গ্রামের লাজুক মেয়ে পর্ব-১৫

0
718

#গল্পঃ গ্রামের লাজুক মেয়ে ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ১৫…

√-ভালো সুন্দর ভাবে আরো ২ মাস চলে গেলো। এখন আমাদের সম্পর্কের বয়স প্রায় ৬ মাস….

কিন্তু একদিন এমন একটা ঘটনা ঘটলো যে, রিতুর যেনো তার সব বিশ্বাস এক সেকেন্ডে নষ্ট করে ফেললো…
একদিন সন্ধ্যায় রিতুকে অনেক মেসেজ দিচ্ছি, কিন্তু কেনো উত্তর নেই। অনেক ক্ষন অপেক্ষা করে তার মোবাইলে কল দিলাম। কিন্তু শুধু মোবাইল বিজি বলছে। আমি কল দিয়ে বার বার চেষ্টা করছি, কিন্তু তার মোবাইল শুধু বিজি আর বিজি… আমার মেজাজ গরম হতে লাগলো যে এতোক্ষণ কার সাথে কথা বলছে যে বিজি বলছে।

৫ মিনিট, ১০ মিনিট, ১৫ মিনিট হতে হতে ৪৫ মিনিট হয়ে গিয়েছে, তখনো তার মোবাইল বিজি। আমার মাথায় এতোটা রাগ উঠছে যে মনে হচ্ছে নিজে নিজের মাথায় আঘাত করি। প্রায় ৫০ মিনিট পর কল রিং হচ্ছে, আবার কেটে দিলো সে। তাহলে কি আমার সন্দেহ ঠিক হল, তার জীবনে নতুন কেউ এসেছে…

আবার কল দিলাম, তারপর রিসিভ করলো…

রিতুঃ হ্যালো, বলো…..

আমিঃ আপনাকে আর কি বলবো বলুন? আপনাকে আর কিছু বলার মত আছে।

রিতুঃ মানে..?

আমিঃ আপনি এতো বিজি থাকেন যে ৫০ মিনিট আমার অপেক্ষা করতে হয় আপনার জন্য। আপনার কখন কথা শেষ হবে তারপর কথা বলবো, তাই তো। আচ্ছা ভালো।

রিতুঃ তুমি আমায় আপনি করে বলছো কেনো? আবার এমন করে কথা বলছো কেনো?

আমিঃ এখন তো আপনার সাথে আমার কথা বলতেও ঘৃণা হচ্ছে। আপনি এতোক্ষণ কি কেনো ছেলের সাথে কথা বলেন নাই?? সত্যি করে বলুন…

রিতুঃ হুমমম বলছি।

আমিঃ ছি রিতু ছি। আপনাকে আমি এতো বিশ্বাস করতাম, আর আপনি কিনা অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলেন ঘন্টার পর ঘন্টা।

রিতুঃ আরে শুনো সে তো আমার মামাতো ভাই। বিদেশে থাকে। কল করছিলো তাই একটু কথা বললাম।

আমিঃ একটু কথা মানে, এতোক্ষণ কথা বলেও কি মন ভরে নাই? তাও একটু কথা বলছেন…

রিতুঃ পুরোটা তো শুনবে। আর তুমি আমায় বিশ্বাস করো না..?

আমিঃ বিশ্বাস করি বলেই তো ঠকতে হল। আমি আর আপনাকে বিশ্বাস করি না। যেই মেয়ে বয়ফ্রেন্ড রেখে অন্য ছেলেদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে, সেই মেয়ের চরিত্র কতটা ভালো হতে পারে আমার বুঝতে বাকি নেই।

রিতুঃ তুমি যাই বলো, আরো চরিত্র নিয়ে কথা বলবে না কিন্তু (কান্না করে)

আমিঃ আপনার নাটকের কান্না আমার কাছে অসহ্য লাগে। আপনি নাটকের কান্না বন্ধ করুন। বায় ভালো থাকবেন।

~ বলে কল কেটে দিয়ে মোবাইল অফ করে দিলাম। আমার এতোটা কষ্ট হচ্ছে, মনে হচ্ছে আর বাঁচবো না। পাগলের মত লাগছে নিজেকে। যার জন্য আমি সব করতে রাজি ছিলাম, সেই মেয়েই আমার সাথে এমন কিছু করবে কখনো ভাবি নাই। আর জীবনে কাউকে বিশ্বাস করবো না।
বিছানায় শুয়ে কান্না করতে লাগলাম, যাকে নিয়ে এতো স্বপ্ন দেখছি, আর সেই আমার সাথে বেইমানি করলো। মনের মধ্যে এতো বড় আঘাত পেলাম, কিভাবে সহ্য করবো বুঝতে পারছি না ~

~ ২ ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে, তাও চোখের পানি থামছে না। কি করলে শান্তি পাবো কিছু বুঝতে পারছি না। মোবাইল আবার অন করে রিতুকে আমার কল দিলাম। ৫-৬ বার কল দেওয়ার পর রিসিভ করলো ~

রিতুঃ হ্যালো (কান্না করতে করতে)

~ তার কান্না শুনে মাথায় রাগ উঠে গেলো ~

আমিঃ এখনো আপনার নেকা কান্না শেষ হয় নাই..?

রিতুর কেনো উত্তর নেই, শুধু কান্না…

আমিঃ আপনি আসলে এমন একটা মেয়ে আপনার উপর আমার বিশ্বাস রাখায় ভুল হয়েছে। আমি হাজার বার বলার পরেও অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলছেন, আবার এখন নেকা কান্না হচ্ছে। আজই আপনার সাথে আমার শেষ কথা, আপনার সাথে আমি আর জীবনে কথা বলবো না। আপনার সাথে আমার ব্রেকআপ ব্রেকআপ ব্রেকআপ…

~ ওপাশ থেকে রিতু জোরে কান্না করে চিৎকার করে উঠলো। আমি মোবাইল টা রাগে খাটের কোনায় জোরে একটা বারি দিয়ে সাথে সাথে ভেঙ্গে ফেললাম। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছিল, কেনো আমার সাথে এমন হল, কেনো আমায় ধোঁকা দিলো, কেনো আমার সব থেকে অপছন্দ কাজটা সে করলো, যাকে আমি জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসছিলাম ?…

আমি এখন কি করবো বুঝতে পারছি না, কান্না কেনো ভাবে থামছে না। শুধু মনে হচ্ছে আমি আমার জীবনের সব থেকে দামি জিনিস হারিয়ে ফেললাম। এখন আমি এই জিনিস ছাড়া সারাজীবন থাকবো কিভাবে ?….

রাতে ভাবি অনেক বার ডাকলো খেতে, কিন্তু আমি আর খেতে গেলাম না। ঘুমানোর জন্য হাজার চেষ্টা করছি, কিন্তু ঘুুম আসছে না। পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি। সারারাত শুধু চোখের পানি ফেলে পার করলাম।

ভোর বেলা আর ঘড়ে মন টিকছে না। বের হয়ে গেলাম ব্রাশ নিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে। সরাসরি চলে গেলাম এলাকার খেলার মাঠের পাশের পুকুর পারে। গিয়ে বসে বসে কান্না করছি আর ভাবছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিতুকে ভুলতে হবে এবং কিভাবে ভুলা যায়, কারণ আমি এমন কেনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবো না যে আমার অনুমতি ছাড়া অন্য ছেলেদের সাথে ঘন্টা ধরে গল্প করে।

মাথার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে, সহ্য করতে না পেরে রাগ কমাতে পুকুর ঝাপ দিলাম গোসল করতে। প্রায় মনে হয় ২ ঘন্টা পুকুরে পানির মধ্যে চিত হয়ে সাঁতার কাটলাম। মাথা ঠান্ডা হয়ে আসছে। তখন ভাবতে লাগলাম নিজের ভুল গুলো কি কি ছিলো… যেমন,

* আমি তার কথা গুলো পুরোটা কেনো শুনলাম না।
* সেও তো অনেক কান্না করছে, তাহলে সে আমাকে ভালোবাসে বলে হারাতে ভয় পাচ্ছিল।
* সে বললো, সে তার ভাই ছিলো। তাহলে হতেও তো পারে প্রয়োজনীয় কথা বলছিলো।
* তাকে তো আমার বুঝানো উচিত ছিলো। প্রথম বারই এতো বড় শাস্তি দেওয়া কি ঠিক হল আমার…

এগুলো ভেবে দেখলাম আমার এতোটা সিরিয়াস হওয়া উচিত হয় নাই। হয়তো রিতুও এখনো কষ্ট পাচ্ছে। তার কষ্টের কথা ভেবে বুকের মধ্যে কষ্ট আরো বেড়ে গেলো।

তাহলে রিতুকে আমার এখুনি কল করে বিস্তারিত জানতে হবে, যদি আমার ভুল থাকে তাহলে সরি বলে নিবো তাহলে….

তাড়াতাড়ি পুকুর থেকে উঠে, একজনকে বললাম কয়টা বাজে, সে বললো ১১.১৫। এক দৌড় দিলাম বাসার দিকে, আমার মোবাইল টাও তো ভেঙ্গে ফেলছি গতকাল, এখন ভাবির মোবাইল দিয়ে কল করতে হবে।
ভেজা শরীর নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে বাসার মধ্যে যখনি যাবো, এমন সময় দেখি ভাইয়া তাড়াতাড়ি করছে বের হওয়ার জন্য, ভাবি বলছে তাড়াতাড়ি যাও এবং ওখানে কি অবস্থা আমাদের বলো কিন্তু তখনি । দুই জনের মুখেই টেনশনের ছাপ…

আমিঃ কি হয়েছে ভাইয়া..? কোথায় যাচ্ছ তুমি..?

ভাইয়াঃ এখুনি ঢাকা যাচ্ছি।

ভাবি পাশ থেকে বললোঃ- কেনো শুভ, তুমি কিছু জানো না..?

আমিঃ কি জানবো আমি..?

ভাবিঃ রিতুর দেখি অবস্থা খারাপ। গতকাল সন্ধ্যা থেকে হঠাৎ কান্না করা শুরু করে। অনেক চিৎকার করে কান্না করতে থাকে। ওই ভাবে কান্না করতে করতে গভীর রাতে হঠাৎ জোরে চিৎকার দিয়ে বেহুশ হয়ে গিয়েছে। এখনো জ্ঞান ফিরে নাই। ওকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে আসা হচ্ছে। আল্লাহ জানে কি হল ওর…

~ আমার কেমন যেনো মাথায় গরম অনুভব করলাম, আর সাথে সাথে চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে গেলো।
যখন চোখ খুললাম, দেখি আমি বিছানায় ~

আমিঃ ভাবি, ভাবি কয়টা বাজে..?

ভাবিঃ দুপুর ১২.৪০।

আমিঃ ভাইয়া কোথায়..?

ভাবিঃ ডাক দিচ্ছি এক মিনিট…

~ ভাইয়া রুমে এলো ~

ভাইয়াঃ তুই বিশ্রাম নে, আমি তাহলে আসি। গিয়ে দেখি রিতুদের প্রয়োজনে পাশে থেকে যদি কেনো উপকার করতে পারি…

আমিঃ ভাইয়া আমিও যাবো (বিছানা থেকে উঠে গেলাম)

ভাবিঃ কি করছো এটা, তোমার শরীর খারাপ, তুমি বিশ্রাম নেও বলছি।

আমিঃ আমি যাবো তো যাবোই।

ভাইয়াঃ আচ্ছা তাহলে চল। নাহলে বাসায় থেকে আরো টেনশনে অসুস্থ হবি হয়তো।

ভাবিঃ শুভ তো এখনো নাস্তা করে নাই…

আমিঃ বাসায় তো রুটি,কলা আছে। ওগুলো প্যাক করে দেও। বাসে বসে খাবো।

~ ভাবি রুটি, কলা প্যাক করে দিলো। আমি আর ভাইয়া ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ফেরী ঘাটে জ্যাম থাকায়, ৫ ঘন্টা লাগলো। সন্ধ্যা ৬ টায় ঢাকা পৌঁছে CNG করে হসপিটালে চলে গেলাম আমি আর ভাইয়া।
গিয়ে দেখি রিতুর আম্মু অনেক কান্না করছে। আঙ্কেল মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আমার পা কাঁপতে লাগলো।

ভাইয়া গিয়ে আঙ্কেল কে বললোঃ.. আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। রিতুর এখন কি অবস্থা?

আঙ্কেলঃ- রিতুর একবার জ্ঞান আসছিলো, তারপর রক্ত দেওয়া হয়েছে। তারপর আবার বেহুশ হয়ে গিয়েছে। ডাক্তার বলছে জ্ঞান না আশা পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। এমনিতে ওর শরীর খুব দুর্বল, তারপর ওই সমস্যা তো জানো, তারপর আবার রক্ত শূন্যতা। মেয়েটার কত কষ্ট হচ্ছে হয়তো… ?

ভাইয়াঃ আঙ্কেল কিছু চিন্তা করবেন না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।

~ এর মধ্যে ঈশা কেবিন থেকে বের হয়ে বললোঃ রিতু বুবুর জ্ঞান আসছে। সবাই তাড়াতাড়ি রিতুর কেবিনে গেলেন, সাথে আমিও। গিয়ে দেখি রিতু হালকা হালকা চোখ খুলে রাখছে। চোখ গুলো লাল হয়ে ফুলে আছে। কতটা কষ্ট হয়েছে ওর ভেবেই আমার বুক ফেটে কান্না আসছে। মনে যাচ্ছে রিতুকে বুকের সাথে শক্ত করে ধরে রাখি।

সবাই রিতুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে, কিন্তু ওর শরীর দুর্বল হওয়াতে কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। আমি পাশে গিয়ে ওর চোখের দিকে তাকালাম, রিতু আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে মায়াবী ভাবে, চোখ বেয়ে পানি পরছে, কাকিমা মুছে মুছে দিচ্ছে।

ডাক্তার এসে বললো- ওর শরীর এখন অনেকটা ভালো। এখন ওনাকে বিশ্রাম নিতে দিন। আগামী কাল বা পরশুদিন তাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন হয়তো।

সবাই রুম থেকে বের হয়ে এলেন শুধু কাকিমা বাদে। বাইরে এসে ঈশা আমার হাত ধরে বললো- ভাইয়া একটু ওই দিকে চলুন।
আমিও ঈশার কথা মত সাইডে গেলাম।

ঈশা বলতে শুরু করলো–
ঈশাঃ ভাইয়া আপনি যেটা ভাবছেন সেটা সঠিক না। গতকাল আমাদের মামাতো ভাই বিদেশ থেকে কল করছিলো। যেহেতু বুবুর মোবাইল বাসার মোবাইল হিসাবে ব্যবহার হয়, তাই ওটায় কল করছিলো। আর কথা তো বলছে আমার আব্বু আম্মু, বুবুতো কথায় বলবে না, জোর করার পর মাত্র এক মিনিট কথা বলছে। বুবু শুধু কান্না করছে আর আমার কাছে বলছে, “শুভ আমায় আর বিশ্বাস করে না, শুভ আর আমায় বিশ্বাস করে না, আমি শুভকে ছাড়া বাঁচবো না”

~ মনে মনে ভাবছি, আমার জন্য রিতুর এতটা কষ্ট পেতে হলো, চোখ বেয়ে পানি বের হয়ে এসেছে। কতটা কষ্ট করছে সে ~

আমিঃ আমাকে কি এখানে থাকতে দিবে ডাক্তার রাতে…?

ঈশাঃ মনে হয় না থাকতে দিবে। আপনি সকালে আসলে বুবুর সাথে কথা বলতে পারবেন হয়তো।

~ আমি আর ভাইয়া কিছুক্ষন পর হসপিটাল থেকে ঢাকার ভাবিদের বাসায় চলে গেলাম। ওখানে সেই রাত থেকে সকাল ৮ টায় কিছু ফল ও খাবার নিয়ে হসপিটালে গেলাম আমি আর ভাইয়া। গিয়ে দেখি সবাই রিতুর সাথে কথা বলছে। আমি রিতুর সামনে গিয়ে বললাম-

আমিঃ কেমন আছো রিতু…?

রিতুঃ আপনি কে?

আমিঃ আপনি করে বলছো যে, কেমন আছো বলো..? (অবাক হয়ে)

রিতুঃ আপনাকে তো আমি চিনলাম না। আপনি কে..? আমি তো অপরিচিত সবাই কে আপনি করে বলি।

আমিঃ………….. ~ গল্প চলবে ~

বিঃদ্রঃ রিতু কি শুভ কে ভুলে গেলো, নাকি অন্য কেনো কারণ আছে এর মধ্যে, নাকি সম্পর্ক এখানে শেষ হয়ে গেলো, জানতে হলে পড়তে হবে আগামী পর্ব।