#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ১৬
লিখাঃসামিয়া খান
“আরিয়ান!”
শান্ত অথচ বলিষ্ঠ সুরে আরিয়ানের নাম উচ্চারণ করলো দিহান।বেশ থমথমে কণ্ঠ তার।মাঝরাতে নিস্তব্ধতার মাঝে আরিয়ান শব্দের উচ্চারণ পরিবেশটাকে বনের মধ্যে হুট করে যেমন কোনো প্রাণী গর্জে উঠে চারপাশকে মুখরিতো করে তুলে তেমন প্রতিধ্বনি হলো।মায়াকে নিজের বাহুডোরে পেয়ে আরিয়ান যেনো অন্যজগতে চলে গিয়েছে।সারাদিন রৌদ্রতপ্ত পথে হাঁটতে থাকা ক্লান্ত পথিক একটু বৃক্ষের ছাঁয়ার জন্য যেমন আকুলিবিকুলি করে ঠিক তেমন মায়ার ক্ষণিক স্পর্শের জন্য আরিয়ান ক্লান্ত পথিকের ন্যায় হাহাকার করছিলো।এজন্য দিহানের কথা তার কর্ণকুহর হলোনা।পূর্বের ন্যায় বরং মায়াকে আরেকটু নিজের দিকে টেনে নিলো।এতক্ষণ মায়া থম মেরে ছিলে আরিয়ানের এই আকস্মিত আক্রমণে।দিহানের ডাকে সম্বিত ফিরে পেয়ে আরিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।
কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে মায়ার ধাক্কাটা হজম করলো আরিয়ান।মায়ার শরীর কাঁপছে কারণ এই মূহুর্তে আরিয়ান যে কাজটা করেছে তা মটেও দিহানের কাছে কাম্য হতে পারেনা।অসহায় চাহনিতে দিহানের দিকে তাঁকালো সে।মায়ার দিকে নির্বিকার অথচ দৃঢ় একটা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আরিয়ানের দিকে প্রশ্ন ছুড়লো দিহান।
“ঘড়ির কাঁটা এখন বারোর ঘরে।সে হিসেবে রাত বারোটা বাজে।এতো রাতে একজনের বাড়ীতে এসে তার বেডরুমে তার স্ত্রীকে তারই স্বামীর সামনে জরিয়ে ধরা উচিত নাকী অনুচিত হবে?”
আরিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থাকলো।এদিকে দিহান তার জবাবের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে।
“বিষয়টা একদিক থেকে দেখতে গেলে উচিত।যা আপাতত আমার দৃষ্টিভঙিতে।আপনার উচিত আমার থেকে সঠিক ক্ল্যারিফিকেশন নেওয়া।”
“জ্বী বলো শুনি তোমার কথা।”
“আসলে আমি ভয় পেয়েছিলাম।আমি আপনার আর মায়ার বিয়ের কথা সুবাহার বাবাকে বলে দিয়েছি।কিন্তু পরে সুবাহার থেকে আপনার প্রথম স্ত্রী আয়শার কথা শুনলাম।আমি আসলে ভয় পেয়েছিলাম যে আয়শা ভাবীর মতো মায়ারও,,”
আরিয়ানকে মাঝপথে থামিয়ে দিহান বলল,
“মায়া ভাবী হবে!”
“হুম মায়া ভাবী।তাকে যদি কিছু করে আয়শা ভাবীর মতো সেই ভয় পেয়েছিলাম।”
“তাই তুমি এত রাতে আসলে আমার বাড়ীতে এটা বলতে যে তুমি ছোট বাবাকে সব বলে দিয়েছো।”
“হ্যাঁ।”
“সেটা তো তুমি ফোনেও বলতে পারতে।এতো রাতে আসার প্রয়োজন ছিলোনা।আর মায়াকে জড়িয়ে ধরার ক্ষেত্রে ক্ল্যারিফিকেশন কী দিবে?”
আরিয়ান চুপ করে রইলো কোনো জবাব দিলোনা।তার নিস্তব্ধতা বেশ ভাবাচ্ছে দিহানকে।
“আরিয়ান তুমি আজকে রাতে এখানেই থাকো।”
“না ভাইয়া আমার যেতে হবে।আপনার বোন অপেক্ষা করছে।”
অনেকটা চোরের মতো আরিয়ান পালিয়ে গেলো।এদিকে আরিয়ানের এমন ব্যবহার বেশ ভাবালো দিহানকে।
,
,
,
সিগারেটে একটা লম্বা টান দিলো দিহান।তার মুখ থেকে সিগারেটের ধোঁয়া কুন্ডলি আকার ধারণ করে পরিবেশে মিলিয়ে যাচ্ছে।এদিকে মায়া তার দিকে করুণ চাহনিতে তাঁকিয়ে রয়েছে।ভোর হতে চললো। অথচ কারো চোখে ঘুম নেই।অধৈর্য হয়ে মায়া বলল,
“দিহান এতে আমার কী দোষ?”
“তুমি আরিয়ানকে কীভাবে চিনো মায়া?”
দিহানের প্রশ্নে চমকে উঠলো মায়া।মুখের অভিব্যক্তি ঠিক রেখে বলল,
“আমি আরিয়ানকে চিনতাম না।আজকে চিনেছি।”
“আরিয়ান ভাইয়া বলো মায়া!আর যদি নাই চিনো তো হুট করে কেনো জড়িয়ে ধরলো তোমাকে?এবং এতো কীসের টান তোমার প্রতি যে রাত বারোটায় তোমার জন্য ছুঁটে এলো।”
“আমি জানিনা দিহান।”
“মায়া প্লিজ আমার থেকে কিছু লুকাবেনা।আরিয়ানের প্রেমিকা ছিলো।তোমারও প্রেমিক ছিলো।তাহলে কোনোভাবে তো তুমি আরিয়ানের প্রেমিকা নও?”
“দিহান প্লিজ!”
কথাটা বলে মায়া কান্না করে দিলো।ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে।হাতে থাকা সিগারেটটা এশ ট্রে তে নিভিয়ে মায়ার দিকে এগিয়ে গেলো দিহান।বিছানায় বসে ছিলো মায়া।তার চুলে মুখ ডুবালো দিহান।
“তিমিরকুন্তলা!তোমাকে অনেক ভালোবাসি।তোমাকে কেও স্পর্শ করুক তা পছন্দ করিনা।আমার থেকে কিছু লুকাবেনা কখনো।মন খুলে কথা বলবে যা মন চায়।ভালোবাসি অনেক বেশী ভালোবাসি।”
চারপাশে ধীরে ধীরে আলো ফুঁটে আসছে।এদিকে দিহান তার তিমিরকুন্তলার কেশে ডুবে রয়েছে।মায়ার সাগরে ডুব দিয়ে মুক্ত খুঁজে চলেছে অবিরাম।
দিহান সেই সকালে স্টুডিওর জন্য বের হয়েছে।এ বাড়ীতে আসার পর আজ প্রথম মায়া একা দিহানকে ছাড়া রয়েছে।কোনোকিছু ভালো লাগছেনা তার।গোসল করে বের হয়ে লালা-সাদা মিশেলে একটা শাড়ী পরে নিলো মায়া।কোথাও যাওয়ার জন্য রেডী হচ্ছে।আয়নার নিজের দিকে তাঁকিয়ে চমকে উঠলো সে।কয়দিন আগের মায়ার মধ্যে আর আজকের মায়ার মধ্যে বিস্তর তফাৎ।দিহানের প্রতিও আলাদা ধরণের ভালোবাসা জন্ম নিচ্ছে।একেই কী বলে বৈবাহিক সম্পর্ক?যেখানে তিন কবুল বলার পর যতো অপরিচিত থাকুক না কেনো ভালোবাসা একদিন ঠিকই জন্ম নিবে।
মায়া তৈরী হচ্ছে আর ভাবছে তাকে দেখে দিহান কী প্রতিক্রিয়া দিবে।খুশী হবেনা মন খারাপ করবে?তাদের সম্পর্ক তো এখনো পাব্লিক করা হয়নি।সেখানে মায়া যদি দিহানের সাথে দেখা করতে যায় তা কী সমীচীন হবে।
অনেকটা দ্বন্ধ-কবলিত মনে মায়া গাড়ীতে উঠে বসলো।গন্তব্য চন্দ্রপ্রভা স্টুডিও।গাড়ি চলছে অবিরাম।বেশ ভালো লাগছে মায়ার।এভাবে দিহানকে চমকে যাওয়ার বিষয়টা অনেকটা উপভোগ করছে সে।হঠাৎ গাড়ী স্পীড কিছুটা বেড়ে গেলো।তৎক্ষণাৎ বিষয়টা না ভাবলেও ধীরে ধীরে স্পীড বাড়ার বিষয়টা বেশ ভাবাচ্ছে তাকে।হাই রোডে এতো স্পীড যেকোনো সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।বেশ ভয় পেয়ে মায়া ড্রাইভার এর উদ্দেশ্য বলল,
“ভাইয়া স্পীড কমান।আস্তে চালান।ভয় লাগছে।”
মায়ার কথা কী বুঝলো ড্রাইভার কে জানে আরো স্পীড বাড়িয়ে নিলো।গাড়ীর সামনের গ্লাসে মায়া দেখতে পেলো একটা মালবাহী ট্রাক আসছে তাদের দিকে।অনেক দ্রুত!মায়ার গাড়ীও যেনো পাল্লা দিয়ে সেই ট্রাকের দিকে এগিয়ে চলছে।
একটা বিকট শব্দ।দুটো গাড়ীর তীব্র সংঘর্ষণ হলো।বিশালাকৃতির ট্রাকটি একটা গাড়ীকে ধাক্কা মেরে দিয়েছে।গাড়ীটি ছিটকে হাই রোডের ধারে এসে পরেছে।গাড়ীটির ইঞ্জিন বিকট শব্দে অফ হয়ে গেলো।আশেপাশের জনগণের মধ্যে গাড়ীর অভ্যন্তরে থাকা ব্যক্তিবর্গের শেষ পরিণতি কী হলো তা জানার জন্য তীব্র উত্তেজনা নিয়ে গাড়ীর দিকে ছুটে যাচ্ছে।রক্তের ধারা বইছে উল্টানো গাড়ী থেকে।মনে হচ্ছে সব শেষ হয়ে গেলো!
চলবে,,
#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ১৭
লিখাঃসামিয়া খান
সামনের গাছটায় একটা পাখি বসেছে।পুরো শরীর হলুদ আর মাথার অংশটুকু কালো।মুখে ব্র্যান্ডেড সিগার রেখে এক দৃষ্টিতে পাখিটাকে দেখে চলেছে দিহান।একটু আগে তার শ্যুটিং শেষ হলো।নিজের প্রাইভেট রুমের কাউচে বসে একটা সিগার ধরালো।সিগারেট পান করার এই এক সমস্যা।যখন পান শুরু করা হয় তখন সুধার মতো বার বার পান করতে ইচ্ছে করে।দিহানের মুখ থেকে কুন্ডলী আকারে সিগার এর ধোঁয়া বেরুচ্ছে আর পাশে ধূমায়িত কফিমগ রাখা।কফি মগটা উঠিয়ে হালকা চুমুক দিয়ে টেবিলে নামিয়ে রাখলো।মাহসান রুমের ভিতরে ঢুকে বেশ কাঁচুমাচু হয়ে দাড়ালো দিহান এর সামনে।কৈফিয়ত এর সুরে মাহসান দিহানকে বলল,
“স্যার আমি এবারও ওই ছেলের সম্পর্কে কিছু খুঁজে পাইনি।বিশ্বাস করেন স্যার আমি খুব ভালোভাবে খোঁজ নিয়েছি।”
মাহসান এর কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো দিহান।
“মাহসান বিষয়টা খুব আশ্চর্য তো!একটা মানুষ এভাবে পরিচয়হীন হতে পারেনা।তোমার সাথে আমার পরিচয় খুব বেশীদিন এর না।বড়োজোর পাঁচ বছর।তারপরও তোমাকে আমি নিজের ভাই এর মতো ভালোবাসি, বিশ্বাস করি।তোমার উপর বিশ্বাস আছে।কিন্তু যে আমার ওই ছেলেটার পরিচয় লাগতো।কিছু দ্বিধা দূর করতে চেয়েছিলাম।”
মাহসান কোনো জবাব দিলনা।মাথাটা নিচু করে ফেললো।দিহানকে কী সব সত্যি জানানোর প্রয়োজন ছিলো। কে জানে?তার থেকে বিষয়টা গোপন করা আদৌ সুফলদায়ক হবে কিনা?
মাহসান এর দিকে কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে থেকে দিহান আবার পাখিটার দিকে দৃষ্টি দিলো।পাখিটা এখনো বসে আছে ওখানে।পাখিটার হলুদ কালার বেশ পছন্দ হয়েছে দিহানের।মায়াকে এই রঙটায় দেখার জন্য তীব্র বাসনা সৃষ্টি হলো তার মনে।তাকে হলুদ রঙের পোষাকে কল্পণা করলো দিহান।মস্তিস্ক পুরো ফাঁকা।মায়ার কোনো দৃশ্যই মাথাতে আনতে পারলো না।কেমন যেনো বোলতার কামড়ের মতো সূক্ষ্ণ ব্যাথা সৃষ্টি হলো বুকে।মনে হচ্ছে কোথাও কিছু হয়েছে।
“ওটা বেনেবৌউ পাখি।”
একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে রিশা দিহানের পাশে গিয়ে বসলো।গোল্ড কালার এর একটা শাড়ী পরেছে সে।বেশ মিষ্টি দেখতে লাগছে।
“কেমন আছেন নায়কসাহেব?”
“নতুন বিয়ে করলে সবাই যেমন থাকে আমিও তেমন থাকি।”
“বিয়ে আবার নতুন পুরাতন হয় নাকী?”
“হুম হয়।”
“রাগ করেছো?”
“কারাটা কী স্বাভাবিক না?তোমার কালকে রাতে করা ম্যাসেজে এর মানে কী ছিলো?যদি মায়া ম্যাসেজটা দেখতো তাহলে কতোটুকু কষ্ট পেতো জানো?”
কথাটা বেশ ঝাঝের সাথে বলল দিহান।মাহসান এর সামনে রিশা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।বিষয়টা বুঝতে পেরে অনুমতি নিয়ে মাহসান রুম থেকে প্রস্থান করলো।
“মাহসান এর সামনে এমন ব্যবহার না করলেও পারতে দিহান।”
“আর তুমি আমাকে ওই ম্যাসেজটা না করলেও পারতে।”
“মায়া তো দেখেনি।তাহলে এত রিয়াক্ট করছো কেন?”
“মায়া তখন আমার সাথে ছিল এবং ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে ছিল।ওর সামনে নোটিফিকেশন এসেছে।”
“বুঝলাম।সত্য কি বলবে না ওকে?”
রিশার প্রশ্ন শুনে আধ-খাওয়া সিগারটা আ্যাশ ট্রেতে নিভালো দিহান।কফিটা এক চুমুকে শেষ করে বলল,
“বিষয়টা ছিল একটা স্ক্যান্ডেল।তোমার আর আমার কিছু দৃশ্যকে অশালীন রুপ দিয়ে প্রচার করতে চেয়েছিল একদল কুচক্রি।মায়া বিষয়টা না জানালেও চলতো।কিন্তু আজকে বাড়ীতে গিয়ে বলে দিবো।”
“মায়া যদি কষ্ট পায়?রাগ করে?অবিশ্বাস করে?”
“আমি চিনি আমার ভালোবাসাকে।আমি এমনি হাওয়াতে মাত্র চারদিনের পরিচয়ে বিয়ে করিনি।অবশ্যই কিছু কারণ আছে মায়ার মধ্যে।”
“নায়ক সাহবে মুদ্রার কিন্তু এপিঠ-ওপিঠ দুটো পিঠ রয়েছে।শুধু একদিক দেখলে হবেনা।”
দিহান কিছু বলতে যাবে তখন তার ফোনে কল আসে।ফোনের স্ক্রিনে দুর্বার নাম।ফোনটা কানে নিয়ে কিছুটা একটা শুনে দিহানের মুখের অবয়ব পরিবর্তন হয়ে গেল। তার মুখের রেখাগুলি কঠোর আকৃতি ধারণ করলো।তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে শুধু রিশাকে বলল,
“তোমার ভাইকে আমি খুন করে ফেলবো।মনে রেখো রিশা।”
,
,
,
বার বার গলা শুকিয়ে আসছে আরিয়ানের।শুভ্র সাদা শার্টটি রক্তে মাখামাখি হয়ে রয়েছে।কাঁপা কাঁপা দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর মায়ার দিকে তাকাচ্ছে।হাতে ক্যানোলা আর মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে।আজকে আরিয়ানের একটা কাজ ছিলো।তাই একটা সরকারি হসপিটালে গিয়েছিল।সেখানে একটা গুরুতর আহত এক্সিডেন্ট করা রোগী আসে।খুব সিরিয়াস যার কারণে কিছুটা কৌতুহল বশে আরিয়ান দেখতে যায়।আঘাতে জর্জরিত ব্যক্তিটাকে দেখে মনে হয় শত তীর আরিয়ানের বুকে এসে লেগেছে তা নয় একটা ধাঁরালো খঞ্জন অনবরত তার বুকে কেও ঢুকাচ্ছে আর বের করছে।মায়াকে দেখার পর তৎক্ষনাৎ সে নিজের হসপিটালে টার্ন্সফার করে নিয়ে আসে।কারণ সেখানে তার চিকিৎসা তখন শুরুও করা হয়নি।
মায়ার শরীর থেকে প্রচুর রক্ত বের হয়েছে।প্রায় পাঁচ ব্যাগের মতো রক্ত দিতে হয়েছে।ডান পায়ের টিবিয়া ও ফিবুলা হাড়ে বেশ আঘাত পেয়েছে।হাতে ফ্র্যাকচার হয়েছে।সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় মায়ার সাথে থাকা ড্রাইভার তুলনামূলক অনেক কম ব্যাথা পেয়েছে।
মায়ার বেডের পাশে গিয়ে দাড়ালো আরিয়ান।আলতো করে মায়ার চুলে হাত বুলাচ্ছে।এখন মনে হচ্ছে আরিয়ানের, সে শুধু শুধু সুবাহকে বিয়ে করেছে।তার যা ছিলো তা মায়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো।মানুষ বড়োই অদ্ভুত!কঠিন ধাক্কা না খেলে বুদ্ধি ঠিক জায়গায় আসেনা।
আইসিইউ তে রয়েছে মায়া।সেখানে সচরাচর কেউ প্রবেশ করতে পারেনা।বেস্ট ট্রিটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে তাকে।অথচ এত পরিমাণের রক্ত বের হয়েছে যেখানে সার্ভাইভ করা কঠিন।তারমধ্যে বিভিন্ন আঘাত তো রয়েছে।দিহানকে এখনো ভিতরে ঢুকার পারমিশন দেওয়া হয়নি।হসপিটালের রুলস এবং পেশেন্টের জন্য খারাপ তা চিন্তা করে।সুবাহ এসেছিলো আরিয়ানের দুপুরের খাবার নিয়ে।হসপিটালে এসে দেখে দিহান ফ্লোরে বসে আছে।চোখগুলো রক্তজবার মতন লাল।পুরো বিষয়টা জানার পর তার ভিতর থেকে কান্না বের হয়ে আসছে।এক্সিডেন্টে যে তার বাবার হাত আছে তা বেশ বুঝতে পারলো।তা নয় ড্রাইভার এত কম ব্যাথা পেলো কেন?আর এসবের অনেকাংশে দায়ী আরিয়ান!
আরিয়ানকে আইসিইউ থেকে বের হতে দেখে উঠে দাড়ালো দিহান।ফাঁসির কাসঠে দাঁড়ানো আসামীর ন্যায় আরিয়ান দিহানের সামনে গিয়ে দাড়ালো।অনেকটা কষিয়ে তাকে চড় মারলো দিহান।এতে আরিয়ানের কোনো প্রতিক্রিয়া হলোনা।এমনভাব করলো যাতে এটা তার পাওনা ছিলো।আরিয়ানের দিকে তাঁকিয়ে থমথমে গলায় দিহান সুবাহকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“সুবাহ এটা তোর স্বামীর হসপিটাল?এখানেও কী আমার স্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য অনুমতি নিতে দৌড়াতে হবে?”
“না ভাই।আপনি ভিতরে যেতে পারবেন।কিন্তু কিছু নিয়ম মেনে।ঠিকমতো পরিষ্কার আপনি নাও থাকতে পারেন।জার্মসের ব্যাপার আছে।”
“তুমি যা বলবে আমি তাই করবো আরিয়ান।শুধু মায়াকে দেখতে চাই।”
উদরের উঠানামাতে মায়ার শ্বাস-প্রশ্বাস বুঝা যাচ্ছে।তার বাম হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় রেখেছে দিহান।কান্নাগুলো এখন দলা পাঁকিয়ে তার গলায় এসে আঁটকে গিয়েছে।ঢোক গিলতে পারছেনা দিহান।তা নয় এক গ্রাসে ঢোকটা গিলে কান্নাগুলোকে মুক্তি প্রদান করতো।মায়ার বাম হাতের উল্টো পিঠে বেশ কয়েকবার ঠোঁটের স্পর্শ মাখলো দিহান।কতো ভালো ছিল যখন শেষবার মায়াকে দেখেছিলো সকালে।হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল।তখনও তো জানতো না দিহান সেই হাসিমাখা মুখটা মেঘে ঢেকে যাবে।আসলে ঠিক মেঘে নয় কোঁয়াশায় ঢেকে গিয়েছে।কুয়াশাচ্ছন্ন মায়ায় মধ্যে দিহানের অর্কের রশ্মি সঠিক সময় পৌঁছাতে পারবে নাকী তার আগেই জীবনপ্রদীপ নিভে যাবে?এটা এখন একটা বড় প্রশ্ন!
চলবে,,,