চাদর জড়ানো চিরকুট পর্ব-১৩

0
216

#চাদর_জড়ানো_চিরকুট।
#পর্বঃ- ১৩

লতা ভয়ে জড়সড় হয়ে বিছানা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। তার বাবার এসিস্ট্যান্ট হাসি বন্ধ করে বললো,

– আজকাল পুলিশদের উপর একটুও ভরসা নেই।
এরকম ভয়ঙ্কর একটা খুনি তাদের হাত থেকে পালিয়ে গেল কী অদ্ভুত ব্যাপার।

লতা কী বলবে বুঝতে পারছে না। সে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। এরা সবাই তাকে মারতে এসেছে নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে সেটাই তাকে বেশ চিন্তায় ফেলেছে। লতা কিছু না বলে চুপচাপ লোকটার দিকে তাকিয়ে রইল। পিস্তল হাতে নিয়ে সেই দুটো লোক দরজার বাহিরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

বৃদ্ধ বললো,
– রবিউল পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে গেছে মা। কিন্তু তুমি চিন্তা করবে না, ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা হবে।

– লতা বললো, কীভাবে পালিয়ে গেল? এরকম কষ্ট করে ধরার পড়ে কীভাবে পালাবে?

– সেটাই তো বুঝতে পারছি না। এরজন্য তাদের নিশ্চয়ই অনেক বড় জবাব দিতে হবে। তবে তার আগে রবিউলকে যেখানে পাবে সেখানেই যেন ক্রসফায়ার করা হয় সেই অর্ডার বের করা হবে।

লতা ডেন আৎকে উঠলো। এরকমটা হলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। রবিউলের সঙ্গে সঙ্গে নিজেও বিপদের মুখে পরবে। কারণ এই মুহূর্তে লতা যাকে বেশি ভরসা করছে তার নাম রবিউল। কিন্তু তাকে যদি পুলিশ খুঁজে পেলেই ক্রসফায়ার করতে চায় তাহলে তো সব শেষ।

লতা বললো,
– ক্রসফায়ারের দরকার নেই আঙ্কেল। যেভাবেই হোক জীবিত উদ্ধার করার ব্যবস্থা করতে বলেন। সামান্য একটা গুলির আঘাতে মারা গেলে মৃত্যুর যন্ত্রণা সে পাবে কীভাবে?

বৃদ্ধ মনে মনে হাসলেন। লতা চৌধুরী রবিউলের ব্যাপারে এরকম কঠিন কথা বলুক এটাই তাদের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু রবিউল যে সত্যি সত্যি পালিয়ে গেছে সেটা এই বৃদ্ধ জানে না। রবিউলকে নিয়ে তাদের পরিকল্পনা ছিল অন্যরকম।
দাদাজান, লতার বাবা ও তার এসিস্ট্যান্ট সবাই মিলে প্ল্যান করেছেন আলাদা করে।

প্ল্যানটা হচ্ছে,
রবিউলকে তারা পুলিশের কাছ থেকে নিজেদের কাছে নিয়ে যাবে। তারপর সেই পুলিশ সদস্যরা থানায় গিয়ে বা মিডিয়ার সামনে বলবে যে তাদের কাছ থেকে রবিউল পালিয়ে গেছে। সুতরাং এরপর তারা উপরমহল থেকে রবিউলের মতো ভয়ঙ্কর খুনিকে সরাসরি ক্রসফায়ার করে হত্যার আদেশ জারি করবে। এদিকে দাদাজানের লোকে রবিউলকে নিয়ে যাবে তার সামনে। এবং তারা রবিউলকে নিজের হাতে খুন করে ফেলে রাখবে। আর পুলিশ সেখানে গিয়ে নিজেরা ক্রসফায়ার করেছে বলে দাবি করবে।

কিন্তু রবিউল যে সত্যি সত্যি পালিয়ে গেছে সেই খবর এখনো জানে না তারা। যে লোকটা গাড়ির দুটো লাশ নিয়ে চলে গেছে সে দাদাজানের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাই। কুড়িল বিশ্বরোডে এসে সে ৩০০ ফিটের রাস্তায় গিয়ে গাড়ি সাইড করে। তারপর সেই গাড়ি সেখানে ফেলে দিয়ে নিজের জীবন নিয়ে পালিয়ে গেছে।

লোকটা ভেবেছিল দাদাজানকে সবটা জানাবেন। কিন্তু ভয়ঙ্কর রাগী চেহারার মানুষ দাদাজান তখন রাগের মাথায় তাকে যদি কিছু করে ফেলে? তাই সাহস করে আর সামনে যেতে পারে নাই। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে দাদাজানের সঙ্গে যারা কাজ করে সবাই কমবেশি রবিউলের ক্ষমতা সম্পর্কে জানতো।

চোখে সবাই না দেখলেও রবিউলের বুদ্ধি আর শক্তির কথা কারো অজানা নয়। সেই রবিউলের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছে এটা তার চরম ভাগ্য বলে সে মনে করেছে। লোকটা তার মোবাইল বন্ধ করে শহর ছেড়ে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন।

যাইহোক।
লতার প্রশ্ন শুনে বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট বললো,
– যদি ধরা সম্ভব হয় তাহলে তো তাকে ধরা হবে। কিন্তু এরপর আবার পালাতে না পারে সেজন্য আগে থেকে ক্রসফায়ার অর্ডার নিতে হবে।

লতা টেনশনে পরে গেল। যেভাবেই হোক তাকে এই ক্রসফায়ারের হুকুম বন্ধ করতে হবে কিন্তু সে কীভাবে কি করবে বুঝতে পারছে না।

বৃদ্ধ বললো,
– এই লোক দুটো তোমার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পাহারা দেবে। রবিউল যেন কোনভাবেই তোমাকে ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য এই ব্যবস্থা। আমি চলে যাচ্ছি তুমি দরজা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করো মা।

স্বস্তি পেল লতা চৌধুরী। কিন্তু রবিউলের উপর ওই হুকুমের বন্ধ করার কোনো পথ পেল না। রবিউল যদি এরকম বিপদে পড়ে তাহলে তো সব পুলিশের কাছে তার ছবি চলে যাবে। সবাই তাকে পাগলের মতো খুঁজে বেড়াবে।

লতা ভেবেছিল এরা হয়তো সত্যি সত্যি রবিউল পালিয়ে গেছে সেটা জানতে পেরেছে। কারণ লতা নিজেও জানে রবিউল পালিয়েছে। কিন্তু এরা যে তাকে মারার জন্য নতুন বুদ্ধি করেছে এটা তো সে জানে না। তাই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পাহারা দেবার লোক দুটোকে সত্যি সত্যি রবিউলের জন্য আনা হয়েছে ভেবে নিল।

বৃদ্ধ দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবারও পিছনে ফিরে এসে বললো,
– আরেকটা কথা।

লতা তাকিয়ে রইল।

– ফিরোজের লাশ নিয়ে এলেও তোমাকে আমরা বাহিরে যেতে দেবো না মা। রবিউল যেহেতু এখন পুলিশের হাতে নেই সুতরাং তোমাকে বাড়ির মধ্যে থাকতে হবে।

ফিরোজের লাশ দেখতে যাবার নিষেধ করার পিছনে পরিকল্পনা হচ্ছে, লতা যদি বাহিরে যায় তাহলে আবার সে নিজেদের বাসায় যেতে চাইবে। এরমধ্যে রবিউল নিশ্চয়ই মারা যাবে কিন্তু লতা সেটা জানলে যদি বাসায় যেতে চায়?
তাই লতাকে বের করা যাবে না।

দরজা খুলে বের হয়ে গেল বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট। লতা দরজা বন্ধ করে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। সে তাড়াতাড়ি মোবাইল হাতে নিয়ে রবিউলের একটু আগে কল করা নাম্বারে কল দিল। তাকে এখনই জানাতে হবে যে তার বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের হুকুম বের করা হচ্ছে সুতরাং সে যেন সাবধানে থাকে।

রুম থেকে বের হয়ে বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট দাদাজানের কাছে কল দিলেন। বেশ চিন্তিত হয়ে বললেন,

– আমার মনে হয় লতা কিছু একটা বুঝতে পেরেছে।

দাদাজান বললো,
– এরকমটা মনে হচ্ছে কেন?

– তাকে ওষুধ মেশানো যে খাবার দেওয়া হয়েছে সেটা সে খায়নি।

– তো কি হয়েছে?

– একটু আগে আমি যখন তাকে খাবার দিয়ে এসেছি তখন সে সেই খাবার থেকে কিছু খাবার সরিয়ে ফেলেছে। তারপর বাকি খাবার এমন করে রেখে দিয়েছে যে মনে হচ্ছিল সত্যি সত্যি সে বাকি খাবার খেয়েছে।

– তুমি কীভাবে জানলে সে খায়নি?

– যদি খেতো তাহলে মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে তার ঘুমিয়ে যাবার কথা। কিন্তু সে এখনো দিব্যি সুস্থ হয়ে জেগে আছে। খুব স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে যাচ্ছে।

– হুম… তাহলে কি মেয়েটা কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে নাকি?

– আমারও তাই মনে হচ্ছে। সেজন্য সে খাবার না খেয়ে রেখে দিয়েছে। যেন বুঝতে পেরেছে তাকে আমরা মারতে চাই।

– তুমি সতর্ক থাকো আর সবসময় নজর রেখো। এদিকে আমি আরেকটা টেনশনে আছি।

– কী হয়েছে দাদাজান?

– হাবিব মহব্বত এরা কেউ কল রিসিভ করে না। রবিউলকে নিয়ে এরা কোথায় আছে বুঝতে পারছি না আমি। এতক্ষণ তো লাগার কথা নয়।

– বলেন কি? ওই কু.ত্তা.র বা.চ্চা আবার ওদের কাছ থেকে পালিয়ে যায়নি তো?

– আরে না, পাগল নাকি তুমি? চারজন লোককে মেরে চলে যাবে, এটা কি রোবট নাকি? তাছাড়া ওর হাতে হ্যান্ডকাফ লাগানো।

– তাহলে কেউ কল রিসিভ করে না কেন?

– সেটাই তো বুঝতে পারছি না রে।

– দাদাজান আরেকটা কথা।

– কি কথা?

– লতাকে কখন মারবেন? আর ওর লাশ কোথায় রাখা হবে সে ব্যাপারে কিছু ভেবেছেন?

– হ্যাঁ সবকিছু ভেবে রেখেছি। তোমার কাজ শুধু মাঝরাতের দিকে তাকে মেরে ফেলা। তারপর যা করতে হয় আমি করবো।

– মারার আগে আমার একটা ইচ্ছার কথা আমি আপনাকে বলেছিলাম দাদাজান।

– কোন ইচ্ছের কথা?

– না মানে, জানেনই তো স্ত্রী মারা গেছে পাঁচ বছর আগে।

– বয়স তো কম হলো না, এখনো লুচ্চামি স্বভাব ছাড়তে পারলে না? হোটেল চোখে পড়ে না?

– আপনি নিষেধ করলে থাক।

– তোমার মেয়ের বয়সী না লতা? তার দিকে চেয়ে এসব চিন্তা আসে কীভাবে?

– আপনি কিন্তু আমাকে বলেছিলেন যে আমার ইচ্ছে হলে আমি করতে পারবো।

– আচ্ছা যা ভালো লাগে করিস, কিন্তু কিছু করার আগে অজ্ঞান করে তারপর করিস। নাহলে সেই কান্নাকাটি, ইমোশনাল কথা এসব ঝামেলা করতে পারে।

– ঠিক আছে দাদাজান, আপনি যা বলবেন। ওষুধ মেশানো খাবার খায়নি তাতে কি হয়েছে? দরকার হলে জোর করে স্প্রে দিয়ে অজ্ঞান করে নেবো।

– তোমাকে একটা কথা বলি।

– বলেন দাদাজান।

– এসব মেয়েলি নেশা বাদ দাও। এসবের জন্য কিন্তু কপালে দুঃখ আছে অনেক, জানো তো? ফিরোজ মিজানের কথা চিন্তা করো। কুত্তা গুলারে বললাম রবিউলকে মারতে। আর ওরা গিয়ে রবিউলকে না পেয়ে দুটো মেয়ে ধর্ষন করে চলে এসেছে। হারামজাদার দল সবগুলো, ওই কাজটা না করে যদি ফিরে আসতো তাহলে রবিউল আজ এতটা হিংস্র হতো না।

– বুঝতে পারছি দাদাজান।

– রবিউলকে পাগলা বানানোর পরিণাম কখনো ভালো হয় না। মিজান ফিরোজ দুজনেই শেষ। বাকি দুইটা লুকিয়ে আছে মানিকগঞ্জে। আমার যে কি পরিমাণ খারাপ অবস্থা যাচ্ছে আমি তো জানি তাই না?

– দাদাজান তাহলে লতার প্রতি আমার ওই ধান্দা বাদ দেবো?

– একবার এসব মগজে এলে তারপর আর বাদ দেওয়া যায় নাকি? যা করার মাঝরাতে খুনের আগে করবা।

– ঠিক আছে দাদাজান। আর লতার বাবার সঙ্গে কি আপনার কথা হয়েছে?

– ও শালা তো এমনভাবে অভিনয় করে যেন মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি অসুস্থ। অপারেশন করার পর থেকে কেমন ফাজলামো শুরু করেছে।

– সমস্যা নেই ঠিক হয়ে যাবে।

দাদাজানের কাছ থেকে কল কেটে দিয়ে পিশাচী হাসি দিয়ে সোফায় বসলো বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট। একটু পরে ফার্মেসিতে যেতে হবে, বহুদিন পর আজকে একটা আনন্দের রাত পাবার আনন্দ হচ্ছে।

★★★

গুলিস্তান নেমে একটা সিএনজি নিয়ে সরাসরি আজিমপুরে চলে গেল সাজু ভাই ও রামিশা। ডিবি হাসানের কাছ থেকে লতার বাবার পুরাতন সেই এসিস্ট্যান্টের ঠিকানা নিয়েছে। এখন তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে সাজু ভাই।

লোকটা বাসাতেই ছিল। সাজু ড্রইং রুমে বসে বসে অপেক্ষা করছিল। দরজা খুলে দিয়ে ১৩/১৪ বছর বয়সী একটা ছেলে ভিতর চলে গেছে। দেয়ালের সঙ্গে বিশাল একটা ৩২” টেলিভিশন চলছে। আর সেই টেলিভিশনে এক মহিলা গোলাপি রঙের একটা শাড়ি পরে খবর পাঠ করছে। সাজুর হঠাৎ করে মনে পড়লো রবিউলের চাদরটা গোলাপি রঙের।

একটু পরে লুঙ্গি পরে এক লোক প্রবেশ করলো। সাজুর দিকে তাকিয়ে বললো,

– আপনি কি আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন?

– আপনি কি লতা চৌধুরীর বাবার পুরাতন এসিস্ট্যান্ট? মানে দীর্ঘদিন ধরে আপনিই কি তার সঙ্গে চাকরি করতেন।

সাজুর প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন তিনি। সাজু অবশ্য চিনতে পেরেছে কারণ হাসান তাকে এই লোকের একটা ছবিও দিয়েছে।

– হ্যাঁ চাকরি করতাম, কিন্তু এখন আর চাকরি করি না আমি। আপনি কে?

– আমার নাম সাজু। আমার এক বড়ভাই ডিবি পুলিশ অফিসার। লতা চৌধুরীর স্বামী ফিরোজ সাহেবকে খুন করা হয়েছে। লতা চৌধুরীকেও কিডন্যাপ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই খুনিকে আর লতাকে আপাতত উদ্ধার করা হয়েছে।

লোকটার চোখে মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট দেখা গেল। লতার স্বামীর মৃত্যুর কথা শুনে নাকি তার পুরনো কথা মনে করে সেটা বোঝা যাচ্ছে না।

লোকটা চোখের পানি ছেড়ে দিল। বললো,
– লতাকে আমি সেই ছোট্ট থেকে দেখে এসেছি। এতো সুন্দর মনের একটা মেয়ে অথচ তার জীবন যেন অন্ধকার হয়ে গেল।

– আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।

– কি প্রশ্ন?

– আপনি এই বয়সে চাকরিটা ছাড়লেন কেন?

– আমি ছাড়িনি, আমাকে ছাটাই করা হয়েছে।

– কিন্তু কেন?

– জানি না, লতার বাবা সিঙ্গাপুর যাবার পরে সেখান থেকে আমাকে ছাটাই করার হুকুম দেন। ম্যানেজার আমাকে ডেকে নিয়ে ছয় মাসের বেতন অগ্রীম দিয়ে বিদায় করলেন।

– আপনার স্যারের গলায় ক্যান্সার ধরা পড়েছে বিদেশে যাবার কতদিন আগে?

– আমি জানি না, স্যারের এরকম কোনো সমস্যা আমি জানতাম না। একদিন হঠাৎ করে স্যারের শরীর খারাপ হয়ে যায়। তারপর তাকে আমরা হাসপাতালে নিলাম। তখন হাসপাতাল থেকে ডাক্তার বললো তার গলায় ক্যান্সার হয়েছে দ্রুত অপারেশন করতে হবে।

– সিঙ্গাপুরে তার সঙ্গে কে কে গিয়েছিল?

– লতার বাবার পারসোনাল ডাক্তার, আর তার দুজন বন্ধু।

– আপনি যাননি?

– না আমাকে অফিসে থাকতে বলেছিলেন।

– কে বলেছে?

– ম্যানেজার সাহেব।

– বিদেশ থেকে আসার পরে আপনি আপনার স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নাই? তাকে কী জিজ্ঞেস করেননি আপনাকে ছাটাই করা নতুন এসিস্ট্যান্ট রাখার কারণ কী?

– চেষ্টা করছি কিন্তু তার সঙ্গে দেখা করার কোনো সুযোগ পাইনি। তাছাড়া বিদেশে যাবার পরে স্যার এর সঙ্গে দুবার আমার কথা হয়েছিল।

– মোবাইলে নিশ্চয়ই?

– হা ভিডিও কল দিয়ে কথা হয়েছিল। আমি তার সঙ্গে কথা বলে আমাকে চাকরি থেকে বের করার কারণ জানতে চাই।

– এটা কী অপারেশন করার আগে?

– হ্যাঁ, স্যার সিঙ্গাপুর গিয়ে পৌঁছানোর পরদিন সকালে। স্যার আমাকে প্রচুর কথা শোনায়, আর আমাকে চাকরি থেকে বের হতে বলে।

– আপনি কী কিছু লুকাচ্ছেন?

– না না কী লুকাবো?

– সত্যিটা বলেন।

– আসলে স্যার যেদিন অসুস্থ হয়ে যায় সেদিন স্যারের খাবার আমি রেডি করে দিয়েছিলাম। সেই খাবার খেয়ে তার শরীর অসুস্থ হয়ে যায়। আর ডাক্তার যখন গলার সমস্যা পান তখন স্যার ভাবে আমি হয়তো তাকে মারতে চাই। কারণ ডাক্তার আরো বলেছিল যে এই ক্যান্সার নাকি খাবারের সঙ্গে কেমিক্যাল খাওয়ানোর মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই স্যার ভেবেছেন দীর্ঘদিন ধরে আমিই তার খাবারে এসব মিশিয়েছি। তার ক্যান্সারের জন্য নাকি আমিই দায়ী। অথচ আমি আজ পর্যন্ত জানি না যে সত্যি সত্যি এরকম কোনো কেমিক্যাল আছে কিনা।

– তারমানে আপনাকে দোষারোপ করে তারপর চাকরি থেকে বের করে দেয়? দীর্ঘদিন ধরে তার চাকরি করেন সেজন্য এরচেয়ে বেশি শাস্তি সে আপনাকে দেননি তাই তো?

– হ্যাঁ। দেশে আসার পরে আমি তার কাছে ক্ষমা চাইতে গেলাম। আমি যে নির্দোষ সেটা প্রমাণ করার সুযোগ চাইলাম। কিন্তু তিনি বারবার শুধু বললেন যে কোনো নিমকহারামির সঙ্গে সে দেখা করতে চায় না।

লোকটা আবার কেঁদে উঠলো। ঝরঝর করে চোখের পানি ছেড়ে বললো,

– বিশ্বাস করুন আমি তার সাথে নিমকহারামি করিনি। সারাজীবন সৎপথে থাকার চেষ্টা করে এসেছি। সবসময় নামাজ পড়ি, আল্লাহকে ভয় করে চলি। কিন্তু জীবনের শেষ বয়সে আমাকে নিমকহারামির অপবাদ নিয়ে চাকরি থেকে বের করে দিল। এই কষ্ট নিয়ে আমাকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে।

লোকটা কাঁদছে, সাজু তার দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটার কপালে কালো দাগ হয়ে গেছে। সাজুর দাদাও যুবক বয়স থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তাদের এলাকার সবচেয়ে বড় মসজিদ তৈরি করেছেন সাজু দাদা। মসজিদের পাশে একটা মাদ্রাসা। সাজুর দাদার কপালে এরকম দাগ সাজু দেখেছে। নামাজে সিজদাহ্ করতে করতে এরকম দাগ নামাজিদের কপালে হয়ে যায়। রোজ কেয়ামতের ময়দানে এদের কপালে নাকি নূরের আলো জ্বলবে৷

সাজু বললো,
– লতার বাবার সেই পারসোনাল ডাক্তারের নাম কি? তার সঙ্গে দেখা করতে হবে আমার।

লোকটা জবাব দেবার আগেই রামিশা সাজুর হাত ধরে টান দিল। বললো,

– সাজু ভাই টিভির দিকে তাকান।

সাজু টেলিভিশনের পর্দায় তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। টেলিভিশনের পর্দায় এই মুহূর্তে রবিউল ইসলাম রাব্বির ছবি ভাসছে। সাজু দ্রুত রিমোট দিয়ে টেলিভিশনের সাউন্ড বাড়াতে বললেন।

রবিউলের ছবি ভাসছে আর এক মহিলার কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে।

ভয়ঙ্কর খুনি সন্ত্রাসী রবিউল ইসলাম রাব্বি এখন পলাতক। লতা চৌধুরীর স্বামীকে খুন করার পরে তাকেও কিডন্যাপ করে ঢাকায় নিয়ে আসার সময় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে গেছে রবিউল ইসলাম রাব্বি নামের এই সন্ত্রাসী। বহু খুনের আসামি এই রবিউলকে যেখানে পাবে সেখানেই ক্রসফায়ার করে হত্যার আদেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ঢাকা শহরের সকল জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হচ্ছে যে, রবিউল ইসলামকে দেখা মাত্রই পুলিশের হাতে তাকে তুলে দিবেন। যেভাবেই হোক এই সন্ত্রাসীকে জীবিত অথবা মৃত ধরতে চায় পুলিশ।

|-|
চলবে….

লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম।

💙💙💙💙💙💙💙💙💙💙💙