#গল্পঃ গ্রামের লাজুক মেয়ে ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ১২…
√-~ সাত দিন, পায়ে ধরে, হাজার রকম ভাবে বুঝিয়ে সবাই কে রাজি করালাম ভাবিকে শেরপুর পাঠাতে।
বৃহস্পতিবার সকালে আমি আর ভাবি রওনা হলাম শেরপুরের উদ্দেশ্য ?…
রাতে গিয়ে ভাবির বড় কাকার বাড়ি উঠলাম। রিতুকে আমি বা ভাবি কেউ বলি নাই যে আমরা শেরপুর এসেছি।রিতুর সাথে সেই দিন রাতেও এমনি দিনের মতই কথা হলো। ভাবি বললো,, সকাল বেলা রিতুদের বাসায় মানে ভাবির ছোট কাকার বাসায় নিয়ে যাবে আমায়। সারারাত আর ঘুম আসলো না আমার আনন্দে, শুধু ভাবছি, এই রাতটা শেষ হলেই সকাল বেলা প্রায় সাড়ে ৩ মাস পর রিতুর সাথে দেখা হবে আমার। কত আনন্দ হচ্ছে আমার এটা ভেবে..
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে ভাবিকে বললাম তাড়াতাড়ি নিয়ে যেতে রিতুদের বাসায়।
বেলা ১১ টার দিকে রিতুদের বাসার উদ্দেশ্য হেটে রওনা হলাম আমি আর ভাবি । সামান্য একটু দুরেই নাকি রিতুদের বাসা ভাবি বললো। খুব চমৎকার গ্রাম… চারদিকে খুব সুন্দর পরিবেশ, রাস্তার উত্তর সাইডে বাড়িঘর ও দক্ষিণ সাইডে ধান খেত। অনেক বাতাস বইছে চারদিকে।
আমিঃ ভাবি সত্যি কি মানুষ কে জ্বীনে ধরে?
ভাবিঃ হয়তো ধরে.. হি হি…
আমিঃ জ্বীনে ধরলে কি তাকে আর বিয়ে করা যায় না??
ভাবিঃ হয়তো আর যায় না, হা হা..
আমিঃ ভাবি তুমি হাসছো কেনো?? এই জ্বীনের কাহিনি কি সত্যি? নাকি তুমি আর রিতু এগুলো নাটক করছো…
ভাবিঃ তোমার এতো আর এখন জানতে হবে না। আগে চলো ওদের বাসায়, তারপর তুমিও বুঝতে পারবে হি হি…
আমিঃ যদি তোমরা কেনো বুদ্ধি করো থাকো, তাহলে কিন্তু তোমাদের খবর আছে বলে দিলাম…ভাবি ?
ভাবিঃ আচ্ছা করো খবর.. এখন চুপ ?
এই ভাবে কথা বলতে বলতে কিছু দূরে যেতেই বড় একটা পুকুর পারে একটা বড় বাড়ি দেখিয়ে দিয়ে ভাবি বললো, ওই দেখো, ওটায় রিতুদের বাড়ি।
ভাবি আগে আগে যাচ্ছে বাসার মধ্যে আর আমি পিছনে পিছনে যাচ্ছি। খুব লজ্জা পাচ্ছি, প্রথম বার হবু শ্বশুরবাড়ি তো যাচ্ছি তো তাই ।
বাসার মধ্যে যেতে যেতে দেখলাম একটা মেয়ে পুকুর পারে, কোমরে ওড়না বেঁধে, লাফিয়ে লাফিয়ে ফুল ছিঁড়ছে বড় একটা ফুল গাছ থেকে। মেয়েটি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকায় মুখ দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু কেমন যেনো রিতুর মতোই লাগছে পেছন থেকে। একটু কাছাকাছি যেতে ভাবি বললো, তুমি গিয়ে রিতুর সাথে প্রেম করো আমি কাকিমার সাথে দেখা করি (বলে হেসে চলে গেলো)
ভাবির কথায় বুঝতে পারলাম ওটায় রিতু।
এক পা দুই পা করে এগিয়ে যাচ্ছি মেয়েটির কাছে। মেয়েটির থেকে ৭/৮ পা দূরে দাড়িয়ে তাকে দেখতে লাগলাম। কত সুন্দর করে লাফ দিচ্ছে, আহহহ চমৎকার।
আমি মনে মনে ভাবলাম, আমি আগেই কথা বলবো না, সে আমায় দেখে চমকে যাবে ও সাথে বড় একটা সারপ্রাইজ পাওয়া হবে তার জন্য। চুপ করে মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছি পরে কি হবে ভেবে কি হবে ভেবে….?
এমন সময় মেয়েটি লাফ দিতে গিয়ে উল্টো হয়ে ঠাসসস।
আহারে বউটা আমার ব্যাথা পায়ছি…হি হি..
মেয়েটি উঠে দাড়িয়ে আমার দিকে চোখ পড়ছে তার। তখন তারও মুখটাও আমি দেখতে পেলাম।
কিন্তু এটা কি রিতু?
রিতুকে যখন আমাদের বাসায় দেখি আগে ১৭/১৮ বছরের একটা বিয়ের যোগ্য মেয়ে লাগতো, কিন্তু এখানে দেখি মনে হচ্ছে ১৪-১৫ বছর হবে হয়তো। কিন্তু মুখের চেহারা দেখতে সেম এক রকম মনে হচ্ছে ? তাহলে কে এটা…
তাহলে হয়তো গ্রামে এসেই সুন্দরী হয়ে গিয়েছে আগের চেয়ে তাই হয়তো এতো পিচ্চি পিচ্চি লাগছে, নাহয় হয়তো ওর উপর সত্যি জ্বীন ভর করছে ও জ্বীনই ওকে পিচ্চি বানিয়ে দিয়েছে… ভাবতে লাগলাম।
মেয়েটি আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমিও মুচকি মুচকি হাসি দিতে লাগলাম তার মুখের দিকে তাকিয়ে। হয়তো পিচ্চি আমায় দেখে খুব চমকে গিয়েছে। আমিও তো এটায় চাইছি সে চমকে যাক। মনে হচ্ছে পাগলাটা হয়তো এখনি এসে আমায় গলা জরিয়ে ধরে কান্না করে দিবে কতদিন পর দেখা এই জন্য।
আমার দিকে তাকিয়ে মেয়েটি একটু হাসি দিলো…
আমিও মুচকি করে হাসি দিলাম তার দিকে তাকিয়ে ☺
সে এবার একটু বেশি হাসি দিলো…
আমিও এবার আরেকটু বেশি হাসি দিলাম ☺
সে এবার ভ্রু কুঁচকে তাকালো…
আমিও মনের আনন্দে সব দাঁত বের করে হি হি করে হেসে দিয়ে আমার পাগলিটাকে চোখ মেরে দিলাম হি হি.. ?
~ এর পর যা বললো মেয়েটি…?
মেয়েটিঃ ওই লুচ্চা ব্যাটা, বদমাইশ, খাচ্চর পোলা, তুই আমার কোমরের দিকে ওই ভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো রে বজ্জাত সয়তান পাঠা…
তোর পা ভেঙ্গে হাতে ধরাই দিবো বলে দিলাম। তোর বাড়ি কি মা বোন নেই বজ্জাত?
~ ওরে খোদা। এটা আমায় কি বললো রিতু, আমি শেষ ?
সাথে সাথে চারদিকে তাড়াতাড়ি তাকিয়ে দেখলাম কেউ শুনলো নাকি আবার। ভাগ্য ভালো কেউ নেই। যার জন্য এতো কষ্ট করে ফরিদপুর থেকে শেরপুর আসলাম, সেই রিতু আমার এতো গুলো গালি দিলো ~
ধুর, বালের প্রেমের দরকার নাই। এতো গুলো গালি, আমি তাকিয়ে শুধু কোমরে বাঁধা ওড়না দেখছি যে, সে কত সুন্দর করে বাঁধছে, আর সে বললো আমি লুচ্চা ব্যাটা, আবার তার কোমর দেখছি লুচ্চার মত দেখছি। এতো বড় অপমান আমায় করলো সে…ধুর প্রেমের ক্যাথায় আগুন ?
ওর মুখের উপর চিৎকার করে বললাম-
আমিঃ তোর মত মেয়ের সাথে আজ থেকে ব্রেকআপ ব্রেকআপ ব্রেকআপ… ফাজিল মেয়ে …
মেয়েটিঃ ওই বজ্জাত পোলা, তুই কি পাগল নাকি? তোর মাথায় কি সিট আছে?
আমিঃ ওই তুই আবার আমায় বজ্জাত বললি? তোর প্রেমের কপালে বারি, তোর সাথে ব্রেকআপ।
মেয়েটিঃ বজ্জাত পোলা বলে কি রে পাগলের মত…?
আমিঃ আমায় আবার বজ্জাত বললি, রিতু এই বার কিন্তু বেশি বেশি হচ্ছে… আমার মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে…
মেয়েটিঃ ও, তাহলে তুই সেই বজ্জাত শুভ.? তোকেই তো খুজতেছিলাম… ?
আমিঃ আবার বজ্জাত বললি তুই?
মেয়েটিঃ কি করবি রে বজ্জাত বললে?
আমিঃ কেলানি খাইসিস কখনো?? তোকে এমন মাইর দিবো, বজ্জাত মেয়ে…
মেয়েটিঃ ওই তুই আমায় বজ্জাত মেয়ে বললি, দাড়া দেখাচ্ছি… তোকে আজ আমি আস্ত খাবো, রক্ত চুষে খাবো দাড়া তোর… ?
~ সাথে সাথে মেয়েটি দৌড়ে এসে আমার হাতে কামড় দিয়ে ধরলো। হাতের মাংস ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে রে…
আমিও বেশি দেরি না করে ওর মুখে দিয়ে দিলাম কয়েকটা, ঠাসসসস….ঠাসসস… করে।
থাপ্পড় দেওয়ার সাথে সাথে যেনো মেয়েটির চোখ লাল হয়ে গেলো, শুধু শুনতে পেলাম সে বললো “বজ্জাত পোলা তোকে আজ আমি আস্ত খায়ছি” বলে আবোল তাবোল কামড়াতে শুরু করলো।
আমার হাতের মাংস ছিড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে তার কামড়ে । আমি রাগে তার চুল টেনে ধরলাম। আমি বলতে লাগলাম “ছাড় পেত্নী ছাড়, নাহলে তোর চুল ছিড়ে ফেলবো”…
?? পুরো দমে সংঘর্ষ চলছে দুই জনের মধ্যে ??
~ কি কপাল রে আমার। সালা, প্রেম করতে এসে এখন গার্লফ্রেন্ডের সাথে মারামারি করতেছি। এমন কপাল আর কয়টা ছেলের হয় ?? ~
আমাদের চিল্লা চিল্লিতে ভাবি ঘর থেকে দৌড়ে এসে দুই জন মাঝে ঢুকে গেলো। খুব কষ্ট করে আমাদের দুই জনকে আলাদা করলো। ভাবিও হাঁপিয়ে গিয়েছে মারামারি থামাতে গিয়ে…
ভাবিঃ এই কি হয়েছে তোমাদের? এই ভাবে মারামারি করছো কেনো তোমরা ?
মেয়েটিঃ এই বজ্জাত পোলা আমার কোমর দেখছে লুচ্চাদের মত, আবার বলে আমায় নাকি মারবে কত বড় কলিজা ওর (হাঁপাতে হাঁপাতে)
আমিঃ বিশ্বাস করুন ভাবি ও সব মিথ্যা বলছে… (হাপাতে হাপাতে)
মেয়েটিঃ আবার মিছা বলিস? তুই আমার কোমর দেখিস নাই বল? ?
আমিঃ বিশ্বাস করুন ভাবি, আমি রিতুর দিকে খারাপ নজরে তাকায় নাই, ওড়না কোমরে বাঁধছে বলে একটু তাকিয়ে দেখছি কত সুন্দর লাগছে তাকে কোমরে ওড়না বেঁধে, এর চেয়ে বেশি কিছু না…
ভাবিঃ কি বলো শুভ..? রিতু আবার কোথায়..?
আমিঃ আপনি নিজেই তো বললেন রিতুর সাথে গল্প করে, এই যে পেত্নী। আমায় কত গুলো কামড় দিয়েছে ??
ভাবিঃ আরে ভাইয়া, এটা রিতু না তো…
আমিঃ রিতু না মানে, আপনি নিজেই তো বললেন রিতুর সাথে গল্প করতে.. ?
ভাবিঃ আরে পাগল, ওই দেখো রিতু…
~ বাড়ির উত্তর দিকে তাকিয়ে দেখি রিতু তাদের গোয়ালঘরের দরজায় দাড়িয়ে আছে। কপালে ঘাম, কোমরে ওড়না, হাতে গোবর মাখানো ঝাঁটা, মনে হয় গোয়ালঘর পরিস্কার করতে দিছো। আমাদের দিকে মায়াবী চোখে তাকিয়ে আছে ~
ভাবিঃ এই রিতু এই দিকে আস তো একটু (রিতুর দিকে তাকিয়ে)
~ রিতু কাছে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো ~
ভাবিঃ রিতু তুই ওদের মারামারি দেখেও চুপ হয়ে ছিলি কেনো? ছাড়াতে পারছি না… ?
রিতুঃ বুবু,,,, ঈসা তো প্রতিদিন এই ভাবে রাস্তায় গিয়ে ছেলেদের ধরে ধরে মাইর দেই, আমি ভাবছি আজও হয়তো কেনো ছেলেকে ধরে এনে তার সাথে মারামারি করছে। আমি তো জানতাম না এনি শুভ ভাইয়া (আস্তে আস্তে বললো)
ভাবিঃ এই শুভ… তুমি তো পারতে মারামারি না করতে, তুমি করলে কেনো?
আমিঃ আমি কি ইচ্ছা করে থাপ্পড় দিয়েছি নাকি, এই মেয়ে আমাকে গালি দিয়েছে, আবার কামড় দিয়েছে। ভাবি, এই ডেঞ্জারাস মেয়েটা কে?
~ মেয়েটি এগিয়ে এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বললো-
মেয়েটিঃ দোয়া করেন দুলাভাই, আমি আপনার একমাত্র সুন্দরী সালিকা ঈশা…
আমিঃ কি ডেন্জারাস মেয়েরে, ছেলেদের ধরে এনে মারামারি করে…
ঈশাঃ আপনি তো দুলাভাই একটু রোমান্টিক না।
আমিঃ মানে??
ঈশাঃ আমি যখন আপনার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলাম, আপনি তখন আমার হাত ধরে তুলে নিয়ে বুকে জরিয়ে ধরে বলবেন “তোমার জায়গা আমার পায়ে না, আমার বুকে”… তাতো করলেনই না, কি আন-রোমান্টিক লোক আপনি… এমন আন-রোমান্টিক হয়ে প্রেম করলেন কিভাবে হুমম? ?
ভাবি ঈশার দিকে তাকিয়ে চোখ লাল করে বললোঃ-…………… ~ গল্প চলবে ~
বিঃদ্রঃ ভাবি ঈশাকে কি বললো ও ঈশা শুভকে কিভাবে চিনলো যে দুলাভাই বললো, জানতে হলে পড়তে হবে আগামী পর্ব।