#গল্পঃ গ্রামের লাজুক মেয়ে ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ১০…
√-আমিঃ আমি আবার কি সর্বনাশ করলাম?
রিতুঃ আপনি আমায় পাপ্পি দিলেন কেনো?
(খুব জোরে কান্না করে দিলো)
~ ছোট বোন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ভাইয়া তুমি এতো পঁচা, আমার রিতু ভাবিকে কান্না করালে, আবার পাপ্পি দিয়েছো, আমি এখনি তোমার নামে বিচার দিবো সবার কাছে ? ~
আমিঃ মায়া তুই চুপ করবি। তুই ছোট, ছোটোর মত থাক, বেশি বড় সাজতে আসবি তো থাপ্পড় খাবি বলে দিলাম। আর রিতু তোর ভাবি হলো কেমন করে, বলবি রিতু আপু ?
রিতুঃ ওওও এখন তো আমি মায়ার আপুই হয়। সব হয়ে গিয়েছে তো, এখন আর আমাকে দিয়ে কি আর হবে তাই না? আর নিজের দোষের জন্য এই ছোট মেয়েকে মারতে চান, আপনার লজ্জা বলতে কিছু নেই বুঝি?? (কান্নার সাথে সাথে ঝগড়াটি কন্ঠে)
আমিঃ এই তুমি চুপ করবে… আমি কি করছি তোমার? পাপ্পি কি আমি করছি নাকি তুমি করছো?
~ রিতু আর কথা বললো না। হু হু করে কান্না করে চোখের পানি মুছতে মুছতে বাসার মধ্যে চলে যাচ্ছে। ছোট বোন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হুমকি দিচ্ছে আজ নাকি সে আমার নামে নালিশ করবে সবার কাছে।
কোন বিপদে পড়লাম রে ভাই ?
আর জীবনে লজ্জা থাকলে জীবনেও কেনো মেয়ে নিয়ে পার্কে যাবো না, কান ধরে মাফ চাইলাম। প্রেম করার শখও মিটে গিয়েছে, আর এমন পিচ্চি মেয়েদের সাথে প্রেম… ভুলেও না ?
মায়া বাসার মধ্যে গিয়েই বড় ভাবির রুমে দৌড়ে গিয়ে ভাবিকে বলতে শুরু করলো, ভাবি ভাবি পাপ্পি কি জিনিস?
সাথে আবার রিতু পাগলী গিয়ে হু হু করে কান্না করতে করতে খাটের উপর শুয়ে পড়লো। আমি বেচারা,কোন প্যারায় পড়লাম ?
~ভাবি ব্যাপার কিছুটা বুঝতে পেরে মায়ার মুখ চেপে ধরলো। আমার দিকে তাকিয়ে ভাবি বললো~
ভাবিঃ এই শুভ কি হয়েছে সবার? রিতুই বা কান্না করছে কেনো?
~ পরে সব কাহিনি বললাম ভাবিকে ~
ভাবিঃ এই রিতু, তুই তাহলে কান্না করছিস কেনো?
রিতুঃ আপনার দাদা শ্বশুর আমার কি সর্বনাশ করলো বুবু ?
ভাবিঃ চুপ সয়তান। এতে সর্বনাশের কি হল?
রিতুঃ তুমি বুঝতো সে কি করছে? এখন সবাই আমায় দেখলে হাসবে। আমি কিভাবে সবাই কে মুখ দেখাবো বলো বুবু…
ভাবিঃ হায়রে পাগলী, তোর মুখে কি লেখা আছে নাকি তুই পাপ্পির কথা যে বুঝতে পারবে সবাই?
রিতুঃ এমন ওনি আমার ক্ষতি করলো কেনো? আমি আর জীবনে তার সাথে কথা বলবো না…
~ মেজাজ গেলো গরম হয়ে –
আমিঃ ওই আপনি চুপ করবেন..? পাকনা বুড়ি সব বুঝে আর এটা বুঝে না। আর একবার এমন করলে দিবো একটা, চুপ.. কান্না থামাও (জোর কন্ঠে)
~ রিতু সাথে সাথে চুপ ভয় পেয়ে। কিছুক্ষণ পর ভাবির দিকে তাকিয়ে রিতু বললো-
রিতুঃ সত্যি তো বুবু,, কেউ বুঝতে পারবে না?
ভাবিঃ আরে হুমম পাগলী। তোর দুলাভাইয়ের কাছ থেকে আমার দেখি কত পাপ্পি খাওয়া হয়েছে ?… কোথায় আমার মুখে কি লেখা আছে বল?
~ আমি হি হি করে হেসে রিতুর দিকে তাকিয়ে বললাম ~
আমিঃ হুমম রিতু সত্যি। আমি নিজ চোখে দেখছি৷ ভাবি যখন চা নিয়ে সকালে ভাইয়ার কাছে যাই, ভাইয়া তো চা খায় না। চা রেখে দুই জনে পাপ্পি খায়, তুমি বিশ্বাস করো আমি প্রতিদিন এমন দেখি… তাই না ভাবি? ☺
ভাবিঃ ও মোর খোদা, আমি আর বাঁচতে চাই না। ইজ্জত আমার শেষ ?
এই বদমাইশ, ফাজিল ছেলে নাকি আমাদের ওটাও দেখে প্রতিদিন। আজ তোমার ভাই বাসায় আসুক, তোমার বিয়ে দিবে আগে, তারপর হবে অন্য কথা ?
রিতুঃ হি হি (মুখ চেপে ধরে)
আমিঃ সত্যি ভাবি আজ আমার বিয়ে ?
ভাবিঃ ছেলের শখ কত… বাপি বাড়ি যা…
~ থাক বড় এক ঝামেলা থেকে বাঁচলাম। রিতুর মাথা থেকে পাপ্পির ভুত গিয়েছে।
রিতুকে রুমে গিয়ে মেসেজ দিলাম…
আমিঃ এই পাগলী… তুমি ওমন কান্না করলে কেনো?
১০ মিনিট পর রিতু রিপ্লাই দিলো-
রিতুঃ তাই কি করবো বাবু বলো, যেটা আমি কখনো চাই নাই, সেটা হয়ে গেলো, খুব কষ্ট লাগছিলো ওমন ভুল হওয়াতে…
আমিঃ ভুল হয়ে গেলে আর কি করার বলো। তাই বলে ওমন কান্না করে বুঝি?
রিতুঃ নেকা… তুমি বুঝি জানো না, মেয়েরা একটু বেশি ঢং করে। আর বয়ফ্রেন্ডের সাথে তো ১০০ কথার ৯০ টাই ঢং করে বলে মেয়েরা বুঝলে…
আমিঃ তাই নাকি পিচ্চি, সব মেয়েরা এমন ঢং করে বুঝি…
রিতুঃ আরে হ্যা… সব মেয়েরাই ঢং করার উস্তাদ ?
আমিঃ তুমি তো কাল চলে যাবে, আমার ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে সোনা..
রিতুঃ বাবু, আমার ভাবতেও বুক ফেটে কান্না আসছে। তুমি একটা কিছু করো যেনো বাবু, যেনো আমি এখানেই থাকতে পারি প্লিজ প্লিজ…
আমিঃ আমি কি করবো বলো? তুমি একটা বুদ্ধি দেও…
রিতুঃ চলো কাল সকালে বিয়ে করে ফেলি… তাহলে আমার আর যেতে হবে না।
আমিঃ কি বলছো এগুলো, হঠাৎ করে বিয়ে করা যায় নাকি?
রিতুঃ আমি এতো কিছু বুঝি না। আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না বলে দিলাম।
আমিঃ সোনা, একটু কষ্ট করে কয়েকদিন থাকো। তারপর ঠিক তোমায় বউ করে নিয়ে আসবো প্রমিস…
~ রিতুর থেকে আর কেনো রিপ্লাই আসলো না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ওর নাম্বারে কল করে দেখি ওর মোবাইল বন্ধ। বুঝতে পারছি রাগ হয়ে মোবাইল বন্ধ করে রাখছে। মেয়েদের যে এতো রাগ কেনো হয় বুঝি না। কথায় কথায় রেগে মুখ লাল টমেটো করে রাখে, ধুর ছাই ভালো লাগে না ~
আমি খাওয়া দাওয়া না করে ঘুমিয়ে পড়লাম। গত ৬ দিন রিতুর হাসির শব্দ শুনে আমার ঘুম ভাঙ্গলেও আজ তেমনটা হল না। গত ৬ দিন ভোর বেলা রিতু আমার রুমের পাশে এসে ছোট বোনের সাথে হাসাহাসি করতো জোরে জোরে, যেনো আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমি ঘুম থেকে উঠলে পাগলীটা আমার দেখে মিষ্টি হাসি দিতো…
কিন্তু আজ পাগলীটা হয়তো এখনো রেগে আসে।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গিয়ে শুনি রিতু অনেক আগে নাস্তা করছে। ৫ মিনিট পরই দেখি রিতু রুম থেকে বের হল ঢাকায় যাওয়ার জন্য পুরোপুরি রেডী হয়ে। আমার সাথে চোখে চোখ পড়াতে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো রিতু। তার চোখ দুটো পানিতে ঝলমল করছে, লাল হয়ে আছে, সাথে ফুলেও গিয়েছে চোখ, হয়তো পাগলীটা সারারাত কান্না করছে।
আমি যে কিভাবে তাকে বুঝায়, আমিও তাকে দূরে রেখে ঘুমাতে পারবো না ?
বাসার গাড়ি নিয়েই রিতুকে দিতে ভাইয়া ঢাকা যাচ্ছে। রিতু সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে গাড়িতে গিয়ে বসলো। কিন্তু আমার সাথে একটাও কথা বললো না সে। আমি আমার রুমে গিয়ে রিতুর জন্য আনা গিফট টা নিয়ে গাড়ির কাছে গেলাম। কয়েকবার ইশারা করার পর গাড়ির গ্লাস নামালো রাগি ভাবে…
আমিঃ সোনা, তুমি কষ্ট পেও না, আমারও কষ্ট হচ্ছে কিন্তু ।
রিতুঃ আপনি কে? আপনাকে আমি চিনি না… (রাগি গলায়)
~ কথাটা শুনে একটা কষ্ট লাগলো, বলে বুঝানো কষ্ট ~
আমিঃ আমি কে মানে? তুমি আমায় আপনি করে কথা বলছো কেনো?
রিতুঃ আমি অপরিচিত সবাই কে আপনি করে বলি।
~ খুব কষ্টও লাগছিলো, আবার রাগও লাগছিলো। যাকে এতটা ভালোবাসা দিলাম সেই কিনা এই ভাবে কথা বলে কষ্ট দিচ্ছে,অপমান করছে ~
আমি আর রিতুকে কিছু না বলে ভাবিকে বললাম-
আমিঃ ভাবি, ওনাকে বলুন, এই গিফট নিতে ও তার বাসায় গিয়ে খুলতে।
ভাবিঃ রিতু লক্ষী বোন আমার। শুভ যেটা দিচ্ছে, হাসি মুখে নিয়ে নাও…
রিতুঃ আমি কি লোভী মেয়ে নাকি যে যার তার থেকে জিনিস নিতে হবে।
আমিঃ ভাবি থাক কাউকে বলতে হবে না নিতে। কেউ কিছু খুশি হয়ে দিলে, আর সেটা যদি কেউ মন থেকে নেই তাহলে সে লোভী হয় না,,, সেটায় যে না জানে… তাকে আর কি বুঝাবো (গাড়ির দিক থেকে বাসার দিকে হাটা দিলাম)
রিতুঃ বুবু, বুবু বলো তাকে আমি তার দেওয়া গিফট নিবো। তাকে দিতে বলো…
ভাবিঃ শুভ ভাই, এখন আর অভিমান করো না, যাও হাসিমুখে কথা বলে বিদায় দেও…
~ আমি আবার গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই গাড়ির দরজা খুলে দিলো রিতু। আমি মাথা নিচু করে গাড়ির মধ্যে মুখ দিতেই, সে একটা ঝাপটা দিয়ে আমার গলা জরিয়ে ধরে তার শরীরের সাথে চেপে ধরলো। সে গাড়ির সিটের উপর শুয়ে পড়ছে আমার গলা জরিয়ে ধরে, আমিও তার উপর পরে শুয়ে পড়ছি। এতো জোরে জরিয়ে ধরে আছে, আমি তার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর শক্তি ও পাচ্ছি না। সে শুধু বলছে, “আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না” সাথে কান্না করা শুরু করছে….
ভাগ্য ভালো আমি, রিতু ও ভাবি ছাড়া কেউ নেই ওখানে। নাহলে ইজ্জত শেষ হত আজ। এতো জোরে গলা চেপে ধরছে আমার শ্বাস নিতেও খুব কষ্ট হচ্ছে ~
আমিঃ আমাকে ছাড়ো, আমার শ্বাস কষ্ট হচ্ছে, আমি মরে যাচ্ছি তো…
রিতুঃ সত্যি আমি তোমায় খুব খুব ভালোবাসি।
আমিঃ জানি তো প্লিজ ছাড়ো, দম নিতে পারছি না আমি…
রিতুঃ সত্যি আমি তোমায় খুব খুব ভালোবাসি।
~ আমার যে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ভাবি সেটা বুঝতে পারাতে, এসে আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে রিতুর থেকে ~
ভাবিঃ রিতু বোন আমার, শুভ কে ছেড়ে দেও, ও খুব কষ্ট পাচ্ছে…
রিতুঃ সত্যি আমি তোমায় খুব খুব ভালোবাসি।
ভাবিঃ জানি তো তুমি শুভকে ভালোবাসো, এবার ছাড়ো বোন আমার শুভ কে, নাহলে সে মরে যাবে তো..
রিতুঃ আমি তোমায় খুব খুব ভালোবাসি।
~ আমি আর দম নিতে পারছি না। মনে হচ্ছে এখুনি মরে যাবো। ভাবি রিতুর হাতে জোরে চিমটি কাটলো, ছাড় রিতু তোর ভাইয়া আসছে, দেখলে কি বলবে…. চিমটি কাটায় রিতুর হুশ আসলো, রিতু আমায় ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছতে লাগলো। আমি তাড়াতাড়ি গাড়ির ভিতর থেকে মুখ বের করে হাঁপাতে লাগলো। মনে হচ্ছিল আজ হয়তো আমি শেষ ~
~ এর মধ্যে ভাইয়া চলে আসলো। রিতুর কান্না দেখে রিতুকে ভাইয়া সান্ত্বনা দিচ্ছে, বোন তোমায় আমি আবার কিছুদিন পর গিয়ে নিয়ে আসবো প্রমিস। ভাইয়ার প্রমিসের কথা শুনে রিতুর কান্না থামলো। রিতু আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হলো।
আমি আর ভাবি দাড়িয়ে আছি। কান্না ও পাচ্ছে আমার ~
ভাবিঃ কি হাঁপাচ্ছ কেনো? প্রেম করতে কেমন লাগছে ?
আমিঃ ভাবি আজ মনে হচ্ছিল আর বাঁচবো না।
ভাবিঃ শুনো, লাজুক মেয়েরা খুব সিরিয়াস মনের হয়, আবার রাগি মেয়েদের ভালোবাসা সত্যি হয়… তোমার বউয়ের এই দুইটায় আছে। তাহলে বুঝো বিয়ের পর তোমার অবস্থা কি হবে?
আমিঃ ভাবি আর টেনশন দিবেন না। নাহলে বিয়েই করবো না।
ভাবিঃ হা হা হা পাগল…
~ রিতু বাসায় যাওয়ার পর তিন দিন আর রিতুর সাথে যোগাযোগ নেই, তাহলে কি রিতু বাসায় গিয়ে আমায় ভুলে গেলো নাকি… অনেক মেসেজ দিয়েছি, কেনো উত্তর নেই। তিন দিন পর রিতু রাতে মেসেজ করলো-
রিতুঃ………. ~ গল্প চলবে ~
বিঃদ্রঃ দূরে গিয়েও রিতু শুভর ভালোবাসা কেমন থাকে, জানতে হলে পড়তে হবে আগামী পর্ব..