাপ। ”

ছোট সাহেবের কথায় আমি উনার হাত ধরে নিজের হাতের মুঠোয় নিই।

ছোট সাহেবের হাতগুলে শক্ত করে ধরে উনার বুকের মাঝে রেখে, উনার কানে কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে উঠি,
“Close Your eys and feel this moments…
You will see That mind will be better. ”

(চোখ বন্ধ করুন এবং মুহুর্তটাকে অনুভব করুন।দেখবেন মনটা ভালো হয়ে যাবে।)

রুদ্রিক চোখ বন্ধ করে ফেলে। সত্যি কাজলের স্পর্শে রুদ্রিকের অদ্ভুদ ভালো লাগা কাজ করছে।

রুদ্রিক অপর হাত ধরে কাজলকে নিজের কাছে টেনে কাজলের হাতগুলো নিজের বুকে গভীরভাবে মিশিয়ে বলে,

” নাউ আই ফিল বেটার।কেনো এতো শান্তি লাগছে আমার? কি আছে তোর মধ্যে? তুই বড়ই অদ্ভুদ….। ”

আমি উনার কপালে লেপ্টে থাকার চুলগুলো সরিয়ে বলে উঠলাম,

” আপনার মনকে জিজ্ঞাসা করুন। ”

—“মনের কথা বুঝতে পারিনা। ”

—“বড্ড অবুঝ আপনি। ”

ছোট সাহেব কিছুটা দূরে গিয়ে ছাদের এক কোনের সাদা ব্যান্চে গিয়ে বসে বলে উঠে,
“হয়তো। কিছু চাপা অনুভুতি প্রকাশ করতে ব্যর্থ আমি। ”

আমি আবারো আকাশের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলাম,
—— “ছোট সাহবে! চাপা অনুভুতি গুলো যত আপনি লুকিয়ে রাখবে তত আপনি নিজের মনের চাপা কস্টগুলো সমুদ্রের ন্যায় অতুলে ডুবে যাবেন।
নিজের অনুভুতি গুলো প্রকাশ করতে শিখুন। তাদের অস্তিত্ব বিলেন হয়ে গেলে, একদিন আপনি এমন কিছু মুল্যবান জিনিস হারিয়ে ফেলবেন যা হয়তে আর কখনো ফিরে পাবেন নাহ আপনি। ”

________
আমি জানালার ধারে বসে আপনমনে কিছু ভেবে চলেছি। আমি জানি এই মুহুর্তে আপনি ঠিক আমার কথা ভাবছেন ছোট সাহেব। যেমনভাবে এখন আমি আপনার কথা ভাবছি। কেন ভাবছি উত্তর নেই। শুধু আপনাকে. নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে।

_____________ক্লাবে সবাই নিজেদের মতো ব্যস্ত। রুদ্রিকের সেদিকে খেয়াল নেই। রুদ্রিকের চোখে শুধু বিকালে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ভাসছে। কাজলের কথাগুলো তারা মাথায় ঘুড়ছে।রুদ্রিক এতোটা কেনো গুরুত্ব দিচ্ছে কাজলকে? কাজল রুদ্রিকের এতোটা গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য নয়। হ্যা কিছুতেই নয়। কিন্তু কিছু তো একটা আছে ওই মেয়ের মধ্যে।রুদ্রিক ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দেয়। কাজল যেনো তার মস্তিষ্কে ঘুড়পাক কাচ্ছে।

রুদ্রিকের ভাবনার মাঝেই কেউ এসে বলে উঠে,

“কিরে কাজলের প্রেমে অতলভাবে ডুবে গেলি?

বাকিটা আগামী পর্বে….
চলবে।