গল্প :- গ্রামের পিচ্চি বউ
পর্ব :- ৩৪ + ৩৫ এবং ৩৬
লেখিকা :- বাবুনি
.
.
-:”এই ভাবেই কেটে গেলো একসপ্তাহ_
কাল পার্টির আয়োজন করা হয়েছে, ম্যানেজার সব ব্যবস্থা করে রাখছেন..
আমি অফিস থেকে ফেরার পথে রুমকির জন্য একটা,লেহেঙ্গা কিনে আনলাম_কাল পার্টিতে পরবে..আমার জন্য ও একটা পাঞ্জাবি কিনলাম,লেহেঙ্গার সাথে মিলিয়ে..
বাসায় এসে দেখি রুমকি কলেজ থেকে এসে গেছে..
(আমার পিচ্চি বউ এখন অনেক বড় হয়ে গেছে ,সে এখন একা একা কলেজ থেকে আসতে পারে..)
যাই হোক যেই ব্যাস্ত থাকি অফিসের কাজ নিয়ে,ওকে আনতে যেতে পারি না ঠিক সময়ে..ওর এখন সব কিছুই চেনা জানা হয়ে গেছে এই শহরের আর কোনো ভয় নেই..
রুমকি রুমে বসে টিভি দেখছিল..
আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম ,ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল কখন আসছেন..?
আমি:এই তো মাত্র এলাম..
রুমকি:ওহ,হাতে ওটা কি..?
আমি : শপিং ব্যাগ টা ওর হাতে দিয়ে বললাম খুলে দেখো..
রুমকি খুলতে লাগলো শপিং ব্যাগ ..
আমি বললাম রুমকি দেখো চয়েস হয়েছে কি না তুমার.. চয়েস না হলে বল আবার চেঞ্জ করে আনবো..
এই বলে আমি ওয়াশ রুমে চলে গেলাম..
ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আসতেই ও বলল..
খুব সুন্দর লেহেঙ্গা টা..
আমি: তুমার চয়েস হয়েছে তো..?
রুমকি:হুমমম, খুব চয়েস হয়েছে..বাট আপনি কি করে জানলেন আমার এইরকম লেহেঙ্গা চয়েস..?
আমি: মুখে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললাম ,আরে আমার পিচ্চি বউ আমি জানবো না তো কে জানবে তুমার চয়েস এর কথা..(আসলেই আমি জানি না ,ঐ টা আমার চয়েস এ এনেছি..যাক ভালো হলো ওর সাথে একটু মজা করলাম..)
রুমকি: মুখ ভেংচি কেটে বলল,তা হঠাৎ শপিং কেনো..?
আমি:কাল তুমাকে পার্টিতে যেতে হবে তাই..
রুমকি:পার্টি ..! একটু আশ্চর্য হয়ে.. আমি পার্টিতে যাবো ? কিসের পার্টি..?
আমি:আরে তুমার জন্য ই তো পার্টির আয়োজন করলাম, অফিসের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব বলে.. ওরা অনেকেই জানে না আমি বিয়ে করেছি..
রুমকি:ওহ ..
আমি:হুমমম, এখন আসো তারাতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো.. কাল সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে..
আমার পিচ্চি বউ টার কপালে একটা চুমু দিয়ে একসাথে নিচে নেমে আসলাম, আব্বু আম্মু কে নিয়ে খাবার টেবিলে আলোচনা করলাম পার্টির ব্যাপারে..
আব্বু আম্মু কে বললাম আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য..
ওনারা কেউ ই যেতে চাইলেন না, বললেন ওসব তদের কাজ , আমারা গিয়ে কি করবো..
তুই বউমা কে নিয়ে যা..
আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে..
খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে চলে আসলাম..
রুমকি ও আমি শুয়ে পরলাম..
কিছুক্ষণ গল্প করে ,ওর কপালে আলতো করে চুমু দিলাম ,ও আমার বুকে মুখ গুঁজে দিল.. তারপর ..
দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলাম..
.
.
#Part :- 35
.
.
ঘুম থেকে উঠে আমি ও রুমকি নামাজ আদায় করে, নাস্তা সেরে নিলাম..
তারপর কিছুক্ষণ গল্প করে, আমি রুমকি কে রেডি হতে বললাম_
আমি ও রেডি হয়ে নিলাম তারপর আমি নিচে নেমে আসলাম, টিভিতে নিউজ দেখছি..
১ঘন্টা হয়ে গেলো রুমকির আসার কোনো নাম গন্ধ নেই..
মনে মনে বললাম কি ব্যাপার রেডি হতে কতক্ষণ লাগবে আর..
কি আজব ১ঘন্টার উপর চলছে ওর এখন ও শেষ হলো না… আমি তো ৫মিনিটে রেডি..
বসে আছি চুপ করে, একটু পর ই রুমকি সিরি বেঁয়ে নিচে নামছে..
আমি অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ভাবছি এ কি আমার বউ..? না কি পরী.. বুঝতে পারছি না মনে খটকা লাগছে…
আমি হা করে তাকিয়ে আছি ,কি অপূর্ব সুন্দরী লাগছে আমার পিচ্চি বউ কে..
লেহেঙ্গার সাথে মিক্সড করে গুলাপী রঙের লিপস্টিক দিয়েছে ঠোঁটে ,কানে একি রঙের দুল,হাতে গুলাপী চুড়ি,চোখে হালকা করে কাজল _ উড়না টা লেহেঙ্গার সঙ্গে ফিট করে মাথায় দিয়েছে..
একদম পরীদের মতো লাগছে ওকে..
ওর ডাকে ঘোর কাটল আমার..
রুমকি:কি হলো এই ভাবে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন কেন ..? এতক্ষণ ধরে ডাকছি, কোনো কথাই বলছেন না..
আমি:ওহ সরি…
রুমকি: আচ্ছা আমাকে কিরকম লাগছে..? একটু লজ্জা মাখা কন্ঠে বলল..
আমি: সত্যি বলবো না কি মিথ্যা_?
রুমকি:আগে মিথ্যা টাই বলেন_
আমি: একদম বাচ্চাদের মত লাগছে, সুন্দর লাগছে না , খুবই বাজে লাগছে তুমাকে..
রুমকি:কি বললেন_আমাকে সুন্দর লাগছে না , আমি এখন ই সব খুলে ফেলবো,আর যাবো না ..কত কষ্ট করে রেডি হলাম আর আপনি বলছেন আমাকে সুন্দর লাগছে না..
আরেকটু হলেই কান্না করে দিতো মনে হয়..
আমি:আরে বোকা ,ঐ টা তো মিথ্যা কথা বললাম , সত্যি টা শুনবে না..?
রুমকি: না আর কিছুই শুনবো না_
আমি:ঐ পিচ্চি বউ রাগ করছো কেন,শুনোই না সত্যি টা_সত্যি আমার পিচ্চি বউ টা কে আজ অনেক সুন্দর লাগছে একদম রুপকথার পরীর মত_মনে হচ্ছে সত্যি ই আমার সামনে একটা পরী এসে দাঁড়িয়েছে..
রুমকি: হয়েছে আর বইলেন না, আমার লজ্জা লাগে_(হাত দিয়ে মুখ টা ঢেকে কথা টা বলল..)
আমি ওর পাশে গিয়ে ওর হাত দুটো সরিয়ে ওর কপালে আলতো করে চুমু দিলাম_ও চোখ বন্ধ করে আছে..
কিছুক্ষণ পর রুমকি কে নিয়ে পার্টির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম_
পার্টিতে হাজির হতেই শুরু হয়ে গেলো সালাম দেয়া আর রুমকির পরিচয় জানতে চাওয়া …
ম্যানেজার সাহেব আমাকে দেখেই ছুটে এসে ভালো মন্দ খুঁজ খবর নিতে লাগলেন_
আমি রুমকির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম..
ম্যানেজার সাহেব আমাকে ও রুমকি কে স্পেশাল দুটো চেয়ারে বসালেন_
অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সব কিছু _
ভালোই লাগছে..
রুমকি কে জিজ্ঞেস করলাম তুমার কেমন লাগছে রুমকি..?
রুমকি বলল , ভালো ই লাগছে.. আমি এর আগে কখনো এরকম পার্টিতে যাই নি..আমার কাছে নতুন লাগছে সব কিছু তাই , ভালো ই লাগছে..
আমি বললাম,গুড..
একটু পর ম্যানেজার সাহেব আমাকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করলেন_
.
.
#Part :- 36
.
.
আমি সবাইকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলার জন্য উঠে গেলাম বসা থেকে..
তারপর বললাম আমার উপস্থিত সকল সহকর্মীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি..
আজকের এই পার্টি তে আপনাদের একটা বিষয় জানতে এই আয়োজন..
আমি আসলে সময় স্বল্পতার কারণে কাউকেই বলতে পারি নি আমার বিয়েতে..
সেই জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত..
আজ এই কথা টি জানানোর জন্য আপনাদের এইখানে উপস্থিত করা..
তারপর আমি রুমকির দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর হাত ধরে ওকে নিয়ে আসলাম সবার সামনে..
তারপর ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম She is my wife..সে আমার জীবনের অর্ধাঙ্গিনী..
সবাই হাত তালি দিয়ে ওকে বরন করে নিল..
তারপর অনেকেই ওর সাথে কথা বলল.. ভালো মন্দ জিঙ্গেস করলো..
ওর সাথে ম্যানেজার সাহেবের বউ গল্প শুরু করে দিলেন..
আমি চেয়ার থেকে উঠে একটু দূরে হাঁটাহাঁটি করছি..
একটু পর ই সীমা আমার সামনে হাজির হলো..
আমি বললাম, কি ব্যাপার তুমি এখানে , রুমকির সাথে পরিচয় হয়েছে..?
সীমা: না পরিচয় হয় নি..
আমি:ওহ প্রবলেম নেই এখন আসো পরিচয় করিয়ে দিব..
সীমা: এখন না স্যার পরে কথা বলব.. তার আগে একটা প্রশ্ন করি..?
আমি:হুমমম অবশ্যই ..
সীমা: স্যার আপনি বিয়ে করেছেন কিভাবে কি হলো এত তাড়াতাড়ি..
আমি সব কিছু খুলে বললাম ওকে..
ও হা হা করে হেসে উঠলো..
আমি :কি হলো তুমি এভাবে হাসছো কেন..?
সীমা: স্যার আপনি এত শিক্ষিত একজন লোক হয়ে , আপনি কি না…. আবার হাসিতে ফেটে পরলো..
আমি:কি আমি…?
সীমা: আপনি কি না একটা গ্রামের অশিক্ষিত, গাইয়া মেয়ে কে বিয়ে করছেন..
আমি:তো কি হয়েছে ,আর ও অশিক্ষিত ও গাইয়া হলে ও আমার বউ ,সো আর এইরকম একটা কথা ও বলো না ওকে..
এইসব নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া বেঁধেছে,
এর মধ্যেই রুমকি এসে হাজির..
রুমকি পিছন থেকে সব শুনছিল..
এক পর্যায়ে সীমা থাকে নিয়ে খুব বাজে বাজে কথা বলল..
তখন রুমকি সীমার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো..
সীমা থাকে দেখে এমন ভাবে তাকালো যেনো ভূত দেখেছে..
তারপর নাক কুঁচকে বলল,এই তুমি স্যার এর বউ_?
রুমকি বলল ,কোনো সন্দেহ আছে..
সীমা :নেই বাট তুমার মত একটা মেয়ে স্যার এর বউ এটা ভাবতেই আমার কেমন কেমন লাগছে..
রুমকি:কেমন লাগছে..?
দুজনের মধ্যে প্রায় ঝগড়া বেঁধে যাওয়ার মতো অবস্থা_
আমি কি করবো বুঝতে পারছি না..
সীমা রুমকি কে আরো অপমান করে কয়েক টা কথা বলল.. আমি দুজনের কথা থামাতেই পারছি না..
এর মধ্যেই রুমকি একটা টুল টেনে নিয়ে এলো সীমার সামনে..
টুলের উপর উঠলো উঠে টাসস করে একটা চর দিলো সীমাকে..
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি..
সীমা গালে হাত দিয়ে চেপে ধরল..
আমি রুমকির দিকে তাকিয়ে বলছি মনে মনে, এত বুদ্ধি কোথায় রাখো গো আমার পিচ্চি বউ..
তারপর সীমার সামনে একটু ভাব দেখিয়ে বললাম,কি হলো রুমকি তুমি এটা কী করলে..?
রুমকি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিচু করে আছে মাথা টা ফ্লোরের দিকে..
.
.
চলবে……………♥