#গোধূলী_শেষে_তুমি_আমি
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ১৪
প্রেমিককে বর রূপে সাজাতে কতটা কষ্ট হয়! সেটা হয়তো একজন প্রেমিকা জানে। যাকে নিয়ে দেখা হয়েছিলো স্বপ্ন, সেই কিনা আজ অন্য কারো স্বপ্ন হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। এমন কষ্ট যেন নিজের শত্রুও না পায়। স্বপ্নের পুরুষ যখন, স্বপ্নই থেকে যায়! সেই কষ্টটা বড্ড ভারি। রঙিন ঘুড়ি গুলো আকাশে উড়ে ছিলো ঠিকি কিন্তু এক সময় তা লাটাই আর সুতা বিহীন আছড়ে পড়েছে জমিনে। ঠিক যেমন আজ রজনী পড়ে আছে। চোখটা তাঁর ভীষণ লাল। সারারাতের কান্নার ফল এই লাল চোখ। সবার চোখেই সেই লাল টুকটুকে চোখখানা নজরে পড়েছে। পড়েনি শুধু কঠিন হৃদয় নামক এক পুরুষের চোখে। পড়বে কেন? সে তো রজনীর মন দুয়ারে মাথা ঠুকে ঠুকে কেঁদেছিল! সেদিন তো এই মেয়েটার দয়া হয়নি। তাহলে আজ কেন তাঁর হবে। সেও প্রতিজ্ঞা করেছে,নিজে থেকে রজনী ফিরে না আসতে চাইলে! তাঁকে আর ফিরতে বলবে না সে। তার-ও যে অভিমানের পাহাড়টা অনেক বড় । কালো রঙের পাঞ্জাবিটা পল্লবের শরীরে লেপ্টে আছে। বউয়ের শাড়ির সাথে মেচ করা পাঞ্জাবিটা সে পরেনি। বেছে বেছে রজনীকে কষ্ট দিতেই পল্লবের এই কাজ। রজনী খুব বুঝলো তাঁকে কষ্ট দিতেই তাঁর এতো আয়োজন। কিন্তু রজনী বড্ড কঠিন! সে ভাঙবে তো মচকাবে না। তাই কালো পাঞ্জাবিতে পল্লবকে দেখেও না দেখার ভান করে পড়ে রইলো রজনী। মনে মনে খুব রাগ হলো পল্লবের। কিন্তু সেও কম কঠিন নয়! সেও ভাঙবে তবু মচকাবে না। সাজ শেষ হতেই রজনী ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। উদাস ভঙিতে বসে পড়লো পল্লব। এতো আয়োজন করেও যদি মানুষটাকে ভাঙতে না পারে তাহলে আর কীভাবে কি? এ কেমন কঠিন মেয়েকে ভালোবেসে বসলো সে।
মুখ চেপে নিজের কান্না আঁটকে রেখেছে রজনী। কিন্তু সে কখনোই দু’টো জিনিস চাপিয়ে রাখতে পারে না। এক তাঁর হাসি,দুই কান্না। আজ তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছে। আচ্ছা এতো কষ্ট কেন হচ্ছে। সে তো যেচেই মানুষটাকে দূরের করে রেখেছে তাহলে? তাহলে তাঁর হৃদয়ে কেন রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে রইলো। মনে করতে রইলো সেদিনের কথা। সেদিন রাতের পর সব কিছু পাল্টে গেলো। বদলে গেলো রজনীর সব স্বপ্ন, আশা। মানুষটা কেমন করে যেন নিজের সাথে জড়িয়ে গেলো,জানা গেলো না। মানুষটাকে বুঝতে অনেক সময় লেগেছে রজনীর। কিন্তু মানুষটাকে যখন পুরোপুরি বুঝতে পারলো! তখন বুঝলো এই মানুষটার মতো এতো সহজ সরল কেউ না। নিশ্চিন্তে হাজারটা যুগ পার করা যায় তাঁর সাথে। নিজের ভেতরে লুকিয়ে রাখা সেই সুপ্ত অনুভূতি গুলো রজনী প্রকাশ করে দিলো। আর প্রকাশ পেতেই পল্লব নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসতে শুরু করলো। দুজনে বুনতে রইলো ভালোবাসার ঘর। দেখতে রইলো জীবনের সব অপূর্ণ স্বপ্ন গুলো। কিন্তু ওই যে বলে না,সুখ সে তো ক্ষণিকের ঝড়ো হাওয়ার মতো! এই আছে তো এই নাই। এমনই হলো রজনীর সাথে। পল্লব আর রজনীর সম্পর্কের কথা জেনে গেলেন
আমজাদ আলী। আর ফলস্বরূপ হয়ে গেলো অনেক কিছু। কিন্তু পল্লব নিজের বাবা-র বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলো। সাথে ছিলো লিমা বেগম। তিনিও নিজের ইচ্ছার কথা জানালেন স্বামীকে। বোঝালেন অনেক কিছু বলে। কিন্তু আমজাদ আলী নিজের জায়গায় অনড়। তিনি কড়া ভাবেই বলে দিলেন! তিনি কোন ভাবেই একজন ধর্ষিতা মেয়েকে নিজের ছেলের বউ করবেন না। লিমা বেগম বা পল্লব কেউ আমজাদ আলীকে বোঝাতে পারলেন না,রজনী ধর্ষণ হয়নি সেদিন। তাঁর কথা তিনি যা শুনেছেন সেটাই সত্যি। তারপর, তারপর আর কি? শুরু হলো বাড়িতে যুদ্ধ। আমার জন্য এদের সুখের পরিবারটা কয়েক মুহূর্তে ভেঙে গেলো। শুরু হলো এক অশান্তির ঝড়। তখন মনে হতো,আমার উচিত হয়নি পল্লবের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেওয়ার। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে! চাইলেও আমি পল্লবকে বলতে পারবো না আমি তেমায় ভালোবাসি না। কারণ আমি যে পল্লবকে ভালোবাসি,সেটা পল্লব ভালো করেই বুঝে গেছে। আর মিথ্যা বললে,ও ঠিক ধরে নিতো। পল্লব আমাকে কড়া সুরে একদিন বলে দিলো! তুমি কখনোই আমাদের ঝামেলায় নিজেকে জড়াবে না। বাবা আজ রাজি হচ্ছেন না,ঠিক একদিন হবে। কোথাও না কোথাও আমিও চাইতাম আঙ্কেল সবটা মেনে নিক। কিন্তু আমার চাওয়াটা পূর্ণ হলো না। তাই তো একদিন আঙ্কেল আমার ঘরে এলেন। আমাকে অনেক কিছু বোঝালেন। তাঁর বোঝানাতে এটাই ছিলো। পল্লব একজন শিক্ষিত ছেলে,স্মার্ট, নামডাক আছে একজন ডাক্তার হিসেবে! যখন সবার সামনে আমাকে নিয়ে ওসব প্রশ্নের সম্মুখীন হবে,তখন ঠিক তাঁর মন ভেঙে যাবে। আমায় ভুলে যাবে,এমন কি ছেড়ে দিতেও পারে। তখন আমার কি হবে? এখনের তো একটা গতি আছে,কিন্তু তখন। তখন আমি কি মেনে নিতে পারবো পল্লবের এমন রূপ। যে মানুষটা নিজ থেকে তাঁর সাথে আমায় জড়ালো,একদিন সেই যদি আমায় ছেড়ে যায়,আমি কি সত্যি সেদিন সবটা মেনে নিতে পারবো। আজ সে আমায় আবেগের বসে নিজের কাছে টেনে নিলো! কোন একদিন যে বাস্তবতার কাছে হেরে গিয়ে আমায় ছেড়ে দিবে না তাঁর কি গ্যারান্টি আছে। আঙ্কেল চলে যাওয়ার পর আমি ভাবলাম। খুব মনোযোগ দিয়ে ভাবলাম। আর ফলাফল হিসেবে আসলো। আঙ্কেল যেটা বলেছে সেটাই সঠিক। আমাকেই নিজে থেকে ওর জীবন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। আমি রাতের আঁধারে কাউকে কিছু না বলে পালানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। ধরা পরে গেলাম পল্লবের কাছে। আমাকে অনেক রাগারাগি করলো। আমি কি বলবো তখন জানি না, রাগের বসে নিজের শরীরে আঘাত করে বসলাম
আর বললাম। আমি চাই না আপনায়। আমি চাই আপনি আপনার বাবার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করুন। এই কথাটা শুনে পল্লব দ্বিতীয় বারের জন্য আমায় আবারও থাপ্পড় দিলো। কিন্তু তবুও আমি থামিনি। বলেছি,আজ যদি তিনি আমার কথা না শুনে আমি চিরদিনের জন্য এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। তখন চাইলেও সে আমায় দেখতে পাবে না। আমার উদ্দেশ্য ছিলো! একবার বিয়ে হলেই আমি চলে যাবো। পল্লব রাজি হলো। কিন্তু রাজি হওয়ার মাঝে শর্ত জুড়ে বসলো। আমি নিজে যদি তাঁকে বর সাজাই,তাহলেই সে বিয়ে করতে যাবে। আর তাঁর বিয়ে না হওয়া অবধি যেন তাঁর আশেপাশেই থাকি। আমি রাজি হলাম। আমি জানি এটা পল্লবের একটা চাল ছিলো। ও আসলে দেখতে চাইছিলো,আমি কি করে ওকে পর করতে পারি। কারণ কেউ যদি কাউলে সত্যি ভালোবাসে,তাহলে তাঁকে নিজের চোখে অন্য কারো হতে দেখা মৃত্যু সমান কষ্ট। তারপরের সবটা তো সবাই জানে। গেছেকাল যখন ওকে গায়ে হলুদ লাগানো হলো। গায়ের হলুদ মুছেই আমার ঘরে চলে এলো। পাগলামি শুরু করলো এক প্রকার।
_ রজনী প্লিজ আমাকে বোঝার চেষ্টা করো,আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমি তোমাকে ছাড়া এক মিনিটও চলতে পারবো না। আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে তোমার জায়গায় অন্য কাউকে আমি মেনে নিতে পারবো না। ওই রজনী একটু আমাকে বোঝার চেষ্টা কর। আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি যখনই ভাবছি,তুই আমার হবি না,তখনই আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আমার বুকের এই হাহাকার কি তুই শুনতে পাচ্ছিস না। ওহে কঠিন মনের মেয়ে একটু চেয়ে দেখ আমার দিকে! আমি শূন্য হয়ে পরেছি তুইহীনা। দেখ একবার মনের আঁখি তুলে।
কিন্তু রজনী ভেঙে পরেনি পল্লবের সামনে। সে পল্লবকে জোর করে বের করে দিয়েছে। দরজা চেপে কান্না করেছে। যে কান্না শুধু আল্লাহ আর ঘরের প্রতিটা দেয়াল শুনেছে। কেন জানি তখনের থেকে পল্লব নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নিলো। কিন্তু পারছে না কোন ভাবেই। যখনই রজনীর শুঁকনো মুখটা চোখে পড়ছে,সব যেন উল্টে পাল্টে যাচ্ছে। রাতে যখন নিজের একাকিত্ব দূর করতে ছাদে গেলো,তখনো রজনীর বিষন্ন ভগ্নহৃদয়খানা চোখে পড়লো। তখন যেন নিজেকে সামলে নেওয়া বড্ড কষ্ট হচ্ছিলো। আর আজ যখন শর্ত অনুযায়ী পল্লবকে বর রূপে সাজাতে এলো,তখন তো সকল ধৈর্য শক্তি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পরে রইলো।
হঠাৎ গাড়ির হর্নে সকল চিন্তা লোপ পেলো রজনীর। দৌড়ে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো। বর উপলক্ষে যেই গাড়িটা সাজানো হয়েছে! সেটা নিয়ে পল্লবরা রওনা হয়েছে। গাড়ির দরজা ধরে একবার অসহায় চোখে পল্লব রজনীর দিকে তাকালো। সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো রজনী। আরো একবার আহত হলো পল্লব। আর কোন আশা নেই ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার। তাই গাড়িতে উঠে দরজা লাগিয়ে দিলো। শা শা বেগে ছুটতে রইলো দু’টি গাড়ি। আর রেলিঙে পিঠ ঠেকিয়ে চোখের জল আঁটকে রাখার যুদ্ধ করতে রইলো রজনী।
—————–
বিষন্নতা একাকীত্বের বেদনা বড্ড কঠিন। না সয্য করা যায়,না কাউকে বোঝানো যায়। পাশাপাশি বসে আছেন বাবা ছেলে। কারো মুখেই কোন কথা নেই। আজ ছোট্ট আয়োজনে বিয়েটা হবে! তারপর বড় করে অনুষ্ঠান করা হবে। এমনটা করতেন না আমজাদ আলী নিজের একমাত্র ছেলের বিয়েতে। তাঁর তো ইচ্ছে ছিলো অনেক ধুমধামে ছেলের বিয়ে দেওয়ার। কিন্তু সব কিছু পাল্টে গেলো একটা মেয়ের জন্য। সে যাইহোক শেষমেশ ছেলে রাজি হয়েছে এটাই বা কম কোথায়। এরকমই চিন্তা করতে ব্যস্ত ছিলেন আমজাদ আলী। হঠাৎ তিনি অনুভব করলেন,তাঁর পায়ে শীতল পরশ সাথে অন্য কিছু। দ্রুত তিনি চোখ পায়ের দিকে দিলেন। তখন দেখতে পেলেন,পল্লব নিজের বাবা-র পা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। হুট করেই আমজাদ আলীর বুকটা ভারী হয়ে এলো। তাঁর এই ইগো বজায় রাখা ছেলে কিনা তাঁর পা ধরে আছে ভাবা যায়। ছেলের সাথে তাঁর একটা যুদ্ধ চলে,অবশ্য সেটা বহুকাল থেকে। কিন্তু কখনোই তিনি এমন ভাবে তাঁর ছেলেকে ভেঙে যেতে দেখেনি,তাহলে কি সত্যি তিনি কোন ভুল সিদ্ধান্ত ছেলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছেন তিনি। তিনি নিজেকে সামলে নিলেন। ছেলেকে বললেন।
_ কি করছো,আমার পা ছাড়ো। আর ছোট বাচ্চাদের মতো কাঁদছো কেন? বিয়ে করতে যাচ্ছো।
_ প্লিজ আব্বু আপনি এর থেকে আমায় মেরে ফেলুন,আমি মরে যেতে রাজি আছি। কিন্তু রজনীকে ছাড়া অন্য কাউকে আমায় বিয়ে করতে বলবেন না। আমি এতোদিনে সকল যুদ্ধে আপনায় বিজয়ী ঘোষণা করলাম। তবুও আমাকে এতো বড় শাস্তি দিবেন না। রজনী অন্য সব মেয়েদের মতো না। শুধুমাত্র আপনায় কথা দিয়েছে তাই,ও আমায় ফিরিয়ে দিয়েছে। একবার ভাবুন ওর তো কোন দায় নেই আপনার কথা রাখার। আমি ওকে কতোবার বলেছি চলো পালিয়ে যাই। কিন্তু ও বারবার না করেছে,সাথে আমাকে এই বিয়ে করার জন্য জোর করেছে। একবার ভাবুন আব্বু অন্য কোন মেয়ে হলে,এমন সুখের জীবন কোন মতেই হাত ছাড়া করতো না। তবুও আপনার মনে হয় রজনী লোভী। আব্বু প্লিজ একবার চিন্তা করো তুমি। আমি যদি সারাজীবন একটা মানুষকে না পাওয়ার যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বয়ে বেরাই,যাঁর আমার সাথে বিয়ে হবে তাঁর কি হবে? সে কি সুখি হবে? তখন আপনার বন্ধু যদি আপনায় কাঠগোড়ায় দাড় করায় তখন কি বলবেন আপনি? এটাই বলবেন নিজের জেদ আর ইগো ধরে রাখতে তিনটে জীবন আপনি বলি দিয়েছেন। দয়া করেন আব্বু আমার উপর। আমি আর নিতে পারছি না। আমাকে এভাবে মৃত্যু যন্ত্রণা দিয়েন না,আপনার এই শাস্তি আমি মেনে নিতে পারছি না।
কথাগুলো শেষ করে মুখ চেপে ধরলো পল্লব। আর আমজাদ আলী থমকে গেলেন। তিনি শাস্তি দিচ্ছে তাঁর ছেলেকে। কই এটা তো নয়। তিনি তো মনে করেছে,রজনী পল্লবের ঘোর। যাকে ক্ষণিকের জন্য পল্লবের ভালো লেগেছে। কিন্তু এখন পল্লবের কথা শুনে তো অন্য কিছু মনে হচ্ছে। তাহলে কি তিনি ভুল করছেন। হঠাৎ আমজাদ আলীর কি হলো কি জানি,তিনি ড্রাইভারকে বললেন।
_ গাড়ি ঘুরাও,গাড়ি বাড়িতে নিয়ে চলো।
ড্রাইভার যেন বুঝলো না। তাই প্রশ্ন করলো।
_ কি বললেন স্যার,আমরা তো এসে গেছি। ওই তো বাড়ির গেট।
_ কি বলেছি তোমার কানে যায়নি। গাড়ি ঘোরাও।
_ আচ্ছা স্যার।
গাড়ি ঘুরে গেলো। সাথে ঘুরে গেলো পল্লব আর রজনীর ভাগ্য চাকা। পল্লব এক ঝলক বাবা-র মুখ পানে তাকালো। বাবা ইশারা করলো,সে যা ভাবছে সেটাই। পল্লব খুশিতে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।
_ আই লাভ ইউ আব্বু,আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি।
আমজাদ আলীও ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। বাবা ছেলে আজ কত বছর পর এভাবে। এবার একটা ধন্যবাদ মন থেকে চলেই এলো রজনীর জন্য। হঠাৎ আমজাদ আলীর ফোনটা বেজে উঠলো। বন্ধু কল করেছে,কি বলবে বন্ধুকে। জোর করে তো তিনিই বন্ধুর মেয়ের হাত তাঁর ছেলের জন্য চেয়ে ছিলেন। এখন। নিজের দ্বিধা নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো।
_ হ্যালো
_ গেটের কাছ থেকে তোদের গাড়িটা ফিরে গেলো দেখলাম। তাহলে কি তোদের কানেও পৌঁছে গেছে আমার মেয়ে পালিয়ে গেছে।
বন্ধুর এমন আজগুবি কথার আগাগোড়া কিছুই পেলো না আমজাদ আলী। তাই তিনি প্রশ্ন করলেন।
_ বুঝলাম না
_ স্মৃতি পালিয়ে গেছে।
_ বুঝতে পারছি আর কিছু বলতে হবে না। টুক করে আমজাদ আলী কলটা কেটে দিলেন। এখন যদি তিনি ছেলেকে বলেন তাঁর পছন্দ করা মেয়ে অন্য ছেলের হাত ধরে পালিয়েছে,তাহলে তাকে পঁচাতে ছাড়বে না। তাঁর থেকে ছেলে বাবাকে মহান ভাবছে ভাবুক না। ছেলেদের কাছে বাবারা মহান হলে দোষ নেই। তাই তিনি মুখে গম্ভীরতা টেনে বললো।
_ তোমার জন্য বন্ধু আমায় গালমন্দ করেছে,ছি্ ছি্ এরপর মুখ দেখাবো কি করে।
_ কেন তুমি কেন মুখ দেখাতে পারবে না,ছেলে তো তোমার পালায়নি,মেয়ে পালিয়েছে তোমার বন্ধুর। তিনি আরো মুখ দেখাতে পারবে না
_ তাঁর মানে?
_ আমি শুনে নিয়েছি,এমন গম্ভীর মুখ আর রাখতে হবে না।
_ ওরে ফাজিল ছেলে। এই কথা বলেই চড় উঠালেন আমজাদ আলী। পল্লব বাঁধা দিয়ে বললো।
_ দেখুন আব্বা আপনি যদি আমার মানসম্মান আমার হবু স্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন,আমিও কিন্তু আপনার স্ত্রীর সামনে আপনার ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে দিবো। আমি গিয়ে মা’কে বলবো,মা বাবা আমাদের কথা না শুনে একটা বাজে মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। তখন কি হবে বুঝতে পারছেন আপনার। আম্মা ঠিক আপনার গুষ্টি শুদ্ধো বিনাশ করবে। আমার গালে যদি আপনার থাপ্পড়ের পাঁচ আঙুলের দাগ পড়ে যায়। আমার হবু স্ত্রী মনে করবে,তাঁকে পাওয়ার জন্য বাবা-র ধোলাই খেয়েছি এই বয়সে। তাই আপনি আমার ইজ্জত রাখুন,আমি আপনারটা রাখবো।
ছেলের কথায় তাজ্জব বনে গেলো আমজাদ আলী। চিৎকার করে বললো।
_ এবার তো তোমায় ছাড়ছি না।
আর পল্লব জোরে বললো। ওহে কাকা গাড়িটা থামান,নাহলে তো বাবা আমার মানইজ্জত সব ফালুদা করে দিবে।
গাড়ি থেমে গেলো। পল্লব দ্রুত মাঝরাস্তায় নেমে পড়লো। বাবাকে টা-টা দিয়ে দৌড়ে চলতে রইলো। আমজাদ আলীও হাসতে হাসতে শেষ। কিন্তু সেই হাসি বেশি সময় রইলো না এক বিকট আওয়াজে থেমে গেলো। গাড়ির পিছনে তাকাতেই চোখ স্থীর হয়ে গেলো। ড্রাইভার দ্রুত ব্রেক কষলো। দুজন মধ্যবয়ষ্ক লোক ছুটতে রইলো সামনের দিকে। চারিদিক থেকে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ শোনা গেলো। আর স্থীর হয়ে পিচঢালা রাস্তায় পড়ে রইলো পল্লব। যাঁর চারিদিকে কিনা রক্তে মাখামাখি। তাঁর স্থীর চোখটা আঁটকে রেখেছে দৌড়ে আসা তাঁর ভালোবাসার দিকে। ঠোঁটের এক চিলতে হাসি। সূর্যটা প্রায় ডুবুডুবু। কমলা রঙের আকাশটা কয়েক মুহূর্তে যেন ঘোর অন্ধকার নেমে এলো। আর রজনী প্রাণ পণে ছুটতে রইলো পল্লবের পানে। মানুষটা ছাড়া সে বাঁচবে না,এটা মনে হতেই লিমা বেগমের থেকে ঠিকানা নিয়ে সে বেরিয়ে পড়েছে। রজনীর দীর্ঘ বিশ্বাস ছিলো! একবার যদি রজনী পল্লবের সামনে দাঁড়ায় তাহলে কখনোই পল্লব রজনীকে ফেরাতে পারবে না। কিন্তু কে জানতো মাঝ পথেই তাঁদের এভাবে দেখা হবে। গোধূলি শেষ। তাহলে কি তাঁদের ভালোবাসার জলন্ত শিখাও নিভে গেলো। রজনী হুমড়ি খেয়ে পড়লো পল্লবের পাশে। পল্লবকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
_ পল্লব, এই পল্লব কথা বলুন। আপনি এভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারেন না। পল্লব আপনি আমাকে নিজের করতে চেয়েছিলেন! দেখুন আমি এসেছি। আমি এসেছি শুধুমাত্র আপনার হতে। এভাবে আমাকে একা করে যাবেন না। ওই পল্লব কথা বল। দেখ আমি,আমি রজনী। তোমার রজনী। কিছু বলো। আমি তোমায় ছাড়া কীভাবে থাকবো,এভাবে আমায় একা করো না। ওই কথা বলো না। আঙ্কেল ওকে কথা বলতে বলুন। আল্লাহ তুমি আমার সাথে কেন এমন করলে?
পল্লব বলে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো রজনী। আর পল্লব, তাঁর চোখটা পুরোপুরি স্থীর করে তাকিয়ে আছে। কারণ দেহ পাখিটা যে দেহ থেকে উড়াল দিয়েছে। হঠাৎ ছেলের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারলো না আমজাদ আলী। তিনি নির্বাক হয়ে বসে পড়লো পিচঢালা রাস্তায়। কালো কুচকুচে রাস্তাটায় ধলোবালির সাথে মিশে গেলো পল্লবের দেহের রক্ত আর রজনীর চোখের শীতল জল। হুট করে রজনীর বুকে ব্যথা উঠলো। শ্বাস ঘনো হয়ে এলো। দম বন্ধ হতেই কিছুক্ষণ ছটফট করে সেও নেতিয়ে পড়লো রক্ত মাখা রাস্তায়। কাঁপতে থাকা দেহ নিস্তেজ হয়ে গেলো কয়েক সেকেন্ডে। তখন প্রকৃতিতে মাত্র সন্ধ্যা নেমেছে। গোধূলিকে বিদায় জানিয়ে পৃথিবী সন্ধ্যাকে গ্রহণ করেছে। আর এই গোধূলি শেষে পল্লব রজনী জীবনের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। তাহলে কি তাঁদের গোধুলী শেষে দেখা হলো। কথা হলো কিছুটা অদৃশ্য ভাবে। যা কেউ দেখিনি,শুধু দু’জন ছাড়া। যাঁরা কিনা একটু আগেই পৃথিবীর সকল মায়া ত্যাগ করে বিদায় নিলো পরপারে যাবার জন্য। সাক্ষী হলো কিছু পথিক। যাঁরা হয়তো কিছু সময় ধরে আফসোস করবে ওদের নিয়ে। ব্যথা প্রকাশ করবে,আর তারপর! তারপর যে যাঁর কর্মেস্থলে ফিরে যাবে। হয়তো পল্লব রজনীর মৃত্যু খুব ভয়ানক। কিন্তু এমন মৃত্যু রোজ হয় আমাদের এই শহরের আনাচে কানাচে। কারোটা শিরোনামে দেখা হয়, কারোটা অজান্তেই লুকিয়ে রয়। অবশেষে গোধূলি শেষে তুমি-আমি মিলে একাকার হয়ে গেছে ।
সমাপ্তি
কেমন হয়েছে জানাবেন। একটু তাড়াহুড়ো করেছি জানি। আমার ভুলগুলো মাফ করবেন।